? Ragging To Loving ?
Part:: 11
Writer:: Ridhira Noor
সকাল সকাল সবাই কাজে লেগে পড়ল। আজ মেহেদী অনুষ্ঠান আর বিয়ে দুইটা একসাথে তাই ঝামেলাও বেশি। মিলাকে রেডি করে মেহের আলিফা রেডি হয়ে গেল। মিলাকে দেয়ালেএ সাইড করে মাঝ বরাবর বসানো হলো। মেহের আলিফা দুইজন মিলার দুই হাতে মেহেদী দিচ্ছে। রাতুল ইয়াশ আরিফ ওরাও চলে এলো। রিয়াদ ভাইয়া আর মিলার বাবা মা তাদের স্বাগত করল। তাদের মিলার সামনাসামনি বসানো হলো। রাতুল মিলাকে দেখে মুচকি হাসি দিল। হাত সুন্দর ইশারা করল। মিলা এক লজ্জা মাখা হাসি দিয়ে মাথা নিচু করে ফেলল। ইয়াশ আরিফ তাদের চোখ পড়ল মেহের আলিফার দিকে। সেলোয়ার কামিজ পরা। দুইজনকে দেখতে সিম্পল লাগলেও বেশ মানিয়েছে।
আরিফঃঃ- কে বলবে এই আলিফা মেয়েটা এত ফাজিল। দেখে মনেই হয় না। (মনে মনে)
ইয়াশঃঃ- মেহের মেয়েটা দেখতে কত ভদ্র। কিন্তু বদের হাড্ডি একটা। (মনে মনে)
মিলার লজ্জা দেখে আলিফা মেহের সামনে তাকিয়ে দেখে রাতুল আর তার পাশে আরিফ ইয়াশ। সিম্পল সাদা পাঞ্জাবি পরা তাও দেখতে বেশ সুন্দর লাগছে।
আলিফাঃঃ- কে বলবে এই আরিফ এত ফাজিল। দেখে মনে হয় না। (মনে মনে)
মেহেরঃঃ- দেখতে ভদ্র মনে হলেও আস্তো বজ্জাত। আন্ডা আন্ডা চোখ দুটো শুধু ক্যামেরায় মেয়ের ছবিতে থাকে।
ইয়াশ আরিফ এগিয়ে এলো মিলার দিকে। হাতে ক্যামেরা নিয়ে। মেহের আলিফা মিলার দুই পাশে বসা ছিল।
আরিফঃঃ- এক্সকিউজ মি? আমরা ছবি তুলতে পারি? (দাঁতে দাঁত চেপে)
আলিফাঃঃ- জ্বি তুলেন। (ঠোঁট বাকিয়ে)
আরিফঃঃ- তাহলে তোমরা উঠে পড়।
মেহেরঃঃ- কেন? আমরা কেন উঠব?
ইয়াশঃঃ- কেন ভুলে গেলে। বলেছিলে না সুন্দরী মেয়ে দেখলেই ছবি তুলতে ইচ্ছে করে। তাই তোমরা উঠে পড়। কারণ আমরা চাই না আমাদের ক্যামেরায় দুই পেত্নীর ছবি ক্যাপচার হোক।
মেহেরঃঃ- কি বললেন? আমরা পেত্নী?
ইয়াশঃঃ- কোন সন্দেহ আছে? নাও প্লিজ মুভ। আমাদের সুন্দরী ভাবির ছবি তুলব।
ওদের কথা শুনে মিলা সহ সেখানে থাকা হেসে দিল। মেহের আলিফা রেগে হনহনিয়ে চলে গেল। ইয়াশ আরিফ হেসে হাই ফাইভ দিল। তারপর ছবি তোলায় মনোযোগ দিল।
আলিফাঃঃ- আমাদের এভাবে সবার সামনে অপমান করল। এদের ইজ্জতের ফালুদা যদি না বানায় তাহলে দেখিস।
মেহেরঃঃ- আইডিয়া! (চুটকি বাজিয়ে) এখন দেখ ইজ্জতের ফালুদার রেসিপি।
প্রায় আধ ঘণ্টা পর মেহের আলিফা এলো। একে অপরের দিকে তাকিয়ে মুখ টিপে টিপে হাসছে। খাবারের জন্য সবাইকে বাইরে উঠানে নিয়ে যাওয়া হলো। আর এদিকে মেহের আলিফা তাদের কাজ সেরে নিল। খাবার খেয়ে একে একে সবাই ভিতরে আসছে। মেহের আলিফা সবাইকে জায়গা মতো বসিয়ে দিল। রাতুল ইয়াশ আরিফ বাকি ছিল বসার। একটা বড় সোফা খালি ছিল চাদর দিয়ে ঢাকা। রাতুল বসতে যাবে তার আগেই মেহের আলিফা তাকে টেনে নিল।
