? Ragging To Loving ?
Part:: 37
Writer:: Ridhira Noor
মায়মুনা ফোন রাখতেই নূর অপর পাশ থেকে বলে উঠল।
নূরঃঃ- শোন শোন শোন।
মায়মুনাঃঃ- বল।
নূরঃঃ- দুই ঘন্টা পর আসতে বলিস। আমার কিছু কাজ আছে।
মায়মুনাঃঃ- আচ্ছা ঠিক আছে।
মায়মুনার সাথে কথা বলে নূর বাকিদের জানিয়ে দিল। আফরান বাইরে ডেকোরেটারস এর সাথে কথা বলছি তখন রিহান দৌড়ে এলো।
রিহানঃঃ- কি রে তোর ফোন বিজি কেন?
আফরানঃঃ- ফোনে কথা বলছিলাম তাই। কি হয়েছে?
রিহানঃঃ- আমাদের কোম্পানির ইনভেস্টার যার সাথে পার্টনারশিপ ছিল উনি তার শেয়ার কোন এক নতুন টেক্সটাইল কোম্পানির কাছে বিক্রি করে দিয়েছে। এস. টি. টেক্সটাইল কোম্পানি। এক্ষুনি তোকে অফিসে যেতে হবে। সেই কোম্পানির মালিক আধ ঘন্টা পর আসছে মিটিং এর জন্য। আর যেই ডিল হচ্ছে সে কোম্পানির সাথে সেটা তুই হ্যান্ডেল করছিস। তাই তোকেই যেতে হবে।
আফরানঃঃ- কিন্তু আজ তো মায়মুনার এনগেজমেন্ট। কত কাজ বাকি রয়েছে। এসব ফেলে কিভাবে যাব?
রিহানঃঃ- কিন্তু এই ডিল উভয় কোম্পানির জন্য অনেক ইম্পর্টেন্ট। না হলে কোম্পানির অনেক বড় লস হবে। আর সেই কোম্পানিরও লস হবে। যার পরিশোধ দিতে গেলে আমাদের কোম্পানিই শেষ হয়ে যাবে। তাই বলছি। আর বেশি সময় লাগবে না। ঘন্টাখানেক সময় লাগবে।
আফরানঃঃ- আচ্ছা ঠিক আছে। তুই তাহলে এদিকটা সামলা। আহিল ওয়াসিম আরিফ ইয়াশ ওরা যেকোনো সময় চলে আসবে এখানে। তাদেরও কাজে লাগিয়ে দিবি।
রিহানঃঃ- ওকে। (হেসে দিল)
১০ মিনিটের মধ্যে আফরান রেডি হয়ে নিল। হোয়াইট শার্ট তার উপর ব্লু ব্লেজার ব্লু প্যান্ট। হাতে ব্রাউন ঘড়ি। চুল হাত দিয়ে সেট করে নিল। ড্রেসিং টেবিল থেকে ফোন নিয়ে বেরিয়ে পড়ল। রুমের বাইরে আসতেই ধাক্কা খেল মায়মুনার সাথে।
মায়মুনাঃঃ- ও মা গো। ভাই দেখে চল। তু… (আফরানের মাথা থেকে পা অবধি দেখল) এসব ফরমাল ড্রেসআপ নিয়ে কোথায় যাচ্ছ?
আফরানঃঃ- অফিসে। কিছু ইম্পর্টেন্ট কাজ আছে তাই।
মায়মুনাঃঃ- আজ আমার জন্য এত গুরুত্বপূর্ণ দিন। আর এই দিনেই কি না তোমার ইম্পর্টেন্ট কাজ?
আফরানঃঃ- মায়ু তুই আমার ছোট বোন। আজ তোর জন্য বিশেষ দিন। কিন্তু এখন যদি অফিসে না যায় কোম্পানির অনেক বড় লস হয়ে যাবে। আর তুই কি সেটা চাস। (মায়মুনা ডানে বামে মাথা নেড়ে না বলল) ভেরি গুড। আর আমি ঘন্টা দেড় ঘন্টার মধ্যে চলে আসব। এখন যায়।
আফরান বিদায় নিয়ে যেই না দু পা বাড়ালো মায়মুনা থামিয়ে দিল।
মায়মুনাঃঃ- ভাই দাঁড়াও। (নূর আসতে দেড় ঘন্টা বাকি। ভাইয়ার আসতেও দেড় ঘন্টা সময় লাগবে। বাসায় আর কাউকেই পাচ্ছি না যে বলব তাদের পিকআপ করতে। ভাইয়াকেই বলি।) ভাইয়া শোন। তুমি আসার সময় তোমাদের ভার্সিটির দিকে এসো। সেখানে নূর আর বাকিরা অপেক্ষা করবে। তাদের নিয়ে এখানে আসবা। ঠিক আছে?
আফরানঃঃ- (কিছু একটা ভেবে তারপর বলল) আচ্ছা ঠিক আছে।
মায়মুনাঃঃ- আচ্ছা আরেকটা কথা। তোমাদের এত বছরের সম্পর্ক। তুমি নূরকে একবারও এখানে আনলে না?
আফরানঃঃ- না। আমাদের সব গেট টুগেদার ফার্ম হাউসেই হতো। তাই আনা হয়নি। (ফোনের দিকে তাকিয়ে বলল কথাগুলো। পরক্ষণে চোখ তুলে মায়মুনার দিকে তাকাল।) আমাদের এত বছরের সম্পর্ক মানে? কিসের সম্পর্ক? কার সম্পর্ক?
মায়মুনাঃঃ- কেন! তোমার আর নূরের সম্পর্ক।
আফরানঃঃ- আ…আমাদের কি…কিসের সম্পর্ক? হ্যাঁ? কে বলল তোকে?
মায়মুনাঃঃ- থাক ঢং একটু কম কর। আমি দুধের শিশু না। এই চোখ এখনো অবধি ভালো আছে। আশেপাশে কি চলে সব দেখি।
আফরানঃঃ- তুই ভুল বুঝছিস। এমন কিছু না। দেখ আমার লেট হয়ে যাচ্ছে। গেলাম আমি। (মায়মুনাকে কিছু বলতে না দিয়ে এক প্রকার দৌড়ে চলে গেল।)
মায়মুনাঃঃ- আ…… আমি ভুল বুঝছি? ধুরর আমার জ্বালায় আমি মরি। এহেএএ আমি কি করব এখন? নূরির বাচ্চা হুরি থুরি মুরি কবে যে আসবে।
_______________________________
অফিসে পৌঁছে আফরান দ্রুত গতিতে প্রবেশ করল। কারণ রিহান বলেছিল ক্লায়েন্ট আধ ঘন্টা পর আসবে। ট্রাফিকেই আধ ঘন্টা কেটে গেল। তাই এক প্রকার দৌড়েই প্রবেশ করল। অফিসে ঢুকতেই স্টাফরা তাকে অভিবাদন জানালো। বিনিময়ে সেও অভিবাদন জানালো। আফরান দ্রুত গতিতে মিটিং রুমে গেল।
আফরানঃঃ- সরি ফর দ্যা লেট। একচুয়ালি ট্রাফিক….. (বাকিটা আর বলতে পারল। সামনে তাকিয়ে থমকে দাঁড়ায়। খুশি হবে কি অবাক হবে তা নিয়ে এক বিভ্রান্তিতে আছে। কারণ তার সামনে বসা আর কেউ না তারই ছোটবেলার বন্ধু তার বেস্ট ফ্রেন্ড সোহেল।) সোহ…..
