Ragging To Loving ?part-26

0
966

? Ragging To Loving ?
Part:: 26
Writer:: Ridhira Noor

হসপিটালে__________________________
আফরান আধশোয়া হয়ে বসে আছে। রিহান তার পাশে বসা। মাথায় ব্যান্ডেজ করা।

রিহানঃঃ- কিভাবে হলো এসব? তোর এমন অবস্থা। হসপিটাল থেকে ফেরার পর তুই কার নিয়ে বেরিয়ে গেলি। তারপর এসব হলো। কে নিয়ে এলো তোকে?

আফরানঃঃ- আমি কিছু জানি না। ড্রাইভ করছিলাম তখন দেখলাম রাস্তায় কিছু সমস্যা হয়েছে। একজন মেয়ে দুইজন ছেলের মধ্যে ফাইট হচ্ছিল। মেয়েটি নির্মমভাবে ছেলেগুলোকে মারছিল। তারা নিজের ডিফেন্সে মেয়েটিকে আঘাত করে আর তাকে বাঁচাতে গিয়ে আমি আহত হয়।

রিহানঃঃ- কোন মেয়ে? চিনিস তাকে?

আফরানঃঃ- না। মুখে রু…(হাত উঠিয়ে দেখে তার হাতে রুমালটা) আরে এটা তো তারই রুমাল। মুখে বাঁধা ছিল বল চেহারা দেখতে পায়নি। কিন্তু আমার খুব চেনা চেনা লাগছিল। আর কি জানিস মেয়েটিও হয়তো আমাকে চিনে। কারণ যখন আমি পড়ে যাচ্ছিলাম তখন সে আমার নাম ডেকেছিল। পড়ে যাওয়ার সময় হাতে রুমাল চলে আসে। চেহারা দেখার আগেই অজ্ঞান হয়ে পড়ি।

রিহানঃঃ- একটা কথা আমি বুঝতে পারছি না। হসপিটালের রিসেপশনিস্ট আমার নাম্বার পেল কি করে? আমাকে কিভাবে তোর ব্যাপারে খবর দিল? এখন তো আমারও মনে হচ্ছে নিশ্চয় আমাদের চেনা পরিচিত কেউ ছিল।

আফরান রুমালটা মুষ্টিবদ্ধ করে পকেটে নিয়ে নিল। রিহান আফরানকে নিয়ে বাড়ি ফিরে গেল।
.
.
.
নূর আস্তে করে দরজা খুলে পা টিপে টিপে ঘরে ঢুকছে। আশেপাশে তাকিয়ে দেখল আম্মু আছে কি না? নেই তাই স্বস্তির নিশ্বাস নিয়ে সিড়ি দিয়ে পা বাড়াতেই….

আম্মুঃঃ- আজকেও কি কুত্তা দৌড়ানি দিছিল? ১০ টা বাজে এখন আসার সময় হলো তোর? পুষ্পরা এসে চলে গেল।

নূরঃঃ- (জ্বিবে কামড় দিয়ে পিছন ফিরল) না আসলে একটু কাজে ছিলাম ওই আর কি। আর তাদের সাথে দেখা হয়েছে।

আম্মুঃঃ- তাড়াতাড়ি হাত মুখ ধুয়ে খেতে আয়।

রাতে খাবার খেয়ে নূর শুয়ে পড়ল। বিছানার এপাশ ওপাশ হচ্ছে কিন্তু কোন ভাবে ঘুম আসছে না। তাই উঠে বারান্দায় গেল।

নূরঃঃ- আফরানের চিন্তা হচ্ছে। শেষবারের মতো একটু দেখেও এলাম। না জানি কেমন আছে? আমার জন্যই উনার এই অবস্থা হলো। কাল যদি ভার্সিটি না আসে তাহলে কিভাবে জানব উনার খবর। ধুরর কাল দেখা যাবে।
.
.
আলিফা মেহের দুইজন দুই দিকে মুখ করে শুয়ে আছে। আলিফা আরিফের কথা চিন্তা করছে। মিলার বিয়েতে আরিফের সাথে ঝগড়া, ভার্সিটিতে পায়ে ব্যাথা ঠিক করাই জড়িয়ে ধরা, আর আজ। আজ যেন তার উপর থেকে নজর সরছেই না। এসব চিন্তা করে নিজেই বেহায়ার মতো মুচকি হাসছে। আর অন্যদিকে মেহের নীরবে চোখের জল ফেলছে। আজ ইয়াশ ওর সাথে যেমন ব্যবহার করল ভীষণ খারাপ লাগলো। সেটা চিন্তা করেই কান্না পাচ্ছে। কিভাবে পারল এভাবে কটুকথা বলতে।
.
.
সিমা আমরিন দুইজনের কাছে আজকের দিনটি ছিল চিরস্মরণীয়। প্রথম ভালবাসার অনুভূতি বুঝতে পারল।
.
.
পুষ্পর চোখের ঘুম সে তো অনেক আগেই হারিয়ে ফেলেছে। মোবাইলের স্ক্রিনে রিহানের নাম্বার উঠে আছে। গত দুই বছর ধরে প্রতিটি দিন মোবাইল হাতে নিয়ে একবার ফোন করার চিন্তা করে পরক্ষণে মনে পড়ে যায় তার সব মিথ্যা। মোবাইল আবার রেখে দিয়ে চোখের জল ফেলে।
.
.
আফরান রুমালটা হাতে নিয়ে বারান্দার রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে আছে। রুমালটার দিকে এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে। মেয়েটি যখন পড়ে যাচ্ছিল তখন তার চোখ দেখেছিল।

আফরানঃঃ- চোখজোড়া দুটি আমার খুব চেনা চেনা মনে হলো। মনে হলো যেন আগেও খুব কাছে থেকে দেখেছি। কিন্তু কোথায়? (রেলিং এ জোরে ঘুসি মারল) আমাকে জানতে হবে কে ছিল সে?
.
.
রিহান কল লিস্টে পুষ্পর নাম্বার দেখতে লাগলো। দুপুরে যখন ফোন করেছিল তখনই সেভ করেছে নাম্বার। একবার ভাবলো ফোন দিবে আবার দিল না।

পরের দিন নূররা গিয়ে শাহেদ রাফিকে মুক্ত করল। তাদের অবস্থা খুবই খারাপ। ইঁদুরের কামড়ে শরীরে অনেক ক্ষত হয়েছে। কিন্তু এতে কারো বিন্দু পরিমাণ খারাপ লাগছে না। তাদের কর্মের ফলই পেয়েছে তারা। কলেজের সামনে এনে ছেড়ে দিল। সবাই তাদের দেখে অবাক। আফরান ভার্সিটিতে যাচ্ছিল হঠাৎ চোখ পড়ল রাস্তায় থাকা ছেলেগুলোর উপর। তাদের অবস্থা দেখে অবাক হলো।

আফরানঃঃ- এরা তো কালকের সেই ছেলেরা। (গাড়ি একপাশে রেখে তাদের কাছে গেল) তোমাদের এই অবস্থা হলো কি করে? কাল কি হয়েছিল?

রাফিঃঃ- (আফরানকে চিনতে পেল। কাল তাদের সাথে যে টর্চার করেছে তা সব বলল।)

আফরানঃঃ- দেট সো রিডিকুলাস। কিভাবে একজন মানুষের সাথে এমন করতে পারে।

 

ভার্সিটিতে __________________

নূর ও বাকিরা গেইট দিয়ে প্রবেশ করতেই তাদের সামনে আহিল ওয়াসিম হাজির। সিমা আমরিনের দিকে তাকিয়ে হাসছে। বিনিময়ে তারাও হাসি দিল। নূর একবার তাদের দিকে তাকাল একবার ওয়াসিম আহিলের দিকে। ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করল।

নূরঃঃ- কি হচ্ছে এখানে। আজ ক্লোজ আপ ডে নাকি। যে ফ্যালফ্যালাইয়া দাঁত খেলিয়ে হাসি দিয়ে বলবে কাছে এসো কাছে এসো কাছে এসো না ওওওওওও।

আহিলঃঃ- কাছে তো অনেক আগেই চলে এসেছি।

আমরিনঃঃ- নূর আমরা আমাদের মনের অনুভূতি বুঝতে পেরেছি। আমি আহিল আর সিমা ওয়াসিম। উই আর ইন রিলেশনশিপ।

আলিফাঃঃ- তার মানে ডাবল ট্রিট। ইয়াহু। আগে ক্লাসে চল তারপর সব উসুল করব।

আহিল ওয়াসিম তাদের কান্ড দেখে হেসে দিল। তাদের সাথে আফরান আর বাকিরাও এসে যোগ দিল। আহিল তাদের আমরিন আর সিমার সম্বন্ধে বলল। সবাই যে যার ক্লাসের দিকে অগ্রসর হলো। নূর এগিয়ে যেতেই ইটের সাথে লেগে পড়ে যায়। আফরান এগিয়ে গেল তার দিকে চশমা তুলে হাতে দিতেই চোখে চোখ পড়ল। নূর চশমা পড়ে উঠে যেতেই আফরান তার হাত চেপে ধরে। নূর অবাক হয়ে তাকাল। কেন জানি আফরানের চেহারায় ক্ষোভ দেখা দিল।

আফরানঃঃ- তোমরা যাও। নূরের সাথে আমার কিছু কথা আছে। (টেনে নিয়ে গেল একপাশে। তাকে সামনে দাঁড় করিয়ে চশমা খুলতে নিলে নূর বাঁধা দেয়)

নূরঃঃ- কি করছেন এসব?

আফরানঃঃ- জাস্ট শাট আপ। (নূর চুপ হয়ে গেল। চশমা খুলে পকেট থেকে রুমাল বের করে। রুমালটা দেখে নূর অবাক হয়। ভয়ে ঢোক গিলল। আফরান তার মুখে রুমাল বেঁধে দিল। চোখের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রুমাল খুলে ফেলল) এটা(রুমাল) চিনতে পারছ?

নূরঃঃ- (আমার এই সিক্রেট কাউকে জানতে দেওয়া যাবে না) আ…আমি কি করে চিনব।

আফরানঃঃ- মিথ্যা বলবা না। এটা তোমারই। কাল ওই ছেলেদের সাথে এমন কেন করেছ? ওই ছেলেদের সাথে কিভাবে পারলে এমন করতে? তোমার বিবেকে বাঁধল না?

নূরঃঃ- (রাগ মাথায় ছড়ে বসল) না বাঁধল না। তাদের কর্মের ফলই তাদের দিয়েছি। তারা যা করল তাতে তাদের বিবেকে বাঁধল না আর আমার তাদের শাস্তি দিতে বিবেকে বাঁধবে? ব্যাপারটা হাস্যকর। (তাচ্ছিল্য হাসি দিল)

আফরানঃঃ- কি এমন করেছে?

নূরঃঃ- র‍্যাগিং করেছে। ঘৃণা হয় আমার তাদের প্রতি যারা র‍্যাগিং করে। ঘৃণা করি র‍্যাগারসদের। আই হেইট দেম। (চিল্লিয়ে বলল)

আফরানঃঃ- (নূরের কথায় অবাক হলো। কথাটা সোজা তার বুকে গিয়ে লাগল) আমার প্রতিও কি ঘৃণা হয়? (করুণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল। নূর অবাক হয়ে তার দিকে তাকাল) আমিও তো তোমার র‍্যাগিং করেছি। আমাকেও কি ঘৃণা কর?

চোখ জলে ছলছল করছে। নূর কিছু না বলেই চলে গেল। আফরান সেই ঠাই হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মনে তার কেমন যেন ভয় করছে। মনে যেন খুব আপন কিছু হারিয়ে যাচ্ছে। গলায় খিচ ধরে যাচ্ছে। ধম আটকে আসছে।

.
.
.

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here