#Senior_life_partner
পর্ব——-10
Afrin Ayoni
স্বাদ তাড়াহুড়ো করে কেবিন থেকে বেরুতে যাচ্ছিলো।
তখনই হসপিটালের একজন আয়া ছুটে এসে জানায়,,
আয়া — Mr. Ahsan ….. আজকে আপনার একটা ইমার্জেন্সি সার্জারি কেস আছে। কোথায় যাচ্ছেন?
স্বাদ— আমি আমার কাজের কোনো অবহেলা করি না মিসেস চক্রবর্তী। So I will manage….
আয়া টা একজন ইন্ডিয়ান। স্বাদের সাথে ওনার একটু ভালো সম্পর্ক আছে।আয়া টা একটু এগিয়ে এসে বললো,,”Anything wrong mr. Ahsan?”
স্বাদ– এখানো কিছু হয়নি….But বেশি late হলে বিনা কারণে আমাকেই সার্জারি পেশেন্ট বানিয়ে ফেলবে।
কথাটা বলেই স্বাদ হসপিটাল থেকে বেরিয়ে পড়ে।প্রায় দশ মিনিট পর একটা নামি দামি কফি শপের সামনে এসে দাঁড়ায় স্বাদের গাড়ি।স্বাদ গাড়ি থেকে জলদি বের হয়ে কফিশপে দৌড়ে ঢুকে।
কফি শপের একটা কোণের টেবিলে বসে আছে রিদীমা।পরনে তার হালকা সুতির থ্রিপিস।স্বাদ রিদীমা কে দেখে খুব অবাক হয়।চোখে মুখের কাঠিন্য টা নেই আজ।স্নিগ্ধ,শীতল চাহনি নিয়ে কফি শপের জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে।স্বাদের কাছে ব্যপারটা কেমন গোলমেলে ঠেকছে।এই যেন ভার্সিটির সেই চঞ্চল কিশোরী রিদীমা।আজকের রিদীমা আর এই কদিনের business woman রিদীমা চৌধুরীর মাঝে আকাশ পাতাল পার্থক্য।
স্বাদ ধীরে ধীরে রিদীমার টেবিলের দিকে এগোয়। রিদীমা স্বাদ কে লক্ষ্য করে বসতে বলে,,,,,
স্বাদ— Any problem, রিদ??
রিদীমা মুচকি হেসে, “না রে…. no problem”
স্বাদ– লুকোচ্ছিস ? আমার কাছে?
রিদীমা ভ্রু কিঞ্চিত করে তাকিয়ে আছে স্বাদের দিকে,সত্যি এভাবেই ভার্সিটির দিন গুলো তে কথোপকথন হত তাদের মাঝে।
রিদীমা কে চুপ করে থাকতে দেখে স্বাদ বলে উঠলো,,,
স্বাদ– বাইরের বেশভূষায় কাঠিন্য ভাব টা ভালো ই দূর করে রেখেছিস।কিন্তু ভেতরে সেটা রয়েই গেল।আসলেই মানুষের পক্ষে একদিনে change হওয়া কখনোই সম্ভব না।
রিদীমা— আমি Change হতে চাই ও না।এই ব্যস্ত জীবন আমাকে খুব ভালো রেখেছে।
স্বাদ– সেটা তোকে দেখলেই বোঝা যায়। কিন্তু মানুষের জীবনে আবেগ অনুভূতি এসব কিছু ও থাকা উচিত।
রিদীমা একটা বড় নিঃশ্বাস ছাড়ে, মাথাটা টেবিলের উপর রাখে।স্বাদ কিছু টা সময় দিল।কারণ, রিদীমার টাইম সেন্স স্বাদের থেকে ও হাজার গুণ বেশী।বিনা কারণে রিদীমা নিজের এবং অন্যের কারো সময়ই নষ্ট করবে না।
রিদীমা মাথা তুলে তাকালো ,স্বাদ উৎসুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। রিদীমা কফিতে চুমুক বসায়।
রিদীমা,,,,”কফি টা নে!”
স্বাদ– কিছু কি হয়েছে??
রিদীমা– আমাদের final exam এর পর তুই ডাক্তারি পড়তে এ দেশে পাড়ি জমালি।আর ঐদিকে আমার আর তার সম্পর্ক টা অনেক জমে উঠেছিলো।
স্বাদ– শাহরিয়ারের??
রিদীমা— হ্যাঁ।
স্বাদ– তারপর ??
রিদীমা– তখন পড়াশোনা শেষ হয়েছে মাত্র আমি আমাদের business টা হালকা ভাবে সামলাচ্ছিলাম।দাদুভাই ও ছিলেন আমার পাশে।
স্বাদ– হুম!!
