#Senior_life_partner
পর্ব—17
Afrin Ayoni
রেহানা বেগম কে হসপিটাল থেকে রিলিজ করে আনা হয়েছে,স্বাদ রান্নাঘরে vegetable স্যুপ তৈরি করতে গেছে।রেহানা বেগম ডাইনিং রুমে বসে আছেন,,,,
আমি এইসব সিদ্ধ সবজি খেতে পারবো না স্বাদ।
স্বাদ– Doctor এর নির্দেশ তোমাকে এক সপ্তাহ স্যুপ জাতীয় কিছু খেতে হবে,তেল মশলা একেবারে নিষিদ্ধ।
রেহানা বেগম— হারামজাদা তুই খা,পারলে তোর মরে ভূত হয়ে যাওয়া বাপরে এনে খাওয়া। আমি খেতে পারবো না এসব।
স্বাদ— ওপপপ মা,এত কথা কিভাবে বলো তুমি??
হঠাৎ কলিং বেল বেজে ওঠে,স্বাদ চুলার আচ কমিয়ে দিয়ে দরজার দিকে এগোতে থাকে। দরজা খুলে রিদীমা কে দেখে স্বাদের চক্ষু চড়কগাছ।
রিদ তুই??
রিদীমা– কেন আসতে পারি না??
স্বাদ– অবশ্যই, কিন্তু হঠাৎ!!
রিদীমা– আন্টি কে দেখতে এলাম।
স্বাদ– আয় ভিতরে আয়।
রিদীমা রেহানা বেগমের দিকে এগিয়ে গেল,”আন্টি এখন কেমন আছো?”
রেহানা বেগম– ভালো না।
রিদীমা– কেন কেন ??
রেহানা– আমাকে ঐ হতচ্ছাড়া কিসব গরুর খাবার খাওয়াচ্ছে।
রিদীমা– গরুর খাবার মানে??
স্বাদ এগিয়ে এসে,”আর বলিস না, মা ভেজিটেবল স্যুপ খাবে না। এদিকে ডক্টরের কড়া নির্দেশ তেল মশলা একেবারে ছোঁয়া যাবে না।”
রেহানা বেগম মুখ বেঁকিয়ে,”রিদীমা মামণি তুই ওকে বলে দে আমি এসব খাবো না মানে খাবো না।”
স্বাদ– খেতে তো তোমাকে হবেই মা।
রিদীমা কিছুক্ষণ ভেবে, “আন্টি সবজি খিচুড়ি খাবে?”
রেহানা বেগম উচ্ছ্বসিত হয়ে,”হ্যাঁ।”
স্বাদ– দেখ রিদ……..
রিদীমা স্বাদ কে কিছু বলতে দিলো না, রেহানা বেগমের দিকে তাকিয়ে বলে,”ok …. তুমি বসো আমি তৈরি করে নিয়ে আসছি।”
রিদীমা স্বাদের দিকে তাকিয়ে– তুই আমাকে help করবি,আয়।
স্বাদ আর রিদীমা রান্নাঘরের দিকে এগোয়। স্বাদ রান্নাঘরে ঢুকে রিদীমা কে বললো,”দেখ Doctor পই পই করে বলে দিয়েছে মা কে এই কদিন vegetable স্যুপ খাওয়াতে।”
রিদীমা– লাউ আর কদু এক কথাই রে হাদারাম।
স্বাদ– মানে??
রিদীমা– ভেজিটেবল স্যুপ এর জায়গায় ভেজিটেবল খিচুড়ি খাবে, without তেল মশলা & প্যারা।
স্বাদ কিছু একটা ভেবে, “what a great idea…”
রিদীমা— হুম।এবার আমাকে help কর তো….
স্বাদ— Assistant ready,ম্যাম???
…………………………………………..
নিশুয়া– কি রে?এভাবে মুখ করে বসে আছো কেন??
ইসুয়া– খুব নার্ভাস লাগছে।
নিশুয়া– নার্ভাস হওয়ার কি আছে??
