#Senior_life_partner
পর্ব—24
Afrin Ayoni
মুখের উপর এক জগ পানি পড়তেই ধড়ফড় করে উঠে বসে ইসুয়া ।পাশেই নিশুয়া বসে মিটিমিটি হাসছে। ইসুয়া যে পাশে শুয়ে ছিলো সেই দিকে খাটের পাশেই জগ হাতে দাঁড়িয়ে আছে রবিন। ইসুয়া ঘুম থেকে উঠেই ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল।
রবিন– Good morning মহারাণী।
ইসুয়া– এটা কি ধরনের আচরণ??
রবিন– Surprise দিলাম।বিয়ের পর থেকে এত লেইট করে ঘুম থেকে উঠলে আরো বিভিন্ন ধরনের surprise আপনার জন্য তৈরি করা আছে আমার কাছে।
ইসুয়া– সকাল সকাল এমন বেয়াদবির কোনো মানে হয় না।
ইসুয়ার পরিধান করা জামাটার অধিকাংশ ভিজে চপচপে হয়ে আছে।ইসুয়া হাত দিয়ে বুকের দিকটার পানি ঝাড়তে থাকে।নিশুয়া অসহায় মুখ করে বললো,,
নিশুয়া– ইস!এবার কি হবে??
রবিন ইসুয়ার দিকে তাকিয়ে– Sry sry … আমি এত দিক ভেবে দেখিনি ।
ইসুয়া ভ্রু কুঁচকে বসে রইলো খাটের উপর। নিশুয়া ইসুয়ার নীরবতায় খানিকটা ভয় পেয়ে চুপসে আছে।
নিশুয়া– এই ভিজা কাপড়ে নিচে যাবি কি করে?
ইসুয়া বিরক্ত হয়ে বললো– এত দরদ এখন আর দেখাতে হবে না, যখন পানি দিচ্ছিলো তখন তো ঠিকই দাঁত কেলাচ্ছিলি??
নিশুয়া চুপ হয়ে যায়। রবিন কিছু একটা ভেবে বলে উঠলো– এত রাগছেন কেন জাসি কা রাণী?? Just one minute……
ইসুয়া চোখ বন্ধ করে বসে রইলো।নিশুয়া ও নিশ্চুপ।প্রায় তিন মিনিট পর একটা Black কালারের শাড়ি নিয়ে এলো রবিন।তারপর ইসুয়ার দিকে তাকিয়ে বললো……
রবিন– এতে হবে??
ইসুয়া অনেকক্ষণ শাড়িটার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো– জ্বি না,হবে না। আমি এখন ব্লাউজ কই পাবো?
নিশুয়া কিছু বলতে যাবে তার আগেই রবিন দৌড়ে কোথাও চলে গেল। আবার মিনিট খানেক বাদে ফিরে এলো,,,,হাতে dark rad কালারের হাফ হাতা গেন্জি আর একটা কাপড় কাটার কাঁচি নিয়ে।
নিশুয়া– এগুলো কী??
রবিন– ওয়েট দেখতে থাকো শালিসাহেবা।
তারপর রবিন তার গেন্জিটা পেটের দিক থেকে বেশ খানিকটা কেটে শর্ট করে নিলো।ইসুয়ার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বললো — এই নাও,এটা দিয়ে আপাতত ব্লাউজের কাজ সেরে ফেলো।
ইসুয়া — What ??
রবিন– নয়তো আর কোনো উপায় নেই।আপুনি শাড়ি পড়ে না খুব একটা।তাই তার কাছে কেয়ামত পর্যন্ত খুঁজলে ও একটা ব্লাউজ পাওয়া যাবে না।আর সিনথিয়া ও এসব শাড়ি কাপড় পড়ে না। আর ওর যে কটা ব্লাউজ আছে ঐ সব আমি তোমাকে জীবন গেলেও পড়তে দিব না।
নিশুয়া উত্তেজিত হয়ে — কেন কেন??
