? Ragging To Loving ?
Part:: 34
Writer:: Ridhira Noor
আফরানঃঃ- সত্যিই সময় আর স্রোত থেমে থাকে না। ছুটে চলে নিজ গতিতে। মনে হচ্ছে যেন কালই তো ভার্সিটিতে ভর্তি হয়েছিলাম। এখন দেখ কিছু দিন পরেই নাকি আমাদের ফেয়ারওয়েল। হাজারো স্মৃতি জুড়ে আছে আমাদের।
আরিফঃঃ- সত্যি ইয়ার। কিভাবে সময় পেরিয়ে গেল বুঝতেই পারিনি। ভার্সিটি লাইফ শেষে সবাই আলাদা হয়ে যাব। নিজ নিজ ক্যারিয়ার নিয়ে সবাই ব্যস্ত হয়ে পড়ব।
রিহানঃঃ- কিন্তু আমাদের বন্ধুত্ব কখনো শেষ হবে না। প্রত্যেক মাসেই অন্তত একদিন সব বন্ধুরা একত্রিত হব। যে যতই ব্যস্ত হোক না কেন আসতে হবেই। যে আসবে না তাকে তুলে আনব।
আহিলঃঃ- তুই আফরান আর আরিফ ইয়াশ তো একসাথে থাকবি। আলাদা হয়ে যাব আমি আর ওয়াসিম।
আফরানঃঃ- কিসের আলাদা? থাপ্পড় দিব ধরে। আমরা বন্ধুরা ছোট বেলা থেকেই একসাথে। কখনো কি আলাদা হয়েছি? হ্যাঁ হয়তো আগের মতো আড্ডা দেওয়া হবে না। কিন্তু মাঝে মধ্যে তো সবাই মিলিত হতে পারি। স্মৃতি জুড়ে থাকবে একসাথে কাটানো দিনগুলো।
সবাই একসাথে হাগ করল।
ইয়াশঃঃ- খুব মিস করব সবাইকে।
পলক ফেলতেই সময় কেটে গেল। সময়ের পরিবর্তন হলেও পরিবর্তন হয়নি তাদের সম্পর্কের। আগামী সপ্তাহে আফরানদের ফেয়ারওয়েল পার্টি। ভার্সিটির বিশেষত্ব হলো প্রতি বছর ভিন্ন ভিন্ন থীম পার্টি আয়োজন করা হয়। হেলোয়িন থীম (ভূতের সাজ), ফ্যান্টাসি থীম, মাস্ক থীম। প্রতি বছর ভিন্ন ভিন্ন থীম পার্টি হয়। আর এবার হবে বলিউড কাপল থীম। অর্থাৎ বলিউডের আইকনিক কাপল সাজে পার্টিতে অংশগ্রহণ করতে হবে। (সেটা সামনে বুঝতে পারবেন)
পার্টির থীম বুঝিয়ে দিতে সবাইকে একত্রিত করা হলো। এনাউন্সমেন্ট করার জন্য নিহাল স্যার এগিয়ে এলো।
স্যারঃঃ- সবাই জানেন এবার আমাদের ফেয়ারওয়েল পার্টির থীম হলো বলিউড। কিন্তু এটা হবে কাপল থীম। আমি বুঝতে পারছি আপনাদের মনে অনেক প্রশ্ন ঘুরছে। নিয়মটা আমি বলছি। (তিনটা বড় কাঁচের বাক্স। একটার মধ্যে অনেক গুলো গোলাপি রঙের চিটস। আরেকটার মধ্যে আকাশি রঙের চিটস। অন্যটার মধ্যে হলুদ রঙের চিটস) আমার কাছে এই তিনটা বাক্স আছে। হলুদ বাক্সের মধ্যে কিছু বলিউড ফিল্মের নাম আছে। আর বাকি দুই বাক্সে সেই ফিল্মের কাপলের নাম। গোলাপিটাতে অভিনেত্রীর আর আকাশিটাতে অভিনেতার নাম। (হলুদ একটা চিটস নিল) আমি এই একটা ফিল্মের নামের চিটস নিলাম। ফিল্ম “দেবদাস” গোলাপি বাক্সে সেই ফিল্মের অভিনেত্রী “পারো” অর্থাৎ “ঐশ্বর্য রায়” আর আকাশি বাক্সে অভিনেতা “দেব” অর্থাৎ “শাহ রুক খান” এর নাম আছে। মেয়েরা