#অভিমান
#পর্বঃ২২
……………….
.
.
আমি ভেতরে ঢুকে দেখি উনার পাশে অতি মডার্ন এবং অত্যন্ত সুন্দরী একটি মেয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে ,মেয়েটা একদম উনার গা ঘেষে দাঁড়িয়ে রয়েছে আর উনি হেসে হেসে মেয়েটার সাথে কথা বলছেন,আর কি যেন একটা ফাইল দেখছেন কিন্তু মেয়েটা ফাইলের দিকে তাকানোর চেয়ে উনার দিকেই বেশি তাকাচ্ছে,
আমি যে ভেতরে ঢুকেছি সে দিকে কারো খেয়াল নেই,
উনার পাশে এতো সুন্দর একটা মেয়েকে কেন জানি আমি কিছুতেই মেনে নিতে পারছিলাম না,উনাকে অন্য মেয়ের সাথে এভাবে হেসে হেসে কথা বলতে দেখে আমার একটু ও ভালো লাগলো না,ওদেরকে এই অবস্তায় দেখে আমার খুব রাগ লাগল,
আর এই মেয়েকে দেখো এতো গা ঘেষে দাঁড়িয়ে আছে মনে হচ্ছে আর একটু হলে কোলে বসে পরবে,
উনার কথা আর নাই বা বললাম,
অফিসে এসে তো খুব ফুর্তিতে আছেন কি সুন্দর দাঁত কেলিয়ে হাসছেন,
আমি ভেবেছিলাম উনি হয়তো ভালো হয়ে গেছেন কিন্তু এই ছেলে লুইচ্ছা ছিল ,লুইচ্ছা আছে আর ভবিষ্যতেও থাকবে,অফিসে এসেও লুচুগিরি শুরু করে দিয়েছেন,
আমি রাগে গজগজ করতে করতে টেবিলের কাছে গিয়ে খাবারের টিফিনটা শব্দ করে রখলাম,
শব্দ শুনে দুজনই চমকে উঠে সামনে দিকে তাকালো ,
আমি কপাল কুচকে অগ্নি দৃষ্টিতে উনার দিকে তাকিয়ে রইলাম,
উনি আমাকে দেখে অবাক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে গিয়ে বলে উঠলেন,
-সুহা তুমি এখানে!!!!হোয়াট আ প্রেজেন্ট সারপ্রাইজ ,ও মাই গড আই কান্ট বিলিভ দিস।।।
উনার পাশে থাকা মেয়েটা বিস্ময় ভরা দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে রয়েছে,
আমি একবার মেয়েটার দিকে তাকিয়ে তারপর উনার দিকে অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে চিবিয়ে চিবিয়ে বলে উঠলাম,
-সারপ্রাইজ দিতেই তো আসলাম বাট তুমি একা সারপ্রাইজ হও নি আই এম অলসো সারপ্রাইজড !!
আমার বলা কথার মানে বোধহয় উনি বুঝতে পারেনি তাই আমার কথা শুনে উনি হেসে হেসে আমার পাশে এসে আমার কাঁধে ধরে বলে উঠলেন,
– তুমি এসে কিন্তু খুব ভালো করেছো তোমাকে ভীষন মিস করছিলাম সুহারানী ,
উনার বলা কথাটা শুনে আমার রাগ আরো বেড়ে গেল,এতক্ষন তো খুব হ্যাপি ছিলেন দেখে তো মনেই হয় উনি কাউকে মিস করছিলেন এখন আমাকে সামনে পেয়ে আধিখ্যাতা করা হচ্ছে ,
আমি ঝটকা মেরে উনার হাত সরিয়ে উনার থেকে একটু দূরে সরে চোঁখ মুখ শক্ত করে দাঁড়িয়ে রইলাম,
