#এক_চিলতে_রোদ extra_Part(3)
#Writer_Nondini_Nila
আমি রুমে বসে আছি। ভাইয়ার রুমে যাব না আমি কিছুতেই না। এই দুপুরে কেউ পরে যতসব। তাও বই এনে বিছানায় বসে পরলাম। পড়াই হয় না আজ একটু মন দিয়ে পরতে লাগলাম। ভাইয়ার চিন্তা একপাশে ফেলে রেখে।
তখন দরজা খট করে খুলে কেউ এলো আমি তাকিয়ে ভয় পেয়ে গেলাম ভাইয়া দাঁড়িয়ে আছে রেগে। আমি ঢোক গিলে বললাম,,
” আ-মি পারছিলাম একাই পরছে পারবো। ”
ভাইয়া আমার থেকে চোখ সরিয়ে নিচের দিকে তাকালো আর গটগট করে আর কাছে এলো। আমার সামনে দাড়িয়ে বই দেখলো আমি গনিত করছিলাম। ভাইয়া ফট করেই বই হাতে নিলো আর পেজ উল্টাতে লাগলো।আমি চমকে উঠে বললাম,,
“কি করছেন? আমি অঙ্ক করছি দিন।”
ভাইয়া কটমট চোখে তাকালো। আর বললো,,
“আমি আমার রুমে যেতে বলেছিলাম তোকে। তা না করে তুই একা পড়ে কি বুঝাচ্ছিস? সব পারিস। ওকে আমি তোকে এখন অংক করতে দেবো আমাকে করে দেখাবি।”
আমি ভয় পেয়ে বইয়ের পেছনে তাকিয়ে আছি। অনেক অঙ্ক তো পারিনা কোনটা দেবে কে জানে? না পারলে কি যে করবে? আমি মুখ কালো করে ভাবছি।
ভাইয়া বই আমার সামনে শব্দ করে ফেলে বললো,,
” এই যে এই দুইটা করে দেখা। টাইম দশ মিনিট।”
আমি বইয়ের অঙ্কের দিকে বড় চোখ করে তাকিয়ে আছি। এটা লাষ্টের আগের চ্যাপ্টার এইটা তো পরিনাই। অনেক কঠিন এই চ্যাপ্টার আর অঙ্ক ও অনেক বড়। দুই পেজ লাগবে একটা করতেই। এই অঙ্ক দিলো করতে তার উপর দশ মিনিট আল্লাহ।
আমি বিস্মিত হয়ে ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে বললাম,,
” মাত্র দশ মিনিট এ হবে না এই অঙ্ক অনেক বড়। আর আমি তো…”
তার আগেই বললো , ” ওকে আর পাঁচ মিনিট দিলাম। না পারলে তোর কপালে শনি আছে।”
বলেই ভাইয়া নিজের ফোন আমার সামনে রেখে বললো, “এই যে এখন এখন এগারোটা পঁয়তাল্লিশ বাজে বারোটায় সময় শেষ।”
বলে ফোন রেখেই চলে গেলো বাইরে।
আমি বলার টাইম পেলাম না আরো সময় লাগবে।
আমি হতভম্ব হয়ে বসে আছি। কিভাবে করবো ভাবছি অঙ্কে আমি ভালো খারাপ না তাই চেষ্টা করতে লাগলাম।
দুই তিন নিয়মে করলাম হচ্ছে না বুঝছি না। কেটে অন্য পেজে যেতেই ফোনের দিকে নজর গেলো পাঁচ মিনিট চলে গেছে। প্রথম টা হচ্ছে না তাই দ্বিতীয় টা করতে লাগলাম। একটু করেই আমার মুখে হাসি ফুটলো এটা আমি পারতেছি সহজ লাগছে। করে ফেললাম। হেসে তাকিয়ে আছি।
উপরেরটা করতে লাগলাম পারছি না। আমি কলম মুখের ভেতর নিয়ে কামড়ে ভাবছি কি ভাবে করবো?
তখন ভাইয়া কন্ঠ শুনে চমকে উঠলাম আর মুখে থেকে কলম পড়ে গেলো।
ভাইয়া বলছে,,,” কলম কি কামড়ানোর জিনিস?”
আমি চকিতে মাথা তুলে তাকিয়ে মাথা নেড়ে না বললাম।
“তাহলে কামড়াকামড়ি করছিলি কেন? আমি তোকে অঙ্ক করতে দিয়েছিলাম। কলম কামড়াতে না।”
“হুম। আমি আসলে ভাবছিলাম কি ভাবে
করবো? ”
“ভাবার জন্য কলম কামড়াতে হয়।”
“না আমার এটা অভ্যাস।”
“সমস্ত বাজে অভ্যাস তোর আছে। টাইম শেষ দেখি কেমন করলি।”
টাইম শেষ শুনেই চমকে উঠলাম। আমার তো করা হয়নাই। ভাইয়া খাতা নিয়ে দেখছে গম্ভীর হয়ে।
খাতা থেকে চোখ সরিয়ে বলল,
‘একটা কেন?”
“আরেকটা আসলে পারিনা।”
“কেন আপনি তো সব পারেন আমার কাছে যাবেন না। তাহলে এখন পারলি না কেন?”
রেগে চেঁচিয়ে বললো।
আমি মাথা নিচু করে আছি। আমার ভয় করছে কি শাস্তি দেয় তার জন্য কিন্তু কিছু হলো না।ভাইয়া আমার পাশে বসে খাতা কলম নিজের হাতে নিলো। আমি অবাক হয়ে ভাবছি কি করবে?
ভাইয়া খাতায় ওই অঙ্কটা সমাধান করতে লাগলো সাথে আমাকে বুঝিয়ে দিচ্ছে খুব সুন্দর করে। আমি বিস্মিত হয়ে তাকিয়ে আছি আর শুনছি। ওতোটাও কঠিন না আমি বুঝে গেলাম।
ভাইয়া খাতা কলম আমার হাতে দিয়ে বললো,,
“এবার নিজে ট্রাই কর।”
আমি মাথা নেড়ে করতে লাগলাম। হয়েছে করা আমি খুশি হয়ে ভাইয়া দিকে তাকালাম ভাইয়া তখন একটা কথা বললো আমি থমকে গেলাম। সাথে সাথে মাথা নিচু করে ফেললাম। বুকের ভেতর ধুকপুক করছে আমার।
ভাইয়া বলছে,, ” আমি তোকে পড়ার জন্য ডেকেছিলাম। রোমান্স, প্রেম ভালোবাসা করতে না। আমার তোর পড়া নষ্ট করে ওইসব করার ইন্টারেস্ট নাই।”
আমার কান গরম হয়ে আসছে। লজ্জা আমি তাকাতে পারছি না।
” লজ্জা না পেয়ে অঙ্ক কর। ”
বলেই চলে গেলো। আমি থমকে বড় সে রইলাম।
???
বিকেলে কোচিং এ ভাইয়া আমাকে নিয়ে বের হলো আমি একা যাব বলেও থামাতে পারলাম না তাকে। গাড়ি চাচাজান নিয়ে গেছে তাই আমাদের লোকাল এ যেতে হবে।
আমি কাচুমাচু মুখ করে ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে বললাম,,
” আপনার না যাওয়া ভালো ছিলো ভাইয়া আমি একাই যেতে পারবো।”
ভাইয়া রেগে তাকিয়ে বললো,, ” তোকে আমি এতো কথা বলতে বলেছি কি?”
‘কিন্তু শুধু শুধু আপনি গিয়ে কি করবেন ভাই?”
“আমার ইচ্ছা আমি যাব।”
আমি চুপ করে রইলাম। একটা অটো ডেকে তাতে উঠে বসলো ভাইয়া সাথে আমিও।
‘মা কয় দিন থাকবে আন্টির বাসায়?”
