Different Love পার্ট ২৬

0
1742

Story:- #Different_Love
Writer:- গল্পছোঁয়া
Part:- 26

— আমাল মায়ের নাম আরিয়া,টিক বলতিতো মাম্মাম??

কথাটা শুনেই রুমের সবাই আরিয়ার দিকে বিস্ফোরিত চোখে তাকালো,আরিয়া মাথা নিচু করে আছে।
তারপর যা হওয়ার তাই হলো,সবাই আরিয়াকে হাজারো প্রশ্নের মুখে ফেললো,আরিয়ার বাবা বুকে হাত দিয়ে বসে আছে।
২-৩ঘন্টা জেরা করার পরেও আরিয়া নিশ্চুপ,আরিয়ার মা আরিয়াকে কষে ৩টা থাপ্পড় দিলো।অহনাকেও কল করা হয়েছিলো,১ঘন্টা হচ্ছে সেও চলে এসেছে।তার মুখেও কোনো কথা নেই।
দু-বোন মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।
এরপর আরও ঘন্টাখানেকের মতো পুরো রুমজুরে পিনপিনে নিরবতা বিরাজ করলো। নিরবতা ভেঙে আরিয়ার বাবা উঠে দাঁড়িয়ে বললো,,

— তোর কোনো পছন্দের ছেলে আছে আমাদের বললে কি আমরা না করতাম,কিন্তু এটা কি করলি তুই।আমার মেয়ে হয়ে ছিছিছি।
যাইহোক,তোর হাজবেন্ড কোথায়??

— আরে ভাই থামেন তো,আদোও বিয়ে করেছে নাকি অবৈধ সেটা ভাবেন আগে।
সাড়ে ৩বছরের বাচ্চা আছে অথচ এখন অবধি কাউকে বুঝতে দেয়নি এর মানে কি? (একজন মহিলা)

—এই জন্যই বিয়ে করতে চাচ্ছিলোনা আজ বুঝলাম কারনটা (আরেকজন)

— তোমরা থামোতো মা,নিজেদের লোক হয়ে কি শুরু করলে বলোতো।
আরু,তুই বলতো দুলাভাই কোথায়।দুলাভাই কে কল কর (রিতু)

— জানিনা সে কোথায়?? (মাথা নিচু করে)

— দেখছেন,ঠিকই ধরছিলাম আমরা।কার সাথে না কার সাথে নষ্টামি করছে,চাকা শেষ তারপর ছেড়ে চলে গেছে।এইজন্যই বলি মেয়ে মানুষ কে বেশি পড়িয়ে উড়তে দিওনা,বিয়ে দিয়ে দাও।শুনেননি তো আমাদের কথা, আরে আমরাতো নিজের লোক খারাপ চাইতাম নাকি।এবার গেলোতো মানসম্মান (আরেকজন)

— ছিছিছি বাইরে মুখ দেখাবো কি করে রে,বিয়েওতো আর দেওয়া যাবেনা।
দিলেও বা ভালো ছেলে পাবোনা

— কি কামখানা করলি রে আরিয়া,তোর ভেতরে ভেতরে এতকিছু ছিল বুঝতেও পারিনি।

— বেস অনেক হয়েছে, শুনেন আমি কোনো নষ্টামি করিনি যে মানসম্মান যাবে।আমি এখনই আমার ছেলেকে নিয়ে চলে যাব,আমি এডাল্ট মেয়ে,আমি আমার এবং আমার সন্তানকে এতদিন সামলিয়েছি ইনশাআল্লাহ ভবিষ্যতেও পারবো, কাউকে দরকার নেই আমার। (আরিয়া রেগে)

আমান এতক্ষণ ভয়ে গুটিশুটি মেরে ঘরের এক কোণায় দাঁড়িয়ে ছিল,আরিয়া আমানকে কোলে নিয়ে কপালে কিসি দিয়ে বললো ❝ভয় পেওনা সোনা,আমরা কখনও এখানে আসবোনা❞ তারপর নিজ রুমে চলে গেলো ব্যাগটা নিতে।
এদিকে,,,

