? Ragging To Loving ?
Part:: 23
Writer:: Ridhira Noor
মেহেরঃঃ- (ফিসফিস করে বলতে লাগলো) সত্যি আমাদের ফেলে দিবে না তো। আমার কিন্তু ভয় করছে।
আলিফাঃঃ- সেটা বড় কথা না। কথা হলো কালকে এত্তো গুলো চকোলেট কিনছি। ভেবেছিলাম আজকে বাসায় গিয়ে খাব। এখন আমার চকোলেটের কি হবে। (ন্যাকা কান্না করছে)
মেহেরঃঃ- ফকিন্নি এখানে জান বাঁঁচবে নাকি সন্দেহ আর তুই চকোলেটের চিন্তা করছিস। আর আরেকটা কথা। ওইখান থেকে আমি অর্ধেক খেয়ে ফেলছি। (দাঁত ৩২ বের করে হাসি দিল। আলিফা রেগে ইচ্ছে মতো কয়েকটা মাইর দিল।)
ইয়াশঃঃ- তোমাদের কাহিনি শেষ হলে এবার ব্যাগ নিয়ে নেমে পড়।
আলিফা মেহের নেমে আসতেই থমকে যায়। তারা বলল পাহাড়ে যাবে কিন্তু এটা তো ফয়েজ লেক। চট্টগ্রামের সৌন্দর্যের আরেক রূপ। আলিফা মেহের ব্যাগ মাটিতে ফেলে খুশিতে একে অপরের হাত ধরে লাফাতে লাগলো। তাদের অনেক দিনের ইচ্ছা ছিল ফয়েজ লেক আসবে। যতবারই আসার প্লানিং করত কোন না কোন বাঁধা পড়ে যেত। উঁচু টিলা থেকে ফয়েজ লেক দেখা যাচ্ছে। সবুজ গাছগাছালির মাঝে স্বচ্ছ পানির হ্রদ। দূরে তাকালে মনে হয় যেন দূর দূরান্তে আকাশের সাথে মিশে গিয়েছে এই দৃশ্য। মনে হচ্ছে একজন শিল্পী তার তুলি দিয়ে সৌন্দর্যের রঙ ছড়িয়ে দিল। আলিফা মেহের বিস্মিত হয়ে দেখছে।
আরিফঃঃ- উহুম উহুম। তোমাদের আনা হয়েছে আমাদের অ্যাসিস্ট করার জন্য। ঘুরতে নয়। (মুহূর্তে তাদের মুখ মলিন হয়ে গেল। তাদের একেকটা অকাজ দিচ্ছে। প্রয়োজন ছাড়া একেকটা কাজ দিচ্ছে যাতে তারা বিরক্ত হয়। একবার পানি দিতে বলে আবার বিরক্ত হয়ে বারণ করে। মেহের আলিফা বুঝতে পারছে তারা ইচ্ছে করে এমন করছে। কি আর করার চ্যালেঞ্জ যেহেতু নিয়েছে পূরণ করতে তো হবেই।)
.
.
.
আহিল আমরিন আর ওয়াসিম সিমা তাদের বন্ধুত্বের গল্প বলতে লাগলো।
আমরিনঃঃ- আমাদের ফ্রেন্ড সার্কেলে একেকজন একেক রকম। কেউ মেন্টাল তো কেউ সেন্টিমেন্টাল। সেন্টিমেন্টাল আমি আলিফা মেহের আর মেন্টাল হলো পুষ্প নূর সিমা। আমাদের মধ্যে সবচেয়ে বড় মেন্টাল হলো নূর।
আহিলঃঃ- পাবনায় দিয়ে আসতে।
সিমাঃঃ- আরে ভাই পাবনার বাসিন্দারা নিজে এসে ওকে দিয়ে গেল। আর যাতে তাকে সেখানে নিয়ে না যায় তার জন্য ঘুষও দিতে চেয়েছিল।
হাসতে হাসতে অবস্থা খারাপ।
ওয়াসিমঃঃ- আমাদের বন্ধুত্ব তোমাদের মতো। হাজার যায় হোক। সবসময় একে অন্যের জন্য এগিয়ে আসি। বন্ধুত্বের বড় উদাহরণ ছিল আফরান আর…. (মাঝখানে থেমে গেল) আচ্ছা এসব পরে বলব। চল কিছু খেয়েনি।
.
.
.
২০ মিনিটের মধ্যে আফরান ঝড়ের গতিতে গেল তুফানের মতো চলে এলো। হাতে একগাদা শপিং ব্যাগ। রুমে ঢুকতে চোখ চড়কগাছ। বুঝতে প্রায় দুই মিনিট সময় লাগলো। ব্যাগ বেডে রেখে নিজে হাসতে হাসতে বেডের উপর বসে পড়ল। আফরানের হাসির আওয়াজে নূর পিছনে ফিরে তাকায়। আফরানের হাসি যেন বন্ধই হচ্ছে না। হাসির কারণও আছে বটেই। নূর আফরানের শার্ট প্যান্ট পড়ে আছে। শার্ট লম্বা হওয়ায় কোমরের নিচ পর্যন্ত এসেছে প্যান্ট পায়ের নিচে হয়ে মেঝেতে পড়ে আছে। তার উপর ভেজা চুল গুলো এলোমেলো হয়ে আছে।
নূরঃঃ- হেহেহেহে (ভেঙচিয়ে হাসলো) হাসা বন্ধ করেন। (আফরান ওর মতো করে হেসেই যাচ্ছে।) হাসা বন্ধ করেন নাইলে কিন্তু… কিন্তু… (পাশে টেবিলে জগ ভরতি পানি ছিল। তা হাতে নিল) পানি ছুড়ে মারব। (আফরান হাসি বন্ধ করে আড়চোখে নূরের দিকে তাকাল। নূর বেডে তাকিয়ে দেখে অনেক গুলো শপিং ব্যাগ। অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল) এত্তো গুলো ব্যাগ কার?
আফরানঃঃ- ও… পাশেই একটা শপ ছিল। কোন জামা নিব বুঝতে পারছিলাম না তাই যেটা যেটা ভালো লাগলো নিয়ে এলাম। তোমার যেটা ভালো লাগে পরে নাও।
নূরঃঃ- (ব্যাগ খুলে দেখে ৭-৮ টা মতো জামা। একবার জামাগুলো দেখল একবার আফরানকে দেখল। বিড়বিড় করে বলতে লাগলো পারলে তো মনে হয় পুরো দোকানই তুলে নিয়ে আসতো। একটা প্যাকেট হাতে নিল।) এটা কি?
আফরানঃঃ- ওটা আমাকে দাও। তুমি এর মধ্য থেকে নাও। (প্যাকেটটা নিয়ে চলে গেল।)
নূরঃঃ- ঢং। না জানি কোন গুপ্ত ধন আছে এটাতে। তাতে আমার কি? (সব ব্যাগ খুলে দেখে ড্রেসগুলো অনেক হেভি কাজ করা। শুধু একটা আছে একদম সিম্পল। সাদা জামার উপর নেভি ব্লু ফুল প্রিন্ট করা। কিন্তু সমস্যা হলো এটা স্লিভলেস।)
আফরান ড্রয়িংরুমে বসে ফোন টিপ ছিল। পায়ের আওয়াজ শুনে তাকিয়ে দেখে নূর সাদা ড্রেসটি পরল তার উপর জিন্সের জ্যাকেট পরা স্লিভ মুড়িয়ে মুড়িয়ে নূর আসছে। হালকা ভেজা খোলা চুল গুলো কাঁধের দুইপাশে কোমর পর্যন্ত। আফরান অপলক নয়নে তাকিয়ে আছে। আনমনে বুকের বাপাশে হাত দিল।
আফরানঃঃ- হায়….. (ধীর সুরে পরম আবেগপ্রবণ হয়ে বলল)
আফরানকে এভাবে বুকে হাত দিতে দেখে নূর মনে মনে বলতে লাগলো।
নূরঃঃ- (হায় হায় হার্ট অ্যাটাক করল নাকি? নাকি এসিডিটি হলো। সেটা বড় কথা নয় আমার দিকে এভাবে তাকিয়ে আছে কেন? থুড়ি বাজালো।) কি হলো? বুকে হাত দিয়ে আছেন কেন? এসিডিটি হলো নাকি?
আফরানঃঃ- (নূরের কথা হুশ ফিরল। সত্যি তো। হঠাৎ কি হলো আমার। বুকের স্পন্দনটাও এত দ্রুত গতিতে চলছে। নূরের তাকাতেই যেন আবারও হারিয়ে যাচ্ছে। চোখ ফিরিয়ে নিল।) তুমি আমার জ্যাকেট পরলে কেন? খুল এক্ষুনি।
নূরঃঃ- ওই আসলে জামাটা স্লিভলেস। আর বাকি জামাগুলো অনেক হেভি কাজ করা। তাই এটা পরলাম। সাথে আপনার জ্যাকেট। আমি কিন্তু কালকে ফেরত দিয়ে দিব। চিন্তা করিয়েন না।
আফরানঃঃ- ইটস ওকে। ফেরত দিতে হবে না ওটা তোমার কাছে রাখ। লাঞ্চ টাইম হতে চলেছে। ক্ষিধে পেয়েছে অনেক।
নূরঃঃ- হ্যাঁ আমারও প্রচুর ক্ষিধে পেয়েছে।
আফরানঃঃ- তো দাঁড়িয়ে আছ কেন যাও কিছু রান্না কর।
নূরঃঃ- (করুণ দৃষ্টিতে তাকাল) আমি নুডলস ছাড়া কিছু বানাতে পারিনা। আর নুডলস এক প্যাকেটই ছিল।
আফরানঃঃ- ভেবেছিলাম আজ তোমায় টর্চার করব এখন দেখি উল্টো তুমি আমাকে টর্চার করছ। বাইরের খাবার খেতে পারিনা আমি। রান্না করতে না পার কিন্তু সাহায্য তো করতে পার? (নূর মাথা উপর নিচে করে হ্যাঁ বলল) তাহলে চল কিচেনে।
আফরান গেল তার পিছে পিছে নূর গেল। ফ্রিজ খুলে দেখে ফল ডিম দুধ আছে। দুইজন অনেক্ষণ দাঁড়িয়ে চিন্তা করতে লাগলো। অবশেষে সিদ্ধান্ত নিল কাস্টার্ড বানাবে। নূর আফরানের পাশে দাঁড়িয়ে ফল কাটছে। আফরান বাকি কাজ করতে লাগলো। তাকে এভাবে ঝটপট কাজ করতে দেখে নূর অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল।
নূরঃঃ- আপনি রান্না পারেন?
আফরানঃঃ- হ্যাঁ! রান্না করা আমার এক ধরনের শখ বলতে পার। মুড ভালো থাকলে বা খারাপ থাকলে রান্না করি। মাঝে মাঝে মাকেও কিচেনে হেল্প করি।
নূরঃঃ- বাহ্ আপনি দেখি অনেক ট্যালেন্টেড। আমি তো ভেবে নিয়েছি বিয়ে করলে একজন শেফকে করব। তাকে দিয়েই রান্না করাবো।
আফরানঃঃ- আর তুমি কি করবে?
নূরঃঃ- আমি ওর দিকে তাকিয়ে থাকব। (গালে হাত দিয়ে আফরানের দিকে তাকিয়ে আছে। মুখ ভরতি হাসি। চোখে চোখ পড়তেই দুজনে হারিয়ে গেল এক অজানা টানে। নূরের চোখে তাকালে আফরানের নজর যায় নূরের চোখের পাশে তিলে। যা তার চোখজোড়া আরো আকর্ষণীয় করে তোলে। চুলায় দুধ উথলিয়ে পড়ায় দুজনের হুশ ফিরল। দুজনেই অপ্রস্তুত হয়ে আশেপাশে তাকাতে লাগলো।)
তারপর রান্না শেষ করে নিয়ে গেল ডাইনিং টেবিলে। সামনা-সামনি বসে খেতে লাগলো। খাবার শেষে উঠতে যাবে তখনই কলিং বেল বেজে উঠল। আফরান গিয়ে দরজা খুলল।
আফরানঃঃ- তুমি….?
.
.
.
চলবে