#Senior_life_partner
পর্ব— 2
Afrin Ayoni
আকাশ স্যার ইসুয়া কে সবার সাথে আলাপ করিয়ে দিয়ে ক্লাস থেকে বিদায় নেয়। ইসুয়া হাতের বইটা টেবিলের উপর রেখে স্টুডেন্ট দের উদ্দেশ্যে,,,
ইসুয়া– So,Student…..
ইসুয়া কে আর বলতে না দিয়ে পেছন থেকে তমা দাঁড়িয়ে পড়লো। ওদের স্বভাব ই ক্লাসে টিচার দের হেনস্থা করা।আর ইতিমধ্যে ইসুয়া এদের রঙ ও ধরে ফেলেছে। ইসুয়া মনে মনে বুঝে ফেলেছে নিশ্চয়ই তমার মাথার শয়তানি বুদ্ধিগুলো চুলকাচ্ছে।
ইসুয়া খানিকটা কপাল কুঁচকে বলে উঠে, “হ্যাঁ বল।”
তমা– ম্যাম আপনি English এ কথা বলছেন কেন?আপনি একজন বাংলা অধ্যাপিকা। তাই , আপনার উচিৎ আপনার ছাত্র ছাত্রীদের সঙ্গে শুদ্ধ বাংলায় কথা বলা।তাই নয় কি??
তারপর তমা ক্লাসের বাকিদের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো, “Am I right guy’s?”
তন্মধ্যে যেসব ছাত্র ছাত্রীরা তমাদের মত টিচার দের মজা নেয় ক্লাসে , তারা চিল্লিয়ে বলে ….”yes right”
ইসুয়া ডান হাতের আঙ্গুল দিয়ে কপাল টা হালকা চুলকালো,তারপর মুখে হাসির রেখা টানলো।তমাকে হাতের ইশারায় বসতে বলে ,,,,
“আমি চরম ভাবে দুঃখিত আমার ছাত্র ছাত্রীবৃন্দ।তোমরা আমার ভুল ধরিতে পেরেছো,সে জন্য আমি তোমাদের নিকট চির কৃতজ্ঞ। আমার আসলেই তোমাদের সহিত বাংলায় কথা বলা উচিত। তাই,আমি আমার ভুল স্বীকার করিতেছি।আর আমার ইহা জানিয়া খুশি লাগিতেছে যে , এই শ্রেণীকক্ষে প্রায় ছাত্র ছাত্রীগণ বাংলা ব্যাকরণ বিষয়ে খুবই পারদর্শী।” —–ইসুয়া
ইসুয়ার এমন সাধু চলিত ভাষার মিশ্রণের কথাবার্তা যে কিছু কিছু স্টুডেন্টের বোধগম্য হল না, সেটা ইসুয়া বুঝতে পেরে মজা পাচ্ছিল খুব।তমা বেচারির মুখ খানা তখন দেখার মত হয়েছিল।বাকি দের মুখ তো পুরাই চুপসে গেছে ততক্ষণে।
তুলি তমাকে হালকা খোঁচা মারে।তমা বিরক্ত নিয়ে তাকায়।
তমা– কিরে খোচাচ্ছিস কেন?
তুলি — খুব তো বাংলা বাংলা করছিলি!ম্যামের কথা কিছু বুঝতে পারছোস?
তমা কপাল ভাঁজ করে বলে — something বুঝছি।
পাশ থেকে নয়ন বলে উঠলো — কুত্তি, আমরা এমনিতেই সকালের ব্যাপার টা নিয়ে টেনশিত।আর তুই তার মধ্যে আরেক কুয়ায় পালাইছোস।
তমা — এই ম্যাম কে যদি দুই দিনের মধ্যে টাইট না দিয়েছি তবে___________।
তুলি — আর কিছু বলিস না বইন।তোর দিকেই তাকিয়ে আছে।তোরেই এখন লোস করে ফেলবে।
তমাকেই প্রথম শিকার বানালো ইসুয়া।তমার দিকে তাকিয়ে বললো,”তো আমার বাংলা পারদর্শী বিজ্ঞ ছাত্রী দয়া করিয়া একটু দাঁড়াইবেন?”
তমা দাঁড়িয়ে পড়লো তৎক্ষণাৎ।
ইসুয়া– তোমার নাম বল আর পরিচয় দাও।
তমা — l am সিনথিয়া খান তমা।
ইসুয়া– যেখানে রহিয়াছো ঐখানেই থামিয়া যাও।
তমা খানিকটা চমকে ,”কেন ম্যাম?”
