? Ragging To Loving ?
Part:: 36
Writer:: Ridhira Noor
আফরানঃঃ- কার সাথে তোর বাগদান?
মায়মুনাঃঃ- যার সাথে আমার বিয়ে।
আফরানঃঃ- উফফ মায়মুনা। তোর কথা পেঁচানোর অভ্যাস গেল না। আগে তো আমাকে কত ভয় পেতি। কিন্তু আমেরিকায় যাওয়ার আগে পুরো বদলে গেলি৷ কেমন যেন ঝগড়াটে হয়ে গেলি। সব কথার উল্টো জবাব দিতি।
মায়মুনাঃঃ- সাব নূর কি কামাল হে। আগে আমিও ভীতু ছিলাম। নূরও আমার সাথে প্রচুর ঝগড়া করত। আমি কিছু বলতে পারতাম না। পরে যখন বন্ধুত্ব হয় তখন সেই আমাকে বলেছিল। যদি কেউ এক কথা বলে তাকে দশ কথা বলতে। সবসময় ত্যাড়া উত্তর দিতে। তাহলে আর কেউ ধমিয়ে রাখতে পারবে না। আফরান ভাই আমাকে প্রচুর প্যারা দিত। পরে নূরের আইডিয়া কাজে লাগাই। এর পর থেকে ভাইয়া আমার সাথে ঝগড়ায় পারে না। হিহিহি।
আফরানঃঃ- হায় রে (কপালে হাত মারল) যখন তুই বলেছিস তুই নূরকে চিনিস তখনই আমার বোঝা উচিৎ ছিল। এসব ত্যাড়ামি শুধু সেই পারে শিখাতে। এমনি এমনি কি মিস খিটখিট ডাকতাম? যেমন ঝগড়াটে খালি খিটখিট করে।
নূরঃঃ- হ্যাঁ আমি তো ঝগড়াটে। সবসময় ঝগড়া করি। তাই তো আমার থেকে অতিষ্ঠ হয়ে একেবারে চলে গিয়েছেন। চিরতরে মুক্তি পেয়েছেন আমার কাছ থেকে। কেউ তো আর নেই যে শুধু শুধু ঝগড়া করবে। মুক্তি পেয়ে গেছেন এই খিটখিট থেকে। (হঠাৎই কণ্ঠস্বর ভেঙে গেল। কাঁপা কাঁপা গলায় বলল কথাগুলো। চোখের পানিও টলমল করছে। রেগে চলে গেল।)
আফরান ভ্যাবাচেকা খেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এইমাত্র কি হলো তা সব তার মাথার উপর দিয়ে গেল। নূর কখনো এমন করে না। সবসময় নিজে গায়ে পড়ে ঝগড়া করত। তার সাথে ঝগড়ায় না পেরে আফরানই চলে যেত। কিন্তু আজ নূর নিজেই চলে গেল। আফরান বাকরুদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
মায়মুনাঃঃ- আফরান ভাই তুমিও না। কতদিন পর নূরকে পেলাম। ভেবেছিলাম পুরনো স্মৃতি স্মরণ করব। এখন সে রেগে চলে গেল। তোমাকে….. থাক আর কিছু বললাম না। নুরিইইইই দাঁড়া। (নূরের পিছনে দৌড় দিল।)
আফরানঃঃ- আমি তো এমনি বলেছি। নূর এভাবে রেগে গেল কেন?
পুষ্পঃঃ- ওটা রাগ নয় অভিমান।
আফরানঃঃ- কিসের অভিমান?
