#পঞ্চভূজ_তারা
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
#পার্টঃ০৭
সাদু,নূর,আলিশা ঘুমে ঢুলুঢুলু হয়ে গাড়ি থেকে নামছে।আজ সাদু ড্রাইভ করেনি।যেই পরিমান ঘুমে ঝিমুচ্ছে না-জানি এক্সিডেন্ট হয়ে যায়।ঢুলতে ঢুলতে ভার্সিটির মাঠের কিনারে দাড়ালো।তার কিছুক্ষন পর মিম আর আলিফা এলো।ওরা আসতেই আবার সবাই ঢুলতে ঢুলতে মাঠ দিয়ে সামনে এগোচ্ছে।তাদের সামনে কি আছে না আছে কিচ্ছু জানে না তারা শুধু চোখ বুজে এগোচ্ছে।তাদেরকে দেখে মনে হচ্ছে তারা ভীনগ্রহের এলিয়েন।
এদিকে মনির আর আফরান বাকিগুলোকে টেনে উঠালো ক্লাসে যাওয়ার জন্য কিন্তু এরা উঠছেই না।আরিফ কোনরকমে উঠে দাড়ালো।কিন্তু নিবির আর মেরাজকে উঠানো গেলো না।
–“,আজ মনে হয় ক্লাস করা যাবে না এদের যেই অবস্থা।”,বলে উঠে মনির।”
–“ঠিক বলছিস এক একটা গরুর মতো ঘুমাচ্ছে।”আফরান বিরক্ত হয়ে বললো।
–“চল তাহলে আফরানদের ফার্ম হাউজে চলে যাই।”ঘুমের ঘোরে বললো আরিফ।”
–“কিন্তু এদের নিবো কিভাবে?”করুন ভাবে বলে আফরান।
–“আফরান আমি নিবিরকে কাধে উঠাচ্ছি তুই মেরাজকে কাধে উঠা।”মনির উপায় বললো।”
কি আর করার না পারতে ওরা নিবির আর মেরাজ কে কাধে উঠি চল্লো যাওয়ার পথে।
সাদু’রা ঘুমের ঘোরে হাটছে হাটতে হাটতে হঠাৎ ঠাস করে বাড়ি খেলো কারো সাথে সাদু।মাথায় ব্যাথা পেয়েছে তবুও চোখ খুলছে না।হাত দিয়ে মাথা ডলছে।
এদিকে মনির আর আফরান আর আরিফ হা করে তাকিয়ে আছে।মনির তো কয়েকবার স্ট্রোক ও করে ফেলেছে।সাদু, নূর আর আলিফা ঘুমে টইটম্বুর। চোখ ফোলা ফোলা,চুলগুলো এলোমেলো,চেহারাটাও লাল হয়ে আছে।বলতে গেলে মনির আর আফরান এর নিশ্বাস আটকে যাবার উপক্রম।সাদু,নূর,আলিফা,আলিশা আর মিম আবারো চোখ বুজে এগোতে নিলে আবারো ধাক্কা খায় মনিরদের সাথে।এইবার সাদু এক চোখ খুলে দেখে তার দুইভাই,একভাই মনির এর কাধে,আর তার উল্লুক বন্ধুরা।আবারো চোখ বুজে বলে,
–“খাম্বার মতো দাড়িয়ে আছেন কেন?সরুন!”
সাদুর কথা শুনে ওদের হুস আসলো।আরিফ ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেছে।আশ্চর্য সে আলিফার দিকে এইভাবে তাকিয়ে ছিলো কেন?মনির আর আফরান এর ম্যাটার আলাদা কারন ওরা সাদু আর নূরকে ভালোবাসে।কিন্তু তার এরকম হলো কেন?মনে হচ্ছিলো সব কিছু দমকে গেছে তার চোখ দুটো আলিফার ঘুম জড়ানো চেহারায় আটকে গেছে,হার্ডবিট ফাস্ট হয়ে গেছিলো।এ কেমন অনুভূতি?এর আগে তো এমন অনুভূতি হয়নি?”
