Ragging To Loving ? Part:35

0
866

? Ragging To Loving ?
Part:: 35
Writer:: Ridhira Noor

আফরান হাসতে হাসতে এক প্রকারে গড়াগড়ি খাচ্ছে। তার হাসিতে বাকিরাও এসে যোগ দিল। রিহান ওয়াসিম আহিল আরিফ ইয়াশ তারাও আফরানের সামনে এসে দাঁড়াল। আফরান হাসতে হাসতে হাত উপরে তুলল রিহান আহিল তার দুই হাত ধরে টেনে তুলল। আফরান মুখ চেপে হাসি বন্ধ করার অযথা চেষ্টা করছে। কোন ভাবে তার হাসি থামছে না।

নূরঃঃ- ঢং ! এত হাসার কি আছে এখানে। লাফিং গ্যাস দিছে না কি? হুহ্ কত সুন্দর পারফর্মেন্স দিলাম।

গাল দুটো ফুলিয়ে ঠোঁট উল্টিয়ে ফেলল। কপালে ভাজ পড়ায় চেহারাটা দেখতে ভীষণ মায়াবী লাগছে। আফরান হেসে গাল দুটো টেনে দিল। নূর ভ্যাবাচেকা খেল। এটা কি হলো?

আফরানঃঃ- ওলে লে লে কিউট পিউট লিটল বেবি। এসব বাচ্চামো চিন্তা শুধু মাত্র তোমার মাথায় আসবে। বার্থডে বেলুন দিয়ে…. (বাকিটা বলতে পারল না জোরে হেসে দিল। নূর রেগে সেদিক থেকে চলে গেল।)

পান্না রাগে জ্বলে পুড়ে হনহনিয়ে বাইরে গেল। তার পিছে পিছে তার বান্ধবী রিতা আর ঝিনুও গেল।

পান্নাঃঃ- হাউ ডেয়ার শী। ওর সাহস কি করে হয় আমাকে এভাবে সবার সামনে অপমান করার। আর আফরান? সেও কম না। নূরের হাসিতে সেও যোগ দিল। তাছাড়া কি আছে ওই সামান্য মিডল ক্লাস মেয়েটার মধ্যে। বারবার কেন তার কাছে ছুটে যায়? কেন সবসময় তার আগে পিছে ঘুরে। যতবার সে নূরের কাছে যেত ততবার কোন না কোন বাহানা দিয়ে তার থেকে দূরে নিয়ে যেতাম। কিন্তু তাও আফরান বারবার বারবার ওর কাছেই ফিরে যেত। কি আছে ওর মধ্যে? তোরা বল কি আছে ওই মেয়ের মধ্যে যা আমার মধ্যে নেই। ওকে দেখ গায়ের রঙ শ্যামলা, না আছে চেহারার শ্রী না আছে কোন ক্লাস। সামান্য মিডল ক্লাস ফ্যামিলির মেয়ে। আর আমাকে দেখ ভার্সিটির সব ছেলের ক্রাশ আমি। সব ছেলে আমার পিছন পিছন ঘুরে। আর আমি কি না আফরানের পিছে ঘুরি আর সে আমার দিকে ফিরেও তাকায় না।

ঝিনুঃঃ- আমি তো সেই আগেই বলে ছিলাম। আফরান যেন তোর হাত থেকে ছুটে না যায়। তুই বলতি কিছু হবে না। তোর মতো সুন্দরী মেয়েকে রেখে আফরান ওই কালো শ্যামলা চেহারার মেয়ের পিছনে যাবে না। এখন তুই নিজেই দেখ আফরান সারাক্ষণ শুধু তার আশেপাশে ঘুরে। আমি তো সেই প্রথম থেকেই ওর চাহনি দেখে বুঝেছিলাম যে নূরের প্রতি তার ফিলিংস আছে। তোকে বলার পরও পাত্তা দিস নি।

পান্নাঃঃ- (রেগে হাতে গায়ে যত গহনা ছিল সব ছুড়ে ফেলে দিল) আমি আফরান আর আমার মধ্যে কাউকে আসতে দিব না। কাউকেই না। নূরকেও রাস্তা থেকে সরিয়ে দিব। সরিয়ে দিব তাকে। যেভাবে সোহেলকে সরিয়েছি।

রিতাঃঃ- মানে?

