? Ragging To Loving ?
Part::1
Writer:: Ridhira Noor
সন্ধ্যা হতে চলেছে। আকাশে লাল কমলা রং ধারণ করেছে লাল মেঘের আভা ভেসে উঠেছে আকাশে। সূর্য প্রায় ডুবুডুবু। _____ কলেজ থেকে খানিক দূরে রহিম চাচার চায়ের দোকান। রাস্তাটি প্রায় নির্জন। হাতে গোনা কয়েকজন মানুষই দেখা যায় এসময়। শাফি সুমন সাব্বির মারুফ চার বন্ধু রহিম চাচার চায়ের দোকানে বসে আড্ডা দেয় এই সময়।
সুমনঃঃ- রহিম চাচা প্রতিদিনের মতো চার কাপ চা বানাও। তোমার চা না লাজাওয়াব।
শাফিঃঃ- চাচা তোমার কোন মেয়ে আছে?
রহিম চাচাঃঃ- না বাবা আমার খালি দুইডা পোলা আছে।
শাফিঃঃ- আহা (দুঃখ প্রকাশ করে)
মারুফঃঃ- কেন রে? চাচার মেয়েকে দিয়ে তুই কি করবি?
শাফিঃঃ বিয়ে করে ফেলতাম। চাচা এমন সুস্বাদু চা বানায় চাচার মেয়ে হলে তো আরও সুস্বাদু চা বানাতো। তাহলে সারাদিন চা খেতে পারতাম।
রহিম চাচা সহ সবাই হাসিতে মেতে উঠল। তারা চা খেয়ে রওনা দিল। সূর্য ডুবে সন্ধ্যা নেমে এলো। চারপাশে অন্ধকার। শুধু রাস্তার ল্যাম্পপোস্টের ঘোলাটে কমলা বাতি জ্বলছে। চার বন্ধু হাসাহাসি করে হেটে যাচ্ছে। হঠাৎ এক বাইক ফুল স্পীডে এসে তাদের চারপাশে ঘুরে তাদের পিছনে গিয়ে ব্রেক লাগায়। তারা পিছনে ফিরে তাকায়। বাতির ঘোলাটে আলো পিছন থেকে পড়ায় চেহারা তেমন একটা বোঝা যাচ্ছে না। এক আবছা ছায়া ভেসে উঠছে। তারা ধীরে ধীরে ছায়াটির দিকে এগিয়ে এলো। খানিকটা দূরে গিয়ে দাঁড়াল। বাইক রাইডার বাইক থেকে নেমে হেলমেট খুলতে মাথার এলোমেলো চুলগুলো থরথর করে কোমর অবধি পড়ল।
সাব্বিরঃঃ- এটা তো মেয়ে। কিন্তু চেহারা দেখা যাচ্ছে না। (তারা মেয়েটিকে উঁকি মেরে দেখছে। কিন্তু কোন একটা লাভ হলো না)
মেয়েটি হেলমেট খুলে রেখে ধীরে ধীরে তাদের দিকে এগিয়ে এলো। বাতির আলোয় এখন মেয়েটিকে দেখা যাচ্ছে। কিন্তু মুখে রুমাল বাঁধা। ছেলেগুলো মাথা থেকে পা অবধি দেখতে লাগলো। ব্লাক জিন্স ব্লাক জ্যাকেট ব্লাক সু তার উপর চুল ছাড়া মুখে রুমাল বাঁধা।
শাফিঃঃ- উফফ আজ তো পুরো পার্টি চলবে বন্ধু। নির্জন রাস্তা একা এক মেয়ে। তাও এত হট।
তাদের কানে কানে ফিসফিস করে। চারজন এক পৈশাচিক হাসি দিয়ে মেয়েটির দিকে এগিয়ে এলো। তার চারপাশে তারা চারজন ঘুরতে লাগলো।
সুমনঃঃ- কি হয়েছে ম্যাডাম। কোন হেল্প লাগবে?
মারুফঃঃ- হেল্প লাগলে বলুন আমরা আছি তো। (তার দিকে একটু ঝুকে) মানে হেল্প করতে। (বলে হাসতে লাগলো)
মেয়েটিঃঃ- (হালকা হাসলো) একচুয়ালি হেল্প আমার না তোমাদের লাগবে। (পকেটে হাত দিল)
ছেলেগুলো হাসতে লাগলো। “আমাদের হেল্প?” তাচ্ছিল্য হাসি দিল। তার কয়েক সেকেন্ড পরই ছেলেগুলোর সামনে সব ঘোলাটে হয়ে অন্ধকার চেয়ে গেল। পনেরো মিনিট পর তাদের মুখে পানি ছুড়ে মারতেই তাদের জ্ঞান ফিরে এলো। জ্ঞান ফিরতেই তারা দেখা তাদের হাটু গেড়ে বসিয়ে একটি লম্বা বাঁশের সঙ্গে হাত বেঁধে চারজনকে একসাথে বাঁধা হলো। তাদের সামনে কয়েকটি মেয়ে একই পোশাক পরিধান করা। বাইকের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
২য় মেয়েঃঃ- হেই সবাই সুন্দর করে পোজ দাও। একটা সেলফি তুলি। (ছেলেগুলো কে। তারা আহত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।)
৩য় মেয়েঃঃ- শুরু হয়ে গেল। (মাথায় হাত দিয়ে)
১ম মেয়েঃঃ- আরে ইয়ার পুরি পিকচার আভি বাকি হেই। (ছেলেগুলোর সামনে গিয়ে দাঁড়াল) তারপর বল এখন কার হেল্প লাগবে? আমার নাকি তোমাদের?
মারুফঃঃ- আমাদের এভাবে বেঁধে রেখেছ কেন?
৪র্থ মেয়েঃঃ- তোমাদের পুতুলের মতো করে সাজিয়ে শোকেসে সাজিয়ে রাখব। তারপর মন ভরে দেখব।
মেয়েগুলো ফিক করে হেসে দিল।
২য় মেয়েঃঃ- নাইস জোক ইয়ার।
১ম মেয়েঃঃ- আচ্ছা থাম তোরা। এবার তোমরা বল। বাবা মা তোমাদের কলেজে কেন পাঠায়? (কোন সাড়া শব্দ নেই। এবার জোরে চেচিয়ে বলে) বল কেন পাঠায়?
ছেলেগুলোঃঃ- প…প… পড়ালেখা করতে।
১ম মেয়েঃঃ- যাহ্ কি বল! পড়ালেখা করতে? আরে না! তোমাদের তো র্যাগিং করার জন্য পাঠায়। পড়ালেখা করার হলে তিন বছর একই ক্লাসে থাকতে না। আর তোমরা দেখি ____কলেজে অনেক ফেমাস র্যাগিং এর জন্য। তা তোমাদের বাবা মা জানে তোমাদের কীর্তির কথা। (ছেলে গুলো মাথা নিচু করে আছে) খুব শখ না র্যাগিং করার। র্যাগিং করবি না র্যাগিং করবি! তোদের মতো কিছু ছাত্রদের কারণে অন্যান্য ছাত্র ছাত্রীদের উপর কি প্রভাব পড়ে জানিস? র্যাগিং করে তোরা যে মজা পাস এই মজা যে কারো জীবনে কতটা প্রভাব ফেলে তা কখনো ভেবে দেখেছিস? র্যাগিং ততক্ষণ সীমাবদ্ধ থাকে যতক্ষণ তা শুধু মজায় থাকে। যখন তা কারো সম্মানে আঘাত হানে তখন সেটা র্যাগিং নয় হ্যারেসিং। র্যাগিং করার খুব শখ। গার্লস লেটস স্টার্ট।
মেয়েগুলো লাঠি দিয়ে তাদের মারতে লাগলো। লাঠির আঘাতে ছেলেগুলো চিৎকার করতে লাগলো।
১ম মেয়েঃঃ- আরে কি করছিস? মাথা খারাপ নাকি তোদের। এদের নরম শরীরে এভাবে আঘাত দিচ্ছিস।(ছেলেগুলো হাসি মুখে তার দিকে তাকাল) এমন জায়গায় মার হারামজাদা গুলোকে যাতে কাউকে বলতেও না পারে দেখাতেও না পারে।
ছেলেগুলোর মুখে আতঙ্কের চাপ স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। ভয়ে এক ঢোক গিলতে লাগলো। ওই দিকে ব্যান্ড বাজা শুরু। মারতে মারতে ক্লান্ত হয়ে গেল।
৩য় মেয়েঃঃ- ওই কি খায় রে এগুলো। গন্ডারের চামড়া। হাত ব্যাথা হয়ে গেল।
১ম মেয়েঃঃ- আসল গেম এখনো বাকি। র্যাগিং কি তা একটু বুঝিয়ে দিই।
কিছুক্ষণ পর গান শুরু হলো। বেবি ডল সং। হ্যাঁ ঠিকই ধরেছেন শাফি সুমন সাব্বির মারুফ মেয়েলি কাপড় পড়ে মেকআপ করে নাচছে। ২য় মেয়েটি ভিডিও করছে। আর সবাই সমানে হেসে যাচ্ছে।
৩য় মেয়েঃঃ- ইয়ার তুই ঠিক বলেছিস। এদের পুতুলের মতো তো সাজিয়েছিস এবার শোকেসে সাজিয়ে রাখ। দেখতে জোস লাগছে।
১ম মেয়েঃঃ- অনেক হয়েছে। নাও কাম টু দ্যা পয়েন্ট। (ভিডিও করা মোবাইলটা হাতে নিয়ে) এখন তোমাদের কি করতে হবে বুঝতে পেরেছ নিশ্চয়।
ছেলেগুলো মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। আর মাথা নাড়িয়ে সায় দিল।
১ম মেয়েঃঃ-স্কুল লাইফ , কলেজ লাইফ , ভার্সিটি লাইফ এসব আর চেয়েও ফিরে পাওয়া যায় না। তো এই সময়টুকু জীবনের বেস্ট মোমেন্ট তৈরি কর। যা পরবর্তীতে মনে করছে মুখে হাসি ফুটবে মনে অনুতপ্ত নয়। তাই নিজের জীবনকে গুছিয়ে নাও। এসব খামখেয়ালি না করে প্রতিটা মুহূর্তকে সুন্দর করে তোল আর ভবিষ্যৎ জীবন গড়তে পড়ালেখার দিকে দেখ। তোমাদের বাবা মা দিনরাত পরিশ্রম করে তোমাদের স্কুল কলেজে পাঠায় যাতে তারা তোমাদের জীবনের উন্নতির শিকরে দেখতে পায়। তাদের মনে এভাবে আঘাত দিও না।
ছেলেগুলো অনুতপ্ত হয়ে আহত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। হয়তো নিজেরা বুঝতে পারছে তাদের ভুলটা।
১ম মেয়েঃঃ- আগে এই কথাগুলো বুঝালে তোমাদের মাথায় ঢুকত না। তাই আগে শাস্তি দিলাম।
তাদের দিকে তাকিয়ে চলে গেল। বাইক নিয়ে চলে গেল।
.
.
.
চলবে
বিঃদ্রঃ ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন ?