#বাবার_ভালোবাসা
পর্বঃ৩৬
লেখাঃ #রাইসার_আব্বু
” কি বলছেন ডাক্তার আন্টি? মম আমার বাবাইকে রেখে বিয়ে করতে পারে না। আমাকে নিয়ে যাবেন আমি মমকে বুঝিয়ে বলবো।
” কণা রাইসাকে নিয়ে বিয়ে বাড়িতে যায়। কথাদের বাড়িটা নানা রঙের আলোকসজ্জায় সাজানো হয়েছে। কথা লাল শাড়ি পড়ে কনের আসনে বসে আছে। রাইসা কথাকে দেখেই মম বলে দৌড়ে গেল।
” কথা রাইসাকে দেখেই বললো,” দেখ তো এই মেয়ে কে?
” এই মেয়ে তুমি কে? আর ম্যাডামকে মম বলছো কেন? ”
” এ্যা আসছে উকিল গিরি করতে। মমকে মম ডাকবো না তো কি ডাকবো?”
”আচ্ছা তোমার মম কোনটা?
” কেন ওই যে সুন্দর করে সেজে স্টেজে বসে আছে উনি আমার মম। আমার মম অনেক ভালো। ”
” কি বলছো? ম্যাডামের তো বিয়েই হয়নি। তুমি মম ডাকো ক্যামনে?”
” আরে মশায় আপনি তো অনেক বড় পাজি। আপনি কেন এমন করছেন? আমি বলছি উনি আমার মম। বিয়ে হতে হয় লাগি মম হতে? আর বিয়ে না হলে বাবাই এর সাথে বিয়ে হবে।”
” লোকটি হাহা করে হেসে দিয়ে বললো। কি বলছো এসব? মনে হচ্ছে পাগলী।”
” সরেন তো মম এর কাছে যায়। রাইসা লোকটাকে সরিয়ে দিয়ে কথার কাছে চলে যায়। কথা রাইসাকে কি বলবে বুঝতে পারছে না।”
” মম তুমি বাবাই এর সাথে কি মজা করছো? ”
” তুমি কে মামনি? এখানে কেন?
” হিহি মম বুঝতে পারছি তুমি মজা করতেছো আমারর সাথে। ডাক্তার আন্টি দেখ মম আমার সাথে মজা করছে। ”
” কণা বারবার রাইসাকে চুপ করতে বলছে। বাট রাইসা চুপ করছে না। ”
” কথা মনে মনে ভাবছে, রাইসা যদি এখানে কোন বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে তাহলে দেখা যাবে বাবার মান সম্মানে আঘাত লাঘবে। তাই রাইসাকে না চেনার ভান করছে।”
” কি হলো মম তুমি মজা করছো আমার আে বাবাই এর সাথে ঠিক বলছি না? ”
”না মামনি আমি তোমাকে ঠিক চিনতে পারছি না। এছাড়া তুমি কে মামনি তোমার বাবা -মা কোথায়? তাদের কি দাওয়াত দেওয়া হয়েছে? নাকি তুমি একাই এসেছো?
” এই যে ডাক্তার কণা আপনার তো কোন সেন্স আছে। এখানে মেয়েটা পাগলামী করলে কি হতে পারে জানেন তো? প্লিজ ওকে নিয়ে যান।
” এদিকে সবাই বলতে লাগল বর এসেছে। কথা শেষ হওয়ার আগেই দেখলো বিয়ে বাড়িতে সাতটা গাড়ি উপস্থিত হলো। একটা গাড়ি খুব সুন্দর করে সাজানো। সাজানো গাড়ি থেকে বর বের হতেই চমকে উঠলো কনা। এতো নীলয়। শেষ পর্যন্ত নীলয়কেই কথা বিয়ে করতেছে।
” ম্যাডাম আপনাকে একটা কথা বলি?”
‘ হ্যাঁ বলো।
” নীলয়কেই বিয়ে করছো শেষ পর্যন্ত?”
” হ্যাঁ নীলয়কেই বিয়ে করছি। কারণ ওর পাপের জন্য ক্ষমা চেয়েছে। ও ভালো হয়ে গেছে। আর বাবা ওর সাথে ছোট বেলাতেই ঠিক করে রেখেছে তাই না করতে পারি নি। ”
” রাইসা ততক্ষণে বুঝে গেছে তার মমের সত্যি সত্যি বিয়ে হয়ে যাচ্ছে। রাইসা এবার কান্না করে দিয়ে বললো ” মম তুমি না বলেছিলে বাবাইকে বিয়ে করবে তুমি। ” তুমি না বাবাইকে ভালোবাসতে। তাহলে অন্য বেডারে কেন বিয়ে করো? মম তুমি বিয়েটা করো না। ”
” রাইসা মামনি চলে যাও। বাবা দেখলে তোমাকে বকা দিবে। ”
” মম তুমি বাবাইকে ছেড়ে যেয়ো না। ” রাইসা এবার কথার হাতটা ধরে বললো, ‘ মম আমার বাবাই ছাড়া আর কেউ নেই। তুমি যদি আমাদের ছেড়ে যাও আমি কাকে মম ডাকবো? তুমি না মম আমাকে অনেক ভালোবাসতে। রাইসার চোখের পানি কথার হাতের উপর টপটপ করে পড়ছে। কিন্তু কথার কোন কর্ণপাত হচ্ছে না। মম তুমি বিয়েটা করো না প্লিজ। না করে দাও, দেখবে বাবাই তোমাকে অনেক ভালোবাসবে? বাবাই কথা বলতে না পারলে কি হবে, আজ তোমার বিয়ের কথা শুনে বাবার চোখে পানি দেখছি। মম তুমি দেখো আমার। বাবাই আবার ঠিক হয়ে যাবে। দেখো আল্লাহ আমাকে আর কাঁদাবে না। মম তুমি চলো তো। কথা রাইসার কাছ থেকে হাতটা টান দিয়ে সরিয়ে নেয়।
” কণা আপনি প্লিজ কথাকে নিয়ে এখান থেকে যান তো। আপনি কি বিয়ে ভাঙার প্রস্তুতি নিয়ে এসেছেন? ”
” কি বললেন ম্যাডাম বিয়ে ভাঙা? আরে না ম্যাডাম তবে একটা জিনিস দেখে গেলাম ভালোবাসা কিভাবে রং পাল্টায়। আপনি না বলেছেন আপনি আপনার মাতৃত্ব নষ্ট করছেন রাইসার জন্য। আর আজ সে রাইসাকেই দূরে সরিয়ে দিলেন। আহা ভালোবাসা। গিরগিটি লজ্জা পাবে আপনাদের ভালোবাসা দেখে। কারন আপনারা যেভাবে ভালোবাসা পাল্টান গিরগিটি সে ভাবে মনে হয় রং ও পাল্টাতে পারবে না ।
” মিস কণা বেশি হচ্ছে কিন্তু? একটা কথা মনে রাখবেন যে মানুষটার সুস্থ হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই। যে মানুষটা বাঁচবে কি না বাঁচবে তার কোন সিউর নেই। যে মানুষটা নিজ থেকে দাঁড়াতে পারে না। যে মানুষটা প্যারালাইজড। যে মানুষটার একটা মেয়ে থাকার পরও কিভাবে তাকে বিয়ে করি? কিভাবে একজন বাবা তার মেয়েকে তুলে দেয়? আমি আবেগ আর বাস্তবতার পার্থক্য দেরিতে হলেও বুঝতে পারছি। ”
” এমন সময় নীলয় আসলো রুমে। নীলয় রুমে এসেই বললো কি হয়েছে কথা। ”
” কথা নীলকে সব বললো। নীলয় সব শুনে কণাকে বললো ‘ ডাক্তার ম্যাডাম আপনাকে কিছু বলায় নেই। রাইসাকে নিয়ে চলে যান। প্লিজ বিয়েটা ভালোভাবে হতে দেন। আর রাইসা মামনি সরি। তুমি খেয়ে যেয়ো। ”
” রাইসা এবার হিচকি দিয়ে কান্না শুরু করে দিলো। দু’হাতে চোখের পানি মুছতে মুছতে বলতে লাগল” সরি আপনাকে মম বলেই ডাকি। মম আপনাকে কিছু বলবো না। আপনি বাবার জন্য অনেক কিছু করছেন। আমাদের বাড়ি ভাড়া, আমার স্কুলে ভর্তি করে দেওয়া আমার বাবাকে বিদেশ নিয়ে চিকিৎসা করানো। আপনার কাছে ঋণী। শুনেছি আল্লাহর কাছে সম্পদের অভাব নেই। আল্লাহ যদি আমাকে টাকা দেয় তাহলে তোমাকে টাকা দিয়ো যাবো। আর আঙ্কেল আমার মমকে কষ্ট দিবেন না। মম আসি, তোমাকে কষ্ট দিলাম।
” আন্টি চলো, চোখ মুছতে মুছতে রাইসা কণাকে নিয়ে বের হয়ে এলো। কনা পারছে না চোখের পানি ধরে রাখতে।
‘ কনা রাইসাকে নিয়ে বাসায় এসে রান্না করে রাইসা আর রাজকে খাইয়ে চলে যায়।
” রাতে রাইসা রাজের বুকে শুয়ে শুয়ে মম মম বলে কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে যায়।
” এদিকে কণা সারারাত ঘুমাতে পারে না। বারবার রাইসার কথাগুলো কানে ভাসতে থাকে। কণা তার মাকে কথা দিয়েছে। তার মায়ের পছন্দের ছেলেকেই বিয়ে করবে। হাতে এখানো অ্যাংগেজমেন্টের আন্টি। দু’চোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ে ।
” ফজরের আযান শুনে রাইসার ঘুম ভেঙে যায়। রাইসা নামায শেষ করে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে তার বাবাকে যেন সুস্থ করে দেয়।
” সামনে বৈশাখ উপলক্ষে স্কুলে সাংস্কৃতিক অনুষ্টান। রাইসাকে ম্যাম বলেছে গান গাইতে। তাই পরের দিন রাইসা সেজেগুজে তারর বাবাইকে খাইয়ে স্কুলে চলে যায়। এদিকে স্টেজে রাইসাকে গান বলতে বললে ‘ রাইসা ধীরে ধীরে স্টেজে গিয়ে মাইক্রো ফোনটা হাতে নিয়ে গাইতে শুরু করে ‘
কলিজা তুই আমার
তুই যে নয়ন এর আলো।
লাগে না তুই ছাড়া লাগে না তো যে ভালো
রূপকথা তুই তো আমারি
জীবনের চেয়ে আরো দামী।
গানটা সবাই মনোযোগ দিয়ে শুনছে। এতো সুন্দর কারো কন্ঠ হতে পারে নাকি। মনে হচ্ছে সুরের জাদুকর। গানটা শেষ হতেই সবাই হাত তালি দেয়। রাইসা স্টেজ থেকে নামতেই অধরা ম্যাম রাইসাকে জড়িয়ে ধরে। কারণ অধরা লক্ষ করছে রাইসা যখন গান গাচ্ছিল তখন তার চোখের কোণে পানি জমছিল।
” রাইসা স্টেজ থেকে নামলে অধরাকে এক ভদ্র লোক বললো, ম্যাডাম আমি বিজনেস ম্যান রোহান বলছি। আমি চাচ্ছিলাম রাইসাকে দিয়ে মিউজিক ভিডিও বানাতে।
চলবে””””
বিঃদ্রঃ কেউ জ্ঞান দিবেন না। আগের পর্বে অনেকে অনেক কমেন্ট করছেন। আর হ্যাঁ গল্পটা ইমোশনাল তবে মনে রাখবেন কষ্টের পর সুখ রয়েছে। আর প্রকৃতির বিচার বলতেও কথা আছে। কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। ধন্যবাদ।