? Ragging To Loving ?
Part:: 41
Writer:: Ridhira Noor
আফরান মায়মুনা আরো বেশি অবাক হলো যখন তারা দেখল পুষ্প সিমা আমরিন মেহের আলিফা ওরা ফুচকার দোকানে বসে ফুচকা খাচ্ছে আর হাসছে। সিমা হাত তুলে হাই দিল।
সিমাঃঃ- হাই। এদিকে এসো। (আফরান নূর মায়মুনা ফুচকার দোকানে গিয়ে বসল।)
আফরানঃঃ- এই মাত্র কি হলো এসব? আর তোমরাও কিছু বলছ না নূরকে। বেচারার উপর কত টর্চার করল।
নূরঃঃ- বেচারা? (নাক কুচকে) বেচারা না খাচারা। (চট্টগ্রামের ভাষায় আবর্জনাকে খাচারা বলে) টর্চার না ওরে তো আমি থার্ড ডিগ্রি দিতাম। কিন্তু মাঝখানে আপনি এসে ঝামেলা করে দিলেন।
আফরানঃঃ- শুধু শুধু কেন….
আলিফাঃঃ- শুধু শুধু না। কারণ আছে। চলেন ফ্ল্যাশব্যাকে যায়।
.
.
মেয়েটিঃঃ- মামা এক প্লেট ফুচকা দেন। ঝাল বেশি করে দিবেন।
ছেলেটি তার বন্ধুকে নিয়ে পাশের চায়ের দোকানে বসে ছিল।
ছেলেটাঃঃ- হ্যাঁ মামা ভালো করে ঝাল দেন। যাতে পরে আমি ঝাল মেটাতে পারি। (বলে খিলখিল করে হেসে উঠল। তার বন্ধু তাকে অনেক বারণ করল এসব করতে। কিন্তু সেই শুনছেই না। মেয়েটি লাল ওড়না পরা ছিল।) ওই লাল দোপাট্টে ওয়ালি তেরা নাম তো বাতা। (আস্তে করে শিষ বাজালো।)
কথাগুলো মেয়েটি ছাড়া আশেপাশের কেউ খেয়াল করে নি। কথাগুলো শুনে মেয়েটির চোখে পানি চলে এলো।
নূর আর তার বান্ধবীরা ভার্সিটি যাচ্ছিল এই দৃশ্য দেখে নূরের মাথা খারাপ হয়ে গেল। অন্যকেউ খেয়াল না করলেও সে ঠিকই খেয়াল করেছে। নূর গেল ছেলেটার কাছে। তার সামনে গিয়ে দাঁড়াল।
নূরঃঃ- আরে ভাই তুই তো ইভটিজার নামে কলঙ্ক। ইভটিজিং করছিস অথচ ভালো করে শিষ বাজাতে পারিস না। তুই প্রথম ধাপেই ফুসস হয়ে গেলি। চল আগে তোকে শিষ বাজানো শেখায়।
নূরের কথা শুনে ছেলেটা ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেল।
ছেলেটাঃঃ- মা…মানে? কি…কি বলছেন?
ওইদিকে আমরিন মেহের সবাই ফুচকার দোকানে গিয়ে বসল। ফুচকা খাচ্ছে আর এসব কান্ড দেখে মজা নিচ্ছে।
নূরঃঃ- ওলে অবুঝ বালক লে। বুঝছ না কি বলছি? শিষ বাজা। (ভয়ে ছেলেটা ঢোক গিলল) বাজা বলছি। (চেচিয়ে উঠল। মনে হচ্ছে যেন এক্ষুনি জ্বোয়ালামুখীর মতো ফেটে লাভা বের হবে।)
ছেলেটাঃঃ- (ভয়ে কেঁপে উঠল। ভয়ে শিষ বাজানোর চেষ্টা করছে।) ফুহহহহ। ফুসসসস। ফুহহহহ। (অনেকভাবে চেষ্টা করছে কিন্তু হচ্ছে না।)
নূরঃঃ- ঠিকভাবে কর।
ছেলেটাঃঃ- ফুহহহতততত।
নূরঃঃ- ছিঃ কি সব শব্দ বের করছিস।
ছেলেটাঃঃ- আমি পারি না শিষ বাজাতে।
নূরঃঃ- (দিল ছেলেটার পেটে ঘুসি) ঠিক মতো কর। (ছেলেটা মুখে আঙুল দিয়ে ফুহ্ দিচ্ছে) কি করছিস কি? ঠিক ভাবে কর। নয়লে তোর চাটনি বানামু আজ।
ছেলেটাঃঃ- হচ্ছে না তো। (কাঁদো কাঁদো গলায় বলল)
নূরঃঃ- এই দেখ এভাবে কর। (মুখে আঙুল জোরে শিষ বাজালো।
.