রিদীমা– সে ও একটা সরকারী চাকুরি নেয়।শিক্ষকতা করার অনেক ইচ্ছে ছিলো।তাই ঐ ক্যারিয়ারেই এগোতে থাকে সে।আমি ও কখনো বাঁধা দেইনি।
স্বাদ– Really…. এত ভালো রেজাল্ট নিয়ে গর্দভ টা ছোটখাটো সরকারি স্কুলের টিচার হয়েছে?
রিদীমা– এটা সম্পূর্ণ কারো personal Matter … আমি এসবে কখনোই হস্তক্ষেপ করিনি।
স্বাদ– হুম। তুই শুরু থেকেই এমন।
রিদীমা– ওর চাকরি আর আমার business নিয়ে দুজনে ভালো ই ছিলাম।তারপর হঠাৎ আমার ফুপা দেলোয়ার খান দাদাভাই এর কাছে আমার জন্য একটা ভালো সম্বন্ধ আনে।তুই তো জানিস আমি কাউকে অনুরোধ করার মেয়ে না।কারো ডিসিশন আমার উপর চাপিয়ে দিলে আমি সেটা মেনে নেওয়ার মতো মেয়ে নই।
স্বাদ– হুম।
রিদীমা– দাদাভাই আর ফুপা আমাকে না জানিয়ে বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করে ফেললেন।
স্বাদ— What??
রিদীমা– বাবা ও বিষয় টা জানতো না।বাবাকে বিয়ের আগের দিন রাতে জানানো হল।আর আমাকে জানানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো বিয়ের আসরে।
স্বাদ– তোর family তখন ও তোকে চিনে উঠতে পারেনি, তুই ঠিক কি জিনিস??
রিদীমা– কিন্তু বাবা কথাটা শোনার সাথে সাথে আমার ঘরে ছুটে আসেন। আমাকে জানায়।বিশ্বাস কর,সেদিন এই রিদীমা চৌধুরীর পায়ের তলার মাটি টা যেন সরে গিয়েছিল।কোনো উপায় খুঁজে না পেয়ে আমি তাকে কল করে বললাম,”আমার হাতে শুধু আজকের রাতটাই আছে।যা করার এই রাতেই করতে হবে।”
স্বাদ— The great রিদীমা চৌধুরী পালিয়ে বিয়ে করার plan করছিলো ?রেলি ? ঐটা ও আজ আমাকে শুনতে হল।
রিদীমা– হুম।কিন্তু সে আমাকে প্রতিশ্রুতি দিয়ে ও পরের দিন সকালে আসলো না।সকাল গড়িয়ে দুপুর হয়ে এলো।তার কোনো খবর নেই।
স্বাদ এবার সিরিয়াস হয়ে বসলো,”কি বললি?”
রিদীমা ভাঙা কন্ঠে, “হ্যাঁ সে আসেনি!সেদিন এই রিদীমার মনে যতটুকু কোমলতা ছিলো সেটাও সে ঐ কাজী অফিসের সামনে কবর দিয়ে এসেছে।”
স্বাদ রেগে যায়, “ঐ রাসকেল টার সাহস হয় কি করে তোকে এভাবে ঠকানোর?”
রিদীমা– আমাকে হয়তো নিজের যোগ্য ই মনে করেনি।
স্বাদ উচ্চ স্বরে বললো,”যোগ্য তো ও ছিলো না তোর।”
রিদীমার চোখ দিয়ে পানির শ্রোত নামছে।স্বাদ কথা বাড়ায় না।রিদীমা কে কেঁদে কেঁদে নিজের মনটা কে হালকা করার সময় দেয়।
স্বাদ অস্পষ্ট স্বরে বলে উঠলো,,”আমার রিদের সাথে এত ভয়াবহ বিশ্বাসঘাতকতার পরিণাম তোকে ভোগ করতে হবে শাহেদ শাহরিয়ার!!??”