রবিন– তুমি বুঝবে না এসব শালিসাহেবা।
ইসুয়া চোখ উল্টিয়ে — বুঝিয়ে বললেই বুঝবে।
রবিন ইসুয়ার দিকে তাকিয়ে চোখ মারে,তারপর দুষ্টুমির সুরে বললো — নিশুয়া সামনে না থাকলে আমি আপনার সামনে বলতে দ্বিধা করতাম না। but এখন যখন আপনি শুনতে চাচ্ছেন তাহলে বলেই ফেলি।
ইসুয়া আর নিশুয়া কিছু বুঝতে না পেরে একে অপরের মুখ চাওয়া চাওয়ি করছে।
রবিন– আসলে সিনথিয়ার সকল ব্লাউজ ই 18+ …. ঐ সব বিয়ের আগে আমি আপনাকে পড়তে দিচ্ছি না। আর বিয়ের পরে পড়লেও Only bedroom অবধিই।
ইসুয়া রবিনের কথা শুনে কাশতে লাগলো।নিশুয়া লজ্জায় পানি খাওয়ার বাহানা দিয়ে ভাগলো।নিশুয়া চলে যেতে ই রবিন হা হা করে হেসে উঠলো।ইসুয়া তাকিয়ে আছে এক রাশ রাগ নিয়ে।
রবিন হাসি থামিয়ে বলে — So,এটা আমার একটা গেন্জি ছিলো।আমার গায়ে হত না। অনেক ছোট ছিলো তাই। আপনার ব্লাউজের মাপ হবে আশা করি ,না হলেও কিছু করার নেই।এটা দিয়ে ই কিছুক্ষণ চালাতে হবে।
ইসুয়া আর কোনো কথা বললো না। রবিনের হাত থেকে ছোঁ মেরে শাড়ি আর গেন্জি টা নিয়ে ওয়াশরুমে গিয়ে ঠাস করে দরজা লাগিয়ে দিল ইসুয়া। রবিন পিছন থেকে বিড়বিড় করে বললো,”একটা Thnx অবধি দিলো না,,হায় রে কপাল!”
সবাই ব্রেকফাস্ট করতে বসেছে।ডাইনিং টেবিলে বসে সিনথিয়া ফোন টিপছে,রবিন আর নিশুয়া আড্ডা মারছে।সিনথিয়ার যেন ইসুয়া নিশুয়া কোনো বোনকেই পছন্দ হচ্ছে না। বাকি সবাই সবার সাথে কথা বলছিলো বিভিন্ন টপিক নিয়ে।
সিনথিয়া তার বাবা দেলোয়ার খানের পাশেই বসেছিলো। রবিনের একপাশে নিশুয়া বসেছে আর অন্য পাশের চেয়ারটা খালি।তার একটা চেয়ার পরেই আকাশ আর তার বউ বসেছে। তারপর বাকি সবাই।
দেলোয়ার খান মেয়ের দিকে তাকিয়ে ফিসফিসিয়ে বললেন — মামণি তোমাকে এখন রবিনের সাথে ঘেঁষে ঘেঁষে থাকা উচিত।
সিনথিয়া– ড্যাড আমার যতটুকু করার করছি তো।
দেলোয়ার খান– ছোট ছোট কোনো কিছুতে একটু ভুল হলেও আমাদের প্ল্যান বেসতে যাবে।
সিনথিয়া– রবিনের পাশেই বসতাম।But মামুর বন্ধুর ঐ মেয়ে দুটো কে আমার একদমই সহ্য হচ্ছে না।
দেলোয়ার খান– সবুরে মেওয়া ফলে।
সিনথিয়ার কানে তার বাবার সলাপরামর্শ খুব ভালোভাবেই ঢুকেছে।তৎক্ষণাৎ সে রবিনের অন্য পাশে গিয়ে বসলো। রবিনের দাদী মমতা চৌধুরী ও আজ ডাইনিং টেবিলে উপস্থিত।
সবাই একটু নীরব হতেই মমতা চৌধুরী বলে উঠলেন,,
মমতা চৌধুরী– বাবা আফজাল!!
আফজাল সাহেব– জ্বি মা।
মমতা চৌধুরী– আমার বড় নাতনি কই ? শুনলাম ও এসেছে, একবার ও তো দেখলাম না।
রবিন দাদীর দিকে তাকিয়ে– দাদীজান আপুনি ছয়টায় জগিং এ বেরিয়েছে।
মমতা চৌধুরী হাতের ঘড়ির দিকে তাকালেন,তারপর বললেন — আরো সাত মিনিট আমাদের অপেক্ষা করতে হবে তাহলে।
আকাশ– হ্যাঁ নানু।নয়টা বাজতে এখনো সাত মিনিট বাকি।
মমতা চৌধুরী– আমার তোমাদের সাথে কিছু জরুরী কথা বলার ছিলো।
আফজাল সাহেব– হ্যাঁ মা,বল।
সুরাইয়া খান — কি বলবে?
