? Ragging To Loving ?
Part:: 12
Writer:: Ridhira Noor
ক্লাসে যাওয়ার পথে অগ্রসর হলো পান্না রিতা ঝিনু। তার মধ্যেও রিতা ঝিনু পান্নাকে নূর আর আফরানের কথা বলে কান ঝালাপালা করে দিচ্ছে। পান্নার বিরক্তির সীমা পেরিয়ে বলল।
পান্নাঃঃ- ঠিক আছে দেখি কে এই নূর। যার কথা বলে তোরা আমার দুই কান খাচ্ছিস। চল।
প্রথম বর্ষের ক্লাসের বাইরেই নূর পুষ্প দাঁড়িয়ে গল্প করছিল। রিতা দূর থেকে নূরকে দেখাল। নূরকে দেখেই পান্না অট্টহাসিতে ফেটে উঠল।
পান্নাঃঃ- আরে তোরা ওকে নিয়ে আমার জন্য ইনসিকিউর হচ্ছিস। আমি তো ভেবেছিলাম খুব সুন্দরী মেয়ে। এর তো গায়ের রঙ শ্যামলা। আর আমি ওর চেয়ে অনেক গুন বেশি সুন্দরী। আফরান আমার দিকে ভালো করে তাকায় নি। আর ওর দিকে তাকাবে। নো চান্স। সো প্লিজ ওর সাথে আমাকে তুলনা করা বন্ধ কর। আর দিন শেষে আফরান আমার হবে।
রিতাঃঃ- আমরা তোর ফ্রেন্ড তাই তোর জন্য চিন্তা করছি। বাকিটা তুই বুঝিস।
.
.
.
কিছু এনাউন্সমেন্ট করার জন্য ভার্সিটির সব স্টুডেন্টদের ক্যাম্পাস এরিয়ায় একত্রিত করল। সবাই আসার পর এনাউন্সমেন্ট করল। দুই সপ্তাহ পর ফ্রেশার পার্টি আর কালচারাল প্রোগ্রাম হবে। একটা বড় বাক্স রাখল। কেউ যদি অংশগ্রহণ করতে চাই তাহলে তার নাম ও তথ্য একটা কাগজে লিখে এই বাক্সের রাখবে। এনাউন্সমেন্ট এর পর সবাই চলে গেল। আফরান অনেক্ষণ ভেবে চিন্তে একটা বাক্সে রাখল। তারপর প্যান্টের দুই পকেটে হাত ঢুকিয়ে শিষ বাজাতে বাজাতে চলে গেল।
আহিল আমরিনের সাথে দেখা করতে যাচ্ছিল। সাথে ওয়াসিমকেও নিয়ে গেল। আমরিন আর সিমা লাইব্রেরিতে তাদের এসাইনমেন্ট এর কাজ করছিল। পাশাপাশি বসে কাজ করছিল এমন সময় আহিল ওয়াসিম তাদের সামনাসামনি বসল। ওয়াসিমকে দেখে সিমা তড়িঘড়ি করে তার সব জিনিস নিজের কাছে টেনে নিয়ে আড়চোখে ওয়াসিমের দিকে তাকাল। ওয়াসিম অবাক হয়ে সিমার দিকে তাকাল।
সিমাঃঃ- আমি জানি আপনি কোন মতলবে এসেছেন।
ওয়াসিমঃঃ- মা.. মানে? কি.. কি মতলব নিয়ে এসেছি?
সিমাঃঃ- আপনি আমার জিনিসগুলো ছিনিয়ে নিতে এসেছেন তাই না? আমি সব জানি। শপিং মলে আপনার কাছ থেকে ওই শোপিস নিয়েছি তাই আপনি আমার কোন জিনিস নিতে এসেছেন। আমি সব বুঝি।
ওয়াসিম কিছুক্ষণ অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে জোরে হেসে দিল। সিমার এমন বাচ্চামি দেখে। আর ভাবতে লাগলো মেয়েটা আসলেই পাগল।
ওয়াসিমঃঃ- সিরিয়াসলি? তোমার মনে হয় আমি তোমার জিনিস নিতে এসেছি। (কিছু একটা ভেবে বলল) আসলে নিতেই এসেছি। আর তা আমি নিয়েই ছাড়ব।
সিমা তার জিনিসপত্র বুকের মাঝে আঁকড়ে ধরল। ওয়াসিম আবারও হেসে দিল। আহিল তো আসার সাথে সাথে টেবিলের উপর কুনুই রেখে গালে হাত দিয়ে এক ধ্যানে আমরিনের দিকে তাকিয়ে আছে। তা দেখে আমরিনের অনেক অস্বস্তি লাগছে। রাগী দৃষ্টিতে আহিলের দিকে তাকালে সে কোন ভ্রুক্ষেপ না করে মুচকি হাসি দিয়ে আবারও আমরিনের দিকে তাকিয়ে আছে।
আমরিনঃঃ- কি সমস্যা আপনার?