…………………………………………
ভার্সিটির সামনে টং দোকানে বসে চা খাচ্ছিলো রবিন। শুভ আর নয়ন কিছু একটা নিয়ে খুব মারামারি করছিলো।একজন ধুম করে পিঠে কিল বসাচ্ছে, তো আরেকজন মাথায় চাঁটি মারছে।রবিন একবার হেসে ওদের দিকে তাকিয়ে চায়ের কাপটা টেবিলের উপর রেখে পকেট থেকে ফোন টা বের করে গেম খেলতে শুরু করে।
শুভ আর নয়ন দুষ্টুমির এক পর্যায়ে চায়ের দোকান থেকে বেরিয়ে পড়ে। দুজনে হাতাহাতি করতে করতে মাঝ রাস্তায় এসে দাঁড়ায়। ভার্সিটির ক্লাস শেষ করে অফিস রুমে কিছু কাজ ছিলো ইসুয়ার। কাজ কমপ্লিট করে ভার্সিটি থেকে বেরুচ্ছিলো ইসুয়া। কিন্তু শুভ আর নয়ন কে দেখে থমকে দাঁড়ায় সে।রাস্তায় দাঁড়িয়ে মারামারি করছে,অন্য দিক থেকে একটা ট্রাক আসছে।
ইসুয়া অনেক বার ডাকে দুজন কে।কিন্তু রাস্তায় এত শোরগোলের জন্য ইসুয়ার আওয়াজ কানে আসে না দুজনের।ইসুয়া আর দেরি করে না।দৌড়ে যায়। বেশি সময় নেই।
ইসুয়া ছুটে এসে শুভ আর নয়ন কে ধাক্কা মারে।কিন্তু রাস্তা থেকে নিজেকে সরাতে যাওয়ার সময় ই উষ্টা খেয়ে রাস্তার পাশের কারেন্টের পিলারের সাথে মাথায় ছুট খেয়ে অজ্ঞান হয়ে যায়। শুভ আর নয়ন,,,ইসুয়ার ধাক্কা খেয়ে রবিনের উপর গিয়ে পড়ে।
ঘটনা ক্লিয়ার হতে তাদের দুই মিনিট সময় ব্যয় হয়।পাশেই ইসুয়া কে অজ্ঞান অবস্থায় দেখে তিনজনে ছুটে আসে। রবিন ইসুয়া কে ডাকতে লাগে।কোন সাড়াশব্দ না পেয়ে কোলে তুলে নেয় ইসুয়াকে। শুভ আর নয়ন দুজনেই একটা cng দাঁড় করায়। তিনজনে মিলে ইসুয়া কে নিয়ে হসপিটালে যায়।
“পুরো পৃথিবী একদিকে
আর আমি অন্য দিক,,,,,
সবাই বলে করছো ভুল আর তোরা বলিস ঠিক।
তোরা ছিলি,,,,,তোরা আছিস
জানি ………………. তোরাই থাকবি !!
বন্ধু ওওওওওওওওওওওও
বুঝে আমাকে……
বন্ধু আছে এ এ এ ,আর কি লাগে??”
শাহেদ গানটা শুনছিলো আর ছাদে বসে মেঘলা আকাশ টা দেখছে।পিছন থেকে তার বোন শিলা এসে তার পিঠে হাত রাখে।
শাহেদ টলমল চোখ দুটো নিয়ে বোনের দিকে তাকায়।
শিলা ভাইকে বলে,,”এখনো রিদীমা আপু আর স্বাদ ভাইয়া কে খুব মিস করো!তাই না ভাইয়া?”
শাহেদ — বন্ধু দের ভুলে যাওয়া এত সহজ নয়।
শিলা — আমার রিদীমা আপুর Confidence level টা খুব ভালো লাগতো।এরকম মেয়ে দুটো পাওয়া খুব দুষ্কর।
শাহেদ — বড়ই জেদি।একবার যা বলবে,যা করবে ভাবে সেটাই final ….
শিলা — হুম,আপুর সবকিছু একেবারে কাটা কাটা।কোন হেরফের নেই।এরকম মেয়ে গুলোই তো একেবারে নিখুঁত থাকে মন থেকে।
শাহেদ যেন রিদীমার কথা এড়িয়ে যেতে চাইছে।বোন কে পাল্টা প্রশ্ন করে,”আর স্বাদ?ও কেমন ছিলো?”
শিলা — স্বাদ ভাইয়া,সে তো আস্ত একটা ভীতু ছিলো।তুমি আর রিদীমা আপু ছিলা high ভোল্টেজের।তোমাদের ভোল্টেজের শক খেতে খেতে বেচারা স্বাদ ভাইয়া একেবারে দুর্বল হয়ে পড়েছিলো…হা হা হা হা!
শাহেদ বিষন্ন মনে আবার আকাশের দিকে তাকায়। শিলা ভাইয়ের মন খারাপের ব্যপার টা বুঝতে পেরে,,,
শিলা — ওদের সাথে কখনো যোগাযোগ করার try করনি??
শাহেদ– স্বাদ আর রিদীমা দুজন ই লন্ডনে আছে।স্বাদ অনেক বড় ডক্টর লন্ডনের আর রিদীমা!!সে তো London এর business lady…..এক নামে সবাই চেনে।
শিলা হা হয়ে যায়, “Really?”
