? Ragging To Loving ?
Part:: 20
Writer:: Ridhira Noor
পুষ্প বাসায় গিয়ে শাওয়ার অন করে হাটু ভাজ করে বসে পড়ল। পানি শুধু সারা শরীরে পড়ছে না। চোখ দিয়ে অনবরত পানি পড়ছে। চোখ বন্ধ করে সেই দিন মনে করতে লাগলো।
.
.
.
পরিক্ষা শেষে ছুটির সময়ে পুষ্প তার আম্মু আব্বুর সাথে নানার বাড়ি মিরাসরাই যাচ্ছিল বাসে করে। পুষ্পর মা জানালার পাশে ছাড়া বসতে পারে না তাই তার আম্মু আব্বু এক সিটে বসল। আশেপাশে কোন সিট খালি নেই একদম পিছনে সিটে জানালার পাশে খালি ছিল পুষ্প সেই দিকে গিয়ে বসল। জানালার দিকে মুখ করে বাইরের দৃশ্য দেখছে। রিহানও ওই একই বাসে করে দুইজন বন্ধুর সাথে মিরাসরাই যাচ্ছিল। পিছনের সিট ছাড়া আর কোন সিট খালি ছিল না। তাই তারা সেখানে বসল। রিহান পুষ্পর পাশেই বসল। পুষ্প চুল খুলে জানালার পাশে বসায় চুল সব উড়ে রিহানের মুখে পড়ছে। রিহান বিরক্ত হয়ে চুল সরাতে টান পড়ে।
পুষ্পঃঃ- আহ্ কি করছেন? ব্যাথা পাচ্ছি আমি।
রিহানঃঃ- চুলগুলো সামলিয়ে রাখুন দয়া করে। আমার ডিস্টার্ব হচ্ছে।
পুষ্প কিছু না বলে বিরক্তিকর ভাব নিয়ে চুল গুছিয়ে নিল। গাড়ি আপন গতিতে চলছে। পুষ্প জানালা দিয়ে বাইরে প্রকৃতি উপভোগ করছে। বাইরে হাত দিয়ে বাতাস ছোঁয়ার চেষ্টা করছে। মুখে এক রাশ হাসি। জানালার বাইরে পুষ্পর হাত দেখে রিহান চেচিয়ে উঠলো।
রিহানঃঃ- হোয়াট আর ইউ ডুইং। এটা কত রিস্কি জানেন। আপনি কোন ছোট বাচ্চা না যে বুঝেন না।
পুষ্পঃঃ- (আরেক জ্ঞানী ব্যক্তি বসছে আমার পাশে মনে মনে বলল। কিছু না বলে আবারও বিরক্ত হয়ে চুপচাপ বসে বাইরে তাকিয়ে আছে)
পরিবেশ আস্তে আস্তে ঠান্ডা হতে শুরু করল। জানালা দিয়ে ঠান্ডা বাতাস ঢুকছে।
রিহানঃঃ- আপনি প্লিজ জানালা বন্ধ করুন আমার ঠান্ডা….. (তাকে থামিয়ে পুষ্প বলল)
পুষ্পঃঃ- আরেকটা কথা বললে এই জানালা দিয়ে আপনাকে ফিক্কা মাইরা বাইরে ফেলে দিব। (প্রচন্ড রেগে বলল।)
রিহান একদম রোবটের মতো শক্ত হয়ে চুপচাপ বসে আছে। পুষ্প আবারও বাইরে প্রকৃতি দেখায় মনোযোগ দিল। পুষ্প মোবাইল বের করে দেখতে লাগলো। মেসেজ পড়ে মুচকি হাসছে। অপর পাশে পুষ্পর বফ। ফেসবুকে পরিচয় ফেসবুকে তাদের প্রেম শুরু হয়। দুই মাস চলছে তাদের রিলেশনের। বন্ধুত্ব থেকেই অল্প সময়ে ভালবাসার সম্পর্কে জড়ায়। পুষ্প তাকে ভীষণ ভালবাসে। প্রায় তিন ঘন্টা পর তাদের গন্তব্যে পৌঁছাল। রিহান ব্যাগ নিয়ে ঘুরতে পুষ্পর গায়ে লাগে। যার ফলে সে বাসের সিটের উপর পড়ে যায়।
পুষ্পঃঃ- হ্যালো মিস্টার! একটু দেখে শুনে কাজ করুন। আমার মতো এক বাচ্চা মেয়ে আপনার মতো ধামড়ার চিপায় পইরা মরে যাবে।
রিহানঃঃ- (পুষ্পর মাথা থেকে পা অবধি দেখতে লাগলো) ঠিকই বলেছেন। কিন্তু আপনি বাচ্চা মেয়ে না। শুটকি মেয়ে। বাতাসের গতিতেই পড়ে যান আবার আসছে আমাকে বলতে। (ব্যাগ নিয়ে চলে গেল।)
পুষ্পরা বাস থেকে নেমে পড়ল। পুষ্পর মামা তাদের জন্য বাসস্ট্যান্ডে অপেক্ষা করছিল। তাদের সাথে কুশল বিনিময় করে রওনা দিল।
সাদিকঃঃ- দেখ রিহান এখন আমাদের সাথে এসেছিস যেহেতু একটু হাসি মুখে এনজয় কর। মুখটা পঁচা টমেটোর মতো করে রেখেছিস কেন?
