অভিমান #২১

0
721

#অভিমান
#২১

………………
.
.
নিলয়ের কথায় কি বলবো ভেবে পাচ্ছিলাম না ,ও কে কি সব সত্যি কথা বলা
ঠিক হবে,বিষয়টা ওকে না জানানোই বেটার ,সবটা শুনে ওকে কি থেকে কি ভেবে বসবে কে জানে,আর উনি তো আমাকে সেদিন স্পস্ট করে মানা করে দিয়েছেন এ বিষয়ে যাতে নিলয়ের সাথে কোনো কথা না বলি ,উনি যদি জানতে পারেন নিলয়ের সাথে আমাদের রুমে বসে গল্প করেছি তাহলে খুব রাগ করবেন,আর যদি এটা জানতে পারেন আমাদের বিয়ের বিষয় নিয়ে কথা হয়েছে তাহলে তো আমার আর রক্ষা থাকবে না,
আমাকে চুপ করে থাকতে দেখে নিলয় বলে উঠল,
-আরে ইয়ার চুপ করে আছিস কেন ?প্রেমের কাহিনী তো মানুষ আনন্দের সাথে বলে তোর মুখটা এমন লাগছে কেন,প্রেম করলি পালিয়ে বিয়ে করলি কত কত ইন্টারেস্টিং ইভেন্ট রয়েছে নিশ্চই, নাকি কি এ বিষয়ে তোর বলার মতো কিছুই নেই,কি বলবি ভেবে পাচ্ছিস না,
নিলয়ের কথা শুনে আমি হকচকিয়ে ওর দিকে তাকালাম,আমি তাকাতেই ও হেসে আবার বলে উঠল,
-আরে এভাবে তাকাচ্ছিস কেন আমি বলতে চাইছি যে কোনটা রেখে কোনটা বলবি সেইটাই কি ভেবে পাচ্ছিস না,তাহলে আমি তোকে সহজ করে দিচ্ছি প্রথমে এটা বল যে ,তোর মত মেয়ে যে সবকিছুতে ভীষন ভয় পায় সেই তুই পালিয়ে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিলি কেন??যেখানে তোদের বিয়েতে সবাই এত খুশি।পরিবার থেকে তোদের মেনে নিবে না সেই ভয়ে তো তোদের ছিল না।
নিলয়রে কথা বার্তা আমাকে বেশ বিব্রত করতে লাগল ,কি থেকে কি বলবো আমি পালিয়ে বিয়ে করেছি নাকি আমাকে তো জোর করে বিয়ে করা হয়েছে ,সেটা তো এখন ওকে বলা যাবে না হুট করে বানিয়ে বানিয়ে মিথ্যে কথাই বা বলবো কি করে,উনি থাকলে হয়তো একগাদা প্রেমের কাহিনী বানিয়ে বানিয়ে বলে দিতেন,
আমি নিলয়ের দিকে তাকিয়ে অপ্রস্তুত হেসে বললাম,
-আসলে হয়েছে কি নিলয় ,আমাদের প্রেম কাহিনীটা আর দশটা প্রেম কাহিনীর মত না এটা অনেক লম্বা একটা কাহিনী ।এটা বলতে হলে অনেক সময়ের প্রয়োজন এখন আমার কাজ এত অল্প সময়ে বলতে পারবো না।অন্য একদিন সময় করে বলবো
ঠিক আছে,
আমার কথা শুনে নিলয় চাপা হেসে বলে উঠল,
-লম্বা কাহিনী তো হবেই আফটার অল এটা আমার রাগী বদমেজাজী কাব্য ব্রোয়ের প্রেম কাহিনী ,কিন্তু অল্প সল্প করে তো কিছু বলা যায় নাকি ,আর তোকে এতো নার্ভাস লাগছে কেন,প্রেমের কথা শুনে কোথায় খুশিতে তোর মুখ জলমল করবে তা না ,বাই দা ওয়ে সুহা কাব্য ব্রো আবার তোকে জোর টোর করে উঠিয়ে নিয়ে গিয়ে ভয় দেখিয়ে বিয়ে করে নি তো,বিয়ে কথা শুনে তোর মুখ যেভাবে শুকিয়ে গেল আর বিয়ে বা তোদের প্রেমের কথা শুনলে তুই এতো অপ্রস্তুত হয়ে যাস কেন? কাব্য ব্রো যে ধরনের মানুষ ওর দ্বারা কিন্তু সব পসিবল।বলেই হেসে উঠল ,
নিলয়ের কথা শুনে আমি চমকে উঠলাম,কিন্তু পরক্ষনে নিজেকে সামলে নিলাম,
বিস্ময়টা নিজের মাঝে চাপা দিয়ে স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করে ,ওর দিকে ব্রু কুচকে তাকিয়ে একটু রাগি কন্ঠে বলে উঠলাম,
-কি সব বলছিস এমন কিছুই না ,আর উনি তোর বড় ভাই তার সস্পর্কে এভাবে কথা বলছিস কেন??
