Ex গার্লফ্রেন্ড
পর্বঃ১৫
#আবির হাসান নিলয়
আমিঃতোর আব্বু আম্মুর এমন কাহিনী দেখে
আমার অনেক হাসি পাচ্ছিলো,কিন্তু তুই যদি
আমার কথা সিরিয়াসলি নিস তাহলে আমি
কি করবো… ?
জান্নাতঃহো তুই তো এসব মজা করে বলছিস
তাই না..?আমি মনে হয় বাচ্চা,কিছুই বুঝি না।
আমিঃআচ্ছা আমি সরি
জান্নাতঃতোর সরি তোর কাছেই রাখ,আর
কখনো আমার সামনে আসবি না।
আমিঃআমার সাথে রুমে চল
জান্নাতঃকোনো দরকার নাই,আমি এখনি
চলে যাচ্ছি।
আমিঃআরে দূর চল
জান্নাতকে ধরে রুমে নিয়ে এসে রুম বন্ধ
করে দিলাম।
আমিঃসরি বললাম তো,,তবুও এমন করার
কি আছে শুনি?
জান্নাতঃতুই আমার আব্বু আম্মুর ব্যাপারে
উল্টাপাল্টা বলছিস।
আমিঃকিছু সময় আগেও তো তুই তোর
আব্বুকে দেখতে পারছিলি না।
জান্নাতঃতবুও তো উনি আমার বাবা
আমিঃআরে রাখ তোর বাবা,বাল তোদের
এমন কেমিস্ট্রি দেখে নিজেই পাগল হয়ে
যাচ্ছি।তোকে খুশি করার জন্য তোর আব্বুর
নামে বদনাম করলে সেটা আমার দোষ।
আবার যদি তোর সামনে উনার সুনামও করি
তবুও তোর কাছে ভালো না।আরে আমি
করবোটা কি?
জান্নাতঃছেরে দে আমাকে
আমিঃমানে
জান্নাতঃমানে আমাদের সম্পর্ক সব শেষ
করে দেয়া উচিৎ। কেউ কখনো ভুলেও কারো
সাথে যোগাযোগ করতে পারবে না।
আমিঃএই সামান্য ব্যাপার নিয়ে এসব?
জান্নাতঃতোর কাছে এসব সামান্য মনে হলেও
আমার কাছে মোটেও এসব সামান্য নয়।
আমিঃতো কি করতে হবে আমাকে?তোর
পা ধরে ক্ষমা চাইবো?
জান্নাতঃসেটার কোনো দরকার নেই।আমি
চাইনা আমার ফ্যামিলির জন্য তোর কোনো
সমস্যা হোক।
আবার সেই একই কথা।এই পাগল ফ্যামিলির
কাউকে কিছু বললে সেটাই সবাই মনে রাখে।
কিন্তু সারাজীবন ভালো করে গেলেও সেটার
কোনো প্রতিদান থাকবে না।
আমিঃদেখ তোকে ছাড়া আমার থাকা সম্ভব
না।তোর সাথে যতোই ঝগড়া করি তবুও
তো তোকে ভালোবাসি।
জান্নাতঃকোনো দরকার নেই।
আমিঃমেজাজ খারাপ করবি না,সামান্য এই
বিষয় নিয়ে এমন করার কি আছে?
জান্নাতঃছাড়তে বলছি আমাকে।ছেড়ে দে
তাই কেউ কিছু বলবে না।
আমিঃঠাসসস
(কষে দুটো মারলাম)
জান্নাতঃ(কিছু না বলে গালে হাত দিলো।)
আমিঃছাড়তে হবে তাই না,যা ছেড়ে দিলাম।
আর কখনো তোর কিংবা তোর ফ্যামিলির
সামনে যাবো না।
জান্নাতঃ….(চুপ করে আছে)
আমিঃদাড়িয়ে আছিস কেনো?যা এখান থেকে
জান্নাতঃ……..(তবুও চুপ করে আছে)
অনেক বেশি রাগ হচ্ছিলো।নিজেকে কন্ট্রোল
করার কোনো মাধ্যম খুঁজে পাচ্ছিলাম না।
হাত ধরে বাসার বাইরে নিয়ে এসে ধাক্কা দিয়ে
তাড়িয়ে দিলাম।নিজেকে সামলাতে না পেরে
জান্নাত রাস্তায় পড়ে গেলো।তবে এখন সেটার
প্রতি আমার কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই।দাঁড়িয়ে না
থেকে বাসার ভিতরে এসে দরজা বন্ধ করে
দিলাম।
আম্মুঃঠাসস,জানিস মেয়েটা এমন তবুও
ওর সাথে খারাপ ব্যাবহার করার কি আছে?
আমিঃআমাকে না মেরে ওকে মারো।কি
করিনি আমি?সব কিছু করেছি ওর জন্য।
তবুও সব সময় উল্টাপাল্টা কথা বলবে।
আম্মুঃতাই বলে তুই ওর সাথে এমন ব্যবহার
করবি?এসব যদি ওর ফ্যামিলি জানে তাহলে
কি ভাববে বুঝিস কিছু?
আমিঃএতো চিন্তা হলে নিজের কোলে নিয়ে
বসে থাকো।
আম্মুঃতোকে আমি…?
আব্বুঃআস্তে,আর তুই রুমে যা
আর কোনো কথা না বলে রুমে চলে আসলাম।
মাথাটা পুরো ব্যথা করছে এসব ঘটনা সহ্য
করতে করতে।সকাল থেকে এখনো কিছু
খাওয়া হয়নি।ঘুমাতে চাইলেও ঘুম ধরবে না,
তাই শুয়ে শুয়ে ফোন চালাতে লাগলাম।
*********জান্নাতের কথা*********
নিলয় বাসা থেকে বের করে ফেলে দেয়ার
পর নিলয় বাসায় চলে যাওয়ার পর রাস্তা
থেকে উঠলো।পড়ে যাওয়ার কারণে বাম
হাতের কুনইয়ে বেশ ভালোই আঘাত পেয়েছে
অনেকটা রক্ত বের হচ্ছিলো।নিলয়ের এমন
ব্যবহার দেখে অনেক কান্না পাচ্ছিলো তবে
এখন কান্না করলে চলবে না।সেখানে দাঁড়িয়ে
না থেকে বাসার দিকে যেতে শুরু করলো।
বাসায় দারোয়ান ছাড়া আর কেউ নাই।
জান্নাতকে এমন দেখে দৌড়ে কাছে আসলো।
—এসব কি করে হলো মা?
জান্নাতঃএকটা রিক্সার সাথে লেগে হয়েছে
—আচ্ছা তুমি বাসায় চলো আগে,আমি
স্যারদের কল করে দিচ্ছি।
জান্নাতঃসেটার দরকার নেই কাকু,আমি
নিজেই পরিষ্কার করে নেবো।আর এসব তুমি
আব্বু আম্মু কাউকে বলো না।
—কিন্তু উনারা যদি পরে জানতে পারে।তখন
সবাই আমাকে বকা দিবে।
জান্নাতঃকিছুই বলবে না।
আর কোনো কথা না বাড়িয়ে বাসার ভিতরে
এসে ফ্রেস হয়ে ড্রেস চেঞ্জ করে নিলো।এখন
রক্ত বের হওয়া বন্ধ হয়েছে।তাই বাইডেন
দিয়ে ক্ষত জায়গা পরিষ্কার করে সেখানে
ক্রিম লাগিয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করলো।
বিকেলবেলা রিহানের ডাক শুনে জান্নাতের
ঘুম ভাঙে।জান্নাতের ঠোঁটে ওখানে কালো
দেখে রিহান জিজ্ঞাস করে…
রিহানঃআপু তোমার কি হয়েছে?
জান্নাতঃআমার কি হবে?
রিহানঃদেখে মনে হচ্ছে তোমার মুখে কেউ
আঘাত করেছে।অনেক কালো হয়ে আছে।
জান্নাতঃপরে গিয়ে এমন হয়েছে
রিহানঃওহ
জান্নাতঃআম্মু হাসপাতালেই আছে?
রিহানঃনা বাসায় নিয়ে আসছে
জান্নাতঃকখন?
রিহানঃকিছুক্ষণ আগে,আম্মু তোমার কথা
জিজ্ঞাস করলো।তাই তোমাকে ডাকার জন্য
এখানে আসছি।
জান্নাতঃওহ,খাইছিস কিছু?
রিহানঃহুম
জান্নাতঃতুই যা আমি আসছি
রিহানঃঠিক আছে।
রিহান চলে যাওয়ার পর জান্নাত সেভাবেই
কিছু সময় শুয়ে রইলো।অলসতা ভর করেছে
যার জন্য উঠতে কেমন একটা ভালো লাগছে
না।তবুও নিজের মায়ের জন্য উঠতেই হবে।
আর শুয়ে না থেকে উঠে নিজের বাবা মায়ের
রুমে গেলো।সেখানে যাওয়ার পর জান্নাত
দেখলো,আঙ্কেল আন্টিকে খাবার খাইয়ে
দিচ্ছে।এমনটা দেখে জান্নাতের বেশ ভালোই
লাগছিলো তাই চুপ করে দাঁড়িয়ে দেখতে
লাগলো তার আব্বু আম্মুর ভালোবাসা।কিন্তু
তখন রিহান বলে উঠলো….
রিহানঃঐযে আপু আসছে
আন্টিঃআয় এদিকে আয়
জান্নাতঃহুম
আন্টিঃকি হয়েছে?
জান্নাতঃকই কিছু না তো
আন্টিঃমন মরা লাগছে অনেক
জান্নাতঃতোমাকে নিয়ে টেনশন করছিলাম।
আন্টিঃএখন আমি ঠিক আছি।
আঙ্কেলঃআমি সরি মা,আসলে কাল রাতে
কি থেলে কি হয়ে গেলো।
জান্নাতঃবাদ দাও এসব,তোমরা হ্যাপী আছো
এটাই অনেক।সব ভুলে গিয়ে নতুন করে সব
শুরু করো।
আঙ্কেলঃহুম
আন্টিঃখেয়েছিস কিছু?
জান্নাতঃসকালে খেয়েছিলাম,এখন আর
খেতে ভালো লাগছে না।
আন্টিঃকিছু খেয়ে নে।
জান্নাতঃএখন আর খাবো না।
আন্টিঃএখন কি নিলয়দের বাসায় যাবি?
জান্নাতঃওখানে কেনো যাব?
আন্টিঃএমনি ভাবলাম হয়তো ওখানে যাবি
জান্নাতঃওসবের কথা বাদ দাও আম্মু,আমি
আর ওইসব কিছু ভাবতে চাই না।
আঙ্কেলঃকিছু হয়েছে আমার জন্য?
জান্নাতঃকি হবে?দেখো আব্বু ওটা আমার
শ্বশুর বাড়ি না,তাই সেসব বাদ দাও।
আঙ্কেলঃবিয়ে দিয়ে দেয়?কি বলো তুমি
আন্টিঃহ্যা সেটা করলে মেয়ে খুশিই হবে
জান্নাতঃঘোড়ার ডিম বুঝো তোমরা।ঐ তুই
নিজেও(রিহান) রুমে যা।
রিহানঃওকে
জান্নাতঃগেলাম আমি
রুম থেকে বের হয়ে জান্নাত ছাদে চলে গেলো
অনেকদিন পর ছাদে এসেছে।এখন আর
আগের মতো তেমন ছাদেও আসে না।যদিও
কোনো কারণ নেই ছাদে আসার,তবে আগে
বিকেল হতেই একবার ছাদে আসতো।সে
যাই হোক,কিছু সময় ছাদে থাকার পর
সাদিয়া আসলো।জান্নাত এক নজর দেখে
কিছু না বলে আগের মতোই রইলো।
সাদিয়াঃমন খারাপ?
জান্নাতঃবলছি একবারও?
সাদিয়াঃদেখে মনে হচ্ছে মন খারাপ
জান্নাতঃআর তোকে দেখে মনে হচ্ছে তোর
পেটে বাচ্চা আছে,তুই প্রেগন্যান্ট।
সাদিয়াঃনাউযুবিল্লাহ,কিসব বলিস?
জান্নাতঃতোকে দেখে আমার মনে হয়েছে।
সাদিয়াঃআচ্ছা সরি,এখন বল কি হয়ছে?
জান্নাতঃকি হবে?
সাদিয়াঃএকা একা মন খারাপ করে ছাদে
কি করছিস?
জান্নাতঃছাদে কি একা আসা যাবে না?
সাদিয়াঃরাগ করছিস কেনো?
জান্নাতঃআমি একবারের জন্য বলেছি আমি
রাগ করছি?
সাদিয়াঃএমন করে কথা বলছিস কেনো?
জান্নাতঃবাল তুই যা এখানে থেকে
সাদিয়াঃকেনো বাবু?আমি থাকলে কি হবে?
জান্নাতঃলাথি খাওয়ার শখ হয়েছে?
সাদিয়াঃনাগো বান্ধুবী(পেছন থেকে ধরে)
জান্নাতঃএমনেই গরম লাগছে আর তুই এসে
জড়াই ধরে আছোস,ছাড় কুত্তী।
সাদিয়াঃআচ্ছা ছাড়লাম।কিন্তু আমাকে কি
বলা যাবে না?
জান্নাতঃএমনিই মন খারাপ,আম্মুর এমন
অবস্থা।আর সকালে রিক্সার সাথে লেগে
পরে গেছিলাম।
সাদিয়াঃওহ,কফি খাবি?
জান্নাতঃএখন বাইরে যাবো না
সাদিয়াঃবাইরে না,বানিয়ে নিয়ে আসি আমি
জান্নাতঃকাহিনী কি বলতো?
সাদিয়াঃকিছুই না,তুই থাক আমি বানিয়ে
নিয়ে আসি।
জান্নাতঃযাও মাদার তেরেসা,কল্যাণ করো
সাদিয়া দাঁড়িয়ে না থেকে হাসতে হাসতে
নিচে চলে গেলো।তবে জান্নাতের মনে কেমন
একটা খটকা লাগছিলো সাদিয়ার জন্য।
হঠাৎ করে মেয়ে এতো ভালো কিভাবে হলো।
তবে জান্নাত এসব কিছু না ভেবে ছাদের
উপর হাটাহাটি করতে করতে সাদিয়া কফি
নিয়ে আসলো।দুজন কথা বলার পাশাপাশি
নিজেদের কফি খেতে লাগলো।
********নিলয়ের কথা********
সারাদিন বাসায় থাকতে ভালো লাগছিলো
না।তাই সন্ধ্যার পর সোজা বিদ্যুৎ এর টং
এর দোকানে আসলাম।
বিদ্যুৎঃকি খবর?
আমিঃআর খবর
বিদ্যুৎঃআজ একা কি মনে করে?
আমিঃসবাই নিজদের নিয়ে ব্যস্ত,তাই আমি
নিজেই আসলাম।
বিদ্যুৎঃচা নে
আমিঃহুম(চা নিলাম)
বিদ্যুৎঃমন খারাপ?
আমিঃখুব একটা না।তাই বাসা থেকে হয়েছি
বিদ্যুৎঃমন খারাপ থাকলে খোলা হাওয়া
লাগতে দেয়া উচিৎ।
আমিঃতোর এখানে হাওয়া না পেলেও গরম
চা ঠিকই পাওয়া যায়।
বিদ্যুৎঃহাহাহা
চা শেষ করে একটা সিগারেট আর ম্যাচ নিয়ে
সেখান থেকে চলে আসলাম।সবার সামনে
কখনো সিগারেট খাইনি,তাই সব সময়
লুকিয়েই খেতে হয়।যদিও তেমন একটা খাই
না।তবে যখন ডিপ্রেশনে যাওয়ার উপকূল
তখন টুকটাক খাই।বাসায় আসার পথে
অন্ধকারে সিগারেট টেনে শেষ করে বাসায়
চলে আসলাম।
বাসায় এসে দেখলাম সবাই বসে ফোনে কথা
বলছে।আমাকে দেখে মাহি বলল….
মাহিঃআম্মু তোর সাথে কথা বলবে আয়।
আমিঃকেনো?
কিছু না বলে আমার কাছে ফোন দিলো।
খালাম্মাঃকেমন আছিস?ভুলেই গেছিস হু
আমিঃতোমাকে কি ভুলতে পাড়ি?
খালাম্মাঃএসে ঘুরে যা
আমিঃহুম যাবো পরে
খালাম্মাঃপরে কেনো?এখন এক্সাম শেষ।
আর বাসায় কোনো কাজ নেই।তাহলে এখন
ঘুরে যা।আপু দুলাভাই থেকে যাবে,তুই আর
মাহি চলে যাবি।
আমিঃসেটা ভালো হবে।
খালাম্মাঃতাহলে পরশুদিন চলে আয়
আমিঃঠিক আছে আসবো
খালাম্মাঃসত্যি আসবি তো?
আমিঃহ্যা যাবো
খালাম্মাঃআপুর কাছে ফোন দে
আমিঃহুম
দুই বোনের কথা বলা শেষ করে সবাই মিলে
রাতের খাবার খেয়ে ঘুমাতে গেলাম।
পরেরদিন….
বাসায় তেমন ভালো লাগছিলো না,আর
জান্নাতের সাথেও কথা হয় না.।তাই বন্ধুদের
কল দিয়ে মাঠে আসার কথা বললাম।সেখানে
সবাই মিলে আড্ডা দিয়ে দিনটা কোনোভাবে
পাড় করলাম সাথে এটাও বললাম আমি
খালাম্মার বাসায় যাবো।আসতে কিছুদিন
দেরি হতে পাড়ে।বন্ধুরাও না করলো না।কারণ
ওরা আমার সব খবর জানে।জান্নাতের সাথে
কি হয়েছে না হয়েছে সব ওদের জানা।তাই
ওরা নিজেরাও আমাকে যাওয়ার জন্য বাহবা
দিলো।
রাতে সবার সাথে আমি নিজেও আমার
দুএকটা প্যান্ট শার্ট ব্যাগে তুলে নিলাম।এরপর
রাতে সবাই খাবার খাওয়ার পাশাপাশি কখন
উঠে রেডি হতে হবে সেটা আব্বু বলে দিলো।
চলবে………….
(হয়তো এমন কাহিনী ভালো লাগছে না,তবে
গল্পটার হ্যাপী সমাপ্তির জন্য এমন ছোট ছোট
কাহিনী সাজানো অনেক দরকার)