.
.
আলিফাঃঃ- নূরের ফ্লাইং জুতার কামাল তো দেখলেনই। (ফিক করে হেসে দিল। বাকিরাও হাসতে হাসতে কাহিল অবস্থা।)
মায়মুনাঃঃ- হায়রে আমি এত বছর ধরে কত কি মিস করছি। না হলে নূরির সব কান্ড কারখানা দেখতাম। আসছি যখন চল সবাই মিলে ফুচকা খায়। ট্রিট আমার পক্ষ থেকে। বিয়ে উপলক্ষে।
মেয়েরা ফুচকা খাচ্ছে। আফরান পাশের টেবিলে বসে বসে মোবাইল টিপছে। সবাই অনেক বলল ফুচকা খেতে কিন্তু সে বারণ করে দেয়। কেউ আর জোর করল না।
নূরঃঃ- মামা টক আর ঝাল বেশি করে দিবেন। (নূরের কথায় আফরান তার দিকে তাকাল।
আফরানঃঃ- (মেয়ের মাথা খারাপ নাকি? ঝালে চোখ দিয়ে পানি বেরুচ্ছে। তাও নাকি আরো বেশি ঝাল লাগবে।)
নূর একটা ফুচকা নিয়ে মুখে দিল। টক আর ঝালে চোখ খিছে বন্ধ করে ফেলল। আফরান অপলক নয়নে তাকিয়ে আছে তার দিকে। নূর আরেকটা ফুচকা মুখে দিল। ঠোঁট ছোট করে দিল চোখ টিপি। দেখতে ভীষণ কিউট লাগছে।
আফরানঃঃ- হায়…… (বুকের বাপাশে হাত দিয়ে। আশেপাশে তাকিয়ে হাত নামিয়ে নিল।) না জানি ফুচকার মধ্যে এমন কি আছে যে মেয়েরা ফুচকার জন্য এতো পাগল। (নূরের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো।)
ফুচকা খাওয়া শেষে নূর বলে উঠল।
নূরঃঃ- মায়মুনা বিয়ের আর মাত্র দশ দিন বাকি। বিয়ের শপিং করবি কবে?
মায়মুনাঃঃ- বিয়ের আর কি শপিং করব। ভাইয়ার টেক্সটাইল কোম্পানি আছে। বিভিন্ন ডিজাইনাররা ভাইয়ার আন্ডারে কাজ করে। ভাইয়া বিয়ের লেহেঙ্গা নিয়ে নিবে। সো শপিং লাগবে না।
নূরঃঃ- হেএএএ! এটা কেমন কথা। বিয়ে করবি অথচ বিয়ের শপিং করবি না। এটা তো এমন মনে হচ্ছে যেন মুলার জুস উইথ আউট মুলা।
মেহেরঃঃ- ইউউউ। হোয়াট এ এক্সাম্পল।
নূরঃঃ- থ্যাংক ইউ। থ্যাংক ইউ। আই নো আই এম ইশ্মার্ত।
মেহেরঃঃ- তোকে স্মার্ট বলল কেডা?
নূরঃঃ- এখানে বলার কি আছে। আমি তো জানি আমি কি।
আলিফাঃঃ- রানু মন্ডলের জমজ বোন।
নূরঃঃ- চুপ কর আলু। নয়লে তোর ভর্তা বানাবো। (আলিফা সাথে সাথে মুখে আঙুল দিল। কারণ একটু আগে ছেলেটার যা অবস্থা করল।) তো কোথায় ছিলাম? ওহ হ্যাঁ শপিং। আচ্ছা লেহেঙ্গা নাহয় লাগবে না। কিন্তু বাকি টুকটাক জিনিস তো লাগবে। আর কিছু না লাগলেও হুদাই শপিংয়ে যাব। আরে এগুলোই তো বিয়ের আসল মজা।
মায়মুনাঃঃ- আসলেই। তাহলে কালকেই শপিংয়ে যাব। তোরাও যাবি আর রিহান ভাই ওয়াসিম ভাই ওরা সহ একসাথে যাব।
পুষ্পঃঃ- ওই ব্রেক লাগা। শপিংয়ে যাবি পিকনিকে না। যে সবাইকে দল বেঁধে নিয়ে যাবি।
মায়মুনাঃঃ- কেন? কেউ বলছে নাকি যে সবাই একসাথে শপিংয়ে যেতে পারবে না। আর না জানি এই মূহুর্তগুলো আর পাবো কি না। তোদের সবাইকে একসাথে পাবো কি না। তাই যতটুকু সময় আছে সবাই একসাথে এনজয় করব।
আমরিনঃঃ- ওক্কে।
মায়মুনাঃঃ- তাহলে কাল সকাল ঠিক দশ টায় রওনা হব। একসাথে ঘুরাঘুরি আর শপিং। তারপর সন্ধ্যায় ফিরে আসব।
আফরানঃঃ- বাহ্ নিজেরাই সব প্লানিং করে নিলে। আমি যে এদিকে আছি একটু জিজ্ঞেস করলেই তো হয়।
নূরঃঃ- আপনাকে কেন জিজ্ঞেস করবে? বিয়ে কি আপনার? যার বিয়ে তার প্লানিং। আপনি চুপচাপ বসে থাকেন।
আফরান বলার মতো আর শব্দ খুঁজে পাচ্ছে না। নূরের কথায় একেবারে চুপ হয়ে গেল।
.
