In The Depths of Love part-16

0
1187

#In_The_Depths_Of_Love
#Mizuki_Aura
#Part_16

“মা, তোমরা তো আমাকে ভুলেই গিয়েছো। একটা ফোন ও করো না” বলে রাই মুখ ফুলিয়ে বাবাকে জড়িয়ে ধরতে গেলো কিন্তু ওর বাবা ওকে এড়িয়ে গেলো। মেয়েকে কোথায় বুকে টেনে নিবেন , সেখানে উনি মেয়ের সাথে তেমন একটা কথাই বলছেন না।

রাই এর চোখে মুহূর্তেই পানি আসার উপক্রম। বাড়িয়ে দেওয়া দুহাত গুটিয়ে নিয়ে রাই মাথানিচু করে নিজের ঘরে চলে গেল। ব্যাপারটা আবিরের মস্তিষ্কে আঘাত করলো।
তবে কি ওর কর্মের ফল এখন রাই কে এভাবে দিতে হবে! ওর বাবা ও ওর সাথে কথা বলতে চাচ্ছেনা?
আবির অনুতাপে মাথা ঝুঁকিয়ে নিল। রাই এর মা ওর বাবাকে কিছু একটা ইশারা করলো, কিন্তু উনি সেদিকে তাকালেন না ,” আমি বাহির থেকে আসছি। তুমি রান্না সেরে নাও”

বলে উনি বেরিয়ে গেলেন। তামিম এর খুবই খারাপ লাগলো। ও দৌড়ে বোনের রুমের দিকে গেলো।
আবির আর রাই এর মা সেদিকে তাকিয়ে রইলো।

” আপু….”
রাই ভাবনায় বিভোর ছিলো , হটাৎ ওর ডাকে ঘুরে তাকালো।

” আপু তুই চলে এলি কেনো! চল বাহিরে চল। ”
” উহু। মমম যা তুই”

” আপু, দেখ বাবা তো…..”

” ঠিকই আছেন। বাবা তার জায়গায় ঠিকই আছে। আমি থাকলে আমিও এটাই করতাম। ”

তামিম মন খারাপ করে দাড়িয়ে রইলো। রাই এর চোখে পানি নেই। বরং ওর চোখ যেনো এখন মরুভূমি তে পরিণত হয়েছে। আর কত? একটা মানুষ ঠিক কতটা আর কাঁদতে পারে?এরপর চোখের জল ও যে লুকিয়ে পড়ে।

” যা বাহিরে যা। আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি” বলে রাই বাথরুমে ঢুকে গেলো।
তামিম বোনের শুকনো মুখটা দেখেও যে কিছুই করতে পারলো না।
ঠিক তার পেছনেই আবির দাড়িয়ে সবটা দেখছিল।

_________________

নীলা রাগে পুরো ঘরজুড়ে পায়চারি করছে। ওর কোনোকিছুই ভালো লাগছে না। স্বাভাবিক। শুধু ভেবেই যাচ্ছে যে কিভাবে রাই আর আবির কে আলাদা করবে। কিন্তু যত ভাবছে ততই যেনো মাথা ধরে আসছে। সম্ভব না এতো ভাবা।
“তোমাদের যদি আমি আলাদা না করেছি , আমিও নীলা না”

_______________

রাই ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে এলো। চোখের সামনে এখন তার নিজের অনাকাঙ্ক্ষিত ছেড়ে যাওয়া ঘরটা।
” যেতে তো একদিন হতই। তবে ঠিক এভাবে নিশ্চই যেতে চাইনি। ” বলে ঘরটায় ঘুরতে লাগলো রাই। সখের ড্রেসিং টেবিল, দেওয়ালে ঝুলানো কাগজের ফুল, প্রজাপতি। কত শখ করে নিজের ঘরটাকে নিজে সাজিয়েছিল। সবই আজ ওর থেকে শতগুণ দূরে।

” অকর্মার ঢেঁকি ”
রাই এর ধ্যান ভাঙলো। চেয়ে দেখে আবির ঘরে ঢুকলো ” মানে!”
আবির এক ভ্রু উঁচু করে বললো ” ওদিকে তোমার মা একা কাজ করে চলেছে, আর তুমি এখানে ঘর দেখতে ব্যস্ত ?”

রাই ভুলেই গিয়েছিল ” ঠিক তো…. মা” বলে রাই ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো।

” মা , কি করছো?”
” কি করবো আর? দেখছিস না? তুই এখানে কেনো আসলি?”

রাই এগিয়ে মাকে সাহায্য করতে লাগলো ” তোমার করা লাগবে না ছাড়ো।আমি করছি”

মেয়ের কথায় উনি বেশ অবাক ” তুই করবি মানে? তুই কি রাঁধতে জানিস নাকি”

রাই মুচকি হেসে উঠলো ” শিখে গিয়েছি…… করতে করতে শেখা হয়ে যায়”
ওর মা নির্বাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো “মা রে, তুই খুশি আছিস তো ও বাড়িতে?”
রাই এর চোখ ভিজে এলো। মা কে জড়িয়ে নিলো সে” হ্যা মা। অনেক ভালো আছি। জানো সবচেয়ে ভালো বিষয় কি?”

ওর মা তাকালো ।রাই বললো “তোমার জামাই যে সবসময় আমার পাশে থাকে। কখনো অন্যদের মত আমার দিকে আঙুল তোলে না। বা (অন্যমনস্ক হয়ে) মুখ ও ঘুরিয়ে নেয়না”

উনি বুঝতে পারলেন মেয়ের অভিমান হয়েছে বাবার ওপর ” আচ্ছা বাদ দে যা তুই বস আমি খাবার নিয়ে আসছি”

রাই জেদ করলেও ওর মা ওকে কোনো কাজই করতে দিলনা। দুপুরের দিকে রাই এর বাবা ফিরে এলেন। সাথে কত রকমের বাজার আর মিষ্টি। কোনোটারই কমতি নেই। তবে এবারে আর রাই এগিয়ে গেলো না। জানেই যে তার বাবা আর তাকে পছন্দ করেননা।
আবির তামিমের সাথে গল্প করছে।
এদিকে রাই এর বাবা ওর মায়ের কাছে গিয়ে একটা বক্স ধরিয়ে দিল “নাও”

“এটা কি?”
উনি মুখ ঘুরিয়ে নিলেন ” আইস্ক্রিম” বলে উনি চলে গেলেন।
ওর মায়ের মুখে হাসির রেখা ফুটে উঠলো। মেয়ের জন্য আইস্ক্রিম আনতে ভোলেন নি তবে। উনি গিয়ে রাই কে ডেকে বক্স টা ধরিয়ে দিলেন । রাই বক্সের ভেতরে আইস্ক্রিম দেখে খুশিতে একাকার। এখনও মনে পড়ে সেদিনের কথা , যখন বাবা বাজার থেকে ফিরলে বা বাহির থেকে ফিরলেই মেয়ের একটাই আবদার থাকতো ” আইস্ক্রিম কই ?” আর উনি এক বক্স করে আইস্ক্রিম এনে মেয়েকে খুশি করিয়ে দিতেন। তার বাবা সত্যিই বদলায় নি। শুধু একটু আঘাত পেয়েছেন।

রাই বক্সটা ফ্রিজে রেখে বাবার ঘরে চলে গেল। আবির আর তাদের ডিস্টার্ব করলো না।
কিছুক্ষন পর বাবা মেয়ে হাসিমুখে ঘর থেকে বেরিয়ে এলো ।

” তোমার কি রান্না হয়েছে নাকি হোটেলে চলে যাবো?”

” মা , কি করছো এতক্ষণ যাবৎ?”

আগেও তারা এভাবেই রাই এর মায়ের মাথা নস্ট করে দিত। আজ সেই একই দৃশ্য দেখে তামিম আর ওর মা সত্যিই ভীষণ খুশি। এখন তো দেখা যাচ্ছে আবিরের থেকে রাই আর ওর বাবার খোশগল্প চলছে। পুরো বাড়িসুদ্ধ কেপে উঠছে দুজনের হাসির শব্দে। আবির নিঃশব্দে তাকিয়ে দেখছে এই দৃশ্য।

_________________

রাতে সবার সাথে আড্ডা দিয়ে তারপরে আবির আর রাই ঘুমোতে গেলো। কিন্তু অর্ধেক রাতে আবিরের ফোনটা বেজে উঠলো। ঘুম ঘুম চোখে দুজনে বিরক্ত হয়ে তাকালো “কে ফোন করছে দেখেন না”

আবির উল্টো রাই কে জড়িয়ে নিয়ে বললো ” তোমার ফোন বাজছে।”

“আরে ধুর। ঘুমাচ্ছেন নাকি বেহুঁশ আপনি? ফোন আপনার বাজছে। আমাকে বলছেন কেনো?”

আবির সত্যিই ভীষণ বিরক্ত। এই মাঝরাতে কে তাকে এবারে ডিস্টার্ব করছে। আবির অন্ধের মত হাতড়ে হাতড়ে ফোনটা হাতে নিলো
“হ্যালো…..”
ওপাশে নিশ্চুপ।
আবির আবারো হ্যালো হ্যালো করলো কিন্তু লাভ নেই।ওপাশে শুধুই টুংটাং কিসের যেনো একটা শব্দ হচ্ছে। কিন্তু কেউ কথা বলছে না। আবির ফোনটা কেটে রেখে দিল। কিন্তু শুতে যাবে ঠিক তখনই আবারো ফোনটা বেজে উঠলো । রাই ঘুরে আবিরের দিকে ঘুম ঘুম কণ্ঠে বললো ” ফোনটা ধরছেন না কেনো!”

” হুম….(কল রিসিভ করে) হ্যালো কে?”
আবারো একই নিরবতা। কেউ কি ঠাট্টা করছে নাকি আবির জানেনা। ফোনটা কেটে দিয়ে এবারে সাইলেন্ট করে দিল। আর সোজা প্রেয়সীকে জড়িয়ে ঘুমিয়ে পড়লো। কিন্তু রাই আবারো জিজ্ঞেস করলো “কে ছিলো?”

আবির একটুও কথা বলার মুডে নেই। সোজা একটা মুখ বন্ধ করা উত্তর দিয়ে দিলো “তোমার ছোট্ট একটা সতীন । যাও গিয়ে গল্প করে আসো”
রাই ফিক করে হেসে উঠলো “আপনাকে সহ্য করার মত দ্বিতীয় কেউ ও আছে এই দুনিয়ায়! বাহ। সত্যিই তার সাথে কথা বলা লাগে”

আবির চোখ মুখ কুঁচকে তাকালো “খুব শখ সতীন পালার?”

” তবে আরকি? দুজনে মিলে ফন্দি করে আপনার ব্যাংক ব্যালেন্স শূন্য করে দিবো। ভালো হবেনা?”

আবির মুচকি হেসে চোখ বুঝে নিল “আগে বলবে না, তুমি তোমার মেকআপ এর কথা বলছো”

রাই বাকা চোখে আবিরের হাতে একটা চিমটি কাটে ” চুপ করেন”
” ছিলাম তো। থাকতে তো দাওনা”..

এভাবেই খুনসুটি করতে করতে দুজনে ঘুমিয়ে গেলো।

___________________

এভাবেই ৩ দিন কেটে যায় রাই দের বাড়িতে। ৩ দিন পরেই আবির আর রাই বাড়ি ফেরার উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।
বাড়ি ফিরতে ফিরতে বিকেল হয়ে যায়। বিকেলে বাড়ি যেতেই রাই কে ঘিরে ধরে ফুপি আর সুমি। আর সে যে কি গল্প জুড়ে দিল দুজনে।
রাই খুবই ফুরফুরে মেজাজে আছে এখন। এই তিনদিন ওর খুব ভালো কেটেছে। আবির যাইহোক খুব খুশি এতে।
আবির ঘরে মাত্রই প্রবেশ করলো ওমনি ওর ফোন একটা কল এলো।
ফোনটা বের করে দেখে সেদিন রাতে যে নম্বরে কল এসেছিল , ঠিক সেই নম্বরটা। কিন্তু একই কান্ড ফোন ধরলে কেউ কথা বলেনা। আবির বেশ বিরক্ত এই ফোন কলের জন্য।

কিন্তু একটু চিন্তাও হতে লাগলো , কেননা গত ৩ দিন যাবত এই কলটা ওকে অনেক ডিস্টার্ব করছে। কে ফোন করছে এটাও জানা যাচ্ছেনা।
আবির কিছুটা ভেবে একজনকে ফোন করলো

” হ্যালো…”
ওপাশ থেকে হাসিমুখে উত্তর এলো “কি খবর ভাই আপনার? অনেক দিন পরে যে মনে করলেন?”

আবির মাথা নেড়ে বললো ” হ্যাঁ , আচ্ছা শোন একটা কাজ আছে ”

” হুকুম করেন”ছেলেটা চেয়ারে বসা থেকে দাড়িয়ে পড়লো।

” একটা নম্বর পাঠাচ্ছি , খবর বের কর”

আবিরের কোথায় গাম্ভীর্যতা দেখে ছেলেটা সিরিয়াস হয়ে গেলো ” জ্বী ভাই। আপনি পাঠিয়ে দেন”

আবির ফোনটা রেখে দিল।

_________________

পরদিন যেকোনো এক কাজেই আবির একটু বেরিয়েছিল । সন্ধ্যায় বাসায় ফিরবে ঠিক তখনই ওর মাথায় এলো ছেলেটাকে (গতকাল যাকে নম্বর দিলো) একটা ফোন করে আসতে বলবে। দেখা যাক কি খবর পেয়েছে।
যেই ভাবা সেই কাজ । আবির আজ গাড়ি নিয়ে বেরোয় নি। বাইক এ ছিলো। বাইকটা রাস্তার পাশে দাঁড় করিয়ে নেমে দাড়ালো। পকেট থেকে ফোনটা বের করে ফোন দিচ্ছে , কিন্তু ছেলেটা ফোন তুলছে না। আবির আবারো ট্রাই করলো। ফাঁকা রাস্তা প্রায় বেখেয়ালি ভাবেই আবির দাড়িয়ে ছিলো। হটাৎ গাড়ির টায়ারের একটা ঘোসঘস শব্দ কানে এলো। এতক্ষণ পরে আবিরের হুশ এলো আর ও ফোন হাতেই পেছনে ফিরবে তখনি কোত্থেকে একটা কালো রঙের গাড়ি এসে সজোরে আবিরের বাইকে ধাক্কা দিলো।
ভাগ্যক্রমে আবির বেঁচে গেলো কারণ আবির বাইকের মাথার দিকে দাড়িয়ে ছিল। আর গাড়িটা কোনোভাবে বাইকের পেছনে ধাক্কা দিলো ফলে আবির সরে যেতেই বাইকটা সজোরে রাস্তায় ছিটকে পড়ল। এদিকে আবির অবাক হয়ে গেলো। আর ওদিকে গাড়ির দিকে দৌড়ে যেতে লাগলো। কেননা আবির ভাবছে হয়তো গাড়িটা কোনোভাবে ব্রেকফেল করে অ্যাকসিডেন্ট করেছে। ভেতরে ড্রাইভার এর কিছু হইনি তো? এই ভাবনা থেকেই আবির দৌড় দিল গাড়ির দিকে । কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার এই যে গাড়িটা উল্টো এবার উচ্চশব্দে আবিরের দিকেই এগোতে লাগলো।

আচমকাই এমন ঘটনায় আবির কি করবে ভেবে না পেয়ে নিজে বাঁচার জন্যই পায়ের গতি কমিয়ে ঘুরে ফুটপাতের উপরে একলাফে উঠে গেলো। গাড়িটা ফুল স্পিডে থাকায় সজোরে ধাক্কা খেল ফুটপাতের ঢালাই এর সাথে। ফুটপাতের ধালাইটা প্রায় দুহাত সমান উঁচু ছিলো। যেকারনে গাড়িটা উল্টো নিজেই আছড়ে পড়ে। গাড়িটার সামনে প্রায় দুমরে মুচড়ে গেছে। দেখে মনে হয়না চলবে। আবির সন্দিহান চোখে আবারো গাড়ির দিকে দৌড় দিল , কিন্তু এবারে ভেতরে থাকা ব্যক্তিটি গাড়ি স্টার্ট করে সোজা একটানে আবিরকে ক্রস করে চলে গেলো ।

” ওই……” আবির হাফাতে হাফাতে রাস্তায় দাড়িয়ে পড়লো। আশেপাশের লোক জড়ো হওয়া শুরু হয়েছে মাত্রই।

” আরে ভাই আপনি ঠিক আছেন?”

” ভাই কিছু হইছে আপনার?”
“লোকেরা কি উরাধুরা গাড়ি চালায় আজকাল”
“মনে তো হইতাছিল মার্ডার কইরা দিব”
“নেশাখোর ছিলো মনেহয়”

মানুষের এসব বিভিন্ন কথার মাঝে রাস্তার দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকা মানুষটা ছিলো আবির। আর ওর মাথায় শুধু একটাই প্রশ্ন আসছিল
” কে ছিলো এটা?”

_____________________

বাইকের এমন মুমূর্ষু অবস্থা নিয়ে বাড়ি ফিরতে আবিরের বেশ ঝামেলা পোহাতে হলো। অবশেষে ঠেলে ঠুলে কোনমতে বাইক নিয়ে বাড়ি পৌঁছেই গেলো সে। ক্লান্ত শরীরে বাড়িতে ঢুকতেই প্রায় রাত ৮ টা বাজে। রাই সহ সবাই ড্রইং রুমেই ছিলো । ওকে দেখেই সুমি বললো ” কীরে ভাই কই ছিলি এতক্ষণ? সকালে বলেছিলি বিকেলের মধ্যেই ফিরে আসবি। এখানে রাত হয়ে গেছে তো।”

আবির আর মুখে এক অদ্ভুত চিন্তার ছাপ। সে কথা বাড়ালো না” রাই, ঘরে আসো” বলে হেঁটে সোজা নিজের ঘরে চলে গেল।
দাদী রাই কে বললো ” দেখো তো আমার দাদুভাই কে এমন কেনো দেখাচ্ছে?”

রাই মাথা নেড়ে সোফা ছেড়ে উঠে ঘরের দিকে গেলো।
ঘরে গিয়ে দেখে আবির বাথরুমে।
২ মিনিট পর একটা সাদা টিশার্ট এর কালো ট্রাউজার পরে বের হলো সে। রাই এগিয়ে গেলো “আপনাকে এমন কেনো দেখাচ্ছে?”

আবির হেঁটে খাটে গিয়ে বসলো। তখনি রাই এর চোখ গেলো আবিরের বা হাতের তালুর দিকে। কেমন লাল দেখলো।
” হাতে কি হয়েছে আপনার?” বলে রাই হাতটা তুলে ধরলো ” আরে কেটে গেছে কিভাবে!????” রাই উত্তেজিত হয়ে পরল ” বলছেন না কেনো কি হয়েছে হাত কিভাবে কেটেছে?”

আবির রাই কে আগে শান্ত করলো “কিছু হয় নি তুমি শান্ত হও। ”

” কি কিছু হয় নি? হাত কেটে গেছে বলছেন কিছু হইনি। ওয়েইট আমি। মাকে ডেকে আনি ” বলে রাই যেতে গেলে আবির ওকে পেছন থেকে টেনে ধরে ” বললাম তো কিছু হইনি। কেনো তাদের টেনশন দিতে যাচ্ছো?”

” কিন্তু….” রাই দৌড়ে গিয়ে আলমারি থেকে ফার্স্ট এইড বক্সটা নিয়ে এলো। “হাত দিন” হাতটা টেনে নিয়ে তুলোয় স্যাভলন মিশিয়ে ক্ষতস্থান পরিষ্কার করতে লাগলো।
” আপনি কি বলবেন কি হয়েছে?”

আবির কিছুক্ষন চিন্তা করলো। তারপর কিছুটা সত্যিই কিছুটা মিথ্যে মিলে বানিয়ে রাই কে শুধু এটাই বললো যে ওর বাইক অ্যাকসিডেন্ট হতে হতে বেঁচে গেছে। তবে পুরো ঘটনাটা বললো না। কেননা রাই এর মাধ্যমে অন্যরা জেনে গেলে বেজায় হাঙ্গামা হতে পারে। আর আবিরের মা চাচী তো আছেনই। শুধু শুধু তিল কে তাল করে দিবেন।

” দেখো এটা শুধুই একটা ছোট্ট ….”

” ছোট্ট!'” রাই রেগে গেলো

” কি হতো যদি সত্যি মারাত্মক কিছু হয়ে যেতো তবে? তখন কি করতেন?”

” হয় তো নি” আবির হাতের ব্যান্ডেজের দিকে তাকালো।
” আরে , কিন্তু….”
” চুপ আর কথা না। এটা নিয়ে আর ভাবতে হবেনা। ”

” কিন্তু….”
” হলদেটিয়া……” আবিরের মাতাল কণ্ঠে রাই একটু কেপে উঠলো আর তাড়াহুড়ো করে বললো ” আচ্ছা আপনি বসেন , আমি খাবার গরম করছি” বলে উঠে চলে গেলো।

রাই রান্নাঘরে এসে ভাবতে লাগলো আবির আর তার বিয়ের ঠিক আগের রাতের কথা ________

অতীতে সেই রাতে____________

রাই কোনোভাবেই বিয়েতে রাজি না।বারবারই মা বাবা দুজনকেই বোঝাচ্ছে, কিন্তু ওনারা সত্যিই নিরুপায় ছিলো। বাড়িতে মিহিরের বাবা ঘটনাটা এমনভাবে রটাচ্ছিলেন এদিকে গ্রামবাসীরা ও প্রায় জেনেই গিয়েছিল । এখন মানুষের বলাবলি। কি আর করার। সবাই বিয়েতে রাজি। এদিকে নিশান ও কাওকে কিছুই বলছে না।

রাই অবশ্য নিশান কে অনেকভাবে বলার চেষ্টা করেছে সবাইকে সত্যিটা বলে দিতে। বা এই বিয়ে আটকাতে। কিন্তু নিশানের সাথে সরাসরি ও কথা বলতেই পারেনি। সবসময়ই রাই কে কেউ না কেউ নজরে রাখতো। কিন্তু রাই এটাও বুঝে গিয়েছিল যে নিশান এর যদি সত্যিই কিছু করার ইচ্ছে থাকতো ও সেদিনই কিছু একটা করতো। কিন্তু সে তা করেনি।

রাত প্রায় ৮ টা বাজতে যাবে , রাই নিজের ফোনটা নিয়ে ঘাটাঘাটি করছে। তখন অবশ্য এক কাজিন ছিলো তার পাশে।
রাই এর ফোনে তখনি একটা মেসেজ এলো ” কীরে দোস্ত কেমন আছিস?”

রাই মেসেঞ্জার ওপেন করে দেখে পুরনো এক বান্ধবীর মেসেজ। রাই একটু খুশি হলো ” এইতো ভালো কেমন আছিস তুই?”

” ভালো….” মেয়েটার নাম নাফিসা।
নাফিসার সাথে কথোপকথনের এক পর্যায়ে রাই জানতে পারলো নাফিসা আজ রাত ৯ টার বাস করে ঢাকা ফিরছে। মূলত নাফিসার গ্রামের বাড়ি রাই দের গ্রামের বাড়ি থেকে ২ ঘণ্টার দূরত্বে। আর রাই দের গ্রামের বাড়ি পার করেই মূল সড়কে উঠতে হয় দেন ঐখান থেকে ঢাকায় আসে বাস।

নাফিসা জিজ্ঞেস করলো ” তো কোথায় আছিস তুই?’

” এইতো গ্রামে….” রাই জবাব দিল।
ওপাশ থেকে মেসেজ এলো “ইশ দোস্ত আগে বলতি তাহলে তোদের বাড়িতে চলে আসতাম। এখন তো সম্ভব ও না”

” হুম” তখনি রাই এর মাথায় কি যেনো একটা বুদ্ধি খেলতে লাগলো। ফট করেই মেসেজ করলো ” আচ্ছা দোস্ত তুই ঢাকা ফিরছিস তো?”

টুং করে শব্দ হলো ” হ্যাঁ”

“গ্রেট,,,, (রাই খুশিতে লাফিয়ে উঠলো ) দোস্ত এই নিড এ হেল্প”

” হ্যাঁ বল না”

রাই দ্রুত মেসেজ করলো ” দোস্ত শোন তোদের বাস ঠিক আমাদের এই গ্রামের রাস্তা দিয়েই যাবে তাইনা?”

কিছুক্ষন পর মেসেজ এলো ” হ্যাঁ”

” মাথাচর(রাস্তার নাম) এর রাস্তা দিয়েই তো যাবে?”

” হ্যাঁ…. কিন্তু কেনো….”

রাই এর দুচোখে যেনো আশার আলো ভেসে উঠলো ” দোস্ত তাহলে শোন। তুই গাড়িতে উঠবি ঠিক ৯ টায়। আর তোর এইখানে আসতে সময় লাগবে ২ ঘণ্টা মানে ১১ টা। ”

” হ্যাঁ, কিন্তু রাই বলবি তো কি হেল্প?”

বেশ এক মিনিট সময় নিয়ে একটা লম্বা চওড়া মেসেজ করলো রাই “শোন। তুই যখন। মাথাচর এর রাস্তায় আসবি তখন নিশ্চই এই গ্রামের কেউ না কেউ নামবে। (কারণ ওই রাস্তার পাশেই ফাঁকা একটু জায়গায় বাস থেমে যাত্রী ওঠা নামা করে। ) তো যখন যাত্রীরা নামবে তখন তুই কোনো একভাবে বাসের কন্ডাক্টর কে বলবি একটু ওয়েইট করতে । ”

নাফিসার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে সব “কিন্তু কেনো?”

” কারণ আমি যাবো তোর সাথে”

” কিঃ!!!!!” নাফিসা অবাক।

“হ্যাঁ বেশি কথা বলিস না। আমি যা বলছি শোন। বাকিটা বাসে উঠে তোকে বুঝিয়ে বলবো …. তো বাস পৌঁছলে আমাকে যদি ঐ রাস্তায় না দেখিস তো কন্ডাকটর কে একটু থামতে বলিস, চিন্তা নেই তোদের বাস আসার আগেই আমি ঐখানে উপস্থিত থাকবো। আর আমাকে নিয়েই যাবি তুই। বেশি না ঢাকা পর্যন্ত পৌঁছে দিলেই হবে। বাকিটা আমি জানি”

নাফিসা বুঝতে পারছে না কি বলছে রাই। তবে ও শুধু ওকে বললো ” আচ্ছা । তুই রেডি থাকিস। আর ১১ টার আগেই ওখানে পৌঁছে যাস।”

” ওকে বেবি লাভ ইউ” বলে কথার ইতি টানলো রাই। এই সুযোগ কোনোভাবেই হাত ছাড়া করা যাবেনা। যেকোরেই হোক ওকে এই বিপদ থেকে বেরোতে হলে এই সুযোগটা কাজে লাগাতেই হবে।

:
:
:
:

রাত ৯ টার মধ্যেই সবাই খাওয়া দাওয়া করে নিলো। গ্রাম বলে কথা। তার উপরে আগামীকাল বিয়ে। আবিরের পরিবারের কেউই এটা জানেনা। শুধু আবির, নিশান , রেজোয়ান সাহেব ই উপস্থিত। তারা তিনজন আপাতত রাই দের বাড়ি অর্থাৎ সুরাইয়ার বাড়িতেই রয়েছেন। মিহিরের বাড়ি যাননি। মিহির সকালেই নিজের বাড়ি গেছে। আগামীকাল সুরাইয়া কে নিয়ে আসবে বলে।

যাইহোক খাবার টেবিলে সবাই লক্ষ্য করলো যে রাই আধা ঘন্টা আগেও রেগে ছিলো , ওর মুখে একটা অদ্ভুত হাসি। কিন্তু তাতে কারো মাথা ব্যাথা নেই।

সন্দেহটা একজনেরই হচ্ছে। বলা লাগবে নাকি তার নাম?

আবির।
আবির খাবার খাচ্ছে আর রাই কে দেখছে। কেননা রাই খাওয়ার মাঝেই কেমন মুচকি হাসছে। কেনো!? না হাসিতে সমস্যা নেই। কিন্তু যে আজ সকালেও কান্না করছিল বিয়ে করবে না, বেলা ঘুরতেই এমন কি হলো? রাই অন্যদিনের থেকে দ্রুত খাবার খেয়ে উঠে পড়লো। সকলেই দেখলো , তবে কি অতটা গুরুত্ব দিলনা।
রাই এর উঠে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আবির।

রাত প্রায় ১০ টা। সবাইই ঘুমিয়ে গিয়েছে বলা চলে। পুরো বাড়িতে পিনপতন নিরবতা। ওর পাশে একটা কাজিন ঘুমিয়ে আছে। তবে ওর ঘুম পাতলা না। ফলে বলা চলে কোয়ালার ন্যায় ঘুমোচ্ছে। যাইহোক রাই আস্তে করে বিছানা ছেড়ে উঠে পড়লো। আর চাদরের নিচে দুটো বালিশ ঢুকিয়ে দিয়ে নেমে ধীরে ধীরে আলনার উপর থেকে নিজের সাইড ব্যাগটা হাতে নিলো।

ওর কাছে কিছু টাকা আর নিজের বাসার এক্সট্রা চাবি আছে। এটাই সম্বল। আগে এখন থেকে বেরোতে হবে , ঢাকা পৌঁছে নিজের বাড়ি যাবে। তারপরের টা পরের বিষয়।

রাই ব্যাগটা নিয়ে আর জুতোজোড়া হাতে নিয়ে আস্তে আস্তে দরজা খুলে বেরিয়ে পড়লো রুমের বাহিরে।
এবার পুরো বাড়ি পার করে রাস্তায় বেরোতে হবে। কাজটা শক্ত। কারণ বাড়িতে মূল দরজা খুললে অনেক জোরে আওয়াজ হওয়ার সম্ভাবনা। যেহেতু নিরবতা চারিদিকে ছড়িয়ে রয়েছে। তাই ধীরে ধীরে রুম থেকে বেরিয়ে সদর দরজার কাছে গেলো রাই।

বুকটা রীতিমত ফেটেই যাবে এতই হৃদস্পন্দনের বেগ। ধীরে ধীরে ছিটকানি খুলতে লাগলো রাই। আশেপাশে অন্ধকার বাদে আর কিছুই নেই।

বেশ যুদ্ধ করে অবশেষে ছিটকিনি খুলে গেলো।
আস্তে করে আধা হাত সমান দরজা ফাঁকা করে রাই বেরিয়ে পড়লো। উঠান ও ফাঁকা। কেউ নেই। চাঁদের আলোয় সব স্পষ্ট।
জুতো হাতেই রাই সোজা এক দৌড় দিল বাহিরে কাচা রাস্তার দিকে। রাস্তায় পৌঁছে গেলে আর ভয় নেই। বাকিটা ও আধ ঘণ্টায় পৌঁছে যাবে বাসের থামার কাছে কাছে।

আল্লাহর রহমতে বাড়ির উঠোন পেরিয়ে কাঁচা রাস্তায় ও এসে পড়লো রাই। এবার আর তাকে পায় কে? জুতো জোড়া পা বাবাজিকে দান করে ছুটে এক দৌড় লাগালো।

আশপাশ ঝিঝিপোকা জোনাকি পোকা দিয়ে ভরপুর। গাছপালার ফাঁক দিয়ে চাঁদের আলও রাস্তা ভরে যাচ্ছে, তার উপর দিয়ে রাই শুধুই দৌড়াচ্ছে।
অবশেষে এখন ৫ মিনিটের পথ বাকি। ঘড়িতে ১০:৪০। হাফিয়ে উঠলো রাই। এখন একটু আরাম করে করেই হাঁটবে। গ্রামের রাস্তা। কেউই নেই। রাত ১০:৪০ ।অনেক রাত।
রাই আস্তে আস্তে হাটতে লাগলো। আজ যেনো তার মনে কোনো ভয় নেই। শুধু আছে একটা সুপ্ত আশার আলো। যার সামনে এই রাত বিরাতে বের হওয়ার ভয়টাও হার মানছে। আজ জেকরেই হোক রাই কে ঢাকা যেতেই হবে।

হাটতে হাটতে অবশেষে সে ঠিক ওই রাস্তায় এসে পৌঁছল। এখনও ১৫ মিনিট বাকি। নাফিসা কে একটা ফোন করলো
” কতদূর তোরা?”

” এইতো আর ২০ মিনিটের মধ্যেই এসে যাবো। ভাঙ্গা রস্তা বুঝিস তো”

“হ্যাঁ আমি এসে গিয়েছি। চিন্তা করিস না” বলে রাই ফোন রেখে দিল।

এখন শুধু অপেক্ষা করতে হবে।

কিন্তু কিন্তু কিন্তু। এতই কি সোজা? এই নিস্তব্ধ রাতে দুপাশের ধান ক্ষেত, গাছপালা , পোকার ডাক তার মাঝে একা রাই।
মানুষ সাহসী হয় ঠিকই। কিন্তু কতক্ষন? ঠিক তাই। এবার রাই এর মনে ও ভয় একটু একটু করে উকি দিতে লাগলো।
তাই বিভিন্ন ক্যাটাগরির ভয়।

ভুত, জ্বীন, নিশির ডাক, হুতুম পেঁচা, বিশেষ করে কোনো খারাপ লোকের পাল্লায় পড়ার ভয়। রাই মনে মনে দোয়া দুরুদ পড়তে লাগলো। কেননা সত্যিই একা মেয়ে এইভাবে এইখানে ! একটা মারাত্মক বিষয়।
যেকারনে রাই ভয়ে কেঁপে কেঁপে উঠছে
আর একটু পর পরই গগন কাপিয়ে ডেকে উঠছে পেঁচার দল। রাই ভয়ে মৃদু চিৎকার করে উঠলো।

কিন্তু হায়, ওর চিৎকার শোনার মত এক নির্জীব উপাদান গুলো ছাড়া কেউই নেই।

এখনও বাস এসে পৌঁছয়নি। রাই মনে প্রাণে চুম্বকের মতো বাস কে টেনে নিজের দিকে আসতে বলছে কিন্তু তা নিতান্তই অবাস্তব।

তখনি রাই অনুভব করলো তার পেছনে শুকনো পাতার মড়মড় শব্দে চমকে উঠলো রাই। পেছনে ঘুরবে ঠিক তখনই বাসের হর্ণ কানে এলো। পুলকিত নয়নে রাস্তার দিকে তাকিয়ে দেখলো বাস এসে পড়েছে। বাস টা থেমে ও গেলো নিজের যথাস্থানে।
রাই খুশি হয়ে যেই পা বাড়াতে গেলো ওমনি কেউ ওর মুখ টিপে ধরলো পেছন থেকে আর ওকে চেপে ধরে পেছনের দিকে নিয়ে যেতে লাগলো।

” উম্ম উম্ম” রাই পা ছুঁড়ছে। কিন্তু লাভ নেই।
ওদিকে নাফিসা বারবার জানালা দিয়ে বাইরে দেখছে। কিন্তু রাই নেই। আসছে ও না। প্রায় যাত্রী নেমে গিয়েছে। বাস ছাড়বে ছাড়বে। এদিকে বলতে ও পারছে না। একটা ভয় মনে । অবশেষে বাস হর্ণ বাজিয়ে আবারো নিজ গন্তব্যের দিকে ধেয়ে চললো। নাফিসা ফোন বের করে কল দিচ্ছে। রাই এর ফোন বেজেই যাচ্ছে কিন্তু ফোনটা তুলতে পারছে না।

অবশেষে রাই এর চোখের সামনে দিয়েই ওর শেষ আলোর আশাটুকু ও চলে গেলো।

কিন্তু এইবারে তো রাই এর মন মস্তিষ্ক জুড়ে ছেয়ে গেলো একরাশ আতঙ্ক। এমন আতঙ্ক যা বলার মত না।
সত্যিই কি কোনো অসৎ মানুষের হাতে পড়ে গেলো রাই!?

কিছুক্ষন ওভাবেই রাই কে টেনে পেছনে নিয়ে একটা বড়ো কাঠাল গাছ পড়ে রাস্তায় সেই গাছের সাথে ধাক্কা দিলো অজ্ঞাত লোকটি।
রাই চেঁচিয়ে উঠলো ” আহ্…. কে… কে আপনি?”

কিন্তু ওর মুখটা আবারো চেপে ধরে কেউ ওর অনেক কাছে এসে পড়লো। ” উন, উহু …..” রাই চেষ্টা করছে ব্যক্তিটিকে নিজের থেকে সরিয়ে নিতে কিন্তু পারছেনা।

লোকটি প্রায় রাই এর গলায় মুখ গুজতে যাবে , কিন্তু রাই কোনো উপায়ও করতে পারছেনা । তার শক্তির সাথে এভাবে পারা সম্ভব না।

ভয় আর আতঙ্কে রাই এর চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়তে লাগলো।

ঠিক তখনই হাতটা আলগা হয়ে গেল। লোকটা ওকে ঠেলে সরিয়ে দুপা পিছিয়ে দাড়ালো।

রাই লম্বা লম্বা শ্বাস টানছে। ওর যেনো দম বন্ধ হয়ে আসছে। ভাঙ্গা গলায় বললো ” কে? ”

কিন্তু জবাব নেই। বেশ খানিকক্ষণ পরে রাই স্বাভাবিক হলো। মাথার ঘাম মুছে সে লোকটির দিকে এবার স্পষ্ট ভাবে তাকালো , আর চাঁদের আলোয় যতটুকু বোঝা গেলো , সে আবির।

রাই এর পায়ের তলার মাটি সরে গেল। এই কনকনে ঠাণ্ডা পরিবেশেও গলাটা শুকিয়ে কাঠ। ” আ,,, আ আপনি”

আবির ওর কাছে এসে হাত চেপে ধরলো আর শক্ত গলায় বললো “এখন…… যদি …… আমার জায়গায় অন্য কেউ থাকতো…. তবে কি তুমি খুশি হতে?”

রাই ভয়ে কেঁপে উঠলো। ঠোঁটদুটো অনবরত কাপছে। কি বলবে সে জানেনা।

আবির চিৎকার দিয়ে উঠলো “জবাব দাও ড্যাম ইট….” বলে ওর মাথার কাছ ঘেঁষে গাছের উপরে একটা ঘুসি মারলো।

রাই এর প্রাণ যায়যায় অবস্থা। বাকশূণ্য হয়ে গেছে ও। আবিরের চেহারা যতটুকু বোঝা যাচ্ছে শুধু রাগ , আগুনের মতো টগবগ করছে।
রাই চুপ করেই রইলো।

“কি প্রমাণ করতে চাচ্ছো তুমি হ্যাঁ কি? যে আমি তোমার ওপর কোনো অমানবিক অত্যাচার করছি? নাকি তুমি (আবারো গাছে একটা ঘুসি মেরে) কোনো জেল পলাতক আসামী? নাকি আমি কোনো সিরিয়াল কিলার?”