পুষ্পঃঃ- (আপনাদের আর শুধরানো যাবে না। আপনাদের মধ্যে ভালবাসা সবাই দেখছে। শুধু আপনারাই দেখছেন না। আর অভিমান হবেই না বা কেন? আট মাস ধরে না কোন দেখা। না কোন যোগাযোগ। ভালবাসার মানুষ যখন দূরে থাকে তার কষ্ট কেমন হয় তা আমি খুব ভালো করে বুঝি। সেই কষ্টই অভিমান হয়ে জমে আছে হৃদয়ের মাঝে। কিন্তু অন্য কারো বলার আগে আপনাদের নিজেদের বুঝতে হবে।) না মানে ঝগড়াটে বলছেন তো তাই।
আফরানঃঃ- সে তো আমি আগেও বলতাম। তখন তো এমন করে নি। হঠাৎ কি হলো আবার।
রিহানঃঃ- কেন? নূরের অভিমান করাই কষ্ট হচ্ছে বুঝি?
আফরানঃঃ- না মানে। অনেক দিন পর দেখা হলো। ভাবলাম দুষ্টুমি করব কিন্তু সে রেগে গেল তাই আর কি।
পুষ্পঃঃ- এখন রেগে যখন গেল তাহলে রাগ ভাঙান। জানেনই তো নূরের রাগ ভাঙানো সহজ না।
আফরানঃঃ- তুমি বোধ হয় ভুলে যাচ্ছ আমি কিন্তু আগেও নুরের রাগ ভেঙেছি।
সবাই একসাথে চিল্লিয়ে উঠলো “কখন?”
পুষ্পঃঃ- মনে আছে নূর একবার আমার উপর ভীষণ রেগে ছিল। তখন সরি কার্ড আর সাদা গোলাপ পেয়ে সব ভুলে গিয়েছিল। ওই কার্ড আর সাদা গোলাপ আফরান ভাইয়া নূরকে দিয়েছিল। কারণ নূর সেদিন আফরান ভাইয়ার উপরও কোন এক কারণে রেগে ছিল।
ওয়াসিমঃঃ- সিরিয়াসলি! আফরান এসব করেছে?
আফরানঃঃ- এতে এতো লাফানোর কি আছে। হুহ্ ঢং।
সবাই হেসে দিল।
ওয়াসিমঃঃ- তুই কিন্তু আস্তে আস্তে নূরের মতো হয়ে যাচ্ছিস। এখন যে বললি হুহ্ ঢং। এটা কিন্তু নূর বলে।
আফরানঃঃ- তো… তো… নূর বলে তাই আর কেউ কি বলতে পারবে না? এখন বল নূরের অভিমান কিভাবে ভাঙাবো?
মেহেরঃঃ- আপনি না আগেও নূরের রাগ ভাঙিয়েছেন। এখন আপনিই কিছু একটা চিন্তা করেন। কারণ আমাদের দ্বারা সেসব চিন্তা হবে না।
আফরান গভীর চিন্তায় পড়ে গেল।
_______________________________
মায়মুনাঃঃ- নূর শোন…. আহহহ (পা মচকে পড়ে যেতে কেউ একজন ধরে ফেলে। ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলে। যখন বুঝতে পারল পড়েনি তখন পিটপিট করে চোখ খুলল। সামনে তাকিয়ে এক গাল হেসে দিল।) নিহাল….
নিহাল স্যারঃঃ- মায়মুনা তুমি? তুমি এখানে কি করছ?
মায়মুনাঃঃ- আগে আমাকে দাঁড় করান। সবাই দেখছে আমাদের। (নিহাল তাকে দাঁড় করালো) আপনাকে দেখতে এসেছি।
নিহালঃঃ- সেটা পরে। আগে বল আমেরিকা থেকে কবে ফিরেছ।
মায়মুনাঃঃ- আজকে। ফিরা মাত্রই লাগেজ মামার বাসায় পৌঁছে দিয়ে এখানে এলাম।
নিহালঃঃ- কিন্তু তুমি তো এখানকার কিছু চেনো না। কিভাবে এসেছ ভার্সিটিতে।
মায়মুনাঃঃ- উফফ ইন্টারোগেশন বন্ধ করুন। টিচার হয়েছেন বলে কি সবসময় প্রশ্ন করবেন নাকি? সবসময় খালি এক গাদা প্রশ্ন নিয়ে ঘুরেন। আমি এখানকার কিছু চিনি না। ড্রাইভার তো চিনে। উনাকে ভার্সিটির নাম বলেছি। উনি পৌঁছে দিলেন।
নিহালঃঃ- ওহ আচ্ছা। আমি ক্লাসে যায়।
মায়মুনাঃঃ- ক্লাসে যায় মানে? আমি এত দূর থেকে এলাম আপনার সাথে দেখা করতে আর আপনি কি না আমাকে ছেড়ে ক্লাসে যাবেন?
