#বাবার_ভালোবাসা
পর্বঃ৩৯
লেখাঃ #রাইসার_আব্বু
রাজও অবাক হয়ে যায়। তার হাত পা নাড়াতে পাচ্ছে। রাইসার কাধে ভর দিয়ে রাজ কোন রকম দাঁড়িয়ে যায়।
”’ রাজ এখন অনেকটায় সুস্থ একদিন, রাইসা তার বাবাকে নিয়ে হসপিটালে যায়। হসপিটাল থেকে ফেরার পথে কথাকে পুলিশের গাড়িতে হ্যান্ডকাপ পরা দেখে দাঁড়াতে বলে।
” রাজ পুলিশকে জিজ্ঞেস করে কথাকে কেন থানায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে?
” পুলিশ রাজকে যা বলে তা শোনার জন্য রাজ ও রাইসা কেউ প্রস্তুত ছিল না। কথাকে নাকি হোটেলে আপত্তিকর কাজের জন্য পুলিশ গ্রেফতার করেছে।
” কি বলছেন এসব? ডাক্তার আপনার কোথাও ভুল হচ্ছে না তো? কথা এমন মেয়ে না। ‘
”কি বলছেন আপনি? হোটেল রংধনুতে এই মেয়ে সহ আরো কয়েকটা মেয়েকে ধরেছি। এরা আসলে ভদ্রতার আড়ালে দেহ -ব্যবসা করে থাকে।
” আঙ্কেল কি বলছেন এসব? উনি এমন করবে কেন? ”
– পুলিশ অফিসার সিয়াম রাইসাকে দেখে চমকে গেল! এই সেই শিল্পী যাকে দেখার জন্য পুরো দেশ পাগল! কি যাদু দিয়েছে কন্ঠে!
‘ কি হলো আপনি কিছু বলছেন না কেন? ‘ বাবাই তুমি পুলিশ আঙ্কেলকে বলো উনাকে ছেড়ে দিতে।
” মিঃ সিয়াম, কথাকে আপনারা ছেড়ে দেন। ও খুব ভালো বংশের মেয়ে। এসব তার বাবা সহ্য করতে পারবে না। আর পরর্বতীতে এমন কোন ঘটনা ঘটবে না।
” ঠিক আছে। এভারেই মতো ছেড়ে দিচ্ছি। আর হ্যাঁ তুমি শিল্পী রাইসা না? তোমাকে দেখতে পারবো ভাবতেই পারিনি। মামনি তোমার সাথে একটা সেলফি নেওয়া যাবে?
” জ্বি অবশ্যই!
‘পুলিশ অফিসার আর তার দলের সদস্যরা রাইসার সাথে সেলফি তুলছে।
” কথা হা হয়ে রাইসার দিকে তাকিয়ে আছে। কি হচ্ছে সে যেন কিছুই ভাবতে পারছে না। সবচেয়ে অবাক হচ্ছে রাজকে দেখে। রাজ কিভাবে সুস্থ হলো! সে তো কথা বলতেই পারতো না। আর এখন দিব্য কথা বলছে চলাফেরা করছে। ডাক্তার তো বলছিল কোনদিন রাজ দাঁড়ানো তো দূরের কথা সুস্থ হতে পারবে না। কথা রাজের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে পারছে না বুকের ভেতরটা কেমন যেন দুমড়ে -মুচড়ে যাচ্ছে। লজ্জার মাথাটা নিচু করে আছে সে। হঠাৎ এমন সময় পুলিশ অফিসার সিয়াম বললো
” আচ্ছা মামনি আসি তাহলে। ”
” আচ্ছা! ”
” পুলিশ অফিসার চলে গেলে, কথা সেখান থেকে চলে যাচ্ছিল! পিছন থেকে রাইসা বলে উঠলো, কোথায় যাচ্ছেন অনেক রাত হয়েছে তো। চলেন আপনাকে বাসায় পৌঁছে দেয়।
” না মামনি আমার জন্য অনেক করেছো আর কিছু করতে হবে না। ”
” রাইসা মামনি তুমি গাড়িতে গিয়ে বসো। ”
” আচ্ছা বাবাই। ”
” রাইসা গাড়িয়ে গিয়ে বসলে, রাজ কথার দিকে তাকিয়ে বললো, ‘ কেমন আছেন ম্যাডাম?’
” খুব ভালো। ”
” ওহ্ আচ্ছা! কিছু মনে না করলে আপনাকে একটা প্রশ্ন করি?”
” হুম করো”
” হোটেল রংধনুতে কেন গিয়েছিল? ” জানো আজ থানায় গেল কাল নিউজপেপারে বড় করে হেডলাইনে ছাপা হতো তোমার এই কথা। তোমার বাবা কি পারত এটা শুনে বেঁচে থাকতে?” অারর তোমার বড়লোক স্বামী কি ভাবতো? কেন গিয়েছিলে?
” কথা কাঁদছে কিছু বলছে না। রাজ বুঝতে পারলো তার কথাটা বলা ঠিক হয়নি। কথা কেঁদেই যাচ্ছে।
ম্যাডাম প্লিজ কাঁদবেন না। সরি আপনাকে এমন প্রশ্ন করার জন্য। আচ্ছা গাড়িতে উঠুন!
‘ কথা গাড়িতে গিয়ে রাইসার সাথে বসলো। রাইসা এখন দেখতে আরো কিউট হয়েছে। মনে হচ্ছে বেহেশত থেকে উঠে এসেছে। বার বার কথা রাইসার দিকে তাকাচ্ছে। কথার খুব করে ইচ্ছে করছে রাইসাকে একবার বুকে নিতে। রাইসার মুখে মা ডাক শুনতে। কথা রাইসার দিকে তাকিয়ে খেয়াল করলো রাইসা গাড়ির একদম সাইডে চলে গিয়েছে। মাঝখানে বেশ ফাঁকা রেখেছে। কথা মাঝখানে ফাঁকা দেখে বললো’ মামনি তুমি দূরে কেন কাছে এসে বসো। ”
” না ঠিক আছে ম্যাডাম! আমরা তো গরীব ছিলাম তাই কোন বড়লোকের কাছে ঘেষতে মানা। ”
” কথার মনে পড়ে গেল বিয়ে বাড়ির সেই কথাগুলো, রাইসা সেদিন কি কান্নাটায় না করেছিল। বিনিময়ে সে, রাইসাকে ছোটলোকের বাচ্চা বলে তাড়িয়ে দিয়েছে। রাইসা বাসার সামনে এসে বললো’ এখানেই দাড়ান ‘!
রাজ বললো’ কিন্তু ম্যাডাম, আপনাদের বাসা তো আরো এক কিলো দূরে!
‘ না এখানে আমার একটু দরকার আছে। তাই এখানেই নামিয়ে দেন। ”
” কথা গাড়ি থেকে নেমে পড়লো। ”
গাড়ি চলছে আপন গতিতে। রাজের মনে বারবার নানা প্রশ্নের উদ্রেক হচ্ছে। কথা কি কারণে এসব কাজ করতে যাবে ভেবে পাচ্ছে না। দেখতে দেখতে বাসায় এসে যায়। ঘড়িতে তাকিয়ে দেখে বারোটা বেজে গেছে।
” রাইসা আজ অনেক হ্যাপি তার বাবা হাটতে পারে। কথা বলতে পারে। তার খুশি যেন ধরে না। রাইসা তার বাবাইকে ফ্রেশ হয়ে আসতে বললো।
” রাজ ফ্রেশ হয়ে এসে দেখলো টেবিলে খাবার সাজাচ্ছে। বাসায় কাজের লোক কাউকে আসতে দিচ্ছে না রাইসা। তার বাবাইকে নিজ হাতে খাওয়াবে! রাজ টেবিলে বসতেই রাজের কপালে চুমু দিয়ে বললো ‘ বাবাই মা সন্তানকে কিভাবে খাওয়াই জানো?’
” না তো জানি না তো? ‘
” হিহি আচ্ছা ! তুমি হা করো একদম কথা বলবে না। তোমার মা এখন তোমাকে খাইয়ে দিবে। রাইসা রাজকে খাইয়ে দিচ্ছে। রাজের চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি গড়িয়ে পড়ছে। রাইসা বাম হাতে রাজের চোখের পানি মুছে দিয়ে বললো, ‘ বাবাই মা কি তার সন্তানের চোখের পানি দেখতে পারে?
‘ না তো।
” তাহলে তুমি কাঁদছো কেন?”
” না মা কাঁদছি না তো? আমি জানি না আমি কি এমন ভালো কাজ করছিলাম। যার জন্য আল্লাহ পৃথিবীর শেষ্ঠতম নেয়ামত আমায় দান করছে। হইছে মা পেট ভরে গেছে। এতো দিন তো আমার মা টা আমাকে খাইয়েছে। আজ আমি আমার মা কে খাওয়াবো। কতদিন আমার কলিজার টুকরাকে খাওয়াতে পারিনি। হা কর মা আমার।
-রাইসা খাচ্ছে আর কাঁদছে। আল্লাহ তার সব আশায় পূরণ করেছে। আল্লাহর প্রতি দিন দিন রাইসার বিশ্বাস দৃঢ় হচ্ছে! খাওয়া শেষ হলে রাইসা রাজকে বলে ‘বাবাই তুমি আজ আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিবে। ”
‘ ঠিক আছে মা! রাজ রাইসার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। অন্যদিকে জানালার ক্লাস ভেদ করে, চাঁদের জোছনা যেন আরেকটা চাঁদের উপর পড়ছে। রাজের সামনে অজস্র স্মৃতি ভেসে উঠছে। ছোট বাচ্চাকে তার মা যেমন যত্নে রাখে তেমনি রাইসা খেয়ার রেখেছিল!
‘ এদিকে যতই দিন যাচ্ছে রাইসা ততই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। বিশ্বব্যাপী ছোট্ট রাইসার গান পৌঁছে গেছে! একনজর রাইসা দেখার জন্য কত মানুষ পাগল। দিনগুলো ভালোই কাটতেছিল। হঠাৎ একদিন সকালে বেলা রাইসার নামে একটা চিঠি আসলো! যদিও ইমেল করেছে। তবুও স্পেশাল ভাবে আমন্ত্রণ পত্র পাঠিয়েছে। সাথে চিরকুট! সামনে বৃহস্পতিবার বাংলাদেশের সেরা শিল্পীর নাম ঘোষণা করবে সেখানে রাইসাকেও যেতে বলেছে।
” দেখতে দেখতে বৃহস্পতিবার চলে আসলো, সন্ধায় রাইসা তার বাবাকে নিয়ে উপস্থিত হলো অনুষ্ঠানে। রাত আটাটায় শত শত টিভি চ্যানেল লাইভ টেলিকাস্ট করছে! এমন সময় নাম ঘোষণায় পালা আসলো। উপস্থাপিকা, জেসিকা একটু সময় নিয়েই বললো,’এবারের বাংলাদেশের সেরা শিল্পীদের লড়াইয়ে সবাইকে পিছনে ফেলে সেরা শিল্পী নির্বাচিত হয়েছে কথাটা বলে একটু থামলো। সময় মনে হয় নিরবতা পালন করছে কেউ কিছু বলছে না। পিনপীনে নিরবতা বিরাজ করছে!
জেসিকা আবার বললো, কি হলো? সবাই চিন্তায় পড়ে গেলেন? চিন্তায় কিছু নেই। এবার বাংলাদেশের সেরা শিল্পী হয়েছে,” তাসনিম কারিমা রাইসা”। তো এখন আপনাদের সামনে আসছে রাইসা!
”রাইসা স্টেজে উঠেই মাইক্রোফোন হাতে নিয়ে বললো,’ আসসালামু আলাইকুম। প্রথমেই শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি, মহান আল্লাহর প্রতি। যিনি নগণ্য আমাকে এ জায়গায় এনে উপনীত করেছি। তার পর যিনি আমার এ সাফল্যের পিছনে ভূমিকা পালন করছে তিনি আমার বাবা। আমার বাবা পৃথিবীর শেষ্ঠ বাবা। যে বাবা আমার জন্য নিজের ভবিষৎতকে জলাঞ্জলি দিয়েছে। আর আপনারা সবাই মনে রাখবেন প্রচেষ্টা আর সৎ উদ্দেশ্য থাকলে আল্লাহ আপনাকে ঠিকই সাহায্য করবেন। মনে রাখবেন পৃথিবীর সবাই আপনাকে ভুলে গেলেও একজন শুধু আপনাকে ভুলে না। তিনি হচ্ছে আমাদের সৃষ্টিকর্তা! আমার মা তিনি আমাকে ছোট রেখেই চলে যায় অন্য মানুষের সাথে। বাবা মায়ের স্নেহ দিয়ে বড় করেছি। যখন বুঝতে শিখেছি তখন বাবাকে একটা মেয়ে অনেক ভালোবাসত। আর যখন আমার বাবা একসিডেন্টে বাক-শক্তি হারিয়ে ফেলে , সারা শরীর প্যারালাইজড হয়ে যায়! তখন যে মেয়েটা আমার বাবাকে পাওয়ার জন্য ব্যস্ত ছিল। আমার মুখে মা ডাক শুনার জন্য যে পাগল ছিল। , সেও আমার বাবাকে একা রেখে চলে যায়। আমাকে ছোটলোকের বাচ্চা বলে বকা দিয়েছিল। খুব কেঁদেছিলাম সেদিন। উনার পায়ে পর্যন্ত ধরেছিলাম। কিন্তু তিনি আমাকে বাবাইকে রেখে বিয়ে করে নিয়েছিল। যখন বাবাই এর নাক দিয়ে ব্লাড বের হতো। তখন ছোট্ট মানুষ কার কাছে যাবো। তখন নামাযে দাঁড়িয়ে যেতাম। আল্লাহর কাছে সব বলতাম। হ্যাঁ আল্লাহ আমার ডাক শুনেছে। আর হ্যাঁ শেষে একজন নিস্বার্থ মানুষের নাম বলছি তিনি হলেন ডাক্তার ফাহমিদা বিনতে কণা। ‘ আর পরিশেষে আপনাদের সুস্থতা কামনা করে আমি আমার বক্তব্য শেষ করছি।
” রাইসার কথা শুনে প্রায় সবার চোখেই জল এসে গেছে। এদিকে অনুষ্ঠান শেষে রাজ রাইসাকে নিয়ে যখন বাসায় ফিরছিল ঠিক এমন সময় রাস্তায় পাশে মেয়েলি কন্ঠে চিৎকার শুনতে পেল! রাজ গাড়ি থামিয়ে নতুন তৈরী করা বিল্ডিংটার দিকে তাকাতেই দেখে দু’জন ছেলে একটা মেয়েকে জোর করে রেপ করতে চাচ্ছে। রাজের কথা শুনে ছেলে দু’টি ভয় পেয়ে যায় আর গাড়ির শব্দে মনে করে পুলিশ। ছেলে দু’টি দৌড়ে পালিয়ে গেলে, রাজ মেয়েটার কাছে গিয়ে দেখে বুকের উপর কাপড় ঠিকঠাক নেই। রাজ তার শার্টটা খুলে মুখের দিকে তাকাতেই চমকে যায়! কাঁপা -কাঁপা গলায় বলে কথা?
”’ কথা রাজকে দেখেই জড়িয়ে ধরে বলতে লাগে রাজ আমাকে বাঁচাও!
” ম্যাডাম কি করছেন এসব? ভয় নেই আপনার কিছু হবে না ছাড়েন প্লিজ। রাজ কথাকে ছাড়িয়ে দিতেই কথা বলতে লাগল’ রাজ কেন বাঁচালে আমাকে? আমি ওই নরপশুদের হাতেই শেষ হয়ে যেতাম। কি করবো এ নষ্ট শরীর নিয়ে? আমি তোমার আর রাইসার সাথে খুব বেশি অন্যায় করেছি। যার জন্য নীলয় আমাকে বিয়ে করে সব সম্পত্তি নিজের নামে লিখে নিয়ে পতিতার ট্যাগ ধরিয়ে দিয়েছে। আজ আমরা কোটিপতি থেকে রাস্তার ফকির। আজ ছেলেগুলো ছিল নীলয়ের পোষা কুকুর। জানতামনা নিলয় এতটা খারাপ। তার প্রয়োজন ছিল আমার শরীর আর টাকা। এখন আমার কোন দাম নেই! আমাকে সে বিক্রি করে দিয়েছিল! এদিকে বাবা স্টোক করে হসপিটালে ”’
চলবে””””””