ইসুয়া– বাংলা ক্লাস চলাকালীন সময়ে শিক্ষিকা যেমন রূপে ইংরেজিতে কথা বলিতে পারিবে না, তেমনি ছাত্র ছাত্রীদের ও সেই বিষয়ে সমান নিষেধাজ্ঞা রহিয়াছে। আমি যেমনি তোমাদের সহিত বাংলায় কথা বলিবো, ঠিক তেমনি তোমাদের ও আমার সহিত বাংলা ব্যাকরণের নিয়মেই কথা বলিতে হইবে।
তমা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল।তমার সাথে বাকি ছাত্র ছাত্রীরা ও একজন আরেকজনের মুখ চাওয়া চাওয়ি করতে লাগলো। ক্লাস রুমে একটা ছোটখাটো শোরগোল শুরু হয়েছে। এ যেন,”যেমন কুকুর তেমন মুগুর” এর ই আরেক রূপ।
ছাত্র ছাত্রীরা ততক্ষণে বুঝে নিয়েছে তাদের বাংলা অধ্যাপিকা ঠিক কি chiz …..
এমন সময় রবিন উঠে দাঁড়ায়,”সরি ম্যাম। ওদের হয়ে আমি আপনার কাছে দুঃখ প্রকাশ করছি। আর একজনের শাস্তি সকলের পাওয়া উচিত নয়। ওরা একটু মজা করছিলো আপনার সাথে।”
ইসুয়া– অন্যায়কারী আর অন্যায় সহ্যকারী দুজনই সমান অপরাধী।
রবিন ইসুয়ার কথার ইঙ্গিত টা ভালো ই বুঝতে পারে।সকালে রেগিং এর বিষয়ে এবং একটু আগে তমাকে থামানোর চেষ্টা না করার প্রেক্ষিতেই ইসুয়া কথাটা বলেছে রবিন কে।
রবিন — I am extremely sry ম্যাম।
তারপর রবিন তমার দিকে চোখ গরম করে তাকাতেই তমা ইসুয়া কে উদ্দেশ্য করে বলে,”সরি ম্যাম।”
ইসুয়া তমা আর রবিন কে হাত নাড়িয়ে বসতে বলে।দুজনে বসে পড়ে। ইসুয়া আবার প্রথম থেকে continue করে,,,,,
ইসুয়া– So student আজকের এই বিষয় থেকে আমরা কি শিক্ষা পেলাম?
ছাত্র ছাত্রীরা জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে ইসুয়ার দিকে। ইসুয়া বললো,,
“অন্য কে কোনো ফাঁদে ফেলার আগে ঐ স্থানে নিজেকে একবার কল্পনা করে নিবে যে , তার জায়গায় তুমি থাকলে ঠিক তোমার অবস্থা টা কি হবে?
অথবা …… এই ঘটনা নিয়ে আমরা একটি প্রবাদ বাক্য ও ব্যবহার করতে পারি,,
অন্যের জন্য গর্ত খুঁড়লে সেই গর্তে নিজেকে ই পড়তে হয়।”
কথাটা যে তমাকে উদ্দেশ্য করে বলেছে সেটা সকলেই বুঝতে পারে। আর যারা তমার সাথে মিলে ইসুয়া কে অপদস্থ করতে চেয়েছিল তারা সকলে একসঙ্গে বলে উঠে …… “Sry ম্যাম।”
ইসুয়া– It’s ok guy’s……আজ আমার প্রথম ক্লাস তোমাদের সঙ্গে। আজ পড়াশোনায় এগোবো না।শুধু পরিচয় পর্ব চলুক।
তারপর একে একে সকলেই পরিচিত হল।আর প্রথম দিনেই ইসুয়া অনেক ছাত্রছাত্রীর মনে জায়গা করে নিল।
ইসুয়া ক্লাস শেষে বেরিয়ে যায়। সকল ক্লাসে তমার মত যেমন বখে যাওয়া বড়লোকের মেয়ে থাকে, ঠিক তেমনি কিছু ভালো ছাত্র ছাত্রী ও থাকে।তমা কে যোগ্য জবাব দিয়েছে ইসুয়া,সে ব্যাপারে অনেকেই সন্তুষ্ট।আর এই নিয়ে ক্লাসে হালকা কানাঘুষা ও হল।তমা বিষয়টা বুঝতে পেরে ইসুয়ার উপর ক্রমশ রাগান্বিত হতেই থাকে।
এইদিকে ভার্সিটির সকল ক্লাস শেষ করে বাসায় আসে ইসুয়া। দরজার সামনের কলিং বেল চাপে বেশ কয়েকবার। তারপর দরজা টা খুলে দেয় ইসুয়াদের কাজের লোক রহিমা।
ইসুয়া– ওপ খালা,এতক্ষণ লাগে?কি গরম।
রহিমা– ছুরি বড় আপা।হাতের কাজ থুইয়া কেমতে আইতাম?