শাহেদ– হুম।
শিলা — দেশে আসে না?কখনো তোমার সাথে দেখা করতে আসতে দেখিনি!!
শাহেদ— স্বাদ আর আসেনি,শুনেছি দুবছর আগে আন্টিকে সব ব্যবস্থা করে নিয়ে গেছে। আর রিদীমা তার business এর বাইরে কিচ্ছু ভাবে না।শুনেছি কিছু দিন আগে এসেছিল হয়তো কোনো কাজে?তাও শুধু 3 hours এর জন্য। প্রয়োজন ছাড়া এদেশে পা রাখে না।
শিলা — ভালো ই আছে তাহলে দুজনে।
শাহেদ– হুম।
শিলা — আর তুমি??
শাহেদ– আমি মানে??
শিলা — কিছু না।
শিলা চলে যায়। শাহেদ বুঝতে পারে শিলা কি বলতে চেয়েছিলো।কিন্তু কথা বাড়ায় না। এসব ব্যপার ঘাঁটলে দীর্ঘশ্বাস ছাড়া কিছুই বের হয় না।
শাহেদ মনে মনে বলে,”রাগীনি রিদ!আপনি কি কখনোই আর আমার কাছে ফিরে আসবেন না?কখনোই আমাকে আমার অবস্থার কথা explained করার সুযোগ দিবেন না?কেন সেদিন সন্ধ্যায় এত বড় একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলেন?আর একটা দিন কি অপেক্ষা করা যেত না?সেদিনের ফ্লাইটে ই লন্ডনে চলে গেলেন?”
…………………………………
হসপিটালের বেডে শুয়ে আছে ইসুয়া। তার পাশে বসে চোখের জল ফেলছেন ঝুমা বেগম।কেবিনের দরজায় ভ্রু কুঁচকে দাঁড়িয়ে আছে তারেক সাহেব। নিশুয়া কেবিনের বাইরের বেঞ্চিতে বসে আছে।
রবিন, শুভ আর নয়ন দেয়ালে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। শুভ নয়নের দিকে তাকিয়ে বললো,”আমাদের জন্য হয়েছে সব।”
নয়ন — এটা একটা accident দোস্ত।
শুভ — তারপর ও আমাদের বাঁচাতে গিয়ে ই।
রবিন– আপাতত চুপ কর একটু।ভাল লাগছে না।
আফজাল সাহেব ছেলের মেসেজ পেয়ে ছুটে আসেন হসপিটালে।রবিন বাবাকে দেখে এগিয়ে গেল,,,
আফজাল সাহেব রবিনের দিকে তাকিয়ে, “কি করে হল?”
তারেক সাহেব আফজাল সাহেবের কন্ঠ শুনে পিছনে ফিরে তাকালেন।এগিয়ে এসে অভিযোগের সুরে বললেন,,”আমি চাইনি আমার মেয়ে কোনো জব করুক।তোর ভরসাতেই তোর ভার্সিটিতে জব টা করতে দিয়েছিলাম।”
আফজাল সাহেব– দোস্ত ভুল বুঝিস না। Accident যেকোনো সময় যার তার সাথে ই হতে পারে। শান্ত হ।
আফজাল সাহেবের মুখে দোস্ত কথাটা শুনে রবিন শুভ আর নয়নের চোখ কপালে উঠে গেল। শুভ রবিনের দিকে তাকিয়ে বললো,”মিস ইসুয়া যে তোর বাবার বন্ধুর মেয়ে বলিসনি কেন আমাদের?”
রবিন– আমি নিজে ও তো জানতাম না বাল।
নয়ন — জোর কা ঝটকা লাগা …….???
রবিন দুষ্টু হেসে বলে উঠে,, “ইসুয়া তালুকদার,এবার তো আপনার আর রেহাই নেই রবিন চৌধুরীর হাত থেকে।”
নয়ন আর শুভ নিঃশব্দে হেসে উঠে। এতক্ষণ নিশুয়া তাদের আড়চোখে লক্ষ্য করছিলো।এবার আর থাকতে না পেরে এগিয়ে আসে।
নিশুয়া — এই আপনারা আমার আপুর এক্সিডেন্টে এত খুশি কেন?
রবিন শুভ আর নয়ন ,নিশুয়ার কথায় ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল। নিশুয়া আবার বলে উঠে, “এই accident এর পিছনে আপনাদের কোনো হাত নেই তো?”
রবিন এগিয়ে এসে বলে,”ওরে গোয়েন্দা রে!আপনার বোনকে ভালবেসে মেরে ফেলার ষড়যন্ত্র করতেছি।”
____________________________(চলবে)