নিহালঃঃ- তুমি জানোই আমি একজন শিক্ষক। আর আমি আমার দায়িত্ব ছাড়তে পারব না।
মায়মুনাঃঃ- হ্যাঁ দেখছি আমেরিকায় আপনার দায়িত্ব। আমাকে শিখাতে হবে না।
নিহালঃঃ- এখনো সেটা নিয়ে পড়ে আছ? আর এমনিতেই এক মাস পর এনগেজমেন্ট হবে। তার দুই সপ্তাহ পর বিয়ে। তখন না সময় দিব।
মায়মুনাঃঃ- আচ্ছা। (মুখ লটকিয়ে ফেলল)
নিহাল চলে গেল ক্লাসে। মায়মুনা আশে পাশে তাকিয়ে নূরকে খুঁজছে। নূরের মাঠের একপাশে বড় পাথরের ব্লকে বসে আছে। মায়মুনা দৌড়ে তার কাছে গেল।
মায়মুনাঃঃ- নূর। কি হয়েছে তোর? এভাবে রেগে চলে এলি কেন?
নূরঃঃ- (সত্যি তো আমি শুধু শুধু রেগে গেলাম কেন? আফরান তো আমাকে আগেও এসব বলত। তখন তো এভাবে রেগে যায় নি। না হঠাৎ খুব ইচ্ছে হলো মনের সব রাগ তার উপর ঝাড়তে। ভালোই হয়েছে এত দিন আসেনি। এখন এসেছে ঢং করতে। উনাকে না জ্বালিয়েছি না তাহলে আমার নামও নূর না। হুহ্।)
মায়মুনাঃঃ- কি হলো বল।
নূর কিছু বলার আগেই আফরান গিটারের সুর তুলতে তুলতে তাদের দিকে এগিয়ে এলো। নূর ভেঙচি কেটে মুখ ফিরিয়ে নিল। আফরান শিষ বাজাতে বাজাতে নূরের চারপাশে ঘুরলো।
♪♪♪♪
মে কোয়ি এইসা গীত গাও……. কি আরজু জাগাও…….
“””””মে কোয়ি এইসা গীত গাও কি আরজু জাগাও আগার তুম কাহো……(২) “”””””
তুমকো বুলাও ইয়ে পালকে বিছাও কাদাম তুম যাহা যাহা রাখো……
জামি কো আসমান বানাও সিতারো সে সাজাও আগার তুম কাহো……
“””””” ঐ “”””””
(((নূর তো গাল ফুলিয়ে বসে আছে। আফরান বেবি ফেইস বানিয়ে ঠোঁট উল্টিয়ে করুণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। নূর কোন পাত্তাই দিচ্ছে না। কিন্তু মনে মনে ঠিকই হাসছে।)))
♪♪♪♪
মে তিতলিও কে পিছে ভাগু… মে জুগনুও কে পিছে জাগু…
ইয়ে রাং হে ও রোশনি হে তোমহারে পাস দোনো লাও….
((( আফরানের হাতের মুটোই কিছু রং ছিল। সেগুলো ফুহ দিয়ে নূর উপর মারল।)))
জিতনে খুশবুয়ে… বাগোও মে মিলে… (২)
মে লাও কে লাও তুম হো জাহা……
(((অনেক গুলো সাদা গোলাপ নূরের হাতে দিল)))
জাহাপে এক পাল ভি টেহরো মে গুলসিতা বানাও আগার তুম কাহো
“””” মে কোয়ি এইসা গীত গাও কি আরজু জাগাও আগার তুম কাহো………
নূর গোলাপ গুলো পেয়ে সব ভুলে গেল। এক গাল হেসে দিল। তার হাসি দেখে আফরানও হেসে দিল। নূর আবারও মুখের হাসি উধাও করে আফরানের দিকে তাকাল।
নূরঃঃ- (কেন এসব করছেন আমার জন্য? আমি রেগে গেলেই বা আপনার কি যায় আসে। এসবে তো আমার কোন অধিকার নেই। আর আমি বা কেন শুধু শুধু আপনার সাথে ঝগড়া করি। কেন চাই যে আপনি আমার রাগ ভাঙান। এসব তো অন্য কারো অধিকার।)
আফরানঃঃ- এত দিন পর দেখা হলো। এসব ঝগড়াঝাটি বাদ দিয়ে সেই পুরনো স্মৃতি মনে করি। দেখ সবাই একসাথে আছি অনেক দিন পর। আমাদের জন্য তাদের কেন ভুগতে হবে। সেই আগের মতো করে আবারও নতুন স্মৃতি তৈরি করি।
নূরঃঃ- (আসলেই তো। শুধু শুধু আমার জন্য কেন বাকিরা কষ্ট পাবে।) ঠিক আছে। এত করে যখন সরি বলছেন ইটস ওকে।
আফরানঃঃ- আমি কবে সরি বললাম?
নূরঃঃ- বলেননি? তাহলে বলুন সরি। আপনি আমাকে ঝগড়াটে ডাকছেন। আমি কি ঝগড়া করি?
আফরানঃঃ- (না ঝগড়া কোথায়? মুখ দিয়ে তো খই ফুটে।) আরে না। তুমি কোথায় ঝগড়া কর। ঝগড়া তো আমি করি। সরি ম্যাডাম জি। (হাত জোর করে)
নূরঃঃ- ইটস ওকে। আপনিও কি মনে রাখবেন কোন দয়ালুর পাল্লায় পড়ছেন। হুহ্। (ভাব নিয়ে চুল উড়ালো)
আহিলঃঃ- এই তো। এখন মনে হচ্ছে পুরনো নূরকে ফিরে পেলাম।
আলিফাঃঃ- কি হচ্ছে এখানে?
নূরঃঃ- আকাশ থেকে ৩ কি.মি. বেগে রসগোল্লা পড়ছে। সবাই হা হয়ে উপর দিকে তাকিয়ে আছি। যাতে রসগোল্লা সোজা মুখে পড়ে।
আলিফা রেগে আড়চোখে নূরের দিকে তাকাল। বাকিরা হাসছে।
সিমাঃঃ- তুই এত সময় ধরে কোথায় ছিলি।
আলিফাঃঃ- ওয়াশরুমে গিয়েছিলাম।
সবাই মিলে ভার্সিটির মিউজিক রুমে বসে আড্ডা জমালো। সবার একসাথে কাটানো পুরনো দিন গুলোর কাহিনি বলতে লাগলো। মায়মুনা তাদের একেকটার কাহিনি শুনে হাসছে।
মায়মুনাঃঃ- নূর যে এমন দুষ্টু তা আমি খুব ভালো করে জানি। কিন্তু তোমরা বাকিরাও যে এত দুষ্টু তা জানা ছিল না।
রিহানঃঃ- নূরের সাথে তোর পরিচয় কিভাবে হলো?
