? Ragging To Loving ?
Part:: 27
Writer:: Ridhira Noor
মেহের পুষ্প লাইব্রেরি যাচ্ছিল পুষ্প দেখে নূর কাঁদতে কাঁদতে যাচ্ছে।
পুষ্পঃঃ- মেহের তুই লাইব্রেরি গিয়ে বইটা দিয়ে আয় আমি আসছি।
মেহের গেল লাইব্রেরি। বই বুকশেলফে রাখতে গিয়ে দেখে অপরপাশে ইয়াশ। ইয়াশ কিছু বলতে যাবে তার আগেই বই বুকশেলফে রেখে চলে আসতেই ইয়াশ তার সামনে এসে দাঁড়ায়। মেহের পাশ কাটিয়ে যেতে নিলেই হাত ধরে ফেলে।
ইয়াশঃঃ- আমাকে দেখে এড়িয়ে যাচ্ছ কেন?
মেহেরঃঃ- (হাত ছাড়িয়ে নিল) আমি যদি আবার ইচ্ছে করে আপনার কোন কিছুর ক্ষতি করি? আমার তো কমন সেন্স বলতে কিছু নেই? তাই চাই না আমার জন্য আপনার কোন ক্ষতি হোক।
ইয়াশঃঃ- মেহের আই এম সরি। কালকে রাগের মাথায় ওইসব বলেছিলাম। রাগে কি বলি নিজেও জানি না।
মেহেরঃঃ- লাগবে না আপনার সরি। আমি তো ইচ্ছে করেই এমন করেছিলাম তাই না? তো আপনি কেন সরি বলছেন। সরি তো আমার বলা উচিৎ। আই এম সরি। (হাত জোর করে। রেগে বললেও ইয়াশের কথায় অনেক কষ্ট পেয়েছে। চোখের পানি টলমল করছে।)
ইয়াশঃঃ- (মেহের চোখের পানি তার কাছে এড়ায় নি) আই এম রিয়েলি ভেরি সরি। আচ্ছা বল কি করব? ওকে কান ধরে উঠবস করি। এক দুই তিন চার…….
ইয়াশ সত্যি সত্যি কান ধরে উঠবস করছে। মেহেরের অবাক হওয়ার সীমানা পেরিয়ে গেল। সে ভেবেছিল ইয়াশ হয়তো এমনি বলছে। কিন্তু ইয়াশ তাকে ভুল প্রমাণ করে উঠবস করছে। ইয়াশকে এভাবে দেখে ফিক করে হেসে দিল। আবার বসতে যাবে মেহের হাত ধরে থামিয়ে দেয়।
মেহেরঃঃ- থাক অনেক হয়েছে। ইটস ওকে।
ইয়াশঃঃ- ফ্রেন্ডস? (মুচকি হাসি দিয়ে হাত বাড়ালো)
মেহেরঃঃ- (কিছুক্ষণ চিন্তার অভিনয় করে হাত মিলালো) ফ্রেন্ডস। আচ্ছা এখন চলি বাকিরা ক্লাসে অপেক্ষা করছে। বাই।
.
.
পুষ্প দৌড়ে এসে নূরের সামনে দাঁড়ায় কিছু বলার আগেই নূর ঝাপিয়ে পড়ে তার উপর। ডুকরে কেঁদে উঠলো। পুষ্প অবাক হয়ে জড়িয়ে ধরল। নূর কোনভাবে নিজেকে শান্ত করল।
নূরঃঃ- আমার ভালো লাগছে না তাই ক্লাস করব না। আর হ্যাঁ কাউকে কিছু বলিস না। বলবি শরীর খারাপ তাই বাসায় ফিরে গেলাম। চলি। (আর এক মুহূর্ত না থেকে চলে গেল।)
পুষ্পঃঃ- (কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে নূর চলে গেল। পুষ্প নূরের যাওয়ার পানে তাকিয়ে আছে) কি হলো ওর। সে তো আফরানের সাথে ছিল। নিশ্চয় সে কিছু বলছে। (আশেপাশে তাকিয়ে আফরানকে খুঁজতে লাগলো। খুঁজতে খুঁজতে পার্কিং এরিয়ায় এসে দেখে গাড়ির পাশে দাঁড়িয়ে আছে।)
আফরানঃঃ- (নূর যতই বলুক সে ছেলেগুলোর সাথে যা করেছে তা অন্যায়। ছেলেগুলোর যা অবস্থা করেছে মোটেও উচিৎ হয়নি। প্রচুর রাগ হচ্ছে। রাগ কি ছেলেগুলোর সাথে এমন করাই হচ্ছে না কি অন্যকিছুর জন্য তা জানা নেই। হয়তো ভাবছে নূর তাকেও অপছন্দ করে। এসব ভাবতে লাগলো।)
পুষ্পঃঃ- আপনি নূরকে কি বলেছেন? (রেগে চিল্লিয়ে বলল)
আফরানঃঃ- (একে তো মন খারাপ এসব চিন্তা করে তার উপর পুষ্পর চিল্লানোতে বিরক্ত হচ্ছে) সেটা তোমাকে বলতে বাধ্য নয়।
পুষ্পঃঃ- অবশ্যই বাধ্য। আমার ফ্রেন্ডকে কি এমন বলেছেন যে সে….