গোলাপি বাক্সের মধ্য থেকে একটি করে চিটস নিবে আর ছেলেরা আকাশি বাক্সের মধ্য থেকে একটি করে চিটস নিবে। কিন্তু কার চিটসে কোন অভিনেতা অভিনেত্রীর নাম আছে তা বলা যাবে না। এটা একটা সারপ্রাইজ থীম। বলে দিলে কিন্তু পার্টির মজা থাকবে না। পার্টির মেইন পার্ট হলো হলুদ চিটস থেকে এক এক করে প্রত্যেক ফিল্মের নাম বলা হবে। আর সেই ফিল্মের অভিনেতা অভিনেত্রীর নাম যাদের কাছে থাকবে তাদের সেই ফিল্মের গানে পারফর্ম করতে হবে। কোন গানে পারফর্ম করবে তার চিটসের নিচে লেখা থাকবে। তাই যারা সেই অভিনেতা অভিনেত্রীর নাম পাবে সেই অনুযায়ী সেজে আসতে হবে। আশা করি বুঝতে পেরেছেন।
সবাই অনেক কৌতুহল এই পার্টি নিয়ে। একে একে সব মেয়েরা গোলাপি চিটস নিল আর ছেলেরা আকাশি চিটস নিল। হলুদ চিটস স্যার নিয়ে গেল।
মেহেরঃঃ- আয়ায়া (খুশিতে লাফিয়ে উঠল) বলিউড থীম। ইন্টারেস্টিং মনে হচ্ছে থীমটা।
আমরিনঃঃ- আমার তো আর তর সইছে না। ইচ্ছে করছে আজকেই পার্টিটা করে ফেলি। তোরটা কোন অভিনেত্রী রে?
নূরঃঃ- ওই মজা সব মাটি করবি নাকি? বলে দিলে আর মজা হবে না। সিক্রেট রাখ।
আমরিনঃঃ- ওকে। আই এম রিয়েলি এক্সাইটেড ফর দ্যা পার্টি।
আহিলঃঃ- হাই গাইজ। আই হেভ এন আইডিয়া।
আমরিনঃঃ- কি আইডিয়া?
আহিলঃঃ- কেননা আমরা মিলে একে অপরের চিটস দেখি আর নিজেদের কাপল অনুযায়ী চিটস এক্সচেঞ্জ করে নেই।
নূরঃঃ- নো নেভার কাবি নেহি। রুলস যা আছে তাই হবে। কেউ যদি চিটিং কর আমি কিন্তু পার্টিসিপ্যাট করব না।
আহিলঃঃ- ওকে মেরি বেহনা। নো চিটিং।
নূরঃঃ- ভেরি গুড। এবার সবাই যে যার থীম অনুযায়ী কস্টিউম যোগাড় কর। আমার…. এই না না বলব না। জিপ লক। (মুখে চেইন লাগানোর ভাব নিল)
তার কান্ড দেখে সবাই হেসে দিল।
পার্টির আগের দিন______________________
সিমাঃঃ- ওই ফকিন্নিস। সবার কস্টিউম তো রেডি। বাট আই হেভ এ ভেরি ভেরি গভীর প্রশ্ন।
নূরঃঃ- ওই গভীরে ডুবে মরে যা।
সিমাঃঃ- চুপ কর। আমার প্রশ্ন হলো থীম তো সিক্রেট। কিন্তু আমি ভাবছি আমাদের পার্টনার যদি অন্য কারো সাথে এক্সচেঞ্জ হয়ে যায় আর তাদের ফিল্মের গান যদি রোমান্টিক হয়? ওয়াসিম যদি অন্য কারো সাথে রোমেন্স করে ওর ভর্তা বানাবো।
আমরিনঃঃ- আমি আহিলের চাটনি বানানো।
পুষ্পঃঃ- আমি রিহানের জুস বানাবো।
আলিফাঃঃ- আমরা সেগুলো চেটে চেটে খাব।
মেহের নূর হেসে দিল।
_______________________________
অবশেষে অপেক্ষার প্রহর শেষ হলো। চলে এলো ফেয়ারওয়েল পার্টির দিন। সবাই নিজ নিজ চিটস অনুযায়ী গেটআপ নিয়ে এলো। পার্টি ভার্সিটির হল রুমে আয়োজন করা হলো। হলটি বিশাল বড়। সব দিকে সুন্দর করে সাজানো হয়েছে। পুরো হল আবছা অন্ধকার। শুধু বিভিন্ন রঙের ডিস্কো লাইট জ্বালানো হয়েছে। সবাইকে ভীষণ সুন্দর লাগছে। একেকটাকে দেখে বলিউড নায়ক নায়িকার মতো লাগছে। সবাই নিজ নিজ চরিত্র অনুযায়ী সেজে এলো।
আহিল রাজকুমারের মতো শেরওয়ানি পরল। মাথায় পাগড়ি পরল। গলায় পুতির মালা। ওয়াসিম ধূসর নীল রঙের ঢিলা শার্ট আর প্যান্ট পরল। রিহান ধূসর সবুজ রঙের কোট আর কালো প্যান্ট পরল। আরিফ সাদা শার্ট, কালো কোট আর কালো প্যান্ট পরল। মাথায় কালো টুপি, মুখে একটুখানি মুছ । হাতে কালো ছাতা। ইয়াশ সাদা শার্ট, সাদা কোট আর সাদা প্যান্ট পরল। আফরান কালো প্যান্ট, কালো শার্টের সাথে হাত কাটা কোট পরা। তার উপর কালো লাল সাদা রঙ মিশ্রিত চেক কোট পরল।
আহিলঃঃ- এটা কি রে ইয়ার। আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে। সবারটা কত সুন্দর। আমারটা এমন কেন?
ওয়াসিমঃঃ- ওরে আমার রাজকুমার রে। জোস লাগছে তোকে।
আহিলঃঃ- চুপ কর। আমার অস্বস্তি লাগছে। উফফ এই….. (চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে প্রবেশ দুয়ারে। চোখ তো নয় যেন রসগোল্লা। দেখে মনে হচ্ছে এক্ষুণি গড়িয়ে পড়বে)
আহিলকে এমন দেখে বাকিরাও সেই দিকে তাকাল। তারাও হা হয়ে তাকিয়ে আছে। কারণ এন্ট্রি নিল আমাদের ডিনচেক গার্লস।
আমরিন পাহাড়ি মেয়েদের মতো সেজেছে। সিমা গোল আনারকলি পরল মাথায় আনারকলির টুপির মতো পরেছে। মেহের নীল শাড়ি পরেছে। দেখতে একদম মাধুরির মতো লাগছে। আলিফা কালো পাড়ের সাদা শাড়ি পরল। একপাশে লম্বা বেনি করা। পুষ্প বিভিন্ন রঙের সুতার কাজ করা লং স্কার্ট পরল। একপাশে কোপা করে চুল ছাড়া।
আহিল ওয়াসিম রিহান আরিফ ইয়াশ হা হয়ে তাকিয়ে আছে। তারা যেন অন্য রূপ দেখছে ওদের। সবাইকে ভীষণ সুন্দর লাগছে। একেকটা যেন বলিউড হিরোইন। কিন্তু আফরানের চোখ খুঁজছে অন্য কাউকে। জ্বি নূরকেই খুঁজছে।
রিহানঃঃ- পুষ্পকে “শোলে” ফিল্মের বসন্তির মতো লাগছে। (একবার নিজের দিকে তাকাল। তারপর ওয়াসিমের দিকে তাকাল। কারণ ওয়াসিমের সাজ বীরুর।)
ওয়াসিমঃঃ- সিমাকে আনারকলির মতো লাগছে। (আহিলের দিকে তাকাল। কারণ তার সাজ সেলিমের)
আহিলঃঃ- আমরিনকে দেখ শর্মিলা ঠাকুরের মতো লাগছে না। “কাশ্মীর কি কালি” মুভির। (ওয়াসিমের দিকে তাকিয়ে দেখে তার সাজ শাম্মি কপুরের মতো)
তিনজন একে অপরের দিকে তাকাল। তিনজনই এক দৌড়ে ওয়াশরুমের দিকে গেল। আরিফ ইয়াশ আফরান শুধু অবাক হয়ে তাদের দিকে তাকিয়ে আছে। পাঁচ মিনিট পর এলো তারা। কিন্তু এই কি সবার গেটআপ চেঞ্জ হয়ে গেল। ওয়াসিম হলো সেলিম, আহিল হলো শাম্মি কপুর, রিহান হলো ধর্মেন্দ্র।
আহিলঃঃ- ভাগ্যিস তারা দেখার আগেই চেঞ্জ করে ফেললাম। নূর যদি জানতে পারত তাহলে আমাদের মজাই মাটি হয়ে যেত।
রিহানঃঃ- হ্যাঁ! আর আমাদের একে অন্যের গার্লফ্রেন্ডের সাথে পারফর্ম করতে হতো।
মেহেরঃঃ- ও এম জি। হোয়াট কোইন্সিডেন্ড। সব কাপলদের দেখি একই আসলো। পুষ্প বাসান্তি আর রিহান বীরু। সিমা আনারকলি আর ওয়াসিম সেলিম। আমরিন শর্মিলা ঠাকুর আর আহিল শাম্মি কপুর।
পুষ্পঃঃ- তুই মাধুরি আর ইয়াশ সালমান খান। আলিফা নার্গিস আর আরিফ রাজ কপুর।
সবাই আসলেই অবাক। আলিফা তো সেই লেভের খুশি। কারণ সে আরিফের সাথে পারফর্ম করবে। সবাই নিজেদের মধ্যেই এতই হারিয়ে গিয়েছে যে নূরের খেয়াল নেই। আফরান বারবার নূরকেই খুঁজছে কিন্তু মুখ ফুটে বলতে পারছে না যে নূর কোথায়? তখনই স্টেজে এনাউন্সমেন্ট করার জন্য নিহাল স্যার এলো। তাকে দেখে “মোহাব্বাতে” মুভির অমিতাভ বচ্চনের মতো লাগছে।
স্যারঃঃ- সবাইকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা। আমাদের ফাইনাল ইয়ার স্টুডেন্টদের আজ বিদায় অনুষ্ঠান। সে উপলক্ষে আজ এই ফেয়ারওয়েল পার্টির আয়োজন। সবাই নিজ নিজ চরিত্র অনুযায়ী সেজে এনেছেন। সবাইকে ভীষণ সুন্দর লাগছে। এবার হয়তো বুঝতে পেরেছেন কার চরিত্র কি? তো শুরু করা যাক আজকের আয়োজন। (স্যার হলুদ চিটসের বাক্সটা হাতে নিল) এবার আমি একটা একটা করে মুভির নাম বলব। সেই মুভির চরিত্র যারা পেয়েছেন তারা স্টেজে এসে পারফর্ম করবেন। (একটা হলুদ চিটস নিল) আমাদের প্রথম মুভি হলো “Mr. India”. এই মুভির চরিত্র শ্রীদেবী আর অনিল কপুর।
স্টেজে এলো পান্না। শ্রীদেবীর হাওয়া হাওয়াই সাজে। তার সাথে একজন ছেলে মি. ইন্ডিয়া সাজে এলো।
♪♪♪ ওই ওই ওই ওই
লাকি চিকি লাকি চিকি চিকি লাকি চুম…(২)
হো মে খোয়াবো কি শেহজাদী
মে হু হার দিলপে চায়ি
বাদাল হে মেরি ঝুলফে
বিজলী মেরি আংড়ায়ি
বিজলী গিরানে মে হু আয়ি…. (২)
কেহতে মুঝকো হাওয়া হাওয়াই ♪♪♪
সবাই হাত তালি দিল। পান্না অনেক সুন্দরী। তার এই পারফর্মেন্স দেখে অনেকে ফিদা হয়ে গেল। একে একে সবার পারফর্ম হতে লাগলো। সবাই বেশ ভালো পারফর্ম করেছে।
স্যারঃঃ- “Shree 420” ফিল্মের চরিত্র রাজ কপুর এবং নার্গিস।
আরিফ একটা গোলাপ নিয়ে আলিফার সামনে হাটু গেড়ে বসল। আলিফা গোলাপটা নিতে গিয়েও থেমে যায়। অন্য পাশ ফিরে যেতে নিলে আরিফ উঠে সামনে এসে দাঁড়ায়। তখন উপর থেকে আইস ফোম পড়তে লাগলো। আরিফ ছাতা খুলে আলিফা মাথার উপর ধরল।
♪♪♪ আরিফ—- পিয়ার হুয়া ইখরার হুয়া হে
পিয়ার সে ফির কিয়ু ডারতা হে দিল….(২)
আলিফা—- কেহতা হে দিল রাস্তা মুশকিল
মালুম নেহি হে কাহা মাঞ্জিল…… (২) ♪♪♪
(((বাকিটা নিজ দায়িত্বে শুনে নিয়েন)))
গানের মাঝে আমাদের ক্রাশখোর আলু দ্যা আলিফা তার মনের কথা বলল। কিন্তু আমাদের আবুইল্লা আরিফ ভাই বুঝল না।
স্যারঃঃ- “Kashmir ki kali” চরিত্র শাম্মি কপুর এবং শর্মিলা ঠাকুর।
স্টেজে উঠে আমরিন হেটে যাচ্ছিল অপর পাশ থেকে আহিল আসছিল। দুজনেই ধাক্কা খায়। আমরিম পড়ে যেতে আহিল ধরে ফেলে। তার চোখের দিকে তাকিয়ে থাকে। আমরিন সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে যায়। আহিল তার চারপাশে ঘুরে দেখল।
♪♪♪ ইয়ে চান্দ সা রোশান চেহরা
জুলফো কা রাং সুনেহরা
ইয়ে ঝিল সি নীলি আঁখে
কই রাজ হে ইনমে গেহরা
তারিফ কারু কিয়া উসকি জিসনে তুমহে বানায়া ♪♪♪
দুজনে মিলে নাচ শেষ করল। আহিল গানটা আমরিনকে উৎসর্গ করে গাইলো। আমরিন তো লজ্জায় পুরো লাল গোলাপি হয়ে গেল।
স্যারঃঃ- “Hum apke hai kon” মাধুরি এবং সালমান খান।
ইয়াশ পার্টির সব মূহুর্ত ক্যামেরায় তুলছিল। যার কারণে এনাউন্সমেন্ট শুনে নি। সেখানে সব মেয়েরা তার কাছে এলো ছবি তুলতে।
স্টেজে উঠে মেহের গুলতি দিয়ে একটা গাঁদাফুল মারল। সেটা গিয়ে পড়ল ইয়াশের মুখে। ইয়াশ তাকিয়ে দেখে মেহের স্টেজ থেকে হাসছে। ইয়াশ দৌড়ে এসে এক লাফে স্টেজে উঠে গেল। কোমরে হাত দিয়ে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। মেহের ইয়াশের পাশে গিয়ে কোমরে ধাক্কা দিতে ইয়াশ পড়ে যায়।
♪♪♪ দিদি তেরা দেভার দিওয়ানা …….
………. হায় রাম কুড়িও কো ডালে দানা ♪♪♪
নাচের মাধ্যমে দুজনেই একটু আধটু দুষ্টুমি খুনসুটি করল। একে অপরের অনেক ভালো বন্ধু হওয়ায় অনায়াসে দুষ্টুমি করল।
স্যারঃঃ- “Sholay” হেমা মালিনী এবং ধর্মেন্দ্র।
রিহানের হাত স্টেজের সাথে বাঁধা। যেমনটা বীরুর বাঁধা ছিল ফিল্মে যখন গাব্বার বীরুকে কিডন্যাপ করে৷ পুষ্প অভার এক্টিং করে দৌড়ে স্টেজে উঠল।
রিহানঃঃ- বাসান্তি ইন কুত্তো কে সামনে মাত নাচ না। (স্টেজে পাশে নিচে দাঁড়িয়ে থাকা তার বন্ধুদের ইয়াশারা করে বলল।)
ওয়াসিমঃঃ- হারামি আমাদের কুত্তা বলছে। দাঁড়া তুই আয় নিচে। এই কুত্তা গুলো যদি কামড়িয়ে তোরে ১৪ টা ইঞ্জেকশন না লাগায় দেখবি।
পুষ্প তার জামা ধরে মুচড়া মুচড়ি করছে। আর সেখানে উপস্থিত সবাই চিল্লাচ্ছে। “নাচ বাসান্তি নাচ,,, নাচ বাসান্তি নাচ ”
রিহানঃঃ- বাসান্তি মাত নাচ না…..
পুষ্পঃঃ- (দৌড়ে রিহানের কাছে গেল) ওওওও জাব থাক হে জান জানে জাহা……..
মে ওয়েছে ভি নেহি নাচনে ওয়ালি। স্টেজে উঠতে গিয়ে উস্টা খাইছি। পায়ে ব্যাথা হুহ্। (ভেঙচি কেটে চলে গেল)
রিহানঃঃ- (তেমন বাঁধা অবস্থায় চিল্লাচ্ছে) বাসান্তিইই ও মেরি বাসান্তি আরে নেচে যা। নইলে গাব্বার আমাকে ছাড়বে না।
সবার হাসতে হাসতে অবস্থা খারাপ।
আহিলঃঃ- ভাগ্যিস শোলে ফিল্মে বাসান্তি পুষ্প ছিল না। নইলে বীরুকে বাঁচানো যেত না।
স্যারঃঃ- “Mughal E Azam” চরিত্র দিলিপ কুমার এবং মধুবালা।
স্টেজে ওয়াসিম একটি সিংহাসনে বসে আছে। সিমা মাঝ বরাবর দাঁড়াল। মিউজিক শুরু করল। ♪♪♪ পিয়ার কিয়া তো ডারনা কিয়া…..
সিমাঃঃ- স্টটটপপপপ। ও ডিজে ওয়ালে বাবু কি গান দিচ্ছেন। আরে এটা সেই মোঘল আমলের যুগ না। যে আনারকলি সেলিমকে না পেলে লুকিয়ে লুকিয়ে কাঁদবে। এটা আধুনিক যুগ। এখানে আনারকলি সেলিমকে না পেলে তার গলি ছেড়ে ডিস্কো যায়। আর ব্রেকআপ সং এ নাচে। তাই আধুনিক যুগের গান দেন।
তার কথা শুনে সবাই ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেল। ডিজে গান দিল।
♪♪♪ আরে ছোড় ছাড়কে আপনে সেলিম কি গালি………..
ওই হই আরে ছোড় ছাড়কে আপনে সেলিম কি গালি
আনারকলি ডিস্কো চালি…….
(((সিমা স্টেজে থেকে নামতে গেলে ওয়াসিম দৌড়ে গিয়ে পিছন থেকে হাত ধরে টেনে নিয়ে এলো)))
ওয়াসিম—– দেখকে তুজকো দিল মে মাচি হে খালবালি আনারকলি ডিস্কো চালি….
সিমা—- চালি রে চালি ডিস্কো চালি আনারকলি ডিস্কো চালি চালি রে চালি…..
(((সিমা বারবার নেমে যেতে চাইছে ওয়াসিম টেনে ধরে রাখছে। গান শেষে ওয়াসিম সিমাকে টেনে কোলে নিয়ে নিল।)))
ওয়াসিমঃঃ- আমার এই আনারকলি ডিস্কো না যাবে তার শ্বশুর বাড়ি। তার ওয়াসিমের বাড়ি। (কানে কানে বলল)
সিমা লজ্জায় শেষ। তারা স্টেজ থেকে নেমে এলো। সবাই তো হাসছে। ওইদিকে আফরানরাও হাসছে।
আহিলঃঃ- সব বান্ধবী দেখি একই ঘাটের মাঝি। (পাশে তাকিয়ে দেখে আমরিন ধারালো দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে) বাট অনেক কিউট।
অনুষ্ঠান অর্ধেকের বেশি শেষ। কিন্তু নূরের কোন খুবর নেই। আফরান আর না পেরে জিজ্ঞেস করেই নিল।
আফরানঃঃ- নূর কোথায়?
পুষ্পঃঃ- এই রে আমরা আমাদের মধ্যেই হারিয়ে গেলাম। নূর যে গেল এখনো এলো না।
আফরানঃঃ- কোথায় গেল?
আমরিনঃঃ- নূর………
স্যারঃঃ- “Om Shanti Om” চরিত্র দীপিকা এবং শাহ রুখ খান।
পুরো হল রুমে আবছা অন্ধকার। বিভিন্ন রঙের ডিস্কো লাইট জ্বলছে। আর শুধু স্টেজে লাইট জ্বলছে। প্রবেশ পথের দিকে ধুম করে আওয়াজ হলো।
নূরঃঃ- ও মা গো। কোন খাচ্চোর আবুইল্লা প্রবেশ পথে এগুলো রাখলো রে। আমার কোমর তো গেল। আম্মুরেএএএ।
নূরের আওয়াজে সাথে সাথে সেইদিকে লাইম লাইট দিল। নূর কোমর ধরে নিচে বসে আছে। লাইট অন হওয়ায় উঠে হাত ঝাড়ছে আর জামা ঠিক করছে। নূর পরনে দীপিকার সেই ম্যাজেন্টা রঙের জামা। চুল কোপা করা। একদম হালকা সাজ। সাজ বলতে চোখে টানা আইলাইনার, ঠোঁটে হালকা গোলাপি লিপস্টিক। হালকা সাজেই অসাধারণ লাগছে তাকে। আফরান বুকের বাপাশে হাত দিয়ে রোমান্টিক হাসি দিল। আনমনে মুখ ফসকে বেরিয়ে গেল “হায়…….”। নূর জামা ঠিক করে মাথা উঠিয়ে দেখে সবাই হা হয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছে। চোখ বুলিয়ে চারপাশে তাকাল। সবাই তার দিকে একইভাবে হা হয়ে তাকিয়ে আছে। একবার নিজেকে ভালো করে যাচাই করে দেখল। মনে মনে বলতে লাগলো।
নূরঃঃ- (আমাকে কি দেখতে বেশি খারাপ লাগছে? সবাই কিভাবে তাকিয়ে আছে। মনে হচ্ছে যেন ভুত দেখেছে। আমি তন্বিকে আগেই বলেছিলাম আমাকে না সাজাতে তাও জোর করে সাজালো। নূর নিজের ইজ্জতের ফালুদা করতে না চাইলে পালায়ায়ায়া…..)
উল্টো ফিরে দৌড় দিল। একটু এগিয়ে যেতে ওড়নায় টান অনুভব করে। থেমে পিছনে তাকিয়ে দেখে আফরান।
(পাঠকগণ একটু ব্রেক লাগান। কি ভেবেছেন দীপিকার ওড়না যেমন শাহ রুখ খানের ঘড়িতে আটকে ছিল নূরের ওড়নাও সেভাবে আফরানের ঘড়িতে আটকালো। জ্বি না। নূর যখন চলে যাচ্ছিল আফরান দৌড়ে এসে পিছন থেকে তার ওড়না টেনে ধরে। এবার গল্প পড়া কন্টিনিউ করেন।)
মিউজিক শুরু হলো।
♪♪♪আঁখো মে তেরি আজাব সি আজাব সি আদায়ে হে……(২)
দিল কো বানাদে যো পাতাং সান্সে ইয়ে তেরি ও হাওয়ায়ে হে…….. ♪♪♪
(((নূর আফরান মুখোমুখি হয়ে দাঁড়ালো। নূর খুব একটা মেকআপ করেনি। শুধু টানা আইলার দিল। যার কারণে চোখ দুটো অসম্ভব সুন্দর লাগছে। তার চোখের ডান পাশের তিলটাও স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। যার ফলে চোখ দুটো আরো আকর্ষণীয় লাগছে আফরানের কাছে। আশেপাশে কোন খেয়ালই নেই। শুধু একে অপরের চোখে তাকিয়ে আছে।)))
♪♪♪ আয়ে কেছি রাত হে যো বহুত খুশনাসিব হে
চাহে জিসে দূর সে দুনিয়া ও মেরে কারীব হে
কিতনা কুচ কেহনা হে ফির ভি হে দিল মে সাওয়াল কাহিন
সাপ্নো মে যো রোজ কাহা হে ভো ফির সে কাহু ইয়া নাহি♪♪♪
(((গানের লিরিক্সটা যেন আফরানের মনের না বলা কথা গুলোই বলছে।)))
নূরঃঃ- থায়ায়ামমমমোওওওওও। (সাথে সাথে মিউজিক অফ হয়ে গেল।) আরে আমার ফেভারিট সিন চলে যাবে। যেখানে দীপিকা চুইংগাম দিয়ে বাবল ফুলাই। হায়…… আমার ফেভারিট সিন। এই সিনটা করার জন্য কত কাঠ পুড়িয়েছি। হুহ্। সব কিছু রেডি করে আসছি। মিউজিক প্লিজ। (আবারও গান শুরু হলো। সবার নজর এখন নূরের উপর।)
♪♪♪♪♪♪♪♪♪ আঁখো মে তেরি……..
(((নূর একটা লাল রঙের বার্থডে বেলুন বের করে মুখে দিয়ে ফুহহহ দিচ্ছে। আফরান ড্যাবড্যাব করে তার দিকে তাকিয়ে আছে। শুধু আফরান না উপস্থিত সবাই তাকিয়ে আছে ড্যাবড্যাব করে। যতই ফুহ্ দিচ্ছে বেলুনটা ততই বড় হচ্ছে। বেলুন ফুলতে ফুলতে এত বড় হয়েছে যে অপর পাশে নূরের চেহারা দেখা যাচ্ছে না। অবশেষে ফুড়ুৎ করে বেলুন উড়ে গেল। বেলুন যে দিকে যাচ্ছে সবাই সেদিকে তাকিয়ে আছে। বেলুনের হাওয়া ফুস হয়ে পড়ল। পড়ল তো পড়ল একেবারে পান্নার মাথার উপর। মেয়েরা মাথায় টিকলি দিলে যেমন হয় বেলুনটা পান্নার মাথায় ঠিক সেভাবে পড়ল। অনেক্ষণ নিরব ছিল পরিবেশ। নিরবতা ভেঙে হাসির রোল পড়ে গেল পুরো হল রুমে। পান্না তো আফরান আর নূরকে এত কাছে দেখে আগে থেকেই রাগে ফুঁসছিল। এখন এমন হওয়ায় আরো রেগে গেল। মাথা থেকে বেলুনটা নিয়ে মেঝেতে ছুড়ে মেরে বাইরে চলে গেল।
সবাই খুব জোরে জোরে হাসছে। নূরও এক ভেটকানি মার্কা হাসি দিল।
নূরঃঃ- কি করব বলেন? এটা আমার ফেভারিট সিন। এই পুরো এক সপ্তাহ ধরে মনে হয় হাজারটা চুইংগাম খেয়ে বাবল ফুলানোর চেষ্টা করেছি। কিন্তু হয়ই না। তাই খুরাফাতি দিমাগে এই তুফানি আইডিয়া বের করি। আর এখন আসার সময় সব দোকানে খুঁজে অবশেষে একটা দোকানে এই বেলুন পেলাম। তা নিয়ে আসি।
ঘটনার আচমকাই আফরান যেন এক অজানা ঘোরে চলে গেল। পাথর হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এইমাত্র কি হলো সব তার মাথার উপর দিয়ে গেল। যখন বুঝতে পারল হাসতে হাসতে পেট ধরে মেঝেতে বসে পড়ল। বসে পড়ল বললে ভুল হবে শুয়েই পড়ল। এপাশ ওপাশ হয়ে গড়াগড়ি খাচ্ছে। নূর আড়চোখে ধারালো দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার দিকে। যেন তার হাসিতে নূরের কিছু যায় আসে না। আফরানের হাসি যেন থামছেই না। নূর রেগে কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেল তার হাসি দেখে। মন খুলে হাসছে সে। খুব কমই আফরানকে মন খুলে হাসতে দেখা যায়। আর তার হাসির কারণ সবসময় নূরই হয়ে থাকে। তাই তো তার নাম দিল #আনন্দিতা।
.
.
.
চলবে