Ex গার্লফ্রেন্ড
পর্বঃ২৩ বা অন্তিম
#আবির হাসান নিলয়
জান্নাতঃতুই এখানে কি করিস?দেখছিস না
এখানে সব বড় মানুষ কথা বলছে।নিজের
রুমে গিয়ে ঘুমা,যা ভাগ।
রুম থেকে ফ্রেস হয়ে বাইরে এসে বসতেই
সবার সামনে কথাটা বলল।হয়তো নিলুকে
বলছে তাই নিলুর দিকে তাকিয়ে দেখতে
যাবো তখন আবার বলল….
জান্নাতঃতোকে বলছি,তুই আবার নিলুকে
দেখছিস কেনো?
আমিঃতোর চোখে আমাকে ছোট লাগে?
জান্নাতঃশুধু আমার চোখে লাগবে কেনো?
সবাই তোকে ছোটই বলছে।
এবার জান্নাতের কথা শুনে যেমন আমার
রাগ হচ্ছিলো তেমনি অন্যদের হয়তো হাসি
পাচ্ছিলো।তবে সবার সামনে নিজেকে শান্ত
করে বললাম…
আমিঃকার কাছে আমাকে ছোট লাগে?
জান্নাতঃসবাই ছোট বলছে।
আমিঃকানের নিচে মারবো,যা এখান থেকে।
জান্নাতঃহু,দেখছি কতো সাহস?
আমিঃআম্মু ওকে যেতে বলবে নাকি আমি
ওর বারোটা বাজাবো?
আম্মুঃজান্নাত চুপ থাক এখন
জান্নাতঃতুমি নিজেই তো বললা নিলয় পিচ্চি
মানুষ।ভুলে সব ছবি ছিরে ফেলছে।
আম্মুঃহয়েছে আর বলা লাগবে না।নিলয় তুই
প্লিজ ওর কথাই কান দিস না।
আমিঃও এখন আমি পিচ্চি তাই না।এই
বুড়োটার রাগ,অভিমান দূর করিয়ে এখানে
আনতে কিন্তু এই পিচ্চিই হেল্প করছে।
নানুঃআমি এখনো যথেষ্ট স্ট্রং আছি।
কাজলঃসিরিয়াসলি?
নানুঃতোদের জন্য একটু ভাবও মারা যায় না।
নানুর এমন কথা শুনে সবাই হোহো করে
হেসে দিলো।অনেকটা সময় পর নিজেদের
হাসি থামিয়ে জান্নাত বলল….
জান্নাতঃআমাদের বিয়ে দিয়ে দাও
নানুঃকাদের বিয়ে?
জান্নাতঃআমার আর নিলয়ের
নানুঃতোদের বিয়ে কেনো দেবো?
জান্নাতঃতো কাদের বিয়ে দিবে?
নানুঃতোর তো আমাকে বিয়ে করার কথা।
আমিঃনানু বিয়ে করতে পারো,আমি আমার
জন্য নতুন একটা খুঁজে নেবো।
জান্নাতঃহুর,বুইরাকে বিয়ে করার আমার
একদমই ইচ্ছা নাই।আর বিয়ে তোর আমাকে
করতেই হবে।
নানুঃতোর বাসা থেকে জানে?
জান্নাতঃনা জানলে কি এখানে আসতে দিতো
নানুঃকাহিনী কি বলতো?
আম্মুঃসেসব অনেক কথা আব্বু,ওরা দুজন
দুজনকে ভালোবাসে।এখন বলছে ওদের
বিয়ে দিতে হবে।
নানুঃঠিকই তো বলেছে।
আম্মুঃকিন্তু এখনো দুজন বেকার।
আঙ্কেলঃকোথায় বেকার?দুলাভাইয়ের সাথে
নিলয় অফিসে যাবে।আর এখন তো সব
সমস্যা শেষ হয়ে গেছে।বাবা গিয়ে মামলাটা
তুলে নিলে সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।
জান্নাতঃআব্বু তোমার অফিস আছে?
আব্বুঃঅনেক আগে থেকে।
জান্নাতঃআমাদের বলোনি কেনো?
আব্বুঃতখন আসলে….
নানুঃআমার জন্য,আমি ঐ অফিস এবং ওর
নামে মামলা করেছিলাম।তবে এখন আর
চিন্তার কারণ নেই,এখান থেকে গিয়েই আমি
মামলা তুলে নেবো।
জান্নাতঃওয়াও,তাহলে তো আমাদের বিয়ে
পাক্কা হচ্ছে।
আম্মুঃমোটেও না,আগে পড়াশোনা শেষ হবে
তারপর বিয়ে।
জান্নাতঃকিন্তু আম্মু….
জান্নাতকে থামিয়ে দিয়ে আম্মুর দিকে তাকিয়ে
জিজ্ঞাস করতে যাবো তখনি আম্মু বলল….
আম্মুঃহুম,যেটা ভাবছিস সেটাই।
আমিঃতুমি আমাকে সরাসরি বলতে।
আম্মুঃতোকে বললে তোরা দুজন মারামারি
শুরু করে দিতি।
জান্নাতঃআমাকেও বলো, কি নিয়ে কথা হচ্ছে
আমিঃআম্মু নিজেই তোর আম্মুকে সব বলছে
জান্নাতঃকি বলছে?
আমিঃবা** তোর মাথায় কি কোনো কথাই
ঢোকে না?আগে পড়াশোনা শেষ করে যখন
জব পাবো তখন আমাদের বিয়ে দিবে।
জান্নাতঃসেটা তো আম্মুর কথা।
আমিঃতোর আম্মুকে এই কথা উনি বলছে
জান্নাতঃতুমিও আম্মা?
আম্মুঃওলে আমার মেয়েটা মন খারাপ করছে
জান্নাতঃযাও কারো সাথে কথা নাই আমার
বসে না থেকে সেখান থেকে উঠে রুমে গেলো
বার বার সবাই ডাকলেও কারো কথা না শুনে
রুমে চলে গেলো।
আম্মুঃপাগল মেয়ে একটা।
খালাম্মাঃবিয়ে দিয়ে দে,সমস্যা কি?
আম্মুঃপাগল,বিয়ে করে রাখবো কোথায়?
খালাম্মাঃতুই কিন্তু আমাকে পর করে দিচ্ছিস
আম্মুঃদেখ বোন,তোকে পর মোটেও করছি
না।কিন্তু মানুষজন অবশ্যই বলবে বিয়ে হচ্ছে
কিন্তু ছেলের এখনো বাসা নেই।
নানুঃআমার বাসায় বিয়ে হলে কেউ কিছুই
বলার সাহস পাবে না।
আব্বুঃসেটা ঠিক,কিন্তু বাবা পেছন থেকে
সবাই কটু কথাই বলবে।আমার নিজের
কোনো ভাই নেই।রউফকে(খালু)আমি আমার
নিজের ভাই মানি।আমি জানি এখানে আমরা
সারাজীবন কাটিয়ে দিলেও রউফ আমাদের
কিছুই বলবে না।কিন্তু সমাজের মানুষজন…!
খালাম্মাঃকিন্তু পাগলিটাকে বুঝাবে কে?
আব্বুঃনিলয় আর নিলয়ের মা গেলেই হবে।
নানুঃতাহলে আমি একটা বাসার ব্যবস্থা করছি
আম্মুঃসেটার কোনো দরকার নেই বাবা।
আমাদের নতুন বাসার কাজ শুরু হয়েছে।
নানুঃআমাকে বললিও না।
নিলুঃআগে এমন করে এসে কথা বলছো?
নানুঃহয়েছে আর অপমান করা লাগবে না।
তবে রচয়িতা,তোর ছেলে মেয়ে একদম তোর
মতোই হয়েছে।যাকে যেটা বলবে একদম
মুখের উপর বলবে।আর এখন আমি উঠি মা।
খালাম্মাঃএখনি যাবে কেনো?খাওয়াদাওয়া
করে যাও একেবারে।
মামিঃবাসায় গিয়ে ঔষধ খাওয়াতে হবে।
নানুঃতোদের অনুপস্থিতিতে এই মেয়েটাই
কিন্তু আমার সব যত্ন নিয়েছে।
আম্মুঃঅনেক ধন্যবাদ তোমাকে।
মামিঃধন্যবাদ দিয়ে ছোট করছো আপু?উনি
তো আমারও বাবা তাই না?
আম্মুঃহুম
নানুঃআচ্ছা এখন উঠি,কাল তোরা না কাল না
পরশুদিন তোরা সবাই আমার বাড়ি যাবি।
ধুমধাম করে তোদের বরণ করবো।
আম্মুঃআচ্ছা বাবা যাবো।
নানুঃতুমি যাবে তো?
আব্বুঃঅবশ্যই যাবো বাবা।
নানুঃতোদের ছেড়ে থাকতে অনেক কষ্ট হতো
নানু আর কথা বলতে পারছিলো না।চোখে
জল ছলছল করছে।নিজের লাঠি নিয়ে
নিজেকে কোনোপ্রকার স্বাভাবিক করে
আমাদের বিদায় দিয়ে চলে গেলো।নানুর
সাথে মামি এবং কাজলও গেলো।
নানু চলে যাবার পর সবাই বাইরে কিছু সময়
কথা বললাম।যখন ডিনার করতে যাবো
তখন আম্মু আমাকে নিয়ে নিলুর রুমে গেলো
কারণ জান্নাত নিলুর রুমেই আছে।রুমে গিয়ে
দেখলাম পাগলিটা ল্যাপটপ থেকে গান
শুনছে।আম্মু ডাকলেও কোনো রেসপন্স
করলো না।কারণ কানে হেডফোন ঢুকিয়ে
রাখছে।মাথায় একটা মারতেই কান থেকে
হেডফোন খুলে স্বাভাবিক হয়ে বসলো।
জান্নাতঃকি হয়েছে?(শান্ত স্বরে)
আমিঃবিয়ে করবি না আমাকে?
জান্নাতঃনা,আমি চিরকুমারী থাকবো।
আমিঃআইছে ঢং দেখাইতে
আম্মুঃতোরা একজন আরেকজনকে সত্যি
ভালোবাসিস তো?
জান্নাতঃতোমার আর তোমার ছেলের চোখে
কি আমার ভালোবাসা পরে না?সেই হাইস্কুল
থেকে তোমার ছেলের পিছে পরে আছি।
তবুও বার বার বলে আমি ওকে ভালোবাসি
কিনা।আমার কাছে এই প্রশ্নের জবাব হলো
হ্যা আমি ওকে ভালোবাসি।অনেক বেশি
ভালোবাসি এই কুত্তাকে।
আমিঃআস্তে বৎস,চিল্লাইয়ে মার্কেট পাওয়া
যাবে না।
জান্নাতঃতুই যা এখানে থেকে
আমিঃআরে আমাদের বিয়ে আবার আমাকেই
বের করে দিচ্ছিস।
আম্মুঃনিলয় থাম।তুই আমার দিকে তাকা।
জান্নাতঃহুম
আম্মুঃতুই ওর সাথে হ্যাপি থাকতে পারবি?
জান্নাতঃহ্যা পারবো
আম্মুঃদেখ মা,বিয়ে কোনো খেলনা না।
মানুষের জীবনে বিয়ে একটাই হয়।তোরা
যদি একজন আরেকজনকে বুঝতে শিখিস
তাহলে দুজন সুখে থাকবি।কিন্তু সেটার জন্য
দুজনের মতামত সঠিক হওয়া লাগবে।
জান্নাতঃআমি আমার আম্মুকে দেখে আসছি
সেই ছোট বেলা থেকে।হাজারটা কষ্ট পেয়েও
উনি কখনো আমার বাবাকে ছেরে যায়নি।
আমি জানি আম্মা কিভাবে সংসার করতে হয়
কথা বলার সময় জান্নাতের কণ্ঠস্বর বেশ
মোটা হয়ে যাচ্ছিলো।সম্ভবত কান্না পাচ্ছিলো।
তবে আম্মু জান্নাতকে স্বাভাবিক করার জন্য
কাছে বসে পাগলিটাকে নিজেত কোলে নিলো
আম্মুঃতুই বিয়ে করবিই তাহলে?
জান্নাতঃবিয়ে না করেও যদি ওর সাথে আমি
সারাজীবন থাকতে পারি তবে আমি সেটাই
করবো।আমি সারাজীবন ওর সাথে থাকতে
চাই আম্মা।
আম্মুঃতুই কি বলিস?
আমিঃকি বলবো?
আম্মুঃবিয়ে করতে রাজি?
আমিঃএই পাগলিকে বিয়ে করলে আমার
জীবনটা একদম তেজপাতা বানাই দিবে।
জান্নাতঃহো বানাবো শুয়োর,তোর সমস্যা?
আমিঃদেখলে?
জান্নাতঃকি দেখবে?তুই বিয়ে করবি কিনা
সেটা জিজ্ঞাস করছে।তুই সেটার উত্তর দে।
আমিঃযা করবো না তোরে বিয়ে
জান্নাতঃকরবি না মানে,তোর চোদ্দগুষ্টি
বিয়ে করবে কুত্তা।
আম্মুর কোলে থেকে উঠে আমার চুল ধরে
টানাটানি শুরু করে দিলো।
জান্নাতঃবল বিয়ে করবি কিনা?
আমিঃআম্মু আমাকে মেরে ফেলল প্লিজ
এই পেত্নীটাকে আমার থেকে ছাড়াও।
জান্নাতঃআম্মাকে ডাকোস কেন?তুই বিয়ে
করবি কিনা বল?
আমিঃকরবো করবো
জান্নাতঃপাক্কা?
আমিঃহ্যা পাক্কা,এবার ছাড়
জান্নাতঃযা ছেড়ে দিলাম।
আমিঃতোমার সামনে তোমার ছেলেকে মারে
আর তুমি সেটা বসে বসে দেখছো?
জান্নাতঃছেলে যদি বলদ হয়,সেই ছেলেকে
মার খেতেই হয়।
আম্মুঃঅনেক হয়েছে,এবার দুজন চুপ।
জান্নাতঃহুম
আম্মুঃতোরা দুজনই যেহেতু রাজি তাহলে
আর কোনো সমস্যা নেই।তবে বিয়ে কিছুদিন
পরে হবে।
জান্নাতঃকতোদিন পরে?
আম্মুঃযতোদিন না অবধি বাসার কাজ কমপ্লিট
হবে ততোদিন অপেক্ষা করতে হবে।
জান্নাতঃতাহলে এখনো অনেক দেরি?
আম্মুঃআমাকে বিশ্বাস করিস তো?
জান্নাতঃতোমাকে না করলে কাকে করবো?
আমিঃআমাকে করবি?
জান্নাতঃভাগ
আম্মুঃবাসার সব কিছু কমপ্লিট হতে এখনো
বছরখানেক লাগবে।এর মাঝে নিলয়ের
পড়াশোনা শেষ হয়ে যাবে।
জান্নাতঃপড়াশোনা শেষ করে কি করবে?
আমিঃব্যবসা করবো,তবে ব্যবসার টাকা যদি
তোর বাপ আমাকে এখন দেয় তাহলে এখনি
বিয়ে করবো।থাকার জন্য দুজন একটা
বাসা ভাড়া নেবো।
জান্নাতঃঠিক আছে
আম্মুঃকিছুই ঠিক নেই।তোরে এবার মারবো
নিলয়।আর তোর কি হয়েছে বলতো?বিয়ের
জন্য একদম পাগল হয়ে গেছিস।
জান্নাতঃকারণ বিয়ে করলে এই শুয়োরটা
আমাকে ছেরে কোথাও যাবে না।
আমিঃভালোবাসার মানুষকে বিশ্বাস করতে
শেখো প্রিয়।
আম্মুঃনিলয় ঠিকই বলছে।দুজন তো এক
জায়গাতেই থাকবি।আর মাত্র এক বছর,
তারপর বিয়ে করবি।যদি বিয়ের পর তোর
পরতে ইচ্ছা করে তখন নতুন বাসায় থেকে
পড়াশোনা করবি।ওর আব্বুর থেকে শুনেছি
নতুন বাসা থেকে কিছুদূর যাবার পর নাকি
একটা সুন্দর ইউনিভারসিটি কলেজ আছে।
বুঝতে পারছিস আমার কথা?
জান্নাতঃহুম
আম্মুঃওকে এখন খেতে চল,সবাই আমাদের
জন্য বসে আছে।
জান্নাতঃঠিক আছে চলো,তবে কাল সবাইকে
বাসায় যেতে হবে।
আম্মুঃকেনো?
জান্নাতঃপরশুদিন সাদিয়ার বিয়ে।
আম্মুঃআমার তো মাথায় একদমই ছিলো না।
তোর মা আমাকে কল করে বলছিলো।
জান্নাতঃতাহলে কাল চলো যাই।
আমিঃকিন্তু আম্মু নানু যে বলল..!
জান্নাতঃকি?
আম্মুঃপরশু তোর নানুর বাসাউ যেতে হবে।
আমাদের নাকি কাছে পেয়ে নতুন করে বরণ
করে নিবে।
জান্নাতঃতাহলে যাবে না বিয়েতে?
আম্মুঃনারে মা,তবে তুই নিলয় আর নিলুকে
সাথে নিয়ে যাস।
জান্নাতঃনিলু আর মাহিকে নিয়ে যাবো।
আমিঃআমি কি দোষ করলাম?
জান্নাতঃবিয়েতে গেলে না জানি তুই কি
করবি।তাই তোর যাওয়া লাগতো না।
আমিঃদেখলে আম্মু ও আমাকে বিশ্বাস করে
না।সারাজীবন আমার সাথে থাকবে কিভাবে
জান্নাতঃআমি মানিয়ে নেবো।
আম্মুঃআচ্ছা অনেক হয়েছে,এবার চল।
জান্নাতঃখাইয়ে দিবে ওকে?
আম্মুঃহ্যা দেবো,উঠ এখন।
এবার আম্মুর জড়িয়ে ধরেই রুমের বাইরে
আসলো।আম্মু আর জান্নাতকে দেখে সবাই
হাসছিলো তবে এসে পাগলিটার কিছুই যায়
আসে না।আম্মু প্রথমে জান্নাতকে খাইয়ে
দিয়ে নিজে খেতে শুরু করলো।জান্নাতের
চোখের দিকে আমি কখনোই বেশিক্ষণ
তাকিয়ে থাকতে পারিনা।একটা মায়া খুব
করে টানে ওর কাছে।যখন ওর মন খারাপ
থাকে তখন ওর চোখের দিকে তাকালে
অল্পতেই আমার নিজেরও মন খারাপ হয়ে
যায়।জানিনা এটা কেনো হয়,তবে অনেক
ভালোবাসি পাগলিটাকে।
°°°°°°°°°°দেড় বছর পর°°°°°°°°°°°
নতুন বাসায় দুমাস যাবৎ উঠেছি,প্রথম কিছু
দিন এলাকা এবং এলাকার মানুষজনদের
সাথে খাপ খাওয়াতে কষ্ট হলেও এখন পুরো-
পুরি নিজেদের নতুন পরিবেশে খাপ খাইয়ে
নিতে পেরেছি।এলাকার মানুষজনও অনেক
বেশিই মিশুক প্রকৃতির।অনেক সাহায্য
করেছে আমাদের।আর পড়াশোনা…!সেটা
৬ মাস আগেই শেষ হয়েছে।লাস্ট সেমিস্টারে
এক্সাম দিয়ে বন্ধুদের সাথে অনেক বেশিই
আনন্দ মজা করছিলাম।অনেক ঘুরাঘুরিও
করেছি।তবে এই বাসায় উঠে আব্বুর সাথে
নিয়মিত অফিসে যাওয়া আসা করি।যদিও
সব কাজ আব্বু নিজেই করে,সেখানে আমার
কাজ শুধুমাত্র উপস্থিত হওয়া। সে যায় হোক,
এখন জান্নাতের ফ্যামিলির সাথে আমরা
সবাই আমাদের বাসায় বসে আছি।বিয়ের
জন্য দিন তারিখ ঠিক করতে এসেছে।সবার
মাঝে অনেক কথাবার্তা বলা শেষ হয়ে বিয়ের
দিন ঠিক হলো,সামনের রবিবার মানে ২৩
তারিখ আরকি।
*********বিয়ের দিন*********
আমাদের বাসায় জান্নাতদের বাসার মতো
তেমন বড় করে আয়োজন করা হয়নি।তবে
যেটুকু করা হয়েছে সেটা মানানসই।আজ
বন্ধুরা সবাই এক হয়েছি।সবাই ছাদে বসে
নিজেদের মনের শখে সিগারেট ফুঁকছি
তখন রাফির ফোনে কল আসলো।
রাফিঃহ্যা বলো
—…….
রাফিঃছাদে আছি সবাই
—……….
রাফিঃহ্যা আছে
—………..
রাফিঃঠিক আছে নিয়ে আসছি
—…………
রাফিঃকসম এখানে শুধুমাত্র আমরা বসে
আড্ডা দিচ্ছি।
সালার কথা শুনে বুঝতে পারছিলাম ভালো
হওয়ার অভিনয় করছে।তবে আমরা কম
কিসে…!রাহুল তখন বলে উঠলো।
রাহুলঃকিরে ভাই রাফি,তুই কি বোতলটা
আমাদের দিবি না।তুই একাই সব খাচ্ছিস।
রাফিঃসালা কিসের বোতল
জয়ঃকিসের বোতল মানে,মদের বোতল।
—………
রাফিঃওরা মজা করছে,সত্যি এসব কিছুই না
আর কিছু বলার আগেই কল কেটে দিলো।
রাফি এবার আমাদের দিকে কিছু সময়
তাকিয়ে থাকার পর ওদের দুজনকে মারতে
শুরু করলো।তবে সালার মনে দয়া আছে
তাই হয়তো বিয়ের রাতে আমাকে আর
মারলো না।
রাফিঃমাহি কল দিয়ে তোকে নিচে যেতে বলল
আমিঃতোকে কেনো কল দিলো?
রাফিঃআমার হবু বউ তাই
আমিঃতোর বিয়ে করার শখ বের করবে
এখন।ওর কাছে গেলেই তুই মার খাবি।
রাফিঃআগে নিজের চিন্তা কর।
আমিঃহুম সেটা ঠিক,চল নিচে যায়
রাফিঃহ্যা চল,সালা তোদের কি মাথায় করে
নেয়া লাগবে?উঠ তাড়াতাড়ি।
এবার সবাই মিলে নিচে আসতেই মাহির
সাথে দেখা হলো।রাফির দিকে চোখ গরম
করলেও আমরা বেশ বুঝতে পেরে হাসছিলাম।
তবে তখন মাহিকে বললাম…
আমিঃবোনু পায়েল আর গোলাপটা দে।
মাহিঃএই নে,আর রুমে যা তাড়াতাড়ি। সেই
কখন থেকে রুমে বসে আছে।
আমিঃওক্কে?
বাইরে আর দাঁড়িয়ে না থেকে রুমে এসে
দরজা বন্ধ করে দিলাম।লক্ষ্য করলাম খাটের
উপর বিশাল এক ঘোমটা দিয়ে বসে আছে।
কাছে এগিয়ে গিয়ে ঘোমটা নামিয়ে দিলাম।
আমিঃআমার কাছে এমন করে থাকতে হবে না
জান্নাতঃতো কেমন করে থাকবো?
আমিঃযেমনভাবে আগে ছিলি তেমন।
জান্নাতঃএখন তুমি আমার স্বামী।
আমিঃতো?