রিহানঃঃ- আমি আসতেই চাইনি। তোরা জোর করে আমাকে এনেছিস। আফরান ওয়াসিম আহিল আরিফ ইয়াশ ওরা কেউ আসেনি। আমাকে একাই আসতে হলো।
ফাহাদঃঃ- ওহ্ আমরা তো তোর কেউ না। শুধু ওরাই তোর বন্ধু। তাই না? ঠিক আছে। সরি আর কখনো বলব আমাদের সাথে আসতে।
রিহানঃঃ- দেখ ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করবি না। তোরা আমার বন্ধু না হলে কি আসতাম নাকি? তোদের জন্যই এই ট্যুরে আসা।
সাদিকঃঃ- তাহলে হাসি মুখে চল আর মিরাসরাই এর সৌন্দর্য উপভোগ কর। আজ হোটেলে চল। কাল একদম সকাল বেলায় মহামায়ার ঝর্ণা দেখতে যাব।
.
.
.
পুষ্প নানার বাড়ি পৌঁছাতেই তার দুই খালাতো বোন আইরিন তাসমি হাজির। তারা দৌড়ে এসে পুষ্পকে জড়িয়ে ধরল। পিছন থেকে কেউ পুষ্পর মাথায় টোকা দিল।
পুষ্পঃঃ- মুহিন….. (পিছন ফিরে দেখে দাঁত দেখিয়ে হাসি দিল মুহিন। মুহিন পুষ্পর মামা কিন্তু বয়সে পুষ্প থেকে কয়েক মাসের ছোট। তাই তাদের সম্পর্ক বন্ধুর মতো।)
পুরা দিন মামা মামি খালা নানা নানির সাথে কাটালো। সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিল কালকে সবাই মহামায়ার ঝর্ণা দেখতে যাবে। ফ্যামিলি ট্যুরে। তাই রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়ল।
সকাল হতেই শুরু চেচামেচি। নিজেদের গাড়ি থাকায় যেতে কোন অসুবিধা হয়নি। মহামায়া পৌঁছে আইরিন তাসমি দুইজন দুই দিক থেকে পুষ্পকে টানছে। পুষ্প অতিষ্ঠ হয়ে তাদের ঝাড়া দিয়ে মুহিনের সাথে গেল। পুষ্পকে আর পায় কে? গিয়ে সেলফি তোলা শুরু। আশেপাশে কি হচ্ছে কোন খেয়াল নেই নিজের মতো করে ছবি তুলেই যাচ্ছে। পিছনে ফিরে খেল ধাক্কা। কপাল ঢলতে ঢ্লতে সামনে তাকিয়ে দেখে রিহান।
পুষ্পঃঃ- কপালটা সত্যিই ফাঁটা। এখানেও আপনি হাজির। এখানে এসে যদি আবার বাসের মতো করে শাসন করেন তাহলে দেখবেন কি করি। হুহ্। (রিহানকে কিছু বলতে না দিয়ে নিজেই বকবক করে চলে গেল।)
ফাহাদ এসে রিহানকে টেনে নিয়ে গেল ঝর্ণা দেখতে। মহামায়ার সেই ঝর্ণা চোখ জুড়ানো। পাহাড় বেয়ে পানি মহামায়া হ্রদে পড়ছে। বাংলাদেশের চট্টগ্রাম জেলায় পর্যটক এলাকা চোখ জুড়ানো। রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, কক্সবাজার, মিরাসরাই মহামায়া আরো অন্যান্য পর্যটক এলাকা রয়েছে। অর্থনীতির প্রাণ কেন্দ্র আমাদের চট্টগ্রাম। তেমনি সৌন্দর্যও অপরূপ। রিহান ঝর্ণা সৌন্দর্য ক্যামেরায় বন্ধি করে নিল। পিছনে চেনা এক মেয়েলি কন্ঠ। সেই আর কেউ না পুষ্প। লাফালাফি করছে। ঝর্ণার কাছে যেতে বায়না করছে আর বাকিরা তাকে বারণ করছে। পুষ্প মুখ গোমড়া করে আছে। রিহান তাকে দেখে বিরক্ত হয়ে মুখ ফিরিয়ে নিল। পুষ্প সে নাছোড়বান্দা। ঝর্ণার কাছে যাবে মানে যাবে। তাই ধীরে ধীরে সবার আড়াল হয়ে ঝর্ণার পাশে গেল। ঝর্ণার পানি ছুঁয়ে দেখছে। শীতল ঠান্ডা পানি কাঁচের ন্যায় স্বচ্ছ। সেই মহা আনন্দে খেলছে পানি নিয়ে। আরেকটু কাছে যেতেই পিছলে যায়। রিহান হেচকা টান দিয়ে বুকের মাঝে আঁকড়ে ধরে। পুষ্প চোখ খিছে বন্ধ করে রিহানকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল। ভয়ে কেঁদে দিল। রিহান থরথর কাঁপছে। পুষ্পকে টেনে সেদিক থেকে নিয়ে আসে।
রিহানঃঃ- আর ইউ আউট অফ ইউর মাইন্ড। (চিল্লিয়ে বলায় পুষ্প কেঁপে উঠে আর সমানে কেঁদে যাচ্ছে।) আমাকে বলেছিলে শাসন না করতে। তুমি কি ছোট বাচ্চা? বুঝ না? এটা কতটা ডেঞ্জারাস। এখান থেকে পড়লে তুমি বাঁঁচবে মনে হয়? তোমার বডিও পাবে কি না সন্দেহ। ইচ্ছে তো করছে কানের নিচে কয়েকটা লাগিয়ে দেই।
মুহিনঃঃ- দেন। ইচ্ছামতো দেন কয়েকটা। এত বারণ করার পরও ওইদিকে কেন গেলি?
পুষ্পঃঃ- আ…. আমি…. স…. স..রি…. (কান্নার জন্য কথা বলতে পারছে না। এভাবে কাঁদতে দেখে রিহানের ভীষণ মায়া হলো। আবার রাগও হলো প্রচুর। তাই সেদিক থেকে সরে গেল।)
মুহিনঃঃ- কান্না থামিয়ে চল এবার। ভাগ্য ভালো যে আপুরা অন্য দিকে গিয়েছে। তোকে খুঁজতেই আমি এদিকে এসেছি। আজ যদি ছেলেটা না থাকত তাহলে কি হতো বুঝতে পারছিস। ওকে ধন্যবাদ পর্যন্ত দিলি না। চল।
পুষ্প মাথা নিচু করে চুপচাপ হাঁটতে শুরু করল।
পুষ্পঃঃ- (একবার উনাকে ধন্যবাদ জানানো উচিৎ) মুহিন তুই যা আমি আসছি।
মুহিনঃঃ- আবার তুই…
পুষ্পঃঃ- আরে টেনশন নিস না আমি আর যাব না। একটু কাজ আছে তাই।
মুহিন চলে গেল। পুষ্প রিহানের ঠিক পিছনে দাঁড়িয়ে আছে। হঠাৎ ফোন বেজে উঠল। পুষ্পর বফ ফোন করছে সামনে রিহান দাঁড়িয়ে আছে। এদিকে ফোন রিসিভ করবে নাকি রিহানকে ধন্যবাদ জানাবে এসব চিন্তা করতে করতে ফোন কেটে গেল। রিহানকে ডাকতে যাবে আবার ফোন বেজে উঠল। একবার ফোনের দিকে তাকাল একবার রিহানের দিকে। হঠাৎ তার চোখ পড়ল রিহানের কানে ফোন। অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। রিহান যতবার ফোন করছে তার ফোন রিং হচ্ছে। রিহান ফোন কেটে দিলে রিং অফ হয়ে যাচ্ছে। রিহান বিরক্ত হয়ে ফোন পকেটে রেখে দিল। ফোন আর রিং হচ্ছে না। এবার পুষ্প নিজে ফোন দিল। তাকে অবাক করে ফোন রিসিভ করল। অপর পাশে রিহান।
রিহানঃঃ- কোথায় ছিলে তুমি? সে কখন থেকে ফোন করছি। হ্যালো? হ্যালো? হ্যা… (কাঁধে কারো স্পর্শ অনুভব করল। পিছনে ফিরে দেখে পুষ্প) কি?
পুষ্পঃঃ- রিহান?
রিহানঃঃ- জ্বি! তুমি জানলে কি করে? (পুষ্প তার ফোন দেখাল। রিহান চোখ বড় বড় করে তাকাল) পুষ্প? (পুষ্প লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেলল) ওহ মাই গড। তুমি? (জড়িয়ে ধরতে যাবে কি থেমে গেল। মাথা চুলকাতে লাগলো) হাই… কে.. কেমন আছ? (কি বলবে বুঝতে পারছে না)
পুষ্প লজ্জায় পানি পানি হয়ে যাচ্ছে। এত দিনের রিলেশন। কখনও কারো দেখা হয়নি। না ছবি দেখেছে। সিদ্ধান্ত নিয়েছিল পুষ্পর নানা বাড়ি থেকে ফিরেই প্রথম দেখা করবে। কিন্তু ভাগ্যের জোরে এভাবে দেখা হয়ে গেল। সেদিন তাদের অনেক্ষণ কথা হলো। সবার আড়ালে একে অপরের সাথে অনেক সময় কাটালো।
.
.
.
চলবে