তারকারাজি- (০৭)
লেখনীতে- অহনা নুযহাত চৌধুরী
যখন দুঃসংবাদটা এলো, তখন রৌদ্রপোড়া দুপুর। জ্বালাময়ী পিহু বন্ধুমহলের আড্ডা ভঙ্গ করে, নিজ হলের দিকে দৌড় লাগায়। মুখের দমফাটা হাসিটা নেই। কাঁধের ব্যাগটিতে কোনোরকম মুচড়িয়ে প্রয়োজনীয় কিছু জামা-কাপড় তুলে, ছুটে আছে ভার্সিটির প্রধান গেটের সামনে। তার মা প্রথমবারের মতো স্ট্রোক করেছে। ময়মনসিংহের পথে ছুটতে হবে তাকে। সেই সময় নিশান ও রিশান অনেকবার বলেছে যে, এমন হুট করেই পিহুর একা যাওয়া ঠিক হবে না। কারণ সে মানসিকভাবে প্রচুর অস্থির হয়ে পড়েছে। তাদের একজন সাথে থাকলে পিহুর অনেকটাই সুবিধা হবে। পিহু প্রথমে মানা করলেও পরে রাজি হয় তাদের কথায়। নিশানের ভরসা নেই। ব্যাটার একটু গরম করলেই পুরো যান মাথায় তুলে নিবে! পিহু বুদ্ধি খাটিয়ে রিশানকেই সাথে নিয়ে চলল ময়মনসিংহের পথে। ঢাকা থেকে সেখানে পৌঁছাতে খুব একটা সময় লাগে না। যত দ্রুত পৌঁছানো যায় ততই যেন মঙ্গল!
যে-পথে বার-বার, বহুবার ছুটে যাওয়া হয়। সে-পথে না-ফেরার অনুমতি পাওয়া কি এতই সহজ? নীলাশা ক’দিন অতন্দ্র রাত্রি কাটিয়ে বুঝেছে যে, দিবাস্বপ্নের পুরুষকে একবার দেখতে পাওয়ার তৃষ্ণায় কতটা ধুঁকতে হয় একজন প্রণয়িনীকে। নীলাশা যে কত ঘর্মস্রাবী দুপুরে খুঁজেছে আরাভকে, কত বৃষ্টির প্রেমের প্রস্তাবে নিমরাজি হয়ে ছুটেছে তাকে দেখতে। কত সন্ধ্যা ফোন ঘেঁটে আরাভের সাথে যোগাযোগের একটা মাধ্যম খুঁজেছে কেবল, তা হয়তো নীলাশা ব্যতীত মানুষ বলতে আর কেউ জানে না। নীলাশা ইনিয়ে-বিনিয়ে একবার নিশানদের জিজ্ঞাসাও করেছিল। তারা তো আবার বড়ভাই বলতে অজ্ঞান! ন্যাকামোর শেষ নেই তাদের তথাকথিত বড়ভাইদের নিয়ে। তখনই নীলাশা শুনেছিল, আরাভ এই শহরে নেই। সে চট্টগ্রামে, ভবিষ্যতে নিজেদের বসবাসের উদ্দেশ্যে তৈরিকার্যে আবিষ্ট বাড়িটি পরিদর্শন করতে গিয়েছে। সে কবে ফিরবে তা জানা নেই কারোর। কাটে আরও দুটো দিন। এই মহলে দু’জন বন্ধুর অনুপস্থিতির আজ মাত্র পঞ্চাশ ঘণ্টা পেরিয়েছে। পিহু ও রিশানের অনুপস্থিতিতে যখন তারকারাজির দম না-ফেলা আড্ডার বৈশিষ্ট্য ছাড়া-ছাড়া, তখন হুট করেই সেই দলে আগমন ঘটল আরাভের। আনমনা নীলাশা মুখে আষাঢ় ছেপে তাকিয়ে আছে সুদূরে। তখনই তার অতিপ্রিয় কোনো পুরুষের কণ্ঠ কানে এলো,
“ কী-রে নিশান, তোর ফটোকপি কই? দেখতাছি না যে? ”
নীলাশা বুকের উপর হাত রেখে সামনে তাকাতেই বসে থাকা আরাভকে দেখা যায়। বুকের ভিতরটা মুচড়ে উঠল না? খুব বিশ্রী স্বভাবে প্রকাশ পেয়ে গেল কি নীলাশার অন্তঃকাঁপন? নীলাশা স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে তার সামনে বসে থাকা আরাভ, সাইফ ও নিশান কেমন বিস্মিত চোখে তাকিয়ে আছে তার পানে। যেন খুবই তুচ্ছ কোনো ঘটনায় নীলাশাকে আঁতকে উঠতে দেখেছে তারা! নীলাশা বুকের উপর থেকে হাত সরিয়ে নিচের দিকে তাকায়। চোখের দৃষ্টি অস্থির। তখনই নিশান মুখটা তেতো করে বলে উঠল,
