? Ragging To Loving ?
Part:: 19
Writer:: Ridhira Noor
ইয়াশঃঃ- একদম পারফেক্ট টাইমিং। আজ আমাদের ফটোশুট হবে। তার জন্য আমাদের অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রয়োজন ছিল। এখন তো ফ্রি পেয়ে গেলাম। সো লেটস গো অ্যাসিস্ট্যান্টস্।
মেহেরঃঃ- আমরা আপনাদের অ্যাসিস্ট্যান্ট না। হেরে গিয়েছি বিধায় শর্ত পূরণ করছি। গট ইট?
ইয়াশঃঃ- হোয়াট এভার। আমাদের কাজ হলেই হলো।
মেহের রাগী দৃষ্টিতে তাকাল। ইয়াশ কোন ভ্রুক্ষেপ না করেই তার হাতে একটা ব্যাগ ধরিয়ে দিল। যেখানে তার ফটোশুটের প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম রয়েছে। ব্যাগটা এত ভারি ছিল যে মেহের তুলতে না পেরে হেচড়ে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। আরিফ আলিফাকে ইশারা করল যাতে সেও তার ব্যাগ নেই। আলিফা অনেক চেষ্টা করল ব্যাগ তুলার পরে না পেরে ক্লান্ত হয়ে সেও টেনে নিয়ে গেল। পুষ্প নূর হা হয়ে তাকিয়ে আছে। এবার তাদের পালা। নূর আফরানের দিকে তাকিয়ে জোর পূর্বক হাসার চেষ্টা করল। আফরান ভাব নিয়ে অন্য দিকে মুখ করে আছে। নূর বিড়বিড় করে ইচ্ছে মতো গালি দিল।
আফরানঃঃ- মন্ত্র পড়া হলে এবার চল। (নূর চোখ বড় বড় করে তার দিকে তাকাল। আর ভাবতে লাগলো সে তো অন্য দিকে তাকিয়ে ছিল তাহলে জানল কি করে?) আমি জানি আমি হ্যান্ডসাম। তাই বলে এভাবে তাকাতে হবে না।
নূরঃঃ- (বমির ভাব নিল) হ্যান্ডসাম। আমাকে কেউ পিংক কালারের বিষ দে। খাইয়া মরে যায়। এই পান্ডা নাকি হ্যান্ডসাম। বিলাতি বকের মতো সাদা চামড়া ওরে আমার হ্যান্ডসাম রে। এটার শোনার আগে আমি বয়রা হয়ে গেলাম না কেন? (দুই হাত দিয়ে কান চেপে ধরে চোখ বন্ধ আছে।)
আফরানঃঃ- জাস্ট শাট আপ। স্টপ দেস মেলোড্রামা। কাম উইথ মি। (গাড়ির দিকে হাটা ধরল)
নূরঃঃ- কাম উইথ মি। যত্তসব ঢং। (ভেঙচিয়ে) (আফরানের পিছে গেল। গিয়ে দেখে কারের দরজায় হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।)
আফরানঃঃ- কার চালাতে পার? (মাথা নেড়ে হ্যাঁ বলল। চাবি ছুড়ে দিল।) তাহলে ড্রাইভ কর।
নূরঃঃ- (চাবি ক্যাচ নিয়ে চোখ বড় বড় করে তাকাল) আমি আপনার ড্রাইভার নাকি? পারব না আমি। (চাবি আফরানের দিকে ছুড়ে দিল।)
আফরানঃঃ- (চাবি নিয়ে) ভুলে গেলে আজ আমি যা বলব তাই করতে হবে। (চাবি আবার নূরকে দিল)
নূরঃঃ- আমার ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই। পুলিশ ধরলে হুধুম খেলানি দিবে। (চাবি আবার ফিরিয়ে দিল)
আফরানঃঃ- আসলেই তোমার দ্বারা কিছু হবে না। শুধু পার খিটখিট করতে আর ঝগড়া করতে। (ড্রাইভিং সিটে বসে পড়ল। জানালার কাচ নামাল) এক্সকিউজ মি মিস খিটখিট আপনাকে কি এখন নিমন্ত্রণ দিতে হবে। যে আসেন। (নূর পিছনের সিটে বসতে গেলে আফরান থামিয়ে দেয়) ও হ্যালো আমি তোমার ড্রাইভার না। সামনে এসে বস।
নূরঃঃ- (খাচ্চর বিলাতি বক। কুং ফু পান্ডা কোথাকার।)
_______________________________
পুষ্প একা দাঁড়িয়ে আঙুল নিয়ে খেলছে। রিহান তার মনের অবস্থা বুঝতে পারছে।
রিহানঃঃ- ইটস ওকে। তুমি যেতে পার। (যখন পাশে চেয়ে ছিলাম তখন তো ছিলে না।)
পুষ্পঃঃ- হুমম…. (এখন আর কেন থাকবে আমার সাথে। চোখের পানি গড়িয়ে পড়তেই মুছে নিল। বেরিয়ে পড়ল পার্কিং এরিয়া থেকে।)
রিহান শুধু পুষ্পর যাওয়ার পানে তাকিয়ে আছে। হঠাৎ পুষ্পর চিৎকার শুনে তার বুকের ভেতর মোচড় দিয়ে উঠল। তৎক্ষনাৎ দৌড়ে গেল। গিয়ে থমকে গেল। পুষ্প একটা খালি রিকশার উপর দাঁড়িয়ে আছে তার সামনে কুকুরের ছোট ছোট চার বাচ্চা ঘেউ ঘেউ করছে।
পুষ্পঃঃ- আআআ শুহ্ শুহ্। সর কুত্তা। এএএ আম্মু রে। (ওড়না দিয়ে বাচ্চাগুলোকে তাড়াতে লাগলো) যাহ্ তোর মার কাছে যা আমার পিছে কেন লাগছস। সর কুত্তা সর। (জুতা খুলে ছুড়ে মারল।)
রিহান এসব কান্ড দেখে পেটে হাত দিয়ে হাসতে লাগলো। পুষ্প সামনে গিয়ে দাঁড়াল। রিহানকে হাসতে দেখে তার প্রচুর রাগ হচ্ছে। এক দিকে কুকুর অন্যদিকে রিহান। হলো আরেক মহা বিপদ। কুকুরের মা এলো। ঘেউ করে উঠতে পুষ্প এক লাফ দিয়ে রিহানের উপর ঝাপিয়ে পড়ল। রিহান জানে পুষ্প কুকুর কত ভয় পায়। তাই হেসে তাকে কোলে নিয়ে সেই দিক থেকে চলে এলো। পুষ্প রিহানের বুকে মুখ গুজে ফেলল।
রিহানঃঃ- তোমার মনে আছে ক্যাপ্সি(রিহানের পালিত কুকুর) ওকে প্রথমবার দেখে তুমি কতটা ভয় পেয়েছিলে। তখনও ঠিক এভাবে কোলে নিয়েছিলাম।
পুষ্পঃঃ- (মুখ তুলে বলতে লাগলো) মনে থাকবে না। তারপর তুমি কি করেছিলে ভুলে গিয়েছ? আমাকে কোলে নিয়ে ক্যাপ্সির সামনে বসে ছিলে যাতে তোমার থেকে দূরে যেতে না পারি।
দুইজনে হাসতে লাগলো। হাসতে হাসতে হঠাৎ হাসি উধাও হয়ে গেল। পুষ্পর চোখ ছলছল করছে। রিহানের চেহারায় রাগ। পুষ্পকে কোল থেকে নামিয়ে দিল। পুষ্প দৌড়ে চলে গেল। কিছু দূর এসে থেমে গেল দম যেন বন্ধ হয়ে আসছে।
পুষ্পঃঃ- দুই বছর আগে সব যেন একটি সুন্দর স্বপ্ন ছিল। স্বপ্ন… যা ভেঙে চুরমার হয়ে গেল।
.
.
.
আহিল ওয়াসিম আমরিন সিমাকে নিয়ে গেল রেস্টুরেন্টে। সেখানে পৌঁছে ভার্সিটির সেই দুইটা মেয়ে এসে আহিল ওয়াসিমকে জড়িয়ে ধরল। আমরিন সিমার চোখ ছানাবড়া হয়ে গেল। ওয়াসিম আহিল তারাও খুব হেসে হেসে কথা বলছে।
আমরিনঃঃ- এই দুই শাকচুন্নির সাথে আসলে আমাদের আনল কেন?
সিমাঃঃ- ইচ্ছে তো করছে চারজনকে একসাথে বেঁধে বুড়িগঙ্গা নদীতে ফেলে দিয়ে আসি।
ওয়াসিম আহিল তাদের ইগনোর করে মেয়ে দুটির সাথে চলে গেল। আমরিন সিমা ঠায় হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
আহিলঃঃ- কি হলো চল তোমরা। আর আমাদের জন্য জুস নিয়ে আস। উফফ কি যে গরম পড়ছে। গো ফাস্ট।
আমরিন সিমা হনহনিয়ে গেল জুস আনতে। ওয়াসিম আহিল হাই ফাইভ দিল। মেয়ে দুটিও তাদের সাথে হাসছে।
সিমাঃঃ- জুস খাবে তাই না জুস। ইচ্ছে তো করছে তাদেরকেই ব্লেন্ডারে দিয়ে ব্লেন্ড করে জুস বানাই।
আমরিনঃঃ- উফফ কি যে গরম পড়ছে। এত গরম হলে আসছস কেন? ফ্রিজে ঢুকে বসে থাক। এদের ভালো করে জুস খাওয়াব।
চারটা অরেঞ্জ জুস নিল। এক প্যাকেট মরিচের গুঁড়ো নিল। জুসে মিশিয়ে তাদের দিল। জুস মুখে দিতেই একেকটার অবস্থা খারাপ হয়ে গেল। মেয়েগুলো ঝালে লাফাতে লাগলো। ঝাল সহ্য করতে না পেরে মেয়ে দুটি পানি খেতে চলে গেল। তাদের অবস্থা দেখে আমরিন সিমা হাসছে।
ওয়াসিমঃঃ- এসব কি? জুসে এত ঝাল কেন?
সিমাঃঃ- মরিচ যেহেতু দিয়েছি ঝাল তো হবেই। ওই শাকচুন্নি গুলোকে যখন এনেছেন তাদের সাথে থাকেন। আমাদের কেন এনেছেন।
ওয়াসিমঃঃ- ওদের এনেছি বলে কি তোমাদের জেলাসি হচ্ছে?
সিমাঃঃ- আমাদের কেন জেলাসি হবে? জেলাস হওয়ার কি আছে এখানে?
আহিল ওয়াসিমকে টেনে অন্য দিকে নিয়ে গেল। প্রায় অনেক্ষণ সময় নিয়ে এলো।
আহিলঃঃ- চল তোমাদের বাসায় পৌঁছে দেই।
সিমা আমরিন অবাক হয়ে তাদের দিকে তাকিয়ে আছে। হঠাৎ কি হলো। মন খারাপ করে আছে দুইজন। আহিল ওয়াসিম বেরিয়ে গেল তারা পিছে পিছে গেল। পার্কিং এরিয়া এসে আহিল বলতে লাগলো।
আহিলঃঃ- সরি।
সিমা-আমরিনঃঃ- সরি কেন?
আহিলঃঃ- এতদিন তোমাদের কষ্ট দেওয়ার জন্য। ভেবেছিলাম হয়তো তোমাদের মনেও আমাদের জন্য ফিলিংস আছে। কিন্তু তোমরা বুঝতে পারছ না। তাই আমরা প্ল্যান করলাম যদি ভালবাসার মানুষকে অন্য কারো সাথে দেখ তাহলে জেলাস ফিল করে মনের কথা বলে দিবে।
ওয়াসিমঃঃ- কিন্তু আমরা ভুল ছিলাম। চেয়েছিলাম তোমাদের ভালবাসা পেতে। কিন্তু… থাক সেসব কথা। চল।
আমরিনঃঃ- ভালবাসলে এভাবে ছেড়ে চলে যায় না। বুকের মাঝে আগলে রাখতে হয়। (বলে আহিলকে জড়িয়ে ধরল। আহিল প্রথমে বুঝতে না পারলেও পরক্ষণে মুচকি হেসে আমরিনকে আঁকড়ে ধরল।)
ওয়াসিম করুণ দৃষ্টিতে সিমার দিকে তাকিয়ে আছে।
সিমাঃঃ- কি? আমাকে এভাবে জড়িয়ে ধরলে হবে না। হুহ্। (ওয়াসিম মাথা নিচু দীর্ঘ শ্বাস ফেলল) আমি তো আম্মু আব্বুর ছোট মেয়ে তাই আমাকে কোলে নিতে হবে। (বলে হেসে দিল। ওয়াসিম মাথা উঠিয়ে হেসে দিল। সেও সিমাকে কোলে তুলে নিল। সিমা তার গলা আঁকড়ে ধরল।)
.
.
.
চলবে