আমার এমন কান্ড উনি বোধ হয় একটু আশ্চার্য্য হলেন ,উনার চোঁখ মুখে সেটা ফুঠে উঠলো ,মুহূর্তের মধ্য নিজেকে স্বাভাবিক করে নিয়ে উনি মৃদু হেসে আমার আমার দিকে এগিয়ে আসতে লাগলেন,
মেয়েটা তখন ও ঠায় দাঁড়িয়ে রয়েছে ,
উনি আমার কাছে এসে বলতে লাগলেন ,
-কি হয়েছে সুহা তোমার চোঁখ মুখ এমন লাগছে কেন??এনি প্রবলেম বলেই আমাকে আবার ধরতে এলেন,
উনি আমাকে ধরতে আসায় আমি বিব্রতভাবে একবার উনার দিকে তাকিয়ে আবার মেয়েটার দিকে তাকালাম,উনি মনে হয় আমার মনের কথা বুঝতে পারলেন আমাকে না ধরে পিছন ফিরে মেয়েটার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলেন,
-মিস আরিয়া তোমার এখানে আর কোনো কাজ নেই ,ইউ ক্যান গো নাউ,
-বাট স্যার নিউ প্রজেক্টের জন্য ইম্পর্ট্যান্ট ডিসকাশন বাকি রয়েছে ,মেয়েটি আমার দিকে বিরক্তি নিয়ে তাকিয়ে তাড়িগড়ি করে বলে উঠল,
মেয়েটির কথা শুনে উনি আমার পাশে এসে দাঁড়িয়ে বলে উঠলেন,
-ইউ নো হোয়াট মিস আরিয়া এই কাজ প্রজেক্ট এসবের থেকেও অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ একজন এখন আমার সাথে রয়েছে ,এগুলোর থেকে তার প্রায়রেটি আমার কাছে অনেক বেশি,সো এখন আর কোনো কাজ হবে না তুমি আসতে পারো,
-বলছিলাম কি স্যার কাজটা কমপ্লিট করে ফেললে ভালো হতো ,অনেক বড় একটা প্রজেক্টের কাজ,
মেয়েটির কথায় আমার মেজাজ আরো খারাপ হয়ে গেল ,কি ছ্যাচড়া মেয়ে রে বাবা কিছুতেই উনাকে আমার সাথে রেখে যেতে চাইছে না ,কাজের বাহানায় উনার কাছেই তাকতে চাইছে,আর চাইবেই না কেন এরকম হ্যান্ডসাম বস পেলে আর সে যদি তার দিকে তাকিয়ে মিষ্টি মিষ্টি হাসি দেয় তাহলে তো তার কাছেই সারাদিন বসে থাকতেই মন চাইবে,আর উনাকে দেখো আমাকে দেখে সাধু পুরুষ সাজা হচ্ছে,
আমি রাগি কন্ঠে বলে উঠলাম,-আমি বোধ হয় ভুল সময়ে এসে পরেছি ,নো প্রবলেম আপনারা বরং কাজ করুন আমি চলে যাচ্ছি ,বলেই আমি চলে যেতে লাগলাম,
আমাকে চলে যেতে দেখে উনি চাপা চিৎকার করে বলে উঠলেন ,
-আই সে স্টপ সুহা
উনার চিৎকার শুনে আমি দাঁড়িয়ে গেলাম সাথে সাথে উনি এসে আমার হাত ধরে নিয়ে গিয়ে উনার চেয়ারে বসিয়ে দিলেন,তারপর মেয়েটির দিকে তাকিয়ে একটা ধমক দিয়ে বলে উঠলেন,
-আরিয়া আই সে লিভ নাউ
উনার ধমক শুনে মেয়েটা একবার আমার দিকে ক্ষোভের দৃষ্টিতে তাকিয়ে গটগট করে চলে গেল,
উনি আমার সামনে হাটু গেড়ে বসে আমার দু হাত ধরে আমার দিকে তাকালেন সাথে সাথে আমি হাত ছাড়িয়ে নিয়ে দাঁড়িয়ে গিয়ে বলে উঠলাম,
-এতোক্ষন তো খুব রসিয়ে রসিয়ে গল্প করছিলেন আমাকে দেখে সুর পাল্টে ফেললেন কেন?
তাকে ধমক দিয়ে তাড়িয়ে দিলেন ,সে তো তোমাকে ছেড়ে যেতেই চাইছিল না ,বেচারি কে শুধু শুধু তাড়িয়ে দিলেন আমি না হয় চলে যেতাম,
আমার কথা শুনে উনি বিস্ময় নিয়ে বলে উঠলেন,
-এসব কি আবোল তাবলো বলছো সুহা,ও আমার পি এ ওর সাথে রসিয়ে রসিয়ে গল্প করছিলাম না কাজের কথা বলছিলাম,
উনার কথায় তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বললাম,
-ও হো কাজের কথা বলছিলে তাই না ,তা কাজের কথা কি একটু দূরে বসে করা যা না ,কাজের কথা কি তাকে পাশে নিয়ে গা ঘেষে বলতে হয়,অফিসে এসে তাহলে এসবই করা হচ্ছে,
আমার কথায় উনি আমার কাছে এসে হাত ধরে বলে উঠলেন,
-ওহ সুহা তুমি ভুল বুঝছো আমাকে ,
উনার কথায় আমি ঝটকা মেরে হাত সরিয়ে নিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠলাম,
-কোনো ভুল বুঝছি না আমি সব কিছু একদম পরিষ্কার বুঝতে পারছি ,অফিসের বসের পি.এ সব সময় সুন্দরী সুন্দরী মেয়েই হতে হবে কেন,ছেলেরা কি পি.এ হতে পারে না ,
মেয়েদের এজন্যই রাখা হয় তাই না যাতে লুইচ্ছামি করা যায় ,নিজের চোঁখেই তো এসে সব দেখলাম,
-আরে আমার কথাটা তো শুনে নিজের মনেই সব বানিয়ে ফেলছো,
উনার কথায় আমি রেগে গিয়ে বললাম,-আমার আর কিছুই শুনার নেই তুমি তোমার পি.এ কে নিয়েই থাকো বলেই আমি দ্রুত পায়ে বেরিয়ে এলাম উনি পেছন থেকে আমার নাম ধরে ডাকতে লাগলেন আমি সেটা উপেক্ষা করে রাগে গজগজ করতে করতে দ্রুত গাড়িতে এসে বসে ড্রাইভারের উদ্দেশ্য করে বললাম,তারাতার গাড়ী স্টার্ট দিতে আমি এক্ষুনি বাড়ী যেতে চাই।
সাথে সাথে ড্রাইভার গাড়ী স্টার্ট দিল আমি গাড়ীর জানালার দিকে তাকিয়ে দেখলাম উনি ও দ্রুত পায়ে অফিস থেকে বের হচ্ছেন ।উনি কাছে আসার আগেই গাড়ী উনার অফিস থেকে বেরিয়ে গেল।
.
বাড়ীতে এসে আমি কোনো দিকে না তাকিয়ে এক ছুটে রুমে চলে এলাম,
আমার রাগ কিছুতেই কমছে না ,উনার এতো কাছে একটা মেয়ে কেন দাড়িয়ে থাকবে ,এটা আমি কিছুতেই সহ্য করতে পারছিনা ,
রুমে বসে এই সব ভাবছি এরি মাঝে উনি ও চলে এলেন ,উনাকে দেখে আমি অন্য দিকে তাকিয়ে গাল ফুলিয়ে বসে রইলাম,
উনি দরজা লক করে আমার পাশে এসে বসে খুশিতে গদগদ হয়ে বলে উঠলেন,
-ও মাই গড সুহারানী আমি তো বিশ্বাসই করতে পারছি না তুমি আমাকে নিয়ে জেলাসি ফিল করছো,
আমার কি যে আনন্দ হচ্ছে,
উনার কথায় আমি অবাক হয়ে উনার দিকে কপাল কুচকে ফিরে তাকালাম,
আমি তাকাতেই উনি আবার ডংয়ের সুরে বলে উঠলেন,
-পুরা পুরা গন্ধ পাচ্ছি ,আমি নিশ্চিত কারো মন পুরছে,
উনার কথায় আমি রাগে অগ্নিশর্মা হয়ে বলে উঠলাম,
-কিসের জেলাসি ,আমার বয়েই গেছে কারে ব্যাপারে জেলাসি হতে ,তুমি ওকে পাশে কেন কোলে নিয়ে বসে থাকলে ও আমার কিছুই যায় আসে না ,
-সেটা তো দেখতেই পাচ্ছি কেউ একজনের মন জ্বলে পুরে শেষ হয়ে যাচ্ছে ,
উনার কথা শুনে আমি রাগে কটমট করে উনার দিকে তাকালাম ,আমি তাকাতেই উনি হেসে উঠে বললেন,
-আরে রেগে যাচ্ছো কেন ,তোমার কি ধারনা রাগলে তোমাকে ভীষন সুন্দরী লাগে ,এক্কেবারে ভুল ধারনা সত্যিটা শুনে রাখো সুহারানী রাগলে তোমাকে খুব বাজে দেখায় ,
