তারকারাজি- (১৯)
লেখনীতে- অহনা নুযহাত চৌধুরী
|| দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ ||
ভীষণ বিরক্তি নিয়ে পিহু যখন সোফায় খুব আরাম করে বসল তখন বৈশাখের অশান্ত বিকেল হুড়মুড়িয়ে পড়ছে জানালার বদ্ধ কাঁচে। অবস্থান মিশমির কেবিন। ঝড়ের তাণ্ডবে মাঝেমধ্যেই কেঁপে উঠছে মেয়েটির অন্তঃকরণ। সন্ধ্যার আগে হলে ফেরাটা জরুরি। অথচ কালবৈশাখীকে দেখো, প্রয়োজনের সময়-ই এই মহারাণীকে ফণা তুলে দাঁড়াতে হয়। বিরক্তিকর!
পিহু কানে ইয়ারফোন গুঁজে হিন্দী সিনেমায় ডুব দিল। তাকে এভাবে দেখে মিশমি মৃদুস্বরে ধমকে বলল,
“ এই মহিলা? দেখতেছিস না বাজ পড়তেছে? এই সময় ফোনটা হাতে না নিলে কি চলে না? ”
পিহু নিজের সর্বস্বটা এমনভাবেই ফোনের পর্দায় প্রয়োগ করেছে যে, মিশমির কথা কান অবধি পৌঁছালো না। অবশ্য পৌঁছানোর কথাটাও যে রয়েছে, এমনটা নয়। মিশমি বরাবরই মিনমিনিয়ে কথা বলে। মাঝে-মাঝে তার স্বর এর থেকে অনুচ্চ হয়ে গেলেও কখনোই তা উচ্চতা লাভ করে না। সেই একটা দিন মহারাণী কালবৈশাখীর মতো ফুঁসে উঠেছিল বলেই কি স্বরের স্বাভাবিকতা পাল্টে যাবে? মিশমির মনে পড়ে যায় কয়েকদিন আগে ঘটে যাওয়া সেই ঘটনার কথা। সায়ান বিড়বিড়িয়ে যে তাকে উদ্দেশ্য করেই কিছু বলেছিল তা মিশমির জানা কথা। কিন্তু কী বলেছিল তার সম্পূর্ণটা মঈনুল হোসেন ও ঝুমুর বেগম শুনলেও তারা স্বীকার করেননি। তারা না-কি কিছুই শুনতে পাননি! সায়ানকে দেখা গিয়েছিল হাঁফ ছেড়ে বাঁচতে। কিন্তু মিশমি যে স্পষ্ট দেখেছিল সেই কথা শুনে বাবা-মায়ের চোখাচোখি! সেইদিনের পর মাত্র একবার এখানে সায়ানের দেখা পাওয়া গিয়েছিল। সায়ান কী বলেছিল তা জিজ্ঞাসা করে যখন বাবা-মায়ের বিষয়টা জানিয়েছিল মিশমি, ঠিক তখন থেকেই ছেলেটা হসপিটালে আসা বন্ধ করে দিয়েছে। কল করে খোঁজটাও নেয় না তার। মিশমি ভাবে— ছেলেটি কেমন যেন হয়ে গিয়েছে এখন! তবে এইসব নিয়ে ভাবতে সে ততোটাও ইচ্ছুক নয়৷ তাই মিশমি দীর্ঘশ্বাস ফেলে আশপাশটায় চোখ বুলিয়ে নিল একবার। খেয়াল করল— সানাম তার ক্যামেরাটি হাতে নিয়ে সোফার দিকে এগিয়ে গেল। পিহুর পাশে বসে বলল,
“ ওই ছেড়ি? বেডে যা। সবাই ওইখানে বসে আছে। আমি এখানে একটু শুবো। ”
এই কথা শুনে পিহু কেমন ত্যাঁড়া চোখে তাকাল। বিস্ময়াভিভূত হয়ে প্রশ্ন করল,
“ শুভ? কোন শুভ? আমাদের শুভ? তুই ওই ছেলের আলাপ করোস ক্যান? ওই ছেলের প্রেমে পড়লি না-কি? কিন্তু তোর তো সাইফ ভাইয়ের সাথে ইটিস-পিটিস হওয়ার কথা। ”
সানাম ক্যামেরা থেকে চোখ তুলে তাকিয়ে আপাদমস্তক দেখে নিল পিহুকে। কানে ইয়ারফোন গুঁজে ভুল শোনাটা অস্বাভাবিক নয়। তাই বলে এতগুলো প্রশ্ন করে ফেলতে হবে? সানাম দাঁত কিড়মিড়িয়ে বলে উঠল,