“ ওই ছেড়ি, ওইরকম খিঁচন মাইরা উঠলি ক্যান? ”
“ হুয়াট এন অকওয়ার্ড ল্যাঙ্গুয়েজ ইউ হ্যাভ! ঘটিরাম একটা! ”
নীলাশা কথাটা বলেই একপলক আরাভের দিকে তাকাল। ছেলেটি এখনও তার দিকেই তাকিয়ে আছে। নীলাশা অপ্রস্তুত হয়। তখনই নিশান হেসে বলে,
“ ওররে ব্রিটিইশ্শা! তুই তো ইংলিশ বলতে বলতে দারুণ বাংলা শিখে গেছিস। একদম বিশুদ্ধ বাংলা ঘটিরাম! ”
বলেই সে হেসে কুটিকুটি হলো। বন্ধুর এহেন কথার উত্তরে কোনো যুক্তিযুক্ত বাক্যই খুঁজে পেল না নীলাশা। তার মনের কোণের গাঢ় অন্ধকারে জ্যোৎস্নাময় দীপ্তি উঁকি দিয়েছে। সে দেখেছে তার দিবাস্বপ্নের পুরুষকে। এখন কি আর অন্য কোনো কথায় তার খেয়াল থাকে? এই বেখেয়ালি নীলাশা তখন হুট করেই একটা কাজ করে বসল। অভিমানিনীর ন্যায় প্রশ্ন ছুঁড়ল আরাভের দিকে,
“ এতদিন পর আপনার দেখা মিলল যে? ”
প্রশ্নটা করা মাত্রই নীলাশার মনে হলো যে, এমন প্রশ্ন করার সঠিক সময় বা সঠিক স্থান এটি নয়৷ ভুলস্থানে সব-সময় ভুল করতে হয়, এটাই নিয়ম। নীলাশা অপ্রস্তুত হয়। আরাভসহ আরাভের ও তার বন্ধুরা কেমন করে যেন তাকিয়ে আছে তার দিকে। তাদের দেখে মনে হচ্ছে ফড়িঙের চোখের মতো তাদের চোখ জোড়াও বেড়িয়ে আসবে এবার। নীলাশা তার হাতটা গলায় আলতো করে ছুঁয়ে নেয়। ঘেমে যাচ্ছে। কিছুক্ষণ বাদেই যেন দরদর করে ঘাম ঝরতে শুরু করবে। এমন সময় আরাভ বলে,
“ তোমাকে নবীন বরণের দিন বললাম না জরুরি দরকার ছিল? ওর জন্যেই তো এতদিন পর আমার দেখা পেলে। ”
নীলাশার বন্ধুরা এতক্ষণে স্বাভাবিক হলো। তারা দেখেছিল নীলাশা ও আরাভকে একসাথে কথা বলতে। তাই এই নিয়ে মাথা ঘামানোর কিছু নেই। তবে বিস্মিত হলো নীলাশা। ব্রহ্মাণ্ডের বিশাল বিস্ময়ে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হলো সে। আরাভ মিথ্যে বলল কেন? নীলাশা আজও সেদিনকার কথোপকথনের প্রত্যেকটি শব্দ গুনে-গুনে বলে দিতে পারবে। তাহলে এই মিথ্যে বলার অর্থ কী? নীলাশার প্রশ্নবিদ্ধ চোখ যখন আরাভের মুখ-মণ্ডলে, তখন আরাভ নির্বিকারে নিজের ফোনের স্ক্রিনে আঙুল নাড়াতে ব্যস্ত। লজ্জায় নীলাশার চন্দনরঙা গড়নে নিষ্প্রভতা ছেয়ে গেল। আঁধারি লাজে পাংশু মুখটা লুকাতে নীলাশার কতই-না আয়োজন! সে বুঝতে পেরেছে যে, তার অনুভূতির নগ্নতাকে বন্ধুদের রসিকতার বান থেকে ঢাকতেই আরাভের এমন মিথ্যে বলা। এর মানে সুবুদ্ধিপূর্ণ আরাভ, তার জন্য দিবা-রাত্রি এক করে ফেলা প্রণয়িনীকে ধরে ফেলেছে। দেখে ফেলেছে অন্তর্মুখী নীলাশার আড়ালে লুকিয়ে থাকা অবাধ্য, বেহায়া সেই প্রণয়িনীকে। নীলাশা কোনো কথা না বলেই চট করে উঠে দাঁড়ায়। ইতোমধ্যে ভরে আসা চোখ দুটো যে সবাই-ই দেখে ফেলেছে, তা-ও নীলাশার বুঝতে বাকি নেই। সে নিজের ব্যাগটা নিয়ে ছুটে যায় ভার্সিটির প্রধান গেটের দিকে। নিজের নির্লজ্জতায় নিজেও বাকহারা হয়ে পড়েছে এখন। সে শতকোটি নিন্দা জানায় নিজের বেহায়াপনাকে!
বিকালের কোমলতা ছড়িয়েছে বেশ কিছুক্ষণ হলো। মেঘমেদুর আকাশের পশ্চিমকোণে এক আলৌকিক আলোকরশ্মি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। নীলাশা মাথা উঁচিয়ে সেদিকে তাকায়। যেন সেখানকার খণ্ডিত দু’মেঘের আলিঙ্গনে সংযোগচ্যুত ঘটলেই সৃষ্টিকর্তার দানস্বরূপ কোনো উপহারের দেখা মিলবে। নীলাশা মাথা নামিয়ে ছুটে চলে রোকেয়া হলের দিকে। দুপুরে আরাভের সামনে গোমূর্খ বনে এখন আর এমুখো হওয়ার ইচ্ছে ছিল না তার। তবুও একপ্রকার লুকিয়ে-চুরিয়ে, পিহুর অনুরোধে নীলাশার ভার্সিটিতে ফিরে আসা। পিহু যখন ফোন করেছিল তখন বেলা তিনটে। তার আরেকটি ব্যাগে কী-সব দরকারি জিনিসপত্র রাখা। সেগুলো তার নিকট পৌঁছানো এখন অত্যন্ত জরুরি। পিহু না-কি সানামকেই ফোন করেছিল বেশ কয়েকবার। কিন্তু ছন্নছাড়া সানামের হুটহাট কী হয়… ফোন বন্ধ করে রেখে দেয় সে। তাই পিহু সানামের সাথে যোগাযোগ করতে না-পেরে নীলাশাকেই ছুটতে বলল হলের দিকে। আরাভের মুখোমুখি হবে না বলে সে পিহুকে মানা করে দিলেও পরবর্তীতে রাজি হতে হলো নীলাশাকে। বন্ধুপ্রাণ নীলাশা বন্ধুর উপকারে আসবে না, তা আবার কী-করে হয়? এই সময়টায় আরাভরা ভার্সিটিতেই থাকে বলে নীলাশার জানা। সে যথাসম্ভব দ্রুত হলে ঢুকে পিহুদের ঘরে চলে যায়। একি, সানাম তো দিব্যি নিজের ল্যাপটপ নিয়ে ছবিতে কারুকার্য যোগদানে ব্যস্ত! নীলাশা ক্ষুব্ধ হয়। হুড়মুড়িয়ে পিহুর বলা ব্যাগটি বের করতেই সানাম আর দিকে ফিরে তাকাল একবার। তারপর পুনরায় নিজের ব্যস্ত দুটো চোখ আঁটকে ফেলল ল্যাপটপের স্ক্রিনে। নীলাশা খেয়াল করেছে ব্যাপারটা। সানামের কোনো প্রতিক্রিয়া না-দেখে নীলাশা হঠাৎই রেগেমেগে অস্থির হয়ে ওঠে। এই মেয়েটাকে তার সহ্য হয় না একটুও। সে এমন ভাব করছে যেন নীলাশার আগমনের বার্তা সে জানত। সানামের এহেন আচরণ মেনে নেওয়া যাচ্ছে না। নির্বোধের মতো আজকের সকল বিরক্তি, রাগ, অপমান সানামের উপর ঝেড়ে ফেলল নীলাশা,
“ এমন ভাব করছো যেন এই রুমে তুমি ছাড়া কোনো মানুষ-ই নেই! কাকে ভাব দেখাও তুমি? তোমার ভাব দেখার জন্য বসে আছি না-কি আমি? ভদ্রতা বলতে কিছুই শেখোনি, তাই না? রিডিকিউলাস! ”
সানাম তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে একবার নীলাশার দিকে তাকাল। ঠোঁট চেপে নিজের হাসি আঁটকে আবারও নিজের কাজে গুরুগম্ভীর হয়ে উঠল সে। আঁড় চোখে দেখল, নীলাশা এখনো রেগে টগবগিয়ে উঠছে। মেয়েটার পিছে লাগতে সানামের দারুণ লাগে! তার অযথাই রাগাতে ইচ্ছা করে নীলাশাকে। নীলাশার রাগী মুখটা দেখেই যেন সানামের একটা বিষণ্ণ দিন আনন্দের দিনে পরিণত হতে পারে। তবে সানামের এমন ব্যবহারে একশত নীতিবাক্য শুনিয়েও যখন লাভ বিশেষ হলো না। তখন নীলাশা হাতের কাছে থাকা পানি ভর্তি জগটি নিয়ে উপুড় করে দিল সানামের উপর। আকস্মিক নীলাশার কর্মে তৎক্ষনাৎ কোনো প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারল না সানাম। রোবটের মতো বসে বসে দেখতে লাগল নীলাশার চলে যাওয়া। নীলাশা তখন এমন হন্তদন্ত পায়ে বেড়িয়ে গেল যেন তার করা কাজটি তুচ্ছসম!
তখন সানাম কিছু না-করতে পারলেও নীলাশার কাজটায় যে সে ভীষণ ক্ষিপ্ত, তা আজ নীলাশার ডিপার্টমেন্টে সানামের উপস্থিতিই বুঝিয়ে দিয়েছে। শার্টের আস্তিন গুটিয়ে সে যখন অমর্ষিত ষাঁড়ের মতো ছুটল নীলাশার কাছে, তখন নীলাশা বেশ ভারপ্রাপ্ত সাহিত্যের বইয়ে মগ্ন হয়েছিল। বোধহয় ‘রবীন্দ্রসমগ্র’ পড়ছে সে। সানাম নীলাশার ব্রেঞ্চের উপর লাফিয়ে বসে, নীলাশার থেকে বইটি কেঁড়ে নিল। একের পর একেক পৃষ্ঠা টেনে, ছিঁড়ে, কুটিকুটি করে ফেলতে লাগল বইটি। তার তীক্ষ্ণ দৃষ্টি তখন নীলাশার দিকে। নীলাশাকে দেখা গেল প্রথমে অবাক হতে এবং পরে সেও সটান দাঁড়িয়ে সানামের দু’কাঁধে আঘাত করল। চেঁচিয়ে উঠে বলল,
“ হাও রূড ইউ আর, সানাম! ফাজলামোর একটা লিমিট থাকে। ”
“ ওহ্ রিয়েলি? আর তুই কালকে খুব ভালো আচরণ করছিস, তাই না? শালা বিদেশী কুত্তা! ”
শ্রেণিকক্ষে উপস্থিত সকল শিক্ষার্থীর চোখ-ই তখন নীলাশা ও সানামের উপর। হুট করেই কীভাবে তাদের ঝগড়া বেঁধে গেল তা বুঝে আসলো না কারোরই। এদিকে মিশমি ও নিশান-ও শ্রেণিকক্ষে নেই যে কিছু একটা করবে। শিক্ষার্থীরা পড়ল এবার বিপাকে! এদিকে সবার এই বিস্ময়ের চাহনিকে উপেক্ষা করেও নীলাশা সর্বদেশীয় ভাষায় শ্রুতিকটু গালি দিয়ে বসল। তা থেকে সানামেরও মুখ তিক্ত হয়ে এলো। দুজনের কথা কাটাকাটি থেকে হাতাহাতি লেগে যাবে, এমন অবস্থা। সবাই-ই তখন প্রস্তুতি নিচ্ছে যে, এমন কিছু হলে তৎক্ষনাৎ তাদের বাঁধা দিতে হবে। কিন্তু সবার প্রস্তুতি মাটিতে পিষে নীলাশা তার সেল-ফোন হাতে তুলে নিল। কখন থেকে নৌশিন আহমেদ কল করে যাচ্ছেন তাকে। নীলাশা অবশ্য একবার রিসিভ করেছিল। কিন্তু মায়ের কথাটা তার সহ্য হয়নি। তারপরও পাঁচ-ছ’বার কল করে ফেলেছেন তিনি। সানামকে ইশারায় থামতে বলে কলটা রিসিভ করল নীলাশা। রাজ্যসম বিরক্তি নিয়ে চেঁচিয়ে উঠে বলল,