দিতী বেগম– ব্রেকফাস্ট টা করে নিন আগে।তারপর বলবেন না হয়।আমি ও আজ সবাইকে কিছু বলতে চাই।
মজার ছলে তারেক সাহেব বললেন — খালাম্মা আর ভাবীজান আমরা বাইরের লোক হয়ে আপনাদের সিক্রেট শোনার ভাগীদার হলাম।
দিতী বেগম– সে তো হতেই হবে।আপনারা এত কাছের লোক যেহেতু …..
ঝুমা তালুকদার– এত জলদি আমাদের আপন করে নিবেন ভাবতেও পারিনি।
দিতী বেগম– এভাবে বলবেন না।আমরা কি দূরের কেউ নাকি??
আফজাল সাহেব– তা ঠিক তা ঠিক।আমরা সবাই এক সুতোয় গাঁথা।
রবিন বুঝতে পারছে তার মা ঠিক কি বলবে।কিন্তু দাদীজান কি বলতে চাচ্ছেন সেটা তার বোধগম্য হচ্ছে না। দেলোয়ার খান মনে মনে হাসছেন। যাক তার plan এর প্রথম step তাহলে কাজে দিচ্ছে।
রিদীমা ঠিক নয়টায় সবার সাথে এসে যোগ দিল।রিদীমা কে দেখে মমতা চৌধুরীর মুখের ভাষা হারিয়ে ফেললেন।
রিদীমা এসে চেয়ারে বসতে বসতে দাদীর দিকে তাকিয়ে বললো– “এখন শরীর কেমন আছে আপনার?”
মমতা– এই তো ভালো।কাল এসেছো,অথচ একবার ও দেখা করলে না তো।
রিদীমা– কাল আপনার বিশ্রাম নেওয়াটা আমার দেখা করার চেয়ে ও বেশি জরুরি ছিলো।
মমতা — আগের মতোই আছো দেখছি এখনো।
রিদীমা– বদলাবার কথা দিয়েছিলাম নাকি কখনো?
মমতা– না,ঠিক তা না।
রিদীমা– ব্রেকফাস্ট করে সকালের মেডিসিন টা জলদি নিয়ে নিন নয়তো শরীর খারাপ করবে।
রিদীমা আর মমতা চৌধুরীর মাঝে মেপে মেপে ঠিক এতটুকু কথাই হল।এই যেন এক বনে ঠিক দুই বাঘ।কারণ,মমতা চৌধুরীর উপর বাড়ির কেউ কথা বলতে পারে না আর রিদীমার ডিসিশনের উপর কারো কিছু বলার সাহস নেই।
রিদীমা– সবাই বসে কেন? ব্রেকফাস্ট শুরু কর।
দিতী বেগম নিশুয়ার দিকে তাকিয়ে– নিশুয়া মামণি তোমার আপু কই?
ইসুয়া তখন সিঁড়ি বেয়ে নামতে নামতে জবাব দিলো — এইতো আন্টি আমি এসে গেছি।
সবার চোখ তখন নিশুয়ার দিকে।রবিন তো হা হয়ে আছে। নিশুয়া তার কনুই দিয়ে একটা খোঁচা মারে রবিনকে।রবিন জলদি করে অন্য দিকে ফিরে গেল।
দিতী বেগম ইসুয়ার দিকে এগিয়ে গেল– মাশাল্লাহ।পুরাই চাঁদের আলো।
তারপর সবাই একসঙ্গে ব্রেকফাস্ট করতে বসলো।সবার খাওয়া যখন শেষের দিকে তখন মমতা চৌধুরী হালকা কেশে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করলেন।
মমতা– তোমরা তো দেখছো আমার বয়স হয়েছে। শরীরটাও খুব একটা ভালো যাচ্ছে না। তাই সবার সাথে একটা সিদ্ধান্ত নিতে চাই।
আফজাল সাহেব– কি সিদ্ধান্ত মা?