পান্নাঃঃ- (এক তাচ্ছিল্য হাসি দিল) আফরান আর সোহেল ছোট বেলা থেকে বেস্ট ফ্রেন্ড। এতো বছরের বন্ধুত্ব এইভাবে ভেঙে গেল। এমনি এমনি? নো। আমি ভেঙেছি ওদের বন্ধুত্ব। কারণ সে আমার আর আফরানের মধ্যে আসার দুঃসাহস করেছে।

রিতাঃঃ- মানে? কি বলছিস তুই।
.
.
.
ভার্সিটির লাইফ শুরু হয় আফরানদের বন্ধুদের মজ মাস্তি দুষ্টুমি দিয়ে। সোহেল আর আফরান মিলে পুরো ভার্সিটি মাথায় তুলে রাখত। রিহান ওয়াসিম তারা সবাইও ওদের সাথে ফেসে যেত। ঝামেলা পাকাতো এই দুইজন ফেসে যেত সবাই একসাথে। আর তাদের ভাগের শাস্তি সবাইকে পেতে হতো। কিন্তু তাদের বন্ধুত্ব ছিল এমন যতকিছু হোক কেউ কাউকে দোষারোপ করত না। শাস্তিও সবাই একসাথে মাথা পেতে নিত। মাস খানেক পর ভার্সিটিতে এডমিট হয় পান্না। তার বাবা একজন বড় বিজনেসম্যান। আফরানের বাবাও একজন বড় বিজনেসম্যান সাথে ভার্সিটির ট্রাস্টিও। যার কারণে পান্নার বাবার সাথে আফরানের বাবার খুব ভালো পরিচয়। আফরানের বাবা পান্নাকে আফরানের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়। যাতে ভার্সিটিতে কোন সমস্যা হলে আফরানকে বলে। এভাবেই পান্না আর আফরানের পরিচয় হয়। পান্না ভীষণ সুন্দরী। ভার্সিটিতে প্রথম দিনেই অনেকের ক্রাশ হয়ে যায়। তার রূপের প্রেমে পড়ে গেল সোহেলও। ভার্সিটিতে প্রথম দেখায় তার প্রেমে পড়ে যায়। কিন্তু ব্যাপারটা সে নিজের মধ্যেই রাখে। কারণ সে আবেগের বশে ছিল। পান্না আফরান ছাড়া কারো সাথে খুব একটা কথা বলত না। রিতা ঝিনু সেই আগে থেকে তার সাথে সাথে ঘুরত। তাই সোহেল চেয়েছিল আফরানের মাধ্যমে পান্নার সাথে বন্ধুত্ব করতে। সোহেল আফরান বেস্ট ফ্রেন্ড ছিল বিধায় সবসময় একে অপরের সাথে থাকত। পান্নাও মাঝে মাঝে আফরানের সাথে দেখা করত সে হিসেবে ধীরে ধীরে সোহেলের সাথেও তার টুকটাক কথা হতো। চারমাস এভাবে টুকিটাকিভাবে কেটে গেল। একদিন আফরান আর তার সব বন্ধুরা ক্যান্টিনে বসে আড্ডার আসর জমালো। খাবার অর্ডার দিচ্ছে এমন সময় সোহেল আর আফরান দুইজনেই বলে উঠল।

সোহেল-আফরানঃঃ- কোল্ড কফি। ঘন দুধ দিয়ে এক চামচ চিনি। সাথে ক্রিস্পি ওয়েফার চিপস।

একসাথে বলায় দুজনে একে অপরের দিকে তাকিয়ে হেসে দিল।

আহিলঃঃ- তোদের মধ্যে সব কিছুই মিল। খাবার থেকে শুরু করে পছন্দ অপছন্দ সব মিল। মাঝে মাঝে চিন্তা করি আফরান আর রিহান ভাই। নাকি আফরান আর সোহেল ভাই।

ওয়াসিমঃঃ- আর আমি চিন্তা করি এদের মধ্যে এত মিল যদি বউও একইজনকে পছন্দ করে তখন কি করবে?