ইসুয়া– জানি না, একজন টিচার হয়ে স্টুডেন্টের সাথে পারফর্মেন্স করবো কেমন জানি অস্বস্তি লাগছে।
নিশুয়া– What …. আজকাল এসব একেবারেই নরমাল।
ইসুয়া— এহ্ নরমাল, এত update সাজতে যাইয়ো না।
নিশুয়া– আমি তোমার মত ক্ষেত না,ওকে??
ইসুয়া– আমি ক্ষেত ই ভালো।
হঠাৎ রবিন এলো,নিশুয়ার হাতে এক ঠোঙা বাদাম ধরিয়ে দিয়ে ইসুয়ার দিকে হাত বাড়িয়ে দেয়, “চলুন Miss অধ্যাপিকা!এবার আমাদের পারফর্মেন্স…”
নিশুয়া রবিনের দিকে তাকিয়ে– তোমার অধ্যাপিকার নার্ভাসনেস কাটাও আগে ,নয়তো দেখবে পারফর্মেন্স এর বারোটা বেজেছে।
রবিন ইসুয়ার দিকে একবার ভ্রু কুঁচকে তাকালো, তারপর আশেপাশে কোনো চেয়ার খালি আছে কিনা দেখলো,না সব চেয়ার ই রিজার্ভ। একটা ছেলেকে রবিন পিছন থেকে মাথায় ঘাট্টা মারে,”এই ছোট উঠ, চেয়ার টা দুই মিনিটের জন্য দে আমায়।”
ছেলেটা– আরে রবিন ভাই ,এই নাও।যতক্ষণ লাগে ততক্ষণ বস।
রবিন– না রে, একটু পর পারফর্মেন্স আছে…. just 2 minutes
ছেলেটা– আচ্ছা।
রবিন চেয়ার টা নিয়ে ইসুয়ার মুখোমুখি বসলো,”কি miss অধ্যাপিকা!কিসের এত নার্ভাসনেস আপনার?আমার দিকে তাকান।”
ইসুয়া চোখ তুলে তাকালো,রবিন ইসুয়ার হাত দুটো ধরলো।ইসুয়া অস্বস্তি তে পড়ে গেল।
রবিন– এত নার্ভাস হওয়ার কোনো কারণ তো আমি দেখছি না। ভাববেন যে আপনি বাসায় নিজের মত করে নাচ practice করছেন।ব্যাস……
নিশুয়া চোখ মেরে,”এখানে টিচার কে?আর স্টুডেন্ট কে? আমি confused…”
রবিন– ওরে দুষ্টু, আপনাকে আমি পরে এসে দেখছি।
রবিন উঠে দাঁড়িয়ে হাত বাড়িয়ে দেয়, “চলুন Miss অধ্যাপিকা।”
ইসুয়া উঠে দাঁড়ায়,রবিনের হাত না ধরেই।রবিন মুচকি হেসে, “Ok …… no problem”
দুজন ই স্টেজের দিকে এগিয়ে যায়। ততক্ষণে announce করা হয়ে গেছে নাম দুখানা।শুভ আর নয়ন জোরে জোরে শিস বাজাতে থাকে।আর সকল স্টুডেন্ট কড়তালির মাধ্যমে দুজনকে উৎসাহ দেয় ….
Sound box এ সুর ভেসে এলো—–
(স্টেজে এসে হাতে হাত রাখে ইসুয়া আর রবিন। দুজনে পায়ে পায়ে ছন্দ তুলে )
কোনো এক নীলচে পরীর সঙ্গে যাবো সমুদ্দুর
ঢেউ মেঘে ভাসবো উজানে….
কোনো এক নীলচে পরীর সঙ্গে যাবো সমুদ্দুর
ঢেউ মেঘে ভাসবো উজানে…..
