#জীবন মানে তুমি
#লেখিকা:H.B.Rini (Irini Ori)
#পর্ব:৬৮
(২২৯)
ইয়ারাবী সোফায় বসে পা দুলিয়ে আমের আচার খাচ্ছে আর এদিকে ইয়ামিলা গালে হাত দিয়ে ওকে দেখছে।ইয়ারাবী বোনের এভাবে তাকানো দেখে ভ্রু কুঁচকে কপট রাগ দেখিয়ে বলে,
-“খবরদার নজর দিবিনা আর আচারে।”
-“আপু এতো আচার তুই একা খাবি,দোলাভাই জানলে খুব রাগ করবে।একটু আমাকে দিলে কী হয়?”
-“যা ভাগ,তোর মায়ের কাছে যেয়ে চাস।”
-“আমার মা,তোর মা হয়না বুঝি?”
ইয়ারাবী বোনের দিক থেকে চোখ সরিয়ে বলে উঠে,
-“না,হয় না।দেখ ইয়ামিলা শুধু তোর জোড়াজুড়িতে আমি এই বাসাতে এসেছি।আল্লাহ জানে ইফাজ ভাইয়ার রাগ কমেছে নাকী?”
ইয়ামিলা ওর ফোনটা উঠিয়ে বোনের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে,
-“এই আপু,একবার ফোনটা দিয়ে দেখবি নাকী?আমার মনে হয়না,ভাইয়া আর কিছু করবে।কেননা উনারা তো চট্রগ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছে।তুই মিছে মিছে ভয় পাচ্ছিস।”
-“উহু,এটা মিছে মিছে নয় রে।ভাইয়া রাগটা চেপে রেখেছে,পরে শোধ তুলবে স্টারপুর উপর।”
-“আরে কিছুই হবেনা,বাদ দে তো।ভাইয়াকে দেখলাম উনি কতটা হাসি মুখে আপুর সাথে বের হচ্ছেন বাসা থেকে।তাছাড়া তুমি যায় বলো না কেন,ইফাজ ভাইয়া খুব শান্ত।একটু রাগারাগি করেছে তবে কিছু হবেনা আমার বিশ্বাস।”
ইয়ারাবী বাম হাত দিয়ে ইয়ামিলার মাথায় চাটি মেরে বলে,
-“গাধী তোর বিশ্বাসের গুলি মারি!ভাইয়াকে তোর থেকে বেশি ভালো করে আমি চিনি। যে মানুষ বেশি শান্তশিষ্ট হয়,তাদের রাগ সবথেকে বেশি হয়।তেমনি ইফাজ ভাইয়ার রাগটাও।ভাইয়া বেশি রাগারাগি করেনা,কিন্তু যখন রেগে যায় তখন তাকে কেউ থামাতে পারেনা।উনি সবার সামনে যতটা নরমাল দেখাচ্ছে,ভিতরে ঠিক ততটাই রাগ পুষে রেখেছে যা সুযোগ পেলে স্টারপুর উপর ঝাড়বে।”
-“কিন্তু আপু,তারা আপুকে ভাইয়া মাফ করে দিয়েছে।”
আসলে ঘরের মধ্যে তারা আর ইয়ারাবী যখন কথা বলছিলো তখন যে তৃতীয় ব্যাক্তি তাদের কথা শুনছিলো সে আর কেউ নয় স্বয়ং ইফাজ।ঘরে আসছিলো চট্রগ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা দেওয়ার জন্য তৈরি হতে।কিন্তু ঘরে ঢোকার পূর্বেই দরজায় লাগানো পর্দার আড়াল থেকে দুই জনের কথোপকথন শুনে থমকে যায়।ও কখনো তারার থেকে এমন কিছু আশা করেনি আর না কল্পনাতে ভাবতে পারে।কেননা তারা ইয়ারাবী কতটা ভালোবাসে সেটা ওরা জানে।ইফাজের ইয়ারাবী ফ্লোরের পরে থাকার মুহুর্তটা ভাবতেই গায়ে কাঁটা দিচ্ছে,আরেকটুর জন্য বড় আঘাত থেকে বেঁচে গেছে।রাগে শরীর ফেঁটে যাচ্ছে ইফাজের,দ্রুত পায়ে ঘরে প্রবেশ করে তারাকে বোনের কাছ থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে জোরে একটা থাপ্পড় মারে।ঘটনাটা এত দ্রুত ঘটেছে যে কেউ কিছু বুঝতে পারেনি।ইয়ারাবী তারাকে বিছানা থেকে তুলে ইফাজের দিকে তাকিয়ে বলে,
-“এসব তুমি কী করছো ভাইয়া?পাগল হয়ে গেছো?”
-“ইয়ারাবী এর মধ্যে আর একটা কথাও বলতে আসবিনা তুই।ওকে যে আমি এখনো মেরে ফেলিনি সেটাই ওর ভাগ্য।”
ইফাজ অনেকটা চিৎকার করে কথাটা বলে।ভাগ্য ভালো ওর ঘরটা কোণার দিকে তাই নিচের কেউ শুনতে পায়নি।তবে ইয়ামিলা ওর পাশ থেকে যাওয়ার সময় চেঁচামেচির আওয়াজ শুনে ঘরে ঢুকে দেখে ইফাজ রাগারাগি করছে।ইয়ারাবী ওর ভাইয়ের সামনে দাঁড়িয়ে রাগী কন্ঠে বলে,
-“তোমার সাহস তো মন্দ নয় ভাইয়া,তুমি আমার বোনকে মারো।”
-“আর ও যে তোকে মেরে ফেলতে চেয়েছিলো সেই বেলায়।তুই কী ভেবেছিস সত্য ধামাচাপা দিলে সব মিলিয়ে যাবে?তুই যে মিথ্যা বলতে পারিসনা সেটা খুব ভালো করেই জানি।সামনে থেকে সর আজ তো আমি ওকে মেরেই ফেলবে।ইয়ামিলা বাবাকে ডেনে আন,এর মতো ডাইনি,খুনির সাথে সংসার করার কোনো ইচ্ছায় আমার নেই।”
তারা বিছানায় মুখে হাত দিয়ে কান্না করছে।ইয়ারাবী ইয়ামিলার দিকে তাকিয়ে বলে,
-“কোথাও যাবিনা তুই?আর ভাইয়া ওটা একটা অ্যাক্সিডেন্ট ছিলো।”
-“চুপ!একদম চুপ থাকবি,আমি কী বাচ্চা যে দুইকে চার বোঝালে আমি বুঝবো?আর কার জন্য তুই সাফাই গাইছিস।একে তো আজ আমি…”
কথাটা বলেই ইফাজে তারার চুলের মুঠি ধরে যেই মারতে যাবে তখনি ইয়ারাবী আর ইয়ামিলা মিলে ওকে আটকায়।ওর শক্তির সাথে কী পারা যায়?তবুও অনেক কষ্টে ওকে তারার থেকে ছাড়ায়, ইয়ামিলা দৌঁড়ে ঘরের দরজা দিয়ে দেয় যাতে করে শব্দ বেশি বাইরে না যায় আর না কেউ বুঝতে পারবে।
-“তুমি এমন নিকৃষ্ট মানুষের মতো আচারণ করছো কেন?আমার ভাবতেও লজ্জা লাগছে তুমি আমার সেই ভাইয়া যে মেয়েদের ওপর হাত তোলাকে ঘৃণা করে।”
-“লেকচার দিবিনা,তুই জানিস যদি কিছু হয়ে যেত তবে তোর বাঁচাও মুসকিল ছিলো।এই মেয়েটা নিজের জেদ তোর উপর তুলতে চেয়েছিলো।আমি ওর সাহস দেখে অবাক হচ্ছি।”
এবার তারা মুখ খুললো,ও উঠে ইফাজের সামনে দাঁড়িয়ে শক্ত কন্ঠে বলে,
-“তো কী করবো?আপনি নিজেই আমাকে ধর্ষিতা বলে অপবিত্র ব্যাখা দিয়েছেন,যাকে ছুঁতে আপনার ঘৃণা হয়।সেখানে আপনি আপনার বোনকে মাথায় তুলে রেখেছেন।কিছুটা সময়ের জন্য আমি নাই রাস্তা ভুল করেছিলাম।”
-“কিছুটা ভুল,তোমার এটা কিছুটা ভুল মনে হয়?একটা আঘাতে ওর জান চলে যেতে পারতো সেখানে এটা সামান্য ভুল।আর কী বললে ঘৃণা করি?হ্যাঁ,আমি তোমাকে ঘৃণা করি।তোমার মতো চুপ করে মুখ বুজে সহ্য করা লোককে আমি ঘৃণা করি।‘অন্যায় যে করে আর অন্যায় যে সহে দুই জনেই সমান অপরাধী।’তেমন অপরাধী তুমিও।”
-“তো কী করতাম আমি?সমাজে সারাজীবন দাগ বয়ে বেড়ানোর জন্য প্রতিবাদ করতাম।তাতে মাথা উঁচু করে বাঁচতে পারতাম কী?”
ওর কথা শুনে ইফাজ পাগলের মতো হাসতে হাসতে বলে,
-“পিচ্চি দেখ তোর আর্দশবান আপুকে,যে ককীনা ববাচ্চাদের সঠিক পাঠ পড়ায়।সত্যিই এর থেকে আর কী হাস্যকর হতে পারে?ওহ্ তাহলে তারা সারা জীবন অন্যায় সহে যাওয়ার শিক্ষা দিবে নাকী নিজের ছেলে-মেয়েকে।অবশ্য তোমার মতো মেয়ের থেকে তার বাচ্চারা কীই বা শিখবে?এমন নিচু মানসিকতা সম্পন্ন মানুষের সাথে সারা জীবন থাকা অন্তত আমার পক্ষে সম্ভব নয়।আর বোনকে কেন মাথায় রাখী?কারণ সে তোমার মতো নিচু মানসিকতার মেয়ে নয়।অন্যায় হলে এ কখনো চুপ থাকেনা তোমার মতো,যেখানে ওর নিজের পরিবার ওর বিরুদ্ধে ছিলো সেখানে ও প্রতিবাদ করেছে।”
-“ইফাজ আমি…..”
-“ব্যাস,নিজের রাগ মিটাতে এই জন্য মেয়েটাকে মারতে চেয়েছিলে?”
-“আপনি কী বলছেন এসব?আমি ইচ্ছা করে করেনি এসব,এই পুতুল বলনা তোর ভাইয়াকে?”
-“ও কী বলবে?তোমার এটাকে যদি ভুল হয়ে থাকে তবে পরে এর থেকেও বড় অপরাধ করে বসবে তুমি।চট্রগ্রাম যাচ্ছো আর ওখানেই থাকবে তুমি,তোমার বাবা-মার জানা উচিত তাদের মেয়ে কেমন?”
ইয়ারাবী দেখলো ঘটনাটা অনেক বড় আকার ধারণ করেছে।এবার না থামালে অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যাবে।তবে ইফাজের আজকের রুপ দেখে ওর নিজেরই এই প্রথম ভয় লাগছে,তবুও মনে অনেক সাহস জুগিয়ে ভাইকে বোঝাতে থাকে।যখন কিছুতেই কিছু হচ্ছেনা তখন নিজের কসম কেঁটে দেয়।ও জানে কসম কাঁটতে নেয় কিন্তু এই মুহুর্তে এটা ছাড়া আর কোনো উপায় পায়নি।ইফাজ কসমের কথা শুনে ওকে চড় মারতে যেয়েও হাতটা নামিয়ে নিয়ে রাগী কন্ঠে ওর দুই বাহু শক্ত করে আঁকড়ে ধরে বলে,
-“তুই জানিস না নিজের কসম দিতে নেই,এসব শিরক,বারণ করেছিনা এসব করতে।”
-“ত্ তো কী করবো?তোমরা যা শুরু করেছো তাতে এটাই স্ সঠিক বলে মনে হয়েছে।”
-“খুব বোঝা শিখেছিস তুই?”
-“আ আমি সেটা বলিনি।ভ্ ভাইয়া আমি ব্ বলছিলাম কী স্টারপুকে মাফ করে দাও তুমি।দেখ আমাদের তো কিছু হয়নি তাইনা,তাহলে তুমি এটা নিয়ে আর রাগারাগি করেনা প্লীজ।দেখ রাগরাগি, ক্রোধ এগুলো সম্পর্ক নষ্ট করে দেয়।আর এ কারণেই নবীজি (সা.) রাগকে বলেছেন, ‘আদম সন্তানের অন্তর একটি উত্তপ্ত কয়লা’ (তিরমিজি)। আল্লাহর ক্ষমা পেতে হলে তাঁর বান্দাকে ক্ষমা করতে হবে। কোরআনে বলা হয়েছে, ‘তোমরা তোমাদের পালনকর্তার ক্ষমা এবং জান্নাতের দিকে ছুটে যাও, যার সীমানা হচ্ছে আসমান ও জমিন, যা তৈরি করা হয়েছে পরহেজগারদের জন্য। যারা সচ্ছলতায় ও অভাবের সময় ব্যয় করে, যারা নিজেদের রাগকে সংবরণ করে আর মানুষকে ক্ষমা করে, বস্তুত আল্লাহ সত্কর্মশীলদিগকেই ভালোবাসেন।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৩৪)।আমাদের প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) প্রচুর আত্মসংযম ও ধৈর্যশীলতার পরিচয় দিয়েছেন, যখন তাঁকে অপমান, অপদস্থ ও শারীরিক নির্যাতন করা হয়েছিল। রাগ নিয়ন্ত্রণ আল্লাহকে সন্তুষ্ট করে। যে ব্যক্তি রাগ নিয়ন্ত্রণ করে, সে আধ্যাত্মিকভাবে এবং জাগতিকভাবেও পুরস্কৃত হয়। নবীজি (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি নিজের ক্রোধ চরিতার্থ করার ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও তা সংবরণ করে, আল্লাহ তাকে কিয়ামতের দিন সমগ্র সৃষ্টির সামনে ডেকে আনবেন এবং জান্নাতের যেকোনো হুর নিজের ইচ্ছামতো বেছে নেওয়ার অধিকার দান করবেন।’ (ইবনে মাজাহ: ৪১৮৬)। রাসুলুল্লাহ (সা.) আরও বলেন, ‘আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য বান্দার ক্রোধ সংবরণে যে মহান প্রতিদান রয়েছে, তা অন্য কিছুতে নেই।’ (ইবনে মাজাহ: ৪১৮৯)।
এক ব্যক্তি নবীজি (সা.)-কে বললেন, ‘আপনি আমাকে অসিয়ত করুন। তিনি বললেন, “তুমি রাগ করো না”। ওই ব্যক্তি কয়েকবার তা বললেন। নবীজি (সা.) প্রতিবারই বললেন, “রাগ করো না”।’ (বুখারি, খণ্ড: ৮, অধ্যায়: ৭৩, হাদিস: ১৩৭)। রাসুল (সা.) বলেন, ‘যদি তোমাদের কেউ দাঁড়ানো অবস্থায় রাগান্বিত হয়ে পড়ে, তবে তার উচিত বসে পড়া। যদি তার রাগ কমে যায়, তবে ভালো; নয়তো তার উচিত শুয়ে পড়া।’ (তিরমিজি)।নবী করিম (সা.) আমাদের উপদেশ হিসেবে আরও বলেছেন রাগান্বিত অবস্থায় অজু করতে, যা রাগ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাপনার একটি উত্তম পদ্ধতি। নবীজি (সা.) বলেন, ‘রাগ আসে শয়তানের পক্ষ থেকে; শয়তানকে তৈরি করা হয়েছে আগুন থেকে, আর একমাত্র পানির মাধ্যমেই আগুন নেভানো সম্ভব। তাই তোমাদের মধ্যে কেউ যখন রাগান্বিত হয়ে পড়ে, তার উচিত অজু করা।’ (আবু দাউদ)। এ ছাড়া নবীজি (সা.) শয়তানের প্রভাব থেকে বাঁচার জন্য অন্যান্য পদ্ধতি প্রয়োগের কথাও বলেছেন। নবী করিম (সা.) বলেন, ‘আমি এমন একটি কালেমা জানি, যা পাঠ করলে ক্রোধ দূর হয়ে যায়। (আর তা হলো) “আউযু বিল্লাহি মিনাশ্ শাইত্বনির রাজিম” অর্থাৎ, আমি বিতাড়িত শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে আল্লাহর কাছে পানাহ চাই।’ (মুসলিম, অধ্যায়: ৩২, হাদিস: ৬৩১৭)।ভাইয়া তুমি এটা পাঠ করো দেখবে রাগ কমে যাবে।তাছাড়া কোরআনেও বলা আছে,সমুদ্রের ফেনার সমপরিমাণ গুনাহ্গার আল্লার কাছে ক্ষমা চাই তাহলে আল্লাহ্ তার বান্দাকে ক্ষমা করে দেন।তাহলে আমরা আল্লাহর বান্দা,নবীজির উম্মত হয়ে ক্ষমা কেন করতে পারবোনা।ভাইয়া আমার একটা কথা রাখো,কেউ যেন কাল রাতের কিছু জানতে না পরে।তুমি জানো খালু,ভাইয়া বিশেষ করে আমার স্বামী কেমন?তোমার কাছে আমার অনুরোধ এই বিষয় নিয়ে আর কোনো কিছু বলবেনা তুমি স্টারপুকে।আর তোমাদের স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কী হয়েছে সেটা আমি জানতে চাইনা।কারণ সেটা একান্ত তোমাদের ব্যাক্তিগত ব্যাপার।”
অনেক বোঝানোর পর ইফাজ বোনকে দেখায় ও কিছু বলবেনা আর এই বিষয়ে,কিন্তু একমাত্র উপরওয়ালা জানে ওর মনে অন্যকিছু চলছে নাকী?একবারে গুছিয়ে চারজনই নিচে নেমে আসে,ইফাজ খুব শান্তভাবে সবার সাথে কথা বলে।ইয়ারাবীর কপালে ভাঁজ পরে যায়,কেননা ইফাজের শান্ত রুপ যে কতটা ভয়ানক সেটা ও জানে।তাই ইফাজ-তারার সাথে ইমন আর নুসরাতকে পাঠায় চট্রগ্রামে।ইয়ামিলা অনেকক্ষণ ধরে বোনের অন্যমনস্ক দেখে হালকা ধাক্কা দিয়ে বলে,
-“এই আপু চুপ হয়ে গেলি কেন?”
-“না কিছুনা।আচ্ছা শোন,এসব ব্যাপারে তোর দোলাভাই যেন জানতে না পারে।অনেক কষ্টে ভাইয়াকে মানিয়েছি যাতে বাড়ির কাউকে না বলে,তাই তোর দোলাভাই এর কানে যায়নি।উনি জানলে স্টারপুর সাথে দেখা তো দূরে থাক কথা পর্যন্ত বলতে দিবেনা।”
-“পাগল না আমি যে দোলাভাইকে ক্ষ্যাপিয়ে নিবো।”
-“কী ব্যাপার শালিক পাখি?মনে হচ্ছিলো তুমি আমাকে স্মরণ করছিলো।”
আবরার ব্লু গেন্জি আর সাদা ট্রাউজার পরে সিঁড়ি দিয়ে নেমে সোফায় বসে আড়মোড়া ছাড়তে ছাড়তে কথাটা বলে উঠে।ইয়ারাবী ওর দিকে তাকিয়ে দেখে মাথার চুলগুলো কিছুটা এলোমেলো হয়ে আছে,আর গলায় একটা আঁচড়ের দাগে।দাগটা দেখেই ইয়ারাবী বাটিটা রেখে ওর পাশে বসে গলায় হাত দিয়ে উত্তেজিত কন্ঠে বলে,
-“কী হয়েছে আপনার এখানে?”
-“কী আর হবে?তুমি তো জানো,ওই বাসা থেকে এসে একটু ঘুমিয়েছিলাম।একটু আগে চেলসি আর ইনি দু’টো মারামারি শুরু করেছিলো।ঘুম ভেঙ্গে এসব দেখে ওদের আটকাতে যেয়ে ইনির নখের অাঁচড় লেগে গেছে।”
-“কী?আপনি বসুন আমি….”
-“রিল্যাক্স,আমি মেডিসিন লাগিয়েছে।তাছাড়া ওর ভ্যাক্সিন দেওয়া আছে কিছু হবেনা।”
-“আমি ওদের নিষেধ করেছিলাম ওর ঘরে যেতে কিন্তু….”
-“দেখ ওরা যে সবটা বোঝে তাও নয়,বুঝলাম না আজ হঠাৎ দুইটা মিলে মারামারি শুরু করলো কেন?”
ইয়ামিলা মিনিকে কোলে নিয়ে বলে,
-“ওদের কী হয়েছে সেটা ওদের কাছে শুনলেই তো হয় দোলাভাই?”
-“কী ব্যাপার শালিকপাখি?মনে হচ্ছে আমার উপর রাগ করেছো?”
-“তা তো করেছি,আপনি কাল কী বলেছিলেন মনে আছে?”
আবরার সোফায় মাথাটা এলিয়ে দিয়ে ডান হাত দিয়ে চুলগুলো মুঠো করে বলে,
-“ও এবার মনে পরেছে।জারা আসুক তারপর….”
-“মনে থাকে যেন?”
অাবরার হেসে মাথাটা নাঁড়ায় অর্থাৎ মনে থাকবে তার।মিসেস ইশানি কিচেন থেকে বের হয়ে এসে একটা ট্রেতে করে ফুসকা,চটপটি,নুডুলস্, বিস্কিট, আপেল-কমলা আর কফি ওদের সামনে রেখে বিকালের নাস্তা করে নিতে বলেন।আবরার শ্বাশুড়ির দিকে তাকিয়ে বলে,
-“আম্মু আপনিও বসেন আমাদের সাথে।”
-“না বাবা,রাতের খাবারটা গুছাতে হবে।”
-“আব্বু কখন আসবে?”
-“আটটার দিকে তো তোমার অফিস ছুটি দেয়।”
-“ওহ্ ভুলে গেছিলাম।খাবার পরে তৈরি করবেন আগে আপনি নাস্তা করে নিন।”
-“না না তোমরা করো,এমনিতেও আমি বিকালে কিছু খায়না।”
ইয়ারাবী এতক্ষণ অাড়চোখে ওদের দেখছিলো আর কথা শুনছিলো।মিসেস ইশানি বড় মেয়ের মাথায় হাত রেখে বলেন,
-“তুই যা যা পছন্দ করিস আমার বল,রাতে সেগুলো রান্না করবো।আর নাস্তা কর,এই সময় বেশি বেশি খেতে হয়।”
ইয়ারাবী এমন একটা ভাব করলে যেন ও মায়ের কথা কিছুই শুনতে পায়নি।জোরে জোরে চিৎকার করে মিনাকে ডাকতে লাগলো সে,কিছুক্ষণের মধ্যেই মিনা ছাদে শুকাতে দেওয়া শুকনো কাপড়গুলো একটা লম্বা ঝুড়িতে এনে ডাইনিং এ রেখে হাফাতে হাফাতে বলে,
-“কিছু কইবা আপু?”
-“এমনিতে তো আর ডাকিনি,নিশ্চয়ই কিছু বলার জন্য ডেকেছি।আর তোকে কতবার বলেছি শুদ্ধ ভাষায় কথা বলবি।”
-“আচ্ছা,এখন বলো।”
-“আমাকে একটু চা আর পাকোড়া বানিয়ে দিবি, একটু নাস্তা করবো।”
মিনা নাস্তার কথা শুনে টি টেবিলের দিকে তাকায় তো একবার ইয়ারাবী আর ওর মায়ের দিকে তাকায়।মিসেস ইশানি মিনার দিকে তাকিয়ে বলে,
-“তুই রান্নাঘরে গিয়ে ফ্রিজে রাখা খাসির মাংস আর মাছগুলো পানিতে ভেঁজা।”
-“জ্বি,আচ্ছা।”
ইয়ারাবী কোলের উপর রাখা কুশনটাকে পাশের রেখে মিনার দিকে তাকিয়ে বলে,
-“আগে আমার কাজ করবি তারপর বাকী সব।”
-“জ্ব জ্বি,আচ্ছা।”
মিনা ওদের কথা শুনে দ্রুত রান্নাঘরে পা বাড়ায়, ওর বুজতে বাকী নেই যে মেয়েটা মায়ের সাথে যুদ্ধ লেগেছে।অবশ্য দুপুর থেকে এসেই এমনটা করছে, মিসেস ইশানি একটা কিছু করলে ও ঠিক তার উল্টোটা করছে আর মাঝে ফাঁসছে মিনা।আবরারও ওকে অনেক বুঝিয়েছে যে,আম্মু যেটা করছে সেটা মন থেকেই করছে কোনো লোক দেখানো নয়।তোমার সাথে যা করেছে তার জন্য এই কয় বছর খুব অনুতপ্ত হয়েছে।কিন্তু এই মেয়ে কারোর কথা শুনা মেয়ে নয়,আর ওর স্বামীও বেশি জোর খাটাচ্ছেনা।কারণ এই সময়ে বেশি চাপ দেওয়া ওর ঠিক হবেনা।মিনা দুপুরের কাহিনি ভাবছে আর পিঁয়াজ কাঁটছে,ঠিক তখনি ইয়ামিলা এসে ফ্রিজ থেকে ঠান্ডা পানি গ্লাসে ঢালতে ঢালতে বলে,
-“মিনা আপু,গৃহযুদ্ধ কাকে বলে দেখছো?”
-“হ্,আজকে যা দেখলাম তাতেই আমার পাগল পাগল লাগছে।দুপুর বেলা খালাম্মা আপারে ঠান্ডা শরবত বানিয়ে দিতেই আপা নিজে রান্নাঘরে এসে ট্যাং গুলিয়ে নিয়ে চলে গেলো।আবার ফালুদা বানিয়ে দিলো তো আপা ফ্রিজ থেকে আমের আচার এক বাটি নিয়ে খাইতে বসলো।”
-“আমার তো এদের দুই জনের মুখের রিয়্যাকশন দেখে হাসি আসছে।জানো আসার পথে দোলাভাই আপুকে কত বুঝালো আর আপুও সুন্দর করে মাথা নাঁড়িয়ে কথায় তাল দিলো।কিন্তু আবার শুরু করেছে।”
-“হ্,ভালো করে বুঝছে বলেই তো গৃহযুদ্ধ চলছে।একটা কথা কও তো মিলা?আপা তো এতো ত্যাড়া মানুষ দোলাভাই এর লগে ঝগড়া হয়না।”
ইয়ামিলা হাসতে হাসতে বলে,
-“আমার আপুর ত্যাড়ামি শুধুমাত্র দোলাভাই ঠিক করতে পারে।আচ্ছা,শোনো আম্মু বললো সবজিগুলো কেঁটে রাখতে।আমি গেলাম….”
ইয়ামিলা গ্লাসে পানি নিয়ে ড্রইংরুমে এসে দেখে ইয়ারাবী টিভির দিকে তাকিয়ে মুখ ফুলিয়ে একটা একটা করে ফুসকা খাচ্ছে।আর আবরার আর ওর মা ওর দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসি দিচ্ছে।ইয়ামিলা গ্লাসগুলো টেবিলে রেখে বোনের দিকে তাকিয়ে বলে,
-“আপু তুই বলে এসব খাবিনা,তাহলে খাচ্ছিস কেন?”
ইয়ারাবী আর চোখে ওর দিকে তাকিয়ে বলে,
-“মানুষের কষ্টের মূল্য দিতে হয়,তাছাড়া আমি স্বার্থপর নই।এই বাড়ির প্রতিটা জিনিসের উপর আমারও অধিকার আছে ভুলে যাবিনা।”
ইয়ামিলা অবাক হয়ে যায় কথাগুলো শুনে,কারণ বোনকে আগে কখনো এমন করে কথা বলতে দেখেনি।ও হজম করতে না পেরে ওর মায়ের দিকে তাকাতেই উনি বলে উঠেন,
-“এভাবে না দাঁড়িয়ে থেকে খেয়ে পড়তে বসবি।”
-“ও হ্যাঁ,তুমি যাও।”
আবরার সোফায় বসে কফি খাচ্ছে আর ফোন চালাচ্ছে।ইয়ামিলা মিনিকে সরিয়ে পাশে বসে যেই ফুসকায় হাত দিতে যাবে ওমনি ইয়ারাবী চেঁচিয়ে বলে উঠে,
-“ওই ফুসকায় হাত দিবিনা,ওইটা আমার।”
-“আপু এটা ঠিক না,তুই সব নিবি এটা কেমন কথা।তাছাড়া এই সময় বেশি ফল খেতে হয়,সেটা না করে তুই ফুসকা-চানাচুর-আচার খেয়ে বেড়াচ্ছিস।আমার তো এবার সন্দেহ হচ্ছে তুই আদেও ডাক্তারি পড়ছিস নাকী?”
-“ওই পুচকি,চুপচাপ থাকবি নয়তো কানের নিচে লাগাবো একটা।”
ইয়ামিলা ভয়তে আর কিছু বলেনা,চুপ করে ভদ্র মেয়ের মতো চটপটির বাটি নিয়ে খেতে থাকে।তবে এটা ভেবে ওর খুব ভালো লাগছে যে ওর বোনও বাকী সব ভাই-বোনদের মতো ওর সাথে ব্যবহার করছে।এখন অনেকটা ভালো লাগে ইয়ামিলার।
(২৩০)
আজ অনুর অাশীর্বাদ,সকাল থেকে বেশ তোড়জোড় শুরু হয়ে গেছে।সব আত্মীয়-স্বজনরা আসতে শুরু করেছে।অনু বাড়ির উঠানের বেল গাছের নিচে একটা টুলের উপর বসে পার্লারের মেয়েদের কাছ থেকে হাতে মেহেদী নিচ্ছে।আর ওর পাশেই ইয়ারাবী অনুর প্রিয় দোলনায় বসে দোল নিচ্ছে আর আচার খাচ্ছে,ওরা কাল বিকালেই এসেছে অনু আর ওর পরিবারের জোড়াজুড়িতে।অাবরার প্রথমে আসতে চাইছিলোনা তবে পরে ইয়ারাবীর কান্নার জন্য নিয়ে এসেছে রংপুরে,তবে ওর কড়া নিষেধ কোনো লাফালাফি নয়,আর যদি ওর গ্রামের কোনো পরিচিত মানুষ থাকে তবে ও যেন তাদের এড়িয়ে চলে।অনু অনেকক্ষণ ধরে ইয়ারাবীকে দেখছে,এবার না পেরে বিরক্ত নিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে বলে,
-“খাবার তো কিছুই খেলিনা সব বমি করে দিলি, এখন আবার আচার খাচ্ছিস।”
-“আমি খাবো তাতে তোর কী?”
-“তোকে তো….ওই এক মিনিট তুই কুলের আচার খাচ্ছিস?”
-“শুধু কুল নয় বান্ধুপি চালতা আর গুঁড়া লঙ্কা দিয়ে তেঁতুলের আচার,কেন?তবে তুই চাইলেও এখন দিতে পারবোনা, অনেক সুস্বাদু হয়েছে।কাকীমার হাতে জাদু আছে বলতে হবে।”
-“বেয়াদপ মেয়ে,দে আমার একটু।জানিস মা কখনো আমাকে ওই তিনটা বোয়েম ছুঁতেও দেয়নি।আর এখন তোকে দিয়ে দিলো,এটা অন্যায়।দ্বারা মা ওমা এদিকে আসো….”
ইয়ারাবী হাসতে হাসতে ওর দিকে তাকিয়ে আচার খাচ্ছে আর ওর মুখ ফোলানো দেখছে।অনুর মা রান্নার দিকটা দেখছিলেন তখন মেয়ের ডাক শুনে হন্তদন্ত হয়ে এসে দেখে মেয়ে মুখ ফুলিয়ে মেহেদী লাগাচ্ছে।উনি মেয়েকে ধমক দিয়ে বলেন,
-“তোর কী কোনোদিন কান্ড-জ্ঞান হবেনা?একটুর জন্য ভেবে বসেছিলাম কী না কী যেন হয়েছে?”
-“অনেক কিছুই হয়েছে?”
-“কী হয়েছে শুনি মহারানী?”
অনু অনেকটা মাসুম চেহারা বানিয়ে মাকে বলে,
-“মা এটা অন্যায়,ঘোর অন্যায়।এটাকে আমি ১৪৪ ধারায়….আচ্ছা বাদ দাও।মা তুমি ওই আচার আমাকে ছুঁতেও দাওনি, বলেছো তোমার মেয়ের জন্য করা।তুমি তো আমি বাদে নিজের ভাইয়ের মেয়ে অন্নপূর্ণা দিদিকে মেয়ে মানো।তাহলে ওই আচার অন্নপূর্ণা দিদির জন্য করেছো বলে আমাকে দাওনি,তাহলে ওকে কেন দিয়েছো?এটা অন্যায়।”
-“তোরে কে বলেছে ওই আচার অন্নপূর্ণার জন্য গাধা।”
-“মানে?”
উনি মেয়ের মাথায় একটা চাটি মেরে বলেন,
-“তোকে যেমন ওর মা নিজের মেয়ে মানে তেমন আমিও ইয়ারাবীকে নিজের মেয়ে মনে করি পাগল।ওইগুলো ওর জন্যই করেছিলাম,ইশাদিদির কাছে শুনেছিলাম ও কিছু খেতে পারেনা তাই করেছি।”
-“তাই বলে আমাকে দিলেনা।তুমি জানো ও আমার সাথে সব ভাগ করে তাহলে তুমি কেন আচার দিবেনা।এটা অন্যায়,তুমি ভুলে যাবেনা আমি আইন নিয়ে পড়ছি।আমি চার্জ সিট তৈরি করে এর বিচার করবো।”
-“ওরে আমার আইন আইছে,চুপ কর।তোর সব আইন পাশ করে কোর্টে দেখাস।আমাকে আসছে আইন দেখাতে।”
অনু ওর মায়ের কথা শুনে পুরো পাগল হয়ে যায়, তবে এটা নতুন নয়।যখনি ও মায়ের সথে পেরে না উঠে আইন টেনে আনে তখনি শুনতে হয় মায়ের বিখ্যাত বক্তব্য।অনুর মা ইয়ারাবীর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে,
-“মা তোকে আরেকটু এনে দিবো?”
-“না কাকীমা,এটাই অনেক।আচ্ছা তুমি নাড়ু বানিয়েছো।”
-“সব করেছি।”
অনু ইয়ারাবীর দিকে তাকিয়ে একটু বাঁকা হেসে বলে,
-“মা তুমি তো দেখছো ও কত বমি করেছে,আর তুমিই তো বলো বমি হলে আচার না খেতে।তাহলে ওর এখন খাওয়া উচিত নয়।আমি বুঝলাম না ইয়া,তুই ফিউচার ডাক্তার হয়ে এটা বুঝিস না।”
-“চুপ কর বেয়াদপ,মেয়েটাকে একটু শান্তিতেও খেতে দিচ্ছিস না।তুই কী জানিস এসবের?এ সময় বমি হওয়া স্বাভাবিক,আর ভবিষ্যৎ মায়েরা টকই খায় গরু।আমি যাচ্ছি খবরদার একে জ্বালাবিনা।”
অনুর মা চলে যেতেই ইয়ারাবী হাসতে হাসতে বলে,
-“কে কাকে দিলো বল?তবে যাই ববলিস কাকীমার তোকে দেওয়া নামগুলো খুব সুন্দর।আচ্ছা এক চামচ নে।”
-“লাগবেনা তুই খা।”
-“একটু নেনা প্লীজ,নয়তো আমার বাবুরা মন খারাপ করবে।”
-“হায়রে ভগবান!দে নিচ্ছি,আচ্ছা শুনুন আমার হাত কম্পিলিট হলে ওর হাতেও মেহেদী লাগিয়ে দিবেন।”
-“উহু,আমি নিবোনা।”
-“আপনারা ওর কথা শুনবেন না।”
অনু ওর কাছ থেকে এক চামচ ঝাল ঝাল তেঁতুলের আচার গালে দিয়ে পার্লারের মেয়ের কথা বললো।ইয়ারাবী কিছু একটা ভেবে বলে উঠে,
-“ওই অনু!”
-“হ্যা বল..”
-“আমার বরটা কইরে?সকালে ব্রেকফাস্টের পর আর নজরে আসছেনা,এমনটা কখনো করেনা।একাই তো ছাড়তে চায়না অফ ডেতে মিনিটে মিনিটে উপদেশ দেয় তার আজ যে কোনো পাত্তা দেখছিনা।”
-“গাধী,জিজু জানে তুই আমার কাছে সেফ আর বাড়ির মধ্যে আছিস।তাছাড়া দাদার সাথে জিজু বাজারের গেছে মনে হয়।”
-“বলেও গেলোনা।”
-“কীরে বরকে যে এখন চোখে হারাস?”
-“এমন কিছুনা,একটু তো চিন্তা হয়।”
টুকটাক কথা বলতে বলতে অনুকে মেহেদী থেকে সাজানো কম্পিলিট করা হয়ে যায়।দুপুর তিনটার দিকে প্রত্যয়রা আসে।যেহেতু আজ ইনগেজমেন্ট এর কাজও হবে তাই প্রত্যয় তার সব কাছের বন্ধুদের নিয়ে এসেছে।তাদের মধ্যে ইরাকও ছিলো,তবে ইফাজ কেন আসেনি সেটা কেও জানেনা।সেইদিন অনুষ্ঠানটা সুষ্ঠভাবে সম্পন্ন হয়ে গেছে।অনুষ্ঠানে সবাই উপস্থিত ছিলো একমাত্র প্রত্যয়ের বাবা আর মাসি বাদে।তবে প্রত্যয়ের বাবার প্রতি রাগ উঠলেও প্রাপ্ত ওকে সামলে নেয়।এদিকে ফিলা পুরোটা সময় অনুর সাথে থেকে ‘ভৌমনি ভৌমনি’ বলে এটা ওটা জিজ্ঞেস করেই যাচ্ছিলো।
(২৩১)
দেখতে দেখতে পাঁচ মাস কেঁটে গেছে,আর সময়ের সাথে সাথে যে পরিস্থিতি বদলায় সেটাও দেখা গেছে।এই পাঁচ মাসে অনেকগুলো জীবন বদলে গেছে।ইয়ারাবী অনুর বিয়ে থেকে এসে তিন দিন আরো মায়ের কাছে ছিলো,এই দিনগুলোতে ও ওর বাবা-মাকে প্রচুর জ্বালিয়েছে ছোট ছোট বিষয়গুলো নিয়েও।উনারা হাপিয়ে উঠলেও কখনো ধমক দেননি।উনারা যেন ওর মাঝে সেই পাঁচ বছরের মেয়েকে খুঁজছিলেন,কিন্তু সবাই কী সব পায়।কিছু কিছু জিনিস হারিয়ে গেলে আর ফিরে পাওয়া যায়না।ওরা লন্ডনে চলে আসার দুই মাসের মাথায় জানতে পারে মিসেস জামান মারা গেছে।কথাটা শুনে একটু হলেও খারাপ লাগে ইয়ারাবীর।তবে আবরার বাচ্চার হওয়ার আগ পর্যন্ত জার্নি করা মানা করে দিয়েছিলো।তাছাড়া ওর পরিক্ষা তিন দিন পর থেকে শুরু হয়ে যেত, তাই ফোন কলের মাধ্যমে খালাতো ভাই-বোনদের শান্তনা দিয়েছে।তবে স্ত্রী গত হওয়ার এক মাস যেতে না যেতে মি.জামান দ্বিতীয় বিবাহ করেন।যদিও উনার ছেলেমেয়ে কথাটা জানার পর প্রচুর ক্ষ্যাপে গেছে তবুও উনি সবাইকে অগ্রাহ্য করে বৌকে এনে ঘরে তুলেছেন।তাছাড়া,য়ুহারের বাবা আরেকবার হার্ট অ্যাটাক করেন যেদিন নিলয় অ্যাক্সিডেন্ট করেছিলো।খবরটা শুনেই উনি ভেঙে পরেন,তবে বর্তমানে সুস্থ আছেন।কিন্তু নিলয়ের অ্যাক্সিডেন্টে তেমন ক্ষতি না হলেও পরবর্তীতে একটা বড় ক্ষতি হয়েছে।তা হলো ইয়ারাবী ওর মাকে বলে ওর কাছ থেকে বাইক কেড়ে নিয়েছে, আর বাইকের চাবি মাকে দিতে বাধ্য হয়েছে।কেননা,য়ুহারের শেষ কথা ছিলো ও যেন বাবা-মার সব কথা শুনে আর য়ুহারের মতো ইয়ারাবীর কথা মানে।তাছাড়া ইয়ারাবী ওকে বলেছে ভার্সিটিতে উঠলে বাইক পাবে তার আগে নায়।তাই সময়ের সাথে আস্তে আস্তে সব পরিবর্তন হয়ে এগিয়ে যাচ্ছে।
ইয়ারাবী ভিডিও কলে ন্যানসির থেকে আজকের লেকচার আর নোটগুলো নিয়ে কম্পিলিট করে টেবিলে থেকে উঠে আয়নার সামনে দাঁড়ায়।ওর গায়ে প্রেগন্যান্ট মহিলাদের জন্য তৈরি আকাশির ওর কালো রঙের প্রিন্টের গাউন,দেখতে বেশ ভালোই লাগছে।বর্তমানে আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা ও।যেদিন ডাক্তার জানালো ওর জমজ সন্তান হবে যেদিন ওর খুশি দেখে কে,ডাক্তারের সামনেই ইয়াহ হু বলে চেঁচিয়ে উঠেছিলো।তবে ডাক্তাররা ওর ব্যাবহারে না চমকালেও চমকে গেছিলো তাদের এ্যাসিস্টেন্ট,কেননা ডাক্তাররা ছিলো মিক আর নিনা।যাদের কাছ ওর ট্রিটমেন্ট চলছিলো।এদিকে ইয়ারাবীর আনন্দ দেখে ওরা হাসছিলো অপরদিকে আবরারের মাথায় হাত।কেননা না জেনে ও যতবার আবরারের কানের কাছে সকাল-রাত জমজ করেছে এখন তো আরো বেশি করবে।তাছাড়া ওর দুশ্চিন্তা আরেক জায়গায়, কেননা ওর একটা বেবী জন্ম দেওয়া রিক্স সেখানে দুইটা।এরপরের থেকে ইয়ারাবীর উপর আবরারের কেয়ার আরো ডাবল হয়ে যায়,তাছাড়া ওর শ্বাশুড়ি,ফুপি শ্বাশুড়ি,ফুপাতো দুই ননদের উপদেশ তো আছে।এই একটু আগে জোর করে ওকে ফল খাইয়ে দিয়ে গেছে।
ইয়ারাবী আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের পেটের উপর হাত রেখে সন্তানদের অনুভব করে।আবরারও অফিস থেকে এসে ওর পেটে কান লাগিয়ে কথা বলে অনাগত বাচ্চাদের সাথে,তখন ইয়ারাবীর খুব হাসি পায়।ও পেটে হাত রেখে বলে,
-“পেটটা অনেকটা বড় হয়ে গেছে,ফুটবলের মতো লাগছে।আর আম্মু বললো আগের থেকে অনেকটা গুলুমুলু হয়ে গেছে।আচ্ছা বেবী তোমরা কবে আসবে।”
-“আর একমাস পর।”
ও পিছনে তাকিয়ে দেখে আবরার ঘরে ঢুকে গায়ের থেকে কোটটা খুলে কাউচে রেখে শার্টের উপরের দুইটা বোতাম খুলে কাউচে বসতেই বিছানা থেকে নেমে চেলসি ওর কোলের উপর বসে পরে।ও চেলসির গায়ে কিছুক্ষণ হাত বুলিয়ে আদর করে দিতেই ওর ঘর থেকে বেড়িয়ে যায়।ইয়ারাবী আবরারের কোটটা হাতে নিয়ে কাবার্ডে রেখে বলে,
-“আপনি ফ্রেস হয়ে আসুন আমি আম্মুকে ডিনারের জন্য ডেকে নেয়।”
-“দাঁড়াও,তোমার শীতের কাপড় কোথায়?”
-“রুমের মধ্যে তেমন শীত লাগছেনা,তাছাড়া লং হাতা জামা পরেছি।”
-“অন্তত চাদরে পরতে তো পারো,আজ স্নো নিয়ে খেলেছো তাইতো।
আবরার অনেকটা রাগী কন্ঠে বললে ইয়ারাবী মাসুম চেহারা করে বলে,
-“করতে পারলাম কোথায়?মিষ্ঠু আপু বকা দিয়ে ঘরে নিয়ে এসেছে।”
-“মিয়ো কোথায় ছিলো?”
-“দ্ দুধ গরম করছিলো।আপনি রাগ করছেন কেন?আম্মু,ফুপি সবাই বকেছে এখন আপনিও বকছেন।”
#চলবে______