আহিলঃঃ- তুমি। তুমি আমার সমস্যা। প্রথমে তোমার লজ্জা মাখা চেহারা দেখে প্রেমে পড়েছিলাম। রাগী চেহারায়ও তোমাকে বেশ লাগে। যখন তোমার দিকে তাকায় আশেপাশে কি হয় খেয়াল থাকে না। সেটা আমার সমস্যা। না চাওয়া সত্ত্বেও শুধু তোমার চিন্তা মাথায় আসে সেটা আমার সমস্যা। যখন প্রথম তোমার কাছে এসেছিলাম বুকের ভেতর এক হালকা বাতাস বয়ে গিয়েছিল সেটা আমার সমস্যা। সবসময় তোমাকে আমার কাছে চাই সেটা আমার সমস্যা। তাই যা বলব সোজাসাপ্টা বলব। আ…
ওয়াসিমঃঃ- আই লাভ ইউ।
আহিল আমরিন সিমা ওয়াসিমের দিকে তাকাল। ওয়াসিম অপ্রস্তুত হয়ে এদিক সেদিক তাকাতে লাগলো। আহিল রাগী দৃষ্টিতে ওয়াসিমের দিকে তাকাল।
ওয়াসিমঃঃ- আরে তুই ভুল বুঝছিস। আমি আমরিনকে না সিমাকে বলছি।
সিমা অবাক হয়ে তাকাল ওয়াসিমের দিকে সাথে আহিল আর আমরিনও। সিমার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ল। মানে কি? ওয়াসিম কেন ওকে আই লাভ ইউ বলবে। সবাই প্রশ্ন সূচক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ওয়াসিমের দিকে। সিমার ভাবনার ঘোর যেন কাটছে না। তাও নিজেকে সামলিয়ে বলল।
সিমাঃঃ- মানে? আপনি আমাকে কেন আই লাভ ইউ বলছেন?
ওয়াসিমঃঃ- (হালকা মাথা চুলকালো) আই লাভ ইউ কেন বলে জানো না? আহিল এখন যা কিছু বলল সেসব আমি তোমার জন্য অনুভব করি। এই মাত্র যে বাচ্চামি করলে হঠাৎ সেই বাচ্চামির উপরও প্রেমে পড়ে গেলাম। আসলে আমি হয়তো ঠিক গুছিয়ে বলতে পারছি না। এমনিতে ছন্দ বলে ঘুরে বেড়ায়। কিন্তু তোমাকে নিয়ে কোন ছন্দই প্রকাশ করতে পারছি না। শুধু এই তিনটি শব্দই বের হচ্ছে। আই লাভ ইউ। মিস পিংকি।
সিমাঃঃ- (ভ্রু কুচকে চোখ ছোট করে) আমি পিংকি না সিমা।
ওয়াসিমঃঃ- এই যে এই ফেইস বানালে বুকের মাঝে কেমন যেন করে উঠল।
সিমা চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে ওয়াসিমের দিকে।
আহিলঃঃ- আই লাভ ইউ মাই লাভ।
আমরিনও চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে আহিলের দিকে। সিমা আমরিন একে অপরের দিকে তাকাল। কি করবে তারা কিছুই বুঝতে পারছে না। একে অপরের দিকে তাকিয়ে দুইজন একসাথে দৌড় দিল। আহিল ওয়াসিম অবাক হয়ে সেভাবেই বসে আছে। যখন ব্যাপারটা বুঝতে পারল দুইজন হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছে।
আহিলঃঃ- হায়রে অবশেষে আমরা প্রেমে পড়লাম তো দুই পাগলের উপর।
ওয়াসিমঃঃ- প্রেমে পড়েছিই তো এই পাগলামির উপর। গিয়েছিলাম র্যাগিং করতে কিন্তু আমাদের লাভ এক্সপ্রেস ট্রেনটা গিয়ে পৌঁছাল Ragging To Loving স্টেশনে।
আহিলঃঃ- বাই দ্যা ওয়ে। কংগ্রেস তুইও আমার সাথে শহীদ হয়ে গেলি। (বলেই দুইজনই হেসে উঠল)
আমরিন সিমা দৌড়াতে দৌড়াতে মাঠের মাঝে এসে দাঁড়াল। দুইজনই হাঁপাতে লাগলো। জোরে জোরে নিশ্বাস নিতে লাগলো।
সিমাঃঃ- কি ছিল এটা? মনে হচ্ছে আমার হৃৎপিন্ড লাফাতে লাফাতে মুখ দিয়ে বেরিয়ে যাবে।
আমরিনঃঃ- আমারও তাই মনে হচ্ছে রে। তুই তো আজকে শুনলি। আমি তো সেই দ্বিতীয় দিন থেকে… (বলেই জিহ্বায় কামড় দিল।)
সিমাঃঃ- মানে এগুলো আগে থেকে চলছিল। তুই ফকিন্নি আমাদের বলিস নি।
আমরিনঃঃ- কি আর বলতাম। আমি নিজেই এতো দিন বিভ্রান্তিতে ছিলাম। কি হচ্ছে নিজেই বুঝতে পারছি না। এমনি ওয়াসিম কিন্তু খারাপ না।
সিমাঃঃ- ওয়াসিম কি? ভাই ডাক।
আমরিনঃঃ- জেলাস? সামথিং সামথিং?
সিমাঃঃ- নাথিং…. (মাথা ডানে বামে নেড়ে) বাই দ্যা ওয়ে আহিলও কিন্তু খারাপ না।
আমরিনঃঃ- আহিল কি? ভাই ডাক।
সিমাঃঃ- আর ইউ জেলাস?
আমরিনঃঃ- নো…..
একে অপরের দিকে তাকিয়ে জোর পূর্বক হাসি দেওয়ার চেষ্টা করছে। তাদের মনে কি চলছে তারা নিজেরাই হয়তো বুঝতে পারছে না।
নূরঃঃ- কি হচ্ছে এখানে? তোরা এখানে কি করছিস? ক্লাস তো শেষ চল বাসায় যায়।
সিমা আমরিন চিন্তা করছে তাদের এই ব্যাপারে বলবে কি না? কিন্তু কি বলবে? তারাই নিজেরাই তো বুঝতে পারছে তাদের মনের খবর। তাই আর কিছু বলল না।
.
.
.
দুই সপ্তাহ কেটে গেল পলক ফেলতেই। এই দুই সপ্তাহে নূর আফরানের কতই না ঝগড়া খুনসুটি হলো। পুষ্প রিহানের রাগারাগি। মেহের ইয়াশ আর আলিফা আরিফের এই যুদ্ধ রেখা। সিমা আমরিন তারা তো যত পেরেছে ওয়াসিম আহিল থেকে লুকিয়ে ছিল।
আজ তাদের ফ্রেশার পার্টি আর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে। নূর পুষ্প সিমা আমরিন মেহের আলিফা নরমাল ড্রেসআপ এ এসেছে। সামনে তাকিয়ে দেখে বিলাতি বক মানে আফরান। ফুল সাদা ড্রেসআপ। প্লেইন সাদা শার্ট সাদা প্যান্ট। চুল গুলো সেই এলোমেলো কপালে ছুঁই ছুঁই। একবার চিন্তা করল ক্রাশ খাবে। আবার মনে পড়ল ইহা একটি অখাদ্য খাবার। যা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।
নূরঃঃ- এই খাচ্চর বিলাতি বক সেজে আসলো কোন সুখে।
পুষ্পঃঃ- দাঁড়া জিজ্ঞেস করে আসি।
নূরঃঃ- তোকে বলছি?
পুষ্পঃঃ- তাহলে জানার এত আগ্রহ কেন? চুপচাপ দেখতে থাক।
স্টেজ থেকে এনাউন্সমেন্ট করা হলো। এই খাচ্চর বিলাতি বক নাকি গান গাইবে। তাই আগেই হাত দিয়ে দুই কান চেপে ধরল নূর।
.
.
.
চলবে