মমতা– বেঁচে থাকতে রিদীমার বিয়ে দেখে যেতে পারবো বলে আমার মনে হয় না। তাই আমি আমার একমাত্র নাতি রবিনের বিয়েটা স্বচক্ষে দেখে শান্তিতে মরতে চাই।
দিতী বেগম– আপনি চাইলে বিয়ে হবে।এখানে মৃত্যু কে কেন টানছেন মা? আমি ও আজ এই ব্যাপারে কিছু বলতে চেয়েছিলাম।
রিদীমা রবিনের দিকে তাকিয়ে– কিরে তোর কি মত?
রবিন গম্ভীর মুখে — আমি আর বলবো??
রিদীমা– ohhh…. তুই তো বর সেজেই বসে আছিস তাইলে।
ইসুয়া মনে মনে– হে খোদা!তোমার মসজিদে একশো এক ডেকচি শিন্নি দিব,শুধু এই আজব প্রাণীরে বিয়ে করিয়ে আমার ঘাড় থেকে নামাও।
আফজাল সাহেব– কিন্তু এই বেকার ছেলের কাছে কোন ব্যাটা মেয়ে দিব।পুরাই অপদার্থ।
রবিন– বাবা???
তারেক সাহেব রবিনকে বাহবা দিয়ে– মোটেও না,রবিন হিরের টুকরো ছেলে।
ঝুমা বেগম– তা আর বলতে?লাখে কয়টা হয় এমন ছেলে।
ইসুয়া মনে মনে রবিনের দিকে তাকিয়ে– আরে মা,বল যে…. লাখে একটাও হবে না এমন লেজ কাটা বজ্জাত ছেলে।
দিতী বেগম মমতা চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে– মা…. মেয়ে হিসেবে___________
আর কিছু বলতে পারলো না দিতী বেগম। মমতা চৌধুরী হাত দিয়ে থামিয়ে দিলেন।তারপর সকলের দিকে তাকিয়ে বললেন– মেয়ে নিয়ে তোমাদের ভাবতে হবে না। মেয়ে আমার ঠিক করাই আছে।
সবাই হা করে মমতা চৌধুরীর দিকে তাকালেন।আকাশ তার দিকে তাকিয়ে বললো — সে কি নানু!তুমি তো দেখি আমাদের চেয়ে ও ফাস্ট।
দিতী বেগম– মেয়ে ঠিক করা আছে মানে ??
মমতা চৌধুরী– মেয়ে এখানে ই আছে।
দিতী বেগম আর সুরাইয়া খান একে অপরের মুখ দেখছেন,তবে কী মমতা চৌধুরী ও ইসুয়াকেই পছন্দ করেছেন রবিনের জন্য??
রবিন বেচারা নীরব দর্শকের মত চেয়ে আছে কেবল।এ যেন কল্পনার বাইরে।মমতা চৌধুরীর কথা শুনে ইসুয়া আফজাল সাহেব আর রিদীমা ভ্রু কুঁচকালো।
দেলোয়ার খান এবার পোড়ণ কাটলেন– আম্মা!বিষয়টা সবাই কে বুঝিয়ে বললে বুঝতে সুবিধা হত।কেমন ধোঁয়াশা তৈরি হচ্ছে।
মমতা চৌধুরী– আমি চাই আমার রাজকুমারী সিনথিয়া নানুমণির সাথে আমার দাদুভাইয়ের বিয়ে টা দিতে।
আফজাল সাহেব– কিন্তু মা!
মমতা চৌধুরী– আমি সিদ্ধান্ত জানিয়েছি।আর কারো কিছু বলার থাকতে পারে বলে আমার মনে হয় না।
আফজাল সাহেব আড়চোখে তার মেয়ে রিদীমার দিকে তাকালেন।দেলোয়ার খানের সতর্ক চোখ দুটো বাপ মেয়েকে যেন টহল দিচ্ছে। রিদীমা তার বাবাকে চোখ নেড়ে আস্বস্ত জানায়।মেয়ের কথায় আফজাল সাহেব চুপ মেরে যায়।
এদিকে ডাইনিং টেবিলে উপস্থিত একজনের চোখ কঠোর লাল রঙ ধারণ করলো।কাটাচামচ হাতের মুঠোতে গেঁথে রক্তে যে ফ্লোর ভেসে যাচ্ছে সেদিকে কারো কোনো খেয়াল নেই।অন্য একজনের চোখে দৃশ্য টা পড়তেই তার বুকে মোচড় দিয়ে ওঠে।
ইসুয়া রবিনের হাতের দিকে তাকিয়ে পাথর হয়ে জমে গেছে। আর কেউ ই খেয়াল করেনি। সিনথিয়া রবিনের কাঁধে মাথা রেখে বলে উঠলো — “সত্যিই এবার তোকে আমার করে পাবো।তোকে আজ থেকে full & final ভাবে তুমি করে ডাকবো।”
রিদীমা তার ভাইয়ের ভিতরের উথাল পাতাল টের পাচ্ছে। কিন্তু পরিস্থিতি কিভাবে হ্যান্ডেল করতে হয় সেটা রিদীমা চৌধুরীর চেয়েও ভালো করে কেউ জানে না।
নিশুয়া রবিনের নিশ্চুপ থাকা মেনে নিতে পারছে না। কেন প্রতিবাদ করছে না রবিন এটা নিয়ে সে খুব অভিমান করলো রবিনের উপর।দিতী বেগম যেন কথা বলার ভাষা ই হারিয়ে ফেললেন। তার মাথায় কিছুই ঢুকছে না।
সবার অবাক হওয়া,রাগ হওয়া,পাথর হয়ে বসে থাকার মধ্যে একমাত্র একজন ই শেষ চেষ্টা করতে উঠে পড়ে লাগলেন।সুরাইয়া খান তার মায়ের দিকে তাকিয়ে বললেন,,,
সুরাইয়া খান — আমার কিছু বলার আছে মা।
মমতা চৌধুরী– তোমার আবার কি বলার থাকতে পারে।
সুরাইয়া খান — আমার মেয়ের বিয়ে ঠিক করছো অথচ আমাকেই জানালে না।
মমতা চৌধুরী– সিনথিয়া রবিনকে ভালবাসে,ও এই বিয়েতে রাজি।বাকি সিনথিয়ার বাবা!ওর মেয়ের খুশিতেই ওর খুশি আমি যতটুকু দেলোয়ার কে চিনি।
দেলোয়ার খান — অবশ্যই আম্মা।
সুরাইয়া খান — আর আমি কি চাই?রবিন কি চায়?ঐটা জানার প্রয়োজন বোধ করলে না?
মমতা চৌধুরী– জনে জনে মতামত নিতে হবে নাকি এখন আমাকে।
মায়ের ধমকে যেটুকু সাহস সঞ্চার করেছিলো সেটুকুও নিভে গেল মুহূর্তেই।বাকিটুকু দেলোয়ার খানের চোখ রাঙানিতেই শেষ।সুরাইয়া খান ও বাকি সবার মত পাথর হয়ে গেলেন।আর কিছু ই করার থাকলো না।
মমতা চৌধুরী– আর কারো কিছু বলার আছে এই বিষয়ে??
রিদীমা তার orange juice টা শেষ করে আওয়াজ তুলে গ্লাসটা টেবিলে রাখলো,”Ok guy’s…. আমার খাওয়া শেষ,অফিসে যেতে হবে।পরে দেখা হবে।”
দেলোয়ার খান রিদীমার এই শান্ত ভঙ্গির আচার আচরণে যথেষ্ট অবাক হলেন।এই মেয়েই সবার আগে প্রতিবাদ করার কথা কিন্তু সে এতটা শান্ত কি করে??
রিদীমা টেবিল ছেড়ে দু পা সামনে এগোতে যাবে তখনই মমতা চৌধুরী বলে উঠলেন– তুমি কিছু বললে না তো।
রিদীমা– এতে আমার কি বলার থাকতে পারে?
মমতা চৌধুরী– তারপর ও তোমার একমাত্র ভাইয়ের বিয়ের কথা চলছে।
রিদীমা হেসে– কথা চলছে?really?আমি তো দেখতে পাচ্ছি না। আমার মনে হচ্ছে রেডিও তে sad song বাজছে আর সবাই স্টেচো হয়ে শুনছে।কিন্তু এই মুহূর্তে আমার একেবারেই সময় নেই +মোড নেই এসব শোনার।
মমতা চৌধুরী হালকা চিৎকার করে বলে উঠেন– রিদীমা!!
