এক_চিলতে_রোদ Part_42
#Writer_Nondini_Nila
দিনা আমার দিকে ইয়া বড় চোখ করে তাকিয়ে আছে। আমি চাপা রাগ নিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে বললাম,
‘ তোমাকে বলেছিলাম ভাইয়া মানবে না। দেখো এখন আমার কি অবস্থা।’
দিনা আমার কাছে এসে হাত ধরে বললো, ‘ সরি আমি ভাবিনি এমন করবে। আচ্ছা ভাইয়া কোথায় আমি গিয়ে সরি বলে আসি। তোমাকে কি বলেছে?’
আমি মাথা নেড়ে না বললাম।
‘ আচ্ছা আমি বলে আসি বকবে না। আমি তো জোর করছিলাম তোকে। এতে দোষ আমার।’
আমি কিছু বললাম না। মুখটা বাংলার পাঁচের মতো করে দাঁড়িয়ে আছি। দিনা চলে গেলো। আমি গোমড়া মুখে তাকিয়ে আছি সামনের স্টেজে যেখানে বরের গায়ে হলুদ হচ্ছে।
তখন গাড়িতে ভাইয়া আমার কাঁধের পিন খুলে দিলো। আমি ভয়ার্ত চোখে তাকিয়ে আছি ভাইয়ার দিকে। তিনি কি করতে চাইছে। ভাইয়া আমার আঁচলের ভাঁজ খুলে ছেড়ে দিলো। আমি বিস্মিত হয়ে তাকিয়ে আছি। ভাইয়া আমার হাত ধরে বললো,
‘ এভাবে থাকার মানে কি? তুই কি ভেবেছিলি আমি কি করবো?’
আমি অপ্রস্তুত হয়ে গেলাম। হাত নামিয়ে নিলাম। ভাইয়া আমার দিকে কঠিন দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বললো,
‘এটাকে শাড়ি পরা বলে শরীরের অর্ধেক অংশ দেখিয়ে? তোকে আমি পরতে মানা করছিলাম তা তো শুনলিই না উল্টা এমন বিচ্ছিরি ভাবে শাড়ি পড়ে এসেছিস?’
ভাইয়ার কথায় আমি কুঁকড়ে ওঠে মাথা নিচু করে মিনমিন করে কিছু বলতে যাব। ভাইয়া আমার থুতনিতে নিজের আঙ্গুল স্পর্শ করলো। আমি চমকে মাথা তুলে তাকালাম। ভাইয়া রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
‘কককি হয়েছে এমন করে তাকিয়ে আছেন কেন?’
ভাইয়া হাত বাড়িয়ে আমার কপালে থেকে টিপ খুলে নিলো। আমি কি বলবো বুঝতে পারছি না তাও বললাম,
‘ দিনা টিপ দিছে আমি পরতে চাইনি।’
ভাইয়া কিছু বললো না সুন্দর ভাবে বাম হাতে ফেলে দিলো টিপ তারপর আমার দিকে তাকালো শান্ত ভঙ্গিতে। আমি ভয়ে ভয়ে তাকিয়ে আছি। ভয়ে আমার বুক ধুকপুক করছে।
‘সুন্দর করে সেজে গুজে শুধু আমার সামনে আসবি। এইখানে হাজার মানুষকে দেখানোর জন্য সাজাটা আমার পছন্দ না। আসার আগে ওই ছেলেটার সাথে কথা কথা বলছিলি?’
আমি বোকা চোখে তাকিয়ে ভাবছি। আমি আবার কোন ছেলের সাথে কথা বললাম। কার কথা বলছে?
‘কি হলো এ্যান্সার মি?’
‘আমি কখন কার সাথে আবার কথা বললাম।’
চিন্তা মুখ করে তাকিয়ে বললাম ভাইয়া কে।
ভাইয়া রেগে বললো,’ মিথ্যে বলা শিখে গেছিস?’
আমি কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলে ভাবছি মনে পরছে না।
ভাইয়ার কথায় বুঝতে পারলাম। ওই গেটের অসভ্য ছেলেটার কথা বলছে। আমি বললাম,
‘ ওই ছেলে তো নিজে কথা বলছিলো আমি কিছুই বলিনি।’
ভাইয়া রাগ মিশ্রিত কন্ঠে বললো, ‘ আচ্ছা তুই বলিস নি ছেলেটা কি বলেছিলো? আর তা শুনে তুই ফুল কেন দিলি?’
আমি বললাম, ‘ ফুলই চাইছিলো।’
‘ কেন ফুল চাইলো?’
‘ আমি কি জানি?’
‘ ওই ছেলে তোকে..
বলতে গিয়ে ভাইয়া থেমে গেলো। আমি উৎসুক চোখে তাকিয়ে আছি। ভাইয়া থামতেই আমি বললাম,
‘ আমাকে কি বলেন?’
ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে বললো, ‘ তোর ফুল দেওয়া ঠিক হয়নি। আর কখনো দিবিনা।’
আমি হতবুদ্ধি হয়ে বললাম, ‘ ছেলেটা কি আবার ফুল চাইতে আসবে তখন আমি মানা করে দেবো।’
ভাইয়া হতাশ চোখে তাকিয়ে বললো, ‘ মাথা মোটা। চাওয়া জিনিস দিবি না। ছেলেটা তোর দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য চেয়েছিলো তোর দেওয়া ঠিক হয়নি। ‘
‘ওহ।’
ভাইয়া পিন আমার হাতে দিয়ে কাঁধে আঁচল লাগাতে বললো।
‘ আমি কিভাবে?’
আমি পারিনা লাগাতে।
‘কিভাবে মানে পারিস না?’
আমি মাথা দুলিয়ে না বললাম। ভাইয়া নিজে পিন নিয়ে আমাকে টেনে কাঁধে পিন লাগাতে লাগলো। আমার বুকের ভেতরে টিপটিপ করছে। ভাইয়ার হাত আমার শরীরে স্পর্শ করছে। আমি চোখ করে আছি।
ভাইয়া লাগিয়ে দিয়ে আঁচল টেনে মাথা ডেকে দিলো। আমি হতবুদ্ধি হয়ে তাকিয়ে আছি।
‘এইভাবেই থাকবি?’
আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে দরজা খুলে বেরিয়ে এলো।আর আমরা হাত ও ধরে আমাকে ও টেনে বের করে আনলো।
আমি মুখ কালো করে বললাম, ‘ আমাকে বিবাহিত লাগছে দেখতে ? ‘
ভাইয়া আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বলল,
‘ বউয়ের মতো লাগছে। ইহানের বউ।’
বলেই ঠোঁট কামড়ে হাসলো। আমি গোমড়া মুখে বললাম,’ সবাইকে কতো সুন্দর লাগছে আর আমি এমন করে?’
‘সবাইতো আর তুই না।তোকে আমার এই ভাবেই ভালো লাগছে একদম পারফেক্ট। বর বউ এটাই সবাই বলবে। আর এটাই তো সত্যি তাই না।’
আমি মাথা উঠিয়ে ভাইয়ার উজ্জ্বল মুখের দিকে তাকালাম। ভাইয়া হাত বাড়িয়ে আমার কাধ ধরে হাঁটতে লাগলো। অনেকে আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে। আমি নিচের দিকে তাকিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি।
ভাইয়া ভেতরে এসে আমাকে দাঁড়াতে বলে ফোন কানে তুললো।
আমি ভাইয়ার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে সামনে তাকাতেই দিনা এলো।
‘হাই মিস!’
অপরিচিত কারো আওয়াজ শুনতেই আতংকে উঠলাম। সামনের লোকটাকে দেখে আরো চমকালাম। সেই ছেলেটা আমার সামনে দাঁত বের করে হেসে তাকিয়ে আছে।
আমি তাকাতেই বললো,’ একি তুমি এমন বিবাহিত মেয়ের মতো সেজে দাঁড়িয়ে আছো কেন?’
আমি চমকে উঠলাম কি অসভ্য ছেলেটা কেমন তুমি করে কথা বলছে? আমি কিছু বলতে যাবো আবার ভাবলাম ভাইয়া কথা বলতে মানা করছিলো থাক বলবো না।
‘ কি হলো কথা বলছো না কেন এমন বিবাহিত মেয়ের মতো ঘোমটা টেনে আছো কেন? ওই বাসায় তো ঠিক ভাবেই ছিলে?’
‘কারন ও বিবাহিত মেয়ে তাই এমন করে আছে।’
ভাইয়ার আওয়াজ পেয়ে আমি ও ছেলেটা চমকে তাকালাম। ভাইয়া তীক্ষ্ণ চোখে ছেলেটার দিকে তাকিয়ে আছে।
ছেলেটা ভাবছে কে এই ছেলে?
ভাইয়াকে জিজ্ঞেস করলো,, ‘ আপনি কে?’
ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে আমার কাছে এসে বললো,’ যাকে জিজ্ঞেস করলেন বিবাহিত কিনা। তার হাজবেন্ড!’
ছেলেটা চোখ কপালে তুলে তাকালো আমাদের দিকে।
‘কি হলো ভাই এমন করে তাকান কেন? খুব চমকাইছেন?’
‘এই মেয়ের বিয়ে হয়েছে?’
‘হুম। কেন সন্দেহ আছে নাকি?’
‘ নাহ তা না আসলে উনাকে দেখলে বিবাহিত লাগে না। তাই আরকি?’
‘ এই না বললেন বিবাহিত লাগছে।’
‘ লাগছে না তো। বিবাহিত দের মতো সেজে আছে তাই বলছিলাম। আচ্ছা সরি ভাই, সরি আপু আমি জানতাম না।’
‘আপু না ভাবি বলেন? আমাকে যেহেতু আমাকে ভাই বলেছেন। আমার বউকে ভাবি বললেই খুশি হবো।’
‘ আচ্ছা ভাবি সরি।’
বলেই চলে গেলো দ্রুত গতিতে।
‘আপনি মিথ্যা বললেন কেন?’
‘ কি মিথ্যা বললাম?’
‘ বউ।’
‘ এটা মিথ্যা না সত্যি হবু টা বলিনি।যাই হোক চল খেয়ে আসি।’
বলেই আমাকে নিয়ে খাবার টেবিলে আসলো। দিনারা সবাই বসে আছে।
আমরাও গিয়ে বসলাম। দিনার বান্ধবী রা আমাদের দিকে আড়চোখে তাকাচ্ছে আমি একনজর তাকিয়ে খেতে বসলাম।
ভাইয়া আমার পাশে বসলো। বিরিয়ানি এক লোকমা মুখে তুলতেই আমার গা কাঁপিয়ে কাশি উঠলো। আমি খাবার না গিলতে পারলাম আর না ফেলতে পারলাম। খুকখুক করে কেশে উঠলাম। বিরিয়ানি আমার নাক মুখ দিয়ে ঢুকে গেলো কাশির মাঝে আমার নাক জ্বলে উঠলো। কি এক বিচ্ছিরি অবস্থা। কোন দিকে খেয়াল নেই আমার। চোখ দিয়ে পানি বের হয়ে গেছে। শুধু ভাইয়া উত্তেজিত কথা শুনছি তিনি আমাকে জোর করে ধরে পানি খাওয়াচ্ছে।
সবাই তাকিয়ে আছে আমার দিকে দিনা এসব দেখে ছুটে এসেছে।
আমার কাশি থামলেও গলা আর নাক জ্বলছে হঠাৎ এমন কাশি কেন উঠলো কেন জানে। আমি চোখ বন্ধ করে বড় বড় শ্বাস নিচ্ছি। ভাইয়া আমাকে দু’হাতে জড়িয়ে আছে আলতো ভাবে। ভাইয়া খুব ভয় পেয়ে গেছে মুখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে।
চলবে~~~~