#বাবার_ভালোবাসা
পর্বঃ৩২
লেখাঃ #রাইসার_আব্বু
– কি হলো আপনি কাঁদছেন কেন?
– এক কাজ করতে পারেন শেষ চেষ্টা টা বিদেশে নিয়ে করতে পারেন।
-আপনি সব রেডি করেন। আমার স্বামীকে কোন ভাবেই মরতে দিতে পারি না।
– স্বামী মানে?
– সেটা আপনার জানতে হবে না।
– এদিকে পরের দিনই কথা রাজকে নিয়ে সিঙ্গাপুর এসে পড়ে।
– সিঙ্গাপুর আনার পর আরেকটা অপারেশন হয়। অপারেশন শেষে ডাক্তার বললো’ আপনারা ঈশ্বরকে ডাকেন। ‘ আমাদের হাতের ক্ষমতা শেষ। তিনি চাইলে সব সম্ভব।
-রাইসা কথাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছে আর বলছে মামনি আমি বাবাইকে ছাড়া বাঁচবো না। এদিকে রাজের সাথে, কণাও এসেছে। কণার চোখেও পানি।
– এদিকে অপারেশন ১৪ ঘন্টা পার হয়ে যাচ্ছে রাজের জ্ঞান ফিরছে না। সবার খুব টেনশন হচ্ছে। রাইসার দিকে তাকানো যাচ্ছে না। কথা হসপিটালের বেঞ্চে নিশ্চুপ হয়ে বসে আছে। তার মুখ দিয়ে কোন কথা বের হচ্ছে না।
– রাইসা কথার সামনে গিয়ে বসে পড়ল। কথা রাইসার দিকে তাকিয়েই বুঝলো রাইসা কিছু একটা বলবে! মামনি তুমি কিছু বলবে???
– আপনাকে মম বলে ডাকি?
– কথা মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ সূচক জবাব দিল।
– মম আমায় একটু বুকে নিবা?আমার না অনেক কষ্ট হচ্ছে।
-কথা রাইসাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলে ‘ আমার মার কোন কষ্ট হতে দিবো না। তুই কাঁদিস না প্লিজ?
– আচ্ছা মম বাবাই কি আর কথা বলবে না। আমার বাবাই কি আর কুলে নিবে না? জানো মম বাবাইকে ছাড়া আমি বাঁচবো না। বাবাই আমার নিঃশ্বাস। মম বলো আমার বাবাই আবার কথা বলবে তো? আমার বাবাই আবার আমাকে বুকে নিবে তো? আমার চকলেট, আইসক্রিম কিচ্ছু চায় না। আমার বাবাইকে কথা বলতে বলো। আজ কতদিন ধরে বাবাই কথা বলে না।
– কথা কি বলবে বুঝতে পারছে না। রাজের জন্য তার কলিজাটাও যে ফেটে যাচ্ছে।
– কি হলো মম তুমি কোন কথা বলছো না কেন?
– মা’রে তোমার বাবাই ঠিক ভালো হয়ে যাবে তোমাে জন্য হলেও ভালো হয়ে যাবে। তুমি প্লিজ কান্না করো না।
– সত্যি তো ভালো হয়ে যাবে? আমার বাবাই আমার সাথে আবারো কথা বলবে?
– হ্যাঁ মা।
– এদিকে সময় গড়াচ্ছে যতই ততই দুশ্চিন্তা বাড়ছে।
– কণা কিছুটা আঁচ করতে পেয়ে ডক্টরের সাথে দেখা করে রাজের বিষয় জানতে চাইলে। ডাক্তার ফিলিক্স বলে ‘ আপনি ডক্টর আপনি রোগীর কন্ডিশন বেশ ভালোই বুঝতে পারছেন। রোগী আঘাতটাও পেয়েছে ক্রিটিক্যাল জায়গায়। মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয়েছে অনেক। আপনাদের জন্য অপারেশন করলাম। যেন বেঁচে থাকার একটা আশা করা যায়। বাঁচার চান্স নেই বললেই চলে। কিন্তু এ কথাটা আপনি ছাড়া আর কাউকে বলে বুঝানো যাবে না। প্লিজ আপনি মেন্টালি সার্পোট দেন তাদের। আর হ্যাঁ মনে রাখবেন সব কিছুর মালিক উপরওয়ালা। তিনি চাইলে সবি সম্ভব। কনা কিছু না বলে ডাক্তার রুম থেকে বের হতেই দেখে কথা আর রাইসা দরজায় দাঁড়িয়ে আছে।
– রাইসা কনাকে দেখেই বললো’ ডাক্তার আন্টি, ডাক্তার কি বললো? আমার বাবাই এর তো কিছু হবে না?
– হুম মামনি তোমার বাবাই এর কিছু হবে না। তবে আল্লাহকে ডাকতে হবে।কথা আপু আপনিও আল্লাহকে ডাকেন। এখন ডাক্তারদের হাতে কিছু করার নেই। রাত প্রায় শেষ হতে চললো কারো চোখে ঘুম নেই। ফজরের আযান হচ্ছে। ২২ ঘন্টা হতে চললো রাজের এখনো জ্ঞান ফিরছে না। কণা বুঝে গিয়েছে রাজ হয়ত আর ফিরবে না। খুব কষ্ট হচ্ছে তার। খুব দেখতে ইচ্ছে করছে রাজকে। তাই রাজকে দেখার জন্য যখন রাজের ক্যাবিনে উঁকি দিল তখন বুকটা কেমন করে ছ্যাঁত করে ওঠলো।
অক্সিজেন মাক্স পরানো। তাকানো যাচ্ছে না রাজের দিকে। কণা আর চোখের পানি আকটিয়ে রাখতে পাচ্ছে না বিশেষ করে রাইসার কথা চিন্তা করে।
– এদিকে রাইসা সুন্দর করে ওযু করে হসপিটালের এক কোণায় নামাযে দাড়িয়ে যায়। রাইসার বিশ্বাস আল্লাহ তার কথা শুনবে। তার বাবাই আবার তার সাথে কথা বলবে তাকে আদর করবে। রাইসা নামায শেষ করে , ছোট্ট হাত দুটি আকাশের দিকে উত্তোলন করে বলতে লাগল ‘ হে দরদী আল্লাহ, তুমি কি আমার কথা শুনতে পাচ্ছো? জানো আল্লাহ ছুট বলে আমার কথা কেউ শুনে না। তুমিও কি শুনবে না? আল্লাহ শুনেছি তুমি চাইলে সব হয়। তোমার হুকুম ছাড়া কিছুই হয় না বাবাই বলেছে। জানো আল্লাহ আমি যখন ছোট্ট তখন মা রেখে চলে যায়। বাবাই আমাকে অনেক আদর করতো। বাবাইকে তোমার কাছে যদি নিয়ে যাও তাহলে কে আমার কথা শুনবে কে আমাকে ঘুম পাড়িয়ে দিবে? কে আমাকে ভালোবাসবে? আমার মা কে তুমি তোমার কাছে নিয়ে নিছো আমি কিছু বলিনি। আমার বাবাইকে কী নিয়ে নিবা? জানো আমার না খুব কষ্ট হয়। দেখ আমি কাঁদছি। জানো আল্লাহ, আমি একটু ব্যথা পেলে বাবাই কষ্ট পেতে কাঁদতো। আমাকে বাবাই অনেক ভালোবাসতো। শুনেছি পৃথিবীর বাবাই মা’দের চেয়ে তুমি তোমার বান্দাদের কোটিগুণ বেশি ভালোবাসো? দেখ আমি কাঁদছি। তুমি আমার কথা কি শুনতে পারছো? বলো আমি তোমায় ছাড়া আর কাছে চাইবো তুমি ছাড়া যে আমার কেউ নেই। তুমি আমার বাবাইকে ভালো করে দাও। নয়তো আমাকেও তোমার কাছে নিয়ে নাও। ও আল্লাহ আমার মা নেই, বাবাও যদি না থাকে তার কাছে যাবো? তুমি আমার বাবাইকে সুস্থ করে দাও। এই বলে কাঁদতে কাঁদতে জায়নামাযে ঘুমিয়ে গেল। কথা রাইসাকে এভাবে ঘুমিয়ে যেতে দেখে চমকে যায়!
” রাইসার কাছে এসে তার মাথায় হাত রাখতেই বলে ওঠে ‘মম বাবাই কী সুস্থ হইছে? বলো না মম?
” কথা কি বলবে রাজের যে আর জ্ঞান ফিরছে না।”
” মম কি হলো কিছু বলছো না কেন? আমি বাবাই এর সাথে দেখা করবো। আমাকে নিয়ে যাবে?”
– এমন সময় কণা এসে বললো রাজ আর কোনদিন
চলবে”””””””??
#বিঃদ্রঃ অপেক্ষা করানোর জন্য দুঃখিত।
এখন থেকে নিয়মিত গল্প পাবেন।