#Senior_life_partner
পর্ব——–15
Afrin Ayoni
রবিন ভার্সিটির হল রুমে কালকের সকল ইভেন্টে অংশগ্রহণ নেওয়া ছাত্র ছাত্রীদের জড়ো করেছে।সবাই উৎসাহ নিয়ে প্র্যাকটিস করতে এসেছে। সবাই হালকা হইচই করছে।রবিন,তমা,তুলি সামনে বসে ভাব নিচ্ছে।ভার্সিটির সিনিয়র বলে কথা।
ক্যাম্পাসের দিকে এগোচ্ছিলো ইসুয়া। পিছন থেকে শুভ আর নয়নের ডাকে দাঁড়িয়ে পড়ে।পিছনে তাকিয়ে,,,
ইসুয়া– কী??
শুভ — ম্যাম, হল রুমে যাওয়ার নির্দেশ আছে।
ইসুয়া ভ্রু কুঁচকে, “কিসের নির্দেশ?কার নির্দেশ?”
নয়ন মাথা চুলকে, “ইয়ে মানে।”
শুভ আমতা আমতা করে, “কলে….কলেজ কর্তৃপক্ষের”
ইসুয়া কিছুক্ষণ ওদের দিকে তাকিয়ে থেকে হলরুমের উদ্দেশ্যে পা বাড়ায়। নয়ন আর শুভ যেন হাফ ছেড়ে বাঁচে।
নয়ন ফোনে রবিনের নাম্বারে কল দেয়।রবিন তখন তুলির সাথে কিছু নিয়ে কথা বলছিলো।নয়নের কলটা রিসিভ করে,,,
রবিন– হ্যাঁ বল।
নয়ন– তোর কাজ হয়ে গেছে, যাচ্ছে হলরুমের দিকে।
রবিন মুখে একটা দুষ্টু হাসি দিয়ে, “thankoooo”
কলটা কেটে নয়ন আর শুভ ও হলরুমের দিকে এগিয়ে যায়।
রবিন সব স্টুডেন্ট দের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়,”So guy’s.. আজ আমরা সামান্য প্র্যাকটিস করবো কালকে যার যা ইভেন্ট আছে তা নিয়ে।”
সবাই রবিনের দিকে মনোনিবেশ করে।তমা তো তার attitude নিয়ে ই ব্যস্ত। না পারে গান,না পারে নাচ,না আছে গুণ…. আমড়া কাঠের ঢেকি একটা।সারাক্ষণ আছে শুধু মেকআপ নিয়ে। বড়লোকের বেটি।
রবিন— যারা dance এ participate করছো,তারা নিজেদের সঙ্গী বাছাই করে পিছনের দিকে চলে যাও।
হলরুমের দরজায় হঠাৎ ইসুয়া কে দেখে রবিন হুট করে বলে,”আর হ্যাঁ!আমাদের most special event (টিচার+স্টুডেন্ট)singing with dance এ আমি রবিন চৌধুরী এবং আমাদের new অধ্যাপিকা মিস ইসুয়া তালুকদার একসাথে participate করছি।
রবিন যে এভাবে হঠাৎ সবার সামনে announcement করে দিবে ইসুয়া ভাবতে পারেনি।ইসুয়া বাঁধা দেওয়ার সুযোগ ই পেল না। পিছনে ই হঠাৎ নয়ন আর শুভ এসে দাঁড়ায়। ইসুয়া ওদের উপস্থিতি টের পেয়ে ভেতরে প্রবেশ করে।
তমা আর তুলি রবিনের announcement শুনে ভিতরে ভিতরে জ্বলছে।এদিকে যারা সেদিন মাঠে ইসুয়া & রবিনের গান শুনেছিলো,,তারা করতালির মাধ্যমে রবিন আর ইসুয়ার এমন পারফর্মেন্সের জন্য উৎসাহ দেয়।
একটা ছেলে তো শিস দিয়ে বলেই উঠলো,”রবিন ভাই waiting for special performance…”
রবিন—– সে তো বটেই। (ইসুয়ার দিকে চোখ মেরে)
ইসুয়া মনে মনে, “অসভ্য ছেলে। দামড়া খাসি,বান্দর, অস্ট্রেলিয়ান গাধা …… সবকিছুতে কেবল বাড়াবাড়ি।”
ইসুয়ার দিকে কজন ছাত্রী এগিয়ে এসে, “অনেক ভালো কিছু আশা করছি ম্যাম।”
ইসুয়া মুচকি হেসে মাথা নাড়াল। কিছু বলতে ও পারছে না। সকল স্টুডেন্ট ব্যপার টা জেনে গেছে। সবাই যে যার practice এ লেগে গেল।সবাই যখন নিজ নিজ কাজে ব্যস্ত তখন রবিন ইসুয়ার দিকে এগোতে থাকে। হঠাৎ তমা আর তুলি এসে দাঁড়ায় রবিনের সামনে। রবিন ভ্রু কুঁচকে তমার দিকে তাকিয়ে,,,
Problem কী ??