রিদীমা সেদিকে তোয়াক্কা না করে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে লাগলো।রিদীমা চলে যাওয়ার পর মমতা চৌধুরী দিতী বেগমের দিকে তাকিয়ে বললেন– বউমা তুমি তোমার মেয়েটাকে মানুষ করতে পারলে না।
রবিন তখন অসহায় চোখে মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে ছিলো।দিতী বেগম ছেলের দিকে তাকিয়ে শ্বাশুরীকে উদ্দেশ্য করে বললেন–“এতদিন তাই মনে হত।কিন্তু আজ মনে হচ্ছে যদি ছেলেটাকেও ঐ রকম অমানুষ করতে পারতাম তবে আজ এভাবে চুপ করে থাকতো না, যে কারো রায় মাথা পেতে মেনে নিত না।”
রবিন উঠে দাঁড়িয়ে হাতের কাছের গ্লাসটা সজোরে আছাড় মারলো।শান্তশিষ্ট ছেলের এমন কান্ডে পরিবারের সবাই অবাক। আফজাল সাহেব ও ছেলেকে আপাতত ঘাঁটাতে চাইলেন না। রবিন দ্রুত বাড়ি ত্যাগ করলো।সবাই বুঝতে পেরেছে রাগের মাথায় বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেছে রবিন। কেউ ইচ্ছে করেই আটকায়নি তাকে।
একে একে সবাই সবার কাজে বিরষমনে চলে গেল।থেকে যায় দেলোয়ার খান আর সিনথিয়া। তারা ব্যস্ত পরের প্ল্যান সাজাতে।
তারেক সাহেব কিছু একটা আন্দাজ করে আফজাল সাহেবের কাছ থেকে জরুরি কাজের বাহানা দিয়ে তাদের বাড়ি থেকে বিদায় নিলেন।তার মতে কারো family matter এ না থাকাই উত্তম।
তারেক সাহেব রা বাড়ির পথে থাকাকালীন সময়েই ইসুয়া তার বাবার উদ্দেশ্যে বললো–“সামনেই মোড়ে আমাকে নামিয়ে দিও বাবা।”
নিশুয়া– এখন কই যাবি?
ইসুয়া– কেন?ভার্সিটিতে।
ঝুমা বেগম– আজ যেতে হবেনা তোকে ভার্সিটিতে।
তারেক সাহেব– মামণি খুব প্রয়োজন না হলে আজ যেও না। আসলে সবাই আমরা একটু শকে আছি আফজালদের বাড়ির ঘটনা টা নিয়ে।
ইসুয়া– বেশিক্ষণ থাকবো না বাবা,just দুটো ক্লাস এটেন্ড করবো।
তারেক সাহেব আর বাঁধ সাধলেন না মেয়েকে।ইসুয়া কে নামিয়ে দিয়ে তার পরিবার বাড়িতে ফিরে গেল।রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়েই রবিনের নাম্বারে প্রায় আট থেকে দশটা কল দিল ইসুয়া। নাম্বার টা বন্ধ করে ফেলেছে রবিন।তারপর বাধ্য হয়েই শুভর নাম্বারে ট্রাই করলো ইসুয়া। দুবার কল হতেই রিসিভ হয়েছে।
শুভ — Hlw কে বলছেন?
ইসুয়া– আমি আপনাদের ইসুয়া ম্যাম।
শুভ ইসুয়ার কল দেখে অবাক হল — আপনি??এত সকাল সকাল।
ইসুয়া– রবিন কি আপনাদের সাথে আছে??
শুভ –না তো,আমি আর নয়ন তো এখনো বাসা থেকে বের ই হয় নি।
ইসুয়া– ওহ আচ্ছা।
শুভ — কেন?কোনো সমস্যা?
ইসুয়া– না,আসলে তেমন কিছু না।
শুভ — আপনার কোনো সমস্যা না থাকলে বলতে পারেন আমাকে কি হয়েছে??
ইসুয়া খানিকক্ষণ ভেবে কোনো উপায় না পেয়ে শুভ কে সবটা খুলে বললো।সত্যি বলতে রবিনের এরকম পাগলামিতে ইসুয়ার ও এখন খুব চিন্তা হচ্ছে।
শুভ সবটা শুনে বললো — কোনো চিন্তা করবেন না,আমি আর নয়ন দেখছি।রবিনকে পেলেই আপনাকে জানাবো।
ইসুয়া– হ্যাঁ প্লিজ দেখুন না।আর আমাকে একটু ইনফর্ম করে দিবেন।
শুভ — ok…..
ইসুয়া ফোন রেখে ভার্সিটির উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলো।
____________________(চলবে)