Ragging To Loving ? Part:39

0
865

? Ragging To Loving ?
Part:: 39
Writer:: Ridhira Noor

মায়মুনা নিহালকে একপাশে সোফায় বসানো হলো। মেহের, পুষ্প, রিহান, আফরান সবাই সেদিকে পাশে দাঁড়িয়ে ছিল। আলিফার ডাকে নূর তাদের কাছে গেল। সবাই বিভিন্ন বিষয় নিয়ে দুষ্টুমি মজা করছে। আলিফা বলে উঠল।

আলিফাঃঃ- আফরান ভাইয়া আজকে আপনাকে ভীষণ হ্যান্ডসাম লাগছে। এমনিতে ফর্সা তার উপর ব্ল্যাক ড্রেসআপ জোস লাগছে (হাতের আঙুল দিয়ে সুন্দর ইশারা করল।)

আলিফার এভাবে আফরানের তারিফ করা কেন জানি আরিফের ভালো লাগলো না।
পান্নার সেই কথা মনে পড়ে গেল।নূর কাশতে লাগলো।

নূরঃঃ- একেই বলে চোখ থাকিতে অন্ধ। আমি জানতাম না তুই রাতকানা হয়ে গেছিস। (আফরানকে খোঁচা মেরে বলল কথাটা। সেটা আফরান বরাবরই বুঝতে পারল।)

আফরানঃঃ- কি বলতে চাইছ তুমি? (ভ্রু কুচকে)

নূরঃঃ- আপনাকে হ্যান্ডসাম বলল ব্যাপারটা হাইস্যকর। এটা জনগণের জন্য হাইস্যকর।

আফরানঃঃ- নিজেকে একবার আয়নায় দেখ। সবুজ জামা তার উপর লাল লিপস্টিক। ঠিক যেন তোতাপাখি।

নূরঃঃ- কি বললেন আপনি? (রেগে গিয়ে) আমি? আমি তোতাপাখি? নিজেকে আগে আয়নায় দেখুন। সাদা শার্ট কালো কোট প্যান্ট। ঠিক যেন পেঙ্গুইন।

আফরানঃঃ- তোতাপাখি।

নূরঃঃ- পেঙ্গুইন।

দুজনেই অনেক্ষণ একে অপরকে এই নামে ডাকতে লাগলো। তাদের থামিয়ে আলিফা জোরে বলে উঠল।

আলিফাঃঃ- এটেনশন প্লিজ। চিড়িয়াখানা থেকে দুইটা প্রাণী পালিয়ে এখানে চলে এসেছে। (আলিফার কথার মানে আফরান বুঝলো না। নূর ঠিকই বুঝল আলিফা তাদের কথা বলছে। বাকিরাও হাসছে তার কথায়।)

নূরঃঃ- ওই কি বললি তুই? আমি চিড়িয়াখানার প্রাণী? তোকে তো আমি…… (নূর তেড়ে আসতেই আলিফা দিল দৌড় তার পিছে নূরও দৌড় দিল। পুরো বাড়িতে মেহমানের মাঝে তারা দৌড়াদৌড়ি করছে। আলিফা কিচেনের দিকে দৌড় দিল তার পিছে নূরও গেল। দৌড়াতে গিয়ে নূর আচমকা কারো সাথে ধাক্কা খেল। সামনে তাকিয়ে দেখে এক ভদ্রমহিলা।) সরি সরি সরি। সরি আন্টি আপনার লাগেনি তো? (তার হাতে জুসের গ্লাস ভরতি ট্রে ছিল। নূর তার মাথা থেকে পা অবধি ভালো করে দেখছে। মহিলাটি আর কেউ না আফরানের মা।)

আফরানের মাঃঃ- আরে মা আমার লাগেনি। তোমার লাগেনি তো? (চিন্তিত হয়ে বলল। নূর মাথা নেড়ে না বলল। তিনি স্বস্তির নিশ্বাস নিলেন। ভালো করে তাকিয়ে দেখে নূরের জামায় জুস পড়ে পুরো জামা নষ্ট হয়ে গেল।) আরে এই কি তোমার জামা তো পুরো নষ্ট হয়ে গেল।

নূরঃঃ- (মাথা নিচু করে দেখে জুসে তার পুরো জামা ভিজে গেল। সে হাত দিয়ে জামা ঝাড়ছে।) ইটস ওকে আন্টি। সমস্যা নেই আমি ধুয়ে পরিষ্কার করে নিব।

আফরানের মাঃঃ- আরে পুরো জামা ভিজে গিয়েছে। এখন এটা পরিষ্কার করা সম্ভব না। তুমি আমার সাথে চল। (ট্রে অন্য সার্ভেন্টের হাতে দিয়ে নূরকে টেনে নিয়ে গেল। নূরও অনেক বারণ করল কিন্তু তিনি শুনছেনই না। নূরকে তার রুমে নিয়ে গেল। নিজের আলমারি থেকে একটা প্যাকেট বের করল। যার মধ্যে একটা শাড়ি।) এই নাও এটা পরে নাও। এটা আমার ছেলে এনেছিল। কিন্তু এটা আমার বয়সের না। তোমাদের মতো মেয়েদেরই মানাবে। পরে নাও এটা। মায়মুনা নিচে বসে আছে নাহলে ওর জামা দিতাম।

নূরঃঃ- (কোন ভাবে শাড়িটা নিতে চাইছে না। ইতস্তত বোধ করছে।) আসলে আন্টি আমি শাড়ি পরতে পারি না।

আফরানের মাঃঃ- (নূরের কথায় তিনি হেসে দিলেন।) আজকালকার মেয়েরা না এমনই। বিয়ের আগে শাড়ি পরা শিখে না যাতে বিয়ের পর স্বামী তাদের শাড়ি পরিয়ে দেয়। (মায়ের বয়সের কারো কাছ থেকে এসব শুনে নূর ভীষণ লজ্জা পেল।) কিছু মনে কর না। আমার কোন মেয়ে নেই। নিজের মেয়ের মতো মনে করেই তোমাকে এসব বলে ফেললাম। সত্যি বলতে আমিও এমন করেছিলাম। বিয়ের দ্বিতীয় দিন উনাকে দিয়ে শাড়ি পরেছিলাম। (নূর হেসে দিল। সাথে আফরানের মাও হেসে দিল) তুমি চিন্তা কর না আমি এখন পরিয়ে দিচ্ছি। বিয়ের পর স্বামীকে দিয়ে পরিও। (লজ্জায় নূর মাথা নিচু করে আছে।)

নূর শাড়ি পেচিয়ে বাথরুম থেকে বের হলো। আফরানের মা সুন্দর করে ভাজে ভাজে শাড়ি পরিয়ে দিতে লাগলো। এবার শাড়ি কুচি করে দিচ্ছে আর বলতে লাগলো।

আফরানের মাঃঃ- আচ্ছা তোমাকে তো চিনলাম না। সেই সকাল থেকে দেখছি অনুষ্ঠানের বিভিন্ন কাজে সাহায্য করেছ। কিন্তু পরিচয় হয়ে উঠে নি।

নূরঃঃ- আমি মায়মুনার ছোটবেলার বান্ধবী। হাই স্কুলে থাকতে সহপাঠী ছিলাম। কিছুদিন আগেই আবার ভার্সিটিতে দেখা হয়েছিল।

আফরানের মাঃঃ- ভার্সিটি? কোন ভার্সিটি?

নূরঃঃ- “____ ভার্সিটি। মায়মুনা সেখানে গিয়েছিল। হঠাৎই দেখা হয়ে যায়।

আফরানের মাঃঃ- “____ভার্সিটি? এখানে তো আমার ছেলে আফরান পড়তো। তাহলে কি তুমি আফরানের ফ্রেন্ড?

আমার ছেলে আফরান কথা শুনে যেন নূর আকাশ থেকে পড়ল। মানে কি উনি আফরানের মা? কেন জানি নূরের মধ্যে অজানা ভয় কাজ করছে। অস্বস্তি লাগছে খুব।

নূরঃঃ- আ…আমি আফরানের ফ্রে…..

আফরানের মাঃঃ- যাক ভালোই হয়েছে। আফরানের ফ্রেন্ডই শাড়িটি পরল। জানো এই শাড়ি নিয়ে কি হয়েছে? প্রায় চার বছর আগে হুট করেই আফরান শাড়িটি নিয়ে এলো। শাড়ি আনেনি অবশ্য একটা শপিং ব্যাগে বাক্স ছিল সেখানেই শাড়িটা ছিল। আমি হাতে বাক্সটা দেখায় ওকে জিজ্ঞেস করি। সে তড়িঘড়ি বলে উঠল সে আমার জন্য শাড়ি কিনেছে। হঠাৎ কোন অনুষ্ঠান বা কারণ ছাড়া আমার জন্য শাড়ি? তাই আমি বাক্সটি খুলে দেখি। তার মধ্যে ছিল এই শাড়িটা। তুমিই বল এটা কি আমার জন্য মানানসই হবে। এত হেভি কাজ করা শাড়ি তোমাদের মতো অল্প বয়সী মেয়েদেরই মানাবে। তাই আমি হেসে আফরানকে বললাম এই শাড়িটা যত্ন করে আমি তার স্ত্রীর জন্য রেখে দিব। বিয়ের পর তার স্ত্রীকে দিব। কিন্তু দেখ ভাগ্যক্রমে আজ শাড়িটি তুমি পরলে। তাও মনের মধ্যে একটু খুত ছিল কিন্তু এখন যখন জানতে পারলাম তুমি আফরানের ফ্রেন্ড মনে এক শান্তি অনুভব করছি।

নূর যেন শকডের উপর শকড খাচ্ছে। জোর কা ঝাটকা হায় জোর সে লাগা। প্রথমত জানতে পারলো ইনি আফরানের মা। দ্বিতীয়ত যে শাড়ি পরল তা আফরানের দেওয়া। তৃতীয়ত তা রাখা হয়েছে তার স্ত্রীর জন্য। এখন যদি সে আফরানের মাকে বলে যে আফরান আর সে ফ্রেন্ড না তাহলে উনার না জানি কেমন লাগবে। তাই সে আর কিছু বলল না। এত সব শকড একসাথে পেয়ে নূর ছোট খাট কোমায় চলে গেল। বলতে গেলে পুরো রোবট হয়ে গেল। এতক্ষণ যে আফরানের মা তাকে সাজিয়ে দিয়েছিল সেই খেয়ালও নেই। আফরানের মায়ের কথায় হুশ ফিরল।

আফরানের মাঃঃ- হয়ে গিয়েছে। এবার দেখ কেমন লাগছে।

নূর ড্রেসিং টেবিলে বসা ছিল। সামনে আয়নায় নিজেকে দেখে অবাক। সত্যি কি এটা নূর?

আফরানের মাঃঃ- ভীষণ সুন্দর লাগছে তোমায়। (চোখের কাজল নিয়ে নূরের কানের পিছে লাগিয়ে দিল) আজীবন আমার আফসোস থেকে যাবে।

নূরঃঃ- কিসের আফসোস?

আফরানের মাঃঃ- একটি মেয়ে না থাকার আফসোস। খুব ইচ্ছে ছিল একটা মেয়ের। আফরান হওয়ার পর কিছু কমপ্লিকেশন দেখা দেয় তাই আর দ্বিতীয় সন্তানের চিন্তা করিনি। আফরান যখন ছোট ছিল তখন ওকে ফ্রক পরিয়ে দিতাম। মাথায় ঝুটি করে দিতাম। ফটো এলবামে এখনো ছবিগুলো আছে। যখনই সে ছবিগুলো দেখে লজ্জায় পালিয়ে যায়। (বলে হেসে দিল। সাথে নূরও হেসে দিল। তখনই একজন সার্ভেন্ট এসে নিচে যেতে বলল।) এই রে নিচে সবাই অপেক্ষা করছে। আমি যায়। তুমি এসো।

আফরানের মা চলে গেল। তার পিছু পিছু নূরও বের হলো রুম থেকে। অন্যদিকে আলিফার আসার সাথে সাথে সবাই প্রশ্নের ঝুড়ি নিয়ে বসল।

পুষ্পঃঃ- নূর কোথায়? আর ধোলাই কেমন চলল।

আলিফাঃঃ- আরে আমার পিছে পিছে দৌড়াতে গিয়ে নূর এক আন্টির সাথে ধাক্কা খেল। উনার হাতে জুস ছিল যা নূরের জামাতে পড়ায় জামা নষ্ট হয়ে গেল। আমি নূরের কাছে যাওয়ার আগেই আন্টি নূরকে টেনে নিয়ে চলে গেল।

আমরিনঃঃ- নূ…..

মায়মুনাঃঃ- নুরিইইইইই।

মায়মুনার চিৎকারে সবাই তার দিকে তাকাল। মায়মুনা অবাক হয়ে উপরের দিকে তাকিয়ে আছে। সেদিকে লক্ষ্য করে বাকিরাও তাকাল। তারাও তাকিয়ে সেদিকে দেখছে। আফরান তো হা হয়ে তাকিয়ে আছে। কারণ নূর সিড়ি দিয়ে নামছিল। টকটকে লাল রঙের ফুল হাতা ব্লাউজ। হাতে গর্জিয়াছ সাদা আর গোল্ডেন স্টোনের কাজ করা। মাখন সিল্কের সাদা শাড়ির উপর সাদা আর গোল্ডেন স্টোনের কাজ করা। চুল সামনে উঁচু করে পাফ করে কোপা বাঁধা। ঠোঁটে গাঢ় লাল লিপস্টিক। চোখে গাঢ় কাজল দেওয়া। এক কথায় বলতে গেলে নূরকে অসাধারণ লাগছে। সেখানে উপস্থিত প্রায় সবাই তার দিকে তাকিয়ে আছে। আফরান আনমনে বুকের বাপাশে হাত দিয়ে দিল। আর অজান্তে মুখ ফসকে বেরিয়ে গেল “হায়……” বেহায়ার মতো তাকিয়ে আছে নূরের দিকে। সবাই এভাবে তাকিয়ে তাকায় নূর অস্বস্তি বোধ করল। মায়মুনার কথা আফরানের ধ্যান ভাঙল।

মায়মুনাঃঃ- এটা কিন্তু ঠিক না। এএএএ (ন্যাকা কান্না করছে) আজ এনগেজমেন্ট আমার। সবচেয়ে বেশি সুন্দর দেখার কথা আমার। কিন্তু তুই এভাবে সাজলি কেন? সবাই আমাকে ফেলে তোর দিকে তাকিয়ে আছে।

নূর দাঁড়িয়ে রীতিমতো কাঁপছে। বলার মতো কোন শব্দই খুঁজে পাচ্ছে না। একে তো শাড়ি পরল। তার উপর সবার এভাবে তার দিকে তাকিয়ে থাকা তার কাছে লজ্জাজনক ব্যাপার মনে হচ্ছে।

আফরানঃঃ- (নূর এই শাড়ি পেল কোথা থেকে? এটা তো মায়ের কাছে ছিল। অনেক্ষণ যাবত চিন্তিত ছিল। তারপর নিজেই ভাবতে লাগলো। যার জন্য শাড়িটি কেনা তার কাছেই গিয়েছে। এসব ভেবে নিজেই মুচকি হাসছে।)

(শাড়িটি আফরান সেদিন কিনেছিল যেদিন সে নূরের জন্য জামা কিনতে গিয়েছিল। যখন নূর তাদের ফার্ম হাউসে সুইমিংপুলে পড়ে গিয়েছিল। নূরের জন্য জামা কিনতে গিয়ে আফরানের নজর পড়ল একটি পুতুলের গায়ে থাকা এই শাড়ির উপর। তখন তার মনে পড়ল ভার্সিটির প্রোগ্রামে নূরের সাদা ড্রেস পরে পারফর্ম করা। সাদা ড্রেসে নূরকে ভীষণ মানিয়েছিল। এই সাদা শাড়িতেও নূরকে বেশ সুন্দর লাগবে। সেই চিন্তায় কিছু না ভেবে হুট করে শাড়িটি কিনে নেই। কিন্তু কেনার পর নূরকে শাড়িটি দেওয়ার সাহস হয়নি। তাই সে শাড়িটি বাড়িতে নিয়ে আসে। তখনই কোথা থেকে জানি আফরানের মা এসে হাজির হলো। তখন আফরান ঘাবড়ে গিয়ে মুখে যা এলো বলে দিল। আফরানের মাও এতো কিছু চিন্তা না করে শাড়িটি আজ অবধি যত্নসহকারে রেখে দিল।)

আফরান চেয়েও নূরের উপর থেকে চোখ সরাতে পারছে না। নূরকে এতই সুন্দর লাগছে যে বলে বোঝানো যাবে না। তার উপর নূরের সেই কাজল কালো চোখ দুটো আফরানকে আরো আকৃষ্ট করছে।

.
.
.

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here