এক_চিলতে_রোদ Part_30
#Writer_Nondini_Nila
আমি বিস্মিত হয়ে বসে তাকিয়ে আছি ভাইয়ার দিকে। তিনি আমার সামনে চোখ বন্ধ করে বসে আছে মাথায় হাত দিয়ে। হাতের আংগুল ফেটে রক্ত বের হচ্ছে। যা আগে ছিলো না। এটা পাঁচ মিনিট আগে করেছে। ভাইয়াকে এতোটা রাগতে আমি কখনো দেখি নি। আজ দেখলাম। তাও সমস্ত রাগ নিজের উপর দেখিয়ে নিজের ক্ষতি করলো। আমাকে কিছু বলেনি। গাড়িতে তো আমি ভয়ে জরোসরো ছিলাম বাসায় এসে না জানি কি করে আমাকে। কিন্তু আমাকে সম্পুর্ন অবাক করে দিয়ে ভাইয়া নিজের ক্ষতি করলো।
আমাকে টেনে নিজের রুমে এনে দরজা আটকে দিলো আমি চমকে উঠে, ভয়ার্ত কন্ঠে বললাম, “ভাইয়া আপনার কি হয়েছে বলুন না।”
ভাইয়া রেগে আমার দিকে তাকিয়ে বলল, “বিছানায় বস।”
আমি হকচকিয়ে গেলাম। বসতে বলছে কেন? ভাইয়া হুংকার দিতেই আমি ভয়ে কেঁপে উঠলাম। আর তারাতাড়ি বিছানায় বসে কাঁপতে লাগলাম। ভাইয়া আমার দিকে থেকে রক্ত চোখ সরিয়ে দেয়ালে হাত রেখে দাঁড়িয়ে রইলো। তারপর আচমকা হাত উঁচু করে নিজের হাতে বাড়ি দিলো আমি চমকে চেঁচিয়ে উঠলাম।
সাথে সাথে হাত কেটে রক্ত বেরোতে লাগলো আমি থমকে দাঁড়ালাম পরলাম। ভাইয়া এগিয়ে আমাকে টেনে আবার বসিয়ে দিল। আর আমার পাশে বসে মাথায় হাত দিয়ে চোখ বন্ধ করে রইলো।
আমি হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছি। সাথে ভয় চোখে তাকিয়ে আছি ভাইয়ার হাতের দিকে। এমন পাগলামী কেন করছে? রিহানের জন্য কিন্তু ওর জন্য এমন করার কারন কি?
আমি থেকে থেকে কেঁপে উঠছি ভাইয়া চোখ বন্ধ করেই আছে। ইশ কতো খানি কেটে গেছে। আমি হুট করেই উঠে পরলাম এইভাবে বসে থাকা সম্ভব না। আমি ড্রয়ার থেকে ফাস্ট এইড বক্স নিয়ে এলাম। এটা এখানে থাকে আমি জানি। আমি ভাইয়ার পাশে বসে নিজের কাঁপা হাত স্পর্শ করলাম ভাইয়ার হাতে। সাথে সাথে ভাইয়া চোখ মেলে তাকালো।
সেই লাল চোখ আমি কেঁপে উঠলাম। তাও আমতা আমতা করে বললাম,,
” প্লিজ বকবেন না। আপনার হাত কেটে গেছে অনেকটা। আপনি এতো রাগ কেন করছেন আমি জানি না ভাইয়া। কিন্তু নিজেকে কষ্ট কেন দিচ্ছেন?”
আমার কথা শেষ হতেই ভাইয়া বলল,,
“তোর জন্য। তোকে তো কিছুই করতে পারবো না তাই নিজেকেই ক্ষত বিক্ষত করছি।”
আমি থমকে গেলাম ভাইয়ার কথা শুনে। অবাক চোখে তাকিয়ে আছি। আমার জন্য।
“আমি কি করেছি?”
“তুই আমাকে ইগনোর করিস ওই রিহানের জন্য।”
ভাইয়া রেগে দাঁতে দাঁত চেপে বললো।
আমি হতবুদ্ধি হয়ে বললাম,, ” মানে।”
হুট করেই আবার বললাম,, “আমাকে ব্যান্ডেজ করতে দিন আগে”
বলে আমি রক্ত মুছে ব্যান্ডেজ করে দিতে লাগলাম। পুরোটা সময় আমার হাত কেপেছে। ইহান কিছু বলতে গিয়েও বললো না। ঊষার চোখে নিজের ব্যাথার জন্য কষ্ট দেখে। মনে মনে প্রশান্তি বয়ে গেলো ওর। ওর রাগ আস্তে আস্তে কমে এলো।
ইহানের রাগের কারন হলো রিহান। ঊষা ভেতরে চলে যাওয়ার পর ওর দেখা হয় রিহানের সাথে। রিহান ওকে দেখে অবাক হয়ে বলে এখানে কি করে?
ইহান আগে দেখেই রিহান কে পছন্দ করে না কারণ আগেও ওকে ঊষার প্রতি নজর দিতে দেখেছে তাই ওকে দেখলেই ওর রাগ হয়।
রিহানের প্রশ্ন এ ইহান উওর না দিয়ে জিগ্গেস করে,
“তুমি এখানে কি করছো?”
রিহান বড় হলেও ইহান তুমি করেই বলে। রিহান আচমকা হাসি টেনে ঊষার জন্য বলে দেয়।
ইহান ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বলে, হোয়াট?
রিহান ইহানের হাবভাব দেখে সিউর হয়েছে এই ছেলে ঊষার প্রতি দূর্বল তাই ও চায়না নিজের ভালোবাসার মানুষকে অন্য কারো সাথে দেখতে তাই সরাসরি বলে দিতে চায় নিজের মনের অনুভূতি। আর ও জানতে পেরেছে ইহানের মা ঊষাকে একদম সহ্য করতে পারেনা তাই ইহান কতটা এগিয়েছে জানা নেই। তাই ওকে ঊষার থেকে দূরে রাখার জন্য সব বলতেই হবে।
মানে আমি ঊষার জন্য এসেছি।
ইহানের কুঁচকানো কপাল আরেকটু কুঁচকে আসে।রিহান এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে নেয়।
গরগর করে বলে দেয় ,,
ও ঊষাকে ভালোবাসে। সাথে আরো বানিয়ে বলে।ও ভাবে শুধু নিজে ভালোবাসে এটা না বলে ঊষাও ওকে ভালোবাসে এটাও বলে। সাথে ঊষাকে প্রপোজ করার ছবি দেখায় যেখানে ঊষা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে রিহানের দিকে আর রিহার ফুল ধরে আছে।সাথে আরেকটা ফটো অটো বসা দুজন।
এসব দেখেতো ইহানের চোখ জ্বলে উঠে। হাত মুষ্টিবদ্ধ করে দাঁড়িয়ে থাকে।
রিহান হুট করেই ইহানের হাত ধরে বলে,,
“ছোট ভাই তুমি তো ঊষার ও ভাই। আমাদের ভালোবাসা পূর্ণতা পেতে তোমার সাহায্য লাগবে। ”
ইহান টান মেরে হাত ছুটিয়ে নেয়। রিহানের হাত সরে যায় আর ইহান অতিরিক্ত রাগে টান দেওয়ায় ওর হাত পেছনে চলে যায় অনেকটা আর যার ফলে পেছনে একটা বাইকের সাথে লেগে হাত কেটে যায় কিন্তু ওর তাতে খেয়াল নেই। ওর ছবি দেখে রেগে বম হয়ে গেছে।
রিহান বিস্মিত হয়ে কিছু বলতে যাবে,,
ইহান বলে, আই ডোন্ট ওয়ান্ট টু টক টু ইউ। গো এওয়ে।
রিহানের কি হলো ও ইহানে কথায় চলে গেল। বারতি কথা বাড়ালো না।
আমি ব্যান্ডেজ করা শেষ করে ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে দেখি ভাইয়া আমার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আমি নিজে সরে বসি। ভাইয়া তখন বলে,,
“রিহানকে তুই ভালোবাসিস?”
আমি নিচের দিকে তাকিয়ে ছিলাম। হঠাৎ ভাইয়ার কথায় চমকে মাথা তুলে তাকালাম। ভাইয়া উওরের আশায় তাকিয়ে আছে আমার দিকে। আমি ঢোক গিলে ভাবছি কা সব বলছে ভাইয়া আমি রিহানকে ভালোবাসতে যাব কেন?
কিন্তু অদ্ভুত আমার মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছে না। ভাইয়া রক্ত চোখ করে তাকিয়ে আছে আমার ভয় লাগছে কথা বলার শক্তি যেন হারিয়ে ফেলেছি।
“তোরা দুজন দুজনকে ভালোবাসিস?”
আমার উওর না পেয়ে ভাইয়া কঠিন সুরে আবার বলল কথাটা।
আমি হতভম্ব হয়ে বসে আছি। ভাইয়ার চোখে মুখে বিরক্ত রাগ তো আছে আমাকে চুপ থাকতে দেখে তার রাগ আকাশে উঠে গেলো। এবার চেঁচিয়ে উঠলো,,
” বোবা হয়ে বসে আছিস কেন?কথা বলতে পারিস না। আমি তো কিছু জিজ্ঞেস করছি। রিহানকে তুই ভালোবাসিস, বিয়ে করতে চাস। ওর সাথে অটোতে করে বেরাস, ও তোকে ফুল দিয়ে প্রপোজ করে। ”
ভাইয়া উঁচু গম্ভীর গলায় আওয়াজে ভয়ে আমার হৃদপিণ্ড কেঁপে উঠলো। আমি বিছানায় থেকে ফট করে উঠে দাঁড়ালাম। ভাইয়াকে ভয় করছে খুব। কতো রেগে গেছে ভাইয়া। সব ওই রিহানের জন্য। এসব সেই বলেছে কিন্তু কেন মিথ্যা বললো। এখন ভাইয়া তা রেগেছে না কিছু শুনবেই না। আমার হাত পা কাঁপছে আমি এখন কেটে পরি সেটাই আমার জন্য ভালো।
ভাইয়া আমাকে দাঁড়াতে দেখেই নিজের ব্যাথা ব্যান্ডেজ করা হাতেই আমার বাহু চেপে ধরে নিলো। আমি আঁতকে উঠলাম। ভাইয়া আমাকে টেনে নিজের কাছে টেনে ধরে রেখেছে।
“কোথায় যাচ্ছিস আমার এ্যানসার না দিয়ে। ”
আমি ভয়ার্ত গলায় মিনমিন করে বললাম, ” রুমে যাই সন্ধ্যা হয়ে গেছে। আযান দিবে এখন।”
“আমি যেতে বলেছি তোকে?”
রেগে বললো।
আমি ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেললাম। হুট করেই ভাইয়া আমাকে বলে উঠলো,,
” রিহানকে ভালোবেসে থাকলেও তুই শুধু আমার। আর যদি ওই রিহানের জন্য আমাকে ইগনোর করে থাকিস তাহলে খুব ভুল করেছিস। আমি বেঁচে থাকতে ওই রিহানের সাথে তোকে মেনে নেব না। তুই শুধু আমার। বুঝতে পেরেছিস।”
আমি পিটপিট করে চোখ মেলে তাকালাম। পাগল হয়ে গেছে ভাইয়া। এবার কিছু বলতে হবেই।
আমি মুখ খুলতে যাব ভাইয়া আচমকা আমাকে টেনে নিজের হাঁটুর উপর বসিয়ে ঠোট এ আংগুল দিয়ে আটকে বললো।
‘না ঊষা আমি ওই রিহানের হয়ে কথা তোর মুখে শুনতে চাইনা। আমার তিনদিনের অনুপস্থিতে তুই ওর সাথে রিলেশন এ চলে গেলি। আমি তোকে লেখা পড়া করার কথা বলেছিলাম। আর তুই। ওকে নিয়ে ঘুরাঘুরি করেছিস।”
আমি হাঁটুর উপর থেকে উঠার জন্য ছটপট করছি। ভাইয়া আমাকে ছারছে না।
আর ও শক্ত করে ধরে আছে। চোখে তার আগুন।
“আমি রিহান ভাইকে ভালোবাসিনা।”
এক নিঃশ্বাসে এ বলে ফেললাম।
আমার কথা শুনে ভাইয়া অবাক হয়ে তাকিয়ে বললো,
” ভয়ে মিথ্যা বলছিস?”
আমি বিরক্ত হয়ে বললাম, মিথ্যা কেন বলবো? আপনি ওই রিহানের কথা শুনে আমাকে বকাবকি করছেন নিজের ক্ষতি করছেন কেন?যেখানে আপনাকে বলা প্রত্যেকটা কথা মিথ্যা।
মানে? কপাল কুঁচকে বললো ভাইয়া।
আমি ঠোঁট ভিজিয়ে বলতে লাগলাম। একে একে সব রিহানের বিরক্ত করা থেকে প্রপোজ তারপর আমি বিরক্ত করতে মানা করা সেদিন অটোতে জোর করে উঠেছিলো। সব বলা শেষে বললাম।
“আপনি কিসের ছবি বলছেন সেটা জানি না। আমি তো কোন ছবি তুলিনি।”
“ভয় পেয়ে মিথ্যা বলছিস না তো।”
আমি মাথা নেড়ে না বললাম।
“আর আপনি আমার থেকে ওই রিহান ভাইকে কি বেশি বিশ্বাস করেন।”
ভাইয়া তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে ছিলো আমার দিকে। এবার তার রাগের মাত্রা কমে এলো কিন্তু চেয়াল শক্ত ই আছে। ভাইয়া নিজের হাত বাড়িয়ে আমার গালে রাখলো আমি কেঁপে উঠলাম। ভাইয়া বললো,,
“আমার রাগে কি করতে ইচ্ছে হয়েছিল তোকে বলে বুঝাতে পারবো না।”
” আমাকে ছারুন।”
ভাইয়া সাথে সাথে ছেড়ে দিলো আমি অবাক হলাম। আমার কথা শুনার জন্য সাথে উঠেও পরলাম।
চলে আসতে নিবো তাই পেছনে ঘুরি তখন ভাইয়া বললো,
“ওর প্রপোজ এ রাজি হচ্ছনি আমার জন্য?”
আমি চমকে দাঁড়িয়ে গেলাম।
” আমাকে ভালোবাসিস? ”
গরম নিঃশ্বাস আমার ঘাড়ে পরছে। আমার শরীর লোম খাড়া হয়ে গেল। ভাইয়া আমার খুব কাছ থেকে কথা বলছে তাই তাকে ফিল করতে পারছি।
কিছু ক্ষনের মাঝে ভাইয়া আমার সামনে এসে দাড়ালো আর বললো,
“অযথাই এতো কষ্ট দিলাম নিজেকে। আমার বুঝা উচিত ছিলো আমার ঊষা আমাকে রেখে অন্য কাউকে ভালোবাসতেই পারে না।”
বলতে বলতে ভাইয়া এগিয়ে এলো আমি এক পা পেছনে যাব ভাইয়া আমার হাত ধরে আটকে দিল আর এগিয়ে আমার কপালে চুমু খেলো। আমি ছিটকে সরে দাড়ালাম। আর সাইট দিয়ে গিয়ে দরজা খুলে বেরিয়ে এলাম।
নিচে আসতেই লতার মুখোমুখি। ও আমাকে চেপে ধরলো। ভাইয়া রেগে নিয়ে গেলো কেন কি হয়েছে আমি কিছু না বলে রুমে চলে এলাম। কি রাগ ভাইয়ার। বই ভাইয়ার রুমে রেখে এসেছি।
ধুর থাক পরবোই না।
মাগরিবের পর চাচা এলো। তাকে খেতে দিয়ে সিঁড়ির দিকে তাকিয়ে আছি ভাইয়ার জন্য। ভাইয়া অনেক সময় পর এলো এসে বসলো না আমার দিকে তাকিয়ে বলল,,
“আমার খাবার রুমে নিয়ে আসিস।”
বলেই এক মিনিট দাঁড়ালো না রুমে চলে গেলো। চাচার খাবার শেষ হতেই আমি খাবার হাতে দাঁড়িয়ে আছি। যেতে ইচ্ছে না করলেও যেতে হবে।না হলে ভাইয়া আবার রেগে যাবে। আমি বড় শ্বাস ফেলে রুমে এলাম। ভাইয়া বিছানায় পা মেলে বসে আছে । আমি গিয়ে খাবার রাখলাম। ভাইয়া ডেকে বললো,
“এখানে নিয়ে আয় খাবার।”
আমি খাটে গিয়ে ভাইয়ার কাছে রাখলাম খাবারের প্লেট।
“আমি চলে আসতে যাব ভাইয়া বলে উঠলো, তুই যাচ্ছিস কেন?”
আমি অবাক হয়ে বললাম, “তো কি করবো?”
“আমাকে খাইয়ে দে। ”
আমি বড় চোখ করে তাকিয়ে বললাম, কি ?
ভাইয়া আমার সামনে নিজের কাটা হাত উঁচু করে বললো,
” খাব কি করে? ”
ভাইয়ার হাত যে কাটা আমি ভুলেই গেছিলাম।
#চলবে