এদিকে নূর ঘুম জড়ানো কন্ঠে বলে,
–“কোন উল্লুক সামনেরে সরে না কেন?না সরলে আমার ফ্লাইং জুতা ফিক্কা মার তার মুখে।”
আলিফা হাই দিতে দিতে বলে,
–“ফকিন্নি চোখ খুলে দেখ কে দাড়িয়ে!তোর ফ্লাইং জুতা তোর মুখেই মারবে তারা।”
নূর চোখ পিটপিট করে খুলে বলে,
–“হাই!”
আবার চোখ খুলে দেখে তার ভাই নিবিরকে কাধে নিয়ে দাড়িয়ে, আফরান মেরাজকে কাধে নিয়ে দাড়িয়ে আর পাশেই আরিফ।
–“বাইইইইইই!”বলে নূর সাদু আর আলিফার হাত ধরে নিয়ে যেতে লাগলো।এদিকে মিম আলিফার কাধে মাথা দিয়ে দাড়িয়ে ছিলো।আর আলিশা সাদুর কাধে।নূর, সাদু আর আলিফাকে টেনে নিয়ে যেতে লাগলো।ওদের মাথা কাধ থেকে সরে যায় ফলে মিম আর আলিশা টাল সামলাতে না পেরে ধরাম করে নিচে পরে যায়।মিম নিচে আর আলিশা তারউপর।
–“ওহহহহ মারেএএএএএ!!আমি শেষ ওরে কোন চাউলের বস্তা পড়েছিস আমার উপর।মাগো আমার নিস্পাপ কোমড় গেছে রেএএএএ!”
এদিকে আলিশা মিম এর উপর পরে আবারো ঘুমাচ্ছে।ওদিকে মিম এর চিৎকারে নিবির আর মেরাজ হকচকিয়ে নড়ে উঠতেই মনির আর আফরান ওদের সামলাতে না পেরে ছেড়ে দিতেই ওরা ঠাস করে নিচে পড়ে যায়।
–“বাবায়ায়ায়ায়া রেএএএএএ!!”নিবির চিল্লিয়ে উঠে।
–“ওরেএএ আমার কোমড় মাগোওঅঅঅঅ।” মেরাজ কোমড়ে হাত দিয়ে বলে।
আলিশার ওদের চিৎকার শুনে ঘুম ভেংগে যাওয়ায় ধরফড়িয়ে উঠে বসলো।এদিকে মিম এখনো নিচে সুয়ে কাতরাচ্ছে।সাদু,নূর,আলিফা এগিয়ে এসে মিমকে ধরে উঠালো।বেচারি মিম একেবারে ডিম ভর্তা হয়ে গেছে।
সাদু বললো,
–“তুই ঠিক আছিস?”
মিম কাদো কাদো হয়ে বলে,
–“এই মুটি আমার উপর পড়লে আমি বাইচ্চা থাকতে পারি।”
আলিশা ভ্রুক্ষেপহীন ভাবে বলে,
–“তাহলে তুই এখানে কেন দাড়িয়ে।চল তোরে মাটি চাপা দিয়ে আসি।তারপর ৪০শার খাবো আমরা আর ডিজে নাচবো।”
সাদু বললো,
–“বাবা তোমার দরবারে সব পাগলের খেলা।”
নূর,আলিফা,আলিশা চিল্লিয়ে বলে,
–“য়ো য়ো য়ো!”
সাদু আবার বলে,
–“হরেকরকম পাগল দিয়া মিলাইছে মেলা।”
নূর,আলিফা,আলিশা আবারো চিল্লায়,
–“য়ো পাগলা বাবা রোক্স, বাকি সব সোক্স।”
–“বাবা তোমার দরবারে সব পাগলের খেলা,হরেক রকম পাগল দিয়া মিলাইছে মেলা,টুনটুনাটুন টুন।”সাদু,নূর,আলিফা,আলিশা বলে উঠলো এইবার মিম ও সাথে বলেছে।
মনির,আফরান,নিবির,আরিফ আর মেরাজ একে অপরের দিকে একবার তাকিয়ে জোড়ে জোড়ে হেসে দিলো।সাদুদের এইসব কির্তীকালাপ দেখে তাদের ঘুম উড়ে গেছে।নিবির আর মেরাজ হাসতে হাসতে ঘাসে সুয়ে পড়েছে।সাদুরাও ফিক করে হেসে দিলো।
সাদু হাসতে হাসতে বললো,
–“কি আপনারাও কি পাগলা বাবার ভক্ত।”
মনির কোনরকম হাসি দামিয়ে বলে,
–“পাগলা বাবা যদি থেকেও থাকে তাহলে তোমাদের থেকে আর বড় পাগল হবে না।”
আফরান মনির এর কাধে হাত দিয়ে হাসতে হাসতে বলে,
–“ঠিক বলছিস দোস্ত!এরা পাগল আল্ট্রা মেক্স প্রো।”
সাদু ভাব নিয়ে বলে,
–“উই নো দ্যাট উই আর ইউনিক হাহ্!”
আলিশা নিবির এরদিক তাকালো দেখে চোখ লাল হয়ে আছে।বুজাই যাচ্ছে রাতে ঘুমোয় নি একদমি।আলিশা নিবির কে দেখিয়ে মনিরকে জিজ্ঞেস করে,
–“ভাইয়া আপনারা মোটামুটি ঠিক আছেন বাট এর [নিবিরকে]এমন অবস্থা কেন?”
নিবির ঘাস থেকে উঠে নিজেকে ঝাড়তে ঝাড়তে বলে,
–“কেন মনে নাই?কালকে যে আমার উপর পচা ডিম মেরেছিলে,রুম পরিস্কার করে আবার শাওয়ারে গিয়ে এই পচা ডিমের গন্ধ দূর করতে করতে আমার অর্ধেক এর বেশি রাত পার হয়ে গেছে ঘুমোতে পারি নাই একটুও,চুরেল মেয়ে একটা নিজে করে আবার জিজ্ঞাসা করে এএহহ এর অবস্থা এমন কেন?[ব্যঙ্গ করে]”
আলিশা রেগে নিবির এর চুল টেনে দিলো,
–“বেশ করেছি। কাল তো শুধু পচা ডিম মেরেছি সামনে পচা লাউ,মিষ্টকুমড়া,টমেটো যা পাবো সব আপনার মুখে পারবো।”
মিম এগিয়ে এসে বলে,
–“তুই নিবির ভাইয়াকে দোশ দিচ্ছিস কেন?সব দোশ এই শয়তান পোলার(মেরাজকে)।”
মেরাজ ভ্রু-জোড়া উচু করে বলে,
–“আমার কি দোশ এই আরিফ সরে যাওতে পুডিং উরে তোমার মাথায় পড়েছে।”
–“হ্যা আপনার ওই দোশ উই মেরাইজ্জা উল্লুক কোথাকার।”
–“ইউউউ ডাইনি মেয়ে!”
মিম ডিম আন্ডা,
ফ্রিজের পানি ঠান্ডা,
চুলার পানি গরম,
মিমের নাই সরম।”মেরাজ এর এইসব বলতে দেরি কিন্তু মিমের ঠাস করে এসে ঠুস করে মেরাজ এর পায়ে পারা মারতে দেরি নাই।মেরাজ পা ধরে লাফাচ্ছে।”একদম উচিত শিক্ষা!”বলে মিম আলিফার পাশে গিয়ে দাড়ালো। এদিকে সবাই হাসতে হাসতে শেষ। হাসিহাসি পর্যায় শেষ হতে মনির বললো,
–“আজ আর ভার্সিটি করা লাগবে না।সবার ঘুমে অবস্থা করুন।সবাই আফরানদের ফার্ম হাউসে চলো।”
সাদু ভাব ওয়ালা একটা পোজ দিয়ে বলে,
–“এক্সকিউজ মি মিষ্টার,মনির এহসান।ওটা আফরাইন্না গরুর ফার্ম হাউস না। ওটা সাদুর ফার্ম হাউস।”
আফরান রেগে বলে,
–“ডাইনি ঘরেও শান্তি দিস না।এখন ফার্ম হাউসটাতেও দখল নিতে চাস।”
সাদু এক ধমক দিলো,
–“ইউউ সাট আপ ফকিন্না পোলাপান তোকে তো আম্মু রাস্তা থেকে কুড়িয়ে এনেছে এখানে থাকতে পারছিস এই বেশি।”
আফরান রেগে সাদুকে মারতে গেলেই মনির আটকিয়ে বলে,
–“আহা আফরান ওর সাথে কি তুইও বাচ্চা হয়ে গেছিস?”
আফরান বলে উঠে,
–“হ্যা এখন তো বউয়ের কোন দোশ নেই।সব আমার দোশ।”
নূর আর সাদু ভ্রু-কুচকে একে অপরের দিকে তাকিয়ে দুজনে একসাথে বলে,
–“এক্সকিউজ মি বউ কে?”
মনির আর আফরান থতমত খেয়ে বলে,
–“আরে তোমরা ভূল শুনেছ।বউ না বোন বলেছি।”
সাদু সুরর মতো টেনে টেনে বলে,
–“ওহহহহহ!তাই বলো আমি মনে হয় ভূল শুনেছি।”
মনির,আফরান উপর নিচ মাথা দুলালো তার মানে হ্যা সাদু আর নূর ভূল শুনেছে।
তারপর সবাই কথা বলতে বলতে রওনা হলো সাদুদের ফার্ম হাউসে।
_________,,,,
এদিকে ওদের এইভাবে দেখে রাগে ফুসছে একজন। রাগে নিজের জামা মুষ্টিবদ্ধ করে দাড়িয়ে আছে।দাতেদাত চেপে বলে,
–“এই স্টুপিড প্লেনের মেয়েটা এখানে কি করছে।তাও মনির এর সাথে এতো হাসাহাসি করছে কেন?একেতো আমি ছাড়বো না।আমার মনির সাথে হেসে হেসে কথা বলা নো নেভার এইটা আমি কিছুতেই সয্য করবো না।প্লেনে অনেক অপমান করেছ৷ তখন কিছু বলিনি।কিন্তু এইবার অনেক বড় ভুল করেছ।যেখানে আমি মেয়েদের মনির এর দিকে চোখ তুলে তাকাতে পর্যন্ত দেই না।সেখানে এই অসভ্য মেয়েটা আমার মনির এর সাথে হেসে হেসে কথা বলেছে।ইউ ওয়েট এন্ড ওয়াচ তোমার এই হাসি মুখটাই আমি নষ্ট করে দেবো।এই রজনী বেচে থাকতে তার মনিরকে তার কাছ থেকে কেউ নিতে পারবে না।”
ঠিক ভাবছেন এইটাই সেই প্লেনের মেয়েটি।বাবার বিগরে যাওয়া নষ্ট মেয়ে।নাম রজনী হায়দার।ভার্সিটিতে এসেই মনিরকে প্রথম দেখায় পছন্দ করে ফেলে।সেই থেকে মনির এর আশে পাশেও কাউকে যেতে দেয় না।কতো মেয়েকে মনির এর দিকে তাকানোর জন্যেই এই সাইকোটা মেয়েদের সাজা দিতো।শয়তানের আল্ট্রা মেক্স প্রো এই ডাইনি।
চলবে,,,,
ভূল ত্রুটি ক্ষমা করবেন।খবরদার রজনীকে কেউ বকবা না।হেতি আমার কুট্টিকাইল্লা বেস্টি।হেতিরে বকলে আমার কষ্ট লাগে।ওয় আমার জামাই নিয়ে আমার সাথে হিংসা করে রিয়েল লাইফে যে আমার জামাই এতো ভালো কেন?তাই গল্পে ওরে আমার সতীন বানায় দিছি?।কেউ বইকো না ওরে।