#বাবার_ভালোবাসা
পর্বঃ৩৪
লেখাঃ #রাইসার_আব্বু
‘ ‘ কণা আন্টি দেখে যান বাবাই কাঁদছে। বাবাই কাঁদতেছে দেখে যান। বাবাইকে না করেন। বাবাই যেন না কাঁদে। কণা দৌড়ে রুমে এসে দেখল যে সত্যিই রাজের চোখ দিয়ে পানি পড়ছে। হ্যাঁ রাজের জ্ঞান ফিরেছে। ডাক্তার ফিলিক্স রাজকে দেখে বললো ‘
সৃষ্টিকর্তার কৃপায় জ্ঞান ফিরেছে। তবে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের জন্য যা সন্দেহ করেছিলাম তাই হয়েছে। তিনি কথা বলার শক্তি হারিয়ে ফেলেছেন। সাথে প্যারালাইজড হয়ে গিয়েছে।
.
“কথা অনেকটা অবাক হয়ে বললেন, ” ডক্টর রাজ তাহলে আর কোনদিন কথা বলতে পারবে না। আর কোনদিন হাটতে পারবে?”
” হুম পারবে তবে সে সম্ভাবনা অনেক কম। আর হ্যাঁ আরেকটা কথা মিস কণা আপনারা সপ্তাহখানেক পর রুগীকে বাসায় নিতে পারবেন। ”
‘ থ্যাংকস ডক্টর। ‘
” ডাক্টার ফিলিক্স চলে গেলে রাইসা কথাকে বললো” মম আমার বাবা কি কোনদিন আমার সাথে কথা বলবে না? আমাকে বুকে নিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিবে না? ”
” হুম মা দিবে তুমি মন খারাপ করো না। আল্লাহ চাইলে সব দিবে।”
” এদিকে দেখতে দেখতে পুরো একটা সপ্তাহ চলে গেল। রাজ মোটামুটি অনেক সুস্থ এখন খেতে পারে। তাই সিদ্ধান্ত নিল সবাই কাল দেশে নিয়ে আসবে। রাজকে দেশে নিয়ে আসার পর মোটামুটি সবাই হেল্পফুল ছিল। রাইসাকে আবারো স্কুলে ভর্তি করে দিলো। রাইসা এখন নিজের স্কুলে যেতে পারে। দিনগুলো কষ্টের মাঝেও ভালোই কাটতেছিল।
” স্কুলের বিরতির ঘন্টা দিলে, রাইসা ব্যাগ থেকে টিফিন বের করে যখন টিফিন খাবে তখন তার মনে পড়ে যায়। বাবাই তো দুপুরে খায়নি। মনটা খারাপ হয়ে যায়। টিফিন নিয়ে বসে আছে তখন স্কুলের অধরা ম্যাম দেখে বলে মামনি তুমি খাচ্ছো না কেন? কোন সমস্যা?
” না ম্যাম। কিছু না খেতে মন চাচ্ছে না।”
”আচ্ছা বসো আমি তোমাকে খাইয়ে দেয়। অধরার কেন জানি রাইসাকে দেখেই মায়া লেগে যায়। মেয়েটা শান্তশিষ্ট বেশ। এ ছাড়া পড়াশোনাতেও বেশ ভালো। অধরা রাইসাকে অর্ধেক টিফিন খাইয়ে দিতেই রাইসা বললো, ” ম্যাম আমি আপনাকে খাইয়ে দেয়?’
” না তুমি খাও?
” কেন ম্যাম লুডুস বাচ্চা মেয়ের খাবার বলে আপনি খেতে পারবেন না?”
” আচ্ছা হা করছি খাইয়ে দেও। খাওয়া শেষ হলে অধরা স্কুলের কমনরুমে চলে গেল যোহরের নামায পড়তে। জেসি যখন নামাযে দাঁড়াবে তখন রাইসা পিছন থেকে বললো, ” ম্যাম কথা ছিল একটু?”
” হ্যাঁ কি বলবে বলো?”
” ম্যাম কিছু মনে না করলে আমি কি আপনার সাথে নামাযে দাঁড়াতে পারি? ”
” অধরা অবাক হয়ে যায়। কিছু না বলে মাথা নাড়িয়ে সায় দেয়। ”
এদিকে স্কুল ছুটি হলে স্কুল থেকে ফেরার পথে তার ক্লাসফেন্ড অর্ককে দেখলো তার মাকে জড়িয়ে ধরে গাড়িতে করে বাসায় যাচ্ছে। এটা দেখেই কেন যেন তার মন খারাপ হয়ে যায়। মনে হয় তার মা যদি থাকতো তাহলে অবশ্যই এভাবে আদর করতো।
” বাসায় আসার পর রাইসা প্রথম তার বাবার রুমে যায়। রাইসা তার বাবাইরের কপালে চুমু দিয়ে বললো, ” বাবাই তুমি আমাকে ছেড়ে যেয়ো না কখনো। তুমি আমাকে ছেড়ে গেলে আমি বাঁচবনা। আমার যে তোমাকে ছাড়া আর কেউ নেই।’ ‘ রাইসা দেখলো যে তার বাবাই কাঁদছে।
” রাজের কান্না দেখে রাইসা আবারো রাজের কপালে চুমু দিয়ে বললো’ বাবাই তোমাকে না বলেছি তুমি কেঁদো না? তুমি কাঁদলে আমার খুব কষ্ট হয়। একদম কাঁদবে না। ও বাবাই তুমি না আমার জীবন। স্কুল থেকে এসে তোমার মুখ দেখে আমার মন ভালো হয়ে যায়। তুমি যদি কান্না করো তাহলে আমার কেমন লাগে বলোতো? রাজের চোখের পানি মুছে দিয়ে। ” তুমি তো খাওনি দাঁড়াও তোমার জন্য খাবার নিয়ে আসছি। রাইসা কিচেনে গিয়ে দেখে, ” ভূয়া রান্না করে রেখে গেছে। তরকারিটা ঠান্ডা হয়ে গেছে। ঠান্ডা তরকারি দিয়ে কিভাবে খাবে এমনেই বাবাই অসুস্থ ? তাই রাইসা ভাবল একটা ডিম ভেজে দেয়। যা ভাবা সেই কাজ, ডিম ভেজে খাবার প্লেটে সাজিয়ে নিয়ে রাজের পাশে গিয়ে বসল। এখনো রাজের চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়ছে।
” বাবাই তুমি আবারো কাঁদছো? তোমাকে না বলছি কখনো কাঁদবে না? তুমি কাঁদলে কিন্তু আমিও কান্না করবো? বাবাইটা না ভালো একদম কান্না করবে না। হা করো। রাজকে রাইসা খাইয়ে দিচ্ছে মনে হচ্ছে মা তার সন্তানকে খাইয়ে দিচ্ছে। ছোট সন্তান বায়না ধরলেও রাজ কোন বায়না ধরতে পারছে না। পৃথিবীর নিঃস্বার্থ ভালোবাসা মনে হয় এটাই। যেখানে নেই কোন স্বার্থ শুধু রয়েছে ভালোবাসা রাজের খুব করে ইচ্ছে করছে রাইসাকে খাইয়ে দিতে। কিন্তু হাত নাড়ানোর শব্দ দেয়। সে যেটা পারে সেটা হলো চোখের জল ফেলা। রাজের খুব কষ্ট হয় মেয়েটা ছোট থাকতেই মায়ের আদর থেকে বঞ্চিত হয়। যে বয়সে পুতুল খেলা নিয়ে ব্যস্ত থাকতে হয়। সে বয়সে বাবাকে সামলানোর দায়িত্ব। রাইসার খাওয়ানো শেষ হলে, রাজের গায়ে কম্বল টেনে দিয়ে রাইসা পড়তে বসে। এমন সময় আসরের আযান হয়। রাইসা বই রেখে অযু করতে চলে যায়। রাইসার বিশ্বাস আল্লাহ তার বাবাইকে আবার সুস্থ করে দিবে। আর রাইসা তার বাবার কথামতো নামায পড়ে। কারণ নামায পড়লে নাকি আল্লাহ খুশি হয়। রাইসার অযু শেষ হলে, জায়নামায বিছিরে আসরের নামায পড়ে নেয়। নামায শেষ করে প্রতিদিনের মতো আজও দু’হাত তুলে বলতে থাকে, হে রহিম – রহমান। হে আমার প্রভু, বিশ্বজাহানের অধিপতি তোমার দরবারে আমি ছোট্ট দু’খানা হাত তুলেছি। ও আল্লাহ তুমি আমার বাবাকে সুস্থ করে দাও। আমার মাকে তোমার কাছে নিয়ে নিছো আমি মন খারাপ করিনি আল্লাহ। আমি তোমার সিদ্ধান্তে খুশি। তবে এখন আমার বাবাকে সুস্থ করে দাও। ও আল্লাহ আমার কান্না কি তুমি দেখ না? তুমি না তোমার বান্দার অন্তরের খবর জানো? চোখের পানি কি দেখ না? ও আমার আল্লাহ দেখ আমি কান্না করলে আমার চোখের পানি মুছে দেওয়ার কেউ নেই। তুমি রহম করো আল্লাহ। আমার বাবাইকে সুস্থ করে দাও। রাইসা মোনাজাত শেষ করে। রুমে চলে যায়।
রুমে যেতেই রাইসার মায়ের ছবিটার দিকে চোখ যায়। রাইসার মায়ের কথা মনে পড়লেই তার কান্না আসে। তার মায়ের একটা ছবি আছে সেটা বুকে নিয়ে কান্না করে। অনেকক্ষণ কান্না করার পর মৌ এর ছবিটা বুকে নিয়ে রাইসা ঘুমিয়ে যায়। ঘুম ভেঙে দেখে যে রাত হয়ে গেছে।
” রাতে রাইসা তার বাবাইকে খাইয়ে দিয়ে, যখন মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে এমন সময় রাইসা অনুভব করলো তার বাবাইয়ের শরীর জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে। গা ভর্তি জ্বর কি করবে ভেবে পাচ্ছে না। কথাকে কয়েকবার ফোন করলো বারবার ফোনটা সুইচটপ দেখাচ্ছে। কণার কাছে দু’বার ফোন করতেই ফোনটা রিসিভ করলো।
” হ্যালো আন্টি? ”
” হ্যাঁ রাইসা বলো? ”
” আন্টি বাবাই এর অনেক জ্বর এসেছে। কি বরবো জ্বরে গা পুড়ে যাচ্ছে। আন্টি আপনি কি আমাদের বাসায় আসতে পারবেন? ”
” মামনি এতো রাতে কিভাবে যায়? কাল সকালে যাবো? আর হ্যাঁ তুমি টেনশন করো না। ঘরে নাপা থাকলে খাইয়ে দাও। আর বেশি জ্বর থাকলে মাথায় পানি দিয়ো। ”
” আচ্ছা আন্টি দোআ করবেন। রাইসা ফোন কেটে দিয়ে, ঝুড়িতে থাকা নাপার পাতা থেকে একটি খাইয়ে দিলো। তারপরেও জ্বর কমছে না। রাইসা কি করবে ভেবে পাচ্ছে না। হঠাৎ মনে হলো আন্টি মাথায় পানি দিতে বলছে। রাইসা ছোট্ট একটা নেকড়া ভিজিয়ে রাজের মাথায় বারবার জলপট্টি বদল করছে আর আল্লাহকে ডাকছে। চোখের পানি টপটপ করে পড়ছে। তার শেষ আশ্রয়টা যদি হারিয়ে ফেলে কিভাবে বাঁচবে?
এভাবে ঘন্টাখানেক দেওয়ার পর রাইসা রাজের মাথার কাছেই ঘুমিয়ে যায়। সকালে কলিং বেলের আওয়াজে রাইসার ঘুম ভাঙে। ঘুম ভেঙেই রাইসা তার বাবাই এর মাথায় হাত রাখে। না জ্বর নেই। তাড়াহুড়া করে রাইসা দরজা খুলে দেয়। দরজা খুলতেই দেখে কথা দাঁড়িয়ে আছে।
” রাইসা মামনি কেমন আছো?”
” হ্যাঁ মম আমি ভালো। তবে বাবার রাতে জ্বর আসছিল। তাই মনটা ভালো না। ”
”কি বলছো এসব? আমাকে ফোন দিবে না?
” হ্যাঁ মম দিয়েছিলাম। কিন্তু ফোন সুইচটপ দেখাইছে। ”
”’ ও চার্জ ছিল না হয়তো। আচ্ছা রুমে চলো। কথা রুমে এসে দেখে রাজ ঘুমাচ্ছে। কপালে হাত রেখে দেখলো না জ্বর নেই। রাইসাকে স্কুলে রেডি করে কথা বাসায় এসে পড়লো।
এদিকে,
ডাক্টার কণা বাসা থেকে বের হতেই,
” কণা মা তুই কোথায় যাচ্ছিস? ”
” এই তো মা রাইসাদের বাসায়। ”
” আচ্ছা মা রাজ কী কোনদিন সুস্থ হবে না? ঠিকমতো চলা ফেরা করতে পারবে না?
” না মা সে সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। তবে আল্লাহ চাইলে সব পারে। ”
” মা তুকে কিভাবে যে বলি, তুই আমাদের পছন্দ করা ছেলেটাকেই বিয়ে করে নে। কাল তাদের আসতে বলি?
” মা আমি বাসায় এসে বলছি। ”
” কণা রাজের বাসায় গিয়ে দেখে রুমে কেউ নেই রাজ ফ্লরে পড়ে আছি। মাথা থেকে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে।
”’ চলবে””””””