#Senior_life_partner
পর্ব——-11
Afrin Ayoni
ইসুয়া কপাল কুঁচকে বসে আছে। ইসুয়া কে হসপিটাল থেকে নিয়ে আসা হয়েছে বাড়িতে। এখন সে তার রুমের বিছানায় বসে আছে বালিশে হেলান দিয়ে। ইসুয়ার রুমের সোফায় বসে আছে শুভ আর নয়ন। নিশুয়া তাদের সাথে গল্প করেই যাচ্ছে। নিশুয়া তাদের সাথে এত জলদি মিশে যাবে ভাবতে পারেনি তারা।হেসে হেসে আড্ডা দিচ্ছে নিশুয়া,শুভ আর নয়ন।
দরজা ঠেলে স্যুপের ট্রে হাতে ইসুয়ার রুমে ঢুকলো রবিন। পিছন পিছন ইসুয়ার মা ও এলেন।ইসুয়া বিরক্তি নিয়ে ঝুমা বেগমের দিকে তাকিয়ে বললো,,,,
মা!এসব কী?
ঝুমা বেগম ইতস্তত হয়ে বললেন,”দেখ না ছেলেটা কত কষ্ট করে স্যুপ বানিয়ে এনেছে তোর জন্য।”
রবিন– দুর আন্টি!কষ্ট কেন হবে?এটুকু করাই যায়।
ঝুমা বেগম তাড়া দিয়ে বললেন,,”আচ্ছা বাবা!তোমরা বস,আমার রান্না পুড়ে যাচ্ছে। আমি গিয়ে দেখি।”
ঝুমা বেগম চলে গেলেন।ইসুয়া আগের চেয়ে ও ভালো আছে এখন আপাতত।ডক্টর বলেছেন ভয়ের কোনো কারণ নেই। তাই আজ ই রিলিজ করে দিয়েছে।
নিশুয়া রবিনের দিকে তাকিয়ে, “বাহ্!ধুলাভাই,,,আপনি রান্না জানেন?আমার আপুর তো কোনো কষ্ট ই করতে হবেনা তাইলে।”
রবিন– তোমার আপুকে রান্নাঘরে যেতে দিব না,নিজে হাতে খেতে হবেনা, সব সব সবকিছু আমি করে দিব।
ইসুয়া হা করে তাকিয়ে আছে। এসব এরা কি বলছে??যেন তার মাথাতেই ঢুকছে না। নিশুয়ার দিকে তাকিয়ে বললো,”ঐ গরিলা!!কিসের ধুলাভাই, কে ধুলাভাই, কার ধুলাভাই??কি বলছিস এসব??”
নিশুয়া — কেন ! রবিন ভাইয়াই তো আমার one & only ধুলাভাই।
রবিন চিল্লিয়ে,,,,”একদম রাইট!”
ইসুয়া রেগে,”নিশুয়ার বাচ্চা,তোরে আমি গরম পানির ডেকচিতে চুবামু।”
তারপর রবিনের দিকে তাকিয়ে,,,”টিচারের বাড়িতে এসে এরকম বেয়াদবি করতে লজ্জা করে না?”
রবিন পুরো ঘরে এদিক সেদিক তাকিয়ে বললো, “টিচার?কে টিচার?কোন টিচার?কিসের টিচার?আমি তো আমার বাবার বন্ধুর মেয়ে কে দেখতে এসেছি।”
ইসুয়া ততক্ষণে বুঝতে পারে আফজাল সাহেব আর তারেক সাহেবের বন্ধুত্বের কথা এদের জানা হয়ে গেছে।
ইসুয়া রবিনের দিকে তাকিয়ে বললো,,,
এখন আসতে পারুন আপনারা??
রবিন– তাড়িয়ে দিচ্ছেন নাকি??
ইসুয়া অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। রবিন সেদিকে ভ্রুক্ষেপ না করে বললো,”আমার আঙ্কেলের বাড়িতে যখন খুশি আসতে পারি,যতক্ষণ খুশি থাকতে পারি।আমি কারো ইচ্ছার জন্য নিজের হক খোয়াতে পারবো না।এছাড়া ও বাবার বন্ধুর মেয়েদের উপর আমরা single ছেলেদের একটু আধটু হক থাকেই,কি বল নিশুয়া?”
নিশুয়া — রাইট ভাইয়া। তোমার যখন ইচ্ছা হবে চলে আসবে।কোনো আপত্তি নেই আমাদের।
ইসুয়া– নিশু তুই কিন্তু বেশি করছিস?বেয়াদব একটা।দিন দিন মাথায় উঠে যাচ্ছিস।
রবিন– আমার একমাত্র শালীকে বকার কোনো অধিকার নেই আপনার।
ইসুয়া— Don’t talk rabies….. আমার খুব বিরক্ত লাগছে।
রবিন– আচ্ছা আচ্ছা, আর কথা বাড়ালাম না ।
কথাটা বলে রবিন ইসুয়ার দিকে মুখ ফিরিয়ে বিছানায় বসলো,,,,ইসুয়া বোঝার চেষ্টা করছে রবিন ঠিক কি করতে চাইছে।
রবিন– হা কর!!
ইসুয়া– মানে??
রবিন– হা করতে বললাম।
শুভ আর নয়ন মুখ টিপে হাসছে।শুভ রবিন কে বললো, “কি রে আমাদের সামনেই খাইয়ে দিবি?”
নিশুয়া উত্তেজনায়, “ossammm….আমার এরকম একটা ধুলাভাই পাওয়ার খুব ইচ্ছে ছিল…. how romantic !!”
নয়ন আর শুভ নিশুয়ার কথায় বারবার অবাক হয়।এই মেয়ে নির্দ্বিধায় সব বলে ফেলে।ভিতরে কিছু রাখে না।
নয়ন — তোমরা দুই বোন ই কি এক কোম্পানির চাল??
নিশুয়া — মানে??
রবিন ইসুয়ার কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিসিয়ে বলে
“miss অধ্যাপিকা….আমি জোর করতে চাই না।ভালো ভাবে বলছি আমার হাতে খেয়ে নিন।নয়তো অন্ধকার লাইব্রেরিতে যেটা হয়েছে সেটার পুনরাবৃত্তি যদি এখানে হয় সেটা খুব একটা সুখকর হবেনা। আর ঐটা simple ছিলো….. এবার যেটা হবে এটা হবে deep kisssss…”
??????
ইসুয়া রবিনের কথায় বিষম খেল। নিশুয়া ইসুয়ার দিকে তাকিয়ে,,”কিরে আপু?তোর আবার কি হল?”
রবিন ইসুয়া কে চোখ টিপে বললো,”আমার প্রথম কেয়ার পাচ্ছে তো তাই সামলাতে পারছে না হয়তো।”
শুভ ইসুয়ার দিকে তাকিয়ে বলে– লজ্জা পাবেন না ভাবী ম্যাডাম। আমাদের এত বড় বিপদ থেকে রক্ষা করলেন ,আমরা আপনার জন্য এটুকু করতে পারবো না??আমরা সবাই চোখ বন্ধ করছি।আপনি খান।”
ইসুয়া– কি কি ,এসব কি বলছেন?miss. অধ্যাপিকা, ভাবী ম্যাডাম!! এসব কি ধরনের সম্বোধন??অসহ্য।”
শুভর দিকে তাকিয়ে নিশুয়া বললো,”নয়ন আর শুভ ভাইয়া আপনারা চোখ বন্ধ করুন।আমি পারবো না।”
নয়ন ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে, “কেন?”
নিশুয়া — এমনিতেই আমি আপুর আর রবিন ভাইয়ার first love kiss মিস করে ফেলেছি।এবার ওদের ছোটখাটো কেয়ার গুলো মিস করতে পারবো না।
নিশুয়ার কথায় সবার মাথা ভন ভন করছে ।রবিন কাশতে শুরু করে দিলো।নয়ন শুভ কে বললো,”দোস্ত!চল… আর বেশিক্ষণ থাকলে আমার মাথা ফেটে মগজ বেরিয়ে এসে আমাকে বলবে,,এই জীবন রেখে লাভ নেই তোদের,suicide কর জলদি!”
……………………………………………
পরের দিন,,,,,,,,
রিদীমা একটা অফিস মিটিং এ দারুণ রকম সাকসেসফুল হয়েছে।এই ডিল টা হাত থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা 90%ছিলো।কিন্তু ভাগ্য সহায় ছিল বলে ডিল টা রিদীমার কোম্পানি পায়।অনেক বড় এমাউন্ট কাজটার।
রিদীমা অনেক happy… অফিস থেকে বেরিয়ে গাড়িতে উঠে বসে।আজ সে নিজেই ড্রাইভ করবে।উদ্দেশ্য স্বাদের বাসা।অনেক অনুরোধ করার পর ও রিদীমা কখনো যায় নি।কিন্তু আজ স্বাদ কে surprise দিবে বলে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া।
এইদিকে তোয়ালে পড়ে স্বাদ সিঁড়ি বেয়ে নামছে,,,
মা !মা!কই তুমি??
কি হল ?এভাবে মাইকেল জ্যাকসন এর মতো ভাংভুং গাস কেন?
আমার আলমারি তে একটা জামা কাপড় ও নাই?কই রাখছো?
রেহানা বেগম গম্ভীর মুখে দাঁড়িয়ে আছেন। স্বাদ চিল্লিয়ে বলে উঠে, “কি হল?বল না কেন?”
রেহানা বেগম– আমি আজ ভুল করে সব জামা কাপড় ওয়াশিং মেশিনে দিয়ে দিয়েছি।
স্বাদ মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ে সোফায়। কটমট করে বললো, “আমি এবার কি পড়বো?”
রেহানা বেগম– সরি।
স্বাদ চেঁচিয়ে উঠে, “সরি দিয়ে আমার কাজ টা কি?আমাকে তোমার একটা শাড়ি দাও। পড়ে বসে থাকি।”
রেহানা বেগম– তা করতেই পারিস।আরো আজ ছুটির দিন,বাসাতেই থাকবি।আমি ছাড়া কোনো সাক্ষী থাকবে না।
স্বাদ— Disgusting……
রেহানা বেগম– আমি কি করলাম?তুই ই তো বললি!!
স্বাদ– আমি রুমে গেলাম।আমাকে আর ডাকবে না।
স্বাদ উপরে উঠে যায়। রেহানা বেগম ফ্রিজ থেকে মাংস নামালেন।আজ বিরিয়ানি রান্না করবেন ঠিক করেন।
হঠাৎ কলিং বেল বেজে উঠল। রেহানা বেগম আঁচলে হাত মুছতে মুছতে এগিয়ে গেল দরজার দিকে।
দরজা খুলতেই হা হয়ে যান তিনি,,,,
রিদীমা মামণি!!
Hi আন্টি!!
কি খবর?তুমি হঠাৎ??
বাইরেই থাকবো না কি??
আরে না না,,,এসো।
রিদীমা কে ভেতরে ঢুকতে দিয়ে দরজা বন্ধ করে রেহানা বেগম।
আন্টি আপনার ডক্টর ছেলে কই??
আছে তো ! উপরে….
ডেকে দিন।।
আজ আমি হাজার ডাকলে ও রুম থেকে বের হবে না। দরজায় খিল দিয়েছে।
কেন??
রেহানা বেগম বলতে গিয়ে ও চুপ হয়ে গেলেন।তারপর নম্র সুরে বললেন,”তুমি একটু দেখো না। আমি কিছু বললেই তো যুদ্ধে নামে।”
রিদীমা স্বাদ কে ডাকতে উপরে যায়। আর রেহানা বেগম মুচকি হেসে রান্না ঘরে ঢুকে।
———————————————-
সিনথিয়া আর তুলি বটগাছের নিচে বসে ফোনে কিছু একটা দেখছিলো,,,,
তুলি — তুই রবিন কে বলেছিস??
তমা– কি??
তুলি — পছন্দের কথা টা??
তমা — আজ বলবো।
তুলি বিস্ময় নিয়ে, “Wowwwww…সত্যি।”
তমার মনোযোগ ফোনে দিয়ে, “হুম।”
প্রায় আধঘন্টা পর,,,রবিন শুভ আর নয়ন তিনজনে একই বাইক দিয়ে ভার্সিটির ভিতরে ঢুকে। তুলি তমাকে খোঁচা মারে।
তুলি — এই তমা!এসে গেছে তোর হিরো।
তমা– ওকে,এদিকে আসতে দে।
শুভ আর রবিন বাইক থেকে নামে।নয়ন বাইক সাইড করে রাখতে যায়। রবিন হাসি হাসি মুড নিয়ে এগোয় তমাদের দিকে,,,
শুভ — আজ অনেক খুশি যে তুই!ব্যাপারটা কি?
রবিন– Miss অধ্যাপিকা কে জ্বালানোর নতুন টেকনিক খোঁজে পেয়েছি।
শুভ — কি ?বল না দোস্ত!!
রবিন– আছে আছে।
ততক্ষণে তমা আর তুলি দের কাছে চলে এসেছে ওরা।তমা আড়চোখে তাকায় একবার রবিনের দিকে। রবিন আর শুভ আড্ডায় ব্যস্ত। তমা রবিনের দিকে তাকিয়ে,,
তমা– তোকে কিছু বলার ছিলো।
রবিন– বল।
তমা — আমি তো………..
এর আগেই নয়ন দৌড়ে আসে রবিনের কাছে।নয়ন হাঁপাতে হাঁপাতে বলে,”রবিন!তোকে সাইদ আঙ্কেল আর তোর বাবা ডাকছেন।”
রবিন– কেন?
নয়ন– জানি না।
রবিন তমার দিকে তাকিয়ে, “তোর কথা পরে এসে শুনছি।দেখে আসি জরুরী তলব কেন?”
তমা মুখ ভার করে,”আচ্ছা। যা…….”
রবিন অফিস রুমের দিকে এগিয়ে গেল।তমা আর তুলি মুখে মেঘ নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে।
আসতে পারি???
সাইদ রহমান দরজায় তাকিয়ে, “আরে রবিন বাবা!আসো আসো।”
রবিন– আমাকে ডেকোছো বাবা??
আফজাল সাহেব কিছু কাগজপত্র রবিনের হাতে ধরিয়ে দেয়।
আফজাল সাহেব– এগুলো ভার্সিটির নবীনবরণ উপলক্ষে আনুষ্ঠানিক সকল আয়োজনের কাগজ পত্র। সব স্টুডেন্ট দের নিয়ে বিভিন্ন ইভেন্ট তৈরি করা হয়েছে। কে কোন ইভেন্টে নাম দিবে , কি করবে সব সিলেক্ট করার দায়িত্ব তোমার।
রবিন কিছুক্ষণ ভেবে একটা দুষ্টু হাসি দিয়ে, “Ok…”
সব বুঝে নিয়ে অফিস থেকে বেরিয়ে পড়ে রবিন। মনে মনে অনেক দুষ্টু বুদ্ধির উদয় হয়।
…………………………………………………..
রিদীমা এসে স্বাদের দরজায় নক করে,,,
স্বাদ রেগে বলে ,”মা তোমাকে না বলেছি।আমাকে ডাকতে আসবে না।যাও তুমি। ”
রিদীমা কোনো শব্দ করে না ,,, মুচকি হেসে দরজায় বারবার নক করতেই থাকে………..
স্বাদ এবার না পেরে দরজা খুলে।স্বাদ কে এভাবে দেখে রিদীমা জোরে চিৎকার দেয়। স্বাদ ও ভ্যাবাচ্যাকা খায়।রিদীমা কে এই মুহূর্তে একেবারেই আশা করেনি স্বাদ।
একি !তুই এখানে??
আগে বল ,তুই এভাবে রুমে কি করছিস?(চোখ বন্ধ করে)
স্বাদ— আর বলিস না, মা সব জামা কাপড় ওয়াশিং মেশিনে দিয়ে দিয়েছে।তাই আজ এভাবে রুমে বসে অনশন করছি।
রিদীমা– আচ্ছা আচ্ছা!আমি নিচে গেলাম।
স্বাদ কে আর কিছু বলতে না দিয়ে রিদীমা নিচে নেমে আসে।স্বাদ কিছুক্ষণ রুমে পায়চারি করে ,কাছেই একটা শপিং মল থেকে ফোনে এক স্যুট জামা কাপড় অর্ডার করে নেয়।আজকের এই দিনেই রিদীমা কে আসতে হল এটা ভেবে কপাল চাপকাতে থাকে স্বাদ।
__________________________(চলবে)