#তোমাতেই_অস্তিত্ব_আমার
লেখনীতে:মিথিলা মাশরেকা
২৪.
পৃথিবীতে একই চেহারার সাতজন ব্যক্তির বসবাস!কথাটা হুট করেই মনে পরে গেলো সামনের মানুষটিকে দেখে।হয়তো খুব খুব চাইতাম আমার মতো দেখতে কাউকে খুজে পেতে।শাহরুখের শিদ্দাত,কায়নাতের ডায়লগটা মনে পরে গেলো।একই রঙ,ডিজাইনের জামা,জুতা,ব্যাগ ঝুলিয়ে,একদম সেম টু সেম আমার মতোন গেট আপে সুহানা দাড়িয়ে আছে আমার সামনে!আগেরদিন দেখে ভেবেছিলাম হয়তো এক্সিডেন্টলি চয়েজের কোথাও মিল পরে গেছে।কিন্তু আজ দেখে মনে হচ্ছে একে অপরকে কতোটা নকল করতে পারি তার কম্পিটিশন লাগিয়েছি।
মেয়েটাকে পিছন থেকে,ইনফ্যাক্ট মুখ বাদে দেখলে আমার আত্মীয়স্বজন আমি ভেবেই তুলে নিয়ে যাবে।আপদমস্তক ওর স্ক্যান করে নিজের দিকেও তাকালাম।নাহ্!এতোটুকো পার্থক্য বোঝা যাবে না চেহারা আর গায়ের রঙ ছাড়া।নিজের চুলগুলো টেনে ছিড়তে ইচ্ছে করছে আমার।শেষে কি না এই বিলেতির হামসাকালস্ হতে হলো!কাট কাট গলায় সুহানা বললো,
-কোথায় গিয়েছিলে?
উরিব্বাস!জামাকাপড়ের এই অদ্ভুত মিলের প্রসঙ্গ ছেড়ে আমার যাওয়ার চিন্তায় আছে এ?স্বাভাবিক!যার গায়ে পরবে,সে মানুষটা যাতে অন্য কারো গায়ে না পরে সে চিন্তা তো হবেই।কোথায় গিয়েছিলে!হুহ!
-কি হলো?বলো?
পিছন ফিরে একবার তাকালাম।আরমানের গাড়িটা ওখানেই।নামছেন না কেনো উনি?ও!তারমানে,আমার কাছে ওসব বলে এখন সুহানার কাছেও ভালো সাজা হচ্ছে?দেখাচ্ছি।
মেকি হাসি দিয়ে বললাম,
-ইয়ে মানে সুহানা আপু,একটু বেরিয়েছিলাম।
-কোথায়?
-ওই আসলে আরুর ভাইয়া…
-কি!
হাত দিয়ে কান চেপে ধরলাম।ফাটাস্পিকার কোথাকার!
-এভাবে কেনো চেচাচ্ছেন সুহানা আপু?
– তারমানে তুমি সত্যিই আরমানের সাথে ছিলে?
ঘাড়টা চুলকে বললাম,
-ওই আর কি!
-কেনো?কেনো গিয়েছিলে তুমি?
ওর চেচানো আওয়াজে একটা লাজুক হাসি দিলাম।আবারো চেচালো সুহানা।
-আন্সার মি!
কাদোকাদো গলায় বললাম,
-বিশ্বাস করেন রাশেল বাই,আই মিন সুহানা আপু,আমি যাই নি।উনিই আমাকে জোর করে নিয়ে গেছেন।
রাগে ফুসতে লাগলো মেয়েটা।ইশশশ্!!!ফর্সা চেহারাটা টমেটো সস হয়ে গেছে একদম।বড্ড হাসি পাচ্ছিলো।অবশ্য টমেটো সসটাতে আরেকটু চিলি সস অ্যাড করাই যায়।কিছুটা ঘাড় বাকিয়ে বললাম,
-তা সুহানা আপু,আজ একদম আমার মতোই ড্রেসটা পরলেন?জুরওয়া ভাববে সবাই আমাদের।হাউ কিউট!
আরো রেগে গেছে সুহানা।চিৎকার দিয়ে বললো,
-শাট আপ!তোমার মতো সঙ সাজার কোনো ইচ্ছা আমার নেই।বুঝেছো?নেহাত আরমান…
-আরমান?
-আরমান নিজে আমাকে এটা চুজ করে দিয়েছে,পরতে বলেছে।তাই পরেছি।
ভাবনায় পরে গেলাম আমি।আমার মতো সেইম ড্রেস কেনো পরতে বললেন উনি সুহানাকে?সেটা তো পরের কথা!এবার যখন আমি শিওর আমাকে জেলাস করাতে সুহানাকে নিয়ে শপিং এ গিয়েছিলো,আর আপনার ফাদে পা দিচ্ছি না বাবুমশাই।যত যাই করুন,কিছুতেই রিয়্যাক্ট করবো না আমি।তবে এই বিলেতিকে দুরে রাখার ব্যবস্থা করতে হবে।
-আরমান আমাকে এই সাজে দেখতে চেয়েছিলো।তাই এভাবেই সেজেছি।
-হ্যাঁ,হ্যাঁ।কেনো নয়!কেনো নয়!সাজুন,শপিং করুন,আংটি কিনুন।যা খুশি তাই করুন।(তবে মানুষটা কিন্তু আমারই)
সুহানা ভ্রুকুচকে তাকালো আমার দিকে।আমি বড় করে হেসে বললাম,
-আরুর ভাইয়া বেশ ভালো।আজ আমাকে…
-তোমাকে?তোমাকে কি?
একটু লজ্জামুখ করে বললাম,
-সেটা ওনাকেই জিজ্ঞাসা করিয়েন।আপনার তো ভাই হয়,জিজ্ঞাসা করলেই বলবেন উনি।
কথাটা বলে মুখে হাত দিয়ে হেলতেদুলতে চলে এলাম।এবার? মিস্টার ইশতিয়াক আরমান!আমাকে জেলাস করাতে চেয়েছিলেন তাইনা?এবার বোঝেন,সুহানার বাহানা!হা হা হা!আমার সাথে জোরাজোরি?সুহানা
লম্বা লম্বা পা ফেলে ওইগাড়ির দিকে ছুটলো।আহা,কি আইডিয়া লাগিয়েছি!সরি মিস্টার কাকতাড়ুয়া,আপনার লাইফ জিঙ্গালালা হলো না এতে!এইবার সুহানা নামক প্যারাটা ভোগ করেন!
•
মালুকে ইচ্ছামতো গালি দিতে দিতে ভার্সিটির বাইরে বেরোচ্ছি।আরু শাকচুন্নি আগেই চলে গিয়েছে।উর্বি,রায়হান মালুকে শান্তনা দিতে দিতে আমার পিছন পিছনেই আসছে।মালু গাল ফুলিয়ে ওদের কথা মনোযোগ দিয়ে শুনছে।শুনিয়ে এসেছি অনেক কথা ওকে।আজ ও যদি আমাকে টেনে ভার্সিটির ব্যাকসাইডে না নিয়ে যেতো,এতোসব হতোই না।এভাবে আরমান আমার উপর রাগ ঝারার সুযোগটাই পেতো না।
তবে এসবের মধ্যে যদিও অনেকগুলো কাজের কাজ হয়েছে,এজন্য মালুর উপর খুশি আমি।তবে তা ওদের বুঝতে দেওয়া চলবে না।ওখানে গিয়েই তো বুঝলাম আরমান কি চান,সুহানা কি চায়,চারমাস আগের একটা ঘটনা,আরমানের কাছে আসা।মোটকথা ভালোগুলোই বেশি।তবুও এই এদের কিছু বলা বা বুঝতে দেওয়া চলবে না।ঢাক ঢোল পিটাতে এরা এক্সপার্ট।তারউপর পচানি তো আছেই।ফিরে আসার পর মালু যেইনা জিজ্ঞাসা করেছে কি বললো আরমান,ওকে আমাকে নিয়ে যাওয়া নিয়ে ধমকিয়েই থামিয়ে দিয়েছি।ব্যস!আর কোনো ঝামেলা নেই।
গেইটের সামনে দাড়িয়েই দেখি সিয়াম গাড়ি নিয়ে দাড়িয়ে।মেজাজটা আবারো বিগড়ে গেলো আমার।মালুরা সাইড কাটিয়ে চলে গেছে।আমিও পাশ কাটিয়ে চলেই আসছিলাম।ডাক লাগালেন উনি।
-কি হয়েছে?আপনি এখানে কেনো?
-আজ তো যাইই নি আমি।
-চাকরি থেকে সাসপেন্ড করে দিয়েছে নাকি?
-তুমি সেটা চাও?
-আমার চাওয়াতে কি?
-অনেককিছু।বাই দ্যা ওয়ে, দু ঘন্টা বসে আড্ডাই দিলে?
চমকে উঠলাম।কি বলছে টা কি এ?কোথাকার কোন দু ঘন্টার কথা বলছে?কাকে দেখেছে?কোথায় আড্ডা দিলাম?
-ম্ মানে?
-হ্যাঁ,আমি দেখলাম তো।ক্যাম্পাসে মালিহার পাশে বসে ছিলে তুমি।টানা দুই ঘন্টা!
এবার বুঝলাম।এ নিশ্চয়ই সুহানাকে দেখেছে।ভালোই হয়েছে।কিন্তু আমার পিছু কেনো নিয়েছে?ফলো করছে নাকি?
-বললে না?
…..
-কি হলো?বলো?
-এক্সপ্লেনেশন চাচ্ছেন?
-ন্ না মিথি,তা নয়।আমি তো…
-হোয়াট তা নয়?তাইই!
-আরে আমিতো জাস্ট…
-আপনি দুই ঘন্টা হলো আমার উপর নজর রাখছিলেন।
সিয়াম আমতা আমতা করে বললেন,
-ন্ না,মানে।আসলে…
-কিসের আসলে?আপনি পুরোটাই নকলে।
সিয়াম আতকে উঠলেন।বড়বড় করে এমনভাবে তাকিয়ে আছেন যেনো আমি কোনো গোপন কথা ফাস করে দিয়েছি।
-মানে?
-মানে পুলিশ হয়েও এমন আমতা আমতা করেন কেনো?এভাবে চৌকিদারের মতো ঘোরেন কেনো?কে বলবে আপনাকে আপনি পুলিশ!
উনি স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে বললেন,
-ওহ্!এই কথা?
-জ্বী।
আবারো চলে আসছিলাম।পিছুডাক দিয়ে বললেন,
-তোমার আব্বু আমার সাথে যেতে বলেছেন।
-না।উনি আসতে বলেছিলেন।যেতে নয়।
-ফোন করে দেখতে পারো ইফ ইউ ওয়ান্ট।
একপলক তাকিয়ে গাড়ির ব্যাকসিটে বসলাম।আগেরদিন জবাব দেওয়াতে উনি কিছু বলেননি।আজ ফোন করার কথা বললেন,আবার সারাদিন এখানেই ছিলেন।তারমানে সত্যিই আব্বু যেতে বলেছেন।নাহ্!এই লোকটাকে আমার লাইফে আরো জরিয়ে দেওয়ার আগেই আব্বুকে আরমানের কথা বলতে হবে।এখন ওই আইফেল টাওয়ারকে কি দিয়ে কথা বের করাই এটাই বড় চিন্তা!
-পিছনে বসলে কেনো?
-আমার ইচ্ছা।
আবে ভাই,তোর ভালোর জন্যই।কে জানে কোথা থেকে দেখবে ফ্রন্টসিটে বসেছি,তোর আমার দুজনেরই কপাল পুরবে। সিয়াম বললেন,
-কিন্তু…
-নেমে যাবো?
-হেই!না।থাকো।পিছনেই থাকো।
বরাবরের মতো প্যাচপাচ শুরু হলো।কানে তুলিনি আজও। আরমানের কথা বের করানোর একগাদা চিন্তা মাথায় ঘুরছিলো।বাসার সামনে এসে গাড়িটা থামালেন সিয়াম।চুপচাপ নেমে এসেছি।আজ ওনার ভদ্রতা দেখবো আমি।কিছু না বলা সত্ত্বেও ছেচড়ার মতো বাসায় ঢুকলে আজ ও শেষ!কিছুটা হেটে এসে গাড়ির স্টার্টের শব্দে ভাবলাম আপদ গেলো বোধহয়।নাকটা আঙুলে ঘষে পিছন ঘুরে দেখি সিয়াম গাড়ি থেকে বেরিয়ে লুকিং গ্লাসে চুল ঠিক করছেন।ওটা অন্য গাড়ি ছিলো।আমাকে দেখেই দাত কেলিয়ে বাসার দিকে এগোলেন উনি।তারমানে বাসায় আসবে!চোখমুখ শক্ত করে ডোরবেল বাজালাম।দরজা খুলে ভেতরে ঢোকার আগেই মাইশু বললো,
-ভার্সিটি যাও নাকি কুস্তি লড়তে?
-ঝগড়া পরে কর,টায়ার্ড লাগছে।ভেতরে ঢুকতে দে।
-আমি ঝগড়া করি?নিজে যে মারামারি করে প্রমানসমেত বাসায় ঢুকছো!
ওকে ধাক্কা দিয়ে চুল নারতে নারতে ভেতরে ঢুকলাম।ওর জেরা করার শেষ নাই।সিয়ামও ঢুকে আম্মুকে সালাম দিয়ে সোফায় বসেছেন।আমি সোজা রুমে ঢুকে ব্যাগটা রাখলাম।মাইশু তেড়ে এসে কোমড়ে হাত দিয়ে দাড়িয়ে বললো,
-কি হয়েছে বলোতো?কোথায় মারপিট করে এসেছো?
ফাও কথা নিয়ে পরেছে।খালি ইরিটেট করার ধান্ধা।জবাব না দিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকতে যাবো ও পথ আগলে দাড়ালো।
-আমাকে জ্বালানো ছাড়া কাজ নেই তোর তাইনা মাইশু?পথ ছাড়।
-আগে বলো,কি হয়েছে আজ ভার্সিটিতে।
হয়েছে তো অনেক কিছুই।তোর নিরামিশ চিরসিঙ্গেল আপুর সাথে কুছ কুছ,নাহ্ বহোত কুছ হোতাহে,যা আমি নিজেও বুঝতাছি না রে বইন!
-কি বলছো বিরবির করে?
-তুই এসব কেনো বলছিস?
ও আমার জামা তুলে বললো,
-জামাটা নোংরা কেনো?
আরমানের সাথে কাটানো মুহুর্ত সবটা মনে পরে গেলো আমার।মুচকি হেসে জামাটা মাইশুর হাত থেকে ছাড়িয়ে ওয়াশরুমে ঢুকলাম।লম্বা শাওয়ার নিয়েছি একটা।আম্মু অবশ্য ডেকে গেছে সিয়ামের সাথে একসাথে লান্চ করার জন্য,আব্বু অফিসে,ছেলেটা একা একা কিভাবে খাবে,আরো কতো কি!বলেছি গিলতে এসেছে,গিলিয়ে বিদেয় করো।আদিক্ষেতা দেখিও না।লোকটা খেয়ে আব্বুর সাথে দেখা করে চলে গেছে।আমার নাকি খোজ করেছিলো।যাইনি।উটকো ঝামেলা একটা!
•
কেদেকেদে জামান ম্যানশনের ড্রয়িংরুম ভাসিয়ে দিচ্ছে সুহানা।দুঃখ,আরমান মিথিকে নিয়ে বেরিয়েছিলো।মিথির মতো সেইম জামা পরিয়ে শুধুশুধু দু ঘন্টা আরিশার সাথে বসিয়ে রেখেছিলো।আবার বাসায়ও একা ফিরতে হয়েছে ওকে।আফরোজ জামান,মিসেস জামানকে ফোন করে নিজেদের রুমে যেতে বলেছে আরমান।মুলত সুহানার ন্যাকামো ওনাদের সহ্য করতে যেনো না হয় তাই ।ও জানতো সুহানা কেমন রিয়্যাক্ট করবে।আরিশাও যেতে চেয়েছিলো।আরমান ওকে থাকতে বলেছে সুহানার কাছে।বাধ্য হয়ে বসে আছে ও।টিভির রিমোটটা হাতে নিয়ে মিউট বাটন ধরে আছে আর লিপরিড করে মুভির ডায়লগ বোঝার চেষ্টা করছে।মাঝে মধ্যে টিভির দিকে তাকিয়ে থেকেই সুহানাকে টিস্যু এগিয়ে দিচ্ছে।সুহানা নাক টেনে বললো,
-এই মিথি মেয়েটা কি কোনোদিনও শান্তি দেবে না আমাকে?
-যে নিজেই অশান্তি,সে আবার শান্তিপ্রত্যাশী!হুহ!
-কিছু বললে?
-না আপু,ইউ কন্টিনিউ।
-আরমানকে সেই ছোটবেলা থেকে ভালোবাসি।যখন বললাম,বুঝলো না আমাকে।যখন বুঝলো,ওর ভালোবাসাটা অন্য কারো জন্য হয়ে গেলো।সে চলেও গেলো,আমি ভাবলাম হয়তো এবার আরমান আমার কাছে ফিরে আসবে।কিন্তু না!ওই মেয়েটা!আবারো ফিরে এলো?
আরিশা কাদোকাদো ফেস বানিয়ে সুহানার দিকে ঘুরলো।চোখের নিচের অদৃশ্য একবিন্দু পানি মোছার ভান করে বললো,
-আহারে!সুহানা আপু,ভাইয়া তো তোমাকে ভালোবাসেই না।এবার কি করবে বলো তো?
-বাসবে।যখন মিথি ওকে অস্বীকার করবে,ও ঠিকই আমার কাছে ফিরে আসবে।আসতে তো ওকে হবেই।
-ডে ড্রিমার কোথাকার!
-কি বললে?
-ম্ মে ইওর ড্রিম কামস্ ট্রু!
-আরমান আসেনি কেনো এখনো?
-সেটা ও আর আল্লাহ তায়ালা ছাড়া কেউ জানে না।
-ডোন্ট লাই আরিশা।ও মিথির কাছে তাইনা?
-আমি বলতে পারবো না।
সুহানা কিছু না বলে উঠে দাড়ালো।চুপচাপ নিজের রুমের দিকে পা বাড়ালো।হাফ ছেড়ে সোফার উপর পা ছড়িয়ে আরাম করে বসে টিভির সাউন্ড বাড়িয়ে দিলো আরিশা।একটু পরেই গাড়ির চাবি ঘুরাতে ঘুরাতে হুইস্টলিং করতে করতে বাসায় ঢুকলো আরমান।আরিশা দৌড়ে গিয়ে ওর পথ আগলে দাড়িয়ে বললো,
-আজ একটু বেশিই খুশি?
-তোকে বলবো কেনোরে?
-তুই না বললেও আমি জানি হুহ!আমাকে ছাড়া তোর প্লান ইনিশিয়েট হয়?
-তো আবার জানতে চাচ্ছিস কেনো?
আরিশা উৎসুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,
-কি কি হলো ওখানে?মিথির মনে পরেছে কিছু?
-হুম।কিছুটা।
-আর সুহানা আপুকে নিয়ে প্লানটা কাজে দিয়েছে?
-কাজে দেওয়া?সে রনচন্ডি রুপ ধারন করিয়াছিলেন।কলার অবদি ধরেছে আমার জানিস?
-হা!কি বলছিস কি তুই?
-আজ্ঞে হ্যাঁ।
আরিশা আরমানের কাধে হাত দিয়ে ধাক্কা মেরে বললো,
-উম উম্,ভালোই পটিয়েছো বোনের বান্ধবীকে হুম?
আরমান কান ধরলো আরিশার।বললো,
-ওকে পটানোর কিছু নেই।সবটাই আমার।
-আহ্!কান ছাড় ভাইয়া।কানটা কতো বড় করে দিয়েছিস তুই দেখেছিস?কেউ প্রেম করতে আসে না আমার সাথে।
-বিয়ে করে সোজা বরের গলায় ঝুলে পর।প্রেমের কি আছে?
-ও!নিজের বেলায় প্রেমই স্বর্গ,আমার বেলায় বিয়ের তর্ক?
-তা নয়তো কি?আর এমনিতেও,তোর সাথে প্রেম করতে আসবে না কোনো আমড়া কাঠের ঢেকি।
-কানটা ছাড়,তোকে আমি উন্নতমানের কাঠের ঢেকি আনিয়ে দেখাবো।
আরমান আরিশার কান ছেড়ে বললো,
-চল,ছাড়লাম।দেখাবি কিন্তু!
-অনুমতি দিচ্ছিস?
-তবে রে…
বলেই আরিশার পিছনে ছুটলো আরমান।বেশ কিছুক্ষন ধাওয়ানোর পর আরিশা বললো,
-থাম ভাইয়া।কাল নইলে অব্জেকশান যাবে কিন্তু মিথির কাছে।আমাকে দৌড় করিয়েছিস তুই!আবারো কলার ধরবে তোর ও!
-বলিস।আমিও দেখবো ও কলার ধরে আমার কতোটা কাছে আসতে পারে।
-হ্যাঁ,হ্যাঁ।সেটাই তো তুমি চাও।এতো পিরিতি জন্যই এভাবে…
আরমানের মুখের দিকে তাকিয়ে থেমে গেলো ও।মুখ কালো করে নিচদিক তাকিয়ে আছে আরমান।আরিশা এগিয়ে এসে আরমানের দু কাধ ধরে বললো,
-সরি ভাইয়া।আমি ওভাবে কিছু মিন করি নি।
….
-ভাইয়া।প্লিজ রাগ করিস না আমিতো,,
আরমান জোর করে হেসে বললো,
-আরেহ না,ও কারনে রাগ করি নি আমি।
-ও কারনে না মানে?তাহলে কি হয়েছে ভাইয়া?খুশির মধ্যে এমন মুখ করে আছিস কেনো?
আরমান ছলছল চোখে আরিশার দিকে তাকিয়ে বললো,
-মিথিকে আবার কষ্ট দেবো রে।ওকে আবার কষ্ট পেতে হবে।কি করে সহ্য করবো আমি ওর কষ্ট?কি করে ও মানবে?সবেতো স্বপ্ন দেখতে শুরু করলো,কিভাবে এতো তাড়াতাড়িই ওর রঙিন দুনিয়াটাকে ফ্যাকাশে করে দেবো বল?কেনো এগুলোই করতে হচ্ছে আমাকে?বারবার শুধু কষ্টই পাচ্ছি যে আমি এসবে!
#চলবে…
®