জীবন মানে তুমি পর্ব-৬৭

0
3889

#জীবন মানে তুমি
#লেখিকা:H.B.Rini (Irini Ori)
#পর্ব:৬৭

(২২৫)

তারা নিজের বাবা-মাকে জড়িয়ে ধরে প্রচুর কাঁদছে,যতটা না কাল কেঁদেছিলো।আশে পাশের সবাই ওর মাথায় হাত দিয়ে চুপ করেত বলছে কিন্তু ও কেঁদেই চলেছে।আসলে মেয়েরাই বুঝতে পারে আপনজনদের ছেড়ে আসার কষ্ট,ছোট থেকে যারা সবচেয়ে আপন থাকে বিয়ের পরে তারা পর হয়ে যায়।এর থেকে বড় কষ্ট আর কী হতে পারে।মিসেস ফাতিমা মেয়ের মুখ তুলে চোখের পানি মুছিয়ে দিয়ে বলেন,
-“কী হয়েছে আমার তারা?এভাবে কাঁদে কেউ?”
-“মা…মা আমি বাড়ি যেতে চাই,তোমাদের খুব মিস্ করি প্রতিমুহূর্তে।”

তারার বাবা হেসে মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে বলেন,
-“শোনো মেয়ের কথা,এই একটা দিনে এমন হলে থাকবি কীভাবে এখানে।এটাই যে তোর আসল বাড়ি মা।এখানকার প্রতিটা মানুষ তোর পরিচিত, তোর আপনজন।এখন বলছিস বাড়ি যাবি,দুইদিন পর বলবি বাড়িতে যেতে মন টানছেনা এদের ছাড়া।”
-“আহ্হ্,তুমিও না তারার আব্বু।শোন তারা তোর শ্বশুড় বললেন,কাল ফেরানিতে যাবি তোরা।আজ তো অনেক ধকল যাবে তোদের উপর।”

তারা চোখ মুছে প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে মায়ের দিকে তাকিয়ে বলে,
-“তোমরা আজ থাকবে মা।”
-“না রে মা,কত কিছু তৈরি করা বাকী আছে।একমাত্র মেয়ে বলে কথা,জামাই আদরে কমতি রাখলে হয় নাকী?হ্যাঁ রে মা,তুই সুখী তো।”
-“তোমার কী মনে হয় মা?”
-“মনে হচ্ছে তুই ভালো নেই।”

তারা কথাটা শুনে কিছু বলতেই যাবে তার আগেই ইফাজ এসে উনাদের সালাম দিয়ে বলে,
-“আব্বু-আম্মু আপনারা এখনে,চলুন খাওয়া-দাওয়া করে নিবেন।আর তারা তুমি তো একটু বলতে পারতে।”

তারার বাবা ইফাজের পিঠে হাত রেখে বলেন,
-“আসলে মেয়েটাকে ছাড়া থাকা হয়নি,আর কখন দেখা হবে সেটাও জানিনা।তাই একটু কথা বলছিলাম।”
-“আব্বু আপনার মেয়ের সাথে যখন খুশি কথা বলবেন,আগে খাবার খেয়ে নিন।আর তারা তুমিও এসো।পিচ্চিকে দেখেছো কোথাও?”

তারা বোনের কথা শুনে হঠাৎ রেগে যেয়ে বলে উঠে,
-“আমি কী করে জানবো পুতুল কোথায়?অদ্ভুত তো!ওকী বাচ্চা মেয়ে নাকী,ওর বরকে যেয়ে প্রশ্ন করুন।”
-“তুমি এভাবে কেন কথা বলছো?আমি তো তোমার কাছেই ওকে পাঠালাম থাকতে।”

মিসেস ফাতেমা মেয়ের এমন অদ্ভুত আচারনে চমকে যান।উনি মেয়ের দিকে তাকিয়ে বলেন,
-“এটা কী ব্যবহার তারা?”
-“কী করলাম মা?আমি শুধু বলেছি জানিনা।”
-“তারা আমি কিন্তু…..”

ইফাজ মিসেস ফাতেমার কথা আটকে দিয়ে বলেন,
-“অাম্মু চলুন তো,আগে খাবেন পরে কথা বলবেন।”

ইফাজ জোর করে উনাদের নিয়ে যায় খাবারের দিকে,নয়তো মিসেস ফাতেমা মেয়ের সাথে একটা ঝামেলা বাঁধিয়ে ফেলতেন।এদিকে ইয়ারাবী প্রত্যয়ের সাথে টুকটাক কথা বলতে বলতে ওদের ব্যাপারে সবটা জানতে পারে।এবার ও বুঝতে পারে অনুর এভাবে এড়িয়ে চলার কাহিনি।প্রত্যয়ের তাড়া থাকায় ও ইফাজদের সাথে দেখা করে হালকা খেয়েই চলে যায়।ইয়ারাবী মাথার ভিতর হাজার চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে,অনুর ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তা হচ্ছে।কেননা এই মানুষটাই সব সময় ওর সাথে থেকেছে,ওর দুর্বল সময়ে সাহস দিয়েছে।ইয়ারাবী একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে চেয়ার থেকে উঠে আহনাফকে কোলে নিয়ে সামনের দিকে পা বাড়ায়।মাথায় নানা চিন্তা হানা দিয়েছে,তার প্রথমে আছে তারা অদ্ভুত আচারন।হঠাৎ করে আনমনে চলতে চলতে টেবিলের পায়ের সাথে বেঁধে যেই পরে যাবে তখনি দু’টা শক্ত হাত ওকে ধরে ফেলে।ইয়ারাবী পাশে তাকিয়ে দেখে আবরার ওকে ধরে রেখেছে।সত্যিই ইয়ারাবী খুব ভয় পেয়েছিলো, আবরার ওর কোল থেকে আহনাফকে নিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে বলে,
-“এভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছ কেন?তোমাকে না বসে থাকতে বলেছিলাম।হাঁটছো ভালো কথা আহনাফকে কোলে নিয়েছ কেন?যদি পরে যেতে?”
-“আরে আজব মানুষ তো আপনি,বাবু কোলে নিয়েছি বলে বকছেন কেন?”
-“বাবু কোলে নিয়েছি বলে বকছিনা,যদি পরে যেতে তাহলে কী হতো ভেবে দেখেছো?”
-“দুঃখীত,ভুল হয়ে গেছে।বাবুকে আমার কোলে দিন,ওকে নিয়ে বসে থাকছি।”
-“উহু,আহনাফ এখনো কিছু খায়নি তাই ভাবী খুঁজছিলো।”

ইয়ারাবী অনেকটা উৎসুক দৃষ্টিতে স্বামীকে প্রশ্ন করে,
-“আবরার আজ কী আমরা বাড়িতে যাবো?”
-“উহু,তোমার খালু যেতে দিচ্ছেনা।তাছাড়া মমরা এখান থেকে রাজশাহী যাবে গ্রামের বাড়িতে।”
-“আমরা যাবোনা?নানীর সাথে অনেকদিন দেখা হয়না।”
-“উহু।”

আবরার এক কথায় উত্তর দিয়ে আহনাফকে নিয়ে ওখান থেকে চলে গেলো।বৌ ভাতের অনুষ্ঠান বিকাল চারটার দিকে শেষ হয়ে যেতেই আস্তে আস্তে লোকসংখ্যা কমতে থাকে।তারা নিজের ঘরে যেয়ে ফ্রেস হয়ে নেয়,আগে রুপচর্চা ভালো লাগলেও এখন আর লাগেনা।আর করবেই বা কার জন্য,মানুষটা যে তাকে কখনও সহ্যই করতে পারছেনা।তারা চুলটা ঠিক করে যেই বিছানায় শুতে যাবে তখনি মিসেস ইশানি ঘরে ঢুকে।তারা উনাকে দেখে উঠে বসে বলে,
-“কিছু বলবেন মামী?”

মিসেস ইশানি চারিদিকে চোখ বুলিয়ে বিছানার এক কোনে বসে বলে,
-“তারা তোর গালে ওইটা কিসের দাগ?”

কথাটা শুনে তারা মুখে হাত দিয়ে বুঝতে পারে ইফাজের চড়ের জন্য হালকা লাল হয়ে আছে মুখটা।ও একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে মামীর দিকে তাকিয়ে বলে,
-“ওটা কিছুনা মামী,একটু আঘাত লেগেছে।”
-“ওহ্হ্।”
-“আচ্ছা,মেজো-ছোট মামীরা আসিনি আর না তৌফিক,হৃদয় এসেছে।আপনাদের সাথে কথা হয় এখন,বাবা ফোন করেছিলো ধরেনি ওরা।”

মিসেস ইশানি একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন,
-“কিছু মানুষ আছে যারা পাপ করলেও কোনোদিন বুঝতে চাইবেনা ওরা পাপী।ঠিক তেমনি তোর মামারা যেটা করেছে তার শাস্তি পাচ্ছে,কিন্তু ওদের এই করুন পরিস্থিতির জন্য ওরা নিজেরা দায়ী হলেও তোর মামীরা এখনো বলে এসব আমাদের দোষ।কেন তাদেরকে তোর বড় মামা ছাড়ালোনা?ওরা বলে সামান্য ভুল করে ফেলেছে।আচ্ছা তুই বল তারা,ইস্মিতা যে আমার মেয়ে।তাকে তার মায়ের কোল থেকে কেড়ে নেওয়াটা কী সামান্য ভুল?শুধুমাত্র সম্পত্তির জন্য।”
-“বাদ দাও মামী,একটা সত্যি কথা কী জানো?আমারও কোনোদিন ভালো লাগেনি উনাদের।ঘুরতে ঘুরতে যদি নানী বাড়িতে কোনোদিন যেতাম তো শুধু, কীরে?এখানে কী করছিস?এই প্রশ্ন ছাড়া আর কিছু শুনিনি।আচ্ছা মামী,তুমি শুনছো তৌফিক বলে বিয়ে করেছে।তাও মেয়েকে পালিয়ে নিয়ে এসে,অনেক ঝামেলা হয়েছিল তো বাড়িতে এসব নিয়ে।আমিতো এসব জানতাম না,সবুজ সেদিন বললো আমাকে।”
-“কী বলছিস তুই এসব?আর তৌফিকের কী এমন দেখলো মেয়েটা?”
-“কী জানি,তবে মেয়েটার বয়স বেশিনা।তোমাদের টিকলি আছেনা ঠিক তার বয়সি।”
-“জানিস ওদের চার ছেলের জন্য কীনা করেছে ফুয়াদ?যখন যা চাইতো টাকা না থাকলেও ধার করে ওদের পাঠাতো,কিন্তু নিজের মেয়ের চাহিদা কোনোদিন পূরন করতে পারিনি।পারবো বা কীভাবে বল?কোনোদিন মেয়েটা মুখ ফুঁটে কিছু চাইনি,আর চাইলেও শুধু মার খেতে হয়েছে।”

কথাগুলো বলেই মিসেস ইশানি কেঁদে ফেলেন, তারা উঠে কাছে এসে উনাকে শান্তনা দিতে দিতে বলেন,
-“সব ঠিক হয়ে যাবে মামী।”
-“কিছু ঠিক হবেনা রে তারা,মেয়েটা যে আমাদের আর নেই।হারিয়ে ফেলেছি ওকে,যখন আমাদের বেশি প্রয়োজন ছিলো তখন অমানুষের মতো দূরে ঠেলে দিয়েছি।ও তারা শোননা মা….”
-“বলো মামী?”

মিসেস ইশানি চোখের পানি মুছে বলেন,
-“মেয়েটা মনে হয় পনের-ষোল দিন এখানে থাকবে,তোর কথা তো খুব শোনে।ওর শ্বাশুড়িরা গ্রামের বাড়িতে গেছে,ও অসুস্থ বলে নিতে চাইনি।তুই যদি পারিস মেয়েটাকে এই কয়দিনের জন্য আমার বাড়িতে পাঠাবি মা।”
-“মামী তুমি জানো তোমার মেয়ে কেমন।তবুও আমি চেষ্টা করে দেখবো।”
-“আজ আসি তাহলে,”

বলেই মিসেস ইশানি উঠে দাঁড়াতে তারা হাত ধরে টেনে বলে,
-“সেকী তুমি এখনি চলে যাবে?”
-“হ্যাঁরে,ইয়ামিলার পরিক্ষা শুরু হবে এক সপ্তাহ পর থেকে।তবে আমি মাঝে মাঝে আসি এখানে, তাছাড়া তোর জা খুব ভালো।”
-“চলো তোমাকে নিচে পর্যন্ত দিয়ে আসি।”

তারা টুকটাক গল্প করতে করতে মামীর সাথে নিচে নামতে থাকে।এদিকে বাইরে বসে সবাই কথা বলছে,হাসাহাসি করছে।ইয়ামিলা আগের থেকে আরো বেশি চঞ্চল হয়ে উঠেছে,ও আর জারা মিলে আবরারকে নানা কথা বলে পঁচাচ্ছে।কিন্তু আবরার তো আবরার,কোনো কিছুতেই ওরা হারাতে পারছেনা তাকে।আসলে এখানে জারা-ইয়ামিলা ওর সাথে একটা বাজি ধরেছিলো,ওরা যদি আবরারকে কথায় হারাতে পারে তবে কাল আবরার ওদেরকে হাতিরঝিলে ঘুরতে নিয়ে যাবে,আর যেটা চাইবে সেটা কিনে দিবে।কিন্তু শেষমেষ ওরা হার মেনে নেয়।ইয়ামিলা করুন দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে উঠে,
-“মাফ করেন দোলাভাই,জীবনে কোনোদিন আপনার সাথে বাজি ধরবোনা।”

আবরার হাসতে হাসতে স্প্রাইটের বোতলে চুমুক দিয়ে বলে,
-“কেন শালিক পাখিরা,পারবে পারবে চেষ্টা করতে থাকো।”

জারা মুখ ফুলিয়ে বলে,
-“দরকার নেই আপনার থেকে ট্রিট নেওয়ার।এই ইয়ামিলা চল,এখানে আরেকটু থাকলে উনার লজিক শুনতে শুনতে পাগল হয়ে যাবো।”
ইয়ামিলার জারার ওড়না টেনে চেয়ারে বসিয়ে দিয়ে বলে,
-“কেন জারাপু?পাগল হলে সমস্যা কোথায়?দোলাভাই তো পাগলের ডাক্তার,ফ্রিতে ট্রিটমেন্ট পেয়ে যাবে।”
-“মিলার বাচ্চা,চুপ থাক।”

জারা রেগে ইয়ামিলার পিঠে দুই-তিনটা ককিল বসিয়ে দেয়।আবরার ওদেরকে থামিয়ে জারার হাতে স্প্রাইটা ধরিয়ে দিয়ে বলে,
-“আরে কুল শালিক পাখি কুল,এতো মাথা গরম করতে নেই।তোমার রাগ দেখে তো আমার ভয় করছে।যাও তোমাদের কিছু করতে হবেনা,কাল এমনিতেও তোমাদের নিয়ে শপিংএ যাবো।”

জারা স্প্রাইটে চুমুক দিয়ে আড়চোখে দূরে টিকলির সাথে বসে থাকা ইয়ারাবীর দিকে একবার তাকিয়ে আবরারকে বলে,
-“আচ্ছা ভাইয়া,আপিপুতো আমার থেকেও অনেক রাগী।আপনি তাকে কীভাবে সামলান?এভাবে ঠান্ডা ঠান্ডা স্প্রাইট দিয়ে?”
-“তোমার আপিপুর রাগ আছে,তবে স্বামীর সাথে কখনো উচ্চস্বরে কথা বলা বা রাগ করা পছন্দ করেনা।তবে একবার করেছিলো ভুল বোঝাবুঝি নিয়ে,তবে সেটা ভাঙাতে বেশি কষ্ট হয়নি।”
-“কেন কেন?”
-“কেননা সেইদিনেই তোমার আপিপু জানতে পেরেছে নতুন অতিথির আগমন বার্তা।”

আবরার অনেকটা মুচকি হেসে কথাটা বলে উঠে,ওরা দু’জনেও হেসে দেয়।এর মধ্যে মিসেস ইশানি বাইরে চলে আসতেই মি.রহমানের সাথে কথা বলতে বলতে মি.ফুয়াদও চলে আসেন।ইয়ামিলা ওর মাকে দেখে বলে,
-“আম্মু আজ আমি আপুদের সাথে থাকি?”
-“আজ থাকা হচ্ছেনা তোমার,অনেক পড়া বাকি।”
-“কোনো পড়া বাকী না,আমার সব হয়ে গেছে।”
-“দেখো জারা,টিকলি এরা কেউ থাকছেনা।তাহলে তুমি একা হয়ে যাবেনা?”

ইয়ামিলা ওর মায়ের দিকে তাকিয়ে বিরক্তিকর চাহনি নিয়ে তাকিয়ে বলে,
-“তো কী হয়েছে?আমার আপু তো থাকছে, তাছাড়া ভাবী,তারাপু আছে।আমি যাবোনা,কাল বিকালে আপুর সাথে একবারে বাসায় যাবো।”

মিসেস ইশানির প্রথমে রাগ লাগলেও পরের কথাটা শুনে ভালোই লাগে।কেননা ইয়ারাবী উনাদের সাথে কথা না বললেও ইয়ামিলার সাথে সখ্যতা বেশ গভীর হয়ে উঠেছে।একবার যখন ছোট মেয়ে বলেছে আপুকে নিয়ে যাবে তো যেভাবেই হোক নিয়ে যাবে।মি.ফুয়াদ ছোট মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলেন,
-“ঠিক আছে,তুমি তোমার আপু নিয়েই বাড়িতে আসবে।আবরার কাল বিকালে মেয়েটাকে নিয়ে বাসায় এসো,তুমি তো জানো সবটা।”

আবরার মাথা নাঁড়িয়ে মৃদু হাসির রেখা টেনে বলে,
-“আমি চেষ্টা করবো আব্বু,তবে আপনার মেয়ে যে ঘাড়ত্যাড়া আমার নিজের ভয় করে ওকে দেখে।”
-“চাপাবাজির আর জায়গা পাসনা,কে কাকে ভয় পায় সেটা খুব ভালো জানি।তবে আমার চিন্তা হয় যে তোদের বাচ্চাগুলোও তোদের মতো ঘাড়ত্যারা না হয়।”
ইরাক কথাটা বলে ওর পিঠে একটা থাবা মারলো, আবরার বিরক্ত নিয়ে ভ্রু কুচকে ওদের দিকে তাকাতেই সবাই হেসে উঠে।

(২২৬)

রাতে রোজ কিচেনে দাঁড়িয়ে সাথীর সাথে রান্নার কাজে হাত লাগাচ্ছে।তারা চুপচাপ দাঁড়িয়ে দেখছিলো সবটা,কেননা রোজ কিছুতে হাত লাগাতে দিচ্ছেনা ওকে।রোজের একটাই কথা ফিরানির পর থেকে যা খুশি করবে,কিন্তু তার আগে নয়।তাই তারা কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে নিজের ঘরে চলে যায়।সবকিছু বিরক্ত লাগছে ওর কাছে,নিজের মায়ের কথাগুলো আরো অসহ্য করে তুলেছে ওকে।যে মা ওকে বকা দেয়না,সে ইফাজের সামনে ওকে শাষণ করলো!আর সবটা হয়েছে ওই মেয়েটার জন্য।এর মধ্যে ইয়ারাবী ভুলক্রমে অনুমতি না নিয়ে ঘরে ঢুকে তারাকে উদ্দেশ্য করে বলে,
-“স্টারপু তোমাকে খালু ডাকছে।”

তারা রেগে ছিলো তার উপর ইয়ারাবীর এমন আচারনে অনেকটা চেঁচিয়ে বলে উঠে,
-“কারো ঘরে ঢুকার সময় যে নূন্যতম অনুমতি নিতে হয় সেটাও কী তুই জানিস না ইয়ারাবী?”

ইয়ারাবী অনেকটা চমকে যায় এই কথা শুনে,সাথে অনেকটা অপমানও লাগে ওর কাছে।কারণ যে বোন ওকে ঘরে পারমিশন নিয়ে ঢুকার জন্য বকতো আজ সেই বোন এমন ব্যবহার করছে।তবুও ইয়ারাবী মুখে হাসি ঝুলিয়ে বলে,
-“দুঃখীত স্টারপু,ভুল হয়ে গেছে আমার।আর কখনো হবেনা।”
-“হবেনা মানে?তুই তো যত নষ্টের গুড়া।”
-“স্টারপু কী বলছো তুমি এসব?”

তারা বিছানা থেকে লাফ মেরে উঠে বলে,
-“সব তোর জন্য হয়েছে,তুই সবকিছুর জন্য দায়ী।নিজেকে কী মহান প্রমাণ করতে চাস?সবার ঠিক বলে তুই হচ্ছিস অপয়া,যার জীবনে যাস তার সুখ-শান্তি সব কেঁড়ে নিস।”

ইয়ারাবী এবার না পেরে কেঁদে দেয়,মানুষ যখন বলতো তখনও এতোটা গায়ে লাগতো না,যতোটা এখন লাগছে।ও তারার গায়ে হাত দিয়ে বলে,
-“আমি কী করেছি স্টারপু?”

তারা ওকে ধাক্কা দিয়ে বলে,
-“একদম গায়ে হাত দিবিনা,তুই আমার জীবনটা নরক বানিয়ে দিয়েছিস।তুই যদি না হতিস তবে ইফাজের সাথে আমার পরিচয় হতো না,আর না ভালোবাসা।আজ ইফাজ,আমি ধর্ষিতা বলে স্ত্রী হিসাবে মানেনা সেখানে তোকেও তো তার না মানা উচিত।কিন্তু সেখানে তোকে মাথায় তুলে রাখে।”
-“আমি….”

ইয়ারাবী কিছু বলার আগেই তারা ওকে এবার খুব জোরে ধাক্কা দেয়।ইয়ারাবী নিজের ঝুল ঠেকাতে না পেরে ভয়ে চিৎকার করে নরম কার্পেটের উপর পরে যায়।তারার শরীর রাগে ফেঁটে যাচ্ছে,যা চেপে রেখেছিলো তা বলে দিয়েছে।হঠাৎ করে ওর নজর যায় কার্পেটের উপরে পরে থাকা ইয়ারাবীর দিকে, ওর সারা-শব্দ না পেয়ে ভয় পেয়ে যায় তারা।হঠাৎ করে ওর ভিতরের মমতা সারা দিয়ে উঠে,বুঝতে পারে নিজের ক্ষোভে কত বড় ভুল করে ফেলেছে।

ইফাজ অনেকটা দুশ্চিন্তা নিয়ে বোনের চেক-আপন করছে,পাশে ওর হাত ধরে আবরার বসে আছে।সবাই এখানে উপস্থিত,কিন্তু কারো মুখে কোনো কথা নেই,ঘরে পিনপিন নিরবতা।সেই নিরবতাকে ভেঙে আবরার ইফাজের দিকে তাকিয়ে বলে,
-“সব ঠিক আছে?”

ইফাজ ওর দিকে একবার তাকিয়ে আবার নিজের কাজে মন দেয়।ওকে নিশ্চুপ থাকতে দেখে তারা অনেকটা ঘাবরে যায়।নিজেকে অপরাধী মনে হচ্ছে,মনে পরছে অতীতের কথাগুলো।তারা ইয়ারাবীকে ছোট থেকে প্রচুর আদর করতো,ওর বাবা-মাও করতো।যখন ইয়ারাবী তারাদের বাসায় যেত,ওর ছোট ছোট আবদারগুলো রাখতে পাগলামিতে মেতে উঠতো।একবার তারা ওর মা-বাবার সাথে বড় মামার বাসায় এসে দেখে ইয়ারাবী মন খারাপ করে ঘরে বসে আছে,আর ইস্মিতা নানা ভাবে ওকে মানানোর চেষ্টা করছে।তারা ঘরে ঢুকে মন খারাপের কারণ জানতে চাইলে ইস্মিতা ওকে বললো,
-“আর বলোনা তারা,আম্মুনি ওর প্রিয় দুইটা পুতুল রিচিকাকে দিয়ে দিয়েছে।”

তারা ইয়ারাবী কোলে নিয়ে বলে,
-“মামী এমন কেন করলো?”
-“আমি কীভাবে জানবো?তবে আজকাল আম্মুনি-আব্বু অনেক বেশি শাষন করে ওকে।জানো ওকে মারেও,একটু আগে যখন পুতুল দিবেনা বলে বায়না করেছিলো তখন আম্মুনি মেরেছিলো ওকে।”

ইয়ারাবী ওর ছোট ছোট হাত দিয়ে তারার গলা জড়িয়ে ধরে কান্না করতে করতে বলে,
-“স্টারপু,তুমি আমাতে (আমাকে)পুতুল বলো,তাহলে পুতুলকে এতটা (একটা) পুতুল কিনে দিতে বলোনা আম্মুনিতে।আমার প্রিয় পুতুল রিচিতা (রিচিকা) আপুতে দিয়েছে।”

তারা ওর মুখ মুছিয়ে দিয়ে অনেক কষ্টে মানিয়ে বিকালে নতুন পুতুল কিনে দিয়েছিলো।মেয়েটাকে তারার সামনে যখন কেউ বকতো,মারতো বা অপমান করতো তখন তারাই ওর হয়ে প্রতিবাদ করতো।কতো কথা কাঁটাকাঁটি করেছে ওকে নিয়ে বড় মামা-মামীর সাথে।যখন যা হতো ইয়ারাবী সবার প্রথমে ওর খালা,য়ুহার আর তারাকে জানাতো।এখনতো ওরা নেই তাই তারার সাথে বেশি ভাগ করে নিজের কথাগুলো।এইতো সেদিন যখন জানতে পারলো মা হবে তখন বাকী মেয়েদের লজ্জা মাখা মুখ না করে বরং অনেকটা খুশি মনে তারাকে ভিডিও কল করে জানায় ও মা হতে চলেছে।তারা কিছুক্ষণ স্তব্ধ হয়ে গেছিলো ওর ব্যবহারে।ও ইয়ারাবীকে ভ্রু কুঁচকে প্রশ্ন করে,
-“সবাই কথাটা বলতে লজ্জা পায় সেখানে তুই তোর বরের সামনে হেসে হেসে বলছিস আমাকে মা হবি।ওই খুশির জন্য কী পাগল হয়ে গেছিস পুতুল?”
-“পাগল কেন হবো স্টারপু?এটা আল্লাহর দেওয়া উপহার,এখানে লজ্জা কীসের?তুমি এবার ফটাফট সবাইকে জানিয়ে দাও।”
-“হুম,বলতে তো হবেই।নিন্দুকের আশাগুলো জলে চলে গেল সেটা জানাতে হবে।”
-“স্টারপু তুমিও না।জানো স্টারপু,আমি আমার বেবীদের কখনো মারবোনা,বকা তো দূরে থাক।খুব আদর করবো দেখবে,মানুষ কিছু বললে সেটার সত্যতা না জেনে বেবীদেরকে শাষণ করবোনা।আমি যেটা পায়নি সেটা আমার বেবীদের দিবো।”

সেদিন কথাগুলো বলে ইয়ারাবী প্রচুর কেঁদেছিলো,তারাও জানে এই বেবীর জন্য ইয়ারাবী কতটা কষ্ট করেছে।তার সাথে আজ কী করলো তারা?পুরানো কথা ভেবেই তারা কেঁদে উঠে,রোজ ইয়ারাবীর পাশ থেকে উঠে যেয়ে ওর কাছে যেয়ে বলে,
-“কাঁদছো কেন পাগলি,দেখবে ও একদম ঠিক আছে।”
-“ভাবী,ওর কিছু হলে আমি নিজেকে মাফ করতে পারবোনা।”

ইফাজ না পেরে একটা তাড়া দিয়ে বলে,
-“চুপ করবে তুমি?পিচ্চি একদম ঠিক আছে, কার্পেটের উপর পরেছিলো বলে কিছু হয়নি।আর ভয়ে সেন্সলেস হয়ে গেছে।ইনজেকশন দিয়েছি এখনি জ্ঞান ফিরবে।”
-“সত্যি কোনো সমস্যা নেই তো ইফাজ?”
আবরার অনেকটা চিন্তিত কন্ঠে প্রশ্নটা করলে ইফাজ বলে,
-“দেখ অভিজ্ঞতা থেকে বুঝছি বাচ্চার কিছু হয়নি, বাট্ এখন ওর জ্ঞান ফিরলে বাকীটা বুঝতে পারবো।”

(২২৭)

মিসেস জামান এখন একটু সুস্থ আছেন,হালকা কথা বলতে পারেন,হাত-পা একটু নাড়াতে পারেন।তবে কথায় আছেন,পাপ তার বাপ কেও ছাড়েনা।উনি ভূগছেন আর নিজের এতোদিনে করা ভুল বুঝতে পারছেন।এসব ভাবছিলেন তখনি উনার ছোট বোন মিসেস নিকি রান্নাঘর থেকে থালা-বাসন মেজে সেগুলো উপর করে রেখে এসে বোনের পাশে বসেন।উনি বোনের দিকে তাকাতেই নিকি বলতে শুরু করেন,
-“আপু খাবার কী আনবো?”
-“নাহ্,ইতির বল দুধ গরম করতে।”
-“করতে হবেনা,ওই বাড়ির থেকে খাবার এনেছি।”
-“তোর মনিরা কই?”
-“টিকলি আপুর বাসায়,তনয় আর তিন্নি ইতির সাথে গল্প করছে।”

মিসেস জামান ইশারায় বোনকে ওয়াশরুমে নিয়ে যেতে বলবে নিকি বোনকে ধরে ওয়াশরুমে দিয়ে আসে।তারপর আবার নিয়ে এসে বোনকে বিছানায় শুয়ে দিতেই উনি বলেন,
-“কত দম্ভ করতাম নিজেকে নিয়ে?কখনো কারো ভালো সহ্য করতে পারতাম না।সব সময় মনে হতো আমি বড় বাকীরা আমার নিচে থাকবে।সারা জীবন তোদের সাথে যে বাজে ব্যবহার করেছি ঠিক তেমন নিজের ছেলে-মেয়েদের শিখিয়েছি।”
-“বাদ দে আপু এসব,এমন কান্না-কাটি করলে তোর শরীর খারাপ হবে।”

মিসেস জামান বোনের কথাকে অগ্রাহ্য করে আবার বলতে শুরু করেন,
-“তোর মনে আছে নিকি,তোর সাথে একটা ফকির কাছে গেছিলাম।”
-“হ্যাঁ,আদিবা মনির পড়াশোনা যাতে ভালো হয়।”
-“হ্যাঁ,তার জন্য তো তাবিজ নিয়েছিলাম।কিন্তু আরো একটা কাজ করেছিলাম।”
-“কী কাজ আপু?”