আমার কথা শুনে নিলয় হাসতে হাসতে বলে উঠল,
-আরে তুই রেগে যাচ্ছিস কেন আমি তো জাস্ট একটু ফান করলাম ,ব্রোয়ের সাথে থেকে থেকে তুই ও কিন্তু ওর মতো রাগী হয়ে যাচ্ছিস,কেমন সামন্য একটা কথায় রেগে গেলি ,দেখিস ওর মতো আবার বদ রাগী হয়ে যাস না যেন,
নিলয়ের কথা শুনে আমি রাগী দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকালাম ,
আমার এভাবে তাকানো দেখে ও বলে উঠল,আচ্ছা
আচ্ছা আমি আর এমন কিছু বলবো না ,প্লিজ রাগ করিস না,আর হ্যা শুন তোকে আর কোনো কিছুই বলতে হবে না তুই শুধু তোদের বিয়ে কাহিনীটা আমাকে বল,
আমি পরলাম মহা মুশকিলই এতো দেখছি পিছনই ছাড়ছে না ,আমি ওকে কিছু বলতে যাবো তার আগেই শুনতে পেলাম বাহির থেকে আন্টি আমাকে ডাকছেন,
আন্টির ডাক শুনে স্বস্তির নি:শ্বাস ফেললাম যাক বাঁচা গেল,ওর প্রশ্নের সম্মোখিন থেকে বেঁচে গেলাম,যেভাবে চেপে ধরেছিল আজ বোধ হয় সব সত্যি কথা আমার মুখ দিয়ে বের করিয়েই ছাড়তো ,
আমি নিলয়ের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলাম,
-আন্টি আমাকে ডাকছেন নিলয় ,নিশ্চই কিছুর প্রয়োজন আমি এখন যাই ,বলেই আমি ওকে বসা রেখেই রুম থেকে বেরিয়ে এলাম।
.
প্রথম দিন উনাকে ছাড়া বেশ ভালই কাটল ,কোনো প্যারা নেই,যখন তখন কেউ পিছন থেকে জরিয়ে ধরার ভয় নেই ,রান্না ঘরে ও শান্তি মত যেতে পারছি,হুটহাট উনার চলে আসার ভয় নেই,
সারাদিনে কত বার যে কানে কাছে এসে আই লাভ ইউ সুহারানী বলতেন তার তো হিসেব ছাড়া ,
প্রথম প্রথম উনার এমন কান্ডে তো আমি ভয় পেয়ে যেতাম,ভুত ভুত বলে চেচিয়ে উঠতাম।তখন উনি আমার ভয় পাওয়া দেখে খিলখিল করে হেসে উঠতেন।
ভাবলাম এখন থেকে এসব জামেলা থেকে মুক্ত আমি ,সারাদিন একটু নিজের মত করে স্বাধীনভাবে চলবো কিন্তু এখন শুরু হয়েছে নতুন জামেলা ,বাসায় না থাকলে কি হবে একটু সময় পর পরই ফোন দিয়ে বলতে লাগেন ,সুহা কি করছো,খাবার খেয়েছো,খাবার খাওয়ায় অনিয়ম করলে কিন্তু আমি খুব রেগে যাবো,একটা ভিডিও কল দাও না তোমাকে দেখতে খুব ইচ্ছে হচ্ছে,সুহা তোমাকে ভীষন মিস করছি ,আর কথার ফাঁকে ফাঁকে তো এ কথা আছেই আই লাভ ইউ সুহা রানী,অসহ্য লোক একটা কিছুতেই আমাকে শান্তিতে থাকতে দিবে না,কোনো সময় যদি ফোন ধরতে না পারি তাহলে তো অফিসের কাজ কর্ম ফেলে রেগে মেগে সোজা বাসায় চলে আসেন।
সেই ভয় থেকে এখন সারাদিন ফোন সাথে নিয়ে চলতে হয়।
উনি অফিসে জয়িন করার পর থেকে একটা জিনিস আমার খুব ভাল লাগে সেটা হলো উনি
অফিস থেকে ফিরার সময় প্রতিদিন আমার প্রিয় বেলিফুল আর আইসক্রিম নিয়ে আসেন ,এই একটা জিনিস কোনদিন মিস হয় না ,প্রতিদিন উনি আসার পর টেবিলের উপর আমি এই জিনিস গুলো পাই,প্রথম দিন তো এগুলো দেখে খুশিতে আমি উনাকে জরিয়ে ধরেছিলাম,তারপর আমি যে কি লজ্জা পেয়েছিলাম নিজের এমন কান্ডে ,উনার সামন থেকে দৌড়ে পালিয়ে গিয়েছিলাম।
উনি দিনে আমাকে ফোন করে জ্বালান আর আমি উনাকে রাতে জ্বালাই চাঁদ দেখবো বলে বয়না ধরে উনাকে নিয়ে বেনকুনিতে বসে থাকি আর রাতের হিমেল হাওয়া চাঁদের আলো মনমুগ্ধের মতো উপভোগ করি,সেখানেই ঘুমিয়ে পরি আবার সকালে নিজেকে বিছানায় উনার বুকে আবিষ্কার করি।
.
