? Ragging To Loving ?
Part:: 10
Writer:: Ridhira Noor
ইয়াশ আর আরিফ ফটোগ্রাফির জন্য একটা জায়গায় গেল। এক বড় দীঘি তার চারপাশে সবুজ গাছপালা। তার তীরবর্তী এলাকায় কাঁচা ঘরবাড়ি আর ছোট ছোট দালানকোঠা। গ্রামের ছোট ছেলেমেয়েরা দীঘিতে নেমে গোসল করছিল। ইয়াশ তাড়াতাড়ি ক্যামেরা বের করে এই মূহুর্তগুলো ক্যামেরায় বন্ধি করে নিল। শহরে এমন দৃশ্য দেখা খুবই দুর্লভ। নগরায়নের ফলে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য হারিয়ে যাচ্ছে। খোলা মাঠ হয়ে যাচ্ছে ফ্যাক্টরি। পুকুর হয়ে যাচ্ছে দালান। গ্রাম্য দৃশ্যতে যে মনোমুগ্ধকর একটা তৃপ্ত থাকে তা শহরে পাওয়া যায় না। দীঘির পশ্চিম দিকে একটি বড় কৃষ্ণচূড়া গাছ রয়েছে তার পাশে জুঁই ফুল গাছ। পাশাপাশি থাকায় লাল সাদা ফুলের সমাহার চোখ জুড়ানো। ইয়াশ ইচ্ছা মতো ছবি তুলে নিল।
ইয়াশঃঃ- আফরান রিহান আহিল ওয়াসিম ওরা এতো সুন্দর মূহুর্ত মিস করছে।
আরিফঃঃ- ওদের তো বলেছি আসার জন্য। কিন্তু আসে নি। আগে আমার কয়েকটা ছবি তোল ওদের দেখিয়ে জ্বালাবো।
ইয়াশ ছবি তুলছে কিন্তু বারবার আরিফের সামনে একটি মেয়ে চলে আসছে যার কারণে ছবিতে মেয়েটির প্রতিচ্ছবি উঠছে। এমন করতে করতে ৬-৭ টা ছবিতে মেয়েটির প্রতিচ্ছবি উঠেছে। ইয়াশ বিরক্ত হয়ে ছবিগুলো দেখতে লাগলো। পিছন থেকে আরেকটি মেয়ে চিল্লিয়ে উঠলো।
মেহেরঃঃ- (আলিফা আমি আর আমাদের কাজিনরা দীঘির পাড়ে এসেছিলাম ঘুরতে। আলিফার ছবি তুলছিলাম। উরিম্মা এই কি আমার পাশে একটা ছেলে আলিফার ছবি তুলে তা দেখছে। চরম পর্যায়ে রাগ উঠলো) এই যে মিস্টার। কারো পারমিশন ছাড়া তার ছবি তুলেন তাও একটি মেয়ের লজ্জা করে না আপনার। এসব কোন ধরনের অসভ্যতা। ক্যামেরা একটা হাতে পেলেই ছবি তুলতে ইচ্ছে করে তাই না।
ইয়াশঃঃ- হোয়াট? এই যে মিস আমি কার ছবি তুলেছি পারমিশন ছাড়া?
