#In_The_Depths_Of_Love
#Mizuki_Aura
#Part_17
রাতে অবশ্য রাই লক্ষ্য করেছে আবির কি যেনো একটা ভাবছে।
যেনো কত যুগের চিন্তা সব একসাথে মাথায় এসে চেপেছে।
“আপনি এত কি চিন্তা করছেন?”
“হু?? হুঁ?” আবির এর ধ্যান ভাঙলো।
রাই খাটে গিয়ে বসলো “শুনতে ও পান নি! কি এত ভাবছেন?”
আবির রাই কে জড়িয়ে খাটে হেলান দিলো “ভাবছি …… ”
“কি?”
আবিরের নিশ্বাস ফেলার শব্দ রাই এর কানে প্রতিফলিত হচ্ছে। বারবার। বাতাসটা এসে ওর ডান গালের কাছ ঘেঁষে যাচ্ছে।
“মনে করো যদি আজ আমার কিছু হয়ে যায় তো?”
রাই স্তব্ধ হয়ে গেল “মানে!”
“হুম। এখন আজীবন তো আমি থাকবো না। ”
“তারমানে কি আপনি এই কথা বলবেন?” রাই এর হাত জমে এসেছে।
“নিজেকে তো বিলিয়েই দিয়েছি, এখন কেউ যদি কুড়িয়ে না নেয় তবে অস্তিত্ব বিলীন হতে কত সময় লাগবে বলো?”
রাই এর হৃদস্পন্দন বেড়ে গেলো। আবির কি ওকে আবারো সেই প্রশ্ন টাই করবে? এই প্রশ্নের উত্তর যে রাই এখন দিতে চাচ্ছে না।
“ঘুমোয়”বলে আবির শুয়ে পড়লো। রাই ও। তবে রাই এর মস্তিষ্কে একটাই কথা ভেসে বেড়াচ্ছে, ঠিক আবিরের একটু আগে বলা কথাটা।
_______________
পরদিন সন্ধ্যায় আবির রেজোয়ান সাহেব আর দাদী সোফায় বসে ছিল। বাকিরা যে যার মতই কাজ করছে।
তখনি আবিরের ফোন একটা মেসেজ এলো। আবির স্বাভাবিক ভাবেই নিজের ফোনটা হাতে নিলো।
রীতিমত চোখ মুখ শক্ত হয়ে এলো আবিরের। কেনো যেনো? আবিরের মা বিষয়টা প্রথমে লক্ষ্য করলো
“কি হয়েছে আবির তোর?”
“কিছুনা। ”
“তাহলে ওমন কেনো দেখাচ্ছে?”
“আমি একটু বাইরে যাচ্ছি ফিরতে সময় লাগতেও পারে আবার না ও লাগতে পারে। হলদে…… (তখনি সবাই আবিরের দিকে তাকাতেই আবির নিজেকে সামলে নেয় ) রাই চিন্তা করো না”
রাই কিছু বলবে তার আগেই আবির দরজা খুলে বাইরে বেরিয়ে গেলো।
“কি হচ্ছে টা কি গতকাল থেকে! আবির এমন করছে কেন?” মনের মধ্যে নানান কথা ঘুরছে রাই এর।
কিছুক্ষন পরেই আবিরকে কোনো এক ভবনের ছাদের মধ্যে ঢুকতে দেখা গেলো।
ছাদের স্টিলের দরজা খুলতেই ক্যাচ…… করে একটা শব্দ হলো। আবির এর মুখ দেখে বোঝা দায় ও রেগে আছে নাকি কি……
ছাদে ঢুকতেই কেউ পেছন থেকে এসে আবির কে জড়িয়ে ধরলো। সঙ্গে সঙ্গে আবির তাকে পেছন থেকে টেনে সামনে এনে দাড় করালো।
“এসবের মানে কি?”
“কি আবির? তুমি জানো না আমি তোমাকে কতটা ভালোবাসি? তুমি..”