মিসেস নিকি অনেকটা উৎসহ নিয়ে কথা বলে উঠেন।মিসেস জামান বোনের দিকে তাকিয়ে বলেন,
-“য়ুহার,আদিব আর ইয়ারাবীর উপর কালো যাদু করেছিলাম।”
-“কী?কী বলছো তুমি এসব?মাথা খারাপ হয়ে গেছে নাকী তোমার?”
-“উহু,সত্যটাই বলছি।য়ুহারের উপর এই জন্য করেছিলাম যাতে ও আমার কথায় উঠে বসে।কেননা ওই মেয়েটার জন্য বাড়িতে যেয়ে কোনো রাজ করতে পারতাম না।আদিবকে করেছিলাম যা ইতির মতো গরিব ঘরের মেয়েকে ছেড়ে দেয়,কিন্তু এদের দুই জনের একজনেরটাও কাজে লাগেনি।তবে ইয়ারাবীর জন্য যেটা করেছিলাম সেটা সফল হয়েছিলো কিন্তু তার শাস্তি আল্লাহ আমাকে দিচ্ছে।”
-“ভালো কথা আপু,তুমি ইশা আপুর মেয়ের পিছে কেন পরেছিলে?”
-“ওর মেয়ে ছোট থেকে অনেকটা বুদ্ধিমান, সবকিছুতে চমৎকার ছিলো।কিন্তু আমার মেয়ে ওর বড় হওয়া সত্ত্বেও কিছু পারতোনা,কোনো অনুষ্ঠান বা আত্মীয়দের বাড়ি গেলে ইসার মেয়ের সবাই প্রশংসা করতো।আর আমার মেয়েকে কেও পাত্তা দিতোনা,শুধু বলতো ভদ্র।যখন এক কলেজে পড়া শুরু করলো তখন আদিবা রোজ কান্না করতো যে প্রফেসারেরা ওই মেয়ের প্রশংসা করে।মা হয়ে নিজের মেয়ের কান্না কীভাবে সহ্য করতে পারি বল,তাই গেলাম ফকিরের কাছে।ওর টোটকা কাজেও দিলো,আস্তে আস্তে পিছিয়ে পরতে থাকলো পড়ালেখায়।”
-“আপু বাদ দে তুই এসব,পুরাতন কথা উঠিয়ে কী লাভ।”
-“দেখলি যখন থেকে ইশা সত্যি জানলো তখন থেকে আমার বাড়িতে আসছেনা।”
-“তোর সাথে থেকে আমিও কত খারাপ কাজ করেছি,অথচ আমি কিন্তু কোরআনের প্রতিটা আয়াত জানি।শয়তানের ধোঁকায় কীনা কী করেছি?আল্লাহর কাছে তওবা করেছি,জানিনা মাফ হবে কীনা?”
-“গ্রীলের শব্দ,মনে হয় তোর দোলাভাই এসেছে।যা গেট খুলে খাবার দে,ফ্রেস হয়ে এসে খাবে।”

মিসেস নিকি বোনের পাশ থেকে উঠে চাবি নিয়ে যেয়ে তালা খুলে দিতে দোলাভাইকে সালাম দেয়।কিন্তু উনি সালামের উত্তর না দিয়েই নিজের স্ত্রীর উপর রোজকার ন্যায় একটু চেঁচালেন।কেন সে সুস্থ হচ্ছেনা?এতো এতো টাকা খরচ হচ্ছে,বড় ডাক্তার-কবিরাজ দেখাচ্ছে তবুও কোনো ফল পাচ্ছেনা কেন?অনেকক্ষণ চেঁচাতে চেঁচাতে উনি ওয়াশরুম ঢুকে ফ্রেস হয়ে খাবার খেতে বসলেন।ঠিক তখন পুত্রবধূকে দেখে আরেকটা গলা বাড়িয়ে নিজের টাকা আর সম্পত্তির কথা চর্চা করলেন, তারপর ইফাজদের বাসা থেকে অানা খাবার খেতে খেতে তাদের গালমন্দ করলেন।এসব শুনে শুনে এখন শুধু বাড়ির ভিতরের মানুষ নয়,আশেপাশের প্রতিটা মানুষই অভ্যস্ত হয়ে গেছেন।কেননা উনার চেঁচামেচি ফরজের আযানের আগে থেকে শুরু হয়ে রাতে ঘুমাতে যাওয়া পর্যন্ত।উনি মানুষকে মানুষ হিসাবে গন্য করেন না।খাওয়ার সময় কাউকে জিজ্ঞেসও করলেন না সবাই খেয়েছে কীনা।নিজের মতো খেয়ে স্ত্রীর পাশে কিছুক্ষণ বসে কিছু হাদিসের বইখুলে তাকে উপদেশ দিলেন তারপর ঘুমাতে চলে গেলেন।এই হলো প্রতিদিনের রুটিন তার,আর মিসেস শুধু চেয়ে চেয়ে সেটা দেখেন।

(২২৮)

সবে মাত্র ইয়ারাবী ওর স্বামী আর ভাইয়ের সাথে হাসপাতাল থেকে ফিরলো।ওরা হাসপাতালে গেছিলো ইয়ারাবীর মনে ভয় দূর করতে,কেননা ওর মনে হচ্ছিলো পরে যাওয়ার জন্য বেবীদের কোনো ক্ষতি হয়ে গেছে।ইফাজ জানে এমন কিছুই হয়নি তবুও বোনের ভয় দূর করার জন্য নিয়ে গেলো।ওরা সোফায় বসতেই সাথী ওদের এক গ্লাস করে লেবু শরবত দিলো,বাইরে প্রচুর গরম পরেছে।মি.রহমান ছেলের দিকে তাকিয়ে বলেন,
-“সব ঠিক আছে ইফাজ?”
-“আব্বু সবটাই ঠিক,কিন্তু আপনার আম্মাজান বেশি বোঝে তাই এই কষ্ট করতে হলো।আমাকে ডাক্তার হিসাবে মানলোনা।”
-“চুপ কর বেয়াদব,মেয়েটা প্রথমবার মা হচ্ছে তাই ভয়টা এতো বেশি।”
-“না আব্বু,জানি বিষয়টা।আর তাছাড়া ওর কন্ডিশন বাকীদের মতো নয়।আর তোমার জামাই তো পনেরদিন অন্তর মিককে দিয়ে চেক-আপ করাতো।”

ইরাক সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে রোজের কাছে এক কাপ কফি চেয়ে ইয়ারাবী পাশে বসে ওর মাথায় হাত দিয়ে বলে,
-“কাল পরে গেলি কীভাবে তুই?জানিস সবাই কত ভয় পেয়েছিলো?তোর তারা আপুতো কেঁদে কেঁদে হয়রান হয়ে গেছিলো।”
-“আসলে ভাইয়া,মাথা ঘুরে পরে গেছিলাম।”
-“ঠিক মতো খাবি এখন থেকে,”
-“স্টারপু কোথায়?”
-“ঘরে যেতে দেখলাম,এখনো কাঁদছে মেয়েটা।”

ইয়ারাবী কথাটা শুনে তারার ঘরে যেয়ে দেখে সত্যিই কান্না করছে।ইয়ারাবী একবার ওর গায়ে হাত দিতে যেয়েও দেয়না,কেননা ওকে সহ্য করতে পারেনা বলেছিলো।তারা কারোর উপস্থিতি টের পেয়ে ঘুরে দেখে ইয়ারাবী দাঁড়িয়ে আছে।ইয়ারাবী কিছু বলতে যাবে তার আগেই তারা ওকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বলে,
-“আমাকে মাফ করে দে সোনা,ক্ষোভের কারণে অনেক বাজে ব্যবহার করেছি তোর সাথে।”
-“তুমি যা বলেছি ঠিকই তো বলেছো আপু।ওহ্হ্ দুঃখীত এবারও তোমার অনুমতি না নিয়ে চলে এলাম।আসলে এই বাসায় শুধু খালার রুমে অনুমতি নিয়ে ঢুকতাম,তাছাড়া যখন খুশি ভাইয়াদের রুমে আসতাম আর তারাও আমাকে কখনও কিছু বলেনি।এখনও অনেক সময় বড় ভাইয়ার ঘরে অনুমতি না নিয়ে ঢুকে পরি।কিন্তু চেষ্টা করবো এবার থেকে।”

তারা অবাক চোখে ওর দিকে তাকায়,বুঝতে পারে কতটা কষ্ট দিয়ে ফেলেছে মেয়েটাকে।তারা ওর চোখের দিকে তাকিয়ে বলে,
-“আপু!স্টারপু থেকে আজ আপু বলে ডাকছিস?আমি সত্যিই ভুল করে ফেলেছি,না বুঝে রাগের বশে তোকে….”

ইয়ারাবী তারার কাছে থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বলে,
-“তোমাদের স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কী হয়েছে আমি জানিনা।আমি এটাও জানিনা তুমি কবে থেকে ভাইয়াকে ভালোবাসো,শুধু জানতাম বাসো।কিন্তু কখনো ভাবতে পারিনি চৌদ্দ বছর বয়সের সেই উপাধি তুমি দিবে আমাকে।আমি কিছু করিনি তবে কেন বললে আমাকে?আর হ্যাঁ, তুমি আমার বড়,অনেক ভালোবাসা পেয়েছি তোমার কাছে থেকে।তাই যা বলেছো সেটাতে রাগ করলেও কোনো অভিযোগ নেই,মাফ করে দিয়েছি।তবে আজ যদি আমার বেবীর কিছু হতো আপু,তুমি পারতে নিজেকে মাফ করতে।জানো ডা.মিক আবরারকে বলেছে বেবী হওয়ার সময় আমার বাঁচার চান্স খুব কম হবে যদি একটুও এদিক-ওদিক হয়।সেদিন থেকে উনি সব সময় চোখে চোখে রাখে,উনি যদি জানেন তুমি আমার ধাক্কা দিয়েছো তবুও কী করবেন সেটা আমিও জানিনা।”
-“পুতুল আমাকে ক্ষমা করে দে,তোর পায়ে…”
-“ওই আপু মাথা খারাপ কী করো তুমি?”
-“আগে স্টারপু বল।”

ইয়ারাবী বুঝতে পারছে তারা নাছোড়বান্দা,ও যতক্ষণ নরমাল ব্যবহার তারা সাথে না করবে ও কাঁদতেই থাকে।তাই ইয়ারাবী না পেরে সবটা ভুলে যেয়ে ওকে জড়িয়ে ধরে।এতে করে দুই বোনের মধ্যে আবারও মিল হয় আর ইয়ারাবী তার আগেই মমতাময়ী আপুকে ফিরে পায়।তবে এরা কেউ জানেনা ওদের দুই জনের উপস্থিতি ব্যতিত তৃতীয় ব্যাক্তি ওদের কথা শুনছে।

#চলবে_____

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here