“ সাইফ ভাইয়ের সাথে আমার ইটিস-পিটিস হওয়ার কথা, তাই না? আরে শালা কুত্তার বাচ্চা, আমি শোয়ার কথা বলছি। ”
পিহু বিস্তৃত নয়নে তাকিয়ে কান থেকে ইয়ারফোন খুলে ফেলল। বিস্ময়ের চরম পর্যায় পৌঁছে চেঁচানো স্বরে বলল,
“ কীহ্? সাইফ ভাই কুত্তার বাচ্চা, শুয়োর? মানতেছি তোরা ঝগড়া করোস। তাই বলে এইভাবে বলবি? ”
সানাম বিস্ময়ে কিংকর্তব্যবিমূঢ়! একই সাথে হেসে উঠল বাকি চারজন বন্ধু। তারা ভাবলো যে, পিহু প্রত্যেক বারের মতোই তাদের বিনোদন দেওয়ার জন্য এমন কাজটা করল। অথচ পিহু সত্যিই এসব শুনেছে! যাইহোক, সানামের কিল-ঘুষি খেয়ে সোফাটা ত্যাগ করতে বাধ্যই হলো মেয়েটি। মিশমির বিছানায় মিশমির দুইপাশে বসল নীলাশা, পিহু এবং পায়ের কাছে বসে রইল নিশান ও রিশান। আড্ডা জমিয়ে তোলার চেষ্টা চালালো তারকারা। কিন্তু নিশান-রিশান যখন নীলাশার সাথে ইনিয়েবিনিয়ে কথা বলার মাধ্যমে সবটা স্বাভাবিক করার চেষ্টা করল, ঠিক তখনই সূক্ষ্মভাবে তাদের এড়িয়ে গেল নীলাশা। বিষয়টা সকলেই খেয়াল করল বেশ। তাদের তিনজনের মাঝে সেই ভালোবাসা, প্রানবন্ততা, শত খুনসুটিগুলো যেন অবগুণ্ঠিত থেকে অভিমানটাই প্রকাশ পাচ্ছে খুব করে। তবে নীলাশাকে পথে আনার কৌশলটা নিশান যে খুব ভালো করেই জানে তা আর নতুন করে প্রমাণ করবার কিছু নয়। এইতো এখনকার কথা… নীলাশাকে বোতল ধরে পানি খেতে দেখে নিশান কেমন গুরুগম্ভীর মূর্তি ধারণ করে বলল,
“ নীলের বোতল ধরে পানি খাওয়া দেখে একটা কথা মনে পড়ল। ঝাণ্ডুবাম? তুই কি অনার্স ফাস্ট ইয়ারের ছাত্ররে র্যাগিং করার ঘটনাটা শুনছিলি? ”
মিশমি একটু মনে করার চেষ্টায় ভ্রু কুঁচকে নিল। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের স্মৃতিভরা খাতাটা ঘেটেঘুটেও মনে করতে পারল না উক্ত ছাত্রের কথাটা৷ সে অসম্মতি জানানোর সাথে-সাথেই সানাম কেমন উগ্র মেজাজে প্রশ্ন করল,
“ কোন ছাত্ররে? ভার্সিটিত তো অনেক ছাত্রই র্যাগ খাইতাছে। ”
নিশান ভীষণ অদ্ভুত চাহনিতে বাঁকা চোখে তাকাল সানামের দিকে। চোখেই কী ছলনার রেশ তার! নিশান সানামের উত্তরে বলল,
“ তুই ভার্সিটির সিসি ক্যামেরা হয়েও এই খোঁজ রাখোস নাই? এইযে তিন-চার দিন আগের কথা! ওই পোলার নামও নীল আছিল। মাস্টার্সের ভাইয়েরা ওরে বোতলে করে, পানির সাথে এমন এক জিনিস খাওয়ায় দিছিল জানোস না তো! আমাদের নীলের বোতল ধরে পানি খাওয়া দেখে ওই নীলের কথা মনে পড়ে গেল এখন। ”
সানাম জানে— নিশান ব্যাটা ধান্দাবাজ! সে নীলাশাকে প্রভাবিত করতেই যে আজগুবি গল্প বানানোর চেষ্টা করছে তা কেউ না বুঝলেও সানাম ঠিকি বুঝেছে। অপরদিকে পিহু যেন কথাটা সত্যি মনে করে, বেশ আগ্রহী চোখে তাকাল নিশানের দিকে। নড়েচড়ে বসে বলল,
“ বোতলের পানির সাথে কী খাওয়ায় দিছিল রে, দোস্ত? ”
নিশান রিশানের দিকে তাকাল। ভাইয়ের গুপ্তভাবে দেওয়া ইশারাটা বুঝতে অবশ্য দেরি হলো না রিশানের। সে বলল,
“ যেইটা খাওয়া নিষিদ্ধ ওইটাই। ”
পিহু বিশ্রীভাবে নাক কুঁচকে ঢোক গিলে নিল। কিছু একটা মনে পড়তেই সে বলল,
“ বিষ! বিষ খাওয়ায় দিছিল না-কি? তার মানে নীলকে বিষ খাওয়ায় নীলাক্ত করে ফেলা হইছিল? বাঁইচা আছে তো ওই চ্যাংড়া? ”
নীলাশা এতটাও বোকা নয় যে বন্ধুর তৈরি ফাঁদটায় পা দিবে। তৃষ্ণা মিটলেও যেন ইচ্ছা করেই পানি পান করে, পেট ফুলিয়ে ফেলার জেদ জাগলো তার মনে। অন্যদিকে নিশান-রিশানও বিরক্তি প্রকাশক চাহনিতে কেন্দ্র করল বান্ধবী পিহুকে। প্রথমে বিস্ময় প্রকাশ করে উচ্চারণ করা ওই একটা শব্দই তো যথেষ্ট ছিল। এতগুলো কথা বলে ফেলার কি আদৌ কোনো প্রয়োজন পড়েছিল? নিশান ধমকালো,
“ ওই আবাইল্লা ছেড়ি, বললাম না যেইটা খাওয়া যায় না ওইটা খাওয়ায়ছে? বিষ খাওয়ার জিনিস না? বিষ কি মাথাত্ দেয়? ”
সানাম হাসি চেপে নিল ওষ্ঠদ্বারের ওপাশে। সে কেন বাদ যাবে এই মজাটা নিতে? তাই সানামও তালে তাল মিলিয়ে প্রশ্ন করল,
“ তার মানে তুই বলতে চাইতাছিস— যেইটা খায় না কিন্তু মাথাত্ দেয়, ওইটা খাওয়ানো হইছে? কিন্তু কী খাওয়াইছে দোস্ত? তেল না-কি শ্যাম্পু? কোন ব্র্যাণ্ডের ছিল জানিস কি কিছু? আচ্ছা, মেয়াদ ছিল তো ওইটার? ”
নিশান দাঁতে দাঁত চেপে আগের থেকেও উচ্চস্বরে বলল,
“ আরে শালি যেইটা খাওয়ার পর ফেলে দিতে হয়, ওইটা। ”
সানাম বুঝেনি বিষয়টা। তবুও এমন ভাব করল যেন সব বুঝে নিয়েছে সে। তবে নিশানের উত্তরে এইবার মিশমি মুখ খুলল,
“ কোনো ফলের বীচি-টীচি না-কি? না-কি ছাল টাইপের কিছু? ”
রিশান হতাশ হলো, “ বাকি দুজনের কথা তো মানা যায় কিন্তু তুই কোন যুক্তিতে এই উত্তর দিলি? এগুলা পানির সঙ্গে বোতলে মিশিয়ে কেউ খাওয়ায় না-কি? তিনতলা থেকে পড়ার পরও তোর বুদ্ধিটা খুলল না আর। বেকুব যে বেকুব-ই থাকলি। ”
মিশমি মনঃক্ষুণ্ন হলো। আলাপ-আলোচনার চঞ্চলতা বৃদ্ধিকালের মুহূর্তে নিশান যখন আপনা-আপনিই ঘোষণা দিল কথাটি জানিয়ে দেবার, তখন নীলাশাকে দেখা গেল— পানিতে চুমুক দিতে দিতেই আগ্রহী কান দুটো খাঁড়া করে রাখতে। এতো আরামে-আয়েশে সে পানি পান করছে যেন পানির থেকে সুস্বাদু খাবার এই ত্রিভুবনে নেই। তখন নিশান নিজ ঠোঁটে দুরন্তপনার ছাপ রেখে উত্তর বলে দিল,
“ ওরা নীলরে সেইটাই পানির সাথে খাওয়ায় ছিল যেইটা বাথরুমে গিয়ে ত্যাগ করে আসতে হয়। বুঝলি এখন? ”
নীলাশা পানির বোতল ফেলে লাফিয়ে উঠল। খাবার নিয়ে এমন সব কথা মেয়েটি একালেও সহ্য করতে পেরেছে কি-না তা সন্দেহপূর্ণ! আর নিশানটা বার-বার এমন রীতিই অনুসরণ করে তাকে জব্দ করার জন্য। নীলাশা বিছানা থেকে নামতে না-নামতেই বমি করে ভাসালো। কিন্তু সে কি ছেড়ে দিবে বন্ধুদের? তার উপস্থিত বুদ্ধি বরাবরই অদ্ভুত থেকেছে, অবাক করেছে উপস্থিত দর্শকদের। আজও অবশ্য কম গেল না! যখন রিশান মেঘগর্জন হাসিতে ফেটে পড়ে বলল,
“ এই ছেড়ি বমি করে ক্যান? ও কি কল্পনা করতাছিল যে, ও ওই পানি খাইছে? টেস্ট কী-রকম একটু শোন তো ওর থেকে। ”
তখন নীলাশার কী রাগটাই-না হচ্ছিল তা ভাষায় বিশ্লেষণ করে বোঝানোর মতো নয়৷ গা গোলাতে লাগল আরও বেশি। সে মেঝে থেকে হুড়মুড়িয়ে উঠে, দৌড়ে গেল রিশানের কাছে। দেড় বছর পূর্বের নৌকাভ্রমণে সে তিহামের সাথে যা করেছিল ঠিক তা-ই করল রিশানের সাথে। রিশান বিস্ময়ে হতবিহ্বল। নিজের জবজবে গায়ে চোখ পড়তেই তার গুলিয়ে আসলো। ভাইয়ের এই অবস্থা দেখে নিশান মুহূর্তেই জায়গা ত্যাগ করল। সে জানে নীলাশা তার সাথেও একই কাজ করবে। ঠিক তাই হলো! দুজনে মিলে কেবিনেই দৌড় প্রতিযোগিতা লাগাল। দৌড়ে দৌড়ে পুরো কেবিন-ই হলো নীলাশার পাগলামোর শিকার। ইশ… কী বিশ্রী অবস্থা! এই তিন বন্ধুর কাণ্ডে বাকি তিনজনের অবস্থা আরও কাহিল। কখন যেন আবার নীলাশারা বলে বসে— “ আমরা আমাদের জামা-কাপড় পঁচাইছি, এবার তোদেরটাও পঁচাবো। সকলে মিলে বমির উপর গড়াগড়ি খাব, চলে আয়। ”
ঝড়টা জলদি থামলেই যেন বেঁচে যায় এই নিরীহ তিন-তিনটে রমণী। নীলাশার আবদার যে কতটা ভয়াবহ হতে পারে সেই সূক্ষ্ম জ্ঞানটুকু এই ভোলাভালা মিশমির-ও খুব ভালোই আছে!
ঝড়ের তাণ্ডবের সাথে-সাথে নীলাশার সৃষ্টি করা তাণ্ডবের দিনটা ফুরিয়ে যখন দেখা মিললো নতুন মধ্যাহ্নের সূর্য, তখন আবারও ছয়টি তারকা এক হলো সেই কেবিনে। মিশমি তো তাদের ক্যাবলাকান্ত হাসি দেখেই ধমকে উঠল বেশ,
“ কালকে সারাটা রাত আমি ঘুমাইতে পারি নাই। এয়ার ফ্রেশনার দিয়েও কোনো কাজ হয় নাই আর তোরা আজকেও নাচতে-নাচতে চলে আসছোস? জানোস আম্মু কত বকা-ঝকা করল? বের হ এখান থেকে। ”
রিশান প্রতিবাদ করল, “ শালী, চাঙ্গা হইতে না হইতেই হাম্মা-হাম্মা লাগায় দিছোস? আর আমরা কি কিছু করছি যে, আমরা বের হয়ে যামু? যে করছে হেতিরে ক। ”
কথাটা শুনতে পেলেও বেশ অন্যমনস্ক ছিল নীলাশা। সে গর্জে উঠল এই বলে,
“ হাতিরে ক মানে? আমি হাতি? মিশুই? তোর ফ্রেন্ডকে জিজ্ঞাসা কর যে, আমাকে হাতি ডাকার অধিকার ওকে কে দিয়েছে? ”
নিশান বলল, “ দেখছোস মিশা? তোর বান্ধবী যে এক লাইন বেশি বুঝে এইটা তার প্রমাণ৷ কইলো কী আর হুনলো কী! ”
ব্যস! এক-কথায় দুই-কথায় বেজে গেল বিতণ্ডা। তিনজন মিলে এমন গণ্ডগোল লাগিয়ে ফেলল যা সহ্য করার মতো নয়। এই সুযোগে পিহুও মিশমিকে ফিসফিসিয়ে বলে উঠল,
“ দোস্ত, এই একটা সুযোগ। ওদের মিল করায় দে। তুই বললেই নীলাশা সুড়সুড় করে মেনে নিবে৷ ”
কথাটা যে একেবারেই মিশমির অজানা কথা, তা নয়। সে তাদের থামালো। দুই বন্ধুকে বিছানার দুই পাশে বসিয়ে, কাছে ডেকে নিল নীলাশাকে। অত্যন্ত নম্র স্বরে বলল,
“ দেখ, যা হওয়ার তা হইছে। ওদের রাগ করাটা স্বাভাবিক ছিল যদিও ওরা বেশি রাগ দেখায়ছে। অন্যদিকে তোরও রাগ করা স্বাভাবিক। বাট ওরা নিজের থেকে যখন ব্যাপারটা মিট করে নিতে চাইছে তখন তুই বাড়াবাড়ি করতেছিস কেন, নীল? শোন, এখন তো ঈশাও অনেক হ্যাপি আছে, তাই না? আমরা তো এইটাই চাইছিলাম যে ওরা তিনজন একসাথে থাকুক আর একসাথেই ভালো থাকুক। তাহলে এখন নিজেদের মাঝে এইসব মান-অভিমান নিয়ে পড়ে থাকার কী প্রয়োজন, বল তো? ”
নীলাশার স্পষ্ট জবাব, “ আমার মতো ফ্রেন্ড ওদের না থাকলেও চলবে, দোস্ত। আমার ড্যাড তো কুকুরের থেকেও নিকৃষ্ট যে, কুকুরের খাবার খাওয়া গেলেও আমার ড্যাডের টাকায় কিছু খাওয়া যাবে না। এমন নিকৃষ্ট মানুষের মেয়ের সাথে মিশতে গেলে ওরাই লজ্জা পাবে। আর মানুষের তো আত্মসম্মান নাই! ওদের-ই আছে শুধু। ”
নিশান তেতে উঠল, “ আমি কখন কইছি যে, তোর বাপ কুকুরের থেকেও নিকৃষ্ট? চড় মাইরে দেশ থেকে ভাগায় ফেলে দিমু, ফাজিল মাইয়া। ”
নীলাশা কোণা চোখে তাকাল। কী ভীষণ বিরক্তিতে মাখো-মাখো তার মুখমণ্ডল! তখন অনেক কিছু বোঝাতে-বোঝাতে নীলাশার হ্যাঁ-সূচক উত্তর পাওয়া গেল। তবে সে মেঘস্বরে ঘোষণা দিল,
“ বেশ, আমি এবারের মতে ভুলে যাব সবকিছু। বাট আমার দুইটা শর্ত আছে। ”
সানাম বিরক্ত বোধে কথা বলল, “ ফ্রেন্ডশিপ আগের মতো ঠিক করে নিবি আবার এতেও শর্ত দেওয়া লাগবে তোর? হুশ! ”
রিশান বলল, “ আচ্ছা, সাধ্যের মধ্যে থাকলে মানবো। এখন বল তোর কী শর্ত? ”
নীলাশা সোজা হয়ে বসলো। কয়েক জোড়া বিস্ময়ান্বিত, আগ্রহী চোখের কেন্দ্র হয়ে সে বলল,
“ ফাস্ট শর্ত— ভবিষ্যতে ফ্রেন্ডশিপ ভাঙার কথা বলা যাবে না সেইটা আমার সাথেই হোক কী আমাদের কারোর সাথে। ”
এটা শুনে সবাই বেশ তৃপ্তি-ই পেল যেন! বন্ধুত্ব আর শর্ত কি একসাথে মানা যায়? হ্যাঁ, সানামও বন্ধুত্বে শর্ত রেখেছিল। তবে তার শর্তটা নীলাশার শর্তের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। কোনো খারাপ উদ্দেশ্য ছিল না এতে। অন্যদিকে নিশানরাও বিনা বাক্য ব্যয়ে রাজি হয়ে গেল নীলাশার কথায়। অতঃপর দ্বিতীয় শর্তের কথা জিজ্ঞাসা করতেই নীলাশা আরেকটু রয়েসয়ে গলা ঝেড়ে নিল। যেন খুব ভয়ঙ্কর কিছু বলতে চাচ্ছে সে! অতঃপর তাকে বলতে শোনা গেল,
“ সেকেন্ড শর্ত— সেইদিন তোদের কী এমন মনে হয়েছিল যে, রাতটা না যেতেই ঈশাকে আমাদের সাথে থাকতে বলে গেছিস? কী ভেবে বলে গেছিস যেন আমি তোদের ক্ষমা করে দিই? সত্যি সত্যি বলবি কিন্তু। ”
#চলবে ইন শা আল্লাহ!