“চুপ” আবিরের ধমকে নীলা ভয় পেয়ে গেল।
একটা কালো রঙের জর্জেটের শাড়ি , স্লিভলেস ব্লাউজ, সাজ, চুলগুলো কালার করা
সত্যিই নীলাকে দেখে আবিরের মনে শুধু একটাই কথা এলো উচ্ছৃঙ্খলতা র সীমা পার করে গেছে এই মেয়ে। এর থেকে বাজে আর কি হতে পারে?
“তুই এখানে কেনো?”
নীলা হাত বাড়িয়ে দিতে গেলেই আবির ওর হাত সরিয়ে দেয় ।
“গতকাল তো এখানেই আসতে বলেছিলাম তখন কেনো এলে না?”
“ঠিক কোন কারণে আসতে বলেছিলি?”
নীলা হেসে আবিরের কাছে গেলো “ঠিক যেকারনে আজ আসতে বলেছি”
আবির ওর থেকে দূরে পিছিয়ে গেলো “গতকালের মতে আমি ১২ টার মধ্যে না আসলে নাকি তুই আত্মহত্যা করবি….” বলতে বলতে আবির এগিয়ে ছাদের রেলিং এর ধারে গিয়ে নিচে তাকালো “কই তোর ডেডবডি ত দেখছি না”
“আবির!!!!” নীলার বিস্মিত গলা
নীলা এগিয়ে গেলো “আবির বিশ্বাস করো আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি অনেক…..” বলে আবিরের বা হাতটা নিজের হাতের মুঠোয় নিল।
“বিশ্বাস করো, তুমি কেনো এভাবে আমার ভালোবাসার অবমাননা করো? যেনো প্রত্যেকবার আমাকে এভাবে ঠকাচ্ছো? গ্রামে যাওয়ার আগেও আণ্টি আপনাদের বিয়ের কথা বলেছিল। কই তখন তো তুমি নিষেধ করো নি। তবে হুট করে এই সস্তা মেয়েকে কেনো……..?”
বাতাসে বিকট একটু শব্দ ঢেউ খেলে গেলো। চারপাশ পুরো থমকে গেলো।
নীলা নিচু হয়ে মাটির দিকে তাকিয়ে, বা গালে হাত। সত্যিই কি আবির ওকে এতো জোরেই চড় মারলো!
“সস্তা!? ” আবিরের ডান হাত কাপছে। কিছুটা রাগে কিছুটা ব্যথায়। আবিরের পায়ের জুতোর ঠক ঠক শব্দ ক্রমশ নীলার দিকে এগিয়ে গেলো । নীলা মাথা তুলে তাকালো , মুখে পাঁচ আঙ্গুলের ছাপ বসে লাল হয়ে উঠেছে চেহারা। যেনো এখনও চামড়া ফেটে রক্ত ঝরবে।
” একে টাকার লোভ।
দ্বিতীয় বিলাসিতা
এরপর তোর দুশ্চরিত্র,
এতগুলো গুণ তোর মধ্যে প্রতিফলিত হয় যে নিজেকে তোর সামনে যৎসামান্য মনে হয়।”
নীলা ভাঙ্গা গলায় বললো “চরিত্রহীন? ঠিক কি দেখে বললে?”
“আবির চৌধুরী যে অযথা কিছু বলেনা (নীলার মুখ চেপে ধরে) সেটা তোর থেকে ভালো কে জানে?”
নীলা ব্যথায় কুকড়ে যাচ্ছে। আবির ওকে ঠেলে দূরে সরিয়ে দিল। সাথে নীলার শাড়ির আঁচলটা সরে গেলো। আবির ঘৃণায় চোখটা সরিয়ে নিলো।
“কোনো প্রমাণ ছাড়া তুমি এভাবে বলতে পারোনা”
আবির গিয়ে রেলিংএর সাথে হেলান দিয়ে একপা তুলে দুহাত জিন্সের পকেটে দিলো “গত মাসের ১৫ তারিখ। এক মেয়ে ঠিক তোর মতই , আর এক ছেলে ঠিক ……..”
