#ভেতরে_বাহিরে
পর্বঃ২৪
লেখিকাঃ #রুবাইদা_হৃদি
নিকষ কালো আধাঁরে একদন্ড জ্যোতির ছিটেফোঁটা নেই৷ আধাঁর কন্যার আজ ভিষণ মন খারাপ৷ রুপোলী চাঁদের আলো ছুঁতে পারছে না ধরণী৷ মেঘের আনাগোনায় লুকায়িত প্রেমিযুগলের মতো লুকোচুরি খেলছে অর্ধচন্দ্র৷
আবেশ মাধুর্যের সামনে ল্যাপটপ খুলে বসে আছে ৷ কাল রাতে বাসায় ফেরার পর মাধুর্য বেশ চুপচাপ৷ আবেশ ল্যাপটপ সরিয়ে বলল,
‘ আমার ঘরে কেউ একজন আছে সে বড্ড চুপচাপ৷ কেন চুপচাপ! তার কী পেটে ব্যথা করছে?’
আবেশের কথা শুনে মাথা উঠিয়ে তাকালো মাধুর্য৷ আড়চোখে রুমের চারপাশে চোখ বুলিয়ে বলল,
‘ কোথায় কেউ নেই তো!’
‘ আছে৷ আর সে আমার সামনেই বসে আছে৷’ আবেশ থুতনিতে হাত দিয়ে সামনে ঝুঁকে বসে বলল৷ আবেশ যে তার কথা বলেছে এখন বুঝতে পেরেছে মাধুর্য ৷ দ্রুত মাথা ঝাকিয়ে বলল,
‘ আপনার হবে হয়তো৷ আমার ঘাড়ে চাপাচ্ছেন কেন? দেখুন,আমি আর ছোট নই যে আম্মু’মার সামনে মিথ্যা বলে আপনার ঔষধ আমায় খাওয়াবেন৷’
আবেশ হাসলো ৷ মাধুর্য হুটহাট রেগে যায়৷ তার রাগের ধরণ হয় বাচ্চাদের মতো নাক ফুলিয়ে ৷ আবার যখন মন খারাপ করে বসে থাকে তখন,তাকে ভয়ানক সুন্দর লাগে যার চোখেমুখে ছেয়ে থাকে কালো মেঘের পসরা৷ আবেশ নিজেকে সংযত করে মোলায়েম কন্ঠে বলল,
‘ ঘুমিয়ে পড়ো৷’
‘ আমার ঘুম আসছে না৷’ মাধুর্য ম্লানমুখে বলল৷ আবেশ ল্যাপটপ দূরে সরিয়ে রেখে উঠে দাঁড়ালো৷ মাধুর্যের সামনে দাঁড়িয়ে বলল,
‘ আমার হাত ধরে ঘুমাবে,মাধুর্য?’
আবেশের এহেন কথায় হচচকিয়ে গেলো মাধুর্য৷ আবেশের নিঃসংকোচ আবেদন যেন ভাবনার অতল সাগরে ঠেলে দিলো তাকে৷ আবেশ মাধুর্যের উত্তরের আশা না করেই তার পাশে বসে হাতের মুঠোয় মাধুর্যের হাত নিয়ে মুখে হাসি টেনে বলল,
‘ আমি তোমার পাশেই আছি৷ ঘুমিয়ে পড়ো৷ এইদেখো আমার হাত তোমার হাতে৷’
মাধুর্য শুয়ে পড়লো ৷ আবেশের হাতে তার হাত ৷ আবেশ পেছনে হেলান দিয়ে বসে বলল,
‘ যতোটা ভরসা তোমার দশ বছর আগের আবেশ ভাইয়াকে করতে ঠিক ওই পরিমাণের ভরসা থেকে একটু ভরসা করতে পারো ৷ কথা দিচ্ছি,তার থেকে বেশি ভরসার যোগ্য হয়ে উঠবো৷’
মাধুর্য কিছু না বলেই শুয়ে রইলো৷ আবেশের আঙুলের ফাঁক গলে তার আঙুল জায়গা করে নিয়েছে ৷ মাধুর্যের সত্যি সত্যি ঘুম পাচ্ছে৷ তার চোখ জুড়ে নেমে আসলো ঘুমপরী ৷
আবেশ অন্যদিকে তাকিয়ে ছিলো৷ মাধুর্যের শব্দ না পেয়ে ঘুরে তাকিয়ে দেখলো,মাধুর্য তার হাত শক্ত করে ধরে রেখেছে ৷
জানালা ভেঁদ করে রাতের বাতাসের দল ভীড় করেছে ঘর ৷ সেই সাথে ভেসে আসা কদমের সৌরভ মাতোয়ারা করছে চারিপাশ ৷ আবেশের ঘোর লেগে যাচ্ছে ৷ মাধুর্য গুটিশুটি মেরে তাকে আঁকড়ে ধরেই শুয়ে আছে ৷ জেগে থাকলে হয়তো সংকোচ হতো আবেশের ৷ তবে এখন সংকোচ ছাড়াই,তার হাত দিয়ে ছুঁয়ে দিলো মাধুর্যের ললাট,অধরযুগল ৷ মসৃণ গালে হাত রেখে বলল,
‘ মেঘমালা,আমার অন্ধকারবৃত ঘর জানে,আমার ঘোলাটে চশমা জানে,রাতের আঁধার জানে আমি আমার মাধবীলতা কে কতোটা চাই ৷ তার সমস্ত দুঃখ গুলো শুষে নিতে চাই ৷ তার সমস্ত দিন সুখের ডায়েরিতে লিপিবদ্ধ করতে চাই৷ দিনশেষে আমি তার হাসি মুখে নিজেকে ভাসাতে চাই ৷ প্রত্যেকটা প্রত্যুষের আলোক ছটা তার সাথে,শুধু তার সাথেই উপভোগ করতে চাই ৷’
বলতে বলতেই আবেশের গলার স্বর কেঁপে উঠলো৷ ছুঁয়ে দিলো মাধুর্যের কাটা দাগ গুলো ৷ চোখ থেকে গড়িয়ে পড়লো আনন্দাশ্রু৷ সে অশ্রু সুখের,প্রেয়সীকে নতুন ভাবে গ্রহণ করার অবকাশ৷ তার ব্যর্থতাকে ছাপিয়ে নতুন ভাবে গোছানোর মুহূর্ত৷
__________
২০১৩ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর ৷ শ্রাবণের প্রথম সপ্তাহ৷ শ্রাবণের বারিধারা ভিজিয়ে দিচ্ছে প্রকৃতি৷ ঘনকালো মেঘ রাশিতে ছেয়ে আছে আকাশ৷ টুপটাপ বৃষ্টি গড়িয়ে পড়ছে নিয়মমেনে৷ রাব্বীকে পুলিশে ধরে নিয়ে যাওয়ার আজ পঞ্চম দিন৷ শাহেদ কে খুজে পাওয়া যাচ্ছে না কোথাও ৷ নজরুল সাহেব চিন্তিত হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন ড্রয়িংরুম৷ মাহফুজা অস্থিরতা নিয়ে বললেন,
‘ আহ্,স্বস্তি নিয়ে বসো তো একটু৷’
‘ আমার স্বস্তি তখুনি আসবে যখন রাব্বীর ফাঁসির আদেশ কার্যকর হবে৷’ নজরুল সাহেব সোফায় বসে বললেন৷ মাহফুজা দৃঢ় কন্ঠে বললেন,
‘ সব হবে৷ তুমি চিন্তা করো না৷’
‘ মাধুর্য আর আবেশ কোথায়! তারা আজ জেলে যাবে রাব্বীর সাথে দেখা করতে৷’
‘ মাধুর্য এখনো দূর্বল ৷ তাই হয়তো দেরি হচ্ছে৷’ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন মাহফুজা ৷ নজরুলের কঁপালে সূক্ষ্ম চিন্তার রেখা ৷ সে আবারো উঠে দাঁড়ালো বসা থেকে ৷ সব তার হাতের বাইরে না গেলেই শান্তি ৷
‘ আমি বলছি তো,আমি একা যেতে পারবো৷’ মাধুর্য জেদ দেখিয়ে বলতেই আবেশ তার কথা কর্ণকুহর না করেই ঠেসে ধরলো মাধুর্যের হাত৷ রুক্ষ কন্ঠে বলল,
‘ এখানে মোট আটত্রিশটা সিড়ি আছে৷ একেকটা সিড়ি নামতে তোমার হবে ২ দশমিক পাঁচ ক্যালরি বার্ন হবে৷ তাহলে টোটাল হিসেব করলে,৯৫ ক্যালরি বার্ন৷ যেখানে ডক্টর বারবার বলেছে তোমার ক্যালরি ঘাটতি রয়েছে৷ তাই আমি কোনো রিস্ক নিতে চাই না৷’
মাধুর্যের মাথা ঘুরাচ্ছে আবেশের হিসেব দেখে ৷ গত পাঁচ দিন সে অফিস থেকে দ্রুত ফিরেছে৷ টাইম টু টাইম তাকে খাবার খাইয়েছে ৷ খাবার নির্যাতন নামক কোনো আইন থাকলে,সেখানে মাধুর্য অবশ্যই আবেশকে আসামি বানিয়ে দিতো৷ মাধুর্য বড় বড় চোখ করে বলল,
‘ আমি ঠিক আছি৷ ডাক্তারের রিপোর্ট ভুল৷’
‘ কে বলেছে তোমায়?’
‘ ভুল না হলে ভাবুন,আমি খেয়ে মোটা হয়ে যাচ্ছি তবুও নাকি আমার ক্যালরির ঘাটতি ! এইটা কোন লজিকে আছে?’
মাধুর্যের কথা শোনে কপালে আঙুল ঘষে আবেশ থম মেরে দাঁড়িয়ে রইলো৷ মাধুর্যের যুক্তি শুনে তার হাসি পাচ্ছে ৷ নিজেকে সংযত করে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে সময় দেখে বলল,
‘ মেনে নিলাম ৷ এখন কথা না বাড়িয়ে আমার কাছে এসো৷ দেরি হয়ে যাচ্ছে৷’
মাধুর্য লজ্জায় বিমূঢ় হয়ে ঠাই দাঁড়িয়ে রইলো৷ নীচে হয়তো সবাই আছে এইভাবে নামলে দৃষ্টিকটু দেখায়৷ মাধুর্যকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আবেশ এগিয়ে আসতেই মাধুর্য বাধা দিয়ে বলল,
‘ আমি ওইভাবে যাবো না৷’
‘ কী ভাবে! ‘ আবেশ ভ্রু কুঁচকে বলল৷ মাধুর্য শুকনো ঢোক গিলে এদিক ওদিক তাকিয়ে বলল,
‘ আপনার কোলে ওঠে৷’
‘ আমার হাত ধরতে বলেছি,ডাফার ৷ নীচে বাবা-আম্মা আছে তাদের সামনে নির্লজ্জতা শোভা পায় না৷ অন্যকেও হলে অবশ্যই কোলে তুলে নিতে একদন্ড ভাবতাম না৷’ শেষের কথাটুকু বাকা হেসে বলল আবেশ ৷
মাধুর্য নিজের ভাবনার জন্য আরেকদফা লজ্জায় লালাভ হয়ে উঠলো।আবেশ কী ভাবছে! এইসব ভেবে মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে আছে সে৷ আবেশ নিজ থেকেই মাধুর্যের হাত শক্ত করে ধরে বলল,
‘ এতো লজ্জা পেয়ো না আমার রাণী৷ কিছু বাঁচিয়ে রাখো৷’
আবেশের নির্লিপ্ত ভাবে বলা কথায় আরো মিইয়ে গেলো সে ৷ আশেপাশের কোনোদিকে না তাকিয়ে সোজা হেটে গেলো সামনে৷
সে জানে না কোথায় যাচ্ছে,আবেশকে জিগ্যেস করতে সে বলেছিলো,’ কোচিং সেন্টারে যাচ্ছে৷’ এর পর আর একটাও প্রশ্ন করে নি সে।
গত কয়েকদিন আবেশ তাকে অতীত থেকে দূরে রেখেছে৷ নাজিফা,ইরা তাকে নিয়ে বিকেলে সময় কাটিয়েছে ৷ তবুও,দিনশেষে রাতের আঁধারে ভেসে উঠতো,রাব্বীর হিংস্রতা,শাহেদের নিষ্ঠুরতম আচরণ৷ আর তার মা নেই এই কঠিন সত্যটা৷ ভেবেই বুক চিড়ে বেরিয়ে এলো বিষাদের ছায়া৷ __________
ইলশেগুঁড়ি বৃষ্টির আনাগোনা৷ কর্দমাক্ত রাস্তা৷ জ্যামহীন রাস্তায় সাঁই সাঁই শব্দে হাই স্পিডে গাড়ি চালাচ্ছে আবেশ ৷ ড্রাইভিং এর ফাঁকে ফাঁকে বারবার ঘড়ি দেখে বিরক্তির শিষ তুলে স্পিড একটু একটু করে বাড়িয়ে দিচ্ছে ৷
কোচিং সেন্টারের রাস্তা মাধুর্যের কিছুটা মনে আছে৷ আবেশ সেইদিকে যাচ্ছে না দেখে বাইরে উঁকি দিয়ে কিছু একটা খুজে বলল,
‘ এইটা তো কোচিং এর রাস্তা না৷’
‘ আমরা অন্য একটা জায়গায় যাচ্ছি৷’ আবেশ নির্বিঘ্নে বলল৷ মাধুর্য অবাক সুরে বলল,
‘ অন্য জায়গা মানে ! আমাকে তো আগে কিছু বলেন নি৷’
‘ গেলে অবশ্যই দেখতে পাবে৷ আর হ্যাঁ,ভয় পাবা না৷’
‘ ভয় কেন পাবো ! আমরা যাচ্ছি কোথায়?’
মাধুর্য আবারো প্রশ্ন করলো৷ আবেশ উত্তর না দিয়ে গাড়ি চালাচ্ছে৷ তার চোখেমুখে উঁপচে পড়ছে চিন্তা৷ মাধুর্য কী ভাবে সবটা নিবে সেটা ভাবাচ্ছে তাকে৷ মেয়েটাকে সে যতোবেশি আগলে রাখার চেষ্টা চালাচ্ছে,তবুও যেন,আরো শূন্যতার দিকে ঠেলে দিচ্ছে নিষ্ঠুর বাস্তবতা ৷
কাল রাতের কথা মনে পড়তেই অন্যমনস্ক হয়ে উঠলো আবেশ৷ তাদের বাড়িটা যে মাধুর্যের সেটা নিয়ে তারা দুইভাই বেশ বাকবিতন্ডায় লিপ্ত হয়েছিলো নজরুলের সাথে ৷ সে কেন আগে সবটা বলে নি! তবে,তার বাবা নজরুল তার আর ফয়েজের কাছে অনুতপ্ত৷ কাল রাত্রে তাদের দুইভাইকে ডেকে ভদ্রলোক কেঁদেছেন৷ দুই ছেলের হাত ধরে বলেছিলেন,
‘ আমি তখন তোমাদের সুখের খোজে ছিলাম বলেই মেহরুনের দেওয়া আমানত নিজের ভোগবিলাসের কাজে লাগিয়েছি ৷ তবে,আমি মাধুর্যকে তার প্রাপ্য ফিরিয়ে দেওয়ার জন্যই বসে আছি ৷ মনে রেখো, সন্তানের ভালোর জন্যই বাবা-মা কখনো স্বার্থপর হয়৷ আমার কাজে আমি লজ্জিত৷ তোমরা যদি চাও আমাকে মেরে ফেলো তবুও রাগ করে থেকো না৷’
নজরুলের কথা শোনে ফয়েজ আর সে ভাষা শূন্য মূর্তির ন্যায় দাঁড়িয়ে ছিলো৷ বাবার অবদান তাদের জীবনে অনেকাংশ তাই বলে,বাবাকে মেরে দিবে? এই শিক্ষা তাদের নেই ৷ নজরুল সাহেব মাধুর্যের নামে সব উইল করে রেখেছেন দেখে তারা উভয়ই চুপ হয়ে গেছে ৷
তবে আবেশ এখন মাধুর্যের হারিয়ে যাওয়া জীবনটাকে ফিরিয়ে দিতে না পারলেও ! সব সুখ এনে দিবে তার দোরগোড়ায়৷
__________
গাড়িটা থানার সামনে থামতেই চমকে তাকায় মাধুর্য৷ প্রশ্নসূচক চোখে তাকিয়ে আবেশকে উদ্দেশ্য করে বলল,
‘ থানায় কেন এসেছি ৷ আমাকে থানায় কেন এনেছেন৷’
মাধুর্যের অস্থিরতা দেখে আবেশ তাকে শান্ত করার জন্য বলল,
‘ রাব্বীর সাথে দেখা করতে ৷ আজ বারোটায় তাকে আদালতে হাজির করা হবে৷’
মাধুর্য খাঁমচে ধরলো নিজের পরনের জামা ৷ আবারো এই মানুষটার সামনে দাঁড়াতে হবে৷ আবেশ ভরসা দিয়ে বলল,
‘ কাম ডাউন মাধুর্য ৷ কিচ্ছু হবে না৷’
মাধুর্য রাগে কাঁপছে৷ তার মাকে খুন করেছে কথাটা বারবার আওড়াচ্ছে৷ গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়িয়ে শান্ত ভঙ্গিতেই এগিয়ে গেলো আবেশের সাথে৷
অন্ধকারচ্ছন্ন সরু গলি দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে মাধুর্য, আবেশ,আর মোহসীন৷ হলুদ নিভু নিভু আলো জ্বলছে বিভিন্ন জায়গায়৷ আশেপাশের কয়েদ খানায় ঝিমিয়ে আছে কিছু আসামী ৷ কেউ কেউ গল্প করছে ৷
মোহসীন নামক মানুষটা আবেশের সম বয়সী৷ চোখেমুখে তার কাঠিন্য ভাব৷ দেখলেই মনে হয় রেগে আছে ৷
মাধুর্য এমন ধরণের জায়গায় আগে কখনো আসে নি৷ সে শক্ত করে চেঁপে ধরলো আবেশের হাত৷ আবেশ মৃদু স্বরে বলল,
‘ রিলাক্স.. আমি আছি তো সাথে৷’
মোহসীন ডান দিকের গলিতে ঢুকতে ঢুকতে বলল,
‘ রাব্বী! হি ইজ,ডেঞ্জারাস৷ তার সাথে বড় বড় ডিলার দের হাত আছে৷ অনেক তথ্য আমরা খুজে পেয়েছি ওর থেকে৷’
‘ শাহেদ আঙ্কেল কে খুজে পেয়েছিস?’ আবেশ প্রশ্ন করে বলল৷ মোহসীন কিছু একটা ইশারায় বুঝালো আবেশকে ৷ আবেশ স্তব্ধ,নির্বাক৷
একটা সেলের সামনে এসে মোহসীন থামলো৷ আবেশকে বলল,
‘ বাইরে থাক৷’
আবেশ সম্মতি দিতেই মোহসীন সেলের ভেতরে যায়৷ মাধুর্য আশেপাশে দেখতে ব্যস্ত ছিলো৷ ধ্যান ভাঙ্গলো রাব্বীর ভয়ানক ডাকে,
‘ মাধুর্য…আরে মাধুর্য ৷ কোথায় রে তুই..’
মাধুর্যের আত্মা কেঁপে উঠলো৷ প্রত্যেকবার মারার আগে রাব্বী এইভাবেই ডাক দিতো ৷ মাধুর্য খাঁমচে ধরলো আবেশের হাত ৷ আবেশ রক্তচক্ষু নিয়ে তাকালো সামনে। চেয়ারে বসে আছে রাব্বী ৷ ঠোঁট কেটে রক্ত বের হচ্ছে ৷ তবে মুখে হাসি ৷ আবেশের দিকে চোখ তুলে তাকিয়ে খ্যাঁক খ্যাঁক করে হেসে বলল,
‘ আমার বোনজামাই ৷ ভালো আছেন? ওই নষ্ট মেয়ে মানুষের সাথে সম্পর্ক ঠিক হয়েছে? চিঠি পড়েন নি! ওর প্রেমিক আর ওর প্রেমের নোংরা কাহিনি ৷’
‘ তাহলে তুই দিয়েছিলি সেই চিঠি ৷ হারামি.. ও তোর বোন হয়৷’
‘ ওর বাপের পরিচয় নাই ও আবার কীসের বোন আমার৷’ রাব্বী একদলা থুতু মাটিতে ফেলে কথাটা চিবিয়ে বলল৷ মোহসীন ধমক দিতেই হেসে উঠলো আবার ৷ রাব্বীর কথা শোনে মাধুর্য কেঁপে উঠলো৷ রাগ নিয়ে বলল,
‘ ও আমার মায়ের খুনি৷ আমার জীবন নরক বানানোর কারিগর…’ মাধুর্যের শরীর কাঁপছে৷ আবেশ একহাতে জড়িয়ে নিয়ে বলল,
‘ মাধুর্য ও ওর শাস্তি পাবে৷’
‘ তোর বাপেরে মেরে ওই জমিদার বাড়িতেই পুঁতে দিয়ে আসছি শেষ করে দিছি তোর মায়ের মতো ৷ উফস সর্যি,তোর মায়ের নাগররে৷’ রাব্বী পায়ের উপর পা তুলে বলল ৷
মাধুর্য আবেশের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বলল,
‘ উনি কোথায়৷ কী করেছেন উনার সাথে৷ আমার মা’কে কেন মেরেছেন৷ কী দোষ ছিলো আমার৷ কেন করেছেন আমার সাথে এমন৷’
মাধুর্য কেঁদে কেঁদে বলছে ৷ রাব্বী হাসি থামিয়ে দিলো৷ হঠাৎ করে টলমল করে উঠলো তার চোখ ৷
চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়াতেই মোহসীন বাধা দিতেই রাব্বী বলল,
‘ পালায় যাবো নারে পুলিশ৷ থাম তুই ৷ আমারে কথা কইতে দে৷’
মোহসীন থেমে গেলো৷ রাব্বী টলমল চোখেই বলল,
‘ তোর নানা..ওই হারামির জন্য আমার মায়ের জীবন শেষ হইছে ৷ শা* সম্পত্তি দেয় নাই ওর বোনরে ৷ এর জন্যই তো আমার বাপ মানে ওই হা* তোর মার লগে পিরিত করছে ৷ যার জন্য আমার মা’রে মারতো৷ শেকল দিয়ে বাইধা মারতো ৷ মোটা বাশ দিয়া মারতো৷ আমার মায়ের সুন্দর মুখে দাগ দেখোস নাই? গরম লোহা দিয়া পুইড়া দিছে আমার সামনে ৷ আমার মা কতো কাঁদতো৷ তোর মায়ের পা ধইরা ও কাঁদছে তারে ছাইড়া দিতে৷ দেয় নাই তোর মা ৷ এরপর পালায় গেলো৷ জানোস? তোর নানা এর পর কী করছে? আমার মা’রে শাস্তি দিছে ৷ আমার মায়ের লম্বা চুল আগুনে পুড়ায় দিছে৷ আমি তখন ছোট অনেক ছোট ৷ আমার মা’রে যখন মারতো আমি ফিরাইতে গেলে আমারেও মারতো তোর বাপে ৷ দেখ দেখ রাব্বী নিজের গায়ের শার্ট টেনে খুলে বলল৷ মাধুর্য অবাক হয়ে শুনছে৷ রাব্বী আবার হেসে বলল,
‘ ওই শা* রে মাইরা দিছি৷ তোর মায়েরেও মারছি৷ ভাবছিলাম তিলে তিলে মারুম আমার মা’য়ের মতো৷ কিন্তু পালায় সিলেট আসছিলো ৷ রাস্তার মধ্যে, একদম পিষে দিয়েছি গাড়ি দিয়ে তারপর সেই লাশ মেঘনা নদীতে ভাসায় দিছি৷ আমার মায়ের জীবন নরক বানানোর জন্য তোর থেকে শোধ নিয়েছি৷ আমার শোধ নেওয়া শেষ৷ এখন আমি মরলেও আমার আফসোস নাই ৷ তবে..এই মাধুর্য..আমার মা’য়েরে কিছু বলিস না ৷ ওই মহিলা অনেক কষ্ট করছে৷ আমি দেখছি.. দেখছি আমি..’
‘ আমার মা’কে মেরে দিয়েছেন আপনি৷ তার কী দোষ ছিলো৷ কেন মারলেন৷’
‘ পরকিয়া করছে ৷ আমার বাপ তোরে যেমন আদর করতো তার থেকে আমারে বেশি আদর করতো৷ আমার অধিকার আমার মায়ের অধিকারে ভাগ বসাইছে তোর মা৷ আর ওই হা* সম্পদের লোভে আমাদের ফেলে চলে গিয়েছিলো৷’
মাধুর্য সেল ধরে বসে পড়েছে ৷ রাব্বী আবার বলল,
‘ শোন মাধুর্য,তোর সাথে আমি অন্যায় করছি আর সেটা আমি মানছি৷ আমার মা’রে একটু দেখে রাখিস রে ৷ আমি জানি আমার ছাড় নেই৷ তোর মা অন্যায় করছে শাস্তি পাইছে তাই ভুইলা যা৷ কোনো মহিলার শান্তির সংসারে আগুন দিলে তার তো আগুনে পুড়তে হইবোই৷’
বলেই রাব্বী চেয়ারে বসে পড়লো৷ আবেশের দিকে তাকিয়ে বলল,
‘ ভাই নিয়ে যান আপনার বউকে৷ আর শোনেন,ওরে দেখে রাইখেন৷ আমি ওর সাথে অন্যায় করতে চাই নি তবে না করলে আমার শান্তি হইতো না৷ আর আরেকটা কথা,আশেপাশের সবাইকে বিশ্বাস করবেন না আমার ওই চিঠির মতো৷ নিয়ে যান.. নিয়ে যান তো এই মাইয়ারে….
চলবে……
[ কিছু শব্দ ব্যবহারের জন্য আমি দুঃখিত৷ তবে চরিত্র বিশ্লেষণ এর জন্য করতে হয়েছে৷ সবাই একটু সাড়া দিয়েন৷]
**সবচেয়ে বড় পর্ব,আমি লেখছি আর সব ঝিমিয়ে যাচ্ছেন?