সোহেলঃঃ- কি আর করবে আমি নিয়ে পালিয়ে যাব।

আফরানঃঃ- পালাতে হবে না। আমি নিজেই তাকে তোর হাতে তুলে দিব। যদি সেও তোকে ভালবাসে।

সোহেলঃঃ- ওরে আমার জানে জিগার দোস্ত…. (উঠে আফরানকে জড়িয়ে ধরল)

তাদের এসব কান্ড পান্না দূর থেকে দেখছিল। এসবে তার কিছু যায় আসে না। তাই কোন ভ্রুক্ষেপ না করে চলে গেল। পরের দিন সোহেল লাইব্রেরি থেকে আসছিল তখন দেখা হয় তার দুই বন্ধু ইমন আর রানার সাথে। সোহেল খুব পড়াকু ছেলে৷ প্রায় সময় লাইব্রেরি আসে। ইমন রানা তারাও বেশির ভাগ সময় লাইব্রেরি থাকে। একদিন এভাবেই লাইব্রেরিতে পড়ার চলে বন্ধুত্ব হয়।

ইমনঃঃ- কি রে সোহেল ইদানিং দেখি তুই লাইব্রেরিতে খুব একটা আসিস না।

সোহেলঃঃ- আরে তেমন কিছু না। বন্ধুদের সাথে থাকি তাই।

রানাঃঃ- বন্ধু নাকি বান্ধবী? কি চলে মামা। ইদানিং দেখছি পান্নার পিছনে ঘুরঘুর কর। আমরা তো তোমারই বন্ধু আমাদের বলতে পার। পারলে হেল্প করব।

সোহলঃঃ- (মাথা চুলকালো) আসলে আমি পান্নাকে পছন্দ করি। ভার্সিটির সব ছেলেই তার পিছনে লাট্টু হয়ে ঘুরে তা আমি জানি। কিন্তু আমি একটু বেশিই লাট্টু এই আর কি। (বলে হেসে দিল) আমি কিন্তু এখনো আমার বেস্ট ফ্রেন্ড আফরানকে সহ জানায়নি। কারণ আমি আগে পান্নার সাথে বন্ধুত্ব করতে চেয়েছি। তাকে ভালো ভাবে জানতে চেয়েছি। তার বয়ফ্রেন্ড আছে কিনা? তেমন কিছু নেই। এখন আমি আমার মনের কথা বলে দিব তাকে।

ইমনঃঃ- ও মামা ট্রিট চায় কিন্তু।

সোহেলঃঃ- অবশ্যই দিব। আগে পান্নাকে আমার মনের কথা বলি। যদি সে রাজি হয় তাহলে দিব। আফরানকেও পরে জানাবো। সারপ্রাইজ দিব। আচ্ছা চলি এখন।

সোহেল চলে গেল। পান্না পাশ দিয়ে হেটে যাচ্ছিল সোহেলের মুখে তার নাম শুনে থেমে যায়। এইমাত্র সোহেল যা বলল তা শুনে তার প্রচুর রাগ উঠে যায়।

পান্নাঃঃ- হাউ ডেয়ার হি। ওর সাহস কি করে হয় আমার কথা চিন্তাও করার। এই দুই টাকার কর্মচারীর ছেলে হয়ে আমার মতো একজন বিত্তশালী মেয়ের প্রেমে পড়ল। ওর কি যোগ্যতা আছে আমার সাথে প্রেম করার। প্রেম ভালবাসা নিজ লেভেলের সাথে হয়। যেমনটা আমার আর আফরানের মধ্যে রয়েছে। আমরা হাই ক্লাস ফ্যামিলির আর এই কি না সামান্য মিডল ক্লাস ফ্যামিলির হয়ে আমার সাথে প্রেম করবে? নো। নেভার। আমার ক্লাস শুধু আফরানের সাথে যায়। আর আফরান শুধু আমার হবে। ওকে আমি আমার করেই ছাড়ব। ভালোই হলো সোহেল আফরানকে আমার সম্পর্কে কিছু বলে নি৷ আফরান আমার দিকে তেমন তাকায়ও না। এখন যদি সোহেলের আমার প্রতি ফিলিংসের ব্যাপারে জানতে পারে তাহলে সে আমার কাছ থেকে দূরে চলে যাবে। আর এটা আমি মেনে নিব না। যেই করে হোক আফরান শুধু আমার হবে। ওকে আমি আমার করবই করব। বাই হুক অর বাই ক্রুক। এর জন্য যদি সোহেলকে সরাতে হয় তাই করব। তাদের বন্ধুত্বই ভেঙে দিব। যাতে সোহেল আফরানকে কিছু বলতে না পারে।
_______________________________