তমা– এটা তো আমি তোমাকে জিজ্ঞেস করার কথা?
মানে বুঝলাম না।
তমা— ঐ ম্যাম এর সাথে কিসের পারফর্মেন্স?cancel কর এটা।
তোকে জিজ্ঞেস করার প্রয়োজন বোধ করছি না আমি এই বিষয়ে।
তমা কিছু বলতে যাবে তার আগেই তুলি রবিনের দিকে তাকিয়ে বললো,”দোস্ত তোর মনে নেই ঐ বেটি তোরে ভার্সিটির ভরা মাঠে কি ভাবে চুমু খেয়ে তোর মান ইজ্জতের ফালুদা বানাইছে?”
রবিন ব্যাপার টা কে ঘোলাটে করতে চাইলো না।তুলি আর তমার দিকে এগিয়ে ফিসফিসিয়ে বললো,”আরে সেই জন্য ই তো রিভেঞ্জ নেওয়ার জন্য এত কিছু করছি।”
তুলি উল্লাসিত হয়ে — কি করবি বল না ??
রবিন– আছে, পরে দেখবি।
তমা ভ্রু উচিয়ে, “সত্যি তো?”
রবিন– আরে হ্যাঁ রে বাবা, সত্যি সত্যি।এখন যা, বেশিক্ষণ এভাবে থাকলে ঐ অধ্যাপিকা সন্দেহ করবে।
তমা– আচ্ছা, যা ।
তুলি তমা ও, রবিন কে আর বাঁধ সাধলো না।রবিন ও নিশ্চিন্তে ইসুয়ার দিকে এগোতে থাকে। ইসুয়া তখন চেয়ারে বসে ফোনে কিছু একটা করছিলো। রবিন গিয়ে,,
এই যে Miss.অধ্যাপিকা।
ইসুয়া মাথা তুলে তাকালো রবিনের দিকে। রবিন ইসুয়ার সামনে চেয়ার পেতে বসে।ইসুয়া তখন ও রবিনের দিকে তাকিয়ে আছে।
রবিন– তা এভাবে না বসে থেকে গান সিলেক্ট করুন।
ইসুয়া বিরক্তিতে কপাল কুঁচকালো।রবিন মুচকি হেসে,, “এইভাবে কপাল ভাঁজ করে রাখলে কাজের কাজ কিছু হবে না। সামনে এগোন।”
ইসুয়া– এভাবে ডিস্টার্ব করার মানে কী??
রবিন– আমি কই ডিস্টার্ব করলাম।
ইসুয়া বুঝলো রবিনের সাথে কথা বাড়িয়ে লাভ নেই তাই আর তর্কে গেল না।চুপ হয়ে রইলো।
রবিন– ওকে,আপনি যখন পাথর হয়েই বসে থাকবেন তাহলে আমিই গান সিলেক্ট করি ।
ইসুয়া কিছু বললো না। রবিন নিজ থেকেই সব করলো।
হঠাৎ রবিন ইসুয়ার দিকে,”তা কাল কি পড়ছেন function এ….”
ইসুয়া চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে, “মানে?”
রবিন— কাল কি পরিধান করিবেন Miss.অধ্যাপিকা?
ইসুয়া– এটা কেমন প্রশ্ন??
রবিন– কেন?খাঁটি বাংলায় ই তো বললাম।
ইসুয়া– আমাকে এমন প্রশ্ন করার আপনি কে??
রবিন — না মানে,আপনার তো আবার পিঠের সূর্য চন্দ্র তিল নক্ষত্র কত কিছু দেখিয়ে অভ্যাস।তাই কালকের ড্রেসে প্রয়োজনীয় safety আছে কি না সেটাই বোঝার চেষ্টা করছি আর কি!!
ইসুয়া রেগে,”What?”
রবিন– ওকে ওকে …. chill…করলাম না আর এমন প্রশ্ন।
রবিন উঠে দাঁড়িয়ে ইসুয়ার দিকে হাত বাড়িয়ে দেয়, “চলুন practice শুরু করি।”
ইসুয়া প্রথমে ইতস্তত বোধ করলে ও পরবর্তী তে রবিনের সাথে practice করতে রাজি হয়।ইসুয়ার পারমিশন না নিয়ে রবিনের অর্ডারে আড়াল থেকে ইসুয়া & রবিনের practice এর full video করে শুভ আর নয়ন।
শুভ — শালার হারামি বন্ধু বান্ধবদের জন্য যে লাইফে কত কি করতে হবে??
নয়ন– imagine …. এখন আমরা video করতে গিয়ে ঐ অধ্যাপিকার কাছে ধরা খাইলাম,then কি হবে?ভাব একবার।
শুভ — আর imagine করা লাগবে না, তোরে আর আমারে আলুর চপ বানিয়ে ক্যান্টিনে রেখে আসবে।
নয়ন — আবার হতে পারে,দুজন কে চ্যাপ্টা করে বার্গার এ মধ্যে চাপা দিয়ে আসবে।
শুভ ধমকে উঠে,”মেরি ভাই!কথা কম বলে যেটা রবিন করতে বলেছে সেটা কর না।”
——————————————————
সুরাইয়া খান বাগানের গোলাপ গাছ গুলো তে পানি দিচ্ছিলেন।সাথে সাথে তিনি কল্পনাতে অনেক স্মৃতি হাতড়ে বেড়াচ্ছেন। এই বাগানে আগে রিদীমা,আকাশ আর তারা দুজন বসে কত খেলা করতো।ছেলে মেয়ে দুটো আজ কত বছর যাবত তার থেকে দূরে। দেলোয়ার খান, তার দ্বিতীয় পক্ষের স্বামী। তিনি তার কোল থেকে এভাবে প্রথম পক্ষের ছেলে মেয়ে দুটো কে আলাদা করে দিবে ভাবতে পারেননি সুরাইয়া খান।
দেলোয়ার খান সুরাইয়া খানকে বিয়ে করতে রাজি হয়েছিলো বাবার অর্থ সম্পদ দেখে। আফজাল সাহেব আর সুরাইয়া খানের বাবা তার সন্তানদের নামে উইল করে যাননি।তিনি তার স্থাবর অস্থাবর সকল সম্পত্তি তার নাতি নাতকুর দের দিয়ে গেছেন।
এর মাঝে রিদীমা আর রবিন অর্ধেক সম্পত্তির মালিক আর বাকি অর্ধেক সম্পত্তির মালিক সুরাইয়া খানের আগের পক্ষের দুই সন্তান এবং আকাশ তমা,মোট চারজন। দেলোয়ার খান নিজের সন্তানদের সম্পত্তিতে যেন অন্য কেউ ভাগ বসাতে না পারে তাই সৎ ছেলে মেয়েকে বাড়ি থেকে অনেক কৌশলে বের করে দিয়েছেন।অর্থ লোভী সৎ বাবার চক্রান্তে দুটো ছেলে মেয়ে সেদিন নানাবাড়ির সাথে সাথে মায়ের থেকে ও আলাদা হয়ে গিয়েছিল।
তারপরও দেলোয়ার খানের লোভ কমেনি।তার অর্ধেক নয় পুরো সম্পত্তি ই চাই।তাই তো তিনি মেতে উঠেছেন ধ্বংসলীলায়।
ফুলগাছে পানি দিতে দিতে চোখের জল আটকাচ্ছেন সুরাইয়া খান।খুব মনে পড়ছে ওদের।কেমন আছে?কই আছে?কিছুই জানা নেই তার।
চৌধুরী বাড়ির গেটের ফাঁকে দাঁড়িয়ে ফুঁপিয়ে যাচ্ছে একটা মেয়ে, পাশেই দাঁড়িয়ে থাকা ছেলেটা কাঁধে হাত রেখে বললো,”এভাবে কাঁদলে হবে বোন?শক্ত কর নিজেকে।”
মেয়েটা — পারছি না ভাইয়া।
ছেলেটা– মা ও কাঁদছে, তুই ও কাঁদছিস। আমি কি করবো বল।
মেয়েটা — কতদিন মা কে জড়িয়ে ধরা হয় না।
ছেলেটা– আর কিছু দিন অপেক্ষা কর।তারপর আমরা সবার সামনে মায়ের আদর নিতে পারবো।
মেয়েটা — তাই যেন হয়,ভাইয়া।
ছেলেটা নিজের বোনকে আঁকড়ে ধরে বিদায় নেয় চৌধুরী বাড়ির আঙ্গিনা থেকে।
………………………………………………..