জান্নাতঃআগে তো অনেক ফাজলামি করছি
এখন আর সেসব করা যাবে না।আর সবার
সামনে আগের মতো থাকলে সবাই হয়তো
উল্টাপাল্টা কিছু ভাববে।
আমিঃহুম বুঝলাম।
জান্নাতঃকোথায় ছিলে এতোটা সময়?
আমিঃতোমার জন্য গোলাপ আনতে গেছিলাম
জান্নাতঃমিথ্যুক
আমিঃআরে সত্যি,এই দেখো।লাল গোলাপ
দিয়ে ভালোবাসার কথা আরেকবার তোমাকে
বলতে চাই।শুনবে প্রিয় আমার কথা?
জান্নাতঃ….(মাথা নেরে হ্যা বলল)
আমিঃজানিনা আমাদের জীবনে কি লেখা
আছে।আজ থেকে কিছুদিন পর কি হবে
জানিনা।৫ বছর পরে কি হবে সেটাও জানিনা
তবে নিজেকে শূন্য থেকে সাফল্যের দুয়ারে
নিয়ে যাওয়ার জন্য একজনের হাত চাই।
আমি চাই কেউ একজন আমার পাশে থেকে
সব সময় উৎসাহ দিক।ছেড়ে যাওয়া তো
দূরে থাক,কখনো আমাদের বিচ্ছেদের কথাও
মুখে আনবে না।আমি খুব করে তোমাকে
চাই অগ্নিলা।অনেক অনেক ভালোবাসি
তোমাকে।হবে কি আমার বাবুর আম্মু?
জান্নাতঃহ্যা হবো?(কান্না করে দিয়ে)
আমিঃআরে পাগলি কান্না করছো কেন?
জান্নাতঃজানিনা
আমিঃকান্না থামাও পাগলি।
জান্নাতঃহুম
আমিঃএটা তোমার জন্য(পায়েল দিয়ে)
জান্নাতঃওয়াও,অনেক সুন্দর।
আমিঃভেবেছিলাম পছন্দ হবে না।
জান্নাতঃতোমার দেয়া সব কিছু আমার কাছে
অনেক বেশিই ভালো লাগে।
আমিঃতাই?
জান্নাতঃহুম,আচ্ছা এখন চলো ঘুমাই।সারাদিন
অনেক ধকল গেছে।
আমিঃকিন্তু একটু আগে যে বললে আমার
বাবুর আম্মু হবে।
জান্নাতঃযাও পাগল
আমিঃহবে না আমার বাবু আম্মু?
জান্নাতঃ…?(কিছু না বলে হাসলো)
বুঝতে পারলাম জান্নাত আমাকে কি বলতে
চাইছে।রুমের লাইট বন্ধ করে দুজন মগ্ন
হলাম এক গভীর ভালোবাসার সমুদ্রে।সব
শেষে জান্নাতের কপালে ভালোবাসার পরশ
একে দিয়ে বুকের মধ্যে জড়িয়ে নিয়ে শুয়ে
পড়লাম।জীবনের নতুন এক অধ্যায় শুরু
হলো নিলয় জান্নাতের।যেখানে কষ্ট ছাড়া
সবই আছে।নিজেদের মধ্যে তুমুলঝগড়া
শুরু হলেও কেউ কখনো ছেড়ে যাবার কথা
বলবে না।সারাদিন কি হবে তাদের জানা নেই
তবে দিন শেষে দুজনে নিজেদের মাঝে
সুখ ভাগাভাগি করে নিবে।আর এই হ্যাপী
এন্ডিং-এর সাথেই গল্পটা শেষ।?
______________সমাপ্ত_________________
গল্পটা কেমন হয়েছে জানাতে ভুলবেন না।
যদি ভালো না লাগে তাহলে বকা দিতে পারেন?
আপনাদের মতামতই আমাদের অনুপ্রেরণা
করে নতুন করে লেখার জন্য।ধন্যবাদ পাশে
থাকার জন্য?❤