মায়মুনাঃঃ- ক্লাস টেনে থাকতে আমি নূর আর তার বান্ধবীরা একই সেকশনে ছিলাম। নূর আর তার বান্ধবীরা পুরো ক্লাস মাথায় তুলে রাখত। আর আমি ছিলাম শান্ত শিষ্ট। চেচামেচি পছন্দ করতাম না। যার কারণে নূরকেও খুব একটা পছন্দ করতাম না। তাদের সিট ছিল ফিক্সড। ক্লাসের শেষ তিনটা বেঞ্চে তারা সবসময় বসত। আমি ছিলাম ফার্স্ট বেঞ্চার। কিন্তু একদিন ফার্স্ট বেঞ্চের ফ্যান নষ্ট হয়ে যায়। আর গরম আমি সহ্য করতে পারি না। তাই পিছনে ফ্যানের নিচে বেঞ্চে বসলাম। আর সেই সিট ছিল নূরের। সেই কি তুমুল ঝগড়া বাঁধল আমাদের মধ্যে। অবশেষে আমাকে উঠতেই হলো। এরপর থেকে নূরকে আরো বেশি অপছন্দ করতাম। তার কিছু দিন পর আমাদের টেস্ট পরিক্ষা শুরু হয়। আমার পিছনের জন নকল নিয়ে এসেছিল। স্যার যখন সবার তালাশি নিচ্ছিল সে আস্তে করে তার নকল আমার ব্যাগে ঢুকিয়ে দিল। সেটা নূর দেখল তারপর সে স্যারকে বলে দিল। নূর যদি সেদিন না থাকত তাহলে আমার পুরো এক বছর শেষ হয়ে যেত। তাই নূরকে ধন্যবাদ জানিয়ে তার সাথে ফ্রেন্ডশিপ করি। খুব অল্প সময়ে নূর আমার বেস্ট ফ্রেন্ড হয়ে গেল। তার বান্ধবীদের সাথে খুব একটা কথা হতো না। কিন্তু নূরের সাথে নিজ থেকে সবসময় কথা বলতাম। অল্প সময়ে যেন চিরচেনা হয়ে গেলাম। মাধ্যমিক পরিক্ষা পর আমেরিকা চলে যায়। এরপর সব যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। অবশেষে ভাগ্যের জোরে আজ পেয়ে গেলাম। নূর হয়তো আমাকে ভুলে গিয়েছে। কিন্তু আমি সবসময় ওর কথা মনে করতাম। আমাদের বিদায় অনুষ্ঠানের সব ছবি আজও যত্ন করে রেখে দিয়েছি। দিনে একবার হলেও সেগুলো দেখি।
নূরঃঃ- এখনো সেই ছবিগুলো আছে? আমি তো সব হারিয়ে ফেলেছি।
রিহানঃঃ- বাই দ্যা ওয়ে মায়মুনা তুই যে বললি তোর ফিওন্সের সাথে দেখা করতে এসেছিস। কে সে?
মায়মুনাঃঃ- তোমাদের ভার্সিটির টিচার। নিহাল।
কিইইইই????? সবাই একসাথে বলে উঠল।
আলিফাঃঃ- সিরিয়াসলি? নিহাল স্যার? কেমনে কি বোন। তুমি ছিলে আমেরিকায় আর স্যার ছিল বাংলাদেশে। কেমনে কি হলো।
মায়মুনাঃঃ- সে এক লম্বা কাহিনি।
.
.
.
মায়মুনা একজন মেডিকেল স্টুডেন্ট। আমেরিকার এক নামকরা “”কলেজ এন্ড হসপিটালে”” তার মেডিকেল প্রাকটিস করে। মায়মুনা হার্ট স্পেশালিষ্ট সেকশনের স্টুডেন্ট। গত বছর নিহাল তার বাবার হার্ট সার্জারির জন্য আমেরিকায় গিয়েছিল। সে একই হসপিটালে তার বাবাকে এডমিট করা হয় যে হসপিটালে মায়মুনা আছে। নিহালের বাবার সব দায় দায়িত্ব পড়ে মায়মুনার উপর। সেও খুব যত্ন সহকারে উনার খেয়াল রাখে। হঠাৎ নিহালের মায়ের বিপি বেড়ে যাওয়ায় নিহাল তার বাবাকে রেখে তার মাকে নিয়ে অন্য ডাক্তারের কাছে যায়। তার মায়ের যথাযথ চিকিৎসা করিয়ে তার বাবার কাছে আসে। তার কেবিনে প্রবেশ করেই সে থমকে যায়। নার্স, ডাক্তার সবাই এদিক সেদিক দৌড়াদৌড়ি করছে। তার বাবা ঘনঘন নিশ্বাস ফেলছে। নিহাল দৌড়ে তার বাবার কাছে গেল।
নিহালঃঃ- বাবা। বাবা কি হয়েছে তোমার? এমন করছ কেন?
মায়মুনাঃঃ- আপনি এত দায়িত্বহীন কিভাবে হতে পারেন। আপনি জানেন না উনার শরীর কতটা খারাপ। উনার সার্জারি করতে হবে। প্রতিনিয়ত উনার খেয়াল রাখা খুবই প্রয়োজন। স্যালাইনের খালি বাতাস উনার দেহে প্রবেশ করেছে। আমি আসতে যদি আর এক সেকেন্ড দেরি হতো তাহলে উনাকে বাঁচানো যেত না।
নিহালঃঃ- আই এম সরি বাবা। আমি বুঝতে পারিনি। (নিহাল তার বাবা মার একমাত্র সন্তান। তার কাছে তার বাবা মা-ই সব। তাদের বিন্দু পরিমাণ কষ্ট সে সহ্য করতে পারে না। তাই তো বাবার অপারেশনের জন্য দূরবর্তী দেশ আমেরিকায় পর্যন্ত চলে এসেছে।)
মায়মুনাঃঃ- আপনি বাইরে যান আমি দেখছি৷
দীর্ঘ তিন সপ্তাহ নিহালের বাবা হসপিটালে ছিলেন। উনার সার্জারিও যথাযথ ভাবে সম্পন্ন হলো। মায়মুনা হসপিটালের হোস্টেলে থাকে। এখানে সবাই তার অপরিচিত। দুই এক জনের সাথেই তার বন্ধুত্ব। কিন্তু নিহালের বাবা মার সাথে তার খুব খাতির জমে যায়। জমবে নাই বা কেন। দীর্ঘ সময় পর আপন দেশের মানুষদের পেল। মায়মুনাও নিহালের বাবার পাশাপাশি তার মায়েরও খেয়াল রাখে। নিহালের পরিবারের প্রতি মায়মুনার আন্তরিকতা দেখে নিহালও ধীরে ধীরে মায়মুনার প্রতি দুর্বল হয়ে পড়ে। মায়মুনার ক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম নয়। কথায় কথায় নিহালকে খোঁচা দিত যে সে দায়িত্ব পালন করে না। এরই মাঝে সেও নিহালের প্রতি দুর্বল হয়ে পড়ে। তাদের মধ্যে এই দুর্বলতা নিহালের বাবা মা লক্ষ্য করে। তারপর মায়মুনার মামা অর্থাৎ আফরানের বাবার সাথে কথা বলে। ছোটবেলায় মায়মুনার বাবা মা মৃত্যু বরণ করে। আফরানের পরিবারই তার দায় দায়িত্ব নেই। মায়মুনার মেডিকেল প্রাকটিস শেষে আজ দেশে ফিরে। আর আগামী মাসেই তাদের বাগদান অনুষ্ঠানের তারিখ ঠিক করা হয়।
.
.
.
মায়মুনাঃঃ- এই ছিল কাহিনি। বাংলাদেশ টু আমেরিকা।
রিহানঃঃ- তলে তলে টেম্পু চালিয়ে এত দূর চলে গেলি। তোর যে দুইটা বড় ভাই আছে তাদের জানানো উচিৎ ছিল না?
মায়মুনাঃঃ- আমার বড় দুই ভাই যে হাইওয়েতে বাস আর ট্রাক চালাচ্ছে আমাকে তো বলে নি।
আফরানঃঃ- আমি আবার কি করলাম। রিহান না হয় বাস চালাচ্ছে।
মায়মুনাঃঃ- থাক আর ঢং করতে হবে না। আমরা শিশু না। কোথায় কি চলে তা আমরা দেখি। (নূরের দিকে তাকিয়ে বলল কথাগুলো)
আফরান একটু নড়েচড়ে বসল। নূরও এদিক সেদিক তাকাচ্ছে।
মায়মুনাঃঃ- এখন মূল বিষয়ে আসি। আগামী মাসের ২০ তারিখ আমার এনগেজমেন্ট। আপনজন বলতে মামা মামনিরাই আছে। বন্ধু বান্ধবও খুব একটা ছিল না। দুই একজন যা ছিল আমেরিকায়। এখানে নূর আছে। সিমা আমরিন জানি তোমাদের সাথে তেমন পরিচয় নেই। কিন্তু বান্ধবী হিসেবে আমার জীবনের এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে তোমাদের চাই। থাকবে কি?
সিমাঃঃ- অবশ্যই থাকব।
আমরিনঃঃ- মায়মুনা তুমি এগিয়ে চল। আমরা আছি তোমার পাশে। (স্লোগান দিয়ে বলল)
সবাই হেসে উঠল।
_______________________________
বেডের উপর অনেকগুলো জামা পড়ে আছে। মায়মুনা এক হাত কোমরে দিয়ে অন্য হাতের নখ কামড়াচ্ছে। একেকবার একেকটা জামা নিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে দেখছে। অবশেষে না পেরে ফোন দিল নূরকে।
মায়মুনাঃঃ- নূরিইই। ভ্যায়ায়া (ন্যাকা কান্না করছে) সন্ধ্যায় নাকি আমার এনগেজমেন্ট। আমি এখনো জামা বাছাই করতে পারি নি। বিকালে পার্লার থেকে মেকআপ আর্টিস্ট আসবে। কিন্তু আমি কিছুই ঠিক করিনি। তোরা এখন আয় না প্লিজ। আমার কান্না পাচ্ছে।
নূরঃঃ- থাম মা আমার। নাটক করতে হবে না। তোর আশেপাশে কেউ নেই? কারো থেকে জিজ্ঞেস কর। নিহাল স্যারকে জিজ্ঞেস কর।
মায়মুনাঃঃ- উনার জন্যই তো সাজব। সারপ্রাইজ দিব। উনাকে জিজ্ঞেস করলে আর কি সারপ্রাইজ দিব। আর কথা হলো বাকিদের। সবাই আয়োজনে ব্যস্ত। বড় মামনি ছোট মামনি রান্নার কাজে ব্যস্ত। আফরান ভাই আর রিহান ভাই ডেকোরেশন কাজে ব্যস্ত। আর কেউ নেই যে জিজ্ঞেস করব। আমি একা রুমে বসে আছি। এই সময় বন্ধু বান্ধবীরা পাশে থাকে। কিন্তু আমার কাছে কেউ নেই। (মন খারাপ করে বলল)
নূরঃঃ- থাক আর ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করতে হবে না। আমরা যে আসব এড্রেস তো জানি না।
মায়মুনাঃঃ- আফরান ভাইয়ার বাড়িতে অনুষ্ঠান হবে।
নূরঃঃ- তো চিনি না কি?
মায়মুনাঃঃ- কি বলিস! এত বছরে ভাইয়া একবারও তোকে বাসায় আনলো না? আচ্ছা সেসব পরে। তোরা ভার্সিটির সামনে আয় আমি কাউকে পাঠাচ্ছি তোদের পিকআপ করতে।
নূরঃঃ- ওকে।
.
.
.
চলবে