মেহেরঃঃ- জিজু কি করছেন আপনি? আপনার জায়গা এখানে নয়। মিলা আপুর পাশে।
আলিফাঃঃ- আর এই জায়গায় শুধু আমি আর মেহের বসব। অন্য কেউ যাতে না বসে। (আরিফ ইয়াশের দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল)
রাতুল মুচকি হেসে মিলার পাশে বসল। আলিফার এমন বলায় ইয়াশ আরিফ জেদ ধরল তারা এই সোফায় বসবে। আলিফা মেহের কোন ভাবেই তাদের বসতে দিচ্ছে না। সবাই তাদের খুনসুটি দেখে আনন্দ উপভোগ করছে। বিয়ে বাড়িতে এসব চলতে থাকে। আরিফ ইয়াশ জোর করে সোফায় বসে পড়ল। বসার সাথে সাথে আওয়াজ হলো। “টুসসস টুসসস টুসসস” এমন আওয়াজে দুইজন অনেক লজ্জা পেল। বাকিরা হাসছে। আলিফা মেহের হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছে। আরিফ রেগে চাদর উঠিয়ে দেখে ছোট ছোট অনেকগুলো বেলুন। যা তারা বসার সাথে সাথে ব্লাস্ট হয়ে গেল।
মেহেরঃঃ- আমাদের পেত্নী বলেছিলেন না? এই দেখুন পেত্নীর কাজ। (আবারও হাসতে লাগলো)
আলিফাঃঃ- আমরা তো আরও চিন্তা করছিলাম কি করে আপনাদের এই সোফায় বসাব। তারপর ভাবলাম আপনারা যেমন আপনাদের চিন্তা ভাবনাও তেমন। মানে উল্টো। যদি আপনাদের বসতে না দিই তাহলে আপনারা আরো জোর করে বসবেন। ব্যাস হয়ে গেল আমাদের কাজ।
আরিফ ইয়াশ রাগে ফুঁসছে। আলিফা মেহের চুল পিছন দিকে উড়িয়ে ভাব নিয়ে চলে গেল।
সন্ধ্যায় মিলাকে কনের সাজে সাজানো হচ্ছে। শুধু মাথায় ওড়না দেওয়া বাকি। তারপর সাজ কমপ্লিট। মিলার কাজিন রিসা ওড়না পরিয়ে দিল।
রিসাঃঃ- উফফ আপু কি লাগছে তোমায়। জিজু চোখ ফিরাতেই পারবে না।
তারপর মিলাকে নিয়ে গেল স্টেজের দিকে। আরিফ ক্যামেরায় সবার ছবি তুলছে। মিলার সব কাজিনরা একসাথে স্টেজে উঠল। আলিফা মেহের মিলার দুই পাশে দাঁড়াল।
ইয়াশঃঃ- আরে সুন্দর পোজ দিয়ে দাঁড়াও সবাই। আমি যেভাবে বলছি সেভাবে দাঁড়াও তাহলে ছবি সুন্দর হবে।
আলিফা মেহের বিরক্তিকর ভাব নিল। ইয়াশ যেভাবে বলল সবাই সেভাবে দাঁড়াল। আলিফা মেহেরকে বলল মিলার পিছনে দাঁড়াতে। তারা গিয়ে দাঁড়াল। আরিফ ইচ্ছে মতো ছবি তুলল। যখন সবাই ছবি দেখতে নিল তখন দেখল। মেহের আলিফার মাথা কাটা। তাদের চেহারা ছবিতে উঠেনি।
মেহেরঃঃ- আমাদের চেহারা কোথায়?
ইয়াশঃঃ- আরে সকালেই তো বলেছিলাম। আমাদের ক্যামেরায় পেত্নীর ছবি তুলব না।
মেহের ইয়াশের পায়ে আলিফা আরিফের পায়ে জোরে পা দিল। ইয়াশ আরিফ লাফাতে লাগলো। মেহের আলিফা রেগে চলে গেল। বিয়ের অনুষ্ঠান শেষ হলো। মেহের আলিফা পরের দিন চট্টগ্রাম ফিরে এলো। ইয়াশ আরিফ তাদের ফটোগ্রাফি জন্য আরও দুই দিন ছিল।
.
.
.