প্রথম প্রথম সব ঠিক থাকলেও এখন উনি অফিসে চলে গেলে নিজেকে কেমন একা একা লাগে,সব খানে উনার উপস্তিতি ভীষনভাবে মিস করি ,নিজের এমন কান্ডে নিজেই অবাক হয়ে গেলাম,কি হচ্ছে আমার সাথে এমন কেন লাগে ,উনি যত সময় আমার আশেপাশে থাকেন তত সময় যেন আমি সবচেয়ে বেশি খুশি থাকি,
উনার অফিসে থাকা সময়টা যেন আমার কাছে বিষাক্ত মনে হয়,এই অপেক্ষাতেই থাকি কখন উনি বাসায় আসবেন ,উনার উপস্তিতি যেন সমস্ত মন জুরে ভাল লাগার আবেশ ছড়িয়ে দেয়,
উনার জন্য মনের মাঝে কেমন অদ্ভুত অদ্ভুত ফিলিংস হয় ,যা কখনও কোনোদিন কারো জন্য হয় নি,উনি প্রায়ই বলেন অফিস থেকে ফিরে আমার মুখটা দেখলে নাকি উনার সব ক্লান্তি দূর হয়ে যায়,উনার কথা শুনে আমি তখন হেসে বলতাম কি সব পাগলের মত কথা,এমটা আবার হয় নাকি,কিন্তু এখন আমার ও এমন মনে হয় উনি যখন অফিস থেকে ফিরেন তখন উনার মুখটা দেখলে আমার সারাদিনের অবসাদ দূর হয়ে যায়।নিজের অজান্তেই কখন যে এই বিরক্তিকর রাগী মানুষটাকে নিজের মনের মাঝে জায়গা দিয়ে ফেলেছি বুঝতেই পারলাম না।
.
আজ কাল নিলয়ের আচরন কেমন যেন লাগছে ,কেমন হেয়ালি করে কথা বলে ,বেশীরভাগ কথাই আমার আর উনার বিয়ে নিয়ে বলে ,উনি অফিস চলে গেলে নানা বাহানায় আমার সাথে কথা বলতে চলে আসে ,হঠাৎ হঠাৎ এমন সব কথা বলে বসে যা শুনে আমি চমকে যাই,সেদিন হুট করে আমাকে জিজ্ঞেস করে বসল,
-আচ্ছা সুহা জোর করে বিয়ে করে তার উপর স্বামীর কর্তৃত্য ফলালেই কি ভালবাসা হয়ে যায়,ওর কথা শুনে আমি চমকে উঠে জিজ্ঞেস করলাম,
-হঠাৎ এমন প্রশ্ন কেন?
আমার কথা শুনে ও হেসে কথাটা এড়িয়ে চলে গেল,
ওর এমন আচরন এখন আমার খুব বিরক্ত লাগে ।
.
বাসায় বসে বসে বোর হচ্ছি ভাবলাম নিজের হাতে রান্না করে খাবার নিয়ে গিয়ে উনাকে সারপ্রাইজ দিলে মন্দ হয় না,
যেই ভাবা সেই কাজ রান্না করতে লেগে গেলাম ,
রান্না বান্না শেষ করে রেডি হতে চলে এলাম,
আমাকে হঠাৎ দেখে উনার এক্সপ্রেশনটা কি হবে সেটা ভেবেই খুব এক্সসাইটেড লাগছে ,ফুরফুরা মন নিয়ে রেডি হচ্ছি,
উনার তো আবার নির্দেশ আছে শাড়ী পরে বাইরে যাওয়া যাবে না ,তাই গ্রীন কলারের একটা গাউন পরে রেডি হয়ে গেলাম ,
আন্টিকে বলে খাবার ঘুচিয়ে নিয়ে বেরিয়ে পরলাম বাসার গাড়ী দিয়ে উনার অফিসে পৌচ্ছে গেলাম,
আমাকে দেখেই অফিসের ম্যানেজার ব্যাস্ত হয়ে পরল,
উনি আমাকে আগ থেকেই চিনেন,বাসায় কেয়েকবার দেখা হয়েছে উনার সাথে।
এই প্রথম আমি উনার অফিসে আসলাম,চারিপাশ অবাক করা দৃষ্টিতে দেখতে লাগলাম ,অফিসটা খুব সুন্দর পরিপাটি পারিপাশ,কিন্তু অফিসের মেয়ে গুলিকে দেখে আমার খুব রাগ লাগল ,কেমন ছোট ছোট জামা কাপড় পরে আছে ,এরা এই ভাবে উনার সামনে ঘুরে বেড়ায়,অসভ্য মেয়েরা এর একটা বিহিত করতে হবে,
ম্যানেজার আমাকে উনার কেবিনের সামনে দিয়ে চলে গেলেন ,
আমি আস্তে আস্তে দরজা খুলে ভিতরে ঢুকলাম ঢুকেই আমার প্রচন্ড মেজাজ খারাপ হয়ে গেল ,রাগে সমস্ত গা রিরি করে উঠল।[চলবে]?
#_মতামত_প্রকাশ_করবেন?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here