তারকারাজি সিজন2 পর্ব-৪

0
316

তারকারাজি- (০৪)
লেখনীতে- অহনা নুযহাত চৌধুরী
|| দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ ||

আজ খুব ভোরে যখন ফাল্গুনের সিক্ত কচি পাতাগুলো তার সৌন্দর্য বাড়িয়ে চোখে ধরা দিচ্ছিল বার-বার, তখন রিশান জানালার ধারে এসে দাঁড়িয়েছে কেবল। উদ্দেশ্য ছিল— ভাসমান শিশির মাখা সতেজ হাওয়াকে বুকে আগলে, ভোরের অরুণরাগরেখার ফুরিয়ে যাওয়া থেকে প্রথম রোদের সুমিঠে রূপ উপভোগ করবে সে। ফজরের ওয়াক্তের পর সৃষ্টির মাধুরি উপভোগ করার মাঝেও রয়েছে অদৃশ্য এক তৃপ্তি। সময় ব্যয় করার জন্য এই উপভোগ্য পরিবেশকে উপেক্ষা করে যাওয়া যায় না বলেই মনে হলো তার। থেকে-থেকে চার মিনিট অতিক্রম হতেই চারিদিক আলোয় পরিপূর্ণ হয়ে উঠল। রিশানের-ও আর ইচ্ছে করল না দাঁড়িয়ে থাকতে। সে ভীষণ গম্ভীর স্বভাবে ভাবছে একটা কথা৷ ভার্সিটির শিক্ষার্থীদের কিচিরমিচিরে একপ্রকার বাধ্য হয়েই শীতের শেষাংশে আয়োজন করা হয়েছে বনভোজনের। এক সপ্তাহ বাদেই বনভোজনের জন্য অনুমোদিত শর্ত মেনে, ইচ্ছুক সদস্যরা সারি-সারি বাসে সিলেটের পাহাড়ি এলাকার উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করবে। কিন্তু তাদের দুই ভাইয়ের হচ্ছে দুঃশ্চিন্তা। বান্ধবী চারটে জোঁকের মতো খামচে ধরেছে যে, এইবারও তাদের একসাথে ভ্রমণে যাওয়া চাই! নীলাশা এই ধাপে এগিয়ে। মেয়েটা জেদ ধরে চোখের পানিটাই বোধহয় ফেলেনি। মিশমির মা ঝুমুর বেগমের-ও যে এবার কী হলো…! স্বামীর কথায় রাজি হয়ে নিজের ওই স্বর্ণতুল্য মেয়েকে বনভোজনে পাঠাচ্ছেন তিনি। যদিও সেই দিনটা শুক্রবার বলে টিউশনি নেই। কিন্তু এক হাজার টাকা খরচে দুই ভাইয়ের কি এমন আনন্দে অংশ নেওয়া ঠিক হবে? সিগারেট খাওয়া ছেড়েও তো উপায় হচ্ছে না এবার! রিশানের ইচ্ছে করল না বান্ধবীর মুখের উপর ‘না’ শব্দটি বলতে। বড়জন যা-ই বলুক না-কেন! ছোটজনকে প্রতি পদে-পদে খেয়াল রাখতে হয় ঠিক-বেঠিকের হিসাবগুলো। ওদিকে ঈশাকে ঘিরে ঘটনাগুলো আদৌ সত্য না-কি পুরোটাই তাদের মন গলানোর জন্য মিলা রহমানের সাজানো নাটক, তা এই মুহূর্তে মরীচিকা বৈ অন্য কিছু নয়। একবার মন বলে, সবকিছুই মিথ্যা। মা কখনো কৈশোরের স্ফুলিঙ্গ ছড়ানো মেয়েটাকে ‘নিঁখোজ’ খবরে রেখে এতটা শান্ত থাকতে পারে? আবার মাঝে-মাঝেই মনে হয় যে, সেই মা তো ঠিকি পারল তার জন্ম দেওয়া দুই ছেলের মাথা নুইয়ে দিতে।
এই মুহূর্তে রিশান আর কিছু ভাবতে পারল না। ভাইকে ঘুম থেকে তুলে দিয়েই নিজের ব্যাগটা হাতাতে লাগল সে। মোট বেতনের হলুদ খামটা হাতে বাজলো না? রিশান বের করল খামটি। হ্যাঁ, পৃথিবীতে টিকে থাকার একমাত্র সম্বল সেই হলুদ খাম এটি। সেখান থেকে তাদের দু’জনের উদ্দেশ্যে এক হাজার টাকা সরিয়ে নিল রিশান। তার মনে একটাই কথা,

“ হোক পিহু, সানাম, মিশা,… সব-সময়ই আমাদের নিয়ে ভাবা ওই একটাই তো আছে নীলাশা! মাসের শেষে হাতে টাকা থাকে না, তা তো আর না। ওরে সামাল দেওয়ার জন্য এই টাকাটা না-হয় যাক। আজকে সবকিছু ঠিক থাকলে তো আমরাই মিশারে ধরে-বেঁধে রাজি করাতাম একটা ফ্রেন্ড’স ট্যুরের জন্য। হোক না-হয় অন্যরকম সবটা। ”

রিশান বেশ প্রত্যাশা নিয়ে কথাটা ভেবেছিল ঠিকি। তবে সত্যিই যে তাদের একসাথে আনন্দ করার মুহূর্তগুলো অন্যরকম হবে, তা ভেবে দেখেনি বন্ধুরা। পটে জানানো হচ্ছে বনভোজনের দিনের কথা। যখন নিজেদের বাসে তিহামের উপস্থিতি পরিলক্ষিত হলো তখন নিশান খিটখিটিয়েই বলে উঠল,

“ শালা খচ্চরডা অনার্সের বাসে কী করে? ওদের বাস আলাদা না? স্যার-ম্যাডামদের জানাই দিমু, খাঁড়া। ”

পিহুও অনুরূপ নিজের বিরক্তি প্রকাশ করে বলল,

“ মিছামিছি গণ্ডগোল করে, মিশার কাছে খারাপ হয়ে লাভ আছে? তুই কী মনে করছোস, পুরা বাসের মধ্যে কেউই কি জানে না ওদের ইটিস-পিটিস মার্কা রিলেশনের কথা? ওরা কিছু না বললে আমরা কেন বলে খারাপ হবো, বল তো? ”

নিশান ও পিহুর পর একে-একে সকলেই নিজেদের বিরক্তি প্রকাশ করল। তিহামকে বলা হলো যে, সে যখন মিশমির সাথেই বসবে তখন তারা যেন বাসের পিছনের দিকে বসে। কারণ বন্ধুরা সবাই বাসের একদম পিছনের দিকে বসেই আনন্দ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিন্তু না, তিহাম মিশমিকে নিয়ে বাসের সামনের দিকেই বসবে। এদিকে নিশানের রক্তও টগবগিয়ে উঠেছে। সে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে যে, তারা একদম পিছনের দিকেই বসবে। কারো জন্য নিজেদের পরিকল্পনাগুলো জলে ডুবতে দিবে না তারা। আর তাদের দু’পক্ষের নিজেদের ইচ্ছাকে দাম দেওয়ার এই প্রবল জেদে হাওয়াতেই মিশে গেল মিশমির ইচ্ছে। সহজে নিজের মনের কথা বলতে না-পারা মেয়েটিও আজ ভীষণ প্রয়োজন বোধ করল এটা বলতে যে,

“ তিহাম? প্লিজ চলে যাও তোমাদের বাসে। তুমি এখানে থাকলে আমার মন টিকবে না বন্ধুদের সাথে। আর তোমার পাশে বসে আমাদের একসাথে আনন্দ করাটাই-বা হবে কী-করে? একটু বোঝো? ”

কিন্তু না… তিহামের ওই আদর মাখা আবদারে মিশমি আর কিছুই বলতে পারেনি। তাই দু’পক্ষের মন টিকিয়ে রাখতেই এই ছুটন্ত বাসে, সহপাঠীদের হৈচৈ-এর মধ্য দিয়েই এ-প্রান্ত থেকে ও-প্রান্তে আসা-যাওয়া করছে সে। এর মাঝে কতবার যে সে হুমড়ি খেয়ে পড়ে গিয়েছে তার হিসেব নেই। নেই বাসের অভ্যন্তরীণের দায়িত্বে থাকা বয়োবৃদ্ধ ও সহপাঠীদের ধমক খাওয়ার হিসেব। রিশান তো বললও,

“ মিশু, তুই এমনে আসিস না তো। কখন যে পড়ে গিয়ে একটা অকাম কইরে বসবি! তুই যা, আমরা কেউ কিছু মাইন্ড করতেছি না। অন্যবার না-হয় হবে সব। ”

মিশমি সেই কথা শুনেনি। সে তো স্পষ্ট দেখতে পারছে বন্ধুদের চোখেমুখে বিরক্তির আভা। আর নীলাশার কথা না বললেই নয়! তার চোখের লালিমা দেখে মনে হচ্ছে যেন তিহামকে আস্ত গিলে ফেলতেও পিছুপা হবে না সে। মিশমি বুঝতে পারে যে, বান্ধবীটা তিহামকে একদম-ই পছন্দ করে না। মনে হয় তিহাম অতীতে কুখ্যাত এক প্রেমিক ছিল বলেই নীলাশার এমন অনুভূতি। এখানে কী আর করার… সে যে ভালোবেসে ফেলেছে তিহামকে! কিন্তু মিশমির এহেন যাওয়া-আসা যে তাকে এভাবে ভীত করে তুলবে তা সে টের পেয়েছিল তখন; যখন পাহাড়ি অঞ্চল থেকে ফেরার পথে, সান্ধ্যভোজনের বিরতির শেষ মুহূর্ত ঘনিয়ে এলো তার সামনে। তার জীবনে এই ভয়ঙ্কর মুহূর্তটা অত্যন্ত একাকী এলে হয়তো আজ সে মৃত বলেই ঘোষিত হতো। ভাগ্যিস তার জীবনের এক চির বিশ্বস্ত মানুষ- সায়ান ছিল!

তখন রাত্রি সাড়ে ন’টা। সুনামগঞ্জ থেকে মৌলভীবাজার পৌঁছানোর সময়-সীমা এবং সড়কে যানজটের বিশৃঙ্খলার জ্ঞান রেখেই হয়তো তাদের সান্ধ্যভোজনের ব্যবস্থা মৌলভীবাজারের এক রেঁস্তোরায় করা হয়েছে। ওদিকে শিরশিরে, শীতল হাওয়ার তাণ্ডব চলছে। বোধহয় আশেপাশে কোথাও বৃষ্টি হয়েছে বেশ! শিক্ষার্থীদের জন্য নির্দেশনা আছে— যে যেভাবে এবং যে আসনে বসে এসেছে, সে সেভাবেই ঢাকামুখী হবে। তাই ভোজনের জন্য নির্ধারিত ত্রিশ মিনিটের একদম মরমর সময়ে এসে মিশমি নিজেদের বাসে ওঠার জন্য পা বাড়ালেও বাসে ওঠা হলো না তার। দীর্ঘ যাত্রার জন্য বিকেল থেকেই কেমন শরীর খারাপ লাগছিল মেয়েটির। এর মধ্যেই পিহু জোর-জবরদস্তি তাকে খাবার খাইয়ে যেন গা গোলানোর মাত্রাটা বাড়িয়েই দিয়েছে অনেক! মিশমি দুটো মিনিট বাহিরেই দাঁড়িয়ে থাকল। অতঃপর যখন দেখল পেটের নাড়ি-ভুঁড়ি উল্টিয়ে বমি গলদেশ হতে উপরে উঠে আসছে তখন দিগ্বিদিক না তাকিয়ে, না দৌড়ে পারল না সে। সোজা গিয়ে একটি চায়ের দোকানের সামনে বমি করতে লাগল মেয়েটি।
ওদিক থেকে বিষয়টি যখন খেয়াল করল আরাভ তখন তাকে বলতে শোনা গেল,

“ ওইটা মিশমি না? বমি করতেছে যে। অসুস্থ হয়ে গেল না-কি আবার? ”

আরাভের কথায় তাদের বাস থেকে বন্ধুরা উঁকি দিল সেদিকে। দূর থেকেই বুঝতে পেল যে, মেয়েটির অবস্থা করুণ। আরাভ নেমে দেখতে চাইলে সায়ান নিজের থেকেই তাকে মানা করে ছুটে গেল মিশমির কাছে। গিয়ে দেখল, চা তৈরি করার চুলোর কাছে অপ্রবোধনীয় মিশমির বমি করা নিয়ে চা বিক্রেতার সেই কী আক্রোশ! বুদ্ধু লোকের মুখে তার কত বিশ্রী বুলি! সায়ানের কাছে ওনার রাগ করাটা স্বাভাবিক হলেও রাগ দেখানোর পদ্ধতিটা মোটেও স্বাভাবিক বলে মনে হলো না। সে ধমকে উঠল,

“ দেখতাছেন তো মেয়েটা শরীর খারাপে সরেও দাঁড়াতে পারতাছে না। তাও কি একটু মায়া হলো না আপনার? ”

সায়ান মিশমির খোলা চুলগুলো মুষ্টিবদ্ধ করে, আরেক হাত মিশমির বাহুতে রাখল। অতঃপর সেভাবে ধরেই রেঁস্তোরার ভিতরে নিয়ে গেল তাকে। সায়ান ওয়াশরুমের বাহিরে দাঁড়িয়ে থাকলেও বুঝতে পারল যে, মেয়েটি এখনো বমি করে চলেছে। তবুও সে দাঁড়িয়ে থাকল এক ভরসাযোগ্য খুঁটির মতো। মেয়েটার ঠিক নেই। এই-ই হয়তো বেরোনোর সময় মাথা ঘুরে পড়ে যাবে! মিনিট পাঁচেক অতিক্রম হওয়ার পর মিশমি যখন মুখে পানি ছিটিয়ে বেরিয়ে এলো তখন তাকে অত্যন্ত দুর্বল ও খসখসে কণ্ঠে বলতে শোনা গেল,

“ সায়ান ভাই, আমাকে একটু শক্ত করে ধরবেন? দাঁড়াতে পারছি না। ”

সেই চির পরিচিত হাতটা বাড়ানো রয়েছে সায়ানের দিকে। সায়ান বেশ অপ্রস্তুত! এটা নতুন নয়। মিশমি যতবার-ই তার দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়েছে ততবারই সায়ান অপ্রস্তুত হয়েছে। প্রথমবার প্রেমে ও দ্বিতীয়বার সায়রে পড়ে যাবার ঘটনার পর, তৃতীয়বারের কথাটা আর চিন্তা করল না সায়ান। সে মিশমির হাতটা অত্যন্ত যত্নসহকারে ধরে তাকে চেয়ারে বসালো। মিনিট দুয়েক যেতেই তার হাতে দুটি লেবুর টুকরো গুঁজে দিয়ে সায়ান বলল,

“ একটার গন্ধ নাও আর আরেকটা খাও। বমি-বমি ভাব কেটে যাবে। ”

মিশমি টেবিলে মাথা রেখেই সায়ানের নির্দেশনা মানলো। অসুস্থতাটা একটু কমলো কি? না, মিশমিকে আবারও ছুটতে হলো ওয়াশরুমে। আরও মিনিট কয়েক ব্যয় হলো বমি করে নিজেকে হালকা করতে। অসুস্থতাটা কমেছে একটু। সায়ানকে চিন্তিতপূর্ণ কণ্ঠে বলতে শোনা গেল,

“ ঠিক আছো তো এখন? যেতে পারবে? ”

অঙ্গনা দুর্বল চোখে চেয়ে সম্মতি জানালো। সায়ান তাকে উঠে দাঁড়াতে বলে আরও বলল,

“ তাহলে জলদি চলো। আমি তো কাউকে ডাকার কথাও ভুলে গেছি। ওরা সবাই বোধহয় আমাদের খুঁজছে বাহিরে। ”

কিন্তু একি! বাহিরে তাদের একটা বাসও নেই যেখানে আশ্রয় নেওয়া যাবে। সায়ান ঘড়ি দেখল, রাত ন’টা বেজে পঞ্চাশ মিনিট পেরিয়ে। এই ঘটনার আকস্মিকতায় ও ভয়ে যখন মিশমির অন্তরটা হুহু করে কেঁদে উঠল, তখন সায়ান আরাভকে কল করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। বন্ধুরা এতটা দায়িত্বজ্ঞানহীন কী-করে হতে পারে? অতঃপর যা শুনলো তাতে তার রাগ আসমান ছোঁয়া! তনয় না-কি বলেছে যে, সে নিজের চোখে দেখেছে— সায়ানকে মিশমির সাথে মিশমিদের বাসে যেতে। তনয় যে কথা বাড়িয়ে বলে তা সায়ানের জানা। তাই বলে এমন সময়েও সে এটা করতে পারল? এই কয়েকদিন আগেই রোহানের একটি কর্মের জন্য তনয়কে অযথাই আরাভের কাছে মার খেতে হয়েছে। তবে তনয়কে এইবারের মারটা সায়ান যে অযথাই দিবে না তা নিয়ে বন্ধু আরাভের-ও সন্দেহ নেই। বরং আরাভ দারুণ বুদ্ধি দিল। সে বলল,

“ দেখ ভাই, ওইদিকের কাহিনি জানি না। তবে এই বাসে তোরে নিয়ে কোনো অশান্তি হচ্ছে না। কথাটা চেপে যা। নয়তো পরে দেখবি, তোদের মিসিং হওয়াটায় পোলাপান তেল-মশলা মাখাতেও সময় নিবে না। মিশমিকে নিয়ে তুই ঢাকায় চলে আয়। টাকা তো মনে হয় নাই তোর কাছে। বাবারে বলে বিকাশ করে দেই? ”

সায়ান মানা করল। টাকার ব্যাপারটা সে সামলে নিতে পারবে৷ কিন্তু এতো রাতে একটা মেয়েকে নিয়ে ঢাকায় পৌঁছানোটা কি সহজ কথা? সায়ান মিশমিদের বাসের পরিস্থিতি বুঝতেই নিশানকে কল করল। অথচ নিশানের কণ্ঠ শুনে মনে হলো যেন সেদিকেও কিছু জানে না কেউ। সায়ান সোজা প্রশ্ন করল, “ মিশমি কই? ”

নিশান যখন তিহামের প্রতি ক্ষিপ্ততা প্রকাশ করে বলল যে, সে তিহামের পাশে তখন সায়ান মৃদু ধমকে বলল,

“ আহাম্মক, মিশমি আমার পাশে। ও যে বাসে নাই সেইটা দেখোস নাই? ”

ওদিকে অন্ধকারে উঁকি দিয়ে, নিদ্রামগ্ন তিহামের পাশের সীটটা খালি দেখে বোধহয় নিশানেরও আত্মা শুকিয়ে যাওয়ার উপশম ঘটল। তারা যেমন ভেবেছে মিশমি তিহামের কাছে, তেমন তিহামও বোধহয় ভেবেছে মিশমি তার বন্ধুদের কাছে। অবশ্য সারাটা রাস্তা তো ওই বোকা মেয়েটি এই কাণ্ড করেই এসেছে! কিন্তু এখন নিশানের ভয় দেখে কে? সায়ান তাকে বলল যে, মিশমিকে সে ঢাকায় নিয়ে যাবে। ব্যাপারটা আর কাউকে বলার প্রয়োজন নেই এবং মিশমি যে বাসে নেই তা জানা-জানি হলে যেন সে বলে— মিশমি তাদের বাস মিস করায় সায়ানদের বাসে উঠেছে। ওকে ফোন করে জানিয়েছে সে।

তবে এতো কিছুর পরও শেষ রক্ষা হলো না মিশমির সামনে। মেয়েটা অঝোরে কেঁদে চলেছে। মনেহয় ভয় পাচ্ছে খুব। তারা ফিরতে দেরি করেছে ঠিকি। তবে এইদিকে যে ভুল বোঝাবুঝি করে তারা এমন কাণ্ড ঘটিয়ে ফেলবে আর তা যদি একটা বার টের পেত তারা…! হয়তো এমন কিছুই হতো না। মিশমি ভাবল, সায়ান আজ পাশে না থাকলে হয়তো এর থেকেও গাঢ় ভয়ে মৃত্যুটা নিশ্চিত ছিল তার কপালে। যদিও তার আতঙ্কিত বক্ষে বিন্দুমাত্র সান্ত্বনার ধ্বনি নেই এই নিয়ে! সে হঠাৎই কম্পমান হাতে সায়ানের জ্যাকেটের আস্তিন খামচে ধরে, ক্রন্দনের বিরস কণ্ঠে বলল,

“ সায়ান ভাই? আমার খুব ভয় করছে, সায়ান ভাই। আমাকে ছেড়ে চলে যায়েন না আপনি। আমি আজকে মরেই যাব ভয়ে। ”

সায়ানের সারা শরীরে চৈত্রের নব শিরশিরে হাওয়ার মতো এক শীতল শিহরণ লেপ্টে গেল৷ সে জানে না এই মেয়েটার সরল মন ও মস্তিষ্ক তার কথা ধরতে পারবে কি-না। তবুও সে নিজের অনুভূতি প্রকাশ করে আজ মিশমিকে বলেই ফেলল,

“ মিশমি? তোমার কি সত্যিই মনে হয় যে, আমি তোমাকে ছেড়ে যেতে পারি? কই, এতোগুলো দিনেও তো পারলাম না। তাহলে ভয় কীসের তোমার? ”

#চলবে ইন শা আল্লাহ!
( মাত্র লিখে, রি-চেইক করে দিলাম। তবুও ভুল-ত্রুটি থাকলে ক্ষমাসুন্দর চোখে দেখার অনুরোধ )

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here