ডানা মেঘে আলতো ছুঁয়ে,মাখবো গায়ে যে রোদ্দুর
দিক ভুলে উড়বো দুজনে …… (রবিন)
এক মুঠো আলো আজ থেকে তোর হোক
আর কিছু মন জানে না
আজ বুঝি তোর সব খুনসুটি শৈশব
আর কিছু মন মানে না …… (ইসুয়া)
মনের আর দোষ কী বল
পায়ে পায়ে সঙ্গে চল
মেঠো গায়ে রাখাল বাঁশি,মন উদাসী দুপুরবেলা
ঘরে মন টিকবে না আর
ছুঁতে চায় রঙের পাহাড়
সারাদিন রঙিন চোখে স্বপ্ন বুকে প্রেমের খেলা।।(রবিন)
ওহো হো হো………ওওও…… হোওওওওওও……
অস্ফুটে তুই আসলি কখন বুঝি নি আমি
ছুটে যাই রোজ, হচ্ছে নিখোঁজ
কোথায় যে বল থামি??
বালি মাখা তোর খালি পায়ে আজ ছুঁয়েছি আঙ্গুল
রাজি না হলেও মনকে বলেছি
ভেঙে দে সব ভুল……..(ইসুয়া)
কাশফুলে সাজাই, তোর চোখে যা চাই
আর কিছু মন জানে না ………. (রবিন)
মেঘের মিনারে আলোর কিনারে
বারণ যে মন শুনে না …….. (ইসুয়া)
মনের আর দোষ কী বল
পায়ে পায়ে সঙ্গে চল
মেঠো গায়ে রাখাল বাঁশি,মন উদাসী দুপুরবেলা
ঘরে মন টিকবে না আর
ছুঁতে চায় রঙের পাহাড়
সারাদিন রঙিন চোখে স্বপ্ন বুকে প্রেমের খেলা…
মুখ ফুটে তুই চাইবি যা চাস হোক না সে দামী
এক নিমেষেই হাতের পাতায় সাজাবো আমি……(রবিন)
ভেজা শিশিরের গন্ধে হল যে পাগল এই মন
তারার ই চাদরে রাতের আদরে রূপোলি জীবন
আর কেন অবুঝ, জোনাকি সবুজ
মাঝরাতে ঘুম আসে না
আকাশ ডেকে যায় ঠিকানা বদলায়
তুই ছাড়া মন হাসে না ………(ইসুয়া)
মনের আর দোষ কী বল
পায়ে পায়ে সঙ্গে চল
মেঠো গায়ে রাখাল বাঁশি মন উদাসী দুপুরবেলা
ঘরে মন টিকবে না আর
ছুঁতে চায় রঙের পাহাড়
সারাদিন রঙিন চোখে স্বপ্ন বুকে প্রেমের খেলা….(রবিন)
হৈ হোল্লোড়ের মাঝে শেষ হয় ইসুয়া আর রবিনের দুর্দান্ত পারফরম্যান্স। আশেপাশের সকল স্টুডেন্টের কড়তালির আওয়াজে ধ্যান ভাঙে ইসুয়া রবিনের। এতক্ষণ দুজন যেন কোথাও হারিয়ে গিয়েছিলো।রবিনের হাতখানা নিজের কোমর থেকে ছাড়িয়ে একটু দূরে গিয়ে দাঁড়ায় ইসুয়া।
রবিন ইসুয়ার দিকে এগিয়ে গিয়ে তার খোঁপা থেকে একটা সাদা কাঠগোলাপ খুলে নেয়।ইসুয়া ভ্রু কুঁচকে তাকায়।রবিন চোখ মেরে মুচকি হাসে।
ইসুয়া– এটা কি হল??
রবিন– কোনটা?
ইসুয়া– আমার খোঁপায় হাত দিলেন কেন?এটা কোন ধরনের অসভ্যতা?
রবিন– আপনার খোঁপায় হাত দিয়েছি এর প্রমাণ কি Miss অধ্যাপিকা??
ইসুয়া– আমার ফুল ফেরত দিন।
রবিন ফুল টা পকেটে ঢুকিয়ে বলে — নাম লিখা আছে নাকি??
ইসুয়া– অসভ্য ইতর যত্তসব।
ইসুয়া রবিন কে বকতে বকতে স্টেজ থেকে নেমে আসলো।এইদিকে ভার্সিটির সকল স্টুডেন্ট রবিনের উদ্দেশ্যে,,,,,,
“ভাই একটা গান হয়ে যাক।”
রবিন হেসে সম্মতি জানায়, সে যেন আগে থেকেই তৈরী ছিলো।শুভ কে ইশারা দিতেই গিটার টা দিয়ে যায় রবিনের হাতে।
গিটারের আওয়াজে চারদিক মুখরিত ……
উড়ে গেছে চিন্তা ভাবনা ঘুম
মনে মনে একশো রঙ বেলুন
চুপি চুপি গল্প হবি আয়,তোকে খুব লেগেছে দারুণ
এভাবে চলবে আর কদিন
আমাকে বন্ধু করে নে….
মনের অবস্থা খুব কঠিন
আমাকে একটু জায়গা দে….
তুই বৃষ্টি হয়ে,প্রেম নামিয়ে,ধরিয়ে দে আগুন….!!
খেয়ালি এই হাওয়া, তোকে কিছু বলছে না আজ??
ও নিজেরই মনে সে,একা একা ভাঙছে বাহার…..
এভাবে চলবে আর কদিন
আমাকে বন্ধু করে নে…..
মনের অবস্থা খুব কঠিন
আমাকে একটু জায়গা দে….
তুই বৃষ্টি হয়ে,প্রেম নামিয়ে, ধরিয়ে দে আগুন …..!!
না যদি সে আসে,ভাসে কি না দুচোখের কোণ
সেই কথা,সেই ব্যথা
ঘাসেদের কাছে গিয়ে শোন…….
এভাবে চলবে আর কদিন
আমাকে বন্ধু করে নে
মনের অবস্থা খুব কঠিন
আমাকে একটু জায়গা দে
তুই বৃষ্টি হয়ে, প্রেম নামিয়ে, ধরিয়ে দে আগুন….!!
চারদিকের চিৎকার চেঁচামেচিতে শেষ হয় রবিনের গিটারের তাল আর গলার সুর।পুরোটা সময় রবিন ইসুয়ার দিকে আড়চোখে তাকিয়ে গানটা গেয়েছে।নিশুয়া তো হাত লাল করেই ফেলেছে কড়তালি দিয়ে।
ইসুয়ার কোনো ভাবান্তর হয়নি পুরোটা সময়। নিশুয়ার দিকে তাকিয়ে ইসুয়া বললো,”আমার কিছু কাজ আছে লাইব্রেরি তে।তুই কি আমার সাথে যাবি?”
নিশুয়া– এই না,ঐ এক গোডাউন বই খাতার মাঝে আমি নাই।এমনিতেও একটু ওয়াশরুমে যাওয়ার প্রয়োজন ছিল।
ইসুয়া– আচ্ছা চল,আমি দেখিয়ে দিচ্ছি তোকে।
নিশুয়া– হুম চল।
ইসুয়া আর নিশুয়া উঠে এলো।ইসুয়া নিশুয়া কে ওয়াশরুম দেখিয়ে দিয়ে লাইব্রেরির দিকে গেল।
নিশুয়া হাতে মুখে কিছু পানি ছিটিয়ে নিলো,এখন কিছু টা ঠান্ডা ফিল হচ্ছে। এতক্ষণ গায়ে যেন আগুন জ্বলছিলো।
ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে আসে নিশুয়া। হঠাৎ ই কারো সাথে ধাক্কা লাগলো তার।
“এই চোখ নেই,দেখে চলতে পারেন না?”
নিশুয়া তার চেনা কন্ঠস্বরের মালিককে দেখার জন্য উপরের দিকে তাকালো।ততক্ষণে সামনের ব্যক্তির চোখ খানা ও নিশুয়া তে থেমে গিয়েছে।
__________________________(চলবে)