.
পরের দিন শপিংমলে__________________
তাদের সাথে নিহালও যোগ দিল। ছুটির দিন বলে আসতে পেরেছে। নাহলে কখনো আনা সম্ভব ছিল না। নিহাল তার শিক্ষকতা নিয়ে অনেক স্ট্রিক্ট। তার কাছে সবার আগে তার ফ্যামিলি। এরপর প্রোফেশন। তার পুরো পেশাগত জীবনে শুধু মাত্র আমেরিকা যাওয়ার জন্য ছুটি নিয়েছিল। নাহলে ঝড় তুফান রোদ বৃষ্টি যায় হোক না কেন একদিনও মিস দেয় নি। এমনকি বিয়ের জন্যও মাত্র পাঁচদিনের ছুটি নিয়েছে। যার কারণে মায়মুনা অনেক রেগে ছিল। কিন্তু পরে নিহাল হেনতেন বুঝিয়ে মানিয়ে নিল।
বিয়ের অনুষ্ঠানের জন্য সবাই নিজের মতো করে শপিং করছে। কাপলরা একে অপরের জামা সিলেক্ট করায় একে অপরকে সাহায্য করছে। নূর মায়মুনা আফরান নিহাল একটি কাপড়ের দোকানে প্রবেশ করল। দোকানে চারজন দোকানদার ছিল। তাদের মধ্যে একজন একটি লেহেঙ্গা নিয়ে বারবার মায়মুনাকে জোর করছে কিনে নিতে। “”আপনার উপর ভীষণ সুট করবে লেহেঙ্গাটা। একেবারে নায়িকার মতো লাগবে”” এমন নানান ধরনের চিপকু টাইপ কথা বলতে লাগলো। সবাই হাজারো বারণ করার পরও উনি মানছেন না। বেটাও আরেক নাছোড়বান্দা কোন কথা বার্তা ছাড়া প্যাকিং করে হাতে ধরিয়ে দিল। এখন তারা পড়ে গেল লজ্জায়। যদি এখন লেহেঙ্গাটা না নেই তাহলে লজ্জিত হবে। নিহাল ক্রেডিট কার্ড বের করার জন্য পকেটে হাত দেয় তার আগেই নূর মায়মুনার হাত ধরে টেনে নিয়ে যায়। মায়মুনার এক হাতে লেহেঙ্গা অন্য হাত নূর ধরে আছে।
নূরঃঃ- শপিং শেষ এবার চলেন। (মায়মুনার হাত ধরে হাটা ধরল।)
দোকানদারঃঃ- আরে আরে লেহেঙ্গার দাম তো দিয়ে যান।
নূরঃঃ- দাম? কিসের দাম? কেমন দাম? আরে আপনিই তো আমাদের লেহেঙ্গাটা দিলেন। তাহলে আবার কিসের দাম দিব?