সোহেলঃঃ- মিস্টার আফরান। আপনি এত সময়নিষ্ঠহীন কিভাবে হবে পারেন। আপনি একজন বিজনেসম্যান। আপনার জানা উচিৎ সময় কতটা মূল্যবান। আপনার কাছে ফ্রি সময় থাকতে পারে কিন্তু আমার কাছে নেই। বিগত ১৫ মিনিট ধরে অপেক্ষা করছি। আপনার জন্য আমার ১৫ মিনিট ওয়েস্ট হলো।
আফরানঃঃ- (বাকরুদ্ধ হয়ে সোহেলের কথা শুনছে। এটাই কি সে সোহেল? যে কি সব কাজে ঘন্টার পর ঘন্টা আমার জন্য অপেক্ষা করত। কখনো বিন্দু পরিমাণ বিরক্ত প্রকাশ করেনি। স্কুল কলেজে লেট হওয়ার জন্য কত কথা শুনত। কিন্তু তাও একবারও আমার দোষ দেয় নি। আর আজ কি না ১৫ মিনিট অপেক্ষা করে তার সময় নষ্ট হয়েছে?)
সোহেলঃঃ- আমার অন্যান্য মিটিংও আছে। সব ছেড়ে তো আর একা আপনার সাথে মিটিং করতে পারব না। কাইন্ডলি লেটস স্টার্ট দ্যা মিটিং।
আফরান আর কিছু বলল না। মিটিং শুরু করল। প্রেজেন্টেশনের ফাঁকে ফাঁকে সোহেলের দিকে তাকাচ্ছে। সোহেল হাতে একটি কলম নিয়ে ঘুরাচ্ছে। আর আফরানের প্রেজেন্টেশনের মধ্যে নানা ধরনের সমস্যা বের করছে। কখনো ডিজাইন ঠিক নেই তো কখনো কাপড় ঠিক নেই। একটা না একটা কমতি বের করছে। কিন্তু আফরান বিন্দু পরিমাণ বিরক্ত প্রকাশ করছে না। সে শুধু ভাবছে সোহেল কিভাবে এতটা বদলে গেল।
সোহেলঃঃ- (কি আফরান? বলেছিলি না আমি তোর চাকর। আজীবন কুকুরের মতো লেজ গুটিয়ে তোর আগে পিছে ঘুরব। তোর পায়ের নিচে পড়ে থাকব। এখন দেখ আমি আর তুই এখন একই পজিশনে। কি বলেছিলি আমার বাবা একজন সামান্য কর্মচারী। তোর বাবার দয়ায় ছিল। আর আমিও তোর দয়ায় থাকব আজীবন। নো মিস্টার আফরান। নো। এখন দেখ এই কর্মচারীর ছেলে এখন তোর বরাবরে দাঁড়িয়েছে। দীর্ঘ পরিশ্রমের বিনিময়ে এই কোম্পানি তৈরি করেছি। রাত দিন এক করে এই সাম্রাজ্য তৈরি করেছি। যেসময় পড়ালেখার ফাঁকে ফাঁকে মজায় কাটানোর কথা ছিল সেসময় আমি রাত দিন কেটে কাটিয়েছি। শুধু তোকে দেখিয়ে দিব বলে। আর কথা হলো পান্নাকে নিয়ে। সে তো শুধু এক আবেগ ছিল। যা অল্প সময়ে কেটে গেল। কিন্তু তুই তাকে পাওয়ার জন্য আমাকে আর আমার বাবাকে যে অপমান করেছিস তা কাটিয়ে উঠতে পারিনি। সেসব কথা আমার বুকে তীরের মতো গেথেঁ আছে।)
(আফরানের পিএ) মাসুদঃঃ- মিস্টার সোহেল আপনি যদি সবকিছুতে এভাবে সমস্যা বের করেন তাহলে ডিল কমপ্লিট হবে কি করে?