“আ, আ মি……”

“চুপ” বলে আবির দূরে সরে গেলো।

রাই খানিকটা শক্তি সঞ্চয় করে ভাঙ্গা ভাঙ্গা গলায় বললো “আপনি,,,,, আপনি যে….. যে আমাকে জোর করে বিয়ে করছেন এটা কি….. এটা কি ঠিক?” একটা ঢোক গিলে নিলো।

আবির ক্ষিপ্র হয়ে রাই কে পেছন থেকে টেনে নিজের মুখোমুখি দাড় করালো ” সেটা যদি তুমি বুঝতে তাহলে এভাবে পালাতে না ইউ…….”

হাত মুঠি করে আবির নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করলো।
রাই আর কিচ্ছু বললো না। ওর হাতপা কাপছে। আবির নিজেকে শান্ত করার জন্য পিছিয়ে গিয়ে একহাতে মাথা চেপে ধরে নিচের ঠোঁট কামড়ে দাড়িয়ে রইলো।

চারপাশের প্রকৃতি আবারো নিস্তব্ধ।
রাই ও চুপ করেই দাড়িয়ে। এরই মাঝে পেছন থেকে আরো এক দুটো ভ্যান যাওয়ার শব্দ ও এলো কানে। কিন্তু তাতে আর কি?

বেশ খানিকক্ষণ পরে আবির নিজেকে একটু শান্ত করলো আর ফিরে এসে রাই এর বা হাত ধরলো। রাই ওর দিকে তাকালো। আবির সামনের দিকে হাঁটা ধরলো। অর্থাৎ বাড়ির দিকে।

দুপা যেতেই রাই একটু থেমে গেলো। কিন্তু আবির নিজের মুখের কঠোর ভাব নিয়ে রাই এর দিকে তাকাতেই রাই ভয় পেয়ে গেল। আর কিছু না বলে আবিরের সাথেই হাটতে লাগলো।

আবির চুপচাপ ওর হাত ধরেই হাঁটছে। হাটতে হাটতে একসময় দেখলো সামনে থেকে দু তিনজন ছেলেরা আড্ডা দিতে দিতে আসছিল।
তখনি ছেলেগুলো মোবাইলের ফ্ল্যাশ দিলো রাই এর দিকে। এমনিতেই রাই ভীত ছিলো আর ওই ছেলেদের দেখে ওর মনে অজানা আতঙ্ক গ্রাস করলো। ছেলেগুলো যত কাছে আসছে রাই ততই আবিরের দিকে সরে যাচ্ছে।

এক পর্যায়ে রাই ভয়ে নিজেই আবিরের হাত জড়িয়ে ধরলো। কিন্তু ততক্ষণে ছেলেরা চলে গেছে।

“যখন ভয় করা উচিত ছিল তখন কোথায় ছিলে? ”

রাই হাতটা ছেড়ে দিল। তবে আবির বা হাত ধরেই আছে। কি ভেবে যে আবির বললো কে জানে আবির হঠাৎই শান্ত গলায় বলে উঠলো

“আমিও কিন্তু ছেলে। প্লাস আমরা অবিবাহিত”

রাই এর পা বরফ না পুরো পাথরের মত জমে গেলো। আবির দাড়িয়ে পড়লো। রাই এর কপাল বেয়ে যেনো ঘাম ঝরছে। আবির বুঝতে পারলো।

“তবে এখন মুড নেই” বলে রাই এর হাত ধরে টেনে টেনে নিয়ে যেতে লাগলো। রাই না পারতেই হাঁটছে।

সারাপথে আর তেমন কথা হয় নি। তবে এক পর্যায়ে আবির রাই এর দিকে একটু গভীরভাবে তাকিয়েছিল।

হলুদ রঙের উজ্জ্বল এক কুর্তি পরে ছিল রাই। চাঁদের আলোয় এতো সুন্দর উজ্জ্বল লাগছিলো যেনো ওর পাশে থেকে নূর ছড়াচ্ছে। আবির শীতল কণ্ঠে বললো “হলদেটিয়া”

রাই চমকে তাকালো।
আর কিছু না।

হেঁটে হেঁটে প্রায় ৪৫ মিনিট পরে বাড়ি পৌঁছলো দুজনে। সদর দরজা তখনও খোলা। কেউ জেগে নেই এটাই অনেক। আবির রাই কে দরজার সামনে দাড় করিয়ে বললো “নিশ্চই এই কাজ দ্বিতীয় বার হচ্ছেনা? (রাই চুপ) ঘুমোতে যাও। ”

রাই মাথা নিচু করে বাড়িতে ঢুকতে গেলো তখনি পেছন থেকে আবিরের ডাক “হলদে টিয়া”

রাই থমকে দাড়ালো। পেছনে ঘুরে দেখে আবির গভিরদৃষ্টে তাকিয়ে। একটানে রাই কে বুকে মিশিয়ে নিলো। আর কপালে একটা চুমু একে দিল।

বর্তমানে_________________
এই ছিলো সূচনা। হলদে টিয়া ডাকার। আবিরের মুখে এই ডাকটা প্রতিবারই এক অদ্ভুত ভালোলাগার তৈরি করে রাই এর মাঝে। মুচকি হেসে দিল রাই।

ওদিকে আবিরের ফোন টুং করে একটা মেসেজ এলো। ফোনটা হাতে নিয়ে আবির বিস্মিত…………

চলবে???

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here