Ragging To Loving ? Part:: 28

0
910

? Ragging To Loving ?
Part:: 28
Writer:: Ridhira Noor

আলিফা টেবিলের উপর কুনুই রেখে গালে হাত দিয়ে আনমনে চিন্তা করছে আর মুচকি হাসছে। অনুভূতিগুলো সত্যি অদ্ভুত কখন কার প্রতি অনুভবে আসক্ত হয়ে যায় জানেই না। আলিফাও হয়তো এই অনুভবে আসক্ত হয়ে পড়ছে। মেহের অনেক খুশি ইয়াশের সাথে বন্ধুত্ব করে। ইয়াশ অতটা খারাপ না। শুধু শুধুই এতদিন ঝগড়া করেছে চিন্তা করছে মেহের। আমার সেই কান ধরে উঠবস করা নিয়ে হাসছে। সিমা আমরিন তাদের লাভ বার্ডসের কথা চিন্তা করছে। পুষ্প নূরের কথা চিন্তা করছে না জানি এখন কি অবস্থা তার।

স্যারঃঃ- এই যে কল্পনা জগতের রাজকন্যারা। আপনাদের কল্পনা করা শেষ হলো? (খোঁচা মেরে বলল কথাটা)

সবাই তড়িঘড়ি অপ্রস্তুত হয়ে বসল। অমনোযোগী হওয়ায় তারা কিছুটা লজ্জা পেল। সবাই একসাথে বলল “সরি স্যার।”

স্যারঃঃ- ক্লাসে অমনোযোগী হলে বেরিয়ে যাও ক্লাস থেকে। কল্পনা করা শেষ হলে তারপর এসো। (তারা মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। তখনই ক্লাস শেষের ঘন্টা পড়ল। দাঁত যতগুলো আছে সব বের করে দিল হাসি। স্যার বিরক্ত হয়ে চলে গেল। তারা বেরিয়ে এলো।)

আলিফাঃঃ- এক মিনিট। সবাই আছে কিন্তু নূর ফকিন্নিটা কই?

পুষ্পঃঃ- ও…ওর শরীর খারাপ তাই চলে গেল।

ওয়াসিমঃঃ- হাই গার্লস। কি মিটিং করছ? মিস খুরাফাতি কুইন কোথায়?

সিমাঃঃ- খুরাফাতি কুইন? জোস নাম। (হাসতে হাসতে বলল) আসলে ওর শরীর খারাপ তাই বাসায় চলে গেল। আপনাদের খুরাফাতি কিং মানে আফরান ভাইয়া কোথায়?

ওয়াসিমঃঃ- আশ্চর্য বিষয় আফরানও আজ ক্লাস না করে চলে গেল। এই খুরাফাতি কিং কুইন মিলে কোন নতুন খুরাফাতি কাহিনি করছে না তো?

আমরিনঃঃ- ডোন্ট নো।

পুষ্পঃঃ- (চুপচাপ তাদের কথা শুনছে। তাদের কি বলব নূর আর আফরানের কথা? আফরানের যাওয়াতে নূর যদি কোন রকম ঝামেলা করে। এই মেয়ে না জানি কি করে। টেনশনে আমার যায় যায় অবস্থা।)

আলিফা আরিফকে খুঁজছে। সবাই আছে কিন্তু সেই নেই। আশেপাশে উঁকি মেরে দেখছে। ভালবাসার মানুষটিকে দূর থেকে খোঁজার অনুভূতিটা অন্যরকম হয়। হঠাৎ দেখল আরিফের হাতে ক্যামেরা। তার সাথে কোন এক মেয়ে চিপকে আছে আর ক্যামেরায় কি যেন দেখছে। রেগে জ্বলে পুড়ে ছারখার হয়ে যাচ্ছে। নিজের আঙুল নিয়ে মুচড়া মুচড়ি করছে। ধারালো দৃষ্টিতে তাদের দিকে তাকিয়ে আছে। কিন্তু ইয়াশের চোখে তা এড়ালো না। একবার আলিফাকে একবার আরিফকে দেখছে।

ইয়াশঃঃ- (ইয়ে কোনছি খিচড়ি পাক রাহি হে। আলিফার মনে আরিফকে নিয়ে কি সামথিং সামথিং চলছে না কি?)