— দেখছেন ভাবি,চোরের মায়ের বড় গলা।

— তাইতো দেখছি,বড়ডার জন্য ছোটডারও কপাল পুরলো।এইসব কথা বাইরে গেলে কি হবে,ছিছি।সত্যি তো চাপা থাকেনা,বাষ্টো হবেই।

— থামেন আপনারা,কিছু না জেনেশুনে কি শুরু করেছেনটা কি।
আপনারা যদি এই আপুদের (আরিয়ার বান্ধবী রিতু,শাকিলা আর এশাকে দেখিয়ে) মা না হতেন আন্টিরা তাহলে আমি যে কি করতাম নিজেও জানিনা।
বারবার বলছেন আপনারা নাকি আমাদের নিজের লোক,কোথায় এইসময়ে পাশে থাকবেন তা-না করে উল্টে যা নয় তাই বলছেন।
এই বাড়িতে আমরা যারা আছি এর বাইরেতো আর কেউ এসব ঘটনা জানেনা,তাহলে বাইরে কেন যাবে এসব কথা। (অহনা)

— অহনাতো ঠিকই বলেছে না,আর আন্টিরা আপনারা কি শুরু করছেন।আমার মনে হয় সবটা শোনা উচিত (রিতু)

— তুই থাম,বড়ডার পাল্লায় পড়ে দেখছি ছোটটাও গুল্লোয় গেছে

— আমাকে কি সবটা এক্সপ্লেইন করার সুযোগ দেওয়া হবে নাকি চলে যাব (অহনা রেগে)

— থামুন সবাই, কি বলতে চাস বল।আর কি শুনা বাকি আছে শুনি (আরিয়ার মা)

অহনা আরিয়ার বিয়ে থেকে শুরু করে আয়মানের হারিয়ে যাওয়া অবধি সবটা খুলে বললো।পুরো কাহিনি শুনে সবাই স্তব্ধ হয়ে গেছে,এই অল্পবয়সী মেয়েটা আজ ৪-৫বছর ধরে এতোটা স্ট্রাগল করে যাচ্ছে কিন্তু মুখ থেকে হাসি সরেনি,কিন্তু ভেতরে আকাশসমান চাপা কষ্ট।
মহিলাগুলোও চুপ হয়ে গেছে,রিতু কিছু বলতে যাবে তখনই আরিয়া ব্যাগ আর আমানকে নিয়ে চলে আসলো,,

— আমি আর কখনও এমুখো হবোনা,বলে দিবেন আরিয়া অ্যাক্সিডেন্টে মারা গেছে, সে এখন মৃত আর লাশ বেহদিস।

আরিয়া আমানকে নিয়ে বেরিয়ে যেতে নিলেই আরিয়ার মা গিয়ে পথ আটকে দাঁড়ালো।

— যাসনা মা
নানুভাই আমার কোলে এসো (আমানের দিকে হাত বাড়িয়ে)

— থুমি পতা,মাম্মামকে মাত্তো।আমি তোমাল কাচে যাবনা

— যেতে দাও ওকে,মানসম্মান বলে একটা ব্যপার আছে,বাইরে মুখ দেখাতে পারবনা।(আরিয়ার বাবা)

আরিয়া আর কিছু না বলে ওর মায়ের পাশ কাটিয়ে চলে গেলো আর বললো..

— ভালো থেকো সবাই,আল্লাহ হাফেজ।

— আরিয়া আপু দাঁড়া,আমিও আসছি।
তোমরা নিজেদের ইগো আর সমাজ নিয়েই পরে থাকো,বাস্তবজ্ঞানি যে কবে হবে।ভালো থাকো (অহনাও বেরিয়ে গেলো)

বাসের টিকেট কেটে ওরা বাসের সিটে গিয়ে বসলো,কিছুক্ষণের মধ্যেই বাস স্টার্ট দিলো।
পুরো রাস্তা আরিয়া বিভিন্ন বিষয় নিয়ে হাসাহাসি করেছে,ওকে দেখে কেউ বলতেই পারবেনা ওর ওপর দিয়ে কতো ঝর বয়ে যাচ্ছে আর কিছুক্ষণ আগে কি হলো।
অহনা শুধু অবাক চোখে নিজের আপুকে দেখছে,সত্যিই পরিস্থিতি মানুষকে বদলে দেয়।যারা পরিস্থিতির সাথে নিজেকে মানিয়ে চলতে পারে তারাই সফল নয়তো ধ্বংস হয়ে যাবে।
এই আরিয়াই,ছিল কেমন আর এখন হয়েছে কেমন,ওর #Different_Love ওকেই #Different করে তুলেছে।
ভাবতে ভাবতে দীর্ঘশ্বাস ফেললো অহনা।

— কিরে,চুপ হয়ে গেলি যে,কি ভাবছিস? (আরিয়া)

— কি ভাববো,তোকে নিয়েই।
এতকিছু হয়ে গেলো, তুই এভাবে হাসিখুশি কিভাবে আছিস বলতো

— আমিতো জানতামই এই দিনটা একদিন না একদিন আসবেই, আগে থেকেই প্রস্তুত ছিলাম এটার জন্য তাই খারাপ লাগছে না।
খারাপ তখনই লাগে যখন মানুষ যেটা এক্সপেক্ট করেনা সেটাই হয়,আর এখানে আমিতো এক্সপেক্ট করেইছিলাম এমনটা হবে।এই-যে বাড়ি আসছিলাম,আমি জানতাম ফেরার দিন সব ফাঁস হয়ে যাবে, দেখ হয়েও গেলো।সত্যি বলবো,আমি বাড়িতে এসেছিলাম সবাইকে সবটা জানানোর জন্যই,কতদিন আর সত্যিটা লুকিয়ে রাখব বল। (মুচকি হেসে)

— কিন্তু আব্বুআম্মু তো…

— চিন্তা করিসনা, সব ঠিক হয়ে যাবে।
বাবা-মা কখনো তার সন্তানদের ওপর রাগ করতে পারেনা,যেটা করে সেটা হলো শুধুই অভিমান।নিজে যখন মা হবি তখন বুঝবি।
দেখিস এই কিছুদিনের মধ্যেই আব্বুআম্মু আমাদের কাছে চলে আসবে,আব্বুআম্মু আমানকে কতোটা ভালোবাসে জানিসইতো,আব্বুতো আমানকে মাথায় তুলে রাখতো। এখন যখন জেনেছে আমান তার নিজের নাতি,তো দেখিস একদম অভিমান করে থাকতে পারবে না।আমি চিনি আমার বাবা-মা কে।
নিজের নাতি আর মেয়েদের টানে সব অভিমান ভুলে ঠিক ছুটে চলে আসবে,শুধু অপেক্ষা কর একটু।

— আরিয়া আপু,এতো ঝামেলার মধ্যেও ঠান্ডামাথায় এতকিছু ভাবিস কি করে তুই।এতো তো ভেবে দেখিনি আমি।

— রিল্যাক্সে থাক বোন আমার,আমান ঘুমিয়ে গেছে,ওকে একটু ধর আমি চোখেমুখে পানি দিয়ে আসি।
বাসে পেট্রোল লোড করছে,একটু টাইম লাগবে।

— ওকে,দে।


প্রায় ২ঘন্টা জার্নির পর রাজশাহী এসে পৌছালো ওরা,আমানও উঠে গেছে।
আরিয়া আমানকে এক প্যাকেট ল্যাক্সাস বিস্কুট কিনে দিলো,এটা সুগার ফ্রী ভেজিটেবল বিস্কুট।আমানের খাবারের তালিকা অনুযায়ী পার্ফেক্ট।
একটা রিকশা নিয়ে ওরা চলো বাসার উদ্দেশ্যে,১৫মিনিট পর ওরা অ্যাপার্টমেন্টের সামনে এসে থামলো।ভাড়া মিটিয়ে ওরা লিফটে করে কাঙ্ক্ষিত ফ্লোরে গেলো,নিজের পরিচিত জায়গায় এসে আমানের খুশি দেখে কে।
সে দৌড়ে নিজেদের ফ্ল্যাটের সামনে চলে গেলো,কিন্তু মেইন দরজা তো লক করা, সে ভেতরে যাবে কি করে।
দরজার সাথে হ্যালান দিয়ে আয়মানের মতো স্টাইল করে দাঁড়িয়ে রইলো আমান,আরিয়া আর অহনা ধীরেসুস্থে ফ্ল্যাটের সামনে এসে আমান কে এভাবে দেখে একে-অপরের দিকে তাকিয়ে হোহো করে হেসে দিলো।
আমান ভ্রুকুচকে তাকাতেই অহনা মুখচেপে হাসি আটকিয়ে আমানকে কোলে তুলে গালে চুমু দিলো।

— সরি সোনা,আর হাসবোনা।

আরিয়া হ্যান্ডব্যাগ থেকে চাবি বের করে লক খুললো,তারপর ভেতরে ঢুকলো ওরা।
ভেতরে ঢুকে তো হতবাক,সবকিছু এতো সাজানোগোছানো,আয়মান যখন এই ফ্ল্যাটে থাকতো তখন পুরো ফ্ল্যাট এভাবে সাজানো থাকতো।আরিয়া রাস্তায় সেন্সলেস হয়ে যাওয়া পরে আয়মান যখন আরিয়াকে এখানে নিয়ে এসেছিলো তখন এমন দেখেছিলো আরিয়া।
নিজের রুম টা আয়মানের মনেরমতো করে রাখলেও বাকি সব আগের মতো রাখতে পারেনি আরিয়া,কারণ নিমু,অহনা,হিমু থাকে।
কিন্তু আজকে হঠাৎ করে এভাবে আয়মানের স্টাইলে গোছানো কিভাবে হলো,এরকম তো ছিলোনা।

— ওয়াও,সো বিউটিফুল।কিরে আপু,এভাবে রুম গোছালো কে,অনেক সুন্দর হয়েছে তো।
টিভি সিরিয়ালে যেরকম দেখি একদম সেরকম হয়েছে।
আমরা চলে যাওয়ার পর কে এসেছিলো বলতো,নিমু আপু মনে হয়।এই ফ্ল্যাটের ডুপ্লেক্স চাবি তো ওদের কাছেই আছে।
কিরে ওভাবে চুপ করে দাঁড়িয়ে আছিস কেন,কি ভাবছিস??
আরিয়া আপু,ওইই (আরিয়ার কাঁধ ধরে ঝাকিয়ে)

— হ হু হ্যাঁ,তুই রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নে।
আমি রুমে যাচ্ছি।
আমান,আমান,আরে আমান কোথায় গেলো

— রুমে দৌড় দিয়েছে

— ওওও,এই ছেলেটাও না।এতো দূরন্ত হয়েছে নিজের বাবার মতো,বলার মতো না।

আরিয়াও নিজেদের বেডরুমের দিকে পা বাড়ালো,রুমে গিয়ে দেখে আমান নিজের ব্লেজারের এক পকেটে আয়মানের মতো হাত ঢুকিয়ে ওয়াসরুমের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।

— কি হয়েছে সোনা,ওভাবে দাড়িয়ে কি দেখছো??

বলতে বলতে আরিয়া আমানের দিকে এগোতে যাবে তখনই ওয়াসরুমের দরজা খুলে কেউ বের হলো,আরিয়া তাকিয়ে দেখে মানুষটি আর কেউ না।❝আয়মান❞
আয়মান উইথআউট টিশার্ট,নিচে টাওয়াল পেচিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
আরিয়া বিস্ফোরিত চোখে তাকিয়ে আছে আর আমান দৌড়ে আয়মানের সামনে গেলেই আয়মান আমানকে কোলে নিয়ে গালে কপালে চুমু দিলো……

To be continue….

(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here