সোহেলঃঃ- আজ ভ্যালেন্টাইন্স ডে। আজকে আমি পান্নাকে প্রোপজ করব। (একগুচ্ছ লাল গোলাপ নিয়ে ভার্সিটিতে এলো। আফরানরা যাতে না দেখে তাই সে চুপিচুপি এলো। কারণ সে আগে পান্নাকে তার মনের কথা বলতে চাই। তারপর বাকিদের জানাতে চাই। পান্নাকে সারা ভার্সিটি খুঁজে দেখল। অবশেষে পেয়ে গেল মিউজিক রুমে। দরজার আড়ালে দেখল পান্না ফোনে কথা বলছে। বাইরে থেকে তার দিকে মুচকি হাসলো। হাতের গোলাপগুলো ভালো করে ঝেড়ে নিয়ে নিজেকে পরিপাটি করল। যেই না দরজা খুলে প্রবেশ করবে অমনি পান্নার কথা শুনে থমকে যায়।)

পান্নাঃঃ- কি বলছ আফরান? হাহাহা সত্যি সোহেল তোমার চাকর? আমি তো ভেবেছিলাম তোমার ফ্রেন্ড। কিসের ফ্রেন্ড মানে? কি? সে শুধু কুকুরের মতো করে তোমার আগে পিছে লেজ গুটিয়ে ঘুরে? হাহাহা তুমি না অনেক ফানি। সে তোমার দয়ায় আছে? তোমার দেওয়া ফেলনায় তার জীবন চলে। সত্যি তুমি অনেক দয়াবান। নাহলে সামান্য একজন কর্মচারীর ছেলেকে বন্ধুর মতো করে কে দেখে?

সোহেলঃঃ- (আফরান এসব বলছে আমার ব্যাপারে? না না আমিই হয়তো ভুল ভাবছি। হাজারো চিন্তা ঘুরছে মাথায়।)

পান্নাঃঃ- (এর দেখি কোন রিয়েকশনই নেই।) আমার না বিশ্বাস হচ্ছে না। (তখনই ফোন লাউডে শব্দ আসে) “” আরে হ্যাঁ সত্যি বলছি।”” (সাথে সাথে পান্না ফোনের আওয়াজ কমিয়ে দেয়) উফফো এই ফোন। হ্যাঁ আফরান বল।

ফোনে আফরানের আওয়াজ শুনে সোহেল মন খারাপ করে দাঁড়িয়ে আছে। এত বছরের বন্ধুত্ব। যাকে আজীবন ভাইয়ের মতো করে দেখে এসেছে সে কিনা সামান্য একজন কর্মচারীর ছেলে মনে করে।

পান্নাঃঃ- আচ্ছা সোহেলের বাবা তোমাদের অফিসে কাজ করে তাই না? হাহাহা কি বলছ? সোহেলের বাবা তোমার বাবার দয়ায় তার পায়ের নিচে থাকে? আর সোহেলও আজীবন তোমার পায়ের নিচে থাকবে। উফফ আফরান তুমিও না। অনেক হাসলাম আজ তোমার কথা শুনে। (আড়চোখে সোহেলের দিকে তাকাল। সোহেলের চেহারায় রাগ স্পষ্ট ফুটে উঠেছে। তার মানে কাজ হয়েছে।)

হাতে থাকা গোলাপগুলো দুমড়ে মুচড়ে নিচে ফেলে পা দিয়ে পিষে দিল।

সোহেলঃঃ- (আমাকে বন্ধু ভেবে হোক চাকর ভেবে হোক যা বলেছিস আমি মেনে নিতাম। হয়তো আজীবন তোর পিছন পিছনই ঘুরতাম। কারণ আমি তোকে বন্ধু ভেবে এসেছি। কিন্তু তুই আমার বাবা সম্বন্ধে যা কিছু বললি তা আমি কখনো মেনে নিব না। আমার বাবা কারো দয়ায় পড়ে নেই। নিজের কাজের যোগ্যতায় তোর বাবার অফিসে কাজ করে। এতদিন যা কিছু আমি বন্ধুত্ব ভেবেছিলাম সেসব তোর কাছে আমার প্রতি দয়া ছিল। আমার তোর দয়ার কোন প্রয়োজন নেই। নেই কোন প্রয়োজন।)

সোহেল রেগে চলে গেল। তার যাওয়ার পানে তাকিয়ে পান্না এক পৈশাচিক হাসি দিল।

পান্নাঃঃ- আমিও জানতাম তুমি এমনি এমনি বিশ্বাস করবে না। তাই কথার ফাঁকে আফরানের আওয়াজ রেকর্ড করে নেই। তারপর এডিট করে তোমাকে শোনায়। এসব শোনার পরও হয়তো বন্ধুত্বের খাতিরে কিছু বলতে না। কিন্তু যদি তোমার বাবা সম্পর্কে কিছু বলে তাহলে নিশ্চয় তোমার গায়ে লাগবে। ওহ পান্না ইউ আর গ্রেট।

তারপর থেকে সোহেল আফরানের প্রতি উখড়ে উখড়ে থাকত। কথায় কথায় খোঁচা দিত। সোহেল তার বাবাকেও অফিস ছাড়ানোর অনেক চেষ্টা করে। কিন্তু তার বাবা কোন ভাবে রাজি হয় না। কারণটা সোহেল তার বাবাকে বলতে পারছে না। বেশ কিছু দিন পরই সোহেল আর আফরানের মধ্যে ঝগড়া হয়। তাদের বন্ধুত্ব ভেঙে যায়।
.
.
.
ঝিনুঃঃ- হোয়াট? এত কিছু হয়ে গেল তুই আমাদের একটু জানালিও না।

পান্নাঃঃ- কারণ দেয়ালেরও কান আছে। তোদের জানালে কথাটা নানাভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আফরানের কাছে পৌঁছাতো। আর সে আমার কাছ থেকে দূর হয়ে যেত। যার জন্য এত কিছু করেছি সেই যদি না থাকে তাহলে কেমনে হবে? এনি ওয়েস। এখন কথা সোহেলের না। এখন কথা নূরের। ওর কিছু একটা করতেই হবে। আর এমনভাবে করতে হবে যাতে কেউ টের না পায়। কারণ আফরান সবসময় নূরের আশেপাশে থাকে। একটু কিছু হলেই আফরান খবর পেয়ে যাবে। নূর… নাও জাস্ট ওয়েট এন্ড ওয়াচ। আফরানকে আমি কাউকে ছিনিয়ে নিতে দিব না। যেই আমাদের মাঝে আসবে তাকে সরিয়ে দিব।
_______________________________

আলিফাঃঃ- বোন রে বোন এত চিন্তা নিয়ে তুই ঘুমাস কেমনে? মাথা ব্যাথা করে না এই গোবর ভরা মাথা নিয়ে থাকতে।

নূরঃঃ- ওই ফকিন্নি কি বললি? আমার মাথা গোবর ভরা?

আলিফাঃঃ- সেটা আবার বলতে হয় নাকি? তা সবাই জানে। (নূরের চেহারার দিকে তাকিয়ে দেখে রাগে লাল হয়ে আছে। বুঝতে পারছে এখন তার উপর দিয়ে সুনামি যাবে তাই আর এক মূহুর্ত না থেকে দিল দৌড়। তাকে দৌড়াতে দেখে নূরও তার পিছে দৌড় দিল।)

নূরঃঃ- তোকে আমিইইই……. ইইইইইই

দৌড়াতে গিয়ে কারো সাথে ধাক্কা খায়। সরি বলতে উপরে থাকি দেখে সোহেল। সোহেল আর নূরের আজ পর্যন্ত সামনাসামনি দেখা হয়নি। এমনি দূর থেকে একে অপরকে দেখত। সোহেলকে দেখে আফরানের বলা সেই কথাগুলো মনে পড়ে গেল।

নূরঃঃ- সরি। খেয়াল করি নি।

সোহেলঃঃ- ইটস ওকে। (মুচকি হাসলো)

নূরঃঃ- (আফরানের ব্যাপারে কিছু জিজ্ঞেস করব?) আপনি আফরানের বন্ধু না?