আফরানঃঃ- (বিরক্ত হয়ে রাগী সুরে বলল) সেটা তাকে জিজ্ঞেস কর। জানো কি করেছে? একটা মানুষ কতটা নিষ্ঠুর হলে অন্যকে এভাবে টর্চার করে।
পুষ্পঃঃ- মানে?
আফরানঃঃ- তোমার ওই ফ্রেন্ড কালরাতে দুইটা ছেলের সাথে যা নিষ্ঠুরতা করেছে বলতে পার? আজ সকালে তাদের সাথে দেখা হয়েছিল। তাদের অবস্থা কতটা করুণ ছিল আমি দেখেছি। সব তোমার ওই নিষ্ঠুর ফ্রেন্ড করেছে।
পুষ্পঃঃ- জানেন কি আপনি নূরের ব্যাপারে? আর যেই ছেলেদের কথা বলছেন তাদের ব্যাপারেই বা কি জানেন? আমার ফ্রেন্ডকে নিষ্ঠুর বলছেন নিষ্ঠুর তো ছেলেগুলো। কাল যে তন্বির জন্য আপনার এত দরদ হচ্ছিল তার জন্য ওই ছেলেরাই দায়ী ছিল।
আফরানঃঃ- (চরম অবাক। কিছু বলার মতো ভাষা হারিয়ে ফেলেছে।)
পুষ্পঃঃ- নূর যা কিছু করেছে একদম ঠিক করেছে। কারণ সে চাই না আবারও কাউকে হারাতে।
আফরানঃঃ- মানে? (হাজারো প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে মাথায়।)
পুষ্পঃঃ- কিছু না। (ঘুরে চলে যেতেই আফরান সামনে এসে দাঁড়ায়)
আফরানঃঃ- প্লিজ বল। নাহলে আমি শান্তিতে থাকতে পারব না। হাজারো চিন্তা ঘুরবে মাথায়। প্লিজ বল আমায়। প্লিজ।
পুষ্পঃঃ- (আফরানের আকুতি মিনতি শুনে মন গলে গেল) ঠিক আছে বলছি।
সেই চার বছর আগের কথা। নূর ও তার দুই বোন তন্বি আর অর্থি। তারা বোন কম বেস্ট ফ্রেন্ড ছিল। অর্থি নূরের বড় বোন। আমাদেরও বোনের মতো করে আদর করতো। তখন নূর নবম শ্রেণিতে পড়ে আর অর্থি সবে মাত্র ভার্সিটিতে ভর্তি হয়েছে। সব কিছু ভালো চলছিল। হঠাৎ এক তুফান এসে তাদের সব খুশি উড়িয়ে নিয়ে গেল। ভার্সিটি লাইফে প্রথম দিনগুলো ভালোই কেটেছে। কিন্তু তাদের ভার্সিটির সিনিয়ররা তাদের র্যাগিং করতে শুরু করে। অর্থি ছিল ভীষণ রাগী। আর অন্যায় মোটেও সহ্য করতে পারে না। একদিন ভার্সিটির একজন সিনিয়র তাকে বলে স্যারকে…. কিস করতে। অর্থি রেগে গিয়ে সবার সামনে তার গালে থাপ্পড় দিল। অপমানে সে অর্থির পিছে লেগে পড়ে। বেশ কিছু দিন কেটে গেল। ভার্সিটির বার্ষিক প্রতিযোগিতা শুরু হয়। অনেকে সুইমিং কম্পিটিশনে অংশগ্রহণ করে। কম্পিটিশন শেষে সবাই চলে যেতে লাগলো। অর্থি আর বান্ধবীরা সেখানে গল্প করছিল। সেই সিনিয়র গুলো এলো। সে বলতে লাগলো “খুব দেমাগ না তোর। আয় একটু ঠান্ডা করে দেই” অর্থিকে ধাক্কা দিয়ে সুইমিংপুলে ফেলে দেই। সে আবারও বলতে লাগলো “কিছুক্ষণ পানিতে থাক একটু ঠান্ডা হউক। আর হ্যাঁ বাকিরা যাও এখান থেকে। কেউ যদি হেল্প কর তাহলে আমার চেয়ে খারাপ আর কেউ হবে না। অর্থির বান্ধবীরা চলে গেল। সিনিয়ররাও চলে গেল। বেশ কিছুক্ষণ পর। তারা অর্থির অবস্থা দেখতে আসে। এসে দেখে অর্থি…. অর্থি না তার শরীর পানিতে ভাসছে। তারা কেউ জানত না সে সাঁতার জানে না। সাঁতার না জানার কারণে প্রাণ হারায়। অর্থি আর তন্বি ছিল নূরের জান। র্যাগিং এর কারণে অর্থি তার জীবন হারায়। অর্থির শোকে নূর মানসিক ভাবে ভেঙে পড়ে। প্রায় এক সপ্তাহ হসপিটালে অজ্ঞান অবস্থায় ছিল। সেই থেকে নূর র্যাগিং করা ঘৃণা করে। যারা র্যাগিং করে তাদেরও ঘৃণা করে। কারণ সে চাই না অর্থির মতো অবস্থা আর কারো হউক।