“ তুমি গাড়ি পাঠাবে না, মম। আজকে আমাকে যদি সেখানে যেতে হয় তো আমি কোনোদিনও বাড়িতে ফিরব না। ডু ইউ আন্ডারস্ট্যান্ড? ”
বলেই সে সংযোগ কেটে মেঝেতে ছুঁড়ে মারল ফোনটা। নৌশিন আহমেদ বোধহয় কিছু বলার সুযোগটাও পাননি। ফোনের অবস্থা কেমন তা বোঝা না-গেলেও এটা খুব বোঝা যাচ্ছে যে, নীলাশার বাবার উপার্জন আবারও মাটিতে মিশে গেল। মুহূর্তেই ধরে নিল সবাই যে, নীলাশারা ধনী বলেই জিনিসপত্রের এমন অপব্যবহার করতে পারে। কিন্তু নীলাশার মনস্তাত্ত্বিক অবস্থার খবর রাখে ক’জন? নীলাশা ফোনটা ছুঁড়ে মেরেই সিটব্রেঞ্চে বসে পড়ল। এত চেঁচামেচি করে মাথাটা ঝিমঝিম করছে তার। ওদিকে নৌশিন আহমেদ-ও ডাক্তারের সাথে দেখা করার জন্য চাপ দিয়ে যাচ্ছেন অনবরত। নীলাশা মাথা চেপে ধরে। চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছা করে তার। নীলাশার এহেন আচরণ দেখে সানাম নিজেও স্তব্ধ হয়ে যায়। তখনই নীলাশাকে বিড়বিড় করে বলতে শোনা যায়,
“ মম এখন নিশানকে ফোন করলে তো গাড়ি কেন, ও আমাকে ধরে-বেঁধেই নিয়ে যাবে সাইকিয়াট্রিস্টের কাছে। যাব না আমি, কিছুতেই যাব না। কেন আমাকে পাগল প্রমাণ করতে চাইছে ওরা সবাই? কেন? ”
নীলাশা ও সানামের মাঝে ঝামেলা হওয়ায় সবাই-ই তাদের থেকে দূরত্ব বজায় রেখেছে। তাই নীলাশার কথাটা সানাম ব্যতীত কারোরই শ্রবণেন্দ্রিয় হলো না। সানাম ব্যাপারটা বুঝেছে। পিহু তো সেদিনই তাকে বলল সবটা! সে একনজর সবাইকে দেখে নিয়ে, খুব সাবধানে ও ফিসফিসিয়ে বলল,
“ ওই, তুই কি ওই ‘পাগলা ভালো করা’ ডক্টরের কাছে যেতে চাইতেছিস না? ”
সানামের কথা বলার ভঙ্গিমায় নীলাশার রাগ এবার আকাশ ছুঁলো। এখনো তুই-তোকারি করছে মেয়েটা! সে রেগে কিছু বলার আগেই সানাম নীলাশার সেল-ফোনটা মেঝে থেকে তুলে নিল। নীলাশার ব্যাগ নিজের কাঁধে ঝুলিয়ে, তার হাত টেনে ধরে বলল,
“ তুই চল আমার সাথে। ”
নীলাশা বিস্ময়ে কিংকর্তব্যবিমূঢ়! সে বলে উঠে,
“ আর ইউ ক্রেইজি, সানাম? কোথায় যাব আমি তোমার সাথে? ”
সানাম জোর-জবরদস্তি নীলাশার হাত ধরে বেরিয়ে যেতে যেতে বলল,
“ আবাল ছেড়ি! চোখ কি চাঁন্দে উঠাইছোস? কই যাব তুই কি দেখতে পারবি না? বেশি রকম ন্যাকা তুই, নীলাশা! চোখ থাকতে চোখের মর্যাদা দিতে জানোস না৷ ”
#চলবে ইন শা আল্লাহ!