ইসুয়া– ছুরি না সরি হবে ঐটা।
রহিমা– আইচ্ছা আইচ্ছা। হেই একই …….
ইসুয়া– মা আর নিশু কই?
রহিমা– খালাম্মা নামাজে গেছে আর ছুডু আপা গোসল করে।
ইসুয়া– বাবা ফিরেনি?
রহিমা– খালুজান দুপুরের ট্রেনে চট্টগ্রাম যাইবো।
ইসুয়া– কেন কেন?
রহিমা– আমি কি জানি?
ইসুয়া– ফিরবে কখন,সেটা তো জানো?
রহিমা– হুম কাইল সকালে।
ইসুয়া– ওহ্ আচ্ছা। আমারে এক গ্লাস লেবুর শরবত দাও তো।
রহিমা– দিতাছি।
ইসুয়া ফ্রেশ হতে নিজের রুমে চলে যায় । অনেক ক্লান্ত লাগছে।
এইদিকে চৌধুরী বাড়িতে এটা সেটা ভাঙার শব্দে সবাই নিচে নেমে আসে।সিনথিয়া হাতের কাছে যা পাচ্ছে তাই ভেঙে চলছে।আর সামনে সোফায় শুয়ে মোবাইলে game খেলছে রবিন। রবিনের যেন সেদিকে কোনো ভ্রুক্ষেপই নেই।
উপর থেকে নেমে আসে আকাশ আর তার wife সাথী।সাথে দাঁড়িয়ে আছে সিনথিয়ার মা বাবা,রবিনের মা,রবিনের দাদী আর বাড়ির কাজের লোক গুলো।
দেলোয়ার খান মেয়ের দিকে এগিয়ে গিয়ে, “কি হয়েছে আমার doll এর?এত রেগে কেন আছে সে?”
সিনথিয়া — পাপা তুমি সরো,আজ সব ভেঙে ফেলবো আমি।
দেলোয়ার খান– আমাকে বলো আগে,কি হয়েছে তারপর যা ইচ্ছা করো আমি বাঁধা দিব না।
দেলোয়ার খানের স্ত্রী সুরাইয়া খান স্বামীর দিকে এগিয়ে এসে,”আশকারা দিয়ে দিয়ে মাথায় তুলেছো,এখনো সময় আছে শাসন কর ।নয়তো পরে আক্ষেপ করবে।”
সিনথিয়া — হ্যাঁ হ্যাঁ আমি খারাপ ই।বখে গেছি।আর বাকি সবাই ভালো।
দেলোয়ার খান স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে, “তুমি চুপ করো তো।আমার একটা মাত্র মেয়ে। তাকে আদর করবো না তো কাকে করবো ?”
সিনথিয়া বাবার দিকে এগিয়ে গিয়ে, “I love u পাপা।”
দেলোয়ার খান– এবার বল কি হয়েছে?এত ভাঙচুর কেন?
সিনথিয়া — ইসুয়া আর ইসুয়ার সব কর্মকাণ্ডের কথা বলে।
আকাশ– তো এখানে আমি তো ভুল কিছু দেখছি না। তোদের সাহস হয় কি করে টিচারকে রেগিং করার?আবার ক্লাসে ও হেনস্থা করতে গেছিলি?
সিনথিয়া — আমাদের ভার্সিটিতে এসে আমাদেরকে ই অপমান করবে একটা সামান্য টিচার ?এটা ঠিক ??
বাড়ির সদর দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে করতে আফজাল চৌধুরী বললেন– “আর তুমি যেটা করেছো ঐটা তোমার ঠিক মনে হয়?”
বাবার কন্ঠ শুনে সোফা থেকে উঠে বসে রবিন।ফোন টা চট জলদি পকেটে ঢুকিয়ে ফেলে।আকাশ আর রবিনের মা ব্যাপার টা দেখে মুচকি হাসে।
আফজাল চৌধুরী– তো বলো সিনথিয়া মামণি, তোমার করা কাজটা ঠিক কি না?
দেলোয়ার খান– ছোট মানুষ, একটু না হয় ভুল করেছে ভাইজান। তাই বলে ……
আফজাল চৌধুরী– তুমি চুপ কর । ভার্সিটিতে কোনো ছোট মানুষ যায় না। ও যদি এতটাই ছোট হয় তবে কাল থেকে প্রাইমারি স্কুলে ভর্তি করিয়ে দিয়ে এসো।
সুরাইয়া খান — ভাইয়া,মেয়ে টা দিন দিন বখে যাচ্ছে। এত বড় মেয়ে কে আর কত বুঝাবো বলো তো?
আফজাল– সবকিছু বুঝিয়ে হয় না, এবার থেকে শাসন করতে শিখ।তুই ওর মা ।
মামার কঠোরতা দেখে নানির কাছে যায় সিনথিয়া।
অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,,”নানু দেখো না, সবাই আমাকে শাসন করে।তুমি বল আমি কি খারাপ?”
আকাশ, সাথী আর রবিনের চোখ গুলো চারদিকে ঘুরছে।
রবিন মিনমিনিয়ে,”কত বড় ধাপ্পাবাজ।বাবার সাথে কথা বলে লাভ হবেনা দেখে দাদুর কাছে নালিশ করছে।”
মমতা চৌধুরী– দেখ আফজাল, রবিন আমার কাছে যতটা আদরের ততটাই আকাশ আর সিনথিয়া ও।
আকাশ– নানু , তুমি আর পাপা মিলেই সিনথিয়া কে বিগরে দিচ্ছো।মা আর মামাকে কিচ্ছু বলতে ও দাও না।দিন দিন বেয়াদব হয়ে যাচ্ছে।
সিনথিয়া — দেখেছো তো পাপা, ঘর শত্রু বিবি সন ।
দেলোয়ার আকাশের দিকে তাকিয়ে, “আকাশ সিনথিয়া তোমার বোন না ? তুমি এভাবে বলতে পারো না।”
মমতা চৌধুরী– আমি কিচ্ছু জানি না। আমার নাতি নাতনি কারো কষ্ট ই আমি দেখতে পারবো না। ওরা নিজের মত চলবে ফিরবে কেউ বাঁধা দিবে না।
কথাটা বলেই মমতা চৌধুরী স্থান ত্যাগ করেন। দেলোয়ার খান আর সিনথিয়া ও হাসতে হাসতে চলে যায়। বাকি বসে আছে রবিন, আফজাল সাহেব, সুরাইয়া খান, আকাশ,সাথী আর রবিনের মা দিতি চৌধুরী।
আফজাল সাহেব রবিনের দিকে তাকিয়ে, “রবিন। তুমি বোঝাও না কেন সিনথিয়া কে।ও দিনের বেশিরভাগ সময় ই তোমার সাথে কাটায়।”
রবিন — আমি কি করে বুঝাবো?
আকাশ– তুই যদি সারাক্ষণ ফোনে game না খেলে সিনথিয়া কে বুঝিয়ে রাখতি,সামলে রাখতি তাহলে এরকম উগ্র হত না।
রবিন — দেখ আকাশ ভাইয়া, যেখানে তুমি ওর নিজের ভাই , ফুফা,ফুফু কেউ ওরে বুঝাতে পারো না ঐখানে আমি বললে ও বুঝবে।আর তাছাড়া সিনথি এখন ছোট না যে , যা বলবো তাই মেনে নিবে।
দিতি রবিনের দিকে এগিয়ে এসে,”দেখ বাবা।তারপর ও একটু চেষ্টা করিস।মেয়ে টা দিন দিন ছন্নছাড়া হয়ে যাচ্ছে।”
রবিন অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে, “আমি চেষ্টা করবো।তবে জোড় করতে পারবো না কিছুতে।”
আফজাল সাহেব– আমাকেই এর বিকল্প ব্যবস্থা করতে হবে।
আকাশ– তুমি একা কি করবে মামু?আমরা এতজন মিলে ও কিছু করতে পারছি না।
আফজাল সাহেব গলার টাই টা হাত দিয়ে টেনে হাসতে হাসতে উপরে উঠতে থাকেন আর বলেন, “আমি কিছুই করবো না। যে করার , সে ই করবে।তাকে শুধু আনার ব্যবস্থা করছি।”
সবাই কিছু বুঝতে না পেরে একজন আরেকজনের মুখ চাওয়া চাওয়ি করছে।আর আফজাল সাহেবের কথার মানে খুঁজছে।
________________________(চলবে)