#বাবার_ভালোবাসা
পর্ব:২৭
লেখা: #রাইসার_আব্বু।
– এদিকে পরের দিন, রাইসাকে নিয়ে যখন মৌ এর বাসায় আসি। বাসায় এসে দেখি মৌ আর নিলয় অাপত্তিকর অবস্থায় শুয়ে আছে। দু’জনেই অর্ধ নগ্ন! রাইসা তার চোখ ধরে ফেলল। তাড়াহুড়া করে রুম থেকে বের হয়ে পড়লাম।
– আমরা যখন মৌ এর বাসা থেকে বের হয়ে রিক্সা ধরছি এমন সময় কালো একটা প্রাইভেট কার থেকে নেমে কথাকে মৌ এর বাসায় দিকে যেতে দেখলাম।
– বাবাই তোমার চোখে পানি?
– কেঁদো না বাবাই আমার মম লাগবে না। আমরা এ শহর ছেড়ে চলে যাবো কেমন?
– কি হলো বাবাই তার পরেও তুমি কাঁদছো? কেঁদো নাতো। আমার কোন মম লাগবে না বাবাই।
– রাইসাকে বুকে জড়িয়ে নিলাম।
– রাইসাকে বুকে জড়িয়ে নিয়ে রাস্তায় হাটুগেড়ে বসে আছি। মাথায় ক্ষতটা এখনো শোকায়নি ঠিকমতো। হঠাৎ সামনের দিকে তাকাতেই অনেকটা চমকে ওঠলাম। কাঁপা কাঁপা গলায় বললাম’ কথা তুমি?’
– এই ছোটলোকের বাচ্চা আমার নাম ধরে ডাকার সাহস কোথায় পাস তুই? আর তোর মতো চরিত্রহীনের মুখে কথা নামটা শোভা পায় না। ম্যাডাম বল।
– সরি ম্যাডাম। গরীবতো তাই ব্যাবহার টা শিখতে পারিনি। ক্ষমা করে দিয়েন।
– আচ্ছা আজকেও কি, মৌ এর কাছে এসেছিলি? আচ্ছা বলতো কেনো আমার জীবনটা নিয়ে ছিনিমিলি করলি? আগেই বলতি তোদের মাঝে ফ্যাজিক্যালি রিলেশন ছিল। আমি তোদের চারহাত এক করে দিতাম।
– ম্যাডাম প্লিজ, আমার মেয়ে আছে। এসব কথা বলবেন না। আমরা এখন আসি।
– এই এই কই যাস? বল মৌ এর বাসায় কেন গিয়েছিলি? নাকি আজকেও ওসব করতে গিয়েছিলি?
– ম্যাডাম বললাম না আমার মেয়ে সাথে আছে। এসব কথা না বললে হয় না।
– কুত্তা, তুই ভিডিও বের করবি। ছোট্ট মেয়ে রেখে মৌ এর সাথে রাত কাটাবি। আর আমি বলছি, তোর শরীরে লাগে। কুত্তার বাচ্চা।
– প্লিজ স্টপ। আরেকবার কুত্তার বাচ্চা বললে আমি কিন্তু আপনাকে যে সম্মানটা দিচ্ছি সেটা আর দিবো না।
– কি বললি কুত্তার বাচ্চা? ঠাস করে কথা গালে চড় বসিয়ে দিল। আমি কিছু না বলেই রাইসাকে নিয়ে চলে যাচ্ছি। এসব বড়লোকদের থেকে দূরে থাকাই শ্রেয়।
– এই কই যাস? সেদিন তোকে বাঁচায় রাখাটাই ভুল হয়েছে। জানি না কতমেয়ের জীবন নষ্ট করছিস। জানিস তোর ওসব ভিডিও কথা যখন মনে পড়ে তখন মন চাই, তোকে খুন করে ফেলি। তুই যদি আর কোনদিন আমার চোখের সামনে আসবি নার। লুজার। তুই আমার জীবনটা নষ্ট করে দিয়েছিস। কুত্তার বাচ্চা আবারো আমার দিকে তাকিয়ে থাকিস। তোর কোন যোগ্যতা আছে, ল্যাংড়াকে যে আমি আশ্রয় দিয়েছিলাম এটাই তো বেশি। আর সে আশ্রয় দেওয়ার জন্যই কালসাপ হয়ে কলিজাতে ছোবল দিলি। অধরা ঠিকই বলেছিল, তুই আমার বাড়ির চাকর হওয়ারো যোগ্য নস। আর তুই কিনা হবি আমার বর। আল্লাহ যা করে ভালোর জন্যই করে। যে আমার পায়ের যোগ্য না সে হবে বর।
– ম্যাডাম প্লিজ এটা রাস্তা। আমি বামন হয়ে চাঁদ ধরার আশা করিনি। আর হ্যাঁ সবাই কেমন করে তাকিয়ে আছে। আর আপনি বলছেন না কোনদিন যেন আপনার সামনে যেন না আসি? হ্যাঁ আল্লাহ যেন তাই করে। কোনদিন আপনার সামনে আসবো না। আর বলছেন না যোগ্যতা?
– বাবা তুমি চুপ করো, আজ আমি বলি। এই যে ম্যাডাম। সরি, আপনাকে ক্ষনিকের জন্য মম ডেকেছিলাম। বলতে গেলে আপনি জোর করেই ডাকিয়েছিলেন। বিশ্বাস করেন আমি মন থেকে, আপনাকে মম মনে করেছিলাম। বাবাইকে রাজি করেছিলাম। কিন্তু আপনি তার প্রতিদান স্বরুপ আমার কাছ থেকে বাবাকে কেড়ে নিতে চেয়েছিলেন। আমি কি এমন ক্ষতি করেছিলাম যার জন্য আমার বাবাইকে মেরে ফেলতে চেয়েছিলেন। আজ আপনাকে বলছি, যে বাবাই আপনার যোগ্য না বললেন, আল্লাহ এমনোতো করতে পারে সে বাবার পায়ের নিচে আশ্রয়ের জন্য কাঁদবেন। আপনার দালান কোঠা সেদিন কোন কাজেই আসবে না। আমি বলে গেলাম, আমার বাবাইকে যে কষ্ট দিছেন। সেজন্য আপনি হাজারগুণ বেশি কষ্ট দিবেন। আর আপনি আমার বাবার পায়ের যোগ্য না। চলো তো বাবাই,এখানে আর এক মুহূর্তও নয়।
রাইসাকে নিয়ে রিক্সা করে যাচ্ছি। আর মনে মনে ভাবছি আজ থেকে সব শেষ হয়ে গেল। যে টুকু বিশ্বাস ছিল সেটাও তাসের ঘরের মতো ভেঙে গেল। ভেবেছিলাম সব ভুলে মৌকে বুকে টেনে নিবো কিন্তু তা আর হলো না। বরং হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। মানুষ কিভাবে পারে এসব করতে? সৃষ্টিকর্তা কি ক্ষমা করবে? আমি কি অপরাধ করেছিলাম যার জন্য সবাই আমাকে নিয়ে খেলছে। একবার কথা একবার মৌ। সত্যিই কি গরীবের কোন মর্যাদা নেই। আর কথা এতটা আঘাত করবে ভাবতে পারিনি। কথার প্রতিটা কথা কলিজা ছেঁদ করে ফেলছে। ছোটবেলায় থেকে চোখের জল সঙী হয়ে আছে। বয়স যখন সাত বছর নিষ্ঠুর পিতাটা আমার মাথার উপর থেকে মাকে কেড়ে নেয়। সৎ মায়ের ঘরে থাকতে পারিনি। যে বাড়িতে নিজের মা নেই সেখানে কিভাবে থাকি। যেদিন শুনেছি বাবা আর ডাইনীটা মিলে আমার মাকে মেরে ফেলেছে সেদিন আর পারিনি সে বাড়িতে থাকতে। আল্লাহ তায়ালার কাছে বিচার রেখে এসে পড়েছি। এতিমখানায় বড় হয়েছি। যখন কোন ছেলে-মেয়েকে তার মা বাবা আদর করতো। কুলে নিতো, তখন মনে হতো বুকের ভিতরটাতে চিনচিনে ব্যাথা করতো।
– কি হলো বাবাই তুমি কি ভাবছো?
– না বাবা কিছু না।
– এমন সময় রিক্সার সামনে দেখি একাটা প্রাইভেট কার দাঁড়ালো। রিক্সা ওয়ালা অনেকটা ভয় পেয়ে যায়।
– হঠাৎ গাড়ি থেকে কণা ম্যাডামকে নামতে দেখে অবাক হয়ে যায়।
-ম্যাডাম আপনি?
