#বাবার_ভালোবাসা।
পর্বঃ২৮
লেখাঃ #রাইসার_আব্বু।
-কথা হসপিটাল থেকে ঠিকানা নিয়ে যখন কণাদের বাসায় চলে যায়। কথা যখন কণাদের বাসায় ঢুকবে এমন সময় রাজ আর রাইসাকে বাসা থেকে বের হতে দেখেই দৌড়ে রাজের সামনে গিয়ে বললো’ রাজ তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও। ‘
– ম্যাডাম ছোটলোকের কাছে ক্ষমা চাইতে নেই।
– রাজ প্লিজ আমি বুঝতে পারিনি। আমি না বুঝেই এসব করছি। আমাকে ক্ষমা করে দাও।
– এই রিক্সা নিউমার্কেট যাবে?
– আমি যখন গাড়িতে উঠবো, এমন সময় কথা পিছন থেকে হাতটা ধরে ফেলল। আমি কথার হাতটা ছাড়িয়ে দিয়ে কথার গালে ঠাস করে চড় বসিয়ে দিলাম। কথা কাঁদছে। হ্যাঁ কাদুক।
– কি হলো আরো মারো? তবুও ছেড়ে যেয়ো না।
– আশ্চর্য আপনি রাস্তায় এমন করছেন কেন?
– রাজ আমি অন্যায় করেছি, জানি না এ অন্যায়ের ক্ষমা আছে কি না? তবু যে শাস্তি দিবে সেটাই মেনে নিবো। আমি তোমাকে ভালোবাসি রাজ।
– ভালোবাসা? যখন সবাই মারতেছিল তখন কোথায় ছিলো? ওহ্ কাকে কি বলছি? আপনি নিজেই তো হুকুম দিয়েছিলেন।
– রাজ আমি সত্যিই বুঝতে পারিনি। ওই ভিডিও দেখার পর আমি সত্যিই নিজের মনকে শান্ত করতে পারিনি।
– ম্যাডাম প্লিজ আপনি চলে যান। আপনাকে দেখতে মন চাচ্ছে না।
– রাজ ওভাবে বলো না, আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচবো না। বাকি জীবন তোমার পায়ের নিচে কাঁটিয়ে দিবো।
-আপনি সামনে থেকে সরেন।
– আমি তোমাকে ছাড়া যাবো না।
– মামনি চলো তো।
– হুম বাবাই চলো।
-রাইসাকে নিয়ে যখন রওনা দিবো এমন সময় বুঝতে পারলাম পা দু’টো কেউ জড়িয়ে ধরেছে।
– চেয়েই দেখি কথা। কি হলো এভাবে পা ধরলেন কেন?দেখেন রাস্তার মানুষ দেখছে। প্লিজ আপনি চলে যান।
– রাজ আমি অনেক অন্যায় করেছি। তুমি আমাকে মেরে ফেলো তবুও ছেড়ে যেয়ো না। কথা পা ধরে কান্না করছে।
– বাবাই তুমি ক্ষমা করো না। আমি পা ধরে তোমার জীবন ভিক্ষা চেয়েছিলাম। কিন্তু তারা তোমাকে মেরে রক্তাত করে দিয়েছে।
– কি হলো ম্যাডাম পা ছাড়েন।
– আমি পা ছাড়বো না।
– কথাকে পা থেকে তুলে সবার সামনে কষে থাপ্পর লাগিয়ে দিলাম। কথার গালটা লাল হয়ে গেছে। মনে মনে স্থির করে নিলাম যত তাড়াতাড়ি সম্ভব শহর ছেড়ে চলে যাবো। আমি চাইনা আর কষ্ট পেতে।
– রাজ কি হলো, একটা থাপ্পর মাত্র দিলে? আরো দাও! নাকি আমি পাপীকে তোমার থাপ্পর দিতেও কষ্ট হচ্ছে।
– আপনি যান তো ম্যাডাম।
– রাইসাকে নিয়ে একটা রিক্সা করে চলে আসলাম।
– বাসায় আসতে আসতে সন্ধ্যা হয়ে গেল।
– বাসায় এসে শুয়ে আছি, রাইসা মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। বুঝতে পারছি না নিয়তী আমাকে নিয়ে এমন খেলা খেলছে কেন।
– হঠাৎ দরজায় ঠক ঠক আওয়াজ শুনলাম। দরজা খুলে দিতেই দেখি কথা ম্যাডাম।
– ম্যাডাম আপনি? রাতে কেন?