নীলা আতঙ্কিত হয়ে উঠলো । ওর ভয়ার্ত চেহারাই নাকি ইতিহাস উগলে দিচ্ছে।
“ঠিক নিশানের মতো, ওয়ারির এক নামি ফাইভস্টার হোটেলের বাহিরে দেখতে পাওয়া গেছে বলে কিছু সিসিটিভির মতামত”
নীলা দৌড়ে আবিরের কাছে গেলো “বিশ্বাস করো আবির। আমি ,,,, আমি কিছুই করিনি”
আবির ওকে আবারো দূরে ধাক্কা দিলো “আমি তো বলি নি তুই কিছু করেছিস ……. ”
নীলা থেমে গেলো। কিন্তু ওর চোখ দুটো চিৎকার করছে। “আবির, আমি কিছুই করিনি। সব ওই ওই নিশানের দোষ নিশান……..”
আবির ওর একহাত চেপে ধরলো “তোর এই বিষাক্ত রূপে এখন যদি আমি কিছু করতাম, ঠিক আগামীকাল এই একই কথা বলতি , সব আবিরের দোষ…..”
“আবির…..”
“তুইই তো নারী। উচ্ছৃঙ্খল পোশাকে ঘুরবে , বেগানা পুরুষদের কাছে ডাকবে…….. অথচ তোমায় ছুয়ে দেখলে সব দোষ পুরুষের ?”
“আবির আমি রো পুরোটাই তোমার.. তুমি চাইলে” ….
“হুম…. তুই খুব দামী। নিজেকে উৎস্বর্গ করছিস….. আর বাকিরা সস্তা……” বলে আবির বেরিয়ে আসতে লাগল।
“তুমি এখান থেকে গেলে আমার লাশ দেখবে আবির”পেছন থেকে নীলার কণ্ঠ ভেসে এলো।
আবির এর মাথায় অগ্নেয়োগীরি টগবগ করছে। পেছনে ঘুরে দেখে নীলা রেলিং এর ধারে দাড়িয়ে এটা বলছে। আবির ওর দিকে এগোলো।নীলা এখনও ভয় পেয়ে আছে “দেখো তুমি কিন্তু এভাবে এগোলে আমি,,,,আমি লাফ দিব”
কিন্তু আবির নিজের মতই এগিয়ে যেতে লাগলো । নীলা তাকিয়ে রইলো। আবির গিয়ে সোজা নীলাকে ধাক্কা দিয়ে “আবির”…. ওর একহাত ধরে ফেললো।
“আবির,,,,, আবির হাত ছাড়বে না”
আবির এক নজরে তাকিয়ে আছে।
“আবির,,,, প্লিজ আমাকে ওঠাও আবির….”
“তোর স্বপ্নটা নাহয় পূরণ করে দেই”
“নাহ।।।।। নাহ”
আবির ওকে তুলে মুখ চেপে ধরলো “কাক কখনো ময়ুরপালক লাগিয়ে ময়ূর হয়ে যায়না। মানুষ এমনই স্বভাবের দাশ” মুখ ঠেলে নীলা কে ফেলে দিয়ে আবির ছাদ থেকে চলে গেলো।
“নীলা রুক্ষ চোখে তাকিয়ে রইলো।
এবারে ঘটলো আরেক ঘটনা। আবির গাড়ি নিয়ে বাসায় ফিরছিল। মাত্রই ট্রাফিক এ আটকা পড়েছে। সিগন্যাল লাল।
গ্রীন সিগন্যাল পড়তেই আবির ফুল স্পিডে গাড়ি স্টার্ট করল।
কিন্তু অবাক বিষয় , একটা কালো গাড়ি বারবারই আবিরের গাড়িকে ওভারটেক করতে লাগলো। কিন্তু আবির এখন কোনো ঝগড়া ফাসাদের মুডে নেই।
কিন্তু আবারো গাড়িটা ঘুরে সেই আবিরের গাড়ির পেছনেই এসে গেলো। লুকিং মিরর এ দেখা গেলো গাড়িটার ভেতরে কেউ একজন কালো পোশাকে বসা। যতটুকু বোঝা যায়।
কিন্তু আবির যে পথেই বাক নিচ্ছে গাড়িটাও সেদিকেই যাচ্ছে। বেশ কয়েকবার একই ঘটনা দেখে আবির এর মনে একটু সন্দেহ উঁকি দিলো।
আবির খুব দ্রুতবেগে গাড়ি চালাচ্ছে।কিন্তু আশ্চর্য ওই গাড়িটাও একই কাজ করছে।
কি একটা মাথায় এলো, আবির সামনের এক ট্রাফিক পুলিশের সামনে খুব কষে ব্রেক করলো নিজের গাড়িটা।
পেছনের লোকটা হয়তো বোঝেই নি এমনটা হবে। তাই পেছনের গাড়িটা তাল সামলাতে না পেরে ঠিক আবিরের গাড়ি পাশ কাটিয়ে চলে গেলো। আর দাড়াল না। ট্র্যাফিক পুলিশ বাঁশি বাজাতে লাগলো। কিন্তু গাড়িটা আর থামলো না। আবির সন্দিহান চোখে তাকিয়ে রইলো।
.
.
.
রাতে ১০ টার দিকে আবির বাসায় ফিরলো। তবে তার এই আগমন এমনই ভয়ংকর ছিলো যা বলার বাহিরে।
সবাই খাবার টেবিলেই বসে ছিল। আবিরের আসার অপেক্ষা।
আবির দরজা খুলে (জুতাটাও খুললো না?) ভেতরে ঢুকে সোজা ডাইনিং টেবিলের দিকে এগোলো। রাই অবাক হয়ে ভ্রু কুচকে তাকালো। রেজোয়ান সাহেব হা করে আছেন।
ব্লু শার্ট, জিন্স, চুলগুলো এলোমেলো, বুকের উপরে দুটো বোতাম খোলা, স্লিভ গুলো কনুই এর উপরে আবির এসে সোজা ডান হাত এগিয়ে নীলার বাবা (ওর চাচা) এর সামনে রাখা কাচের প্লেটটা তুলে ফেলে দিল। কাঁচ ভাঙার শব্দ সবাই অবাক হয়ে গেলো।
“কি করছো আবির….?” চাচী চেঁচিয়ে উঠলেই আবির তার সামনের প্লেট ও ধরে ছুড়ে ফেলে দিলেন ।
পাশেই নিশান ও ছিলো “ভাই….”
“চুপ…..” বলে ওর সামনের প্লেট গ্লাস যা ছিল সব ঠেলে ফেলে দিল। আর হাতে তুড়ি মেরে চাচা চাচীর দিকে ইঙ্গিত করলো “আউট। গেট আউট”
“আবির….” ওর মা দাড়িয়ে পড়লো…
“তোমাকে কেউ জিজ্ঞেস করেনি…..” আবির নিজের ডান হাতের স্লিভ কনুই থেকে সামান্য উপরে তুললো “অনেক বেড়ানো হয়েছে…. এরপর আবার নাতি নাতনীদের দেখতে আসবে তোমরা। এই মুহূর্তে বের হও”
“আবির, কি বলছিস এসব?” কাশেম মিয়া এগিয়ে গেলেন।
“একবারের বেশি বলবনা । রাত মাত্র ১০ টা , এখন ও যাওয়া সম্ভব। ”
রেজোয়ান সাহেব তো মাঝে মাঝে যেনো বিশ্বাসই করতে পারেননা যে আবির নাকি তারই ছেলে। সত্যিই অবাস্তব মনে হয়। উনি তো শুধু ছেলের কান্ড দেখে মজা নেন। তবে আজ ওকে সত্যিই ভয়ংকর লাগছে।
এমনকি আবিরের মা ও কিছু বলতে পারছেন না। ফুপি এগিয়ে গেলো “আবির…..”
“কেউ একটা কথাও বলবেনা। আমি কতক্ষন কথা বলবো” ওর চিৎকার শুনে আর কারো সাহস ও হলো না।
“তো, ব্যাগ গুলো ও কি আমিই এনে দিবো?”দাঁতে দাঁত চেপে বললো।
চাচা বললেন “রেজোয়ান, তোমার ছেলে কিন্তু এবার বেশিই করছে”
রেজোয়ান সাহেব নির্বাক তাকিয়ে রইলেন।
চাচী রেগে বললেন “ভদ্রতা সব লোপ পেয়েছে। তোমার ছেলে কিন্তু বাড়াবাড়ি করছে। যেতে হলে চলেই যাবো। এভাবে বলার কি আছে?”
আবিরের মা চুপ করে আছেন। ওর চাচী পুনরায় বললো “এরকম জানলে জিবনে মেয়ের বিয়ে এবাড়ি ঠিক করতাম না”
আবির কাচের ডাইনিং টেবিলের উপর একটা ঘুষি দিলো “অভদ্রতা এখনও করিনি। আর মেয়ে!? হুহ ওকে কেউ কিনতে যায়নি। আপনারা বেচতে এসেছিলেন”
রেজোয়ান সাহেব যেনো এবার হার্ট অ্যাটাক করবেন “আল্লাহ, আল্লাহ এ কি আমার ছেলে রে? আমার তো মনে হয় না” বিড়বিড় করে। সুমি একটু ঝুঁকে মামার কানে বলল “আমারও মনে হয় না মামু”
রেজোয়ান সাহেব অসহায় চোখে সুমির দিকে তাকালো। সুমি চোখ দিয়ে শান্তনা দিলো।
চাচী হুংকার দিয়ে উঠলেন “দেখো রেজোয়ান দেখো তোমার ছেলে এখন কি বলছে দেখো ……”
আবির এবার চাচার দিকে দুপা এগোলেন “এর থেকে বেশি এক্সপ্লেইন আমি করিনা। ”
রেজোয়ান সাহেবের তো ঘাম ছুটছে আস্তে করে সুমিকে ডাকলেন “এই সুমি, সুমি। মা রে একটু বাতাস কর বাতাস। আমি তো শেষ। এ কি আমার ছেলে?”
সুমি ওরনা র কোণা দিয়ে মামাকে বাতাস দিচ্ছে “তোমার ছেলে মনে হয় বাইরে থেকে ঝগড়া করে এসেছে….”
“তার জন্য এরকম করবে!”
“হাফ মেন্টাল” সুমি বড়ো বড়ো চোখে তাকালো।
একদিকে রেজোয়ান সাহেবের বাচ্চামো, অন্যদিকে আবিরের এই রূপ , মোটামুটি রাই এর মাথা ঘুরছে। রাই এগিয়ে গিয়ে আবিরের সামনে দাড়ালো আর ভয়ে ভয়ে বললো
“আপনি…..”
“এখান থেকে যাও,” শক্ত গলায় বললো আবির। নিজেকে অনেক নিয়ন্ত্রণ করে রাই কে যেতে বললো। কিন্তু রাই ভয় পেলেও গেলো না
“শুনুন তো, এমন কেনো করছেন?”
আবির এবার রাই এর দিকে ঘুরে ধমক দিয়ে উঠলো “ঘরে যাও…. তোমাকে যেতে বলেছি…..”
রাই এর বুকটা কেপে উঠলো। ওর প্রাণপাখি যায় যায় অবস্থা। আবির এই দ্বিতীয় বার ওর ওপরে চেঁচালো। সেই রাতে, আর এখন।
রাই এর এত্ত খারাপ লাগছে। আবিরের কঠোর মুখটা দেখে রাই পিছিয়ে গেলো। আর সোজা নিজের ঘরে চলে গেল।
এদিকে বাহিরে সবাই চেঁচামেচি করলেও শেষে আবিরের শুধু একটা কথাই কানে এলো “আমি যেনো ঘর থেকে বের হলে আপনাদের একজনকে ও না দেখি”
বলে আবির নিজের ঘরের দিকে চলে গেলো। বাকিরা সবাই হতভম্ব। এমন একটা কথা আবির কেনো কিভাবে বললো কে জানে? তবে চাচী কিছু একটা আন্দাজ করলেন। আর নীলার বাবাকে নিয়ে ঘরে চলে গেলেন।
বাকিরা বাহিরেই দাড়িয়ে। সুমি গলা নামিয়ে মামাকে বললো “আইস ব্যাগ এনে দেই মামু…….?”
রেজোয়ান সাহেব তো ছেলের রাগ দেখে আর তর্কেই গেলেননা। কি ছেলে রে মাইরি! সাক্ষাৎ হিটলার।
নিশান চিন্তায় পড়ে গেল। আবির হটাৎ এমন ব্যবহার কেনো করলো? আশ্চর্যের ই বিষয়। কেননা আবির এমন ছেলে যে কখনো পরিবারে এত বেশি সময় ও দেইনি, বা ,কারোর প্রতি তার কোনো আগ্রহ ও ছিলনা। সোজা সাপটা রেজোয়ান সাহেব এর বিজনেস দেখে, অফিস সামলায় আর দিনশেষে এসে ঘুমিয়ে যায়। ঠিক এমনটাই ছিলো ও।
কিন্তু হটাৎ এতো এতো পরিবর্তন।
আবিরের মা বলে উঠলেন “ওই মেয়েটাই আমার ছেলের মাথা খেয়েছে। নইলে আমার ছেলে জীবনেও ওর গুরুজনদের সাথে খারাপ ব্যবহার করেনি”
রেজোয়ান সাহেব চেয়ার ছেড়ে উঠে গেলেন “হ্যাঁ ছেলে হাসলেও দোষ, কাঁদলেও দোষ, বসলেও দোষ, উঠলেও দোষ, হা…… (থেমে গেলেন ) বাথরুমে গেলেও দোষ। ” সবাই চোখ গোল গোল করে তাকালো
“যত দোষ ওই দুদিনে আসা মেয়ে টার যত্তসব” বলে রেজোয়ান সাহেব ও প্রস্থান করলেন।
সুমি হাতের ওরনা দিয়ে বাতাস করতে করতে বলল “মা শোনো…. আজ কি সবাই ক্লোজ আপ দিয়ে দাঁত মাজতে ভুলে গেছে নাকি? এরকম বিকর্ষণ কেনো করতাসে?”
ফুপি সুমির হাতে থাপ্পড় দিলেন “চুপ”
সুমি মুখ ফুলিয়ে তাকিয়ে রইলো।
রাই এর খুব অভিমান হলো। এভাবে বলার কি ছিল। তাও সবার সামনে। ওর খুবই খারাপ লেগেছে। আবিরের কিছু সমস্যা থাকলে বলতো। কিন্তু এরকম ভাবে রাগলো ও। হাহ কথাই বলবনা।
তখনি আওয়াজ এলো দরজা খোলার। রাই বারান্দায় দাড়িয়ে ছিলো। উঁকি দিয়ে দেখলো আবির ঘরে ঢুকে একটু হাঁটাহাঁটি করলো। তারপর টাওয়েল নিয়ে বাথরুমে চলে গেলো।
“হাহ কি সুন্দর। এসে একবার ডাকলো ও না। আদৌ এই ঘরে আছি না মরে গেছি জানেই না। ধুর ধুর”
কিছুক্ষন পর আবির বেরিয়ে এলো। রাই ভাবলো হয়তো এবার রাই কে খুঁজবে। কিন্তু রাই এর ভাবনায় এক চিমটি গুড় ঢেলে আবির গিয়ে নিজের ল্যাপটপটা বের করলো। আর সোফার উপরে বসে গেলো।
রাই এটা দেখে তো ?
“করো কাজ। যতক্ষণ মন চায়। ”
রাই বারান্দাতেই দাড়িয়ে রইলো।
এদিকে আবিরণযোগ সহকারে কিছু কাজ করছে। কি করছে তাতে রাই এর কোনো মাথা ব্যথা নেই । কিন্তু আজ আবির ওকে না ডাকলে ও এখন থেকে বেরোবে না এটা শিওর।
ওদিকে জনাব নিজের মতই কাজকরেই যাচ্ছেন। বেটা অন্তত এটুকু তো খেয়াল কর এই ঘরে আর কেউ আছে কিনা।
সেকেন্ড যায়, মিনিট যায় আবিরের ভাবের উন্নতি নেই। নিজের মতই খুব গম্ভীর মুখে কিছু কাজ করছে।
এদিকে রাই দাড়িয়ে থাকতে থাকতে ক্লান্ত। কখন আসবে ও।
রাই এর মেজাজ এতই খারাপ হচ্ছে যে কি বলবে।
ঐযে বলে না “রাগের থেকেও ভয়ংকর হলো অভিমান। ” রাগ তো সময়ের সাথে সাথে কমেই যায়। কিন্তু অভিমান এমন , যে সময় এর সাথে সাথে এর ভরটা শুধুই বাড়ে। মানুষ রাগের মোকাবেলা করতে পারলেও অভিমান খুবই উর্ধ্বে। সহজে পেরে ওঠা যায়না। তাই যত দ্রুত সম্ভব অভিমান কাটিয়ে ফেলা উচিত হয়।
কিন্তু এদিকে একজন অভিমান করে বসে তো আরেকজন যেনো জানেই না। একটা পর্যায়ে তো রাই ব্যাস হাফিয়েই গেলো। “লাগবে না কারো আসার আমি নিজেই চলে যাচ্ছি” মুখ গোমরা করে রাই ঘরের দিকে পা বাড়ালো। তখনও আবির মনোযোগ দিয়ে কাজ করছে। কিন্তু কি এমন জরুরি কাজ কে রাই কে ও দেখছে না।
রাই জোরেজোরে পা ফেলে হেঁটে খাটের ওপরে গিয়ে বসলো। মুখ ঘুরিয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে রইলো।
কিছুক্ষন পর , আবির সোফায় একটু হেলান দিলো। যেনো মানুষ যেভাবে একটানা কাজ করে ক্লান্তি দুর করার জন্য করে। ঠিক তেমনই।
রাই চোখ সরিয়ে নিলো ।
আবির শান্ত নজরে রাই এর দিকে তাকালো। আর ল্যাপটপটা বন্ধ করে নিলো। উঠে হাটতে হাটতে গিয়ে রাই এর কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়লো।
রাই অবাক। তবে মুখ দিয়ে কিছু বলতে চাচ্ছে না।রাই মুখ ঘুরিয়ে নিল। আবির চোখ বুজে রাই এর একটা হাত টেনে নিজের চুলের মধ্য গুজে দিল। তবুও রাই কোনো সাড়া দিলনা। চুপ করেই রইলো। আবির ও চোখ বুজে চুপ করে রইলো।
বেশ খানিকক্ষণ এভাবে চলে গেলো।
“অভিমান, আবদার, বায়না এসবই একটা মানুষ ঠিক তার কাছেই করে যে ওই মানুষটার খুব কাছের কেউ হয়…….”
রাই আবিরের দিকে তাকালো। আবির চোখ খুলে রাই এর দিকে তাকালো “আমার থেকে তো কষ্ট ছাড়া কিছুই পাও না। তবে কেনো এই অভিমান? ” আবির উঠে বসে রাই এর মুখোমুখি বসলো “আমি তো তোমার জন্য শুধুই একটা অভিশাপ। নয় কি?”
রাই অবাক হলো। ছেলেটা সবসময় ওকে নিজের কথার জালে কি সুন্দর ফাঁসিয়ে নেয়…..তবে ওর কথাটা গায়ে বিধলো। এমনকরে বলা লাগলো ওর! সত্যিই কি অন্যকিছু ছিলনা বলার জন্য? রাই তাকিয়ে রইলো।
“তোমরা খুব সহজেই আবেগে ভেসে যাও। কিন্তু এই আবেগের জন্যই বাছবিচার করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেল”
রাই মুখ ঘুরিয়ে নিল “আপনি তখন ওভাবে না চেঁচালেও পারতেন। ”
আবির বাকা হেসে শুয়ে পড়লো সাথে রাই কে ও টেনে বুকে নিলো “ঐযে, তোমার কষ্ট দেওয়ার সমস্ত ভার নিয়েছিলাম।”
রাই জানে এইকথাটা ওর জন্যই ছিল। সত্যিই এর বিপক্ষে আর কোনো কথা বলতে পারেনা রাই। বলতে ঠিকই চায়। কিন্তু পারেনা। কিছু একটা পিছুটান , যেটা ওকে আবিরের কথার প্রত্যুত্তর দিতে দেয়না।
চলবে…………????
আমার মনে হয় আবিরের হেটার্সরা ওকে মারতে চাইছে। ? বলে যাও কালো গাড়ি কার কার আছে?? লেখিকাকে কেউ সন্দেহ করবেন না?।