স্বাদ বসে আছে অপারেশন থিয়েটারের সামনে। হঠাৎ ই রেহানা বেগম অসুস্থ হয়ে পড়েন।হার্ট এট্যাক হয়েছে। নিজের মন কে শক্ত করে বসে আছে,সুদূর এই বিদেশে কোনো আত্মীয়স্বজন নেই যে এই দুর্সময়ে পাশে বসে শান্তনা দিবে।দুই হাত মাথায় দিয়ে চুল গুলো টেনে ধরেছে স্বাদ।
হসপিটালের করিডোর দিয়ে একজন মেয়ে দৌড়ে ঢুকে। রিসেপশনে গিয়ে রেহানা বেগমের অপারেশন কোথায় হচ্ছে সেটা জেনে নিয়ে দ্রুত গতিতে ছুটে যায় সেদিকে। স্বাদের চোখ থেকে টপ টপ করে পানি পরছে।
Doctor……
স্বাদ রিদীমার কন্ঠ শুনে মাথা তুলে,চোখ দুটো আগুন লাল হয়ে আছে।রিদীমা এগিয়ে আসে স্বাদের দিকে।স্বাদ অসহায় মুখ করে তাকায়। রিদীমা আরেকটু এগিয়ে আসতেই স্বাদ ছুটে গিয়ে জড়িয়ে ধরে, “রিদ!দেখ না … মা মা কথা বলছে না। মা কেন এমন বাজে অভিনয় করছে,বলতো?আমার ভাল লাগছে না। অভিনয় হয়ে গেলে বল আমাকে জ্বালানো বন্ধ করতে।”
স্বাদ রিদীমা কে এভাবে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরাতে খুব অস্বস্তি বোধ করছিলো।কিন্তু এখন এত কিছু ভাবার সময় নয়।তাই রিদীমা স্বাদ কে শান্ত হয়ে বসতে বলে।
রিদীমা– দেখ,তুই যদি এমন বিহেভ করিস কি করে হবে?আন্টির তো তুই ছাড়া কেউ নেই!তোকেই তো আন্টির দেখভাল করতে হবে।
স্বাদ– হঠাৎ এমন কেন হলো বলতো?সকালে তো ভালোই ছিলো।
রিদীমা– শরীরের উপর আমাদের কন্ট্রোল নেই,শরীর যে কোনো সময় ই খারাপ হতে পারে। তুই তো doctor তোর তো এসব ভালো বোঝার কথা।এমন বাচ্চামো করছিস কেন?শক্ত হ একটু……
স্বাদ আর কিছু বলে না। রিদীমা ও বলার ভাষা খুঁজে পায় না। তাই দুজন চুপ হয়ে বসে থাকে।অনেকক্ষণ পর অপারেশন থিয়েটারের দরজা খুলে তিনজন ডক্টর বের হন।স্বাদ যেন পাথর হয়ে জমে গেছে। রিদীমা ব্যপার টা বুঝতে পেরে এগিয়ে গেল,,,,
রিদীমা– Doctor ….. পেশেন্ট কেমন আছে ??
Doctor– টেনশনের কিছু নেই,অনেক বেটার আছে।
স্বাদ একটু একটু করে হুশে ফিরলো যেন।রিদীমা ও হাসিমুখে ডক্টর দের কাছ থেকে সকল খবর জেনে নেয়।ডক্টর রা চলে যাওয়ার পর রিদীমা স্বাদের দিকে এগোয়,,
রিদীমা– এবার তো ঠান্ডা হ একটু।
স্বাদ– মা কে দেখতে যাব।
রিদীমা– সেদিন আন্টি ঠিক ই বলেছিলো,তোকে ডাক্তার বানিয়েছে কে রে??
স্বাদ অসহায় ভাবে তাকায়।রিদীমা আবার বলে, “হসপিটালের নিয়ম কানুন আমাদের থেকে ও তুই ভালো জানার কথা।আর সে ই তুই কিনা …..?”
স্বাদ– আচ্ছা আচ্ছা, কেবিনে শিফট করার পর ই মা কে দেখবো আমি।হইছে এবার ……??
রিদীমা হেসে, “good boy”
________________________________[চলবে]