“তা তো বলে যায় নি।”
ইহান ভাই আমার কথা শুনে কাউকে কল করলো কথা শুনে আমি বুঝলাম চাচি। কথা শেষ করে ফোনে কিছু করতে লাগলো আমি ভাইয়াকে ছেড়ে কোনায় বসে আছি। ভাইয়ার সাথে স্পর্শ লাগলেই আমার হাত পা কাঁপে। বুকের ভেতর ধরফর করে।
আমি বাইরে তাকিয়ে কোনা ঘেঁষে আমি হুট করেই একটা ঠান্ডা হাত আমার কোমরে স্পর্শ করলো আমি চমকে ঘাড় বাঁকাতেই ভাইয়া টেনে আমাকে নিজের কাছে টেনে ঘেঁষে বসালো। আমার সারা শরীর কেঁপে উঠলো,
ভাইয়া আমার কোমর থেকে হাত সরিয়ে বললো,,
“ওতো দূরে কোনায় গিয়ে বসেছিলি কেন? আত্মহত্যা করার ইচ্ছা ছিলো নাকি? আর একটু হলেই তো পরে যেতি।”
শক্ত মুখ করে গম্ভীর গলায় বলল।
আমি বিস্মিত হলাম। কাল সব বলছে আত্মহত্যা করতে যাব কেন? কিন্তু বলতে পারলাম না।
ভাইয়া রাগী দৃষ্টি নিক্ষেপ করে ফোন ঘাটতে লাগলো। গাড়ি থেকে নেমে সোজা আমি উপরে চলে গেলাম। ভাইয়া দিকে তাকালাম না।
ছুটির পর ভাবছি ভাইয়া হয়তো চলে গেছে কিন্তু না বাইরে এসে দেখি দাঁড়িয়ে আছে। আর রেগে দাঁড়িয়ে আছে।আমি ঢোক গিললাম যায় নি কেন আর এতে রেগে আছে কেন?
আমি চুপ করে দাঁড়িয়ে আছি। এগুনোর সাহস হচ্ছে না। তখন ভাইয়া আমার দিকে তাকালো আর রেগে আমার কাছে এগিয়ে এলো। আমি হকচকিয়ে তাকিয়ে আছি।ভাইয়া এগিয়ে এসে আমার হাত শক্ত করে ধরে বলল,
“চল।”
“আপনি এতো রেগে আছেন কেন? কি হয়েছে।”
ভাইয়া রক্ত চোখ করে তাকালেন আমার দিকে আমার আত্মা কেঁপে উঠলো। আমি চুপসে গেলাম।
হঠাৎ খেয়াল হলো ভাইয়ার হাতে রক্ত। আমি বিস্মিত হয়ে তাকিয়ে আছি। রক্ত এলো কি করে?
আমি ব্যস্ত হয়ে জিজ্ঞেস করলাম,,” রক্ত কি করে এলো কি হয়েছে আপনার?”
ভাইয়া থেমে গেলো আমার দিকে আগের ন্যায় রেগে তাকিয়ে আছে। দাঁতে দাঁত চেপে বললো,,
“রিহান এখানে কেন আসে?”
আমার গলা শুকিয়ে এলো এটা শুনে ভাইয়া জানালো কি করে? আজ ও কি এসেছিল? অসভ্য লোকটাকে না ওইদিন মানা করলাম আস্তে।
তাও এসেছিলো কেন?
ভাইয়া আমাকে টেনে গাড়িতে উঠিয়ে হাত ধরেই বসে রইলো। আর একটা কথা ও বললো না। আমি ভয়ে ভয়ে একবার দুইবার তাকালাম। রাগে কপালের রগ ফুলে উঠেছে ভাইয়ার হাতের রক্তের কথা বললে না কিভাবে আঘাত পেলো? আমা তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে আছি আঘাতের দিকে। ভাইয়ার ফর্সা মুখ লাল বর্ণ ধারণ করেছে।
#চলবে