উনার কথা শুনে মাথা আরো গরম হয়ে গেল আমি বসা থেকে দাঁড়িয়ে গিয়ে চিৎকার করে বলে উঠলাম,
-আমাকে তো বাজে লাগবেই,পৃথিবীর সেরা সুন্দরী তো তোমার পি.এ ,এখানে এসোছো কেন তার কাছেই বসে থাকলে পারতে ,বলেই চলে যেতে চাইলাম তখনই উনি আমার হাত ধরে ফেললেন ,
আমাকে জোর করে টেনে নিয়ে উনার পাশে বসিয়ে জরিয়ে ধরে বলে উঠলেন,
-তুমি আমাকে ভালবেসে ফেলেছো তার জন্যই তো অন্যকারো পাশে আমাকে দেখে কষ্ট হচ্ছে তোমার,আমাকে ভালোবাসো সুহারানী,একটিবার বলো না,তোমার মুখ থেকে এই কথাটা শুনার জন্য আমি কত দিন থেকে ওয়েট করে আছি ,
উনার কথা শুনে আমি ভাবলেশহীন ভাবে বসে রইলাম,কি বলবো এ কথার উওর তো আমার জানা নেই ,
আমাকে নিশ্চুপ দেখে উনি আমাকে ছেড়ে দিয়ে আমার দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে উঠলেন,
-কি হল বলো না ,প্লিজ একটি বার বলো তুমি আমাকে ভালবাসো ,
উনার কথা শুনে আমি উনার দিক থেকে চোঁখ নামিয়ে মাথা নিচু করে বলে রইলাম,
তখন উনি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে উঠলেন,
-একটা কথা কি জানো সুহারানী যাকে অন্যের পাশে সহ্য হয় না তাকে নিজের পাশে যত্ন করে রাখতে হয়,
বলেই উনি রুম ছেড়ে বেরিয়ে গেলেন,
আমি থ মেরে বসে রইলাম উনার বলা কথাটা আমার মনে ভীষন ভাবে নাড়া দিল।
.
এভাবেই রাগ অভিমান ,খুনশুটির মাঝে উনার সাথে আমার দিন কাটতে লাগল ,
সেদিন কি একটা প্রয়োজনে উনি অফিস থেকে হঠাৎ বাসায় চলে এলেন তখন নিলয় আমাদের রুমে বসে আমার সাথে গল্প করছে,উনি নিলয়কে আমার সাথে দেখে ভীষন ক্ষেপে গেলেন উনাকে দেখেই নিলয় রুম থেকে বেরিয়ে গেল আর উনি রেগে আর অফিস না গিয়ে আমাকে সারা দিন রুমের মধ্যে বন্ধি করে রাখলেন,সেই সাথে ওয়ার্নিং দিয়ে দিলেন এরকম আর কোনো দিন হলে এর চেয়ে ভয়ংকর শাস্তি দিবেন,সেই ভয়ে এখন উনি অফিস গেলে আমি যখন রুমে থাকি দরজা লক করে বসে থাকি,
নিলয়কে ও এখন এড়িয়ে চলি ওর আচরন কেমন যেন অন্যরকম লাগে।
আজ বিকেলে ড্রয়িং রুমে বসে আন্টির সাথে গল্প করছি হঠাৎ নিলয় এসে জোর করতে লাগল ওর সাথে বাইরে যাওয়ার জন্য,
আমার ওর সাথে কোথাও যেতে একটুও ইচ্ছে হলো না ,আমি ওকে বললাম উনাকে ফোন দিয়ে জিজ্ঞেস করি যদি উনি বলেন তো যাবো তখন ও বাঁধা দিয়ে বলে উঠল,
-আরে ব্রোকে বললে আমি সিউর ও মানা করবে ,ওকে জানানোর প্রয়োজন নেই ও আসার আগেই আমরা চলে আসবো,প্লিজ সুহা চল না আমি তো চলেই যাবো আর কখন দেখা হবে
ঠিক নেই,
বলেই আবার আন্টিকে বলতে লাগল,
-প্লিজ আন্টি তুমি একটু ওকে বুঝিয়ে বলো না তুমি বললে ও যাবে,
আন্টি প্রথমে মানা করলেন ,শেষে
ওর জোরাজোরি দেখে আন্টি ও বলতে লাগলেন,ও যখন এতো রিকোয়েস্ট করছে ওর সাথে যেতে ,
আর নিলয়কে বলে দিলেন যাতে উনি চলে আসার আগেই আমাকে নিয়ে চলে আসে উনি জানতে পারলে খুব রাগ করবেন।
অবশেষে তাদের এতো রিকোয়েস্ট দেখে আমি আর না করতে পারলাম না হতাশ হয়ে রাজি হলাম ওর সাথে যাওয়ার জন্য।
#চলবে?