– হ্যাঁ আমি। আর মিস্টার রাজ, আপনি এভাবে লুকিয়ে এসে পড়ছেন কেন?
– মা আপনাকে নিয়ে যেতে বলছে। চলেন আমার সাথে।
– এখন?
– হ্যাঁ এখন।
– কণা জোর করে তাদের বাসায় নিয়ে গেল।
– এদিকে কথা, মৌ এর বাড়িতে ঢুকতেই একটা বাইক দেখতে পায়। বাইকটা তার খুব পরিচিত পরিচিত লাগছে। কিছুক্ষণ ভাবনার সাগরে ঢুব দিতেই মনে পড়ল এটা তো নিলয় এর বাইক। নিলয় মৌ আপুর কাছে কেন আসছে?
– কথা মৌকে খুঁজতে খুঁজতে একদম উপরে চলে যায়। কথা উপরে গিয়ে যখন মৌ এর রুমে নর্ক করবে এমন সময় ভেতর থেকে চাঁপা কন্ঠের আওয়াজ শুনতে পেল। ‘এই ছাড়ো নীলয়, কি করছো?’
– একটু আদর করি না।
– এসব ঠিক না। তুমি রাজকে আমার কাছে ফিরিয়ে দিবে বলে প্রমিজ করেছিলে। কিন্তু এখন তোমার মতিগতি আমি বুঝতে পারছি না। আমি রাজকে যেকোন মূল্যেই হোক চাই।
– হুমম তুমি যেমন রাজকে চাও, তেমনি আমি কথাকে চাই। আমার একটু ভুলের জন্য শতকোটি টাকার সম্পত্তি হাত ছাড়া হয়ে যায়। তাই লাস্ট গেমটা তোমাকে দিয়েই খেললাম। আর সরি তোমার রাজ নিরপরাধ হয়েও মার খেলো।
– কি বলছো এসব? তুমিও মারছো রাজকে?
– আরে না কথার সামনে একটা থাপ্পর দিয়েছিলাম। তবে কি জানো, তুমি ফাস্ট ক্লাস অভিনয় করতে পারো। ওদিন যদি সুসাইডের কথা বলে ওকে না নিয়ে আসতে তা হলে দেখা যেত সব প্লেন ব্যসতে যেত।
তবে কি জান রাজ তোমাকে ভালোবাসতো। তা না হলে, এতোরাতে তোমার সুসাইডের কথা শুনে ছোট্ট বাচ্চা রেখে ছুটে আসতো না।
– হুম জানি। আমিও তো রাজকে ভালোবাসি। জানো নিলয় কথার মুখে যখন শুনেছি রাজকে সে ভালোবাসে। তখন আমার মনে হয়েছিল তাকে খুন করে ফেলি। কিন্তু পারিনি। আমি জানতাম রাজ কখনো রাজি হবে না। কারণ রাজ হচ্ছে কষ্টি পাথর। কিন্তু যখন রাজ কথাকে বিয়ে করতে রাজি হয়ে যায় তখন আমি আর পারিনি সহ্য করতে। আর তখনি তুমি বুদ্ধিটা দিলে, রাজকে বাসায় ডেকে এনে, ঘুমের পিল খাইয়ে দিতে। তোমার বুদ্ধিটাও বেশ কাজে লেগেছে।
– তাই বুঝি মৌ।
– হ্যাঁ তাই। ওদিন যদি সুসাইডের কথা বলে ওকে না নিয়ে আসতে তা হলে দেখা যেত সব প্লেন ব্যসতে যেত। তবে কি জান রাজ তোমাকে ভালোবাসতো। তা না হলে, এতোরাতে তোমার সুসাইডের কথা শুনে ছোট্ট বাচ্চা রেখে ছুটে আসতো না।
– হুম জানি। আমিও তো রাজকে ভালোবাসি। জানো নিলয় কথার মুখে যখন শুনেছি রাজকে সে ভালোবাসে। তখন আমার মনে হয়েছিল তাকে খুন করে ফেলি। কিন্তু পারিনি। আমি জানতাম রাজ কখনো রাজি হবে না। কারণ রাজ হচ্ছে কষ্টি পাথর। কিন্তু যখন রাজ কথাকে বিয়ে করতে রাজি হয়ে যায় তখন আমি আর পারিনি সহ্য করতে। আর তখনি তুমি বুদ্ধিটা দিলে, রাজকে বাসায় ডেকে এনে, ঘুমের পিল খাইয়ে দিতে। তোমার বুদ্ধিটাও বেশ কাজে লেগেছে।
– তাই বুঝি মৌ।
– হ্যাঁ তাই।
– তবে কি জানো? একটা জিনিস সবচেয়ে ভালো লেগেছে, ঘুমের ঘরে রাজ আর তোমার পিকগুলো যে তোলা হয়েছে সেটা কথা বুঝতে পারে নাই। আর যে ভিডিওটা আমি আর তুমি করলাম সেটা কিন্তু সেই হইছে।
– কথাটা বলে নীলয় আর মৌ দু’জনেই হেসে দেয়।
-কথার কাছে এখন সবকিছু দিনের ন্যায় পরিষ্কার। সে যা দেখেছে সব ভুল। কথার খুব কষ্ট হচ্ছে। যে মেয়েকে সে বোন বানালো সে এমন করলো? কি দোষ করেছিল সে? রাজকে নিয়ে স্বপ্নই তো দেখেছিল। কথার বুকের ভেতরটা ফেটে যাচ্ছে। এদিকে নীলয় মৌ এর বুক থেকে উঠে পড়তেই জানালার দিকে চোখ যায়। নিলয় কথাকে দেখবে সে ভাবতে পারে নায় । নিলয় যখন দরজা খুলে বের হবে তখনি কথা তাড়াহুড়া করে গাড়ি নিয়ে বের হয়ে যায়।
– নিলয় মনে হচ্ছে কথা আমাদের সব কথা শুনে ফেলেছে। এখন কি করা যায়? প্লিজ তুমি একটা করো।
– তুমি কোন চিন্তা করো না। আমি সব ব্যবস্থা করছি। নিলয় মনে মনে ভাবলো রাজকে শেষ করে দেওয়া ছাড়া কথাকে পাওয়া যাবে না। কেননা কথা যেকোন কিছুর বিনিময়ে হলেও রাজকে তার করে নিবেই।
-এদিকে কথা কি করবে ভেবে পাচ্ছে না, রাজ কি তাকে ক্ষমা করবে। রাজকে কত অপমান করলাম। আমার রাজ যদি আমাকে ক্ষমা না করে। আমি যে ওকে ছাড়া কিছু ভাবতে পারছি না। এসব ভাবতে ভাবতে বাসায় না না গিয়ে সরাসরি রাজকে যে হসপিটালে ভর্তি করা হয়েছিল সেখানে চলে যায়। হসপিটালে গিয়ে রেজিস্টারে রাজের কথা জিজ্ঞেস করলে, কাউন্টার থেকে বলে রাজ নামে যে একজন ভর্তি হয়েছিল সে, দু’দিন আগে চলে গেছে। কোথায় গিয়েছে বলতে পারবেন?
– সরি ম্যাডাম তা তো পারবো না। কণা ম্যাডামকে বলতে পারেন! ম্যাডামের রিলেটিভ হবে বোধহয়।
-কথা হসপিটাল থেকে ঠিকানা নিয়ে যখন কণাদের বাসায় চলে যায়। কথা যখন কণাদের বাসায় ঢুকবে এমন সময় রাজ আর রাইসাকে বাসা থেকে বের হতে দেখেই দৌড়ে রাজের সামনে গিয়ে বললো’ রাজ তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও। ‘
– ম্যাডাম ছোটলোকের কাছে ক্ষমা চাইতে নেই।
– রাজ প্লিজ আমি বুঝতে পারিনি। আমি না বুঝেই এসব করছি। আমাকে ক্ষমা করে দাও।
– এই রিক্সা নিউমার্কেট যাবে?
– আমি যখন গাড়িতে উঠবো, এমন সময় কথা পিছন থেকে হাতটা ধরে ফেলল। আমি কথার হাতটা ছাড়িয়ে দিয়ে কথার গালে ঠাস করে চড় বসিয়ে দিলাম। কথা কাঁদছে। হ্যাঁ কাদুক।
– কি হলো আরো মারো? তবুও ছেড়ে যেয়ো না।
চলবে”””””