আলিফাঃঃ- (লুচ্চা কোথাকার। কেমন চিপকে আছে। ইচ্ছে তো করছে…. এই ক্যামেরায় দিয়েই দুইটার মাথা ফাটিয়ে দেয়।)

ইয়াশঃঃ- আরিফ এদিকে আয়। (হাত দিয়ে ইশারা করে ডাকল। আরিফ দ্রুত গতিতে চলে এলো। ইয়াশ একবার আড়চোখে আলিফার দিকে তাকাল। রাগ তার চেহারায় স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে।) তুই কি করছিলি ওইখানে?

আরিফঃঃ- আরে পান্না তো একজন মডেল। ওর কিছু ছবি তুলেছিলাম। ওর না কি একটা কনটেস্ট আছে। সেগুলোই দেখছিল।

আলিফাঃঃ- (জিহ্বে হালকা কামড় দিল। ধুরর আমি কি না কি ভাবছিলাম। নিজেই মাথায় হালকা থাপ্পড় দিয়ে মুচকি হাসলো।)

ইয়াশঃঃ- (আলিফাকে দেখে সেও হেসে দিল। তার মানে আমি ঠিক ছিলাম। আলিফার মনে কিছু আছে। এবার আমার এই নাছোড়বান্দা ভাইকে দেখতে হবে।)
_______________________________

আফরান ড্রাইভ করছে আর চিন্তা করছে। নিজেই নিজেকে দোষারোপ করছে নূরকে কষ্ট দেওয়ার জন্য। নূরের সেই অশ্রু মাখা ছলছল দৃষ্টি তার বুকে তীরের মতো ছুবছে। রাগে এক হাত দিয়ে নিজের চুল টানছে অন্য হাত দিয়ে ড্রাইভ করছে। অবশেষে পৌঁছে গেল গন্তব্যে। গাড়ি থেকে নেমে দেখে গেইটে লিখা শান্তি অনাথ আশ্রম। আফরান ভাবছে নূর হয়তো আপসেট হয়ে কোন এক কোণায় বসে আছে। সেও মর্মাহত হয়ে ভেতরে গেল। উরিম্মা গিয়ে তো সে চরম অবাক। মুখ খুলে হা হয়ে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে। নূর হেসে হেসে তাদের সাথে কানামাছি খেলছে। তার চোখ বাঁধা আশেপাশে অনেকগুলো ছোট বাচ্চারা ঘুরছে। নূর তাদের ধরার চেষ্টা করছে। ধরতে না পেরে ঠোঁট উল্টিয়ে কোমরে হাত দিয়ে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকে আবারও ধরার চেষ্টা করছে।

আফরানঃঃ- আসলেই এই মেয়েকে বোঝা মুশকিল। কখন কি করে হয়তো সে নিজেও জানে না। (আনমনে তার দিকে তাকিয়ে নিজেই মুচকি হাসছে। নূরকে দেখে ভীষণ হাসি খুশি লাগছে।) কে বলবে এই মেয়ে একটু আগে নাক টেনে কাঁদছিল।

আফরান নূরের সামনে গিয়ে দাঁড়াল। নূর পা মচকে পড়ে যেতে আফরান ধরে ফেলে। নূর কিছুটা আতঙ্কিত হয়ে পড়ল। চোখ বাঁধা অবস্থায় হাত দিয়ে তার পুরো শরীর পর্যবেক্ষণ করছে। কে ধরেছে তাকে।

নূরঃঃ- কোন ধামড়া রে এটা? (চোখ থেকে রুমাল খুলে দেখে আফরান তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। তাদের মধ্যে দূরত্ব একেবারে নেই বললেই চলে। অনেকটা কাছাকাছি দাঁড়িয়ে আছে। রাগে দুঃখে আফরানকে ঠেলে দূরে সরিয়ে দিল। রেগে কটমট করে বলল) আপনি এখানে কি করছেন? আপনাকে তো আগে কখনো এখানে দেখিনি। এখানে শুধু আমরাই আসি। কে বলল আপনাকে? (কিছুক্ষণ চিন্তা করল) ওয়েট আমার সাথে শুধু পুষ্পর দেখা হয়েছে। তার মানে সে বলল। কেন এসেছেন এখানে? আমাকে আরো কথা শোনাতে? আমার তো বিবেক নেই। বিবেক দান করতে এসেছেন বুঝি?

আফরানঃঃ- (এক হাত দিয়ে কাছে টেনে অন্য হাত মুখ চেপে ধরল) উফফ ননস্টপ খালি খিটখিট করে যাও। ভালোই নাম দিয়েছি মিস খিটখিট।

নূর যথা রীতি নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছে। আফরান কোন ভাবে ছাড়ছেই না। নূর এবার একটু শান্ত হলো। চোখ দিয়ে ইশারা করে মুখ থেকে হাত সরাতে বলল। আফরান আলতো করে ছেড়ে দিল। মনে মনে তার চৌদ্দ গোষ্ঠী উদ্ধার করছে।

নূরঃঃ- (খাচ্চোর বিলাতি বক কোথাকার। কুং ফু পান্ডা কাহি কে। অসভ্য অভদ্র বেয়াদব নির্লজ্জ বেহায়া। লজ্জা শরম বলতে কি কিছু নেই। এই ছোট ছোট বাচ্চাদের সামনে লুচ্চামি করছে।)

আফরানঃঃ- মন্ত্র পড়া শেষ হলে জানিও।

তাদের কান্ড দেখে বাচ্চারা হাসছে। নূর এক ধমক দিয়ে তাদের চুপ করালো। পরক্ষণেই তারা আবার হেসে কুটিকুটি হচ্ছে। তাদের মধ্যে এক পিচ্ছি বলে উঠল।

পিচ্ছিঃঃ- নূরাপু তুমি আল ভাইয়া কি বেস্ত ফেরেন? আমাল আল নিরুল মতো?

নূরঃঃ- (অবাক হয়ে আফরানের দিকে তাকাল) নো নেভার কাবি নেহি। আমি কেন উনার বেস্ট ফ্রেন্ড হতে যাব। হুহ্।

নিরুঃঃ- তোমরা তো আমার আর রনির মতো ঝগড়া কর। দেখেছ না একটু আগে কেমন ঝগড়া করল।

রনিঃঃ- ওই মিথ্যুত। আমি তখুন ঝগলা কললাম। তুই ঝগলা করছত আমাল সাতে।

নূরঃঃ- ওই পিচ্ছি পিচ্ছু একটু আগে না তোদের ঝগড়া মিটমাট করলাম। একে অপরকে জড়িয়ে ধরে সব ঠিক করলি না? বলেছি না বেস্ট ফ্রেন্ডরা হাজার ঝগড়া করুক কিন্তু কখনো একে অপরকে ছেড়ে যায় না। দিন শেষে একে অপরকে জড়িয়ে ধরে আবার সব ঠিক করে নেই।

আফরান মুচকি হেসে তাদের কার্যকলাপ দেখছে। বাচ্চাদের সাথে নূরও যেন বাচ্চা হয়ে গেল। পকেটে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে এসব কাহিনি শুনছে।

নিরুঃঃ- তাহলে তুমিও ভাইয়াকে জড়িয়ে ধরে সব ঝগড়া ঠিক করে নাও। তুমি তো বল ঝগড়া করতে নেই। একে অপরকে জড়িয়ে ধরে ঝগড়া শেষ করে নিতে হয়। এবার তুমিও ভাইয়াকে জড়িয়ে ধর।

আফরান আর নূর দুজনেই হকচকিয়ে গেল। অবাক হয়ে একে অপরের দিকে তাকাল। লজ্জায় নূরের গাল দুটোও লাল হয়ে গেল। শ্যাম বর্ণ হলেও লজ্জার লাল আভা স্পষ্ট ফুটে উঠেছে তার চেহারায়।

রনিঃঃ- কি হলো ধল ভাইয়াকে।

নূরঃঃ- ওই পিচ্ছি চুপ কর তো।

রনি আফরানের পিছে গিয়ে তাকে ধাক্কা দিল। নিরু নূরের পিছে গিয়ে তাকে ধাক্কা দিল। তাল সামলাতে না পেরে পড়ে যেতে একে অপরকে জড়িয়ে ধরে।

সেখানে উপস্থিত বাচ্চারা খুশিতে চিল্লিয়ে জোরে জোরে হাত তালি দিল। তাদের আওয়াজে তারা একে অপরকে ছেড়ে দিল।

রনিঃঃ- ইয়েএএ নূলাপু আল ভাইয়া আবালো বেস্ত ফেরেন হয়ে গেল।

নিরুঃঃ- এবার আর ঝগড়া কর না। কেমন? (আহ্লাদী সুরে বলল।) একসাথে তোমাদের অনেক ভালো লাগে। ভাইয়া নূরাপু তো অনেক আসে এখানে। আমাদের জন্য চকোলেট আনে আর আমাদের সাথে খেলা করে। এখন থেকে তুমিও আসবে তো?

আফরানঃঃ- (হাটু গেড়ে তার সামনে বসল। তার গাল দুটো টেনে দিল) যদি তোমার নূরাপু নিয়ে আসে তবে আসব। জিজ্ঞেস কর তোমার নূরাপুকে আমাকে আনবে কি না?

সব বাচ্চারা নূরকে ঘিরে ধরল। দুপাশ থেকে তার হাত ধরে টানছে আর বলতে লাগলো
— ও নূরাপু ভাইয়াকে আনবে তো। বল না আনবে তো। বল না নূরাপু আনবে তো।
নূর এক ঝাড়া দিয়ে বলল__

নূরঃঃ- হ্যাঁ আনব। (তারপর বাচ্চারা শান্ত হলো) (হুহ্ যত্তসব ঢং। এত আসার হলে নিজে আসতে পারে না। আমাকে কেন আনতে হবে। হুহ্।)

অনেক্ষণ তারা একসাথে খেলা করল। দুপুরের খাবার খেতে বাচ্চারা ভেতরে গেল। নূর আর আফরান তাদের খাবার বেরে দিয়ে একপাশে দাঁড়াল। বাচ্চারা খাবার খাচ্ছে নূর পরম আনন্দে তাদের দেখছে। আফরান মুচকি হেসে এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে নূরের দিকে। হায়… তার সেই উৎফুল্ল হাসি। যেন সব খুশি আনন্দ তার কাছে রয়েছে। আফরান আনমনে বলে উঠল।

আফরানঃঃ- জানো তোমাকে না একটা নাম দিয়েছি।

নূরঃঃ- (ভ্রু কুচকে তার দিকে তাকাল) জানি মিস চাশমিশ (আফরান মাথা নেড়ে না বলল। নূর কিছুটা চিন্তা করে রাগী সুরে বলল) মিস খিটখিট। (আফরান এবারও না বলল। নূর এবার কৌতুহল হয়ে জিজ্ঞেস করল) তাহলে?

আফরানঃঃ- (মুচকি হেসে বলল) ” আনন্দিতা” ।

নূরঃঃ- (নামটা শুনে নূরের বুকের ভেতর কেমন যেন করে উঠল। হার্টবিট বেড়ে ধুকপুক করছে) কেন? আমি চশমা পড়ি তাই মিস চাশমিশ। আর… ঝগড়া করি বলে মিস খিটখিট। আনন্দিতা কেন?

আফরানঃঃ- এসবের উপরে তোমার একটা বিশেষ গুণ আছে। সেই হলো সবাইকে আনন্দ দেওয়া। যখনই যে কেউ তোমার সাথে থাকে কিংবা তোমার আশেপাশে থাকে তাদের মনে সবসময় আনন্দ থাকে। তার কারণ হলো তুমি। তুমি যখন কারো সাথে থাক তখন সে আনন্দে না হেসে পারেই না। এই বাচ্চাদের দেখ তুমি যখন তাদের সাথে ছিলে তখন তারা কতটা আনন্দে ছিল। ইনফেক্ট আমাকে দেখ। না জানি কতদিন পর সেদিন মন খুলে হেসেছিলাম। (নূরের হঠাৎ সেই অনুষ্ঠানের দিনের কথা মনে পড়ল। সেদিন প্রথম আফরানকে হাসতে দেখেছিল। আর সেদিনই তাকে এই নাম দিয়েছিল।) আর আজ দেখ কতটা আনন্দে আছি আমি। এতটা খুশি আমি কবে ছিলাম মনে নেই। আমার আনন্দের কারণ শুধু তুমি। আর তুমিও সবসময় হাসি খুশি থাক আনন্দে থাক। তাই এই নাম দিলাম। ” আনন্দিতা “।

যেভাবে বর্ণনা দিল নূরের মনের মধ্যে কেমন যেন করে উঠলো। এসব হয়তো নূর কখনো ভেবে দেখেনি কিন্তু এই কয়দিনে আফরান ঠিকই খেয়াল করেছে। আফরানের এই কথাগুলো এই চাহনি নূরের কাছে আজ অন্যরকম লাগছে। তাকে কাছে টানছে। তার কথায় হারিয়ে গেল।

.
.
.

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here