দোকানদারঃঃ- লেহেঙ্গা দিয়েছি ঠিক। কিন্তু ফ্রি তে তো দেয়নি। টাকা তো দিতে হবে।
নূরঃঃ- কেন? আমরা কি বলছিলাম দিতে। (লোকটা চুপচাপ মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে) দেখুন মানুষ শপিংয়ে আসে নিজের ইচ্ছায় জিনিসপত্র কিনতে। আর তারা নিজস্ব বাজেট নিয়েই ঘর থেকে বের হয়। আপনাদের এমন জোরাজোরিতে অনেকে লজ্জায় পড়ে বাধ্য হয় নিতে। যেখানে সেটার তাদের কোন প্রয়োজন নেই। ফলে তারা নিজের অত্যন্ত প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম নিতে পারে না। যার প্রয়োজন হবে সে নিজে থেকে নিবে। এভাবে জোর জবরদস্তির তো কোন মানে হয় না।
দোকানদারঃঃ- সরি আপু।
নূরঃঃ- আর হ্যাঁ ভাববেন না যে এই লেহেঙ্গা কেনার সামর্থ্য আমাদের নেই। এমন দশটা লেহেঙ্গা এখন কিনে নিতে পারব। কিন্তু কিনব না। কারণ এখন যদি আমরা কিনে নেয় তাহলে আপনি অন্যদের সাথে আবারও একই কাজ করবেন। তাই এই নিন আপনার লেহেঙ্গা। (মায়মুনার হাত থেকে প্যাকেটটা নিয়ে দোকানদারে হাতে ধরিয়ে দিল।)
মায়মুনাঃঃ- নূর ইউ আর গ্রেট।
নূরঃঃ- আই নো। হিহিহি। চল অন্য দোকানে যায়।
তারা সেই দোকান থেকে বেরিয়ে গেল। নূর ভাব নিয়ে আগে আগে হাটছে। এমন ভাব নিচ্ছে যেন অনেক বড় অসাধ্য সাধন করে ফেলেছে। আফরান মায়মুনাকে টেনে পিছনে নিয়ে নিল। কানে ফিসফিস করে কি যেন বলল। মায়মুনা মুখ চেপে হাসছে। আফরান চোখ টিপি দিল। মায়মুনা হেসে নূরের পাশে গেল।
মায়মুনাঃঃ- নূর?
নূরঃঃ- হুমম?
মায়মুনাঃঃ- তুই তো একটু আগে যা বললি না পুরো ফাটিয়ে দিলি। এমন লেহেঙ্গা দশটা কিনতে পারবি। আসলে আমার না ওই দোকানের তিনটা জামা পছন্দ হয়েছে। দশটা না আমাকে শুধু ওই তিনটা জামা কিনে দে ৷
নূরঃঃ- (থমকে দাঁড়িয়ে গেল) ওহ হ্যালো? তোর চিন্তার রেলগাড়ির ব্রেক লাগা। নাহলে স্টেশন পেরিয়ে যাবে। ওসব জাস্ট এমনি ডায়লগ মারছিলাম। এমন দশটা লেহেঙ্গা না লেহেঙ্গার ওড়না কেনার টাকা নেই। হুহ্।
মায়মুনা আফরানের দিকে তাকিয়ে ফিক করে হেসে দিল। আফরানও হেসে উঠল। তাদের সাথে তাল মিলিয়ে নিহালও হাসছে। নূর বেচারি অবুঝ বালিকা কিছু না বুঝে হতভম্ব হয়ে আছে।
মায়মুনাঃঃ- সত্যি ভাই নূরকে তুমি হারে হারে চেনো।
আফরানঃঃ- মিস খিটখিট শুধু খিটখিটই করতে পারে।
নূরঃঃ- এক্সকিউজ মি! মাঝে মাঝে একশনের চেয়ে রিয়েকশন বেশি কাজ করে। বুঝলেন? ওয়াও নূর হোয়াট এ ডায়লগ। একশনের চেয়ে রিয়েকশন বেশি কাজ করে। ইউ আর জাস্ট টু গুড। (নিজেই নিজের কাঁধে বারি দিয়ে সাবাসি দিল। ওদিকে আফরান মায়মুনা নিহাল হাসতে হাসতে অবস্থা খারাপ।)
নিহালঃঃ- আমি জানতাম তুমি দুষ্টু। কিন্তু এত দুষ্টু তা জানা ছিল না।
নূর লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেলল। বাকিদেরও শপিং শেষ হলো। সন্ধ্যায় সবাই নিজ নিজ গন্তব্যের উদ্দেশ্যে রওনা দিল।
_______________________________
পাঁচ দিন পর সবাই রওনা দিল রিসোর্টের উদ্দেশ্যে। সব কিছুর আয়োজন আফরান আর রিহান আগে থেকে করে রেখেছে। শীতকালীন আবহাওয়া কুয়াশায় চারপাশ আবছা হয়ে আছে। দুপুর ২ টায় তারা রিসোর্টে পৌঁছালো। রিসোর্টটি বিশাল বড়। এক বড় খোলা জায়গার মাঝখানে রিসোর্টটা নির্মিত। শহরের এক কোণে রয়েছে রিসোর্টটা যার কারণে আশেপাশে খোলা জায়গা। দূর দূরান্তে জনবসতি নেই। জার্নি করে সবাই ভীষণ ক্লান্ত তাই দুপুরের খাবার খেয়ে সবাই বিশ্রাম নিল। সব বড়দের রুম রিসোর্টের ডানপাশে আর ছোটদের রুম বামপাশে।
.
.
.
চলবে