বর্তমানে ____________________________
আরিফঃঃ- ভাই এই ছিল আপদদের কাহিনি।
আফরান রিহান আহিল ওয়াসিম হাসতে হাসতে শেষ।
ইয়াশঃঃ- হারামিরা হাসা বন্ধ কর। এবার তোরা বল। তোদের কিভাবে চিনস।
আফরানঃঃ- (তাদের এই কয়দিনের কাহিনি বলল) ভাই একেকটা বদের হাড্ডি।
আহিলঃঃ- বদের হাড্ডি হোক মাংস হোক যাই হোক। এই হৃদয়ে তো ওর ছবি ছেপে গেল। প্রেমে পড়ে গেছি ওর।
রিহানঃঃ- তুই আর প্রেম? কত প্রেম করবি তুই?
আহিলঃঃ- দেখ অনেকের সাথে ফ্লার্ট করেছি বলতে পারিস। কিন্তু আজ পর্যন্ত কারো প্রেমে পড়িনি। জানি না কেমনে কিন্তু ওর জন্য এক অন্যরকম অনুভূতি অনুভব করি।
ওয়াসিমঃঃ- কার প্রেমে পড়েছিস ভাই?
আহিলঃঃ- আমরিন। (এক মুচকি হাসি দিল। যেন ওর নাম নিতেই মনে এক সুখ অনুভব হয়)
ওয়াসিমঃঃ- ভাগ্যিস। (বিড়বিড় করে)
রিহানঃঃ- ভাই তোকে শহীদ দিবসের শুভেচ্ছা। ওদের গ্রুপের কারো সাথে প্রেমে পড়া মানে শহীদ হওয়া।
সবাই হেসে উঠল। আহিলও মুচকি হাসি দিয়ে আমরিনের কথা ভাবতে লাগলো।
আফরানঃঃ- তারপর বল তোদের ফটো কনটেস্ট কেমন হলো। তার জন্যই তো দুই সপ্তাহ বাইরে গিয়েছিলি।
ইয়াশঃঃ- আমরা সেকন্ড রানারআপ হয়েছি। ইনশাআল্লাহ ভবিষ্যতে বিজয়ী হব।
সবাই তাদের শুভেচ্ছা জানালো। এত দিন পর বন্ধুদের সাথে দেখা তাই সবাই অনেক্ষণ আড্ডা দিল।
.
.
.
পরের দিন ভার্সিটিতে
পুষ্পঃঃ- তাহলে এভাবে চিনিস ওদের। ওরে তোরাও কম না।
আলিফাঃঃ- হুহ্ যেমন কর্ম তেমন ফল। থুক্কু তেমন ইজ্জতের ফালুদা। (সবাই একসাথে হেসে উঠল)
পান্নার ড্রাইভার পান্নাকে ভার্সিটি ড্রপ করে দিল। পান্নার বাবা আফরানের বাবার বিজনেস পার্টনার আর ভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য। আফরানের সাথে তার পরিচয় হয় ভার্সিটিতে উঠার পর। এক বছরের পরিচয়ে ভালো বন্ধু হয়ে গেল। পান্না যেমন সুন্দরী তেমন বাবার টাকায় অনেক অহংকার। তার সুন্দরে অনেকে ফিদা হলেও তার অহংকারের কারণে সবাই দূরে থাকে। ভার্সিটিতে তার দুই বান্ধবী আছে। পান্না ভার্সিটি আসতেই তার দুই বান্ধবী ঝিনু রিতার সাথে দেখা হলো।
রিতাঃঃ- পান্না কেমন আছিস তুই?
পান্নাঃঃ- ভালো।
ঝিনুঃঃ- ভালো? জানিস এই কয়দিন ভার্সিটিতে কি হয়েছে?
পান্নাঃঃ- জানি। ওই কি একটা ভিডিও নিয়ে কাহিনি হলো।
রিতাঃঃ- শুধু ভিডিও? আরো অনেক কিছু হয়েছে। কিছু নিউ স্টুডেন্টস আর আফরানদের মধ্যে যে যুদ্ধ চলছে জানিস কিছু?
পান্নাঃঃ- মানে কি হয়েছে?
ঝিনুঃঃ- তা জানবি কি করে? তুই তো তোর মডেলিং নিয়ে বিজি। তাই ভার্সিটিতে আসিস নি। (আফরান আর নূরের সব কাহিনি বলল)
পান্নাঃঃ- ওহ গড! তোরা এমন ভাবে বলছিস যেন কি না কি হয়েছে। আফরান জাস্ট ওর র্যাগিং করছে। দেটস ইট। সো জাস্ট চিল।
রিতাঃঃ- তুই বুঝছিস না কি থেকে কি হবে।
পান্নাঃঃ- কাট দ্যা ক্রেপ ইয়ার। চল ক্লাসে চল।
.
.
.
চলবে
বিঃদ্রঃ ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন ?