Ragging To Loving ?part-24

0
942

? Ragging To Loving ?
Part:: 24
Writer:: Ridhira Noor

পুষ্পঃঃ- নূ…নূর কোথায়? (হাঁপিয়ে বলল। মনে হচ্ছে অনেক দৌড়ে এলো। সামনে তাকিয়ে দেখে নূর) তোর ফোন কোথায়? (চিল্লিয়ে বলল)

নূরঃঃ- আমার ফোন? (আশেপাশে তাকিয়ে দৌড়ে গেল সুইমিংপুলে। সেখানে পাশে টেবিলে ব্যাগ থেকে ফোন বের করল। ৫০+ মিসড কল। অনেক অবাক হয়ে যায়। তৎক্ষনাৎ ফোন নিয়ে ড্রয়িং রুমে এলো) এত মিসড কল? আব্বু ১৯ টা আম্মু ২৭ টা তুই দিলি ১২ টা। কি হয়েছে?

পুষ্পঃঃ- তুই চল আমার সাথে। (হাত ধরে টেনে নিয়ে যাচ্ছে)

নূরঃঃ- বলবি তো কি হয়েছে?

পুষ্পঃঃ- তন্বি হসপিটালে।

নূরঃঃ- ত…তন্বি… চল তাড়াতাড়ি।

আফরানঃঃ- দাঁড়াও।

নূরঃঃ- দেখুন আপনার শর্ত আমি পরে পূরণ করব। প্রয়োজনে আজীবন আপনার পিএ হয়ে থাকব। প্লিজ এখন আমাকে যেতে দিন।

আফরানঃঃ- আমাকে যত খারাপ মনে কর তত খারাপ আমি নই। গাড়ির চাবি নিয়ে আসি তোমাদের ড্রপ করে দিব।

আফরান ড্রাইভ করছে নূর পুষ্প পিছনের সিটে বসল। নূর অস্থির হয়ে হাত পা নাড়ছে। শুধু জানে তন্বি হসপিটালে কি হয়েছে কিছুই জানে না। একটা জিনিস খটকা লাগছে আফরানের কাছে। পুষ্প জানলো কি করে তারা ফার্ম হাউসে ছিল। তাই না পেরে জিজ্ঞেস করল।

আফরানঃঃ- পুষ্প তুমি জানলে কি করে? তুমি তো রিহানের সাথে ছিলে

পুষ্পঃঃ- ওই আসলে আমার শরীর খারাপ ছিল তাই বাসায় ফিরে গেলাম। আমি বাসায় গিয়ে শাওয়ার নিয়ে বের হয়ে ফোন হাতে নেই। দেখি আন্টি মানে নূরের আম্মুর অনেকগুলো মিসড কল। তাই ফোন করে জানতে পারলাম তন্বি হসপিটালে আর আন্টি নূরকে অনেক ফোন দিয়েছিল কিন্তু রিসিভ করে নি। তাই আমাকে ফোন দিয়েছিল।

আফরানঃঃ- তুমি জানলে কি করে আমরা ফার্ম হাউসে ছিলাম।

পুষ্পঃঃ- রিহানকে ফোন করেছিলাম। তারপর ওর কাছ থেকে জানতে পারি আপনারা এখানে।

আফরানঃঃ- ওয়েট এ মিনিট। প্রথমত তোমার কাছে রিহানের নাম্বার এলো কত্তেকে আর দ্বিতীয়ত তুমি ফার্ম হাউসের এড্রেস জানো কিভাবে?

পুষ্পঃঃ- (রিহানের নাম্বার ডায়েরিতে ছিল। কিন্তু এখন আমি কি বলব?)

নূরঃঃ- আপনি প্লিজ আপনার এই ইন্টারোগেশন বন্ধ করবেন? (বিরক্ত হয়ে বলল)

আফরানঃঃ- সরি।

আফরান আর কিছু বলল না। পুষ্প মনে মনে স্বস্তির নিশ্বাস নিল। আর নূরকে ধন্যবাদ জানালো। প্রায় বিশ মিনিট পর তারা হসপিটালে পৌঁছাল। রিসেপশন থেকে জেনে গেল তন্বির ওয়ার্ডে। নূরের এমন অবস্থা দেখে আফরানের যেতে ইচ্ছে করছিল না। তাই আফরান তাদের সাথেই ছিল। গিয়ে দেখে নূরের আব্বু আম্মু বাইরে বসে আছে। আম্মু কেঁদেই যাচ্ছে আব্বু সান্ত্বনা দিচ্ছে। রিহান আফরানকে ফোন করে জানতে পারে তারা হসপিটালে তাই সেও আসল।

নূরঃঃ- আম্মু কি হয়েছে তন্বির?

আম্মুঃঃ- জানি না কি হয়েছে? সকালে কলেজেই গিয়েছিল। পরে ওখান থেকে ফোন করে বলল তন্বির শরীর খারাপ। আমি তোর আব্বুকে ফোন করে ওর কলেজে গিয়ে হসপিটালে নিয়ে এলাম। তোকে অনেক ফোন করেছিলাম। পরে না পেরে পুষ্পকে ফোন দেই।

নূর কেঁদে যাচ্ছে। আর মনে মনে নিজেকে দোষারোপ করছে। যখন তন্বির প্রয়োজন ছিল সে তার পাশে ছিল না। তারা দুই বোন একে অপরের বেস্ট ফ্রেন্ড। সারাদিনের কর্মকাণ্ড রাতে বসে একে অপরের সাথে শেয়ার করে। নূর জীবনে সবচেয়ে বেশি তার ছোট বোনকে ভালবাসে। নূরের চোখের প্রতিটা পানি যেন আফরানের বুকে কষ্টের বন্যা বইছে। মনে হচ্ছে যেন তারই বুকে কেউ আঘাত করে ক্ষতবিক্ষত করে দিচ্ছে। পুষ্প নূরকে শান্ত করার চেষ্টা করছে। হঠাৎ তার চোখ গেল রিহানের দিকে। আফরানের সাথে কথা বলছে।

পুষ্পঃঃ- (কেমন যেন হয়ে গিয়েছে। চেহারাটা অনেক ফ্যাকাসে লাগছে। নিজের যত্ন নিতে পারে না? এখন তো আর কেউ নেই বিরক্ত করতে। ওহ সরি আজকে আবারও বিরক্ত করে ফেললাম। চাই নি বিরক্ত করতে কিন্তু পরিস্থিতি এমন ছিল যে করতে হলো। এসব ভাবতে ভাবতে চোখের কোণে জমে থাকা পানি মুছে নিল।)

রিহানঃঃ- কি হয়েছে তোরা হসপিটালে কেন? আর নূরই বা এভাবে কাঁদছে কেন?

আফরানঃঃ- নূরের ছোট বোন তন্বি হসপিটালে এডমিট আছে। তাই এমন চিন্তিত।

রিহানঃঃ- ওহ্। (নূরের পাশে পুষ্পকে দেখে রিহান ভাবতে লাগলো। হঠাৎ অচেনা নাম্বার দেখে ফোন রিসিভ করিনি। কিন্তু যখন বললে এটা তুমি এক মূহুর্তের জন্য অনেক কিছু ভেবে ফেলেছিলাম। কিন্তু ভাবনায় ছেদ পড়ে যখন তুমি বললে নূর কোথায়। আর জানার পর সাথে সাথে ফোন রেখে দিলে। পুষ্পর দিকে ভালো করে লক্ষ্য করে দেখে চোখের নিচে কালো দাগ পড়ে গেল৷ চেহারাও বিবর্ণ হয়ে গিয়েছে।)

নূর এবার শব্দ করে কেঁদে দিল। হঠাৎ করে আফরান কিছু না ভেবেই তার সামনে হাটু গেড়ে বসে পড়ল। নূরের হাত তার হাতের মধ্যে মুষ্টিবদ্ধ করল।

আফরানঃঃ- নূর। (আফরানের এক ডাকে নূর চুপ হয়ে গেল) জানি না এসময় কি বলব। আমি হয়তো জানিই তোমার বোনের সাথে তোমার সম্পর্ক কেমন? কিন্তু একবার তোমার পাশে তাকিয়ে দেখ (পাশের বেঞ্চে তার আম্মু আব্বুকে দেখাল) এই সময় তাদের তোমার প্রয়োজন। তুমিই তাদের সান্ত্বনা দিবে। আর সেই তুমিই কি না ভেঙে পড়ছ।

নূরঃঃ- (এক ধ্যানে তার কথা শুনছে) আসলেই তো এসময় আম্মু আব্বুর পাশে না থেকে আমি নিজেকে নিয়ে পড়ে আছি।

আফরান নূরের ছলছল চোখের পানে তাকিয়ে আছে। না জানি কি আছে এই চোখজোড়ায় যখনই দেখি আটকে যায় এর মোহে। নূর হাত নাড়তেই আফরানের হুশ ফিরে এলো। তাড়াতাড়ি হাত ছেড়ে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে গেল। কিছুক্ষণ পর ডাক্তার বেরিয়ে এলো। সবাই তড়িঘড়ি উঠে গেল ডাক্তারের কাছে।

ডাক্তারঃঃ- চিন্তার তেমন কোন বিষয় নেই। পেনিক এট্যাক এসেছিল। অতিরিক্ত ভয়ের কারণে ব্রেনে এফেক্ট হয় যার কারণে সে সেন্সলেস হয়ে পড়ে। ঘুমের ইঞ্জেকশন দিয়েছি। দুই তিন ঘন্টা ঘুমালে সুস্থ হয়ে যাবে। তারপর আপনারা তাকে বাসায় নিয়ে যেতে পারবেন।

ডাক্তারের কথায় সবাই স্বস্তির নিশ্বাস ফেলল। নূরের মুখে হালকা হাসি ফুটল। তা দেখে যেন আফরানের জানে জান এলো। তার হাসি দেখে আফরানও মুচকি হাসল।

নূরঃঃ- থ্যাংক ইউ।

আফরানঃঃ- আমাকে কেন থ্যাংক ইউ বলছ?

নূরঃঃ- এমনি। ইচ্ছে হলো তাই। আপনারা এখন বাসায় ফিরে যান। তন্বির হুশ আসলেই আমরাও ফিরে যাব।

আফরানঃঃ- (কেন জানি ইচ্ছে করছে না যেতে। কিন্তু না গিয়ে উপায় নেই।) আচ্ছা। টেক কেয়ার।
_______________________________

আরিফ ইয়াশ ফয়েজ লেকের নৌকা ভাড়া করল যাতে লেকে ভ্রমণ করতে পারে। চারপাশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারে। ফটোশুটে যাতে কোন সমস্যা না হয় তাই শুধু তারা চারজনই একসাথে উঠলো।

ইয়াশঃঃ- একটু পর সন্ধ্যা হবে। ফয়েজ লেকের সানসেট ক্যামেরায় বন্ধি করব। উফফ অনেক দিন ধরে অপেক্ষা করেছি এই দৃশ্যের জন্য।

মেহের একপাশে আলিফা অন্যপাশে লেকের পানি ছুঁয়ে একে অপরকে মারছে। পানি মেরে আলিফা সরে যায়। মেহের হাত ভরতি পানি নিয়ে আলিফাকে মারতে আলিফা সরে যায় আর সামনে চলে আসে ইয়াশ। পানি গিয়ে পড়ে ইয়াশের হাতে থাকা ক্যামেরায়। ইয়াশ প্রচুর রেগে যায়।

ইয়াশঃঃ- হোয়াট দ্যা হেল। তোমার কি মাথা খারাপ? কমন সেন্স বলতে কি কিছু নেই? তোমার প্রব্লেম কি বল। যেখানেই যায় কোন না কোন ঝামেলা করই কর। জাস্ট গেট লস।

মেহেরের চোখের পানি ছলছল। আরিফ আলিফা দুইজনই ইয়াশের এমন ব্যবহারে হতভাগ। মেহের নাক টেনে কান্না করছে। আলিফা তাকে শান্ত করার চেষ্টা করছে।

আরিফঃঃ- ইয়াশ কাম ডাউন। সে তো ইচ্ছে করে এমন করেনি।

ইয়াশঃঃ- আমি নিশ্চিত সে ইচ্ছে করেই এমন করেছে। তুই ভালো করে জানিস ফটোগ্রাফি আমাদের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ। দেখ ক্যামেরাও কাজ করছে না। আর এখানে আসার মানে কি হলো।

আরিফঃঃ- জীবনের সব মুহূর্ত শুধু ক্যামেরায় বন্ধি করবি এমন তো না। কিছু স্মৃতি মনে বন্ধি কর। তা অনুভব কর।

আলিফাঃঃ- মেহের ওই দেখ সানসেট। (জোরে বলায় সবাই সে দিকে তাকাল।)

অসাধারণ এক দৃশ্য। দুইপাশে পাহাড়ের মাঝে হ্রদ। তার সাথে মিশে যাচ্ছে লালচে কমলা সূর্য। আকাশে জমাট বাধাঁ সাদা মেঘ লালচে রং ধারণ করেছে। ডুবন্ত সূর্যের লালচে আলো সবার মুখের উজ্জ্বলতা বাড়িয়ে দিল। আলিফার চোখ পড়ল আরিফের উপর। হলুদ রঙের শার্ট পরা চুল গুলো বাতাসে উড়ছে। বেহায়ার মতো তাকিয়ে আছে তার দিকে। আরিফের চোখে চোখ পড়তে অন্য দিকে ফিরে গেল। আরিফ এখন উল্টো বেহায়ার মতো তাকিয়ে আছে তার দিকে। ইয়াশের কথায় ঘোর কাটলো।

ইয়াশঃঃ- সত্যি ইয়ার। এই দৃশ্য ক্যামেরায় তুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়ছিলাম। যার কারণে এমন দৃশ্য উপভোগ করতে পারছিলাম না। (একটু আগের ঘটনা মনে পড়তে মেহেরের দিকে তাকায়। বেচারি তাকে দেখে সাথে সাথে মাথা নিচু ফেলল। এক অপরাধবোধ কাজ করছে দুইজনের মনে।)

সূর্য হারিয়ে গেল এক অজানা রহস্যে। অবশেষে তারা ফিরে এলো। আরিফ ইয়াশ তাদের বাসায় পৌঁছে দিল। তাদের মধ্যে আর কোন কথা হয়নি। নিরবে কেটে গেল সারাটা পথ। মেহের চুপচাপ বসে ছিল। আলিফার ভাবনায় বারবার আরিফের সেই চেহারা ভেসে উঠছে।

.
.
.

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here