সোহেলঃঃ- সেটা আমি কি করে বলব। আমি তো শুধু ইনভেস্টার। আমি টাকা ইনভেস্ট করব আর আমার জিনিস যাতে ভালো হয় আমার মুনাফা সেটা দেখব। ডিল আপনারা কিভাবে কমপ্লিট করবেন সেটা আপনারা দেখুন।
আফরানঃঃ- এই ডিল যদি ঠিক মতো না হয় তাহলে দুই কোম্পানির অনেক বড় লস হবে। তাই পারসোনাল মেটার সাইডে রেখে প্রোফেশনালি চিন্তা করলে ভালো হয়।
সোহেলঃঃ- (দাঁতে কটমট করে বলল) পারসোনাল কোন মেটার না। আমি প্রোফেশনালি চাই আমার যাতে কোন লস না হয়।
আফরানঃঃ- ডোন্ট ওয়ারি দুইদিন পর মিটিং রাখি।আর আমাদেরও কিছু প্রস্তুতি নিই। তারপর নাহয় দেখবেন।
সোহেলঃঃ- ইয়াহ শিওর।
মিটিং শেষে হাত মিলানোর জন্য আফরান হাত বাড়ালে সোহেল সেটা উপেক্ষা করে চলে যায়। আফরান তার বাড়ানো হাতের দিকে তাকিয়ে আছে।
আফরানঃঃ- (যে বন্ধু সবসময় বুকে আগলে রাখত সে বন্ধু আজ এত বছর পর হাতও মিলালো না। জানি না কেন তুই সব এভাবে ভেঙে দিলি। আমাদের এত বছরের বন্ধুত্ব নিমিষেই শেষ করে দিলি। আর আজ। আজকের কথা আর না ই বা বললাম। এমন ভাব নিলি যেন আমরা অচেনা অপরিচিত ব্যক্তি।)
সবাই মিটিং রুম থেকে বেরিয়ে গেল। আফরান একা একা দাঁড়িয়ে এসব ভাবছিল। এক গভীর নিশ্বাস ছেড়ে মাথা নিচু করে আছে। টেবিলের উপর ভর করে নিচে তাকিয়ে আছে। সোহেলের সাথে কাটানো সব স্মৃতি তার চোখের সামনে ভাসছে। মাথা তুলে হাতে ঘড়ির দিকে তাকাল।
আফরানঃঃ- ওহ শিট। নূর অপেক্ষা করছে। আর ১০ মিনিট বাকি। আবারও যদি ট্রাফিকে আটকে যায় এই মেয়ে নতুন ঝামেলা পাকাবে। (ফোন হাতে নিয়ে দৌড় দিল। অফিসের সবাই তার যাওয়ার পানে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।)
নূরঃঃ- (ফোনে কথা বলছে) ওই আর কতক্ষণ লাগবে। এই কবে থেকে রোদে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে করতে কাহিল হয়ে গেলাম। ওই ফকিন্নি সব আমাকে মাঝ রাস্তায় দাঁড় করিয়ে ক্যান্টিনে বসে আছে। বলল কেউ আসলে কাউকে না পেয়ে চলে যাবে। তাই তারা চালাকি করে আমাকে রেখে দৌড় দিল। আর কত অপেক্ষা করব? (চিল্লিয়ে উঠলো)
মায়মুনাঃঃ- (ফোন লাউডে না দিয়েই দূর ফোন ধরে আছে। কারণ নূর এত চিল্লিয়ে কথা বলছে যে ফোন লাউডে দেওয়ার প্রয়োজন নেই।) আহহ থাম মা গো মা শ্বাস নে। হয়তো এতক্ষণে পৌঁছে যাবে।
নূরঃঃ- কোন হালায় উগান্ডা থেকে আইতাছে যে এত দেরি হচ্ছে। কাকে পাঠিয়েছিস আমাদের পিকআপ করতে।
মায়মুনাঃঃ- (এই রে খায়ছে রে) ওই আসলে আফরান ভাইয়া অফিসে গিয়েছিল। আর সেই ফেরার পথেই তোদের নিয়ে আসবে। মিটিং এ হয়তো লেট হয়েছে তাই আসতে দেরি হচ্ছে।
নূরঃঃ- আর কাউকে পেলি না ওই পান্ডা খাচ্চোর বিলাতি বক ছাড়া। না জানি আরো কতক্ষণ এভাবে দাঁড়িয়ে থাকব।
.
.
.
চলবে