সোহেলঃঃ- (নূরের কথা শুনে রেগে গেল) ও আমার কেউ না। (বলে রেগে চলে গেল)

নূর পিছন ফিরে দেখে আলিফা ভেঙচি কাটছে। রাগী লুক দিয়ে আবার তার পিছে দৌড় দিল। আলিফা গিয়ে লুকালো আফরানের পিছে। আলিফা হঠাৎ এভাবে আসায় আফরান সামনে তাকিয়ে দেখে নূর দৌড়ে আসছে। কিন্তু ভারি ড্রেসআপের জন্য ভালো করে দৌড়াতেও পারছে না। নূর তেড়ে আসতেই আলিফা পিছন থেকে আফরানকে ধাক্কা দিয়ে দৌড় দিল। আফরান গিয়ে পড়ল নূরের উপর। নূর পড়ে যেতেই আফরান তার কোমর জোড়ে ধরে। নূর চোখ খিছে বন্ধ করে আফরানের শার্ট আঁকড়ে ধরে। হালকা মিটমিট করে চোখ খুলে। আফরান নূরের চোখে তাকিয়ে আছে।

আফরানঃঃ- (না জানি কেন বারবার তোমার চোখে আটকে যায়। এই চোখ জোড়ায় কি এমন আছে যা আমাকে টানে। একবার চোখ পড়লে ফেরাতে ইচ্ছেই করে না। ইচ্ছে করে হারিয়ে যায় এই চোখে। মনে মনে এসব ভাবতে ভাবতে পিছন থেকে আলিফা কাশি দিল।

আলিফাঃঃ- কি হলো জিজ…. ভাইয়া? পারফর্মেন্স তো শেষ। আর এই সিন তো ফিল্মে ছিল না। (বলে মিটমিট করে হাসছে। তার কথা শুনে বাকিরাও হাসছে। আফরান তড়িঘড়ি নূরকে দাঁড় করালো।)

অবশেষে ফেয়ারওয়েল পার্টি শেষ হলো।

সময় পেরিয়ে আট মাস কেটে গেল। তাদের ফাইনাল এক্সাম শেষে সবাই নিজ নিজ ক্যারিয়ারের দিকে অগ্রসর হলো। ইয়াশ আরিফ মিলে একটা আর্ট গ্যালারি খুলল। সেখানে তারা নিজেদের তোলা সব ছবির প্রদর্শন করে। বিভিন্ন নামি দামি মানুষ তাদের বিলাসিতার জন্য সেসব অপরূপ দৃশ্যের ছবি ক্রয় করে। ইয়াশ মেহের ফোনে কথা বলে। কিন্তু বন্ধু হিসেবে। এখনও নিজেদের ফিলিংস একে অপরের কাছে ব্যক্ত করতে পারে নি। বন্ধুত্বের খাতিরে ভালবাসা দাবিয়ে রাখল। আলিফার মনে সেই কষ্টটা রয়ে গেল। দূর থেকে আরিফকে ভালবেসেছে। মনের কথা বলার সাহস যোগাতে পারে নি। মনে এক ভয় ছিল যদি আরিফ না করে দেয়? তাহলে ভীষণ কষ্ট পাবে। তার চেয়ে বরং নিজের মতো করে ভালবেসে যাক। আহিল তার বাবার বিজনেস সামলায়। ওয়াসিম সফটওয়্যার কোম্পানিতে উচ্চ পদে চাকরি করে। রিহান আর আফরান তাদের ফ্যামিলি বিজনেসে জয়েন করে। তাদের টেক্সটাইল কোম্পানিতে। নূর আর তার বান্ধবীরা ফাইনাল এক্সামের প্রস্তুতি নিচ্ছে।

আহিল ওয়াসিমকে ফোন করল।

আহিলঃঃ- কেমন আছিস?

ওয়াসিমঃঃ- ভালো। তুই কেমন আছিস?

আহিলঃঃ- ভালো। (টুকিটাকি কথা বলল বন্ধুর সাথে) আরে ভালো কথা মনে পড়ল। আমার আর আমরিনের রিলেশনের চার বছর হতে চলল।

ওয়াসিমঃঃ- আমার আর সিমারও।

আহিলঃঃ- আব্বে ওই তোর আর আমার রিলেশন একই দিনেই হয়েছিল। ভুলে গেছিস? এখন কথা সেটা না। কথা হলো তাদের সবার সাথে দেখা হয়েছে সেই কবে। আমার বোনটাকেও মিস করছি। ওর খুরাফাতি কাহিনি গুলো মিস করছি। আমি ভাবছিলাম কেননা সবাই মিলে রিহান আফরান ইয়াশ আরিফ তুই আমি সহ সবাই একসাথে ভার্সিটিতে গিয়ে ওদের সারপ্রাইজ দেয়।

ওয়াসিমঃঃ- নট এ বেড আইডিয়া। এমনিতে আমরা বন্ধুরা মাসে একবার অন্তত দেখা করি। কেননা ওই দিন আমরা ভার্সিটি যায়। পুরনো কিছু স্মৃতিও তাজা হয়ে যাবে।

আহিলঃঃ- গ্রেট। তাহলে আগামী সোমবারেই আমরা যাচ্ছি। কারণ সেই দিনই আমাদের রিলেশনের চার বছর পূর্ণ হবে।
.
.
.
আমরিনঃঃ- দেখনা আমাদের রিলেশনের আজ চার বছর হতে চলল। বিগত তিন বছর ধরে এই দিনে আহিলের সাথে ছিলাম। গত বছর শেষ বার এই দিন উদযাপন করেছিলাম। আর এইবার? তারই বা কি দোষ। তখন ভার্সিটিতে ছিল। আর আজ তার বাবার বিজনেস সামলাচ্ছে। সেসব ছেড়ে কি আর এখানে আসবে? (মন খারাপ করে এসব বলল। হঠাৎ মনে হলো কানের কাছে এসে কেউ বলল “” হাই মাই লাভ “”। আমরিন সাথে সাথে কেঁপে উঠল। পিছন ফিরে দেখে আহিল মুচকি হাসছে। আনন্দে আত্মহারা হয়ে আমরিন লাফিয়ে আহিলকে জড়িয়ে ধরল।)

ওয়াসিমঃঃ- এক্সকিউজ মি ম্যাডাম আজ কিন্তু আমাদেরও রিলেশন এনিভার্সারি। (সিমাকে বলল)

সিমাঃঃ- (সেও ঝাপিয়ে পড়ল ওয়াসিমের বুকে) কিভাবে ভুলতে পারি সেটা। কত মিস করছিলাম তোমাকে।

ইয়াশঃঃ- আহারে আমাদের কেউ মিস করে না।

মেহেরঃঃ- এই আমি মিস করছি তোমাকে। (বলেই হালকা জিব বের করে কামড় খেল।)

পুষ্পও রিহানকে জড়িয়ে ধরল। আলিফা আরিফের দিকে এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে। তারও খুব ইচ্ছে করছে এভাবে আরিফকে জড়িয়ে ধরতে। কিন্তু পারছে না। হঠাৎ তার খুব কান্না পাচ্ছে। তাই ওয়াশরুমে যাবে বলে চলে গেল। আফরান নূরের দিকে তাকিয়ে দেখে নূর চুপচাপ মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। একটি বার আফরানের দিকে ফিরেও তাকাচ্ছে না। এমনিতে কত কথা বলত, ঝগড়া করত, দুষ্টুমি করত। আফরান সেগুলো খুব মিস করছিল। আহিলের একবার বলাতেই সে রাজি হয়ে যায়। ফেয়ারওয়েল পার্টির পর থেকে আজ তাদের দেখা হলো। আহিল ওয়াসিম রিহান তারা মাঝে মাঝে ডেইটে যেত। আমরিন সিমা পুষ্পর সাথে দেখা করত। ইয়াশও মাঝে মাঝে ভিডিও কলে মেহেরের সাথে কথা বলত। আরিফ আর আফরানের সাথে তাদের যোগাযোগ সম্পূর্ণ বন্ধ ছিল।

আফরানঃঃ- (খুব ইচ্ছে করছে তোমার আওয়াজ শোনার। কিছু তো একটা বল। প্রতিটি মুহূর্ত শুধু তোমার কথায় ভাবতাম। মাঝে মাঝে অফিসে যাওয়ার সময় সবার আড়াল হয়ে এই পথ দিয়ে যেতাম যাতে একটি বারের জন্য হলেও তোমাকে দেখি। কখনো দেখা হতো কখনো হতো না। কিন্তু তোমার সামনে আসার সাহস হয়নি। সামনে আসলেই বা কি বলতাম। আমি নিজেও জানি না কেন বারবার তোমার কাছে ছুটে আসি। জানি না আমি। সেই প্রশ্নের উত্তর আমার কাছে নেই।)

নূরঃঃ- (কেন এসেছেন উনি? ঢং করতে? এতদিন তো আসেনি। এখন আসছেন ঢং দেখাতে।)

নূরের মনে হাজারো অভিমান জমে আছে। কিন্তু কেন এত অভিমান? কোন অধিকারে এই অভিমান খাটাচ্ছে। শুনেছি অভিমান শুধু আপন মানুষের সাথেই হয়। তাহলে নূর কেন আফরানের উপর অভিমান করে আছে। কিসের অধিকারে? তা অজানা নূরের কাছে।

নূর মাথা নিচু দাঁড়িয়ে আছে। হঠাৎ কেউ একজন দৌড়ে এসে নূরকে জড়িয়ে ধরল। তাল সামলাতে না পেরে দু পা পিছিয়ে যায়। মেয়েটি তাকে জড়িয়ে ধরে এদিক ওদিক হেলছে।

—নূরিইইইই। কতদিন পর পেলাম তোকে। কত্তো মিস করেছি তোকে।

হঠাৎ এসে জড়িয়ে ধরায় কেউ তার চেহারা দেখতে পেল না। নূরকে ছেড়ে দিল।

—এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন? ভুলে গিয়েছিস আমাকে? হাই স্কুলে একসাথে পড়েছিলাম। আরে আমি মায়মুনা।

নূরঃঃ- মায়মুনা? যে আমার সাথে সবসময় ঝগড়া করত। বেঞ্চ নিয়ে।

মায়মুনাঃঃ- হ্যাঁ! ফ্যানের নিচে বসার জন্য দুজনে কত ঝগড়া করেছিলাম। অবশেষে একদিন আমাদের বন্ধুত্ব হয়েছিল।

আফরানঃঃ- (অবাক হয়ে তাদের কান্ড দেখছিল) মায়মুনা? তুই এখানে কি করছিস?

মায়মুনাঃঃ- আফরান ভাই? তুমি?

নূরঃঃ- আপনারা একে অপরকে চেনেন?

আফরানঃঃ- মায়মুনা আমার ফুফাতো বোন। সাত বছর আগে আমেরিকায় পড়াশোনার জন্য গিয়েছিল। আর আজ দেখলাম। কিন্তু তুই এখানে কিভাবে? তোর না এক মাস পর এনগেজমেন্ট।

মায়মুনাঃঃ- ও আসলে আমি তার সাথে দেখা করতে এসেছি।

আফরানঃঃ- কার সাথে?

মায়মুনাঃঃ- যার সাথে আমার বাগদান হবে।

.
.
.

চলবে

.
.

বিঃদ্রঃ ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। এই পার্ট নিয়ে অন্য কিছু চিন্তা করছিলাম। কিছু ফান পার্ট। কিন্তু মন ভালো নেই যার কারণে ফানি পার্টগুলো লিখতে ইচ্ছে করছে না। দুঃখিত এতদিন অপেক্ষা করালাম।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here