আফরান নিরব হয়ে শুনছে। নিজেকে এখন অপরাধী মনে হচ্ছে তার কাছে। অজান্তে হলেও সে অনেক বড় অন্যায় করেছে। এর জন্য হয়তো নিজেকে কখনো ক্ষমা করতে পারবে না।
(র্যাগিং শুধু একটা শব্দ। কিন্তু এই র্যাগিং এর কারণে হাজারো ছাত্রছাত্রীর জীবন তচনচ হয়ে যায়। তারা জীবনকে শিক্ষার আলোতে আলোকিত করতে বিভিন্ন স্কুল কলেজ ভার্সিটি যায়। অনেকে নিজের আপনজন ঘরবাড়ি থেকে দূরে গিয়ে হোস্টেলে থাকে। কিন্তু এই র্যাগিং এর জন্য তাদের সুন্দর একটি জীবন অন্ধকারে ছেয়ে যায়। অনেকে তো এসব থেকে অতিষ্ঠ হয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। এমন হাজারো শোনা না শোনায় প্রতিনিয়ত বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে র্যাগিং হয়। কতজন লড়াই করে তাদের পড়ালেখা চালিয়ে যায়। কতজন সব কিছু মুখ বুজে সহ্য করে যায়। কতজন হার মেনে পড়াশোনা শেষ করে দেয়। বাবা মা আজীবন পরিশ্রম করে তাদের সন্তানদের লালন পালন করে শিক্ষায় শিক্ষিত করতে চায়। যাতে জীবনের পথে সব বাঁধা উপেক্ষা করে চলতে পারে। কিন্তু এই শিক্ষার পথেই তো অনেকের জীবন থেমে যায়। এমন অনেকে আছে র্যাগিং এর ভয়ে পড়াশোনা আর আগাতে চায় না।)
পুষ্পঃঃ- নূর অনেক কষ্টে নিজেকে সামলেছে। সে সবাইকে নিয়ে হাসিতে মেতে উঠে। নিজের কষ্ট কাউকে বুঝতে দেয় না। নূর অনেক স্ট্রোং। খুব বেশি কষ্ট না পেলে কাঁদে না। সেই কালকে তন্বির জন্য কাঁদতে দেখেছি। কারণ অর্থির মতো যাতে তন্বি হারিয়ে না যায় সেই ভয়ে। আর আজ কাঁদতে দেখেছি। আপনা….. (বলতে গিয়ে থেমে গেল)
আফরানঃঃ- (কিছু বলার ভাষায় হারিয়ে ফেলেছে। ঠাই হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। শরীরটা যেন অবশ হয়ে গেল। তাও নিজেকে শক্ত করে বলল) কো….কোথায় নূর? আমি নিজের অজান্তে ওকে কষ্ট দিয়ে ফেলেছি। আপনজনকে হারানোর কষ্ট আমি বুঝি। আমি…. প্লিজ বল সে কোথায়?
পুষ্পঃঃ- চলে গিয়েছে।
আফরানঃঃ- ওর বাসার ঠিকানা দাও। যতক্ষণ না ওর সাথে কথা হবে আমি কিছুতে শান্ত হতে পারব না। প্লিজ।
পুষ্পঃঃ- এই অবস্থায় সে বাসায় যাবে না। নিশ্চয় তার সেই মনে খারাপের সাথীর কাছে গিয়েছে।
আফরান গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়ল নূরের খোঁজে। অপরাধ ও কষ্ট উভয় কাজ করছে। আফরানের চোখে যেমন অপরাধবোধ রয়েছে তেমন বুকেও কষ্টও রয়েছে। অপরাবোধ হয়তো নূরকে কথা শুনানোর জন্য। আর কষ্ট হয়তো নূরের কষ্টের জন্য। অনুভূতিগুলোও আজব। নিজের অনুভূতি তবুও নিজেই বুঝতে পারে না আসলেই সে কি অনুভব করছে? কেন অনুভব করছে? কিন্তু সময় সেই বড়ই বিদ্রোহী। কারো জন্য থেমে থাকে না। সময়ের সাথে হয়তো অনুভূতি বেড়ে যায় নাহয় কমে যায়। আবার এই সময় থাকতে অনুভূতি প্রকাশ না করায় হারিয়ে যায় কোন এক অজানা প্রান্তে।
.
.
.
চলবে