#তোমার_আমার_প্রণয়
#israt_jahan_arina
#part_16
সময়টা তখন প্রায় বছরের শেষের দিকের। খুব শীঘ্রই মাহাদের এইচএসসি পরীক্ষা শুরু হবে। তাদের টেস্ট পরীক্ষা শেষ। তবুও মাহাদকে স্কুলের সামনে ছুটির পর প্রায় প্রতিদিনই দেখা যায়। নিজের প্রিয়তমা কে একটা বার দেখার লোভ কিছুতেই সামলাতে পারেনা। প্রতিদিন দৃশ্য কে তাদের এলাকা অবধি পৌঁছে দিয়ে আসে। দৃশ্যর আজকাল মনটা খুব খারাপ থাকে। আগে স্কুলের পুরো সময়টাতেই মাহাদকে একাধিকবার সে দেখতে পারতো। কিন্তু এখন শুধুমাত্র ছুটির সময় তার দেখা পাওয়া যায়। আর কিছুদিন পর হয়তো সেটুকু দেখাও পাবে না। কারণ মাহাদ ভার্সিটির জন্য ঢাকায় চলে যাবে। তখন মাহাদকে ছাড়া কি করে থাকবে?
মাহাদ তাকে প্রতিদিন বাসা অব্দি পৌঁছে দিতে চায় কিন্তু দৃশ্যের জন্য পারেনা। দৃশ্যত খুব ভাল করেই জানে তার বাবা আর ভাই ঠিক কোন জাতের মানুষ। দৃশ্যর কিশোর মন এটা ঠিক বুঝতে পারে যে তার বাবা বা ভাই তারে সম্পর্কটাকে খুব একটা ভালো চোখে দেখবে না।
এ সম্পর্কে সে বুঝতে পেরেছে নার্গিস আপুকে দিয়ে। নার্গিস আপু তার বড় চাচার মেয়ে। মানে নাবিলার বড় বোন। নার্গিস আপু কলেজে ওঠার পর একটা ছেলের সাথে রিলেশনে যায়। বেশ ভালই চলছিল তাদের রিলেশন। কিন্তু একদিন কিভাবে যেন দৃশ্যর বড় চাচা এ বিষয়ে জেনে যান। তারপর ভীষণ কষ্ট সহ্য করতে হয় নার্গিস আপুকে। শারীরিক এবং মানসিক দুইভাবেই অত্যাচার করা হয় তাকে। আর ফাইনালি জোরকরে অন্য জায়গাতে বিয়ে দেওয়া হয়।
দৃশ্য তখন মাত্র ক্লাস সিক্সে পড়ে।দৃশ্যর ছোট মস্তিষ্ক এটা ঠিক বুঝে গিয়েছিলো যে নার্গিসের ওপর সবকিছুই চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। বর্তমানে নার্গিস আপুর এক বছরের একটা ছেলে আছে। দৃশ্য এখন বুঝতে পারে চাপিয়ে দেওয়া সেই সম্পর্কটা তে নার্গিস আপু কখনোই সুখী হতে পারেনি।
এটা তাদের বংশের প্রথম ঘটনা নয়। দৃশ্যর ফুপির সাথে অনেকটা এমন ঘটনা ঘটে। তিনিও একজনকে ভীষণ পছন্দ করতেন। কিন্তু সেই মানুষটার পরিবারের সাথে তার দাদা হয়তো কোনো দ্বন্দ্ব ছিলো।তাই তার বাবা, চাচা আর দাদা বিয়ে দিতে নারাজ ছিলো। জোর করে ফুপিকে অন্যত্র বিয়ে দেন। বিয়ের প্রায় দেড় বছরের মাথায় ফুপি সুইসাইড করেন। কারণ তার স্বামী তার ওপর শারীরিক অত্যাচার করতেন।ভালোবাসার মানুষটিকে হারিয়ে তিনি মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েছিলেন। তার ওপর স্বামীর অত্যাচার যেটা তিনি একদমই মেনে নিতে পারেননি।
দৃশ্য মনে মনে ভাবে তাদের বংশের মেয়েদের ক্ষেত্রে প্রেম ভালোবাসা গুরুতর অপরাধ। অথচ তাদের বংশের মেয়েরাই বোধহয় সবচেয়ে বেশি প্রেমে পড়ে। আর নিজের জীবনে কষ্টের সাগর বয়ে নিয়ে আসে। আজকাল তো দৃশ্যও সেই পথেই হাঁটছে।এ সম্পর্কে জড়িয়ে দৃশ্য যতনা আতঙ্কে থাকে তার চেয়ে বেশি থাকে নাবিলা। সে নিজের বড় বোনের অবস্থা দেখেছে তাই দৃশ্যের জন্য তার ভীষণ ভয় হয়।
মাঝে মাঝে ভীষণ ভয় হয় দৃশ্যর। মাহাদের সাথে কিভাবে যেন তার সম্পর্কটা হয়ে গেছিলো।সে তার নিজেকে কিছুতেই সামলাতে পারেনি। আসলে মাহাদ মানুষটাই এমন যাকে এড়িয়ে চলা মোটেও সহজ নয়।সেই ধূসর চোখের মায়ায় সে তো অনেক আগেই আটকে গেছে।
প্রতিদিনের মত আজও মাহাদ দাঁড়িয়ে আছে দৃশ্যের জন্য। কিছুক্ষণ পর দৃশ্য চলে আসলো। দৃশ্য কে দেখেই মাহাদ বললো
-“কি ব্যাপার পিচ্চি মন খারাপ?”
-“না।”
-“কিন্তু আমার তো মনে হচ্ছে আমার ছোট্ট পাখির মনটা অনেক খারাপ।”
দৃশ্য আবার মুখটা মলিন করে বললো
-“আচ্ছা আপনি যে প্রতিদিন স্কুলের সামনে দাঁড়িয়ে থাকেন তাহলে লেখাপড়া কখন করেন? নিশ্চয়ই আপনার লেখাপড়ায় অনেক ক্ষতি হচ্ছে।”
মাহাদ মুচকি হেসে বললো
-“আরে পিচ্চি তোমাকে এটা নিয়ে টেনশন করতে হবে না। আমার প্রিপারেশন অনেক ভালো আছে। আমি কি তোমার মতো ফাঁকিবাজ নাকি?”
তারপর হালকা কপাল চুলকে আবার বললো
-“তাছাড়া আমার পিচ্চি পাখিটাকে না দেখলে লেখাপড়ায় মনোযোগ বসেনা। তাইতো ছুটে আসি।”
দৃশ্য ও মাথা নিচু করে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বললো
-“কিছুদিন পর তো আপনি ঢাকায় চলে যাবেন তখন আমাকে না দেখে কিভাবে পড়ায় মনোযোগ বসাবেন?”
মাহাদ কিছুটা অবাক হয়েই দৃশ্যের দিকে তাকালো। তার পিচ্চিটা কি কান্না করছে? তার মানে পিচ্ছিটা তার ঢাকা যাওয়ার কথা চিন্তা করে এখন থেকেই কান্না শুরু করেছে। মাহাদ মনে মনে ভীষণ খুশি হলো। সে ঠিক যেভাবে দৃশ্য কে অনুভব করে দৃশ্যও তাকে তেমনভাবেই অনুভব করে।
মাহাদ হটাৎ দুই হাতে দৃশ্য চিবুক স্পর্শ করে তার দিকে ফেরালো।তারপর চোখের অশ্রু গুলো মুছে দিয়ে কিছুটা সিরিয়াস হয়ে বললো
-“দৃশ্য জানো আমার একটা জিনিস চুরি হয়েছে?”
দৃশ্য অবাক হয়ে কান্না বন্ধ করে বললো
-“আল্লাহ! কবে? কি চুরি হয়েছে?”
মাহাদ আবারো গম্ভীর মুখে বললো
-“আমার খুব মূল্যবান কিছু চুরি হয়েছে।”
দৃশ্য ফ্যাল ফ্যাল চোখে তাকিয়ে আছে। এবার মাহাদ মুচকি হেসে বললো
-“আমার মনটা চুরি হয়েছে।একটা পিচ্ছি পাখি আমার মনটা চুরি করে সাথে নিয়ে গেছে।”
মাহাদের কথা শুনে দৃশ্য ভীষণ লজ্জা পেলো।নিচের ঠোঁট কামড়ে মাথা নিচু করে নিলো।এই ছেলেটা ভীষণ ফাজিল।খালি তাকে লজ্জা দেওয়ার সুযোগ খোঁজে।
আজ মাহাদদের বিদায় অনুষ্ঠান।দৃশ্য আয়নার সামনে বসে বার বার কাজল দিচ্ছে।কিন্তু তার অশ্রু কনা সেই কাজলকে লেপ্টে দিচ্ছে। আজ সে বেবি পিংক কালারের একটা শাড়ি পরেছে। এই শাড়িটা খুঁজতে সে তার বড় চাচির আলমারিতে হামলা দিয়েছিলো কিছুক্ষণ আগে।মাহাদ একবার বলেছিল দৃশ্যকে পিংক কালার শাড়িতে ভীষণ মানাবে।
সকাল থেকে এক্সাইটেড থাকলেও এখন তার ভীষণ খারাপ লাগছে।বিদায়!ঠিক তাই। এখন থেকে মানুষটাকে চাইলেই যখন তখন স্কুলে পাওয়া যাবেনা।পরীক্ষাটা শেষ হলেই মানুটাকে এই শহরেও দেখা যাবেনা।কথা গুলো ভাবতেই দৃশ্যর দম বন্ধ হয়ে আসছে। হঠাৎ নাবিলার ডাকে দৃশ্য ভাবনার জগৎ থেকে ফিরে আসে।দৃশ্যর অবস্থা দেখে নাবিলা বলে
-“কিরে দৃশ্য চোখের কাজল লেপ্টে চেপ্টে কি করেছিস?”
দৃশ্য মলিন সুরে বললো
-“দেখ না কিছুতেই কাজল চোখে রাখতে পারছিনা।”
-“কাজল রাখতে পারছিস না নাকি চোখের জল?”
কথাটা বলার সাথে সাথে আবার একফোঁটা অশ্রু ঝড়ে পড়লো।নাবিলা সেটা মুছে দিয়ে বললো
-“এতটা ভালবাসিস মাহাদ ভাইয়াকে?”
দৃশ্য কিছুই বলতে পারলোনা।মাথা নিচু করে উপরে নিচে ঝাঁকালো।পরিস্থিতি ঠান্ডা করতে নাবিলা মুচকি হেসে বললো
-“তুইতো সেই রে দৃশ্য।আমাদের অত্র এলাকার ক্রাশ বয়কে পটিয়ে ফেলেছিস।আমিও কিন্তু ভাইয়ার উপর ছোট খাটো ক্রাশ খেয়েছিলাম।যখন সবাই জানতে পারবে, দেখবি মেয়েরা জ্বলে পুড়ে যাবে।”
দৃশ্য মলিন সুরে বললো
-“আমি মোটেও তাকে পটাই নি।আমিতো কখনো তাকে ইমপ্রেস করার চেষ্টাও করিনি।এমনকি আজ অব্দি ভালোবাসি এটাও বলিনি।”
দৃশ্যর কথা শুনে নাবিলা মনে হয় আকাশ থেকে পড়লো।সে বললো
-“কী?তুই এখন অব্দি ভালোবাসি বলিস নি?তাহলে প্রেম শুরু হলো কি ভাবে?”
-“শুধু আমি কেনো, সেও বলেনি।আর ভালোবাসি বললেই শুধু ভালোবাসা হয়?আমরা তো না বলেও বুঝে গেছি একজন অপরজনের মনের কথা।”
অবাক হয়ে নাবিলা বললো
-“আমার জন্যও এমন একটা পিস খুইজা দে বইন।আমিও প্রেম কইরা ধন্য হই।”
নাবিলার কথা শুনে দৃশ্য হেসে দিলো।আর বললো
-“খুঁজতে হবে না।দেখবি আমার মতো একদিন হটাৎ আকাশ থেকে টপকায়া পড়বে।”
দুই বোন হাসতে হাসতে রেডি হয়ে নিলো।
মৌ বেচারি শাড়ী পরে মহা ঝামেলায় আছে।তার উপর বান্দর গুলি এখনো স্কুলে এসে পৌঁছায় নি।করিডোরে দাঁড়িয়ে ভীষণ বিরক্ত হচ্ছে।হঠাৎ পেছন থেকে কেউ বলে উঠলো
-“আমাকে বিদায় দিতে এতো সুন্দর সাজ দিয়েছেন বাচ্চা বেয়াইন?”
মৌ দেখলো জয় গ্রে কালারের একটা পাঞ্জাবি পড়ে আছে।চুল গুলো জেল দিয়ে মনে হয় সেট করেছে।নাহলে এমন খাড়া হয়ে দাড়িয়ে আছে কেনো?সে বিরক্ত নিয়ে বললো
-“আপনার জন্য সাজবো কেনো?আর আমাকে বাচ্চা বলবেন না।”
জয় কুটিল হেসে মৌ এর কাছাকাছি চলে আসলো আর মৌ এর কানে কানে বললো
-“মনে রেখো এই সাজ যেন শুধুই আমার জন্য হয়।কারণ অন্য করো জন্য হলে আমি মোটেই অ্যালাউ করবো না।”
কথাটা বলে মৌয়ের মুখে একটা ফু দিয়ে চোখের উপরের চুল গুলো সরিয়ে দিলো।মৌ আবেশে চোখ বুজে নিলো।কেমন অদ্ভুত অনুভূতি হলো তার।
দৃশ্য দের রিকশা স্কুল গেটে থামতেই তারা দেখতে পেলো মাহাদ তার বাইকে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে রাফসানের সাথে কথা বলছে।মূলত সে দৃশ্যর জন্যই অপেক্ষা করছে।ইসস! গ্রে কালারের পাঞ্জাবিতে মানুষটাকে মারাত্মক লাগছে।দৃশ্য ভাবছে এই মারাত্মক সুন্দর মানুষটা তার ব্যক্তিগত।একান্ত ব্যক্তিগত।দৃশ্যকে দেখে মাহাদ এগিয়ে আসলো আর হাত বাড়িয়ে দিলো। দৃশ্যও হাসি মুখে তার হাত ধরে রিক্সা থেকে নেমে আসলো।দৃশ্যকে নামাতে নামাতে মাহাদ তার কানে কানে বললো
-“এই ল্যাপ্টানো কাজল কালো চোখে কি আমাকে ভৎস করতে চাইছো? আমি কিন্তু এমনি ধ্বংস হয়ে আছি তোমার মাঝে।”
দৃশ্যর পুরো শরীর থরথর করে কাঁপতে লাগলো। এমনটা মাহাদের কথা শুনে হয়েছে তা কিন্তু নয়। বরং তার কাজে হয়েছে। দৃশ্য কে রিকশা থেকে নামিয়েই আলতো হাতে তার উন্মুক্ত পেটে হাল্কা স্লাইড করেছিলো মাহাদ। এতে দৃশ্যের যেন 440 ভল্টের ঝটকা খেলো।দৃশ্যর অবস্হা দেখে মাহাদ কানে কানে বললো
-“এটা কি তোমার পেট ছিলো না তুলা? আমার কিন্তু এখন বারবার ছুঁয়ে দিতে মন চাইছে।”
দৃশ্য অগ্নি চোখে মাহাদের দিকে তাকালো। মনে মনে সে মাহাতকে বেশ কয়েকটা গালি দিল। আর বললো
-“তুমি ভীষণ অসভ্য হয়ে গেছো। আরেকবার ছুঁয়ে দেখো হাত ভেঙে দেব।”
মাহাদ কুটিল হেসে নিচু স্বরে বললো
-“তুমি কি কোন ভাবে আমাকে আরেকবার ছুঁয়ে দেওয়ার জন্য অফার করছো? তুমি বললে একবার কেন হাজার বড় ছুঁতে রাজি আছি।”
দৃশ্যর এবার মেজাজ গরম হচ্ছে। এই ছেলেটা মানুষকে যেমন শান্ত ভাব দেখায় কিন্তু মোটেও সে তেমন না। চরম অসভ্য বেয়াদব ইতর এই লোক।
রাফসান এগিয়ে সে নাবিলাকে উদ্দেশ্য করে বললো
-“কি বেয়াইন আপনাকে নামতেও কি হেল্প করবো।”
-“না ভাইয়া লাগবেনা।”
রাফসান এবার মাহাদকে উদ্দেশ্য করে বললো
-“কিরে ভাই তুই কি সব প্রেম এখানেই করে নিবি? আগে ভিতরে চল?”
রাফসান এর কথায় দৃশ্য ভীষণ লজ্জা পেল। মাহাদ হেসে বললো
-“তোর কি জ্বলে নাকি ভাই?”
-“হ্যাঁ ভাই জ্বলবে না কেনো? দুই বছর ধরে মামাতো বোনকে পটানোর চেষ্টা করতেছি কিন্তু পারছি না। আর ব্যাটা তুই এক বছর ধরে প্রেম করে বেড়াচ্ছিস।”
রাফসানের কথায় নাবিলা আর মাহাদ হাসতে শুরু করলেও দৃশ্য ভীষণ লজ্জা পেলো।
কয়েকদিন আগে মাহাদের ধমক খেয়ে দৃশ্য এখন ‘ তুমি ‘ তে এসেছে।মাহাদের একটাই কথা, আপনি বললে কেমন পর পর মনে হয়। তাই তুমি করে বলতে হবে। প্রথম কিছুদিন ভীষণ লজ্জা লাগলেও এখন কিছুটা সহজ হয়ে এসেছে।
বরাবরের মতো আজও মাহাদ স্টেজে গান গাইলো। অনুষ্ঠান শেষে তারা বেশ কিছুক্ষণ কাপল পিক তুললো। তানিম বিভিন্ন অ্যাঙ্গেলে তাদের কাপল পিক তুলে দিলো। তবে আজ দৃশ্য একটা জিনিস খেয়াল করেছে। জয় মৌ এর দিকে কেমন করে যেন তাকিয়ে ছিল সারাদিন।দৃশ্য ভাবছে তাদের মধ্যে কি কিছু চলছে? কিন্তু এমন হলে তো মৌ তাকে ঠিক জানোতো।
জয় তানিমকে খোঁচা মেরে বললো মৌ এর সাথে তার কয়েকটা পিক তুলে দিতে। কথাটা শুনেই তানিম বত্রিশ দন্ত বের করে হেসে দিলো। তার এই বন্ধুটাও আরেকটা বাচ্চার কাছে ফেঁসে গেছে সেটা সে ভাল করেই বুঝতে পারলো। জয় মৌয়ের পাশে দাঁড়াতেই মৌ অগ্নি চোখে তাকালো। আরো রেগে বললো
-“আপনি আমার পাশে দাঁড়িয়েছেন কেনো?”
জয় মাথা চুলকে মুচকি হেসে বললো
-“ভাবলাম বেয়াইনের সাথে কয়েকটা ছবি তুলে রাখি। মাহাদ আর দৃশ্যর বেবিদের দেখাতে হবে না তার মামা মামীর কতটা খেয়াল রেখেছে।”
বেচারি মৌ প্রথমে না বুঝলেও কিছুক্ষণ পরে বুঝতে পারলো আর রেগে সেখান থেকে চলে গেলো।
মাহাদ কিছুক্ষণ কাপল পিক তুলে তারপর দৃশ্যকে নিয়ে বাইকে চড়ে বেরিয়ে গেলো। আজ সে দৃশ্য কে নিয়ে কিছুক্ষণ ঘুরতে চায়। এই প্রথম দৃশ্য মাহাদের বাইকে উঠেছ। তার ভীষণ আনইজি ফিল হচ্ছে। কিছুটা দূরত্ব নিয়ে বসলেও মাহাদ এত জোরে বাইক চালালো যে বাধ্য হয়ে ঝাপটে ধরতে হলো তাকে।
মাহাদ বাইক থামালো একটা আইসক্রিম পার্লার এর সামনে। আর দৃশ্য কে উদ্দেশ্য করে বললো
-“যতটুকুন মন চায় খেতে পারবে কিন্তু অসুস্থ হওয়া যাবে না।ভেবে চিন্তে খাবে।”
দৃশ্য মনে মনে আবার মাহাদ কে বকলো আর বললো
কথায় কথায় খালি থ্রেট দেওয়া। এই শান্ত চেহারার মাঝে যে এতটা বদরাগী মানুষ লুকিয়ে আছে তা কি সবাই জানে?
দৃশ্য বসে বসে আইসক্রিম খাচ্ছে আর মাহাদ একমনে দৃশ্য কে দেখে যাচ্ছে। দুজনের চোখাচোখি হতেই দৃশ্য বললো
-“এভাবে কি দেখছো?”
-“একটা ছোট্ট পরীকে।”
দৃশ্য কিছুটা লজ্জা পেলো। কিছুক্ষণ নীরবতার পর মাহাদ বললো
-“দৃশ্য পাখি?”
-“হমম।”
-“ঠিক এমনই বেবি পিংক কালার শাড়িতে তোমাকে আমি একটা স্পেশাল দিনে দেখতে চাই?”
দৃশ্য কপাল কুঁচকে বললো
-“কোন স্পেশাল দিন?”
মাহাদ নিচুস্বরে দৃশ্য কানে কানে বললো
-“আমাদের ফার্স্ট নাইটে।”
বেচারী দৃশ্য কিছুই বুঝতে পারলো না। কিছুটা কনফিউজড হয়ে বললো
-“ফাস্ট নাইট মানে?”
মাহাদ হাসবে না কাঁদবে বুঝতে পারল না। তার এখন পেট ফেটে হাসি পাচ্ছে। কিন্তু সে যদি এখন হাসে তবে দৃশ্য রেগে যাবে। আর সে তার পিচ্চিটাকে রাগাতে চাচ্ছে না। তাই মুচকি হেসে বললো
-“যখন সময় আসবে তখন বুঝাবো।”
-“ওকে”
তবে দৃশ্য ‘ওকে’ বললেও তার কৌতুহল মন এটা জানতে ব্যাকুল হয়ে আছে। কিছুক্ষণ ঘোরাফেরা করে মাহাদ দৃশ্যকে নিয়ে আবার স্কুলে চলে আসলো।
_______________
ফাহিম তাদের এলাকার ক্লাবে বসে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিচ্ছে।রিজভী,অমিত,রকি আর রাহুল ফাহিমের বন্ধু।তবে রিজভী তার বেস্ট ফ্রেন্ড।হঠাৎ রকি বলে উঠলো
-“মামা মাল টা জোস না?”
রকিব কথায় সবাই রাস্তার দিকে তাকালো।সে দিকে তাকাতেই ফাহিমের মেজাজ গরম হয়ে গেলো।তমা যাচ্ছে রাস্তা দিয়ে।রকির এই বিষয় গুলি ফাহিমের মোটেও পছন্দ না।এক নম্বরের মেয়েবাজ।ফাহিম বললো
-“এই ‘ মাল ‘ কোন ধরনের শব্দ? ফারদার যেনো এগুলো না শুনি। আর এই মেয়েটার দিকে তাকাবি না। ও আমার পরিচিত।”
রকি বললো
-“আরে মামা চিল! এত রেগে যাচ্ছিস কেনো? যা আর বলবো না।”
ফাহিম আর এক মিনিটও বসলো না তাদের থেকে বিদায় নিয়ে বাসার দিকে রওনা হলো। ফাহিম যাওয়ার সাথে সাথে রিজভী ও বেরিয়ে গেলো।
রকি একটা বিচ্ছিরি গালি দিয়ে বললো
-“ফাহিম মাদা*** সমস্যা কি?বন্ধুর বোন বলে আমি দৃশ্যর দিকে তাকাই না।নাহলে ওইটা কিন্তু সেই মাল ছিলো।আর আজ এই মালটাকে পছন্দ হলো।কিন্তু শালার তাতেও সমস্যা।”
রকির কথা শুনে বাকি দুই বন্ধুও বিচ্ছিরি হাসি দিল।
ফাহিম দ্রুত হেঁটে তমার কাছাকাছি পৌঁছালো।আর বললো
-“এই ফাজিল মেয়ে দারা।বিকেল বেলায় এই রাস্তা দিয়ে তোর কেনো আসতে হলো? সারাবছর না পাশের গলি দিয়ে আসিস?”
ফাহিমের কথায় তমা কিছুটা অবাক হল। আর মনে মনে বললো ‘আমি যে পাশের গলি দিয়ে প্রতিদিন আসি সেটা ফাহিম ভাই কি করে জানলো?তার মানে কি ফাহিম ভাই আমাকে খেয়াল করে? না তা হবে কেন? এই গুন্ডা তো এলাকায় শুধু গুন্ডামি করে। আমাকে দেখার সময় আছে নাকি তার? তমা এবার বললো
-“আমার যে গলি দিয়ে খুশি সেই গলি দিয়ে আসবো তাতে আপনার কি?”
-“আমি বলছি আজকের পর থেকে যেন তোকে এই গলি দিয়ে আসতে না দেখি।”
-“আপনি বললেই আমি শুনবো কেন?”
-“তুই শুনবিনা তোর ঘাড় শুনবে।”
-“ঠিক আছে তাহলে আমার ঘার কেই শোনান।”
-“মেজাজ গরম করবি না। তোর ভালোর জন্যই বলছি।”
তমা হেসে বললো
-“আমার ভালো কবে থেকে দেখা শুরু করলেন ফাহিম ভাই?”
ফাহিমের এবার প্রচন্ড মেজাজ গরম হলো। সবাই বলে তাদের বংশের ছেলেদের নাকি রক্ত ভীষণ গরম থাকে। সেই ধারাবাহিকতায় ফাহিমের একই অবস্থা। সে কসে তমার গালে একটা থাপ্পড় দিয়ে বসলো। তমা হতবাক হয়ে গালে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তার চোখ দিয়ে ঝরছে অশ্রুকণা।
ফাহিম প্রচন্ড রেগে বললো
-“এই থাপ্পরের কথা মনে থাকলে আর জীবনেও এই গলি দিয়ে আসবি না।”
কথাটা বলেই ফাহিম চলে গেল। তমা কাঁদতে কাঁদতে ফাহিমের দিকে তাকিয়ে ভাবতে লাগলো
‘অসভ্য গুন্ডা একটা। ভালবাসতে পারবে না কিন্তু থাপ্পর দিতে পারবে। এই তমা আর জীবনেও তোর মতো গুন্ডার সাথে কথা বলবে না।’
ভীষণ অভিমান নিয়ে তমা ও বাড়ির দিকে এগুতে লাগলো।
কয়েকদিন যাবত মাহাদ ভীষণ ব্যস্ত লেখাপড়া নিয়ে। পরশু থেকে তার পরীক্ষা শুরু। তাই দৃশ্য মাহাদের সাথে যোগাযোগ কিছুটা কমিয়ে রেখেছে। সে কিছুতেই চায় না তার জন্য মাহাদের লেখাপড়ায় কোন ক্ষতি হোক। রাতে মাহাদ দৃশ্য কে কল করলো। ফোন রিসিভ করে দৃশ্য বললো
-“এই তোমার না পরশু পরীক্ষা।লেখাপড়া রেখে আমাকে কল কেন করেছো?”
-“একটু কথা বলে রেখে দিবো। কথা না বললে পড়ায় মনোযোগ দিতে পারি না তো।”
দৃশ্য মুচকি হাসলো আর বললো
-“আপনার ফ্লার্ট করা শেষ?”
-“আমি তো সারা জীবনই তোমার সাথে ফ্লার্ট করে যাব।”
দেখতে দেখতে মাহাদের পরীক্ষাগুলো শেষ হলো।সকালে মাহাদের মা রুমে এসে দেখলেন ছেলে গভীর ঘুমে মগ্ন। পরীক্ষার প্রেসারে ছেলেটা একদম শুকিয়ে গেছে। তিনি পরম আদরে ছেলেকে ঘুম থেকে ডেকে তুললেন।আর বললেন
-“মাহাদ আর কত ঘুমাবি ওঠ উঠে নাস্তা কর। কয়েকদিন পর ঢাকা চলে যাবি তখন এগুলো বলতে আসবোনা।”
মায়ের কথা শুনে মুচকি হেসে মায়ের কোলে মাথা রেখে ঘুম ঘুম কন্ঠে বললো
-“মা তুমিও চলো না আমার আর বাবার সাথে।”
-“নারে ঢাকা শহরে আমার মন বসে না তাছাড়া আম্মাও ঢাকা শহরে যেতে রাজি না।”
-“ওই বুড়ি কে একদিন উঠিয়ে ঠিক ঢাকায় নিয়ে চলে যাব।”
-“হয়েছে আগে নাস্তা কর।”
-“তুমি যাও আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।”
মাহাদ উঠে আগে দৃশ্যকে একটা গুড মর্নিং মেসেজ দিলো। প্রতিদিন ঘুম থেকে ওঠার পর এটাই তার প্রথম কাজ। আজকাল তার মনটা ভীষণ অস্থির হয়ে আছে। এ পিচ্চিটাকে রেখে ঢাকায় কি করে একা থাকবে সেটা ভেবে পাচ্ছেনা। মন চাইলে ছুটে যেতে পারবেনা তার কাছে। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে সে ফ্রেশ হতে চলে গেল।
নাস্তার টেবিলে আমজাদ রহমান বললেন
-“তা মাহাদ ঢাকায় শিফট করছো কবে? ভর্তি পরীক্ষা কিন্তু খুব জলদি তাই কোচিংয়ে ভর্তি হতে হবে। যত জলদি পারো শিফট করো।”
মাহাদ একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো
-“এইতো বাবা কদিনের মধ্যেই করবো।”