– আমি বাসায় যায়নি রাজ। যতক্ষণ পর্যন্ত তুমি আমাকে ক্ষমা না করবে ততক্ষণ পর্যন্ত আমি এখান থেকে যাবো না।
-ম্যাডাম এসব পাগলামি। প্লিজ পাগলামী করবেন না। আপনার বাবা এসব দেখলে কষ্ট পাবে।
– রাজ আমি তোমাকে ছাড়া যাবো না। আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই। রাইসার মা হতে চাই।
– তাই বুঝি, রাইসার মা হবেন?
– হ্যাঁ সত্যি বলছি।
– আপনি না বলেছেন রাইসা একটা পতিতার মেয়ে। আর আমি নাকি ছোটলোক, কুত্তা। তো আপনি কেন আসছেন কুত্তাকে বিয়ে করতে। আপনি কেন আসছেন পতিতা হতে। সত্যি বলতে কি জানেন? আপনার এই মুখটা আমার দেখতে ইচ্ছে করছে না। আমি শুধু আপনাকে বিয়ে করতে চেয়েছিলাম রাইসার জন্য। আর সেই আপনিই রাইসাকে পতিতার মেয়ে বানিয়ে দিলেন। আপনি প্লিজ চলে যান। আপনার বাবার টাকা আছে, আপনার চেহারা সুন্দর। এমন একাটা ল্যাংড়ার বউ হওয়ার সখ থাকা ভালো না।
-রাজ আমি তোমার দু’টি পা ধরে বলছি, এই পা থেকে আমাকে দূরে সরিয়ে দিয়ো না আমি তোমার পায়ের নিচেই বাকিটা জীবন কাটিয়ে দিতে চাই।
– বাহ্ আপনাদের অভিনয়ের তারিফ করতে হয়।
– রাজ আমি অভিনয় করছি না।
– আপনি চলে যান এখান থেকে। আর পা ছাড়েন।
– আমি পা ছাড়বো না।
– আপনি যদি পা না ছাড়েন, তাহলে আমার মরা মুখ দেখবেন।
– প্লিজ রাজ, এমন বলো না, আমি তোমার পা ছেড়ে দিচ্ছি। তবে মনে রেখো আমাকে যতক্ষণ পর্যন্ত না তোমার পায়ের নিচে জায়গা দিবে ততক্ষণ পর্যন্ত কোথাও যাবো না আমি।
– হুম আপনার ইচ্চা। এই বলেই দরজা লাগিয়ে দিয়ে শুয়ে পড়লাম। মাঝ রাতে, আকাশে মেঘের গর্জনে ঘুম ভাঙল। খুব শীত লাগছে। এদিকে বৃষ্টিও শুরু হয়ে গেছে। বৃষ্টি পানি জানালি দিয়ে ভেতরে আসছে। তাড়াহুড়া করে জানালা লাগিয়ে দিচ্ছি এমন সময় বিদ্যু চমকালে। বিদ্যু চমকানোর সাথে সাথেই বাহিরে স্পষ্ট দেখতে পেলাম। কথা বৃষ্টির মাঝে একটা গাছের নিচে বসে আছে।
– এদিকে বৃষ্টি বেড়েই চলছে। কি করবো কিছু ভেবে পাচ্ছি না। ফোন দিলাম কথার বাবাকে, ফোন দেওয়ার সাথে সাথেই ফোনটা রিসিভ করেই বলল’ কিরে, কেন ফোন দিয়েছিস আমাকে? আর কি চাস?
– কিছু না।
– তাহলে কেন ফোন দিয়েছিস। এমনিই কথাকে বাসায় আসছে না।
– ওহ্ তাই। আপনার মেয়ে আমার বাড়িতে নিয়ে যান।
-আমার মেয়ের কিছু হলে তোকে ছাড়বো না।
-আচ্ছা। বলেই ফোনটা কেটে দিলাম। খুব শীত লাগছে। ঘর থেকে ছাতা নিয়ে কথার পাশে দাঁড়ালাম। কথা কাঁপছে শীতে। আমার দিকে কোন খেয়াল নেই। গুটিসুটি মেরে বসে আছে।
– আমি ছাতা নিয়ে কথার মাথার উপরে ধরতেই আমার দিকে ফিরে তাকালো।
– কোন কথা বলছে না, শীতে কাঁপছে। ম্যাডাম কেন করছেন এসব পাগলামি?অসুস্থ হয়ে যাবেন তো ।
– তুমি কেন এসেছো? আমি মরলেই কি তোমার? আমার মরার উচিত। আমার জীবনকে আমি কষ্ট দিয়েছি। তুমি চলে যাও। আমাকে কষ্ট পেতে দাও।
– আপনি আমার বাসার সামনে থেকে সরে গিয়ে যা ইচ্ছা তাই করেন।
– রাজ আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচবো না।
– প্লিজ বাসায় যান।
– আমি যাবো না। রাজ আমার না খুব কষ্ট হচ্ছে। আমাকে বুকে নিবা?কথাটা বলেই মাটিতে পড়ে গেল কথা।
– আমি কথার শরীরে হাত দিয়ে দেখি, শরীর ঠান্ডা বরফ হয়ে গেছে। তাড়াহুড়া করে রুমে নিয়ে গিয়ে শরীর মুছে দিয়ে,হাতে পায়ে তেল দিচ্ছি এমন সময় কলিং বেলটা বেজে ওঠলো। দরজা খুলতেই দেখি কথার বাবা। সাথে পুলিশ।
– স্যার, এই ছোটলোকটাই আমার মেয়েকে কিডন্যাপ করেছে। প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য।
– মিঃ রাজ আমাদের সাথে থানায় চলেন। তার আগে বলেন করিম সাহেবের মেয়ে কোথায়।
– এমন সময় রাইসা দৌড়ে এসে বলে, এই যে পুলিশ আঙ্কেল আমার বাবাইকে কোথায় নেন?
– কি হলো বলছিস না কেন, মেয়েটা কোথায়।
– আমি ইশারায় রুমের কথা বললাম।
– করিম সাহেব দৌড়ে চলে গেলেন রুমে। রুমে গিয়েই দেখে কথা শুয়ে আছে। কথা সেন্সলেন্স হয়ে গেছে।
– কি হলো, আপনারা কি দেখছেন? হারামিটাকে নিয়ে যান। আমার মেয়েটাকে টর্চার করে, সেন্সলেন্স করে ফেলেছে।
– স্যার আমি কিছু করিনি।
– হুম তাতো দেখতেই পারছি। থানাই নিয়ে কয়েকটা বারি দিলেই সব কথা বের হবে ।
– আঙ্কেল আমার বাবা কিছু করেনি। এই বলে রাইসা কান্না শুরু করে দিল।
– মামনি কান্না করে, না। আমি যাবো আর আসবো।
-এমন সময় কথা মিটিমিটি করে চোখ খুলে। চোখ খুলতেই তার বাবাকে দেখে চমকে যায়! বাবা তুমি?
– হ্যাঁ মা, আমি তোকে হারামিটার হাত থেকে বাঁচাতে খবর পেয়েই পুলিশ নিয়ে এসেছি। আর হাতেনাতেও ধরেছি।
– বাবা রাজের কোন দোষ নেই। আমি নিজেই এসেছি। আর এই যে আপনারা আসতে পারেন। রাজের কোন দোষ নেই। রাজ আর আমি স্বামি -স্ত্রী। বাবা এটা মানতে পারেনি। তাই আপনাদের মিথ্যা বলে এনেছে। আপনারা গেলে খুশি হবো।
– কি বলছেন এসব মা?
– হ্যাঁ বাবা সত্যিই বলছি।
– শেষ পর্যন্ত চরিত্রহীন, ছোটলোকটাকে?
– বাবা রাজ চরিত্রহীন না। আর আপনারা যাচ্ছেন না কেন?
– জ্বি ম্যাডাম যাচ্ছি। সরি মিঃ রাজ। আপনাকে বিরক্ত করলাম।
– পুলিশ চলে গেলে, কথাকে আর তার বাবাকে বললাম’ আঙ্কেল আপনার মেয়েকে কিডন্যাপ করলে আপনাকে ফোন দিয়ে বলতাম না। আপনি আপনার মেয়েকে নিয়ে যান। আর হ্যাঁ শুনে রাখেন আপনার সম্পত্তি যদি আমার পায়ের নিচে লুঠিয়ে দেন তবুও আপনার মেয়েকে বিয়ে তো দূরের কথা একটা বার বুকে টেনেও নিবো না। আপনারা যতটা না কষ্ট দিয়েছেন তার চেয়ে হাজারগুণ কষ্ট পাবেন।
-আপনারা আসতে পারেন।
– রাজ আমাকে তাড়িয়ে দিয়ো না। আমি তোমাকে ভালোবাসি। তুমি তোমার পায়ের নিচে জায়গা না দিলে আমি এখান থেকে কোথাও যাবো না । বাড়ির বাহিরেই দাঁড়িয়ে থাকবো।
– তাই বুঝি, আন্টি। আচ্ছা আন্টি আপনার কি মনে আছে? আপনাকে বলেছিলাম না আমার বাবা খারাপ হতে পারে না। তবুও বাবাইকে মেরেছিলেন। আর আপনার বাবা, তাকে তো আমি নানু ভাই ডাকতাম। তিনি চড় মেরে আমার ঠোঁট ফাটিয়ে দিয়েছিল। দেখছেন আজ আপনারাই আমার বাবার কাছে এসেছেন। আর এই যে কথা আন্টি বলেছিলাম না আমার বাবার পা ধরে কাঁদতে হবে। আল্লাহ ঠিকই শুনেছে। আপনারা যাচ্ছেন না কেন? আর এই যে আপনাকে বলছি, আমরা গরিব। আমাদেরকে শান্তিতে থাকতে দিবেন। দৃষ্টাব করবেন না বাবাই চলো ঘুমাবো।
– কথা তার বাবাইকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বললো ‘ বাবাই আমি রাজকে ছাঁড়া বাঁচবো না। বাবাই রাজ বলো না আমাকে ক্ষমা করে দিতে।
– কথার বাবা কিছু না বলে কথাকে জোর করে বাড়িতে নিয়ে যায়।
– কথা আর সারারাত ঘুমাতে পারে না। কথা তার বাবাকে সব ঘটনা খুলে বলে। কথার বাবা নিজেই অনুতপ্ত । এ মুখ নিয়ে রাজের কাছে কিভাবে গিয়ে দাঁড়াবে।
.এদিকে, পরের দিন সকালে উঠে ফ্রেশ হয়ে রুমে আসতেই দেখি ডাক্তার কণা আর রাইসা বসে আছে।
– রাইসা কনার সাথে মোবাইলে লুডু খেলছে। কণা আমাকে দেখেই বললো’ আপনার শরীর কেমন? আর মেডিসিনগুলো ঠিকমতো নিচ্ছেন তো?
– হ্যাঁ নিচ্ছি। হঠাৎ কি মনে করে?
-কিছু মনে না করলে, আজ সন্ধ্যায় আমাদের বাসায় আপনাদের দাওয়াত। আমার বার্থডে। তাই ভাবলাম আপনারা গেলে মুহূর্তটা সুন্দর হতো। আমি এখন আসি। আর হ্যাঁ অবশ্যই যাবেন।
– অাচ্ছা , কিছু খেয়ে যান?
– না অন্যদিন।
– কণা চলে যেতেই রাইসাকে বললাম’ মামনি কি গিফট দেওয়া যায়?
– হাতে তো টাকাও নেই? যে কিছু টাকা আছে এগুলোতো কয়েকদিন বাজার লাগবে ।
– এমন সময় রাইসা তার মাটির ব্যাংকটা আমার হাতে দিয়ে বললো’ বাবাই এখানে মনে হয় অনেকটাকা জমেছে। ‘ ভাবছিলাম তোমার সামনে বার্থডেতে একটা গির্ফট কিনে দিবো। কিন্তু এখন কণা মামনিকেই দিতে হচ্ছে। উনি না থাকলে তোমার চিকিৎসা হতো না।
– আমার চোখ দিয়ে কেন যেন পানি পড়ছে।
– বাবাই তুমি কাঁদছো?
– না মা। আমার ছোট্ট মা টা যে আমার জন্য এতোকিছু চিন্তা করে রেখেছে তা ভাবতে পারিনি।
– এই জন্য কেউ কাঁদে?
– এমন সময় বাসার কলিং বেলটা বেজে ওঠলো । দরজা খুলতেই দেখি, মৌ দাঁড়িয়ে আছে। নীল রঙের একটা শাড়ি পড়েছে।
– কি হলো ভেতরে আসতে বলবে না?
– আপনি কিছু বলবেন?
– রাজ তুমি তো জানোই আমি কি চায়। আমি কতবার বলবো আমি তোমাকে ভালোবাসি। তোমাকে পাওয়ার জন্য নিজের জীবনও দিতে পারি। তুমি শুধু একটাবার সুযোগ দাও। আমাকে রাইসার মায়ের অধিকারটা দাও।
– কি বললি তুই? রাইসার মা? তোর ওই পাপ মুখে আমার মেয়ের নাম নিবি না। বলেই শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে মৌ এর গালে চড় বসিয়ে দিলাম।
– তুমি আমাকে মারতে পারলো?
– আবারো চড় দিয়ে বললাম’ তোকে শুধু চড় দিয়ে অন্যায় করছি। তোর মতো, নষ্টা মেয়েকে ””
চলবে””””