মেহেরঃঃ- (তার হাতে ক্যামেরা দেখিয়ে) এই যে আমার বোনের ছবি তুললেন। (আলিফা আর মেহের খালাতো বোন)
ইয়াশঃঃ- আমার আর খেয়ে দেয়ে কাজ নেই আপনার বোনের ছবি তুলব। সেই কখন থেকে আমার ফটোগ্রাফিতে ডিস্টার্ব করছে।
আরিফঃঃ- এই যে আপনি? (আলিফাকে) সেই কখন থেকে দেখছি আপনি বারবার আমার সামনে এসে দাঁড়াচ্ছেন। প্রায় ১৫ মিনিট ধরে ৫০ বারের মতো ডিস্টার্ব করেছেন।
আলিফাঃঃ- আমি কেন আপনাকে ডিস্টার্ব করতে যাব। আপনি আমার পিছনে দাঁড়ালেন। আর আমাকে বলছেন আমি ডিস্টার্ব করছি।
আরিফঃঃ- আজব মেয়ে। নিজে এসে আমাকে বলে আমি আসছি। যত্তসব। ইয়াশ চল। (হাটা ধরল)
ইয়াশঃঃ- কি ভাই এগুলো। স্টুপিড মেয়েগুলো হুদায় এসে কাহিনি শুরু করল।
আরিফঃঃ- বাদ দে। চল ফুফি আমাদের অপেক্ষা করছে। রাতুল ভাইয়া সেই কখন থেকে ফোন করছে।
ফুফির বাসায় পৌঁছাতে সেই কি আহ্লাদ। রাতুল ভাইয়ার সাথে দেখা করতে গেলাম তার রুমে। ফোনে কারো সাথে কথা বলছে। কে আর আমাদের মিলা ভাবি। ভাইয়ার সাথে কথা বললাম। আরিফ আর ইয়াশকে একটা রুম দেওয়া হলো থাকার জন্য। পরের দিন কনের বাড়িতে যেতে হবে বরের হলুদ নিয়ে। গ্রামের সব অনুষ্ঠান সচরাচর দিনের বেলায় হয়ে থাকে। সকালে রাতুল ভাইয়ার গায়ে হলুদ দিবে। তার অবশিষ্ট হলুদ ভাবিকে দেওয়া হবে। রাতে খাবার খেয়ে আরিফ আর ইয়াশ রুমে গেল। আরিফ রুমের জানালা খুলতেই এক ফুরফুরে বাতাস এসে ছুঁয়ে গেল। এই বাতাস যেন এসির ঠান্ডা বাতাসকেও হার মানাবে। এমন বিশুদ্ধ বাতাস গ্রামেই পাওয়া যাবে।
পরের দিন সকালে___________________
ফুফি এসে দরজায় টোকা দিতে লাগলো।
আরিফঃঃ- ইয়াশ যা দেখ কে এসেছে। (ঘুমের ঘোরে)
ইয়াশঃঃ- তুই দেখ। ঘুমোতে দে আমাকে। (বালিশ দিয়ে মাথা চেপে ঘুমিয়ে পড়ল)
আরিফঃঃ- হারামি কুত্তা। (এক লাত্থি দিয়ে খাট থেকে ইয়াশকে ফেলে দিল। উঠে গিয়ে দরজা খুলল)
ফুফিঃঃ- তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে বাইরে আয়। উঠানে রাতুলকে হলুদ লাগানো হবে।
আরিফ আর ইয়াশ হলুদ পাঞ্জাবি সাদা পায়জামা পড়ল। চুল হালকা সেট করে রেডি হয়ে বের হতে রাতুলের কাজিনরা সহ সব মেয়েরা তাদের দিকে তাকিয়ে আছে। কেননা তাদের দেখতে বেশ হ্যান্ডসাম লাগছে। রাতুলকে হলুদ লাগানোর শুরু হলো। সবার আগে ফুফি হলুদ লাগালো। ইয়াশ ছবি তুলছে। হলুদ লাগানো শেষে বাকি হলুদ ফুফি যত্ন করে নিয়ে গেল। দুপুর তিনটা করে কনের বাড়িতে বরের ভাইবোনরা হলুদ নিয়ে যাওয়ার প্রথা আছে এখানে। তাই খাবার শেষে আরিফ ইয়াশ আর রাতুলের কাজিনরা রওনা দিল।
.
.
.
আলিফাঃঃ- মেহের বজ্জাতনি এই দিকে আয়। মিলা আপুকে সুন্দর করে সাজাতে হবে। আর তুই সেলফি নিতে ব্যস্ত।
মেহেরঃঃ- আসছি।
মিলা হলো মেহের আর আলিফার মামাতো বোন। মেহের আর আলিফা সবুজ শাড়ি পরল। গ্রাম্য স্টাইলে। একপাশে লম্বা বেনি করা। মিলা আপুকে রেডি করানো হলো। মেহের আলিফা রুম থেকে বের হতেই তার কাজিনরা তাদের গালে হলুদ লাগিয়ে দিল দৌড়। মেহের আলিফা হলুদ নিয়ে তাদের পিছনে গেল। অনেক্ষণ দৌড়াদৌড়ি করেও লাগাতে পারল না।
আলিফাঃঃ- এর প্রতিশোধ আমি নিয়েই ছাড়ব।
মেহেরঃঃ- হলুদ পুরো মুখে মেখে দিবি যাতে আয়না দেখে নিজেকে চিনতে না পারে। ওই দেখ আসছে ওরা। দরজার পিছনে লুকিয়ে পড়। ওরা ভিতরে আসতেই কোন কথা বার্তা ছাড়া লাগিয়ে দিবি।
আলিফাঃঃ- ওকে। (পেত্নী মার্কা হাসি দিয়ে দরজার চিপায় গিয়ে দাঁড়াল।)
দুইজনই লুকিয়ে মিটিমিটি হাসছে। পায়ের শব্দ ধীরে ধীরে কাছে আসছে। দরজা দিয়ে ঢুকতেই দুইজন জোরে চিৎকার করে হলুদ পুরো মুখে মাখিয়ে দিল। আর জোরে জোরে হাসতে লাগলো। কিন্তু এই কি? এই তো দুইজন ছেলে। হলুদ তাদের চোখে লাগাই তারা চোখ খুলতে পারছে না। আর জোরে জোরে চিল্লাচ্ছে। মিলার বড় ভাই রিয়াদ ক্ষেপে গেল।
রিয়াদ ভাইয়াঃঃ- মেহের আলিফা এসব কি? (ধমক দিয়ে।)
আলিফাঃঃ- সরি ভাইয়া। আমরা খেয়াল করি নি। আমরা ভেবেছিলাম ফারিয়া আর রিসা। (ছেলেগুলো খুবই চেচামেচি করছে) আপনারা আমাদের সাথে বাইরে আসুন ওইখানে পানি আছে। পরিষ্কার করে নেন।
তারা ছেলেগুলোকে বাইরে উঠানে নিয়ে গেল। সেখানে পাত্র থেকে তাদের হাতে পানি ঢালছে। আর ছেলেগুলো পানি নিয়ে মুখে ঝাপটা দিচ্ছে। মুখ ধুয়ে উপরে তাকাতেই খেল এক বড়সড় শকড।
মেহের-আলিফাঃঃ- আপনারা?
ইয়াশ-আরিফঃঃ- তোমরা ?
মেহেরঃঃ- আপনারা এখানে কি করছেন? ওহ বুঝছি। এখানে এতো সুন্দর সুন্দর মেয়ে দেখে ঢুকে পড়েছেন। যাতে তাদের ছবি তুলতে পারেন। তাই তো?
ইয়াশঃঃ- হোয়াট? তোমার কি মাথায় নিশ্চয় কোন গন্ডগোল আছে।
আলিফাঃঃ- (মেহেরের কানে ফিসফিস করে) উনি কিভাবে জানল তোর মাথায় গন্ডগোল আছে।
মেহেরঃঃ- চুপ কর তুই। আর আপনি কি বলতে চাইছেন আমি পাগল?
আরিফঃঃ- শুধু তুমি না তোমার পাশের জন সহ পাগল। না সরি মহাপাগল।
আলিফাঃঃ- আপনার সাহস তো কম না আমাকে পাগল বলেন। আপনাদের মুখে হলুদ লাগিয়ে ভুল করেছি।
আরিফঃঃ- হুম ইটস ওকে। (একটু ভাব নিয়ে)
আলিফাঃঃ- মরিচ লাগানো উচিৎ ছিল। (রেগে)
মেহেরঃঃ- শুধু মরিচ না। মশলা লবন আদা রসুন পেয়াজ সব দিয়ে পাকোড়া বানিয়ে গরম তেলে ভাজা উচিৎ ছিল।
ইয়াশঃঃ- তোমার সাহস তো কম না।
মেহেরঃঃ- হ্যাঁ জানি। আমি অত্যাধিক সাহসী।
রিয়াদ ভাইয়াঃঃ- এখনও হয়নি?
আরিফঃঃ- ভাইয়া এরা কারা?
রিয়াদ ভাইয়াঃঃ- আমার মামাতো বোন।
আলিফাঃঃ- আর এরা কারা?
রিয়াদ ভাইয়াঃঃ- রাতুলের কাজিন। কথা পরে হবে এখন ভিতরে চল। মিলাকে হলুদ লাগাতে হবে।
ইয়াশ আরিফ রাগী লুক দিয়ে ভিতরে গেল। মেহের আলিফা রাগী দৃষ্টিতে তাদের যাওয়ার পানে তাকিয়ে আছে। তারাও গেল ভিতরে। মিলা হলুদ শাড়ির সাথে ফুলের গহনা পরল। তাকে সবার মাঝ বরাবর বসানো হলো। এক এক করে সবাই হলুদ লাগাচ্ছে। আলিফা পাশে তাকাতেই তার রাগ উঠে গেল। আশে তাকিয়ে দেখে আরিফ ক্যামেরায় ছবি তুলছে। তুলছে তো তুলছে তাও মিলার কাজিনদের। আলিফা রেগে আরিফের পিছনে দাঁড়াল। এক হাত কোমরে দিয়ে অন্য হাতে আরিফের কাঁধে হালকা বারি দিয়ে ডাকল। আরিফ পিছনে ফিরে দেখে আলিফা।
আরিফঃঃ- তোমার প্রব্লেমটা কি?
আলিফাঃঃ- (দুই হাত কোমরে দিয়ে) প্রব্লেম আমার নাকি আপনার? কালকে আপনার সাথে যে ছিল সে না বলে আমার ছবি তুলল। আর এখন আপনি আমার কাজিনদের ছবি তুলছেন। লজ্জা করে না আপনাদের।
আরিফঃঃ- ফার্স্ট অফ অল। ইয়াশ তোমার ছবি তুলে নি তুমি ইয়াশের ছবিতে উঠেছ। তাও ডিস্টার্ব করে। আর এখন যে ছবি তুলছি এগুলো রাতুল ভাইয়া বলছে তুলতে। আর এর জন্য রিয়াদ ভাইয়ার পারমিশনও নিছি।
আলিফাঃঃ- (সামান্য জিভ বের করে কামড় খেল। কিন্তু এই বেটার সামনে মাথা নত করলে চলবে না। তাই একটু ভাব সাব নিল।) তো… পার… পারমিশন যখন নিয়েছেন ভালো করে তুলবেন ছবি।
আরিফঃঃ- ওহহহ তাই? ওলে লে লে। তা মেদাম ভালো ছবি কেমনে তুলে একতু বলেন। (তোতলিয়ে বলল। আলিফার চেহারায় রাগ ছেপে উঠল) ডিস্টার্ব না করে আমাকে আমার কাজ করতে দাও। হুহ্ আসছে আমাকে শিখাতে। (আবারও ছবি তোলায় মনোযোগ দিল।)
আলিফাঃঃ- (রাগে ফুঁসছে। আর মনে মনে বলছে।) আমি ডিস্টার্ব করছি তাই না। এবার বুঝাবো ডিস্টার্ব কাকে বলে? কত প্রকার ও কি কি? (বেনি হাতে নিয়ে ঘুরাতে ঘুরাতে চলে গেল)
মেহের শরবত নিয়ে বরযাত্রীর সবাইকে সার্ভ করতে লাগলো। শরবতের ট্রে নিয়ে পিছন ফিরতে ইয়াশের সাথে ধাক্কা খেতে খেতে বেচে গেল। কিন্তু কিন্তু শরবত ইয়াশের পাঞ্জাবিতে পড়ল। পাঞ্জাবি ঝাড়তে ঝাড়তে দেখল সামনে মেহের।
ইয়াশঃঃ- আগে জানতাম শুধু মাথায় গন্ডগোল আছে। এখন দেখি চোখেও গন্ডগোল।
মেহেরঃঃ- আমার চোখে গন্ডগোল মেনে নিলাম।
ইয়াশঃঃ- মেনে নিয়ে আমাকে উদ্ধার করলেন। (হাত জোর করে)
মেহেরঃঃ- কিন্তু আপনার এই দুই আন্ডা আন্ডা চোখে কি দেখতে পান না? আমাকে বলেন। হুহ্।
মেহের চলে গেল। ইয়াশ বিরক্তি হয়ে বাইরে গেল। আলিফা মেহেরের কাছে এসে দেখে সে প্রচন্ড রেগে আছে। কারণ জানতে চাইলে ইয়াশের সাথে হওয়া কাহিনি বলে। আলিফাও আরিফের সাথে ঘটে যাওয়া কাহিনি বলে।
মেহেরঃঃ- এদের একটা উচিৎ শিক্ষা দিতে হবে।
আলিফাঃঃ- হুম। কিন্তু আজ না কাল। কালকে বরপক্ষ আর কনেপক্ষ সকালে মেহেদী অনুষ্ঠান আর রাতে বিয়ের অনুষ্ঠান এখানেই করবে। তখন ইচ্ছা মতো জ্বালাবো।
ইয়াশ পাঞ্জাবি পরিষ্কার করে আরিফের কাছে এলো। তারাও মেহের আর আলিফার সাথে ঘটা কাহিনি বলল।
আরিফঃঃ- ওদের হেস্তনেস্ত করতেই হবে। কাল দেখা মজা।
.
.
.
চলবে
বিঃদ্রঃ ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন ?