#Different_Love
গল্পছোঁয়া
27
আয়মান আমানকে কোলে নিয়ে গালে কপালে চুমু দিলো।
— বাবাই থুমি এসেথো,কেমন আচো বাবাই?? (কিসি দিয়ে)
— ভালো ছিলাম না,এখন আমার কলিজা টাকে দেখে অনেক ভালো লাগছে।
আমান আয়মানের গলা জড়িয়ে কাঁধে মাথা রাখলো।
— মাম্মাম দেকো,বাবাই আসচে।
আরিয়ার হেলদোল নেই, সে আগের মতই স্ট্যাচু হয়ে আয়মানের দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে,আয়মান বিষয়টা ধরতে পারলো।
— আমার লক্ষি সোনা,দেখে আসোতো তোমার অহনা আন্টি কি করছে,আন্টিকে বলবেনা আমি এসেছি।
— হুম,বববোতো।আমাল বাবাই আসিচে,আন্তিকে বববো।
আয়মান আমানকে কোল থেকে নামিয়ে দিতেই আমান দৌড়ে অহনার রুমের দিকে গেলো।আয়মান আরিয়ার হাত ধরে হ্যাঁচকা টান দিতেই আরিয়া হুরমুরিয়ে আয়মানের বুকে এসে পরলো,ঘোর কাটলো আরিয়ার।
— কি ম্যাডাম,এভাবে হা করে তাকিয়ে ছিলেন কেনো হুম।
— ততুততুমিকি সত্যিই এসেছো ননাকি আআমি স্বপ্ন দেখছি,চিমটি কাটোতো
— ওহো মিসেস আয়মান চৌধুরী,চিমটি কেন কাটবো বলুন।অন্যভাবে বুঝিয়ে দিচ্ছি
— মমানে ক…
আরিয়ার ঠোঁট আয়মানের ঠোঁটের দখলে,এবার আরিয়া বুঝতে পারলো সবই সত্যি ভ্রম নয় তার।
ওর সাথে করা আয়মানের একয়দিনের আচরণ মনে পরতেই আরিয়া নিজেকে ছাড়াতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো,কিন্তু আয়মান ছারছেনা।
কিছুক্ষণ পরে আয়মান আরিয়ার ঠোঁট ছেড়ে দিতেই আরিয়া আয়মান কে ধাক্কা দিয়ে দূরে সরিয়ে জোরেজোরে শ্বাস নিতে লাগলো।
— হোয়াট দ্য হেল,কি করছেনটা কি আপনি।
কে আপনি,আর আমার বেডরুমে কি করছেন হ্যাঁ।আমাকে টাচ করছেন কোন সাহসে,আপনার রুহি আপনার জন্য ওয়েট করছেনা,যান গো।জাস্ট লিভ,গেট আউট ফ্রম হিয়ার (চিল্লিয়ে)
— আরিয়া কাম ডাউন,আগে শোনো আমার কথা।
— আমি কিছু শুনতে চাইনা,কাপল ড্যান্স করুন যান
আমানের মুখে আয়মানের কথা শুনে অহনাও কৌতুহল নিয়ে এদিকে এসেছিলো,এসেই দেখতে ও শুনতে পেলো আরিয়ার চিল্লানি আর আয়মানকে।
ব্যাপার যা-ই হোক,পরে শোনা যাবে।আপাতত ওদের প্রাইভেসির প্রয়োজন।
আয়মানের চোখ দরজায় দাঁড়ানো অহনার দিকে যেতেই অহনা মুচকি হেসে চোখের ইশারায় বেস্ট ওফ লাক বলে আমানকে নিয়ে চলে গেলো।ভাগ্যিস আয়মানের সামনে দরজার দিক করে আরিয়া দাঁড়িয়ে ছিল,তাই এই লুকে আয়মান কে দেখতে পায়নি অহনা।
আয়নার গিয়ে রুমের দরজা লক করে দিলল,আরিয়া এখনও চেচামেচি করছেই।
আয়মান গিয়ে আরিয়ার কাঁধ ধরে ঝাকিয়ে নিজের সাথে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।
— আই এম সরি আরিয়া,আই এম এক্সট্রিমলি সরি।প্লিজ আমাকে এক্সপ্লেইন করার চান্স দাও,সবটা শুনো আগে।
— আমি কিছুই শুনতে চাইনা,অনেক শুনেছি।
— আরিয়া (ধমক দিয়ে)
কি বাচ্চামো শুরু করেছো,এক বাচ্চার মা হয়ে নিজেই যদি বাচ্চামি করো তাহলে আমান কি শিখবে।
ধমক শুনে আরিয়া হাতপা ছোরাছোরি বন্ধ করে আয়মান কে শক্ত করে জড়িয়ে স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে থাকলো,কারণ আয়মানের মতো বডি বিল্ডারের থেকে নিজেকে ছাড়ানো ইম্পসিবল,তারওপর ধমক।
আরিয়া ১ম থেকেই আয়মানের ধমকানো তে ভয় পায়।
আয়মান নিজের বুক থেকে আরিয়াকে সরিয়ে সোজা করে দাঁড় করিয়ে ওর দুঁকাধে হাত রেখে আরিয়ার চোখের দিকে তাকিয়ে বললো..
— লুক এ্যাট মি আরিয়া,আমার চোখের দিকে তাকাও।
আরিয়া এখনো মাথা নিচু করে আছে।
— হোয়াট হ্যাপেনস,লুক এ্যাট মি ফাস্ট (ধমকে)
আরিয়া এবার কাঁপা কাঁপা চোখে আয়মানের চোখের দিকে তাকিয়ে দেখলো আয়মান তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ওর দিকে, এই চোখ যেন কতকিছু বলতে চায়।এতো প্রখর দৃষ্টি সহ্য করার ক্ষমতা আরিয়ার নেই,সে আবার চোখ নামিয়ে নিতে গেলে আয়মান ইশারায় বারণ করলো।
আয়মান আরিয়াকে কোলে করে নিয়ে গিয়ে বেডে বসালো,তারপর আরিয়ার কোলে মাথা রেখে বললো…
— চুলে বিলি কেটে দাওতো,মাথা ব্যথা করছে।
আরিয়া চোখ বড়বড় করে তাকালেই আয়মান আবার চোখ দিয়ে ইশারা করলো চুলে বিলি কেটে দিতে।
— কি হলো দাও
আরিয়া ধীরেধীরে চুলে বিলি কেটে দিতে শুরু করলে আয়মান জোরেজোরে ২বার নিঃশ্বাস ছেড়ে চোখ বুজে এক-এক করে সবই বলতে শুরু করলো।
সবটা শুনে আরিয়া নিজেও এক প্রকার শকড,আয়মানের ২বছর কুমায় থাকার কথা শুনে আরিয়ার চোখ থেকে গড়িয়ে পরছে অশ্রুধারা।অশ্রু ফোটা আয়মানের কপালে পরতেই আয়মান চোখ খুলে দেখলো আরিয়া কান্না করছে।
আয়মান দ্রুত আরিয়ার কোল থেকে মাথা সরিয়ে উঠে বসে আরিয়া কে বুকে জড়িয়ে নিলো।
— এতকিছু হয়ে গেলো আর তুমি….
— কি আশ্চর্য,বাচ্চাদের মতো কান্না করছো কেন হুম।আমিতো জীবিত আছি আর দেখো তোমার কাছেই আছি একদম সুস্থ ভাবে।
— এখনও কি কেইস সল্ভ হয়নি
মানে ওই রুহির
— হয়েছে,তাইতো আজ আমি তোমার কাছে।ডিপার্টমেন্টে জইন করেছি গতকাল,দেন টিমের সবাই মিলে কেইসের ডিএন করে ফেললাম।গতরাত দেড় টা অবধি মিশনে ছিলাম,এট লাস্ট মিশন সাকসেসফুল।
রুহির যাবতজীবন কারাদণ্ড হতে পারে,সামনে সপ্তাহে রায় দিবে।
— ওওও। (আয়মান কে আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে)
— একটা কথা বলবো
— কি
— ভালোবাসি তোমাকে আরিয়া,আই লাভ ইউ।
— আই লা…নো নো।আমি তোমাকে ভালোবাসি না হুম,সরো ছারোতো আমাকে (নিজেকে ছারানোর চেষ্টা করে)
— আবার কি হলো হুম (নিজের সাথে চেপে ধরে)
— তুমি আমাকে ছেড়ে চলে গেছিলে কেন,তাও না বলে।কোথায় না খুঁজেছি তোমাকে, কেউ খোঁজ দিতে পারেনি।
যেদিন ১ম জানতে পারলাম আমাদের সন্তান আসতে চলেছে ওইদিন রোজ ভাইয়া বললো তুমি কোথায় আছো।কিন্তু ততদিনে অনেক দেরি হয়ে গেছিলো।
এতগুলো বছর কতকিছু ফেইস করতে হয়েছে আমাকে,এনি আইডিয়া?
— আই এম সরি আরিয়া,আমি জানতাম আমায় সেই মিশনে যেতে হবে।
বেঁচে ফিরতে পারবো কিনা,কোনো নিশ্চয়তা ছিলোনা।তাইতো আমার সাথে তোমাকে জড়াতে চাইনি, কিন্তু গ্রামে গিয়ে হুট করে…..সে যাইহোক, আমিও জানতাম না ওইদিন আমার ফ্লাইট। হুট করেই সব ফাইনাল হয়ে গেলো।
আমি তোমাকে জানাইন তোমার ভালোর জন্য,তুমি জানলো কখনোই যেতে দিতে না আমাকে।
আর আমিও ইচ্ছে করেই তোমার সাথে কন্টাক্ট অফ করে দিয়েছিলাম। আমি চেয়েছিলাম তুমি নতুন করে নিজের জীবন টা গুছিয়ে নাও,কারণ আমিতো বাঁচবো কিনা সেটাই জানিনা।
কিন্তু আল্লাহর রহমতে আর তোমার ভালোবাসার টানে ঠিকই ফিরে এসেছি দেখো,মৃত্যুর মুখ থেকে বেঁচে ফিরেছি।
—আমিতো তোমাকে সেদিনই কথা দিয়েছিলাম, তুমি ছাড়া আমার জীবনে ২য় কোনো পুরুষ আসবে না।আমি সারাজীবন অপেক্ষা করবো তোমার জন্য।তুমি নিশ্চয়ই ভেবেছিলে আমি আবেগ নিয়ে কথা বলছি,কিন্তু না সেটা আমার আবেগ ছিলোনা।দেখো আমি আমার কথা রেখেছি।
আমাদের সন্তান কে একাই বড় করেছি,তোমার আদর্শে।
— আমি আমার ভুল স্বীকার করছি আরিয়া,আর কখনো তোমাকে ছেড়ে যাবোনা।এরকম লাইফরিস্ক নিয়ে কোনো মিশনে যাবোনা,আমি আমাদের ছোট্ট সংসার টা ভালোবাসা আর নিষ্ঠা দিয়ে সাজাতে চাই। যেখানে থাকবো আমি, আমার বাবুর আম্মু আর আমাদের রাজপুত্র।ভবিষ্যতে রাজকুমারীও আসবে (চোখ টিপ দিয়ে)
আরিয়া লজ্জা পেয়ে আয়মানের বুকে মুখ গুজলো,আয়মান কিছু বলতে যাবে তখনই দরজায় নক পড়লো।আমান বাবাই বাবাই বলে দরজা ধাক্কাচ্ছে।
আরিয়া দ্রুত আয়মান কে ছেড়ে দূরত্ব বজায় রেখে বললো। আয়মান উঠে কাবার্ড থেকে টাউজার আর টিশার্ট নিয়ে চেঞ্জ করে নিলো।
তারপর গিয়ে দরজা খুলতেই আমান একগাল হাসি দিয়ে আয়মানের দিকে তাকিয়ে দুহাত বাড়িয়ে দিলো কোলে ওঠার জন্য।আয়মান মুচকি হেসে আমানকে কোলে নিয়ে গালে চুমু দিলো,আমানও আয়মান গালে কিসি দিলো।
— বাবাই,থুমি এতা পরেতো আমাকে বলোনি কিনো।আমিও পববো
— তাই
— উম,দানো বাবাই মাম্মাম থোমাল থব ডেরেস চত্ন কলে রেকেতে।
আমি থোটো তেকেই এগুলো দেকতি,আর আমালো থব ডেরেস তোমাল মতো
আয়মান ভ্রুকুচকে আরিয়ার দিকে তাকালে আরিয়া মেকি হাসি দিয়ে মুখ ঘুরিয়ে নিলো।
— তাই নাকি আরিয়া
— ওই আরকি,আমি তোমার কোনোকিছুই নষ্ট হতে দিইনি।
দেখো,যেভাবে রেখে গেছিলে,রুমটা এখনও ওরকমি আছে।
— হুম তাইতো দেখছি,আর আগের মতো রাখতে গিয়ে নিজের আর আমার সোনাটার জিনিসপত্র গুলোও এই রুমে রাখোনি,এবার দয়া করিয়া ম্যাডাম নিজেদের সবকিছু এই রুমে আনার ব্যবস্থা করিবেন নাকি আমি আনিবো
— কিন্তু
— কিসের কিন্তু, এবার তো আমি এসেই গেছি তাইনা।
— ওকে।
— বাবাই,গুম ধততে
— ঘুমাবে মানে,খাওয়া হয়নি এখনও।
রুটিন অনুযায়ী ঠিক করে না খেলে বাবাইয়ের মতো হবে কি করে (আরিয়া)
— কাইচিতো,আন্তি দিম আর জুচ কাইয়ে দিতে।
— গুড বয়,আসো।ঘুম পারিয়ে দি।
— না,আমি বাবাইয়ের কাতে গুমাবো
আয়মান আমানকে বিছানায় সুয়ে দিয়ে ওর একপাশে সুয়ে পড়লো, আরেকপাশে আরিয়া সুয়ে আছে।আয়মান গান গেয়ে আমানকে ঘুম পারিয়ে দিলো।
আরিয়া গালে হাত দিয়ে আয়মানের গান শুনছে,,,
— ওভাবে কি দেখছো বাবুর আম্মু?
— কি কোই কিছুনা,ওই আরকি।ভালো গাইতে পারো তুমি।
— সেসব বাদ দাও,একটা কথা বলোতো।
তোমার বাবা-মা কি জানে,আমার সম্পর্কে, আমাদের বিয়ের ব্যাপারে।আর আমান?? ওর বিষয়ে কি বলেছো,মানে কেমনি কি??
To be continue….