#বাবার_ভালোবাসা।
পর্বঃ১৪
লেখাঃ #রাইসার_আব্বু।
এদিকে পাঁচটা বেজে গেছে। তাই অযু করে ফজরের নামাযটা পড়ে নিলাম।
– ফজরের নামায পড়ে রাইসার জন্য ব্রেকফাস্ট রেডি করছি এমন সময় রাইসা কিচেনে এসে বলল ‘ বাবাই আন্টি ফোন করেছে?’
– ফোনটা ধরে সালাম দিতেই ওপাশ থেকে কথা ম্যাডাম সালামের জবাব দিয়ে আমাকে অফিসে যাওয়ার আগে তাদের বাসায় যেতে বলল।
– আমি রাইসাকে রেডি করে স্কুলে দিয়ে ওদিক দিয়েই কথা ম্যাডামের বাসায় চলে গেলাম। বাসায় গিয়ে কাজের মেয়েটাকে বললাম ম্যাডাম কোথায়?
– স্যার ম্যাডাম উপরে তার রুমে।
– আচ্ছা ঠিক আছে। আমি তিন তলার উঠে ম্যাডামের রুমের দরজা ধাক্কা দিতেই দেখি ম্যাডাম ড্রেস চেঞ্জ করছে। আমি চোখ দু’টি বন্ধ করে ফেললাম।
– ম্যাডাম চিৎকার দিয়ে উঠলো। ম্যাডাম কান ধরে চিৎকার দিতেই ম্যাডামের টায়ালটা বুক থেক সরে গেল। আমি ম্যাডামের দিকে চোখ মেলে তাকাতেই আবারো চোখ বন্ধ করে এবার আমি চিৎকার দিলাম।
– ম্যাডাম এবার তার দিকে তাকিয়ে চমকে গেল। তার টাওয়াল ফ্লরে পড়ে গেছে। লজ্জায় চোখমুখ লাল হয়ে যাচ্ছে।
– রাজ প্লিজ চোখ বন্ধ করেন।
– ম্যাডাম আমি চোখ বন্ধই করে আছি।
– এমন সময় কাজের মেয়েটা দরজা এসে বলল আপা মনি কি হয়েছে?
– আমি দরজাটা লাগিয়ে দিলাম। এ অবস্থায় কাজের মেয়ে দেখলে কেলেঙ্কারি হয়ে যাবে। কি হলো আপা মনি দরজা খুলছেন না কেন?
– এদিকে ম্যাডামের শাড়ি পরা প্রায় শেষ। কুচি ঠিক করতে পারছে না।
– আমি ম্যাডামের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিতেই বলল’ কি হলো চোখ বন্ধ করো।
– আমি দু’হাত দিয়ে চোখ বন্ধ করে বললাম। ম্যাডাম শাড়ির কুচি ঠিক করেন। লুঙির মতো দেখাচ্ছে।
– ম্যাডাম তাকিয়ে দেখে সত্যিই কুঁচি লুঙির মতো ফুলে আছে। কেন জানি আজ শাড়ি ঠিক মতো পরতে পারছে না।
– কি হলো চোখ বন্ধ করেও হাসছো কেন?
-কই হাসছি না তো।
– তুমি এখনো হাসছো।
– হাসবো না তো কি করবো, আপনি লুঙির মতো করে শাড়ি পরছেন।
-না হেসে এতো পারো কুঁচিটা ঠিক করে দাও।
– সরি ম্যাডাম আমি পারি না।
– হুমম জানতাম পারবে না। শোন যেটা নিজে পারো না, সেটা কেউ না পারলে তা নিয়ে মজা করো না।
– আবার হাসছো কেন?
– ম্যাডাম আপনার কথা শুনে।
– হইছে হাসতে হবে না। এতই যদি হাসতে পারো দেখি, শাড়ির কুঁচি ঠিক করে দাও।
– আমি কিছু না বলে ম্যাডামের শাড়ির কুঁচির দিচ্ছি। ম্যাডাম বাঁধা দিতে চেয়েও থেমে গেল। বিস্ময়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে ম্যাডাম। আমি কাঁপা কাঁপা হাতে শাড়ির কুঁচি দিচ্ছি। ম্যাডাম মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে আছে। মনে হচ্ছে জাদুঘরে রাখা কোন মমি। চোখ জোড়া যে এতো সুন্দর আজ প্রথম চোখে চোখ রেখে বুঝলাম। শাড়ির কুঁচি দেওয়া শেষ হলে। যখন কুঁচিটা নাভির কাছে গুজে দিবো এমন সময় কথা তার দু’চোখ বন্ধ করে ফেলল। কথার নিঃশ্বাস ঘন হয়ে আসছে। কথার চেহারাই মৌকে দেখতে পাচ্ছি। মনে হচ্ছে মৌ দাঁড়িয়ে আছে আমি তার শাড়ি পড়িয়ে দিচ্ছি। হঠাৎ মনে পড়ল। এটা কি করছি? এটা তো ঠিক না। কথার দিকে তাকিয়ে দেখি কথা চোখ বনধ করে আছে।
– আমি কি করবো ভেবে পাচ্ছি না। একবার ভাবছি শাড়িটা কোমরে গুজে দেয় আবার মন সায় দিচ্ছে না। শয়তানের প্ররোচনা দৃঢ়ভাবে প্রভাবিত করছে। শেষ পর্যন্ত আর পরাতে পারলাম না।
– কি হলো রাজ কুঁচি দিয়েছো?
– না ম্যাডাম চোখ খুলেন।
– কুঁচি গুজে দাওনা কেন।
– ম্যাডাম আমি কুঁচি দিয়ে দিয়েছি। এখন আপনি আপনার কুমড়ে গুজে দেন।
– ওহ্ আচ্ছা। কথা কুমড়ে কুঁচি গুজতে গুজতে বলল’ কি হলো তাকিয়ে আছো কেন?
– আমি কিছু না বলে রুম থেকে বেরিয়ে পড়লাম। মাথাটা ভোঁ ভোঁ করছে। মনে হচ্ছে ঘোরের মাঝে ছিলাম। মাতাল অবস্থায়। না এটা ঠিক না। আল্লাহ আমাকে এসব থেকে রক্ষা করো মনে মনে বলছি।
– রুম থেকে বের হতেই কাজের মেয়েটা জিজ্ঞেস করল’ স্যার রুমে কে চিৎকার দিলো? ‘
– কই না’তো।
– আমি স্পর্ষ্ট শুনতে পেলাম উপর থেকে কারো চিৎকারের আওয়াজ আসলো। আর দরজা খুলছিলেন না কেন?
– ওহ্ টিভি অন ছিল সে শব্দ মনে হয় শুনেছে ।
– হতে পারে স্যার। আচ্ছা আমি আসি।
– চল রাজ আমি রেডি।
– ম্যাডামের দিকে তাকাতেই চোখ নামিয়ে ফেললাম। ম্যাডামকে আজ অপূর্ব লাগছে।
– কি হলো অফিস যাবে না?
– হুম যাবো তো।
– আচ্ছা চলেন।
– আচ্ছা রাজ আমি তোমার চেয়ে কি বড়? আপনা করে ডাকলে নিজেকে বুড়ি বুড়ি লাগে।
-হাহা বুড়ি না ম্যাডাম আপনাকে ৮০ বছরের বুড়ি লাগে।
– সিরিয়াসলি রাজ?আমি কিন্তু রেগে যাচ্ছি।
– শুনেন ম্যাডাম রাগের কিছু নাই। আপনি বয়সে বড় না হলেও সম্মানের দিক থেকে আপনি বড়। কারণ আপনি আমার মালিক আর আপনার সামান্য কর্মচারী অামি। মালিক আর কর্মচারীর সম্পর্ক আপনি পর্যন্ত থাকায় শ্রেয়!
– ওহ্ তুমিও না। একটা কথা জিজ্ঞেস করলাম। আর তুমি সবকিছু শুনিয়ে দিচ্ছো। শোন আজকের পর থেকে আমাকে তুমি করে বলবে। এটা আমার মালিক হিসেবে আদেশ।
– আচ্ছা ম্যাডাম।
– আবার ম্যাডাম। আচ্ছা গাড়িতে উঠো।
– আমি পিছনে গিয়ে বসলাম।
– কি হলো রাজ পিছনে কেন? সামনে আসো।
– আমি কিছু না বলে,ম্যামের পাশে গিয়ে বসলাম। ম্যাডাম গাড়ি চালাচ্ছে। আমি পাশে বসে ম্যাডামের বাসায় ঘটে যাওয়া বিষয় নিয়ে ভাবছি। কি বিভ্রান্তিতেই না পড়েছিলাম। আল্লাহ আজ মানসম্মান রক্ষা করেছে।
– আচ্ছা রাজ বাহিরের দিকে তাকিয়ে কি ভাবছো?
– না কিছু না।
– আচ্ছা রাজ বলোতো একটা মেয়ের সবচেয়ে মূল্যবান জিনিস কী?
-আমি বুঝতেছি না কি বলব। তাই চুপ করে আছি।
– কি হলো বলো?
– আমি যতটুকু জানি ম্যাডাম। তাহলো একটা মেয়ের সতিত্ব তার কাছে সবচেয়ে মূল্যবান।
– ওহ্ আচ্ছা । জানো রাজ ভুল করে একজনকে ভালোবেসেছিলাম। ভালোবাসাটা ওর কাছে স্বার্থের থাকলেও আমার কাছে ছিল পবিত্র। তবে কি জানো ওর সাথে দু’বছরের রিলেশনে কিছুই হয়নি। একটা পাপ্পি পর্যন্ত দিতে দেয়নি। আমি চেয়েছি বিয়ের পর আমার শুদ্ধতম ভালোবাসাটা তাকে উপহার দিতে। কিন্তু পারিনি, সে তার আগেই তার মুখোশ উন্মোচনন করেছে। সত্যিই আল্লাহ তায়ালা মহান। যা করেন তার বান্দার মঙলের জন্যই করেন। তবে কি জানো রাজ আমার সতিত্ব দেখার প্রথম পুরুষটা তুমি। জানি না আজ কি থেকে কি হয়ে গেল। আজ তুমি আমার শরীরের বিশেষ অঙ্গ অনিচ্ছাকৃতভাবে দেখে ফেলেছো । যেটা একটা নারীর জন্য কতটা দৃষ্টিকটু।
তবে কি জানো রাজ আমার সতিত্ব দেখার প্রথম পুরুষটা তুমি। আজ তুমি আমার শরীরের বিশেষ অঙ্গ অনিচ্ছাকৃতভাবে দেখে ফেলেছো ।
– সরি ম্যাডাম ক্ষমা করবেন। আমি সত্যিই ভুল করে ফেলেছি। আর জানতাম না আপনি রুমে ড্রেস চেঞ্জ করতে ছিলেন। আর ভুলটা আমারি নর্ক করে রুমে ঢুকা উচিত ছিল। আমাকে প্লিজ ক্ষমা করে দিয়েন।
– রাজ প্লিজ ক্ষমা চেয়ো না। ভুলটা আমারি দরজা লর্ক না করে ড্রেস চেঞ্জ করা। একটা সত্যি কথা বলবো রাজ?
– হ্যাঁ বলেন ম্যাডাম।
– কথা আমার হাতের উপর তার হাতটা রাখল।নরম হাতের স্পর্শ শরীরটা কেমন যেন করে ওঠলো । ম্যাডাম আমার হাতের উপর তার হাতটা রেখে বলল’ রাজ আমি আর দ্বিতীয় কাউকে সতিত্ব দেখাতে চাই না।
– মানে ম্যাডামের হাতের নিচ থেকে হাতটা সরিয়ে ফেললাম। মনে মনে বললাম এ হাত শুধু রাইসাকে পথ দেখানোর। কারো হাতে রাখা নয়।
– কি হলো হাত সরিয়ে নিলে কেন?
– ম্যাডাম অফিস এসে পড়েছি।
– ম্যাডাম কিছু বলতে চেয়েও থেমে গেল।
– গাড়ি থেকে নেমে অফিসে গিয়ে দেখি ডেস্কে একটা চিরকুট।
– ডেস্কে বসে চিরকুটটা দেখে বুঝতে বাকি রইলনা এটা মৌ দিয়েছে।
– চিঠির ভাজ খুলতেই দেখতে পেলাম। কালো কালিতে, কিছু গোছানো শব্দগুচ্ছ। অগুছানো জীবনকে গুছানোর বৃথা চেষ্টা করছে।
– মৌ উঁকি দিয়ে দেখছে আমি চিঠি পড়ছি।
– আমি চিঠি পড়তে পড়তে শেষে দেখলাস ব্র্যাকেটে লিখা, লাঞ্চের সময় তোমার জন্য খাবার নিয়ে এসেছি। ভালো না বাসতে পারলেও আজ আমার সাথে লাঞ্চ করো। আজ তোমার পছন্দের সরষে ইলিশ রেঁধেছি।
– ইতি, অভাগী!
-চিঠিটা পড়ে শেষ করে বুক পকেটে রেখে দিলাম। লাঞ্চের সময় যখন ডেস্ক থেকে উঠে ক্যান্টিনে যাচ্ছি এমন সময় কথা এসে বলল ‘ রাজ চলো লাঞ্চের সময় হয়ে গেছে। লাঞ্চ করে আসি।
– ম্যাডাম আমি ক্যান্টিন থেকে খেয়ে নিবো।
– ধুর! আসো না। আমিও সবার সাথে ক্যান্টিনে খাবো।
– কথা আমাকে এক প্রকার জোর করেই ক্যান্টিনে নিয়ে গেল। ম্যাডাম আমাকে নিয়ে মৌ এর পাশের টেবিলে বসলো। মৌ টিফিন বাটি থেকে খাবার বের করতেই দেখে আমি কথা ম্যাডামের সাথে খাচ্ছি।
– মৌ আমাকে কথার সাথে দেখে চোখের পানি আর ধরে রাখতে পারল না। মৌ এর চোখের পানি গড়িয়ে খাবারে পড়ছে। খাবার মুখে দিতে গিয়েও পারছে না। মন চাচ্ছে মৌ এর চোখের পানিটা মুছে দেয়। কিন্তু না সেটা যে আর সম্ভব না।
– কি হলো রাজ খাচ্ছো না কেন? হঠাৎ কথার চোখ গেল মৌ এর দিকে। কথা খেয়াল করল তার পাশের টেবিলে মৌ কাঁদছে।
– এইযে আপনি কাঁদছেন কেন?
চলবে””””’
বিঃদ্রঃভুলক্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।